#হৃদয়_এনেছি_ভেজা – [৩১]
বেশ কিছু নিউজ চ্যানেলে শিরোনাম ঘুরছে। সংসদ সদস্য সাঈদ আহমেদের স্ত্রী অনেকদিন অসুস্থ থাকার পর মূর্ছা গিয়েছেন। সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে এবং সমালোচনার তুঙ্গে সাঈদ আহমেদের দুই স্ত্রী এক সাথে এতদিন এক ছাদের নিচে ছিল। সাধারণ মানুষকে মৃ*ত্যুতে শোকাহত হওয়ার বদলে কৌতুহলী দেখাচ্ছে বেশি।
সাঈদ সাহেবের বাড়ির বাইরে সাংবাদিক’রা ভীড় করছে। তারা যেকোনো মূল্যে সাঈদ সাহেব, সাইফ কিংবা সিদাতের সাথে একবার দেখা করে প্রশ্ন করতে চাইছে। এদের প্রশ্নগুলা অযাচিত! যা একজন মানুষকে আরও ভেঙে গুড়িয়ে দিতে পারে। এজন্য এদের কারো সাথেই দেখা করেনি। নিজেদের সময়গুলো তারা নিজেদের মধ্যেই ব্যয় করছে। আপনজন সাঈদ সাহেবদের খুইয়েছে তাই তারা জানে আপনজন হারানোর কষ্ট কী!
জয়ার লাশ ভেতরের রুমে রাখা হয়েছে। তাকে ঘিরে মহিলারা বসে আছে। পরিবারের মানুষ ব্যতীত সকলেই কোরআন পড়ছে। জয়ার কাছে-পিঠে আগরবাতি জ্বলছে। তরী চোখে পানি নিয়ে কুরআন পড়ছে। তরীর বাবা সকালেই কামরুন নাহার এবং সাবিয়াকে নিয়ে এসেছে।
তারা বিয়ে নিয়ে কিছু বলার আগে এরকম একটি ঘটনা ঘটে যাবে সত্যি কল্পনা করেনি। আসলেই, মৃত্যু কখনো কাউকে বলে কয়ে আসে না। আর উপরওয়ালার কী রহমত! জয়া তার মৃত্যুর আগে যেটাকে সবচেয়ে বেশি করে চেয়েছে সেটাই পূর্ণ করে গেল।
তরীর পাশাপাশি তরীর মা এবং বোনও কুরআন পড়ছে। ফিরোজাকে দিয়া সামলাচ্ছে। দিয়ার মাও কুরআন পড়ছে এবং থেমে থেমে ফিরোজাকে সামলানোর চেষ্টা করছে। সিদাত বা সাইফ কাউকে-ই দেখা যায়নি।
সাঈদ সাহেব পুরুষদের মাঝে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে এখনো। তার চোখ জোড়া অসম্ভব লাল। ঘোলাটে চোখে একমনে বাড়ির বাইরে রাখা খাটিয়ার দিকে চেয়ে আছে। আকবর সাহেব সাঈদ সাহেবের কাঁধে হাত রাখতেই সাঈদ সাহেব দুই হাতে মুখ ঢেকে বাচ্চাদের মত কাঁদতে লাগল। তার জীবনের প্রথম নারী, প্রথম ভালোবাসা, প্রথম স্ত্রীকে সে নিজ চোখে ম*তে দেখল। এই ব্যথা, এই যন্ত্রণা সে কাউকে দেখাতে, বোঝাতে পারবে না। কত কত সুখময় স্মৃতি, কত কত ভালোবাসার দিনগুলি।
গতকালও তার হাত ধরেছিল, চোখে চোখে কথা বলেছিল, অথচ আজ! কিছু সময়ের ব্যবধানে এই মানুষটাকেই চিরজীবনের জন্যে মাটির নিচে রেখে আসতে হবে। এই যন্ত্রণা সে কী করে সহ্য করবে? কী করে সম্ভব এসব সহ্য করা?
