গল্প :- অপ্রত্যাশিত সম্পর্ক
পর্ব :- ০৪
Writer :- Kabbo Ahammad
.
.
.
-: তখন আমি খাবারটা ধীরে-সুস্থে শেষ করে নিজের রুমের দিকে গেলাম। মিরা আগেই রুমে চলে এসেছে। আমি রুমে ডুকতেই মিরা তড়িৎ গতিতে দরজাটা বন্ধ করে দিলো। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
–দরজা কেন বন্ধ করলে?
—আচ্ছা তুই কি আমার উপর জোরজবরদস্তি কারার চেষ্টা করছিস নাকি??
–আমি আবার কখন কি করলাম?। আর তুমি তুই-তুকারি করছো কেনো?
—হা হা হা এখন নাটক করছিস কেন? হানিমুনে যাওয়ার প্লেনটাতো তোরই তাইনা। ওখানে গিয়েতো নিজের সব অধিকার জোর করে আদায় করে নিতে পারবি। ভালো করে শুনে রাখ আমি তোর সাথে কোথাও যাচ্ছি না।
–আশ্চর্য! তাহলে তখন তুমি বাবা-মাকে না করে দিলে না কেন?
—আমি কি করে তাদের মুখের উপর না করবো?
–তাহলে এখন আমাকে দোষ দিচ্ছো কেন?? আর শুনো যদি তোমাকে জোর কারার ইচ্ছা হতো তাহলে অনেক আগেই অনেক কিছু করতে পারতাম। চাইলে এখানেও জোর করতে পারি।
(কথাটা শুনে মিরা দু পা পিছিয়ে গেলো..!! আমার বললাম।)
কিন্তু না আমি তেমন কিছুই করবো না। তুমি যদি আমাকে মেনে নিতে না পারো, তাহলে চিন্তা করো না সময় হলেই আমি তোমাকে মুক্ত করে দিবো। কথাগুলো বলে বেরিয়ে এলাম। নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে। এমন মেয়েকে কি করে ভালোবাসলাম আমি। যে কিনা আমায় একটুও বিশ্বাস করে না।
আমি সোজা অফিসে এসে বাবাকে ফোন করে কাজের অযুহাত দেখিয়ে হানিমুনের কথা না করে দিলাম। বাবাকে কিছু বলতে না দিয়েই ফোন রেখে দিলাম। এরপর নিজের কাজে মন দিলাম।
রাত্রে অফিস থেকে বের হতে হতে অন্ধকার নেমে গেলো। বাড়িতে পৌছে দেখি সবাই বসার ঘরেই বসে আছে। সাথে আবার মিরার বাবা-মা, আর একটা কাজিনও আছে। আমি গিয়ে তাদের সাথে কূশল বিনিময় করলাম এবং জিজ্ঞেস করলাম সবাই কেমন আছে। তারপর উপরে চলে আসতে যাবো, তখনি বাবা আমাকে ডেকে সবার সাথে বসালেন। আর বলতে লাগলেন।
—নীলয় বৌমা যেখানে ঘুরতে যেতে চাইছে,, তুই সেখানে না করছিস কেনো.?
আমি বাবার কথা শুনে আবাক রীতিমত..!
কি বলছে এসব.? তারপর মিরার দিকে তাকলাম। কিন্তু সে আমার দিকে না তাকিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। বাহ্! নিজেকে এখন বাঁচিয়ে নিয়ে আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। তখন শাশুড়ি বলে উঠলেন।
—যাও বাবা মিরাকে নিয়ে কিছুদিনের জন্য ঘুরে আসো। দেখছো না সারাদিন কেমন মন মরা হয়ে থাকে মেয়েটা। একটু ঘুরে আসলে ওর মনটাও ভালো হয়ে যেতো। (শ্বশুড় আব্বা)
আবার পাশে থেকে মিরার কাজিন মানে আমার শালিকা বলে উঠলো।
—দুলাভাই! বিয়ের পরতো সবাই হানিমুনে যায়, আপনি যেতে চাচ্ছেন না কেন?(শালিকা)
এদিকে সবার কথাগুলো কাঁটার মতো বিধছে। আমার মনে হচ্ছে…….
