অভদ্র_প্রেমিক পর্ব-১০

0
3047

#অভদ্র_প্রেমিক
#পর্বঃ১০
#Arshi_Ayat

“কারণ প্রান্তও ই আসাদের ছেলে।প্রান্ত এখন দেশের বাইরে আছে।ও আসলেই আসাদ ওর সমস্ত প্ল্যান সাকসেস করবে।”

“তুই জেনে শুনেই নিশাতকে প্রান্তর হাতে তুলে দিবি?পাগল হয়েছিস তুই?”অয়ন উত্তেজিত হয়ে বলল।

অয়নের কথা শুনে তিহান একটা বাঁকা হাসি দিলো।তারপর বলল”আগে সবটা শোন তারপর বল।যাকে আমি একযুগ ধরে ভালোবাসি তাকে আমি কিভাবে ছাড়বো বল?এটা সম্ভব না।আমি ওর জায়গায় কাউকে কল্পনা করতে পারবো না।তবে এখন ওকে কিচ্ছু বলবো না যেভাবে আছে সেভাবে চলুক।প্রান্তর সাথে আমার কথা হয়েছে।প্রান্তকে সব বলেছি।এবং প্রমাণও পাঠিয়েছি।ও ওর নিজের বাবাকে ঘৃণা করে।ও নিজেও জানতো ওর বাবার চরিত্র ভালো না।শুধু খালামনি আর প্রান্তর মায়ের সাথেই না এমন অনেকের সাথে আসাদ অন্যায় করেছে।কিন্তু প্রান্তর কাছে প্রমাণ ছিলো না বলে ও কিচ্ছু বলে নি।এখন প্রমাণ আমাদের হাতে।শুধু সময়ের অপেক্ষা।প্রান্ত দেশে ফিরলেই সব ফাঁস করবো।কিন্তু ততদিন একটু চুপ থাকতে হবে।যদি কোনোমতে আসাদ সব জেনে যায় তবে প্ল্যান শেষ।ও নিশাতের কোনো ক্ষতি করতে পারে।এইজন্যই আমি নিশাতকে এখনো কিছু বলি নি।সব মিটুক তারপর বলবো।”

“আচ্ছা সব মিটার পরে নিশাত যদি তোকে না মেনে নেয় তাহলে?” নয়ন জিগ্যেস করলো।

“মানবে না কেনো?অবশ্যই মানবে।না মানলে আমার ভালোবাসা ওকে বুঝাবো।যদি তবুও না বোঝে তাহলে আর কি…”

এতটুকু বলতে না বলতেই রিয়াদ বলল”তাহলে কি ছেড়ে দিবি?”

তিহান রেগে বলল”বাল করমু।আগে পুরাটা শোন।প্রথমে ভদ্র হবো কাজ নাহলে অভদ্র হবো।”এটা বলেই তিহান চোখ মারলো।এখন সবার শান্তি শান্তি ফিল হচ্ছে।সবাই একপলকের জন্য ভেবেছিলো তিহান নিশাতকে হারিয়ে ফেলবে।কিন্তু এখন সবাই চিল মুডে আছে।সব বলার পর এবার তিহান বলল”এত্তোকিছু বলতে বলতে আমার পিপাসা পাইছে প্রচুর।”

রিয়াদ উঠে গিয়ে দুইটা মদের বোতল আনলো।তিহান মদের বোতল দেখে বলল”শালা আমি বলছি পিপাসা লাগছে কই পানি আনবি তা না মদ নিয়া আসছিস।”

“হইছে আর সাধু সাজিস না।চিল কর ব্যাটা।” নয়ন গ্লাসে ঢালতে ঢালতে বলল।তিহান কি আর করবে এক প্যাগ নিতে নিতে বলল”তোরা আর আমারে ভালো হইতে দিবি না।”

সবগুলো মোটামুটি মদ খেয়ে মাতাল হয়ে আছে।একপর্যায়ে অয়ন মাতলামি করতে করতে বলল”ভাই শোন জীবনে বিয়ে করবি না।মাইয়া গুলি সব শয়তান হয়।”

