হাতে রেখো হাত পর্ব-১৭+১৮

0
218

#হাতে_রেখো_হাত (১৭)

দুই মাস পেরোলে ও বাড়িটা বিক্রি করতে পারল না আবরাজ। আবারো পুরনো সেই জবটা নিয়েছে। মাঝে কয়েক মাস মন মানসিকতা ঠিক ছিল না, সেই কারনেই জবটা ছেড়ে দিয়েছিল। ভার্সিটিতে এডমিশন নিয়েছে। বি সি এস করলে সেনাবাহিনীর বড় পদে চাকরি হওয়ার সম্ভবনা থাকবে। সীরাত নিজে ও বি সি এস করবে বলে ঠিক করেছে। তবে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এসে পড়াশোনা করবে বলে স্থির করে মেয়েটি। কষ্টের কথা মাথায় নেই। শুধু নিজ লক্ষ্য কে পূরণ করার চেষ্টা। মেয়েটা বড় ভালো আর উঁচু মনের এই নিয়ে দ্বিধা নেই। আবরাজের সাথে ছায়া হয়ে রয়েছে। এই ব্যস্ত দুনিয়ায় স্বস্তি ময় একটি নাম সীরাত। অন্তত আবরাজের কাছে তেমনি লাগে।

কিছু কাগজ পত্রের জন্য কলেজে এসেছে ছেলেটা। তখনি দেখা হয় রাই এর সাথে। মেয়েটা বেশ অনেক খানি শুকিয়ে গেছে। মুখের সেই মাধুর্যতা নেই। কেমন যেন লাগছে দেখতে। হতাশা গ্রস্ত হয়ে অন্য দিক ফিরে হাঁটা লাগায় আবরাজ। ঝড়ের বেগে এসে পথিমধ্যে বাঁধা দিল রাই। ঠোঁটের কোণে সামান্য হাসির রেখা। আবরাজের দিকে তাকিয়ে বলল “কেমন আছ তুমি?”

“ভালো।”

“আমাকে জিজ্ঞাসা করবে না?”

“জিজ্ঞাসা করার কি আছে,নিশ্চয়ই ভালোই আছ।

মেয়েটা সামান্য হাসল। চোখে মুখে দুঃখের ছাপ। তবে কেন যেন মেয়েটি কে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয় না। আগাতে চাইলেই হাতটা ধরে ফেলল রাই। চোখ দুটোয় রাজ্যের ক্লান্তি। “আমাকে মাফ করে দিও আবরাজ। আমি আসলেই ভুল করেছি। খুব বড় ভুল।”

“মাফ চাওয়ার কিছু নেই রাই। তোমার মনে হয়েছিল আমি উপযুক্ত নই তাই চলে গেছো। ইটস ওকে।”

মেয়েটা ডুকরে কেঁদে উঠে। ক্রন্দনরত মুখে লাল লাল দাগের ছোঁপ। মায়া হয় খুব। তাই হালকা হাতে মেয়ে টির মাথায় হাত বুলায় আবরাজ। “কাঁদছ কেন?”

নাক টেনে তাকায় রাই। চোখে মুখে বিদ্রুপের হাসি। তবে সে বিদ্রুপ নিজের জন্য। “আমি ভুল করেছিলাম আবরাজ। রকি আমাকে ঠকিয়েছে। অন্য মেয়েকে বিয়ে করবে এখন।”

“কেঁদো না। আরও ভালো কাউ কে পাবে তুমি।”

“ভালো কাউকে পাব? হাসালে আমায়। আমি তো এখন প্রেগনেন্ট।”

শেষোক্ত কথায় মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠল ছেলেটার। এর মানে রাই ছেলেটার সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িয়ে গেছে। শুকনো ঢোক গিলল আবরাজ। রাই কিছু বলবে তাঁর আগেই চলে যায়। মাটিতে বসে পরে রাই। সবার মত আবরাজ ও বুঝি ঘৃনা করে ওকে।
.

