হয়তো_তোরই_জন্য পর্ব-১৯

0
2418

#হয়তো_তোরই_জন্য
#পার্ট_১৯
#নিশাত_জাহান_নিশি

—-“জায়ান প্লিজ যা তো। বিরক্ত লাগছে।”

—-“ভাইয়া প্লিজ বুঝার চেষ্টা কর। সামনে আমাদের অনেক বিপদ।”

কথাটা শুনে জাবেদের কেমন ঘটকা লাগল। তাই সে বসা থেকে উঠে দৌঁড়ে গিয়ে রুমের দরজাটা খুলে দিলো। জায়ান ধরফরিয়ে রুমে ঢুকে রুমের দরজাটা আটকে জাবেদকে নিয়ে সোজা বেডে বসে পড়ল। জাবেদ কপাল কুঁচকে বলল,,,,,

—-“এসব কোন ধরনের পাগলামী জায়ান। এভাবে টানা হেছড়া করার মানে কি?”

—“ভাইয়া তোর সাথে আমার খুব ইম্পরটেন্ট কথা আছে। খুব সাবধানে আর একান্তে কথা গুলো বলতে হবে। তাই এভাবে টানা হেছড়া করছি।”

জাবেদ ভ্রু কুচকে বলল,,,,,

—-“কি ইম্পরটেন্ট কথা? যা বলার তাড়াতাড়ি বল।”

জায়ান কিছুটা সিরিয়াস হয়ে বলল,,,,,

—“তাহাফ ভাইয়া আমাদের পিছনে লেগে আছে। তোর আর আমার জীবন হুমকির মধ্যে আছে।”

জাবেদ কিছুটা রেগে বলল,,,,,

—-“হোয়াট রাভিস! যতো সব আউল ফাউল কথা।”

—-“আমি সত্যি বলছি ভাইয়া। প্লিজ আমার কথা বিশ্বাস কর।”

—“তাহাফ খামোখা আমাদের ক্ষতি করবে কেনো?”

—-“এর অনেক গুলো কারণ আছে। প্রথমত, তুই আর আমি তমাকে ভালোবাসি। দ্বিতীয়ত, তাহাফ ভাইয়া তমাকে বিয়ে করতে চায়। কজ উনি তমাকে ভালোবাসে। উনি চায় না তমা আর উনার মাঝে আমরা কেউ আসি। তাই উনি প্ল্যান করে রেখেছে আমাদের ক্ষতি করার। শুধু ক্ষতি কেনো বলছি আমাদের মারার ফুলপ্রুভ প্ল্যান করেছে।”

জাবেদ চরম অবাক হয়ে জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—-“হোয়াট? তাহাফ তমাকে ভালোবাসে? কখনো তো শুনি নি!”

—“হুম ভাইয়া। তোর আগে থেকে তাহাফ ভাইয়া তমাকে ভালোবাসে। তাছাড়া ঐদিন তাহাফ ভাইয়ার দল বল ই তোকে আর আকাশকে ছাদের পিলারের সাথে বেঁধেছিলো।”

জাবেদ মাথায় হাত দিয়ে বেশ চিন্তিত হয়ে বলল,,,,,,

—-“কি বলছিস এসব তুই? তাহাফ এতোটা জঘন্য?”

—-“হুম ভাইয়া খুব জঘন্য। তাই তাহাফ ভাইয়া থেকে আমাদের যথেষ্ট দূরে দূরে থাকতে হবে। তাহাফ ভাইয়া আমাদের মারার প্ল্যানিং করেছে। আপাতত কিছুটা দিন তোকে এক্টা সেইফ জায়গায় থাকতে হবে। তাহাফের কাহিনী খতম করে এরপর আমি তোকে ডেকে নেবো।”

জাবেদ কিছুটা চিন্তিত হয়ে বলল,,,,,

—-“তোর কি হবে? তাহাফ তো তোকে ও মারতে চাইছে!”

—“তোকে আমার কথা ভাবতে হবে না। আমি লুকিয়ে পড়লে তাহাফ হয়তো বুঝে যাবে আমি ওর প্ল্যানিং ধরে ফেলেছি। তাই আমাকে প্রকাশ্যে থাকতে হবে। আমাকে সামনে থেকেই তাহাফের মোকাবিলা করতে হবে!”

—-“বেশি রিস্ক হয়ে যাচ্ছে না?”