সাইফ কোনো রকমে চোখ-মুখ লাল করে মেহমান সামলাচ্ছে। তার বাবাকেও সামলাচ্ছে। এই কঠিন সময়ে সে নিজেকে যথেষ্ট শক্ত রেখেছে। কিন্তু বারংবার সে তার কাঠিন্য হারিয়ে ফেলছে। মাকে হারিয়ে সে কী করে স্বাভাবিক থাকবে? কিন্তু তাও, এই কঠিন সত্যটি মেনে নিয়ে তাকে চলতে হচ্ছে।
এখন খুব আফসোস হচ্ছে নিজের প্রতি, কেন সে তার বাবার মতো হলো না? হলে হয়তো এখন মন খুলে কাঁদতে পারত। বুকের এই ব্যথায় সাইফ লুকিয়ে দুটো সিগারেটও খেয়েছে। কিন্তু এই কষ্ট, ক্ষত, মায়ের শূন্যস্থান কোনো কিছু দিয়েই পূরণ করা সম্ভব নয়।
সিদাতকে তাদের কারো মধ্যেই দেখা যাচ্ছে না। কোথায় আছে সেটাও কেউ জানে না। সাইফ চারপাশটা লক্ষ্য করে তার মায়ের রুমটার দিকে গেল। সেখানে তরী আছে।
সাইফ দরজার সামনে দাঁড়াতেই তার মায়ের মৃত ফ্যাকাসে সুন্দর মুখখানা দেখতে পেল। সাইফ না চাইতেও এবার কান্না থামাতে পারল না। মুখে কঠিন ভাবে হাত চেপে হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠল। দেয়ালে পিঠ এলিয়ে কতক্ষণ কেঁদে কান্না থামাল। যতই হোক, পুরুষ মানুষের কান্না কাউকে দেখাতে নেই৷ সাইফ চোখ মুছে দরজা থেকেই তরীকে ডাকল। তরী ভেতর থেকে সাড়া দিল। সাইফ বলল,
–“আমার মনে হচ্ছে এখন সিদাতের পাশে তোমার থাকা উচিত। একটু বেরিয়ে আসবে?”
তরী মায়ের হাতে কুরআন শরীফটা দিয়ে মুখ ঢেকে বেরিয়ে এল। সাইফ তরীর দিকে তাকাল না। নিজের কান্না দমাতে চারপাশে এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে বলল,
–“আমার পেছনে এসো!”
তরী সাইফের পিছে হাঁটছে আর শব্দহীন কাঁদছে। কী করে সিদাতকে বোঝাবে? সিদাতের পাশে গিয়ে বসবে? সবকিছুর জন্যে তরী নিজেকেই বারবার দায়ী করছে। অনুশোচনায় প্রতিনিয়ত দগ্ধ হচ্ছে। মানুষটা তাকে কত ভালোবাসত,
আর সেই মানুষটাকে ভালোবাসা দেওয়ার বদলে এভাবে দূরে সরিয়ে দিলো। দূরে সরিয়ে দেওয়ার ফলাফলস্বরূপ দুজন সন্তান তার মা হারাল, একজন স্বামী তার স্ত্রী হারাল। এদিনেই কেন এমন হলো? তরী কী করে নিজেকে ক্ষমা করবে?
সাইফ তরীকে নিয়ে ছাদে এলো। সিদাত ছাদের এক কোণে বসে আছে পাথরের মূর্তির মত। তাকে দেখে তরীর বুকের চিনচিন ব্যথাটা আরও দ্বিগুণ বেড়ে যায়। দম বন্ধ হয়ে আসছে তার। সাইফ মাথা নিচু করে বলল,
–“আমার ভাইটাকে সামলাও বোন।”
সাইফ চলে গেল। তরী সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। তার হাঁটু জোড়া অসম্ভব রকম কাঁপছে। মাথা ভনভন করছে। এই ছেলেটাকেই দু’দিন আগে হাস্যোজ্জ্বল দেখেছিল। মাকে নিয়ে তারই মুখে গল্প শুনেছিল। অথচ আজ? মানুষটা কেমন বদলে গেল। তরী তার মাকে হারানোর ব্যাপারটা কল্পনাতেও আনতে পারে না। সেখানে সিদাত তার মাকে হারিয়েছে। ব্যাথাটা কোনো মলমে সারার মতো নয়। ব্যথার মলমটাই তো ওপারে চলে গেল।
তরী কম্পিত পায়ে সিদাতের দিকে এগিয়ে গেল। বারবার নাক টেনে অশ্রু সংবরণ করতে চাইছে তরী। কোনো রকমে সিদাতের পাশে বসতেই সিদাত তরীর দিকে না তাকিয়েই ভাঙা গলায় বলে ওঠে,
–“জানো নিকাব রাণী, যখন ছোটোবেলায় আমরা দুই ভাই চাঁদ দেখতে চাইতাম তখন এখানটায় বসে থাকতাম। মা এক থালায় ভাত এনে এখানেই খাইয়ে দিত। আমাদের মাঝে কত কত গল্প হত। মা বারবার রাজকুমারদের গল্প শোনাত৷ আমরা শুনতাম, শুনতে শুনতে ঘুমিয়েও যেতাম। ঘুম ভাঙলে দেখতাম আমরা বিছানায়। কাজের লোকেদের থেকে শুনতাম মা-ই আমাদের দুই ভাইকে ছাদ থেকে কোলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিত। আমি এবং সাইফ ভাই আসলেই খুব ছোটো ছিলাম। স্কুল লেভেলে আসার পর বাবা এসব গল্প করত আমাদের সাথে। বাবা বলত ছোটোবেলার এই মধুর স্মৃতি ভুলতে দিতে নেই। আমাদের উচিত সেগুলো ভেবে আনন্দিত হওয়া।”
সিদাত থেমে যায়। তার ভেতরকার ঝড়টা সে কিছুতেই থামাতে পারছে না। ঝড়ের তান্ডবে সিদাত নিজেকে একদমই স্থির রাখতে পারছে না। অথচ বাহির থেকে সিদাতকে শোকে পাথর অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। তরী নীরবে কাঁদল। সিদাত বুঝলও না। সে একমনে মায়ের সাথে কাটানো স্মৃতিগুলোয় ঘুরা-ফেরা করছে। তার মা নেই এটা সে কল্পনাও করতে পারছে না। সিদাত নিজেকে সংবরণ করতে না পেরে হঠাৎ বলে ওঠে,
–“তোমাকে জড়িয়ে ধরে কষ্টের মাত্রাটা একটু কমাতে চাচ্ছি তরী। অনুমতি দিবে?”