ঘাসের উপর পা মেলে দিয়ে বসে আছে আবরাজ। পাশেই গুটি কয়েক পাথর রাখা। আনমনেই একটা একটা করে পাথর ছুঁড়ে ফেলছে নদীতে। পানিতে হালকা শব্দ করে পাথর গুলো ডুবে যাচ্ছে। অতলে হারিয়ে যাচ্ছে এরা। বেশ অনেকক্ষণ ধরে ছেলেটার হেয়ালি পানা দেখে চলেছে সীরাত। এবার প্রশ্ন করা উচিত। তাই ধপ করে পাশে বসল। অথচ আবরাজের ধ্যান ভাঙল না! মেয়েটার ভ্রু সামান্য কুঁচকে গেল। কণ্ঠে রস এনে বলল “কী ভাবছ?”

কোনো উত্তর করল না আবরাজ। ওর ধ্যান জ্ঞান সমস্ত কিছু পৃথিবী থেকে বেরিয়ে কল্পনার জগতে মেতেছে। সব এখন বহু দূরে। হালকা হাতে ধাক্কা দিতেই সচকিত হয় ছেলেটা। সীরাতকে বসে থাকতে দেখে লম্বা হাসে।
“কখন এলে?”

“অনেকক্ষণ হলো। অথচ তুমি দেখলে না।”

“আচ্ছা।”

“কি হয়েছে তোমার?”

“আরে কি হবে। কিছুই হয় নি।”

দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে কথা গুলো বলল আবরাজ। তবে মেয়েটা অনেক চতুর প্রকৃতির। তাই সহজেই বুঝে গেল আবরাজ লুকাতে চাচ্ছে বিষয়টা। দুজনেই নীরবতা পালন করছে। গোধূলি বেলার শেষ প্রহর নেমেছে ধরায়। আবরাজ নীরবতা ভাঙে। “কি অদ্ভুত দুনিয়ার নিয়ম। প্রেমিকের কাছে নিজেকে ন্যস্ত করে দিতে একটু ও বুক কাঁপে না। ভাবে না ইন ফিউচার কী হবে। পরে যখন ধোঁকা খায় তখন কেঁদে বুক ভাসায়। এত সফট মনের কেন হয় মেয়েরা? একটা কথা বল তো নারীর শরীর এতটাই মূল্যহীন? কি করে মেয়েরা ভুলে যায় এসব। সামান্য মিষ্টি কথায় ভুলে যায়। নিজেকে অসম্মানিত করে বসে।”

কয়েক মুহুর্ত চুপ করে থেকে সীরাত উত্তর করল
“এই ভুলের জন্য দায়ী কারা বলো তো? এই ভুলের জন্য দায়ী সে নিজেই। কারন এমন অপকর্ম করেছে সে যাঁর ফল নিশ্চিত ভুগতে হবে।”

“হ্যাঁ সেটাই। তবে এর প্রতিকার সম্ভব নয়?”

“সম্ভব। তবে ধরে বেঁধে সংসার হয়?”

আবরাজ উত্তর করল না। সত্যিই বলতে প্রচন্ড বাজে অনুভূতি হচ্ছে রাই এর জন্য। হাজার হোক একটা সময় দুজনে একটা সম্পর্কে জড়িয়ে ছিল। একটু হলে ও ফিলিং ছিল নিশ্চয়ই।

“হঠাৎ এসব কেন বললে বল তো?”

“এমনিই বললাম। এক্সারসাইজ করবে না?”

“উহু। আজ সন্ধ্যা দেখব। দেখবে না?”

মৃদু হাসল আবরাজ। দুজনের মাঝে রয়েছে সামান্য ব্যবধান। এই দূরুত্ব বজায় রেখেই সুন্দর এক সন্ধ্যা দেখল দুজনে।
.

ক্যাফেতে বসে রয়েছে আবরাজ। যাঁর জন্য অপেক্ষা করছে তাঁর আসার কথা ছিল আরো বিশ মিনিট আগে। তবে এখন অবধি পৌছায় নি। উপায় না পেয়ে কল করতে গেল ছেলেটা ঠিক তখনি একটি শব্দ কানে এসে বাজে। পেছন ঘুরতেই রকি বলল “সৈয়দ আবরাজ? আপনিই তো সে যার সাথে আমার দেখা হয়েছিল কয়েক মাস আগে।”

“হ্যাঁ। যাক চিনতে পেরেছেন।”

হাত মিলায় দুজনে। রকির আচারন নম্র। ছেলেটা যে এ কাজ করতে পারে বিশ্বাসই হচ্ছে না। যেন আকাশ কুসুম কল্পনা। কফির অর্ডার করে আবরাজ। কফি দিতেই চুমুক দিয়ে বলল “স্যরি একটু লেট হয়ে গেছে।তাহলে বলুন কোন কারনে জরুরী তলব?”