তারপর আমি কিছু না পেয়ে বললাম।
–আসলে অফিসের কাজ প্রচুর এজন্য…
তখন বাবা আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন।
—তোকে ভাবতে হবে না। এই কয়দিন আমিই সামলে নিতে পারবো।
আমার আর এখানে কিছু বলার নেই, তাই সোজা উপরে আমার রুমে চলে এলাম। এসে ওয়াসরুমে চলে গেলাম ফ্রেস হতে। বেরিয়ে এসে দেখি মিরা দাঁড়িয়ে আছে। আমি পাশ কাটিয়ে গিয়ে লেপটপটা নিয়ে সোফায় বসে পড়লাম। তখন মিরা আবার আমার সামনে এসে বললো।
—স্যরি নীলয়..! আসলে আমি..
–থাক কিছু বলা লাগবে না। যদি কিছু মনে না করো আমার কিছু কাজ করতে হবে।
তারপর মিরা চলে যায়। আর আমিও শান্তিমতো কাজগুলো সেরে নিলাম। কাল আবার এগুলো বাবাকে বুঝিয়ে দিয়ে যেতে হবে। তখন একটু পর মিরা এসে বললো নিচে খাবার খেতে যাওয়ার জন্য।
তারপর নিচে গিয়ে রাতের খাবার খেয়ে নিলাম। আর খাওয়া-দাওয়া করে উপরে এসে নিজের কাপড়-চোপড় গুছিয়ে নিলাম। কালকে তো আবার সকালের দিকেই রওনা দিতে হবে। সব গোছ-গাছ করে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। একটু পর দেখি মিরাও নিজের গোজ-গাজ সেরে নিলো। তারপর আমি ঘুমিয়ে পরলাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি মিরা আমার আগেই উঠে গেছে। আমি আর দেরি না করে ওয়াসরুমে ডুকে পরলাম। তারপর নিচে গিয়ে দেখি সবাই মা নাস্তা তৈরি করছে। আর মিরা সেগুলো টেবিলে এনে রাখছে। এরপর নাস্তাটা করে রুমে চলে আসি। আমি আগেই তৈরি হয়ে ব্যাগপত্র নিয়ে নিচে চলে আসি। তার কিছুক্ষণ পর মিরাও তৈরি হয়ে নামলো।
মিরাকে আজকে একেবারে অন্যরকম লাগছে। হালকা সাজে, নীল একটা শাড়ি পরেছে। এটুকুতেই মিরাকে পরীর মতো লাগছে। আমি মিরার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর। একটু ব্যস্থতা দেখিয়ে মা-বাবা থেকে বিদায় নিয়ে মিরাকে ঘরে রেখেই ব্যাগ-লাগেজ নিয়ে গাড়িতে রাখালাম। কিছুক্ষণ পর মিরাও মা-বাবার সাথে দরজা পর্যন্ত আসলো। তরপর মিরা মা-বাবা থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। তখন আমি গিয়ে সামনে ড্রাইভারের সাথে বসলাম। মিরা কিছুটা অবাক হয়ে যায় আমি সামনে বসার কারণে। তারপর কি একটা ভেবে যেন গাড়িতে পিছনের সীটে বসে পড়লো।
(আপনারাও হয়তো ভাবছেন যে আমার ও মিরার সাথে পিছনে বসা উচিত ছিলো। কিন্তু কি করবো মিরা আমাকে নিয়ে আবার কি ভাববে। তাই আমি আর কোনো চান্স নিতে চাইনি। শুধু শুধু কটু কথা শুনতে চাইনা। তার চেয়ে ভালো আমি দুরত্ব বজায় রেখেই চলি।)
ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিয়ে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্য রওনা দিলো। আসলে আমরা যাচ্ছি সুইজারল্যান্ডে।
আর সেখানে আমার এক খালামনি থাকেন। আমরা খালমনির ওখানেই ওঠবো। আমি ফোনটা বের করে খালামনিকে ফোন দিলাম। জানিয়ে দিলাম যে আমরা আজকেই রওনা দিচ্ছি। কিছুক্ষন খালামনির সাথে কথা হলো। তারপর ফোনটা কেটে রাস্তার দিকে নজর দিলাম। আর কানে ইয়ারফোনটা গুজে দিলাম।
পিছন থেকে হয়তো মিরা আমাকে ডাক ছিলো। কিন্তু আমি শুনতে পাইনি। তাই একটা ধাক্কা দিলো।
তখন আমি পিছন ফিরে মিরার দিকে তাকালাম। মিরা রেগে গিয়ে বললো।
—কখন থেকে ডাকছি শুনতে পাচ্ছো না!