তরী কিছু বলার ভাষা পেল না। এই পরিস্থিতিতে অন্য কিছু ভাবারও সময় পেল না। অনুমতি দিয়ে দিল। সিদাত চট করে তরীকে জড়িয়ে ধরল। তরীর ওড়নার ওপর দিয়ে-ই তরীর কাঁধে মুখ গুজল। কিছুক্ষণ চুপ থাকলেও সিদাত নিজেকে সামলাতে পারল না। কেঁদে উঠল শব্দ করে। সিদাত কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল,
–“আমার মা এভাবে কেন চলে গেল তরী? আমি তো কিছু করিনি, তবে আমার উপর মায়ের কী এমন অভিমান? আমাদের সবার সাথে কিসের অভিমান? আমি পারছি না তরী, মা নেই ভাবতে পারছি না। মা ছাড়া আমি কার সাথে আমার মনের কথা গুলো শেয়ার করব, কে আমাকে মায়ের মত করে বুঝবে? মা কেন আমাদের পরিবার টাকে অসম্পূর্ণ রেখে চলে গেল। তুমিও তো চলে এসেছিলে, তবে মা কেন চলে গেল?”
সিদাত কাঁদছে। খুব কাঁদছে। তরীর ওড়না ভিজে যাচ্ছে সিদাতের অশ্রুতে। আর তরীর অশ্রুতে ভিঁজছে সিদাতের শার্ট। সিদাতের কান্নায় তরীও নিজেকে সামলাতে পারেনি। এমন মুহূর্তে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কোনো শব্দ বা বাক্য আছে কী না সেটা তরীর জানা নেই। তবুও তরী সিদাতকে বলল,
–“এভাবে কাঁদবেন না। আম্মা কষ্ট পাবেন। প্লিজ কাঁদবেন না। আম্মার জন্যে দোয়া করুন। যাতে আল্লাহ্ পরাপারে আম্মাকে ভালো রাখে। এই দোয়াতেই আম্মাকে মনে রাখুন। দোয়া ছাড়া এই মুহূর্তে আর কিছুই করার নেই। সবাইকেই একদিন ম*রতে হবে।”
————————
মাগরিবের পরপর জানাজা হল। সাঈদ সাহেব-ই বেশি দেরী করতে চাননি। বুকের ব্যথা চেপে কবরে লাশ নামালো দুই ভাই। সিদাতের চোখে আবারও জল ভরে এলো। দুয়েক ফোঁটা অশ্রু কাফনে পরল। সিদাত মনে মনে বলল,
–“আম্মা, একসময় তুমি কোলে-পিঠে আমাদের মানুষ করেছ। আজ দেখ, তোমাকে আমরা চার হাতে এই মাটিতে শোয়াচ্ছি। আল্লাহ্ তোমাকে খুব খুব ভালো রাখুক আম্মা। জান্নাতবাসী হও।”
যখন কবর থেকে দুই ভাই উঠে এল, তখন ধীরে ধীরে কবর খানা বাঁশ, কাঠ দিয়ে ঢেকে দিল। অতঃপর মাটি দেওয়া শুরু হল। সেদিকে চেয়ে সিদাত চোখ বুজল। বিদায় দিলো মাকে।
বাড়ির পরিবেশ গুমোট, থমথমে। কারো মুখে হাসি নেই, ঠিক মতো কথা নেই, চুলোয় খাবার তোলা হয়নি। মাটি দেওয়ার পরপর অনেকেই ফিরে গেছে তাদের নিজস্ব গন্তব্যে। জয়ার ভাই, বোনেরাও এসেছে। তারা আজ থেকে গেছে। এখন কম-বেশি সকলেই জেনে গেছে সিদাতকে জয়া বিয়ে দিয়েছে। কার সাথে দিয়েছে সেটাও টুকটাক জানে।
পরিবারের লোকদের অনুপস্থিতিতে রান্নাঘরটা দিয়ার মা, কামরুন নাহার, তরী এবং আরও কিছু মহিলা স্বজন সামলাচ্ছে। তরী যথা-সম্ভব তাদের সাহায্য করছে। সবটাই তরীর মা তাকে শিখিয়ে দিয়েছে। এই মুহূর্তে এই পরিবারকে আপন করে নেওয়াটাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। তরীও একমনে তাই করার চেষ্টা করছে। তরী কখনো কোনো কিছু নেতিবাচক ভাবে নেয়নি। কাজ-কর্ম বেশ ভালোই জানে সে।