“আপনি রাই এর বয়ফ্রেন্ড তাই না?”

“উহুহ।”

“মানে! আমি তো নিজে দেখেছি।”

“আপনি ঠিক ই দেখেছেন। আর আমি রাই এর বয়ফ্রেন্ড ছিলাম, এখন নেই।”

ভ্রু কুঁচকে তাকায় আবরাজ। রকি সামান্য হাসল। কফি কাপ রেখে হাতের সামনে রাখল একটি পাজেল। সেটা নিয়ে খেলছে এখন। “আপনি তো রাই এর এক্স, এম আই রাইট?”

বিব্রত হয় আবরাজ। রকি ফের বলে “যে মেয়েটা আপনাকে ছেড়ে দিল সামান্য কারণে, সে আমাকে ছাড়বে না এর কোনো নিশ্চয়তা আছে?”

“দেখুন মিস্টার রকি আমার আর আপনার বিষয়টা আলাদা। আপনি ওর গর্ভে থাকা সন্তানের বাবা।”

ছেলেটার মুখটা কঠোর হয়ে গেল। কফির মগটা চেপে ধরল। সামান্য উত্তেজিত কন্ঠে বলল “আমার সাথে ফিজিক্যাল গেছে মানলাম, অন্য কারো সাথে যায় নি এর প্রমান কি? আমি বলাতে সুর সুর করে চলে এসেছে। নিশ্চয় আপনি ও”

কথার মাঝে থামিয়ে দিল আবরাজ। নিজেকে শান্ত রেখেই বলল “ওর সাথে আমার তেমন কোনো সম্পর্ক ছিল না। কখনো চুমু ও খাই নি আমি।”

ছেলেটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এসব কথা বলতে ভালো লাগছে না।

“আমার পক্ষে এত মহান হওয়া সম্ভব নয় মিস্টার সৈয়দ আবরাজ। আপনি নেহাত ই ভালো মানুষ তাই ওর হয়ে সাফাই গাইছেন।”

“রকি আমার কথা শুনুন।”

“আমাকে মাফ করবেন। আর একটা সত্যিই কি জানেন রাই কে আমি নিজের থেকে ও বেশি ভালোবাসি। তবে ওর শাস্তি পাওয়া জরুরি।”

ছেলেটা চলে গেল। অদ্ভত ভাবে তাকিয়ে রইল আবরাজ। এ কেমন ভালোবাসা? তবে শেষোক্ত কথাটা যে মিথ্যে নয় তা বেশ ভালোই বুঝতে পারল আবরাজ। দীর্ঘশ্বাস টেনে উঠে দাঁড়ায়হ এর বেশি কি ই বা করতে পারে ওহ?

মনে এক রাশ বিষন্নতা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ছেলেটা। এই একটা দোষ। কারো দুঃখ সইতে পারে না। হঠাৎ করেই একটা গাড়ি এসে থামে ওর কাছে। অন্যমনস্ক থাকায় কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে এগুতে থাকে। গাড়ি থেকে নেমে আসেন অফিসার আবুল। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বুঝতে পারে লোকটা আজ অনেকদিন পর পুলিশের ফর্মাল ড্রেসে। এই পোষাক গায়ে রেখেই তো দেশ প্রেমের মর্মার্থ বুঝিয়ে ছিল ওকে।
“আমি খুব খুশি হয়েছি তুমি দেশকে নিজের সাথে এগিয়ে নিতে অংশগ্রহণ করছ।”

“ধন্যবাদ স্যার।”

“আম প্রাউড অফ ইউ মাই বয়।”

ছেলেটা দুর্ভেদ্য হাসল। লোকটা সত্যিই খুব ভালো। তিনি আর বললেন “আসো রাস্তার ধারে বসে চা খাওয়া যাক।”

