#অভদ্র_প্রেমিক
#পর্বঃ০৩
#Arshi_Ayat
তাহিনের ধমকে নিশাত গান থামিয়ে বলল”আমি আগেই বলছিলাম আমি গান পারি না।তার পরেও তুমি শুনতে চাইছিলা ক্যান?”
“হ,,আমার ভুল হইছে।তোর মুখের এই অখাদ্য শুনতে চাইছি।এগুলা শুনার চেয়ে কুত্তার ঘেউঘেউ শুনাও আরো ভালো।”
“তুমি আমার এতো সুন্দর গানরে কুত্তার গলার চেয়েও খারাপ বললা?” নিশাত ন্যাকা কন্ঠে বলল।
“হইছে তোর ন্যাকামি থামা।”
এমন করে দুজনই ঝগড়া করতে করতে বাসায় এসেছে।লাঞ্চ টাইমে আসায় সবাই একসাথে লাঞ্চ করে যে যার ঘরে চলে গেলো।নিশাত নিজের রুমে একা একা বোর হচ্ছিলো তাই তাহিনের রুমে উঁকি দিতেই দেখলো তাহিন কারো সাথে মধুর আলাপ করছে।নিশাত চুপচাপ রুমে ঢুকে পিছন থেকে ওর চুল ধরে টান দিলো।তাহিন চমকে পিছনে ফিরে দেখলো নিশাত মিটমিটিয়ে হাসছে।তিহান নিশাতকে ফিসফিসিয়ে বলল”ডিস্টার্ব করিস না একটা মেয়েকে পটাচ্ছি।”
তিহানের কথা শুনে নিশাতের চোখ কপালে।সে মনে মনে বলল’আমার বিয়ে ভেঙে তুমি মেয়ে পটাও সেটা তো হতে পারে না।যতদিন না আমার বিয়ে হবে ততদিন তুমি মেয়ে পটাতে পারবা না। দেখো এখন কি করি।”
মনে মনে এগুলো বলে নিশাত এবার জ্বরে জ্বরে বলা শুরু করলো”বাবুর আব্বু খেতে আসো।”
নিশাতের এই কথা শুনে ওইপাশ থেকে মেয়েটা বলল”তোমাকে বাবুর আব্বু বলছে কে?”
“আরে না কেউ না তুমি ভূল শুনছো।” তিহান বিচলিত হয়ে বলল।
এদিকে নিশাত বলেই ভেগেছে।তাই ওকে আর ধরতে পারে নি।তিহানের কথায় মেয়েটা ওকে বলল”তুমি আমাকে ভুল বোঝাও তাই না?শালা লুচ্চা।বাচ্চা আছে তার পরেই ফ্লাটিং করিস।ওই লুচ্চা, বেয়াদব জীবনেও আমারে ফোন দিবি না।দাড়া তোমার নাম্বার আমি ভাইরাল করতাছি।তারপর দেখি তুই ফ্ল্যাট কিভাবে করিস।”
এই ঝারিগুলো দিয়ে মেয়েটা ফোন রেখে দিলো।ঝারি খেয়ে তাহিনের কান গরম হয়ে গেলো।ও সোজা নিশাতের রুমে এসে দেখে ও হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।ওর হাসি দেখে তাহিনের পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে।ওর জন্যই আজকে মেয়েটা বেচারা তাহিনকে ইচ্ছে মতো ধুয়েছে।তাহিন নিশাতের সামনে এসে দাড়িয়ে বলল”কি করলি এটা?তুই জানিস মেয়েটা আমাকে লুচ্চা,বেয়াদব এগুলো বলেছে।আমি নাকি বাচ্চা থাকতেও ফ্ল্যাট করি।আমার নাম্বার নাকি ভাইরাল করবে।”
তাহিনের কথাগুলো শুনে নিশাতের হাসি আরো বেড়ে গেলো।ও নিশাতের চুল টেনে ধরে বলল”আমার নাকি বাচ্চা আছে।কই বাচ্চা আছে দেখা।”
নিশাত হাসতে হাসতেই বলল
“আমার কেমন লেগেছিলো,
যখন তুমি আমার বিয়ে ভেঙেছিলে।
এখন তোমার কেনো জ্বলেরে বন্ধু
তোমার কেনো জ্বলে?”
এইটুকু বলেই নিশাত আবার হাসা শুরু করলো।তাহিন বিরক্তি নিয়ে বলল”এইজন্য এইভাবে বদলা নিবি?”