মাঝেমধ্যে ভার্সিটি অফ থাকলে সে মাকে বসিয়ে রাখত। আর সে সব কাজ করত। এই মুহূর্তে এসব কিছু আয়ত্ত্বে থাকলেও তরী বিব্রত, ইতঃস্তত সকলের এমন কোণা চোখে তাকানোতে। যদিও সে পুরুষদের দিকে একদমই যায়নি। সাঈদ সাহেব নিজেই নিষেধ করেছে তরী যেন সেদিকে না যায়। তরীর এরকম হেফাজত করাটা সে নিজের দায়িত্ব হিসেবেই নিয়েছে।
দিয়া সবেই রুম থেকে আসল। সাইফ কবরস্থান থেকে ফিরে বিধ্বস্ত হয়ে পরেছিল। তাকে সামলে, শাশুড়িকে সামলে সেও রান্নাঘরেই চলে আসে। দিয়া আসতেই কামরুন নাহার এবং দিয়ার মা তাদের কাজ দিয়া, তরীকে বুঝিয়ে দিয়ে ফিরোজার কাছে চলে গেল। হাতে করে খাবার নিতেও ভুলেনি তারা। ফিরোজাকে খাইয়ে দিতে হবে৷ এখনো অবধি কিছুই মুখে তুলেনি সে। তরী খুবই নিচু গলায় দিয়ার উদ্দেশ্যে বলল,
–“সকাল থেকে কিছু খাননি আপনি আপু। কিছু খেয়ে নিন। খুব ধকল গেছে আপনার ওপর দিয়ে!”
দিয়া হাসল তরীর কথা শুনে। বলল,
–“সকাল থেকে তো তুমিও খাওনি। নিজের চিন্তাও কিন্তু করতে হয়। খাব, রান্না শেষ হলে সবাইকে একসাথে নিয়ে খাব। আর কথা বলার সময় আপনি বলার প্রয়োজন নেই। আমি খুব সম্ভবত তোমার চাইতে দেড়-দুই বছরের বড়ো হব।”
তরী শুনল। উত্তরে হাসার চেষ্টা করল।
রাতে সবাইকে একসাথে বসিয়ে খাওয়ানো হল। সিদাত, সাইফ বা সাঈদ সাহেব কেউ-ই মুখে খাবার তুলতে চাচ্ছিল না। কিন্তু নানান কথা বলে তাদের খাওয়ানো হয়েছে। খাওয়া-দাওয়া হলেও সে রাতে অনেকেই ঘুমালো না। কারো চোখেই ঘুম এলো না। মেয়েরা ভেতরে এবং ছেলেরা বৈঠক ঘরের এখানে সেখানে এলোমেলো হয়ে বসে-ই রাত পার করল।
আকবর সাহেব বাড়ি ফিরতে চেয়েছিল, কিন্তু সাঈদ সাহেবের করুণ অনুরোধ তাকে ফিরতে দেয়নি। একপ্রকার লজ্জায় আড়ষ্ট ছিল সে। যতই হোক এটা এখন মেয়ের শ্বশুরবাড়ি, এভাবে থেকে যাওয়া চলে না। কিন্তু পিরিস্থিতি এমন ভাবে বাধ্য করেছে যে এসব লজ্জা, আড়ষ্টতা একদিনের জন্যে সরিয়ে রাখতে ইচ্ছে করছে।
ফজরের সময় ছেলেরা সবাই নামাজের জন্যে মসজিদ চলে যায়। আর মেয়েরাও ঘরে নামাজ পড়ে নেয়। আজ যেন সকলের মোনাজাতে একমাত্র জয়া-ই ছিল। ফিরোজা খুব কষ্টে বিলাপ এবং কান্না থামিয়েছিল। নামাজের মোনাজাতে এসে তার ফোঁপানোর শব্দ শোনা গেল এবং টেনে টেনে বিলাপ করতে লাগল।
তার এহেম কান্ডে তার আশেপাশের উপস্থিত সবাই নীরবে কেঁদে ওঠে। কতটা বেদনাময় সময় গুলো। দুঃখ, বিষাদের রাতগুলো যেন থমকে যায়। এই মুহূর্তে যেন সময়ের কোনো তাড়া থাকে না। সময় চায় এই দুঃখ, যন্ত্রণা, বেদনা দীর্ঘ হোক, আর সে থেমে যাক।
©লাবিবা ওয়াহিদ
~[ক্রমশ]
#হৃদয়_এনেছি_ভেজা – [৩২]