—“রিস্ক নিয়েই তো জীবন। রিস্ক না থাকলে জীবনটা তেমন জমে না। কেমন একঘুয়ে লাগে।”

জাবেদ জায়ানের কাঁধে হাত রেখে বলল,,,,,

—-“আমি ও তোর পাশে থাকতে চাই জায়ান।”

—-” না ভাইয়া এতে তোর লাইফ রিস্ক থাকতে পারে।”

জাবেদ মলিন হেসে বলল,,,,,,,,

—-“থাকুক। রিস্ক নিয়েই তো জীবন।”

জায়ান জাবেদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে জাবেদকে জড়িয়ে ধরল। জাবেদ চোখ দুটো বন্ধ করে জায়ানকে টাইট করে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,,,,

—-“আ’ম স্যরি জায়ান। এতোটা বছর ধরে তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করার জন্য। একচুয়েলি, আমি তমাকে খুব ভালোবাসি তো, তাই নিজের অজান্তেই সব কেমন উল্টো পাল্টা হয়ে যায়। তোর সাথে তমাকে দেখলে ভীষণ মন খারাপ হয়। কেমন জেদ জেদ লাগে। তাই রাগের বসে তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলি। উল্টো পাল্টা কাজ করে বসি। প্লিজ আমাকে মাফ করে দে জায়ান। নেক্সট টাইম এই ভুল গুলো হবে না। নিজেকে যথেষ্ট কন্ট্রোল করার চেষ্টা করব। তোদের দেখে হাসি, খুশি থাকার চেষ্টা করব। আগের সব ভুলের জন্য আমাকে মাফ করে দে জায়ান।”

জায়ান মলিন হেসে বলল,,,,,,,,

—-“আগে যা হয়েছে ভুলে যা। এসব মনে রেখে লাভ নেই। তুই এতো বছর যা করেছিস একদম ঠিক করেছিস। তোর জায়গায় আমি থাকলে হয়তো এর চেয়ে বেশি করতাম। এখন এসব কথা বাদ দে। সামনে কি করতে হবে আমরা বরং তা নিয়ে ভাবি।”

—-“একদম ঠিক বলেছিস। আমাদের এক্টা পাকাপোক্ত প্ল্যান করতে হবে। তাহাফকে হাতে নাতে ধরতে হবে।”

—-“হুম। যা করতে হবে তাহাফদের বাড়িতে থেকে করতে হবে। তাহলে প্রমান সহ তাহাফকে ধরতে পারব।”

—-“প্রমান সহ ধরতে পারব মানে?”

—-“তাহাফদের পুরো বাড়ি সিসি ক্যামেরা ফিট করা হয়েছে। তাহাফ যাই করবে তাই প্রমাণ স্বরূপ সিসি ক্যামেরায় গেঁথে যাবে।”

জাবেদ জায়ানকে ছেড়ে মলিন হেসে বলল,,,,,

—-“বাঃহ ভালো আইডিয়া তো। তাহলে চল এবার আমরা প্ল্যানিং সাজাই তাহাফকে জব্দ করার।”

—-“তাহাফকে জব্দ করতে হলে আগে আমাকে বিয়ের পিড়িতে বসতে হবে। আমাদের বিয়ের দিনই তাহাফ ওর ভয়ংকর চাল চালবে। সেই অব্দি তোকে গা ঢাকা দিয়ে থাকতে হবে। তুই দূরে দূরে থেকে আমার সাথে কানেক্টেড থাকবি। বিয়ের দিন এসে আমার সাথে জয়েন করবি।”

—-“তাহলে তো বিয়েটা এই সপ্তাহের মধ্যেই করতে হবে। যতো দিন বাড়বে তাহাফ ততো ভয়ংকর হয়ে উঠবে।”

—-“ঠিক বলেছিস। আমি ও তাই ভাবছি। আজই আম্মু, আব্বুর সাথে কথা বলে সামনের সপ্তাহে বিয়ের ডেইট ফিক্সড করে নিবো। এই এক সপ্তাহ তোকে দূরে দূরে থাকতে হবে। আজ রাতেই তোকে গা ঢাকা দিতে হবে। তুই কোথায় আছিস এই ব্যাপারে যেনো কেউ কিছু না জানে। এমনকি আমাদের ফ্যামিলির মেম্বাররা ও না। তাহাফ যদি কোনো রকমে জানতে পারে তুই কোথায় আছিস। তাহলে তোর ক্ষতি করার চেষ্টা করবে।”

—-“ওকে….তুই যা বলবি তাই হবে। তাহলে আজ রাতেই আমি বরিশাল চলে যাবো। ইরফানের বাড়িতে।”

—-“হুম তাই কর। তুই বরং ব্যাগ প্যাক করে নে। আমি আসছি।”