–স্যরি! আসলে একটু গান শুনছিলাম।
—হুমম ঠিক আছে। তো আমরা সুইজারল্যান্ডে যাচ্ছি?
(আসলে মিরাকে বলা হয়নি যে আমরা কোথায় যাচ্ছি)
–হুমম।
—তা একটু আগে যার সাথে কথা বলছিলে, তিনি কে তোমার খালামনি।
–হ্যাঁ.!!
—আচ্ছা খালামনিকি একাই থাকেন ওখানে?
–হুমম। খালু মারা যাবার পর খালামনি ওখানেই থাকেন। আসলে খালু ওখানকার স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন।
—খালা মনির কোনো সন্তান নেই।
–থেকেও নেই।
তারা খালমনির সাথে থাকে না। যার যার মতো বিয়ে করে চলে গেছে। অবশ্য খালা মনি কারো মুখাপেক্ষী নয়। একটা বিজনেসে খালুর শেয়ার ছিলো। সেটা এখন খালা মনির নামে।
—ও আচ্ছা।
মিরা আবারও কিছু জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিলো।
ততক্ষণে আমরা এয়ারপোর্টে পৌছে গেছি। আমরা গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম। আর ভেতরে ডুকে যাই। বিমানে মিরা আর আমার সীট পাশাপাশি।
তবে আমারটা জানালার দিকে। মিরা হয়তো জানলার দিকটায় বসতে চাইছিলো। তাই আমি ওকে বললাম,,
–তুমি জানলার সাইটাতেই বসো।
মিরা খুশি হয়ে বসে পড়লো। আর বললো,, ঠেংকিউ!
আমি কিছু না বলে মিরার পাশে বসে পরলাম।
বিমান ছেড়ে দিলো। তখনই দেখলাম মিরা আমার হাতটা শক্ত করে ধরে আছে আর চোখ দুটো বন্ধ করে আছে। হয়তো ভয় পাচ্ছে। মনে হয় এটাই তার প্রথম প্লেন জার্নি। তবে মিরার ঐ সময়ের চেহারাটা যে কতোটা কিউট লাগছিলো বলে বুঝাতে পারবো না। আমার একটু হাসিও পাচ্ছিলো মিরার এমন কান্ড দেখে। কিছুক্ষণ পর যখন বিমান স্থির হলো তখন গিয়ে মিরা চোখ খুলে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আমার সাথে মিরার চোখাচোখি হতেই মিরা আমার হাতটা ছেড়ে দিলো। কিছুটা ইতস্ততভাবে ঘারটা ফিরিয়ে জানলার বাইরের দিকে তাকলো। আমি আমার মতো বসে রইলাম।
কিছুক্ষন পর একজন বিমানবালা কফি নিয়ে আসলো। আমি একটা কেপেচিনো নিলাম। আর মিরাকে জিজ্ঞেস করতে বললো,, ও চিপস নেবে। চয়েসটা কেমন যেন বাচ্চা বাচ্চা তাইনা☺।
আমি কফিতে চুমুক দিয়ে মিরার দিকে তাকিয়ে দেখলাম,, মিরা পুরো তৃপ্তির সাথে চিপস খাচ্ছে।
আমি আগে জানতাম না যে মিরার চিপস এতোটা পছন্দ। আমি অবাক হয়ে মিরার খাওয়া দেখছিলাম।
তখনি মিরা আমাকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইশারায় বললো।
—খাবে নাকি?
আমি সাথে সাথেই চোখ ফিরিয়ে নিজের কফিতে মুখ দিলাম। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি প্রায় অর্ধেকের মতো যাত্রীই কাপল। তারা নিজেদের মধ্যে মিষ্টি আলাপ করছে। আর আমি একালা হয়ে বসে আছি। কপাল ?
দেখতে দেখতে আমাদের প্লেন যখন সুইজারল্যান্ডের মাটিতে ল্যান্ড করে। তখন বাইরে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম যে এখানে এইমাত্র সূর্যোদয় হলো।
প্লেন থেকে নামার পর আমরা বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে আসতেই একটা বাংলাদেশী তরুণী আমাদের দিকে এগিয়ে আসলো। মেয়েটি আমাদের কাছ এসেই বললো।
—আপনারাই মিস্টার এন্ড মিসেস নীলয়! আমি কি ঠিক বলছি..?