দিন পেরিয়ে রাত হলো। মাঝে দিয়ে কেটে গেল আরও একটি বিষাদময় দিন। আত্নীয়-স্বজন এখনো অনেকেই রয়ে গেছে। আবার কিছু জন চলে গেছে। দ্বিতীয় দলে যুক্ত হবে আকবর সাহেব এবং তার পরিবার। তরীকে এখানে রেখে আজ তারা বিদায় নিবে। প্রয়োজনে কাল আবার আসবে। তবুও আর একদিনও থাকা সম্ভব না।
সাঈদ সাহেব জোর করেও রাখতে পারল না। আকবর সাহেব হাসি-মুখে জানায়,
–“আর আটকাবেন না ভাই। দরকার লাগলে আবার আসব। তবুও আজকের মত বিদায় চাচ্ছি!”
সাঈদ সাহেব হতাশ হলেন। তরী যখন জানতে পেরেছে তার বাবা-মা চলে যাচ্ছে তখনই সে মাকে জড়িয়ে ধরে চুপ করে কাঁদল কিছুক্ষণ। তার ভেতরটা খাঁ খাঁ করছে কেমন! কামরুন নাহার চমৎকার মানুষ। তিনি এই কঠিন পরিস্থিতিতেও বেশি না কেঁদে মেয়েকে বোঝাচ্ছেন। বলছেন এটাই জাগতিক নিয়ম। একজন মেয়ে সারা জীবন তার বাবা-মায়ের কাছে থাকতে পারে না। কিন্তু তরী একসঙ্গে দুটো শোক কিছুতেই নিতে পারছে না। হঠাৎ তরী কেমন অবুঝ হয়ে পড়েছে। কামরুন নাহার হার না মেনে ধৈর্য ধরে মেয়েকে বোঝাচ্ছে।
কামরুন নাহারের পরিবার মোটেও পুরোপুরি ধার্মিক না। সকলেই আধুনিক জগতের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পছন্দ করত আগে থেকেই। কিন্তু কামরুন নাহার তাদের মতো পরিবারে একজন ব্যতিক্রমধর্মী মেয়ে হল। পর্দা, নামাজ-কালাম, তিলওয়াত, জিকির সবটাতে-ই সে ধীরে ধীরে ডুবে গেল। এতে অবশ্য সবাই বেশ সন্তুষ্ট ছিল। রাজিবের ইচ্ছে হল তার বোনকে তার সেরকম-ই নামাজ-কালাম করা ছেলের সাথে বিয়ে দিবে। সেই ছেলের আয় রোজগার কম হলেও তার কোনো সমস্যা নেই। কামরুনের মাও এতে সম্মতি জানায়। মাস ছয়েক পরপরই ঠিক এরকমই মনমতো এক প্রস্তাব আসল। ছেলে মোয়াজ্জেম। পাশাপাশি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে। সেই ছেলেটাই আজকের আকবর সাহেব।
এত বছর পর আকবর সাহেবেরও এরকমই তীব্র এক ইচ্ছে ছিল। কিন্তু মাবুদের পরিকল্পনা ভিন্ন ছিল দেখেই তরী এরকম একটি পরিবেশে জড়িয়ে গেল। বিয়ে হল এক মিডিয়া পাড়ার ছেলের সাথে। সিদাতের তরফ থেকে প্রস্তাব আসার পরে আকবর নিজেই সিদাতের অফিস গিয়েছিল সিদাতের কার্যক্রম দেখতে। সিদাত তখনো জানত না যে আকবর সাহেব এসেছে। আকবর সাহেব নিজের পরিচয় গোপন করে সিদাতের কলিগদের থেকে টুকটাক জিজ্ঞেসও করেছে সিদাতকে নিয়ে। সিদাতকে নিয়ে সকলের ইতিবাচক কথা শুনলেও আকবর সাহেব স্বস্তি পাননি। এজন্যই সে বারণ করে দিয়েছিলেন।
আকবর সাহেব অবশ্য অফিসে ঢুকেছিল রাজিবের সাথেই। রাজিব-ই সিদাতকে কল করে জানিয়েছে সে অফিস যাবে, সিদাতের সাথে দেখা করতে। এজন্য সিদাত আগেই অফিসের ঢোকার মুখে সিকিউরিটি গার্ডদের ব্যাপারটা জানিয়ে রেখেছিল। রাজিবের সাথে সিদাতদের এত সুন্দর সম্পর্কের কারণ আকবর সাহেব জানে। সাঈদ সাহেব নিজেই জানিয়েছিল। সাত বছর আগে যখন জয়া এক্সিডেন্ট করে তখন রাজিব-ই নাকি তাকে হসপিটাল নিয়ে গিয়েছিল। সেই থেকেই তাদের মধ্যে পরিচিতি।