“কেন তোরে কি কামড়াইছে?” শাহেদ জিগ্যেস করলো।

“আরে না বিয়ের আগে তিনশো টাকা ধার নিছিলাম।ছয়মাস হইছে বিয়ের দশবার ওর তিনশো টাকা পরিশোধ করছি তবুও ও এখনো আমার থেকে তিনশো টাকা পায়।”অয়ন বলল

“ভাই আমারটা তো খালি প্যারা দেয়।”শাহেদ বলল।

এমন করে সবাই সবার বউকে ইচ্ছামতো ধুয়েছে।কিন্তু সবাই বলার পর তিহান বলল” কিন্তু আমার নিশুওওওও অনেনেনেনেনেক ভালোওওও।”এটা বলেই ঠাস।তারপর সবগুলো বেহুশ হয়ে ঘুমাচ্ছে।

সকালে রিয়াদের আগে ঘুম ভেঙেছে।মাথাটা ধরে আছে।রিয়াদ সবগুলোর ঘুম ভাঙালো।সবাই চোখ ডলতে ডলতে ঘুম থেকে উঠলো।এখন সকাল সাতটা বাজে।রিয়াদ মেহেরকে ফোন দিয়ে বলল”ওদের সবার জন্য লেবুর শরবত আনতে।”

তারপর সবাই ফ্রেশ হয়ে লেবুর শরবত খেয়ে নিলো।তিহান লেবুর শরবত খেয়েই বেরিয়ে গেলো বাসায় যাওয়ার জন্য।ওরা থাকার জন্য বললেও থাকলো না।

বাসায় এসে দেখলো ওর মা কিচেনে কাজ করছে।তনয়কে দেখা গেলোনা।তিহান ওপরে উঠে নিশাতের রুমে গিয়ে দেখে ও গলা ছেড়ে গান গাইছে

“এতো সাধের জীবন আমার
যাবে কি হুদাই?
বলো কোন জঙ্গলে গেলে
তারে আমি পাই?

হানিমুনে যাওয়ার মানুষ নাই,
এই অন্তর পুড়ে ছাই।
ভালোবেসে এই আমারে,
হানিমুনে নিয়ে যাবে কে?

দাদা পায়ে পড়ি রে
মেলা থেকে জামাই এনে দে।”

তিহান ওর এই অখাদ্য গান শুনে বলল”এবার থামা প্লিজ।”

হঠাৎ তিহানের গলার আওয়াজ শুনে নিশাত থেমে পিছনে তাকিয়ে দেখলো তিহান দাড়িয়ে আছে।নিশাত ওর কাছে এসে বলল”কখন আসছো?”

“এইতো মাত্রই আসলাম।আচ্ছা তুই একটু পড়াশোনা করতে পারিস না?সারাদিন খালি এইসব অকাজ করতে থাকিস তাই না?”

“তিহান ভাইয়া তুমি আমার প্রতিভার দাম দিলা না।” নিশাত ন্যাকা কন্ঠে বলল।

“হইছে ঢং বন্ধ কর আর পড়তে বস।আমি গেলাম।এখন ঘুমাবো।আমাকে বারোটায় ডাক দিয়ে দিস।”

“তুমি কাল রাতে ঘুমাও নি?”

“ঘুমাইছি কিন্তু ঘুম কম হইছে।”

“ও আচ্ছা যাও।”

তিহান নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো।দুমিনিটের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লো।

নিশাত শাওয়ার নিয়ে এসে দেখে পৌনে বারোটা বাজে।ও চুল মুছতে মুছতে তিহানের ঘরে গেলো ওকে ডাক দিতে।অনেকবার ডাক দেওয়ার ফলেও তিহানের ওঠার কোনো নাম নাই।তাই নিশাত একটা কাগজ মুড়িয়ে তিহানের কানে সুড়সুড়ি দিতে লাগলো।তিহান একঝটকায় উঠে পড়লো।এভাবে উঠতে দেখে নিশাত খিলখিল করে হাসতে লাগলো।তিহান চেয়ে আছে ওর হাসির দিকে।কি জানি কি অদ্ভুত শক্তি আছে এই হাসিতে যেটা দেখলেই তিহানের মন বেখেয়ালি হয়ে যায়।তিহানকে এভাবেই তাকিয়ে থাকতে দেখে নিশাত হাসি থামিয়ে ভ্রু কুচকে জিগ্যেস করলো”কি হইছে?এভাবে চেয়ে আছো কেনো?”

