অভদ্র_প্রেমিক পর্ব-১১

0
3177

#অভদ্র_প্রেমিক
#পর্বঃ১১
#Arshi_Ayat

খাওয়া দাওয়া শেষ হওয়ার পর এখন বিয়ে পড়াবে।সবাই সেখানে উপস্থিত।কিন্তু আশেপাশে নিশাতকে না দেখতে পেয়ে তিহান নিশাতকে খুজতে লাগলো।প্রত্যেকটা রুমে খোঁজা শেষ।নাই মানে নাই!তিহান বুকটা ধ্বক করে উঠলো।মেয়েটা গেলো কই?হঠাৎ পাশ দিয়ে মেহের যাচ্ছিলো।তিহান মেহের কে ডাক দিয়ে বলল”আচ্ছা নিশাতকে দেখেছো?”

“হ্যাঁ ভাইয়া ও তো ছাদে বসে আছে।ওর পা কেটে গেছে। আমি ফাস্ট এইড বক্স আনতে যাচ্ছি।”

নিশাতের পা কেটে গেছে শুনে তিহান মেহেরকে ফাস্ট এইড বক্স আনতে বলেই দৌড়ে ছাদে চলে গেলো।ছাদে গিয়ে দেখে নিশাত পায়ের তালুতে পা চাপা দিয়ে রেখেছে যাতে রক্ত না বের হয় তবুও হাত বেয়ে বেয়ে রক্ত পড়ছে।তিহান দ্রুত ওর সামনে বসে নিজের পকেট থেকে রুমাল বের করে বলল”হাত চাপা।”

নিশাত হাত চাপাতেই তিহান কাটা জায়গায় রুমালটা বেধে দিলো।কিছুক্ষণের মধ্যেই মেহের চলে এলো ফাস্ট এইড নিয়ে।তিহান রুমালটা খুলে পা ড্রেসিং করে বেধে দিলো।তারপর বলল”ব্যাথা করছে তোর?”

“অনেক ব্যাথা করছে।” নিশাত ব্যাথাতুর কন্ঠে বলল।

তিহান হুট করে কোনো কথা না বলে নিশাতকে কোলে তুলে নিলো।তিহানের কান্ডে মেহের,নিশাত দুজনেই হা করে চেয়ে আছে।তিহান নিচে নামতে নামতে মেহেরকে বলল”তুমি রিয়াদকে বলে দিও আমি চলে যাচ্ছি।নিশাতের পা কেটে গেছে।এই অবস্থায় ওকে এখানে রাখা ঠিক হবে না।আর আমার আম্মু আর ভাইকেও বলে দিও।”

মেহের তিহানের কথায় ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।তারপর তিহান নিশাতকে কোলে করে দ্রুত বাড়ি থেকে বেরিয়া রিয়াদের গাড়িতে উঠলো।নিশাতকে পিছনের সিটে বসিয়ে পা ওপরে উঠিয়ে দিলো।তারপর নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো।তিহান যখন ওকে কোলে করে নামছিলো তখন সেখানে যারা যারা উপস্থিত ছিলো সবাই অবাক নয়নে দেখছিলো তারপরও তিহানের কোনো ভ্রুক্ষেপ দেখা দিলো না।কিন্তু নিশাতের প্রচুর আনইজি ফিল হয়েছিলো।গাড়ি মাঝরাস্তায় চলে আসার পর।নিশাত বলল”তখন ওমন অভদ্রের মতো ওখান থেকে নিয়ে এলে কেনো?মানুষ কি ভাবলো বলো তো!”

“যেটাই ভাবুক আই ডোন্ট কেয়ার।আর যেখানে তোর বিষয় আছে সেখানে আমি অভদ্র কেনো অভদ্রের বাপও হয়ে যাবো।”

তিহানের কথাটা সোজা নিশাতের বুকে গিয়ে আঘাত করলো।কি বলল তিহান!এতো ইম্পর্টেন্স কেনো?প্রান্তের জন্য?হ্যা ওর জন্যই তিহান ভাইয়া আমাকে এতো প্রটেক্ট করছে।এই প্রান্ত নামটা নিশাতকে তিহানের ব্যাপারে কিছুই ভাবতে দিচ্ছে না।যতোবারই নিশাত তিহানকে নিয়ে কিছু ভাববে ততোবারই মনে হয় এগুলো সব প্রান্তর জন্য করছে তিহান।তিহান গাড়ি ড্রাইভ করে একটা হসপিটালের সামনে থামালো।নিশাত ভ্রু কুচকে জিগ্যেস করলো”এখানে আনলে কেনো?”