যখন সিদাত রাজিবের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত তখনই আকবর সাহেব এসব করেছেন। শেষে গিয়ে সিদাত দেখতে পায় আকবত সাহেবকে। সাধারণ কুশল বিনিময়ের পরপরই তাদের বিদায় জানায় সিদাত। কারণ আকবর সাহেবের বাসায় যাওয়ার তাড়া ছিল।
আকবর সাহেব সিদাতের হাতে তরীর হাত তুলে দিল। ব্যথিত স্বরে বলল,
–“আমি বুঝতে পারছি এই সময়টা খুব কঠিন। তবুও আমার মেয়েটাকে, আমার রত্নকে তোমার হাতে তুলে দিচ্ছি। এত বছর আমি আমার মেয়েটাকে যেভাবে রেখেছি, তোমার কাছে অনুরোধ রইল তুমি আমার মেয়েটাকে নিজের সাধ্য মতো গুছিয়ে রেখ। আমার মেয়েটা অল্পতেই খুশি, অঢেল ধন-সম্পদের প্রয়োজন নেই তার। শুধু তরীর বক্ষ-ছায়া হয়ে থেক।”
তরী অধর চেপে ঝাপসা চোখে আকবর সাহেবের দিকে তাকিয়ে আছে। কান্না থামানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে সে। সিদাত দু’হাতে তরীর হাত আগলে বলল,
–“আমি তরীর জন্যে বক্ষ-ছায়ার সঙ্গে একজন ভরসার মানুষও হব আঙ্কেল। আপনি শুধু দোয়ায় রাখবেন। আপনাকে কোনো অভিযোগ করার সুযোগ দিব না আমি। তরী আমার জীবনের অংশ।”
তরী মাথা নিচু করে ফেলল সিদাতের কথা শুনে। আকবর সাহেব ভরসা পেলেন। যেই ছেলে মায়ের জন্যে এতটা ভেঙে গুড়িয়ে গেছে সে নিশ্চয়ই পারবে তার মেয়েকে আগলে রাখতে। ছেলেটার মায়ের প্রতি ভালোবাসা অসীম। আকবর সাহেব তরীকে আগলে নিলেন। কিছুক্ষণ মেয়েকে সময় দিয়ে ওরা বিদায় নিল। যাওয়ার আগে সাবিয়া খুব কান্না-কাটি করেছিল। তার একমাত্র সঙ্গী, তার একমাত্র ভালোবাসার বোনকে ছাড়া তাকে একা থাকতে হবে। তরী বোনের এরকম কান্না দেখে নিজেকে সামলে উঠতে পারেনি। দুই বোন একে অপরের প্রাণ ছিল। সেখানে দুজন আলাদা হয়ে গেল!
দিয়া তরীকে সিদাতের রুমে দিয়ে এল। সাঈদ সাহেব তার ম্যানেজারকে দিয়ে তরীর যাবতীয় প্রয়োজনীয় সবকিছু তরীর বাড়ি থেকে আনিয়ে নিয়েছে। বিয়েটা আয়োজন ছাড়াই হয়েছে। এতে আকবর সাহেবের কোনো সমস্যা নেই। কারণ জাকজমকপূর্ণ বিয়ের চাইতে কম খরচের বিয়ে ভালো। আয়োজন ছাড়া বিয়ে নিয়ে তরী বা সিদাতের মধ্যেও ভ্রুক্ষেপ দেখা যায়নি। এছাড়া পরিস্থিতিও এরকম হয়েছে যে বিয়ের আয়োজনের কথা কারো মাথাতেই বিরাট প্রভাব ফেলেনি।
তরী ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই দেখল সিদাত রুমের অন্য পাশে টি-শার্ট খুলছে। কী ভেবে পিছে ফিরে তাকাতেই সে অপ্রস্তুত হল৷ কোনো রকমে গায়ে শার্ট জড়িয়ে বোতাম লাগাতে লাগাতে বলল,
–“দুঃখিত। বুঝতে পারিনি এই সময়েই চলে আসবে। আমি মোটেও তোমাকে অস্বস্তিতে ফেলতে চাইনি!”