“হুম।যতদিন আমার বিয়ে হবে ততদিন তুমি কোনো মেয়ের সাথে প্রেম করতে পারবে না।”
তাহিন রেগে ফোসফাস করতে করতে চলে গেলো।আর নিশাত হাসতে হাসতে আবার গড়াগড়ি খাচ্ছে।
তাহিন নিজের রুমে যেতে যেতে বলল”এই প্রান্তর বাচ্চা আমারে ফাসাইছে।শালা তোর জন্য আমার এই অবস্থা।এখন শান্তিতে একটা প্রেমও করতে পারবো না।তুই খালি আয়।তোরে উদুম কেলানি দিবো।”
★
সন্ধ্যায় নিশাত নামাজ পড়ে পড়তে বসলো।আধঘন্টা পড়ার পর বই বন্ধ করে আবার তাহিনের রুমে উঁকি দিলো।ও কি করছে দেখার জন্য।গিয়ে দেখে মহাশয় পপকর্ন খাচ্ছে আর মুভি দেখছে।নিশাত ওর পাশে বসে বলল”ভাইয়া একটু পপকর্ন দাও না।”
তাহিন ভ্রু উচিয়ে বলল”সব ভিক্ষুকরে ভিক্ষা দিলেও তোরে দিবো না।তুই ফোট শয়তান।তোর জন্য আজকে সেটিংটা হয় নাই।”
“আচ্ছা থাক দুঃখ পাইয়ো একজন গেলে আরেকজন আসবে।”
“আসবে কেমনে তোর মতো একটা ডাইনি থাকলে আসা দূরের কথা তাকাবেও না।”
নিশাত মুখ ভার করে বলল”খেলাম না তোমার পপকর্ন।”
এইটা বলে উঠে যেতে নিলেই তাহিন ওর হাত ধরে বসিয়ে দেয়।তারপর ওর সামনে পপকর্নের প্যাকেট ধরে বলে”নে খা।আমি আবার গরিব মিসকিনদের দান খয়রাত বেশি করি।আর শোন খেতে দিছি বলে গপাগপ খাবি না।একটা নিবি ওইটারে চারভাগ করবি তার একভাগে করে করে খাবি।”
তিহানের কথা শুনে নিশাত মুখ বাকিয়ে বলল”তুমি এতো কিপটা কেনো?”
“তুই এতো ছ্যাচড়া কেন?”
এরপর আর নিশাতের মুখে কথা নাই।দুজনেই মুভিতে মনযোগ দিলো।একটু পর নিহিতা এসে বলল”তোরা কি করছিস রে?”
“খালামুনি মুভি দেখছি।তুমি দেখবে?আসো আমার পাশে বসো।”তিহান বলল।
” না রে আমার বান্ধবী আসছে।ওর ছেলেও আসছে।ওরা নিশাতকে দেখতে চাচ্ছে।নিশাত আয়।তিহান তুইও আয়।”
তিহান মনে মনে বলল’আমি তো যাবোই।’আর নিশাত মনে মনে বলল’ধূর তিহান ভাইয়া যাওয়ার কি দরকার।’
মনের কথা মনে চেপে দুজনই নিচে নামলো।নিশাত ছেলেটাকে দেখেই ক্রাশ খেলো।ছেলেটাও নিশাতকে দেখে মুগ্ধ।তাহিন ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে মনে মনে বলল’ক্রাশ খাওয়াচ্ছি তোমাদের দাড়াও।’
নিশাত মাকে বলল”মা আমি একটু আন্টির ছেলের সাথে আলাদা কথা বলতে চাই।”
নিহিতা বেগম কিছু বলার আগেই ছেলেটার মা বলল”হ্যা মা যাও কথা বলে এসো।”
ছেলেটা আর নিশাত ছাদে চলে গেলো।তাহিনও আস্তে করে সুরসুরিয়ে কাবাব মে হাড্ডি হওয়ার জন্য ছাদি হাজির হলো।তাহিনকে দেখে নিশাত ইশারায় বলল”যাও না ভাই প্লিজ।”
তাহিন ক্লোজআপের হাসি দিলো।এর মানে বলল”দুপুরে কি করছো মনে আছে?এতো সহজে তোমারে ছাড়া যাবে না।’
নিশাত ওর শয়তানি মার্কা হাসি দেখে বুঝলো কপালে শনি আছে।
তাহিন পিছন থেকে ছেলেটার কাধে হাত দিয়ে বলল”নাম কি ভাইজান?”
“উদয়।”
“ও আচ্ছা তা এখানে উদয় হইছেন কেনো?”
“মানে?ঠিক বুঝলাম না।” উদয় বলল।
“মানে হলো এখানে কি মেয়ে দেখতে আসছেন?”
“না আসলে মা নিয়ে আসছিলো তো তাই।”
“আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে?”
“না নেই।”
“আচ্ছা আপনি এটা জানেন নিশাতের বয়ফ্রেন্ড আছে।আচ্ছা জানবেনই বা কি করে আপনি তো আজই এসেছেন।ঠিকাছে কথা বলুন।আমি আসি।”
এইটুকু বলে তাহিন নিশাতকে ফাসিয়ে চলে গেলো।নিশাতের ইচ্ছা করছে তাহিনকে ন্যাড়া করে দিতে।বদমাইশ!!
চলবে….