তখন আমি মেয়েটির দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে থেকে বললাম।
–জ্বী আমরাই…। কিন্তু আপনি কে? আর আমাদের চিনেনই বা কি করে?
—জ্বী আমাকে আপনার খালামনি পাঠিয়েছে। আপনাদেরকে রিসিভ করে বাড়িতে নিয়ে যেতে। আসলে কোন একটা বিশেষ করণে ম্যাডামকে শহরের বাইরে যেতে হয়েছে। না হলে ম্যাডামই আপনাদের নিতে আসতেন। চলুন আমরা গাড়িতে গিয়ে বসি। সেখানেই না হয় বাকি কথা হবে☺।(মেয়েটি)
–হুমম। চলুন।(আমি)
তারপর মেয়েটির পিছন পিছন আমরা একটা গাড়িতে গিয়ে বসলাম। গাড়িতে কোনো ড্রাইভার নেই। তারমানে মেয়েটাই গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাবে। তো আগের মতোই আমি সামনে গিয়ে মেয়েটির পাশে বসলাম।
আর মিরাকে পিছনে বসতে হলো। এবার হয়তো মিরা একটু বেশিই বিরক্ত হলো। তাই সে নিজের বিরক্তিটাকে প্রকাশ করেই ফেললো। মিরা হঠাৎ করেই বলে উঠলো।
—আমার পিছনে একা একা বসে থাকতে ভালো লাগে না?। (মিরা)
আমি তখন মিরার দিকে অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ১০ সেকেন্ড ভেবে, ভারী গলায় বললাম।
–ঠিক আছে তুমি তাহলে সামনেই বসো। আমি পিছনে গিয়ে বসছি।
কথাটা বলেই গাড়ি থেকে বেরিয়ে পিছনে এসে বসে পড়লাম। কিন্তু মিরা আর তার জায়গা ছেরে উঠছে না। কেমন যেন বসে রইলো। তখন আমি বললাম।
–কি হলো। সামনে যাবে না?
তারপর মিরা হঠাৎ ই উঠে পরে আর সামনে গিয়ে মেয়েটির পাশে বসে পরে। মেয়েটির কাছে হয়তো আমাদের ব্যবহারটা একটু অদ্ভুত লাগছে। লাগারই কথা! আমি তাকিয়ে দেখলাম মেয়েটি অবাক হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তখন একটা হাসি দিয়ে বললাম।
–আমরা কি এখন যেতে পারি?
মেয়েটি মুহুর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,,
–সিউর! সিউর!…
বলেই গাড়ি স্টার্ট দিলো। একেবারে জ্যামমুক্ত স্মোথ রাস্তা। আাশেপাশে সুন্দর সুন্দর উঁচু-নিচু-মাঝারি সব ঘর-বাড়ী, বিল্ডিং, গাছপালা।
সব মিলিয়ে এক ঝাকঝমক পূর্ণ পরিবেশ।
মিরা মুগ্ধ হয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি আসলে এখানে আগেও অনেকবার এসেছি। অনেকদিন খালার সাথে থেকেছিও। ঘুরাঘুরিও করেছি এখানে অনেক। আর খালামনির বাড়িটা আসলে শহরের একেবারে শেষের দিকে। আর সেখানের ভিউটাও মনে রাখবার মতো। বাড়ির সামনে আছে একটা বাগান। তবে বাগানে গোলাপের জায়গায় দেখা মেলে এক প্রকার অর্কিডের। বাড়ির পিছন দিকটাই আছে একটা জঙ্গলা টাইপের জায়গা। সেটা পেরুলেই পরে একটা মাঝারি ঝিল। বাড়ির একপাশ দিয়ে সড়ক চলে গেছে। আর অন্যপাশে পরেছে পাহাড়ের সারি। সব মিলিয়ে এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।
তারপর আমি একটু সামনের দিকে ঝুকে আমাদের সাথে থাকা মেয়েটিকে বললাম।
–আপনাকে তো আগে দেখিনি মিস..