“ডাক্তার দেখাতে হবে তোকে।”

“না দরকার নাই।তুমিই তো ব্যান্ডেজ করে দিয়েছো।এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে।”

“আমি তো ব্লিডিং অফ করার জন্য ব্যান্ডেজ করেছিলাম।এই ব্যান্ডেজে কিচ্ছু হবে না।তোকে ডাক্তার দেখাতে হবে।”

“কিন্তু.. ”

নিশাত বলতে গিয়েই বলতে পারলো না।তিহান গাড়ির দরজা খুলে ওকে কোলে তুলে নিলো।সবার সামনে কোলে নেওয়ায় তিহানের কোনো ভ্রুক্ষেপ না হলেও নিশাত প্রচন্ড অস্বস্তিতে পড়েছে।তিহান ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকে নিশাতকে একটা চেয়ারে বসিয়ে আরেকটা চেয়ারে ওর পা উঠিয়ে দিলো।তারপর ডাক্তারকে বলল”ওর পায়ের তালু অনেকখানি কেটে গেছে।একটু দেখেন প্লিজ।”

ডাক্তার একটু দেখে বলল”ওনার ইনজেকশন দেওয়া লাগবে একটা।”

ইনজেকশনের কথা শুনে নিশাতের পেটে মোচড় দিলো।তারপর করুণ চাহনীতে তিহানের দিকে তাকালো।তিহান বুঝতে পারলো ও কি বলতে চাইছে কিন্তু সেদিকে পাত্তা না দিয়ে সে ডাক্তারকে বলল”আপনি ইনজেকশন দিয়ে দিন।”

ডাক্তার নিশাতকে ইনজেকশন দিতে এগিয়ে আসতে নিলেই নিশাত দাত মুখ খিচে তিহানের হাত চেপে ধরলো।তিহান ওপর হাত নিশাতের মাথায় রেখে বলল”ডাক্তার আপনি ইনজেকশনটা দিয়ে দেন।”

ইনজেকশন দেওয়া শেষ হলে ডাক্তার একটা প্রেসক্রিপশন দিলো ঔষধের।তিহান ডাক্তারের সাথে হাত মিলিয়ে নিশাতকে আবার কোলে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলো।তারপর বলল”এখানে পাঁচ মিনিট বস।আমি ঔষধগুলো নিয়ে আসছি।”

নিশাত মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।তিহান গিয়ে ঔষধ এনে ড্রাইভিং সিটে বসতেই রিয়াদ কল দিলো।তিহান কল ধরতেই ওপাশ থেকে রিয়াদ বলল”কি রে নিশাতের নাকি পা কেটে গেছে?”

“হ্যাঁ এখন ঠিক আছে।ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধ নিয়ে আসলাম।আর তোদের একটাগাড়ি নিয়ে এসেছি আমি।নিশাতকে বাসায় রেখে দিয়ে যাবো।”

“একদম না।তোর ওর পাশে থাকা উচিত।ওকে একা বাসায় রেখে আসিস না।আন্টি আর তনয় রওনা দিয়েছে।ওনারা আগে বাসায় পৌঁছে নিক।তারপর আসিস।”

“আচ্ছা দোস্ত।” তিহান ফোন রাখতে রাখতে নিশাতকে বলল”তুই কি এখনো ছোট আছিস নিশাত?একটু দেখে শুনে চলতে পারিস না?এখন সারাদিন বিছানায় বসে থাকবি।পায়ের জন্য হাটতে পারবি না।কষ্ট কি আমার হবে নাকি তোর?”

“তোমার।” নিশাতের কথায় তিহান মনে মনে বলল”হ্যা ঠিকই বলেছিস কষ্টটা আমরই বেশি হবে।তবে আমি বলতে পারবো না।”মনে মনে এসব বললেও মুখে বলল”হ্যাঁ তা তো হবেই।তোকে এখানে সেখানে কোলে করে নিয়ে যেতে হবে।”

তিহানের কথা শুনে নিশাত হেসে দিলো।একটুপর গাড়ির সামনে এসেই তিহান ব্রেক কষলো।তারপর নিশাতকে কোলে করে ওর রুমে এসে খাটে বসিয়ে পা টাও খাটে উঠিয়ে দিয়ে বলল”তুই বস আমি আসছি।আমি আসতে আসতে যেনো কোনো নড়চড় না দেখি।”

নিশাত মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।তিহান কিচেনে গিয়ে গরম পানি বসালো।তারপর পানি গরম হওয়ার পর সেটা গরমপানির ব্যাগে ভরে নিশাতের রুমে এসে ওর পায়ে স্যাক দিতে লাগলো।গরম পানির স্যাক দেওয়ার ফলে নিশাতের ব্যাথাটা কম লাগছে।তিহান গরম পানির স্যাক দিতে দিতেই তিতির খান আর তনয় চলে এলো।ওদের দেখে তিহান বলল”তোমারা একটু ওকে দেখে রাখো আমি রিয়াদের গাড়িটা দিয়ে আসি।”

“না তোর যাওয়া লাগবে না।তনয় দিয়ে আসুক।”তিতির খান বলল।

“হ্যা ভাইয়া তুমি থাকো।আমি দিয়ে আসি।” তারপর আর তিহান যায় নি।তনয় ই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।তিহানও মনে মনে চাইছিলো ওর কাছে থাকতে।মোটামুটি ব্যাথা এখন কম আছে নিশাতের।তিহান একটা অ্যান্টিবায়োটিক খাইয়ে নিশাতকে বলল”এখন ঘুমা।”

“ঘুমাতে ইচ্ছে করছে না।”

“তাহলে কি করবি?”