মাথাটা কাত করে সম্মতি জানায় আবরাজ। চায়ের দোকানে এসে আবরাজ বলে “দুটো চিনি ছাড়া লিকার চা দিবেন।”

আবুল অবাক হলেন না। কারণ এর লাস্টবার তিনি যখন আবরাজের সাথে দেখা করেছিলেন তখনও ছিল চায়ের আড্ডা। ছেলেটা সেবার দেশদ্রোহিদের ধরতে বেশ সাহায্য করেছে। স্কেচ করিয়ে ছিল একদম সঠিক নির্দেশনায়। আর সেই সুবাদেই শাস্তি প্রদান করতে পেরেছে দেশদ্রোহীদের। এর মধ্য থেকে একটা বিষয় খুব অবাক করেছে ওনাকে। আবরাজ নিজের করা প্রতিটা ভালো কাজ লুকিয়ে যাচ্ছে। বরারবর ই বলে বিষয়টা যেন পাঁচ কান না হয়। কারন ওহ চায় না এই মিশনগুলোতে কে সাহায্যে করেছে তা কেউ জানুক।

দু জনেই বেশ কিছুটা সময় নিয়ে চা পান করল। আবুল বললেন “তোমাকে একটা কথা জানাতে এসেছি।”

“কি কথা?”

“সীরাত আমার মেয়ে।”

কথাটা যেন ধনুকের মতো বুকে এসে বিঁধে। ছেলেটার চাহনি দেখে হেসে ফেললেন আবুল। আশ্বস্ত করে বললেন “রিলাক্স আমি ই পাঠিয়েছিলাম ওকে। তোমার মনটা কে দেশ প্রেমের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমি জানি তুমি পারবে।”

কি বলবে বুঝতে পারল না আবরাজ। ছেলেটার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলেন আবুল। যাওয়ার পূর্বে একটি কার্ড প্রদান করলেন যেটা তে লিখা আছে ভালো কাজ গুলোর জন্য সরকারি ভাবে আবরাজ আর সীরাতকে সেনাবাহিনী তে নিয়োগ করা হবে। এক টাকা ও দিতে হবে না।

চলবে…..
কলমে~ফাতেমা তুজ

#হাতে_রেখো_হাত (১৮)

মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে আছে আবরাজ। আর তাঁর ই পাশে কান ধরে দাঁড়ানো সীরাত। আবরাজের অভিমান ভাঙানোর সাধ্য নেই মেয়েটির। তবু ছোট্ট করে বলল
“প্লিজ মাফ করে দাও।”

“আগে কেন বলো নি?”

“বললাম তো স্যরি।”

“উহু। হবে না।”

বেঞ্চে তে বসে পরল মেয়েটি। এবার ওর রাগ হচ্ছে খুব। সাধারন একটি জিনিসের জন্য মানুষ এত অভিমান করতে পারে?

আবরাজের রাগ অভিমান সব প্রশমিত হলো। তবে এবার বেঁকে বসল সীরাত। মেয়েটার কাছে এসে তোষামোদে করতে লাগল আবরাজ। খানিক বাদেই গগন কাঁপিয়ে হাসতে শুরু করে সীরাত। “তুমি বড্ড বেশি ইমোশনাল। এমন হার্ট নিয়ে সেনাবাহিনীতে জয়েন করা সম্ভব নয়।”

“ভুল বললে সীরাত। আমি ইমোশনাল নই। না হলে এত গুলো দিন এই শহরে টিকে থাকতে পারতাম না।”

“কষ্ট পেয়েছ তুমি?”

“উহু।”

“তাহলে?”

“আমার এক্স হয় রাই। সম্পর্কটা খুব ই অসুন্দর শোনাচ্ছে। তবু এটাই বাস্তব। যাইহোক মেয়েটা এখন প্রেগনেন্ট, অথচ ওর বয়ফ্রেন্ড ওকে মেনে নিচ্ছে না। এটা আমাকে অদ্ভুত যন্ত্রণা দিচ্ছে।”

“চিন্তা কর না মেনে নিবে ওকে।”

কথাটা বেশ সাবলীল গলায় বলল মেয়েটি। আবরাজের দৃষ্টি তে বিষন্নতা। চকচকে চোখে তাকায় সীরাত। কিছু টা এগিয়ে এসে বলে “আই লাভ ইউ।”

মেঘের গর্জনের মত শব্দটা কানে এসে বার বার বেজে চলেছে। আবরাজের ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসি ফুটে উঠল। কেন উঠল জানা নেই। তবে কি এটা সত্য যে মেয়েটাকে ভালোবেসে ফেলেছে ক্ষণিকেই?