মেয়েটি হেসে জবাব দিলো।
—আমি আলিশা। আমি আসলে ম্যাডামের পিএ। বলতে পারেন ম্যাডামের সব সুবিধা-অসুবিধাগুলো দেখা আমার দায়িত্ব।
–ওহ। তো আপনি কি এখানে কতোদিন ধরে আছেন?
—বলতে পারেন জন্মের পর থেকেই। (আলিশা)
–মানে…!
তাহলে আপনি এতো সুন্দর বাংলা বলছেন কি করে??
—আসলে হয়েছে কি..!
আমার মা সুইজারল্যান্ডের আর বাবা বাংলাদেশি। আমি যখন অনেক ছোট। তখন বাবা-মার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। আর বাবা আমাকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে যায়। সেখানেই আমি বড় হই। যখন আমার বয়স ১৯। তখন মনে হয় আমার মায়ের আমার কথা মনে পড়েছিলো। তাই আমাকে দেখতে চায়। আমিও মাকে অনেক মিস করতাম। তাই খবর পেয়ে মায়ের সাথে দেখা করার জন্য বাবাকে সুইজারল্যান্ডে নিয়ে আসতে বলি। আসলে বাবার মায়ের উপর ভীষণ রাগ ছিলো। তাই উনি না করে দেন।
তারপর মেয়েটি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
তারপর আমি উৎসুক আবারো হয়ে বললাম।
–তারপর আপনি কি করলেন..? মিরাও হয়তো আমাদের কথায় মনযোগ সহকারে কান পেতে আছে।
—আসলে আমি তখন গোপনে মায়ের সাথে যোগাযোগ করি। তারপর একদিন বাবার থেকে লুকিয়ে মাকে দেখার জন্য চলে আসি। কিছুদিন পর বাবাকেও খুব মিস করতে লাগলাম। তাই আবার বাংলাদেশে ফিরে যাই। কিন্তু বাবাকে আর দেখতে পাইনি।
তিনি ওপারে চলে গেছেন। আর তখন আবার এখানে চলে আসি মায়ের কাছে। এখানেই লেখাপড়া শেষ করি। এখন মায়ের দেখাশুনা করছি।
কথাগুলো শেষ করেতে না করতেই তখনি হঠাৎ আলিশা একটা হাসি দিয়ে বললো।
—এইতো আমরা এসে পড়েছি।
আসলে এতক্ষণ মেয়েটির কথায় এতোটা হারিয়ে গিয়েছলাম যে অন্যকিছু খেয়ালি ছিলো না।
তারপর আমরা গাড়ি থেকে নেমে পড়ি। তখন আলিশা আমাদের বাড়ির ভেতরে নিয়ে যায়। খালামণি এখনো বাড়ি ফেরেনি। ওনি নাকি কালকে ফিরবেন। আলিশা আমােদের ঘরটা দেখিয়ে দেয়। আর একজন মেড সারভেন্টকে ডেকে আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। আর তাকে বলে দিলো যেন আমাদের দেখাশুনা করে।
তখন আলিশা আমাদের থেকে বিদায় নিয়ে কিছুক্ষণের জন্য তার বাড়িতে গেলো। আমি আর মিরা রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিই। তারপর গরম কাপড় গায়ে চাপিয়ে বেরিয়ে এলাম বাইরে। বাড়িতে একটা ফোন করে দিলাম। তারপর আপন মনে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলাম। তখন একটু পর মিরাও এখানে এলো। মিরা এসে নিজে থেকেই বলতে লাগলো।
—পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখলাম। খুবই সুন্দর। আর আশেপাশের পরিবেশটাও। আমাকে এখানে নিয়ে আসার জন্য থেংকস।
–হুম।
—কিন্তু এখানে খুবই ঠান্ডা।
–এখনি এসব বলছো। সন্ধ্যা নামলে দেখবে বরফ পড়া শুরু হয়ে গেছে। তখন কি করবে।
—কিহ্.!! এখানে বরফ পরবে নাকি?