“প্রতিদিন তো আমার গানকে তুমি অখাদ্য কুখাদ্য বলো😒।আজকে তুমিই একটা গান গাও।দেখি তোমারটা কেমন হয়।”

তিহান হাসলো।তারপর বলল”আচ্ছা আমি গিটার টা আনছি।ওয়েট কর।”

তিহান নিজের ঘরে গিয়ে গিটার আনলো।তারপর নিশাতের সামনাসামনি বসে গিটারে সুর তুললো।নিশাত চোখ বন্ধ করে রইলো।আর তিহান ওর দিকে চেয়েই গাইতে আরম্ভ করলো

“রাতের সব তারা আছে
দিনের গভীরে,
বুকের মাঝে মন যেখানে
রাখবো তোকে সেখানে,
তুই কি আমার হবি রে?

মন বাড়িয়ে, আছি দাঁড়িয়ে
তোর হৃদয়ে, গেছি হারিয়ে
তুই জীবন-মরন সবই রে..
তুই কি আমার হবি রে?

আমার পথটা চলে যায়, তোরই দিকে
চোখের কলম, শত কবিতা লিখে,
এই হৃদয়ের ভালোবাসা দিয়ে
সেই কবিতা শুধু তোকে নিয়ে।

চোখ ভোরে তুই, দেখ পড়ে তুই
প্রেম কবিতায় তোকে ছুঁই
তুই চিনে নে সে কবি রে ..
তুই কি আমার হবি রে ?

রাতের সব তারা আছে
দিনের গভীরে,
বুকের মাঝে মন যেখানে
রাখবো তোকে সেখানে,
তুই কি আমার হবি রে?

পুরো গান শেষ করে নিশাতের দিকে খেয়াল করতেই দেখলো ও ঘুমিয়ে গেছে।তিহান ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আনমনে হাসলো।তারপর চুলগুলো মুখের ওপর থেকে সরিয়ে কাথাটা পায়ের ওপর টেনে দিয়ে চলে গেলো।

রাত নয়টার সময় নিশাতের ঘুম ভাঙলো।ঘুম থেকে উঠে বসেই গলা চড়িয়ে ডাক দিলো” খালামনিইইইই।”

নিশাতের ডাক পেয়ে তিহান,তনয়,তিতির খান সবাই এসে হাজির।নিশাত ওদের সবাইকে একসাথে দেখে।নিশাত বলল”তিহান ভাইয়া আর তনয় তোমরা আসছো কেনো?আমি তো খালামনিকে ডাক দিয়েছি।”

“তুই যেভাবে ডাক দিলি মনে হলো আবার ব্যাথা পেয়েছিস তাই সবাই চলে এলাম।” তিহান বলল।

“ও আচ্ছা তুমি আর তনয় যাও আমি ওয়াশরুমে যাবো সেইজন্য খালামনিকে ডাক দিয়েছি।”

নিশাতের কথায় তনয় আট তিহান চলে গেলো।নিশাতকে তিতির খান ওয়াশরুমে নিয়ে গেলেন।ওয়াশরুম থেকে এসে আবার বিছানায় বসতেই তিতির খান বললেন”তুই বস।আমি তোর জন্য খাবার আনছি।”

“না খালামনি খেতে ইচ্ছে করছে না।”

“মাইর দিবো একটা কথাও বলবি না।চুপচাপ বস আমি আসছি।” এটা বলে তিতির খান চলে গেলো।তিতির খান যাওয়ার সাথে সাথেই আসাদ সাহেব ফোন দিলেন।নিশাত ফোন রিসিভ করতেই আসাদ সাহেব বললেন”কি অবস্থা মামনি?”

“এই আব্বু ভালোই আছি।তুমি?”

“আলহামদুলিল্লাহ তোমার আম্মু আর আমি ভালো আছি।খাওয়া দাওয়া করছো তো ঠিক মতো?”

“হুম করছি।”

“গুড।আচ্ছা শোনো তোমাকে একটা ছেলের ছবি পাঠাচ্ছি দেখো তো পছন্দ হয় কি না?”

“ওকে আব্বু।পারলে আইডি টাও দিও।”

“ওকে।”

আসাদ সাহেব ফোন রাখতেই নিশাত ওর আইডিতে লগ ইন করে দেখলো আসাদ সাহেব ওকে একটা ছেলের ছবি আর আইডির লিংক।আইডির নাম ছিলো…..

চলবে..

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)