কথাটা বলেই জায়ান রুম থেকে বের হয়ে সোজা জয়ার রুমের দরজার সামনে দাঁড়াল। দরজাটা ভেতর থেকে লক করা। জায়ান দরজা ধাক্কিয়ে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,,

—-“জয়া দরজা খোল। আমি তোর জায়ান ভাইয়া।”

জায়ানের গলার স্বর পেয়ে জয়া কান্না থামিয়ে আকাশকে ওর উপর থেকে ধাক্কা মেরে সোজা দরজাটা খুলে জায়ানের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ল। আকাশ মুহূর্তেই ওর রাগী ভাবটা ভুলে মুখে মৃদ্যু হাসি ঝুলিয়ে জয়ার পিছু পিছু রুম থেকে বের হয়ে গেলো। জয়া জায়ানের বুকে মাথা রেখে অঝড়ে কাঁদছে আর নাকের জল মুচছে। জায়ান বেশ বুঝতে পেরেছে আকাশ আর জয়ার মধ্যে কিছু না কিছু হয়েছে। আকাশে জোর পূর্বক হাসি টেনে জায়ানের কাঁধে হাত রেখে বলল,,,,,

—-“দেখছিস তোর পাগলী বোনটা সেই কখন থেকে কান্না করেই যাচ্ছে। তোদের ছেড়ে যেতে নাকি ওর খুব কষ্ট হচ্ছে। কিছুতেই ওকে বুঝাতে পারছি না কাল বাদে পরশু তো আমরা এই বাড়িতে আসবই। সপ্তাহে দুই দিন করে আমরা এই বাড়িতে থেকে যাবো। কিন্তু কিছুতেই সে বুঝতে, চাইছে না। কি জয়া ঠিক বলছি তো?” (জয়ার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে)

জয়া এক্টা শুকনো ঢোক গিলে মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো। জায়ান বাঁকা হেসে আকাশকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—“আকাশ চল। এক্টু বাইরে থেকে ঘুরে আসি। তোর সাথে আমার কিছু ইম্পরটেন্ট কথা আছে।”

আকাশ ক্লোজ হাসি দিয়ে বলল,,,,,

—“চল চল ঘুরে আসি। তোর ইমপরটেন্ট কথাটা ও শুনে আসি।”

জায়ান ডেবিল স্মাইল দিয়ে জয়াকে ওর বুক থেকে উঠিয়ে আকাশের হাত ধরে বাড়ির বাইরে চলে গেলো। জয়া রুমে ঢুকে রুমের দরজা আটকিয়ে অঝড়ে কাঁদছে আর বলছে,,,,,,,,

—-“আমি ঠকে গেলাম জায়ান ভাইয়া। আকাশের ছলনার কাছে আমি ঠকে গেলাম। আকাশ আমাকে ঠকিয়েছে। আকাশ গোপনে আরো অনেক মেয়ের সাথে কথা বলে। আমি হাতে নাতে আকাশকে দেখেছি। এমনকি তমার অশ্লীল ছবি ও আমি আকাশের ফোনে দেখেছি। আকাশ তমাকে ও ঠকিয়েছে। আকাশ আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে মুখ বন্ধ করে রেখেছে। তমার ছবি ভাইরাল হওয়ার ভয়ে আমি মুখ খুলছি না। আমি চাই না আমার এক্টা ভুলের জন্য তমার চরিএে দাগ লাগুক। তাই মুখ বুজে সব সহ্য করে নিচ্ছি।”

কথাগুলো বলেই জয়া ধপ করে বিছানায় বসে শাড়ি আঁকড়ে কাঁদতে লাগল। জায়ান বাড়ি থেকে বের হয়ে আকাশকে নিয়ে সোজা গাড়িতে উঠে গেলো। প্রায় বিশ মিনিট পর জায়ান এক্টা নিরিবিলি জায়গায় গাড়ি থামালো। জায়গাটা খুব শুনশান। শুধু এক্টা গুদাম ঘর দেখা যাচ্ছে। জায়ান আকাশকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে সোজা গুদাম ঘরটায় ঢুকে গেলো। আকাশ বেশ অবাক হয়ে জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“এই কোথায় এলাম আমরা? এটা কোনো ঘুরার জায়গা হলো?”

হুট করে জায়ান এক্টা টুল টেনে আকাশকে হেচকা টান দিয়ে টুলটাতে বসিয়ে এক্টা দঁড়ি দিয়ে আকাশের হাত, পা বেঁধে দিলো। আকাশ বেশ ভয় পেয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,,,

—-“কিকিকিকি করছিস এসব তুই? আআআমাকে এভাবে বাঁধলি কেনো?”