তরী অবাক চোখে দেখল সিদাতের এরকম ব্যস্ত হওয়া দেখে। এখন তারা স্বামী-স্ত্রী। ঘরের মধ্যে যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে। তরী নিজেকে সামলে নিল। বুঝল সিদাতের এসব বলার কারণ। তবে মনে হলো তরীর চাইতে সিদাত দ্বিগুণ অবাক হল। তরীকে ভেজা চুলে এই প্রথম দেখল সে। রূপ যেন মেয়েটার চুইয়ে চুইয়ে পরছে। এই পবিত্র মুখটা, এই পবিত্র মেয়েটা তার স্ত্রী, ভাবলেই কেমন গা শিউরে উঠছে তার। পরমুহূর্তেই চোখ নামিয়ে ফেলল। মায়ের শূন্যতার পাশাপাশি হৃদয় জুড়ে অন্য রকম অনুভূতি বিচরণ করছে। সেই অনুভূতি অবশ্য ক্ষণস্থায়ী ছিল। সিদাত মাথা নিচু করে বলল,
–“আমি নিচে থেকে খাবার আনিয়ে নিচ্ছি। তোমার এখন রুম থেকে বেরুনোর দরকার নেই। এখানেই খেয়ে নাও। আমি নাহয় নিচে থেকে খেয়ে আসছি!”
সিদাতের কথা শুনে তরীর মন খারাপ হয়ে যায়। পরিবার থাকতে সে কেন একা খাবে? একা খাওয়ার অভ্যেস যে একদমই নেই তরীর। তবুও তরী মুখ ফুটে কিছু বলল না। কিন্তু সিদাত তরীর চেহারা জুড়ে থাকা বিষণ্ণতা কিছুটা আঁচ করতে পেরে ফ্যাকাসে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,
–“বেশি চিন্তা করিও না তরী। তুমি বেশি মানুষদের মাঝে অস্বস্থি অনুভব করো। তাই আমি নিচে বাবাদের সঙ্গ দিয়ে শুধুমাত্র কয়েক লোকমা খাব। বাকিটা রুমে এসে তোমার সাথে বসে খাব। চলবে?”
মুগ্ধতায় তরীর দেহ জুড়ে প্রতিটি রন্ধ্র কেমন সুভাসিত হয়ে গেল। তরী তার ভালো লাগার রেশ কাটাতে পারল না। সিদাত তরীর কাছে এসে তরীর গাল আলতো ছুঁয়ে বলল,
–“তবে অপেক্ষা করো। আমি বেশি সময় নিব না।”
সিদাত প্রায় আধঘন্টা সময় নিল। এখনো আসেনি। তরী খাবার সামনে নিয়ে বসে আছে সিদাতের অপেক্ষায়। তরী আগে দেখত তার বাবা বাড়ি না ফিরলে কামরুন নাহারও এভাবে খাবার নিয়ে বসে থাকত। অপেক্ষা করত আকবর সাহেবের। এই ছোটো ছোটো ভালোবাসা, অনুভূতি গুলো তরী খুব পছন্দ করে।
সাথে তরী মনে-প্রাণে মাবুদের নিকট ক্ষমা চাইছে সিদাতের সেই ভুলের জন্য। সিদাত ওই অখাদ্য জেনেই খাক কিংবা না জেনে, সিদাতকে যেন পরম করুণাময় মাবুদ তাকে ক্ষমা করে দেয়।
সিদাত আসল চল্লিশ মিনিটের মাথায়। এসে দেখল মাথার ওপরের সিলিং ফ্যানটা খুব অল্প গতিতে ঘুরছে। এসিটাও বন্ধ। বোধহয় তরী খাবার যাতে ঠান্ডা না হয় সেই চেষ্টাই করছে। সিদাত তরীর সামনে রাখা খাবারের প্লেটটি ঢেকে রাখা অবস্থায় দেখতে পেল। সিদাত ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে হাত ধুঁয়ে তরীর পাশে বসে। খাবারের প্লেট হাতে নিতে নিতে বলল,
–“বেশি দেরী করে ফেললাম বুঝি?”
তরী মাথা নিচু করে নেতিবাচক মাথা নাড়ায়। কেমন লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে যাচ্ছে সে। সিদাত মুচকি হেসে এসিটা অন করে দিল। বলল,
–“আর কষ্ট করে গরম সহ্য করতে হবে না!”
–“কিন্তু আমার গরম লাগছিল না!”