তিহান নিজেকে সামলে নিয়ে বলল”আমার সামনে একটা শাঁকচুন্নি দাত বের করে হাসছিলো তাই দেখছিলাম।”

“তুমি আমায় শাঁকচুন্নি বললে!” নিশাত মুখ ভার করে বলল।

তিহান ওর মুখ ভার দেখে হেসে দিলো।তিহানের হাসি দেখে নিশাত মুখে ভেঙচিয়ে চলে যেতে নিলেই ওর হাতে টান পড়লো।পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখলো তিহান ওর হাত টেনে ধরেছে।নিশাত ভ্রু কুচকে জিগ্যেস করলো”কি?”

“সামনে এসে বোস আগে।” তিহান বলল।

নিশাত ওর সামনে বসলো।তিহান ওর হাত থেকে তোয়ালেটা নিয়ে চুলগুলো মুছতে মুছতে বলল”ঠিক করে চুলটাও মুছতে পারিস না।আবার বিয়ের জন্য লাফাস।বিয়ের পর নিজের মাথা তো মুছতে হবে সাথে বরের টাও মুছতে হবে।”

নিশাত হেসে বলল”আমি বরের মাথা মুছবো বর আমার মাথা মুছবে।”

নিশাতের কথা শুনে তিহান মনে মনে বলল’এ আর এমন কি?তোর মাথাতো প্রায় সময় আমিই মুছে দেই।বিয়ের পরও দিবো।কিন্তু তুই আমার মাথা মুছবি!!ফিলিং এক্সাইটেড!’মনে মনে এগুলো বললেই মুখে বলল”মাথা মোছা শেষ।হইছে যা এখন ওঠ।আমি শাওয়ার নিতে যাবো।”

নিশাত চলে যেতেই তিহান শাওয়ারে ঢুকলো।শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল মুচছে।একটু পর তিতির খান এসে তিহানকে বলল”তিহান তোর সাথে কথা আছে।”

তিহান মায়ের পাশে বসে বলল”হ্যাঁ বলো।”

“তোর জন্য একটা মেয়ে দেখেছি।আমার ভাল্লাগছে।তুই একটু দেখবি?”

“মা তোমাকে এসব মেয়ের সন্ধান দিলো কে?”

“ওই যে কাল হলুদে গেলাম না?ওখানে একটা ঘটকের সাথে নিশাত পরিচয় করায় দিছিলো।উনিই মেয়েটাকে দেখাইছে।”

মায়ের কথা শুনে তিহান মনে মনে বলল’আমি আগেই সন্দেহ করছিলাম এই কাজ নিশাতেরই হবে।এদিকে আমি তাকে পাবার জন্য ব্যাকুল।আর অন্যদিকে সে আমাকে বিয়ে দেয়ার জন্য আকুল।কি কপাল আমার!!’
কিন্তু মাকে উত্তর দিলো”মা আমিতো বললাম আমার সময় লাগবে।তাহলে কেনো তুমি জোর করছো?যখন সময় হবে আমি তোমাকে বলবো।”

“আচ্ছা এখন বিয়ে করতে তোর কি সমস্যা?তুই ইন্জিনিয়ার।ভালো যেকোনো কোম্পানিতে জব হয়ে যাবে।তবুও সমস্যা কোথায়?”

“আমাকে ছয়মাস সময় দাও।এই ছয়মাসের মধ্যে আমি বিয়ে করবো।”

“মনে থাকে যেনো।” এটা বলে তিতির খান চলে গেলো।আর তিহান হাফ ছেড়ে বাঁচলো।তারপর বলল”বিয়ে তো আমও চাই করতে কিন্তু প্রান্তর জন্য আটকে আছি।ও আসলেই সব সমাধান হয়ে যেতো।”

চলবে….

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।আর অনেকে বলেছেন প্রান্ত আর নিশাত সৎ ভাই বোন।কিন্তু এটা সঠিক নয় কারণ দুজনের বাবা মাই আলাদা।আসাদ সাহেবের মেয়ে নিশাত না তেমনি নিহিতা বেগমের ছেলেও প্রান্ত না।আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন।)