তখনি পিছন থেকে আলিশা বলে উঠলো। আসলে এই শহরে সবসময় বরফ পরে না। মৌসুম অনুযায়ী বরফ পরে। আর এজন্যই এই শহরটা সবার কাছে এতো প্রিয়। চলুন আপনাদের একটু ঘুরিয়ে আনি।
এখানে পাশেই একটা ফেস্টিবল হচ্ছে। দেখবেন খুব ভালো লাগবে।
তখন আরকি সাথে সাথে আমরা বেরিয়ে পরলাম আলিশার সাথে। অনেক ঘুরাঘুরি আর কিছু খাওয়া-দাওয়ার পর সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফিরে আসি।
তবে দেশটা যতোই উন্নত হোক না কেন।
স্ট্রিট ফোড এর দিক দিয়ে আমাদের দেশ অনেক এগিয়ে।
রাতের খাবার ভালোই হলো। কিন্তু বিপত্তি বাধলো রাতের বেলা ঘুমাতে গিয়ে। এখানে এসেও মিরা বিছানাটা নিজের দখলে নিয়ে নেয়। আর ঘরে কোনো সোফা নামক কিছু দেখছি না। আছে বসার জন্য তিনটা দামী মখমলের বসন। এগুলোতে শুধু আরাম করে বসাই যাবে। কিন্তু ঘুমানো যাবে না।
দূর এখানে এসেও একটু শান্তি মতো ঘুমাতে পারবো না। তাই আমি একটু রাগ দেখিয়েই ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। তারপর পাশেই ড্রইং রুমে গিয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। কিছক্ষন পর বুঝতে পারলাম। এটা আমার দেশ নয়। এই দেশে যেখানে সেখানেই ঘুমিয়ে পড়া যায় না। কোথায় এসে শুয়ে পড়লাম। কি ঠান্ডারে বাবা!
নাহ্! আর সহ্য করা যায় না। ভীষণ ঠান্ডা এখানে। তাই বাধ্য হয়ে আবার রুমেই চলে এলাম।
এসে দেখি বাহ্!
আমার ঘুম হারাম করে কি শান্তিতে ঘুমাচ্ছেন ওনি। আমি ঠিক বুঝতে পারছি না আমার এ মুহুর্তে ঠিক কি করা উচিৎ। কিন্তু এখন মিরাকে কোনো মতেই ডাকা যাবে না। ডাকলে হয়তো আমি আর ঘুমাতে পারবো না। তাই টুপ করে বিছানায় উঠে মাঝে একটা কোলবালিশ রেখে মিরার পাশে শুয়ে পরলাম। আর একটা কম্বল জড়িয়ে ঘুৃমিয়ে পরলাম। সকালে মিরার আগে উঠে গেলেই আর কোনো সমস্যা হবে না।
কিন্তু বাই চান্স যদি সকালবেলা আমার আগে মিরাই উঠে যায়..? দূর তখনকারটা তখন দেখা যাবে। এখন শুয়ে পড়ি। যে ভাবনা সে কাজ ঘুমিয়ে পড়লাম।
কিন্তু মাঝরাতেই কারো ডাকে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। একটু মনযোগ দেওয়ার পর বুঝলাম মিরাই ঘুমের ঘোরে বলছে।
—আম্মু কাথা দাও! খুব শীত করছে।
বলেকি আম্মু কোথা থেকে এলো..!
তারপর মোবাইলটা দিয়ে মিরার দিকে তাকিয়ে দেখি শীতে ঠকঠক করে কাঁপছে। তার শরীরে কম্বলটা নেই। কারণটা হলাম আমি। আসলে রাতে ঘুমানোর সময় আমি মিরার কম্বলটাই নিয়ে নিয়েছিলাম। কি করবো কম্বলতো একটাই দিয়েছে। তখন আমি মিরাকেও কম্বলের একটা অংশ দিয়ে ডেকে দিলাম।
কিন্তু কম্বল দিতেই কি বিপদ..!
এই মেয়েতো দেখছি কম্বল টানাটানি শুরু করে দিছে। এভাবে ঘুমানো যায় নাকি…?
এইবার কোনো উপায় না পেয়ে কোলবালিশ হটিয়ে আমি মিরার কাছাকাছি চলে গেলাম।
এবার হয়তো আর কম্বল টানাটানি হবে না।
আবার ভয়ও করছে যদি সকালবেলা আমি মিরার আগে ঘুম থেকে না উঠতে পারি তখন কি হবে?
হঠাৎ হায়…! হায়….!
মিরা হয়তো আমাকে কোলবালিশ ভেবে জড়িয়ে ধরেছে।?
.
.
চলবে…………♥