তিন দিন পরের ঘটনা। রকির সাথে সীরাতকে দেখে ঝটকা খেল আবরাজ। ভ্রু জোড়ার মাঝে কিছুটা রেখা ফুটে উঠেছে। সীরাত বলল “ভাইয়া ওর নাম আবরাজ।”

মৃদু হাসল রকি। আবরাজের পাশে এসে বসল। কাঁধে হাত রাখল। “আমার বোনের মন চুরি করে নিলে তুমি!”

ছেলেটা যেন লজ্জা পেল। মাথাটা নিচু করে ফেলতেই সীরাত বলল “ওকে লজ্জা দিও না তো। তুমি যে বাচ্চার বাপ হতে চললে।”

দু হাত মেলে দিয়ে কিছুটা অদ্ভুত ভঙ্গিমা করল রকি। আবরাজ যেন কিছুই বুঝতে পারছে না। প্রশ্নবোধক দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইল সীরাতের দিকে। মৃদু হাসিতে মেতে উঠেছে সীরাত। একটা পেপার এগিয়ে দিল রকি। আবরাজের কণ্ঠে বিস্ময় “এটা কি?”

“রেজিস্ট্রি পেপার।”

“কিসের?”

“আমার আর রাই এর বিয়ের।”

তৃতীয় বারের মত চমকে উঠল আবরাজ। চাঁপা হাসির গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। রকি বলল “রাই কে আমি পছন্দ করতাম। বিদেশে পড়াশোনা করেছি আমি। দেশে ফিরে প্রপোজ করতেই প্রপোজ অ্যাকসেপ্ট করে নিল। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম তোমার সাথে রিলেশন ছিল। বিষয়টা আমায় বেশ আঘা’ত করে। আমি বুঝেছিলাম ওকে শাস্তি দিতে হবে। ওকে বেঁধে ফেলতে হবে আমার ভালোবাসায়। নতুবা পরবর্তী সময়কাল সুন্দর হবে না। তাই একটা প্ল্যান করলাম। খুব সুন্দর করে রেজিস্ট্রি করে নেই। যা আঁচ করতে পারে নি রাই। আর আমরা ফিজিক্যালি ইনভলভ হই। মেয়েটা নিশ্চয়ই বোকা! না হলে এমন কাজ করে? যাই হোক যখন বুঝতে পারলাম কনসিভ করেছে তখন ওকে আমি অস্বীকার করি। বুঝতে পেরেছিলাম আমায় খুব ভালোবাসে। তবে যে অন্যায় করেছে তাঁর জন্য শাস্তি তো পেতেই হবে। সেই কারণে এমনটা করেছি আমি। বাট আমি খুব দ্রুত অফিসিয়ালি জানানোর ব্যবস্থা করব। রাই তো অনুতপ্ত। আর কষ্ট দিব না।”

চোখ দুটো ঘোলাটে হয়ে গেছে। হেসে ফেলে আবরাজ। ভীষণ ভালো লাগছে ওর। রাই এর জীবনটা নষ্ট হয় নি। সীরাতের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে বলে “তোমার তো খবর ই আছে।”
.