–“তাই? এসো। আজ আমি তোমাকে খাইয়ে দিব।”
তরী ভীষণ অবাক হল। লজ্জায় আবৃত হয়ে বারণ করল। কিন্তু সিদাত শুনেনি। তরীকে খাইয়ে দিল এবং নিজেও খেয়ে নিল।
সবকিছু স্বাভাবিক হলেও রাতের অন্ধকারে সিদাত নীরবে চোখের পানি ফেলল। মা হারানোর শোক এত জলদি ভুলা সম্ভব? সিদাতের পাশে অর্থাৎ কিছুটা দূরত্বে শোয়া তরী সিদাতের নীরব কান্না টের পেল। তরী ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল। সিদাতের কাঁধে কম্পিত হাত খানা ছুঁয়ে খুবই নরম, মৃদু গলায় বলল,
–“মায়ের কথা মনে পড়ছে?”
সিদাত ভাঙা গলায় “হুঁ” বলে তরীর হাতটা দু’হাতে জড়িয়ে নিল। যার ফলস্বরূপ তরী অর্ধেক বসা অবস্থাতেই রইল। এভাবে ঘন্টাখানেক কেটে যায়। তরীর পা ভয়াবহ রকম ঝিমঝিম করছে। সে না পেরে শুয়ে পড়ল। কিন্তু ঝিমঝিমের মাত্রাটা যেন খুব বেড়ে যায়। তরী সেই মাত্রাটা সহ্য করতে না পেরে কিছুটা সিদাতের দিকে হেলে পড়ল। মৃদু আওয়াজ বেরুল মুখ থেকে। সিদাত তরীর মুখে এরকম আওয়াজ শুনে কিছুটা বিচলিত হয়ে উঠে বসতে চায়, কিন্তু তরী এতে বাঁধা দিয়ে বলল,
–“উঠবেন না। শুয়ে থাকুন। আমি ঠিক আছি!”
–“কী হয়েছিল? কোনো সমস্যা?”
তরী কিছুক্ষণ নীরব থেকে বলল,
–“এক ভাবে অনেকক্ষণ বসে থাকায় পা গুলো একটু ঝিমঝিম করছিল।”
–“এখন?” সিদাতের চিন্তিত সুর।”
–“স্বাভাবিক হচ্ছে!”
–“এতক্ষণ বলো নি কেন?”
তরী আঁধারেই সিদাতের চোখ জোড়া খুঁজে বেড়াল। অনুমান করে সিদাতের দিকে চেয়ে বলল,
–“আপনার স্বস্থিতে ব্যঘাত ঘটাতে ইচ্ছে করেনি!”
তরীর এ-কথা শুনে সিদাত বিস্মিত হয়। বেশ কিছুটা সময় নিয়ে বলল,
–“বিয়ের আগে তো আমাকে পছন্দ করতে না, কঠিন কথা ছাড়া কিছু বলতে না। হঠাৎ পরিবর্তন?”
–“বিয়ে সম্পর্কটা আমার কাছে খুব দামী। তাই বিয়ের আগের সময় গুলোতে আমি কঠিন ভাবে থাকার চেষ্টা করেছি, যেন আমার এই সরলতা আমার স্বামী সবটা জুড়ে পায়। হয়তো আপনার সাথে সবটা মানিয়ে নিতে আমার একটু সময় লাগবে। তবে আমি এখন থেকেই চেষ্টা করছি, আপনার সাথে মেশার। আপনাকে বোঝার। যাতে আন্ডারস্ট্যান্ডিং-টা সহজ হয়!”
সিদাত মুগ্ধ হল। এরকম স্ত্রী পাওয়া সত্যি-ই তার জন্যে ভাগ্যের ব্যাপার। খুব কম মানুষের ভাগ্যেই বোধহয় এরকম স্ত্রী জুটে। যারা নিঃসন্দেহে ভাগ্যবান। সিদাত বোধহয় সেই ভাগ্যবান পুরুষদের খাতায় নিজের নাম লিখিয়েছে। এরকম স্ত্রীর জন্যে সিদাত তার সাধ্যমতন সব কিছুই করতে রাজি। সিদাত অস্ফুট স্বরে বলল,
–“মা চলে যাওয়ার আগে আমাকে এক দারুণ উপহার দিয়ে গেছে। এই উপহারের সঠিক মর্যাদা আমি কী দিতে পারব?”
তরী কিছু বলল না, নীরবে হাসল। কিছুক্ষণ বাদে বলল,
–“তাহাজ্জুদের সময় হয়ে গিয়েছে। আসুন এক সাথে নামাজটা পড়ি। মাকে দোয়ায় রাখলে মনে শান্তি অনুভব করবেন!”
©লাবিবা ওয়াহিদ
~[ক্রমশ]
বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন। গগঠনমূলক মন্তব্যদের প্রত্যাশায় রইলাম।