জায়ান চোয়াল করে এক্টা কাঠের গুঁড়ি নিয়ে আকাশকে এলোপাথারি মারছে আর চিৎকার করে বলছে,,,,,,

—-“আমার বোনকে কষ্ট দেওয়া তাই না? আমার তমুর সাথে ফস্টি নস্টি করা তাই না? আমার বন্ধুত্বের সুযোগ নেওয়া তাই না? সব কিছুর উসুল আমি নিয়েই ছাড়ব। তোকে মারতে মারতে আজ আধমরা করে ছাড়ব।”

আকাশ জোরে জোরে কাঁদছে আর বলছে,,,,,,,

—-“প্লিজ জায়ান আর মারিস না। আমি খুব ব্যাথা পাচ্ছি। হাত, পা ভেঙ্গে যাবে আমার। আমার যদি কিছু হয়ে যায় তোর বোন কিন্তু বাঁচবে না। বাঁচলে ও বিধবা হয়ে বাঁচবে। বোনকে বিধবা সাজে দেখে সহ্য পারবি তো?”

জায়ান মার ধরের পরিমাণ আরো বাড়িয়ে দিয়ে জোরে চেঁচিয়ে বলছে,,,,,,,

—-“আমাকে ভয় দেখাচ্ছিস তাই না? এই জায়ানকে ভয় দেখাচ্ছিস? তাহলে শুন….তোর কিছু হয়ে গেলে আমার বোনের কিছু আসবে যাবে না। অন্য কোথাও আমি আমার বোনকে বিয়ে দিবো। তোর থেকে ডবল ভালো ছেলের সাথে আমি আমার বোনকে বিয়ে দিবো। তোর মতো ক্যারেক্টার লেস ছেলে আমার বোনের যোগ্য না। তুই ওর জীবনে না থাকলে ওর কিচ্চু হবে না।”

—-“প্লিজ আমাকে মাফ করে দে জায়ান। আমার ভুল হয়ে গেছে। আর জীবনে ও এমন ভুল করব না। প্লিজ আমাকে ছেড়ে দে।”

জায়ান আকাশকে মারতে মারতে রক্তাক্ত করে ফেলেছে। আকাশের জীবন এখন প্রায় যায় যায় অবস্থা। জায়ান কিছুটা ক্লান্ত হয়ে মার থামিয়ে দিকে আকাশের থুতনী চেঁপে ধরে তেজী কন্ঠে বলল,,,,,,,

—-“বল তোর গার্লফ্রেন্ড কয়জন? বিয়ের পরে ও কার কারর সাথে কনটিনিউ করছিস?”

আকাশ চোখ জোড়া আধ খোলা করে ঢুলতে ঢুলতে বলল,,,,,,,

—-“দুদুদুই জনের সাথে কনটিনিউ করছি।”

—-“ওরা কি জানে না তুই বিবাহিত?”

—-“না।”

—-“কেনো জানাস নি?”

—-“জানালে ওরা আমাকে ছেড়ে দিতো।”

—-“তমুর সাথে কেনো প্রেমের অভিনয় করলি?”

—“তমাকে আমার ভালো লাগত তাই!”

—-“তমু আমার বউ..তা জানা সও্বে ও তুই কেনো আমার তমুকে প্রেমের জালে ফাসালি? আমার তো মনে হচ্ছে কেউ তোকে স্যাল্টার দিয়েছে।”

—-“কেউ সেল্টার দেয় নি আমাকে। তমাকে আমার ভালো লাগত তাই তমার সাথে প্রেমের অভিনয় করেছি।”

—-“খারাপ কিছু করিস নি তো তমুর সাথে?”

—-“চান্স ই তো পাই নি। তবে তমার কিছু অশ্লীল ছবি আমার কাছে আছে। তুই চাইলে এখনি ডিলেট করে দিতে পারিস। ফোনটা আমার পকেটে।”

জায়ান আর এক মুহূর্ত দেরি না করে আকাশের পকেট থেকে ফোনটা নিয়ে গ্যালারি অপশনে ঢুকে চোখ বন্ধ করে তমার অশ্লীল ছবি গুলো ডিলেট করে দিলো। আকাশ ব্যাথায় ছটফট করছে আর চিৎকার করে বলছে,,,,,,,,

—-“প্লিজ জায়ান এবার তো আমাকে ছাড়। শেষ বারের মতো আমাকে মাফ করে দে। আমি কথা দিচ্ছি আর কখনো এমন নোংরামো করব না। নিজের ক্যারেক্টার শুধরে নিবো। জয়াকে আর কষ্ট দিবো না। জয়াকে ভালোবেসে আগলে রাখব। প্লিজ আমায় বিশ্বাস কর। আমি তোর কাছে হাত জোর করছি।”

জায়ান চোয়াল শক্ত করে আকাশের সামনের চুল গুলো মুঠ করে ধরে বলল,,,,,,

—-“এতোক্ষন যা যা বলেছিস সব মনে থাকবে তো?”