আবুল নিজে একদম দেশপ্রেমি লোক। সেই কারনে মেয়েটাকে দেশের প্রতি ঝোঁকানোর চেষ্টা করেছেন সর্বদা। অবশ্য রকির ক্ষেত্রে বিষয়টা ভিন্ন হয়ে যায়। কারণ ছোট থেকেই রকি বিদেশে পড়াশোনা করতে চেয়েছিল। তাই দেশের প্রতি ভালোবাসাটা ঠিক সেই ভাবে জন্মায়নি। তবে সীরাতের প্রতি পূর্ন দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। আজ সেই জন্যেই মেয়েটা দেশের জন্য কাজ করতে চাচ্ছে। রাই এর বাসায় বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে এসেছেন ওনারা। যদি ও অফিসিয়ালি বিয়েটা হয়েছে। তবে কিছু রিচুয়াল তো বাকি। সেই সাথে বড় করে গেট টুগেদার পালন হবে। সকলের সম্মুখে কেঁদে ফেলল রাই। নিজের ভুল টা বুঝতে পেরেছে। সত্যিই খুব বেশি ভালোবাসে রকি কে। সবাইকে ভুলে রাই কে বুকে চেপে ধরে রকি। মেয়েটার মাথায় চুমু একে বলল “কিচ্ছু হয় নি। এভাবে কাঁদলে আমার বেবিটা ও অসুস্থ হয়ে যাবে। বেবির মাম্মাম কি এমন টা চায়?”

সবার চোখে খুশির ঝলক। একটু দূরে দাঁড়িয়ে দৃশ্য গুলো দেখে চলেছে আবরাজ। এই সময়টা তে অরিতা কে খুব বেশি মনে পরছে ওর। দু চোখ ঘোলাটে হয়ে গেল। মৃদু স্বরে পেছন থেকে সীরাত বলল “খুব মিস করছ ওকে?”

“অনেক বেশি। খুব ভালোবাসি ওকে। আমার ছোট্ট বোনটা।”

সীরাতের বুকের ভেতর ঝড় উঠে যায়। প্রিয় মানুষ টি কে কষ্টে নিমজ্জিত হতে দেখা সত্যিই প্রচণ্ড যন্ত্রণার।
ছেলেটা কে আনমনেই জড়িয়ে ধরে। চোখের পানি মুছে নিয়ে বলল “অরির সাথে দেখা করাতে নিয়ে যাবে আমায়?”

“যাবে তুমি?”

“হ্যাঁ। অনেক দিন হলো যাই নি।”

চোখ মুছে মৃদু হাসে আবরাজ। তখনি বেরিয়ে পড়ে কব’রস্থা’নের উদ্দেশ্য। হাঁটা পথেই যাওয়া যায়। আবরাজের কাঁধে মাথা ঠেকিয়ে হেঁটে চলেছে সীরাত। মেয়েটার মনে চাঁপা কষ্ট হচ্ছে। কারন আবরাজ কে খুশি করার কোনো উপায় ওর জানা নেই। দুজনে কব’রস্থানে এসে দাঁড়ায়। নাকে গোলাপ পানির শুভ্রতা এসে লাগে। কি অপূর্ব স্থান তাই না। প্রতিটা মানুষের ঠিকানা এটা। মৃ’ত্যু হলেই কব’রস্থানে শুয়ে দিয়ে চলে যায় সবাই। বড্ড অদ্ভুত এ দুনিয়া। চোখ থেকে দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। ডুকরে কেঁদে উঠে আবরাজ। বাবা মায়ের জন্য ও এতটা কষ্ট হয় নি যতটা কষ্ট হচ্ছে অরিতার জন্য। মেয়েটা যেন ওর অংশ বিশেষ। হাত দিয়ে অরিতার গ’নকবরটা দেখায় সীরাত কে। কাঁপা কন্ঠে বলে “বোন, আমার বোন শুইয়ে আছে এখানে। অন্ধকারে ভীষন ভয় ওর। অথচ এতগুলো দিন এভাবেই কাঁটিয়ে দিল। কত বুঝদার হয়ে গেছে তাই না? দেখ গাছ গুলোতে ফের ফুল হয়েছে।”

“তুমি প্লিজ কষ্ট পেও না।”

ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িয়ে থাকে আবরাজ। কষ্ট তো হচ্ছে, ভীষন কষ্ট হচ্ছে। বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে। কষ্ট পেও না বললেই কষ্ট চলে যায় না। বুকটা ক্ষণে ক্ষণে তপ্ত হয়।গীষ্মের উত্তপ্ত রোদ্দুরে যেভাবে মাটি ফেঁটে যায়, হয় চৌচির ঠিক সেভাবেই ফেঁটে যাচ্ছে ওর হৃদয়।

দুজনে সকলের জন্য দোয়া করল। চোখের পানিতে ভিজে গেল হাত। সবার জন্য দোয়া শেষ হলে ক’বরস্থান ত্যাগ করল দুজনেই। ভেতরটা দুমরে মুচরে যাচ্ছে। প্রিয় বোনটা কবরে শুয়ে আছে যে।

রাস্তার ধারে দুটো খেজুর গাছ লাগানো। সেই খেজুর গাছে রসের হাঁড়ি বাঁধা। ছোট সময়ে রস চুরি করে খেয়েছে সীরাত। কিছুটা ডানপিটে ছেলেদের মতই ছিল ওর স্বভাব। আবরাজের মন ভালো করার উপায় পেয়ে গেছে মেয়েটা। ঢাকার শহরে এমন গাছ দেখা যায় না। প্রায়শই এসব নিয়ে মন খারাপ হতো। আজ যেন মন খারাপটা উবে গেল। শীতের সন্ধ্যা, এই দিকটা ও নির্জন। বায়না ধরল সীরাত। “প্লিজ আমাকে রস এনে দাও।”

“চুরি করব?”

“আরে হ্যাঁ এতে মজাই আলাদা।”

“কিন্তু”

“কোনো কিন্তু নয়। এতে টাকা রেখে যাব আমরা।”

কিছুক্ষণ ভাবে ছেলেটা। পরে সিদ্ধান্ত নেয় রস নামাবে। আশে পাশে তাকিয়ে বুকে থু থু দিয়ে সাহস জোগায়। বেশ কষ্ট করে উপরে উঠে। রস চুরি করে নিচে নেমেছে মাত্র তখনি চেঁচানোর শব্দ কানে আসে। ছেলেটা বুঝতে পারে বিপদ সীমার মধ্যে ওরা। কোনো মতে নিচে টাকা রেখে হাঁড়ি আর সীরাত কে নিয়ে ছুট লাগায়। পেছনে তাকানোর সাহস হয় নি আর।

একটা পার্কের কাছে এসে দম ফেলে। দুজনেই হেঁসে কুটি কুটি। আবরাজের হাত থেকে রসের হাঁড়ি নিয়ে রস পান করতে লাগল সীরাত। আবরাজ চাইতেই নাকোচ করে দিল। ভেঙ্চি মেরে বলল “রস এর সাথে খাতির নেই বন্ধু। দূর হটো তুমি।”

“ঠিক না এটা।”

আবারো ভেঙ্চি কাঁটে মেয়েটা। সাথে রস পান করতে থাকে তৃপ্তি নিয়ে। আবরাজ এর মাথায় বুদ্ধি আসে। মেয়েটা কে এক হাতে জড়িয়ে অন্য হাতে রসের হাঁড়ি নিয়ে যায়। ছুটো ছুটির চেষ্টা চালায় সীরাত। তবে কিছু তেই পেরে উঠে না। বাঁকা হাসে ছেলেটা। কিছুটা কাছাকাছি হয়ে বলে “আমার থেকে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা ও করো না মেয়ে। অনেক বেশি ভালোবাসি তোমায়। কখনো ছাড়ব না। কিছুতেই না, কোনো কিছুর বিনিময়ে নয়। এই যে তোমার হাতে রাখলাম হাত।”

সীরাতের বুকের ভেতর টিপ টিপ শব্দ হয়। আলগোছে ছেলটার বুকে হাত রাখে। আনমনেই বলে উঠে “প্লিজ এভাবেই অন্ততকাল হাতে রেখো হাত।”

বি : দ্র : আমি অনলাইনের উপর ভিত্তি করে তথ্য গুলো দিয়ে থাকি। কিন্তু দেখা যায় অনলাইনে এত সত্য মিথ্যে যে আমাদের লেখাতেও কিছু ভুল ক্রুটি চলে আসে। কিছু পাঠক সেটা নোটিশ করেছেন। আমায় নক দিয়েছেন। যাই হোক, তথ্যের ভু ক্রুটি থাকতে পারে। সেগুলোকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে মেনে নিয়ে পড়ার অনুরোধ।

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