—“হুম জায়ান মনে থাকবে। পারলে তুই রেকর্ড ও করে নিতে পারিস। আমি এতোদিন খুব পাপ করেছি। অন্যায় করেছি। এই পর্যায়ে এসে আমি আমার ভুলটা বুঝতে পারছি। আমি খুব লজ্জিত জায়ান। প্লিজ আমাকে এক্টা বার সুযোগ দে। আমি আমার ভুল শুধরাতে চাই।”

জায়ান আকাশের চুল গুলো ছেড়ে নিজেকে খানিক শান্ত করে বলল,,,,,

—-“এইবারের মতো তোকে ছাড় দিলাম। পরের বার আর ছাড় দেওয়া হবে না। সোজা কবরে দাফন করা হবে। আশা করি তুই তোর কথা রাখবি। আমার বোনকে নিয়ে হাসি খুশি থাকার চেষ্টা করবি।”

আচমকাই আকাশ গোঙ্গাতে গোঙ্গাতে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলল। ব্যাথায়, যন্ত্রনায় টিকতে না পেরে আকাশ সেন্সলেস হয়ে গেছে। জায়ান আর দেরি না করে আকাশকে টেনে হেছড়ে গুদাম থেকে বের করে সোজা গাড়িতে নিয়ে বসিয়ে দিলো। জায়ান এক হাত দিয়ে ড্রাইভ করছে আর অন্য হাত দিয়ে আকাশকে ধরে রেখেছে। জায়ানের উদ্দেশ্য হলো হসপিটাল যাওয়া। আকাশের ট্রিটমেন্ট করা।

প্রায় বিশ মিনিট পর জায়ান ইলোরা হসপিটালের সামনে এসে গাড়ি সাইড করল। জায়ান আকাশকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে সোজা হসপিটালে ঢুকে গেলো। ডক্টরের কেবিনে যাওয়ার সাথে সাথেই ডক্টররা আকাশের ট্রিটমেন্ট শুরু করল। হাত, পা এক্সরে করার পর জানা গেলো আকাশের বামটা হাতের কব্জিটা খানিক ভেঙ্গে গেছে। প্লাস্টার করা হয়েছে হাতে। প্রায় দুই ঘন্টা ট্রিটমেন্টের পর মেডিসিন আর এক্সরে রিপোর্ট নিয়ে জায়ান আকাশকে নিয়ে বাড়িতে ফিরল।

ঘড়িতে দুপুর দুইটা। জায়ান আকাশকে নিয়ে বাড়ির ড্রইং রুমে পা রাখল। আকাশের কপালে ব্যান্ডেজ আর হাতের প্লাস্টার দেখে ড্রইং রুমে উপস্থিত জায়ানের আম্মু, আব্বু, জাবেদ, জয়া, তমা সবাই খুব ঘোরতোড় ঝটকা খেলো।

জয়া উদ্বিগ্ন হয়ে দৌঁড়ে গিয়ে আকাশের প্লাস্টার করা হাতটার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,

—–“তোতোতোমার হাতে প্লাস্টার কেনো আকাশ? কিকিকি হয়েছে তোমার?”

আকাশ শান্ত চোখে জয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। জয়ার চোখে পানি টলমল করছে। জায়ান জয়ার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,,,,,,,,

—-“আকাশের এক্টা ছোট্ট এক্সিডেন্ট হয়েছে জয়া। রাস্তা পাড় হতে গিয়ে এমনটা হয়েছে।”

আকাশ অবলার মেয়েদের মতো মুখ করে জায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। জয়ার আস্মু, আব্বু দৌঁড়ে এসে আকাশের সামনে দাঁড়িয়ে হায় হুতাশ করতে লাগল। জাবেদ ও বেশ পেরেশান হয়ে আকাশকে দেখছে। তমা দূর থেকে দাঁড়িয়ে হু হা করে হাসছে। সে ঠিক বুঝতে পেরেছে এসব জায়ানের চালাকী।

জায়ান বাঁকা হাসি দিয়ে তমার দিকে তাকিয়ে আছে। তমা হুট করে জায়ানকে চোখ মেরে দিলো। জায়ান চোখ দুটো বড় বড় করে তমার দিকে তাকিয়ে আছে।

#চলবে……….