অভদ্র_প্রেমিক পর্ব-১২

0
4518

#অভদ্র_প্রেমিক
#পর্বঃ১২
#Arshi_Ayat

আইডির নাম ছিলো ‘প্রান্ত শাহরিয়ার’
নিশাত প্রোফাইলে ঢুকলো।একটা ছেলের ছবি দেওয়া।দেখতে ভালোই।তবে প্রোফাইল ঘুরে দেখলো বেশিরভাগ ছবিই মেয়েদের সাথে তোলা।ব্যাপারটা নিশাতের ভালো লাগলো না।তাই প্রোফাইল থেকে বের হয়ে।ফোনটা বিছানায় রেখে ভাবলো এখন আসাদ সাহেবকে কিছু বলবে না বাসায় গিয়ে না করে দেবে।এমন স্বভাবের ছেলে নিশাতের পছন্দ না।ফোন রাখতে রাখতেই তিতির খান চলে এলো খাবার নিয়ে।নিশাত আর কি করবে চুপচাপ নিষ্পাপ বাচ্চাদের মতো খেয়ে নিলো।ওর খাওয়া শেষে তিতির খান চলে গেলো।নিশাত ফোনটা হাতে নিয়ে মেহের কে কল দিলো।মেহের রিসিভ করতেই বলল”হ্যালো মেহের?”

“হুম,নিশাত এখন কেমন আছো?”

“এইতো ভালো ব্যাথা কম আছে।”

“তোমাকে বলেছিলাম খালি পায়ে হাটতে না।দেখছো খালি পায়ে হাটছো বলেই পায়ে কাচ ঢুকছে।

” কি করবো বলো জুতা খুজে পাচ্ছিলাম না।

“আচ্ছা ডাক্তার দেখিয়েছো?”

“হ্যা তিহান ভাইয়া বাসায় আসার পথে নিয়ে গিয়েছিলো।”

“দেখলে আমি বললাম না তিহান ভাইয়া তোমাকে ভালোবাসে।”

মেহেরের কথাশুনে নিশাত বিরক্ত হয়ে বলল”না মেহের তুমি বেশি বেশি ভাবছো।তখন আমার পায়ের অবস্থা খারাপ ছিলো এইজন্য উনি আমাকে ওইভাবে নিয়ে গেছিলেন।”

“নিশাত তুমি বুঝতে পারছো না কেনো আমি জানি না তবে আমি বেশ বুঝতে পারছি তোমার প্রতি তিহান ভাইয়ার এই কেয়ারগুলো এমনি এমনি না।”

নিশাতের ভাল্লাগছে না কথাগুলো।তাই প্রসঙ্গ পাল্টে বলল”আচ্ছা বলো তোমার ভাবি কেমন?”

মেহের বুঝতে পেরেছে নিশাত প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতে চাইছে।তাই মেহের আর কথা না বাড়িয়ে বলল”ভাবি অনেক মিশুক।সবার সাথেই ফ্রি হয়ে কথা বলছে।বাই দ্যা ওয়ে তুমিতো কাল আসতে পারবে না তাই না?”

“হুম এই পা নিয়েতো হাটতেই পারি না।”

“আচ্ছা নিজের খেয়াল রেখো।আর আমি কাল সকালের দিকে আসবো।”

“সত্যিই?” নিশাত খুশি হয়ে বলল।

“হুম।আচ্ছা এখন রাখি।”

“আচ্ছা।”

বলে নিশাত কল কেটে দিয়ে ইউটিউবে গিয়ে “মনপুরা” মুভিটা দেখতে আরম্ভ করলো।হঠাৎ তিহান রুমে এসে বললো”কি রে কি করছিস?”

“মুভি দেখছি।তুমি দেখবে?”

“কোন মুভি?”

“মনপুরা।”

“নাহ!এই মুভি আমি পাঁচবারের ওপর দেখছি।”

“আমিও তো দেখছি অনেকবার কিন্তু তবুও দেখতে ইচ্ছে করে।বিশেষ করে এই মুভিটার গানগুলো অনেক সুন্দর।আর বেশি ভাল্লাগে
‘আগে যদি জানতাম রে বন্ধু,
তুমি হইবা পর।
লাথি দিয়া কইতাম আমি,
দূরে গিয়া মর।”

তিহান নাক মুখ কুচকে বলল”এত্তোসুন্দর গানটার আর ইজ্জত রাখলি না।”

“আমি তো আরো ইজ্জত বাড়ায় দিছি।” নিশাত একটু ভাব নিয়ে বলল।

“ভালো করছো তুমি।অতিউত্তম কাজ।”তিহান তিরস্কারের স্বরে বলল।

নিশাত তিরস্কার গায়ে না মেখে বলল” সেটা আমি জানি।আচ্ছা কাল কি রিয়াদ ভাইয়ার বৌ ভাবে যাবে?”

“হ্যাঁ যেতে হবে।তা নাহলে ও মন খারাপ করবে।এমনিতেই কাল বিয়েতে থাকতে পারি নি।”

“হুম তাও ঠিক।”

“আচ্ছা শোন রাতের ঔষধ খেয়েছিস?”

“না ভুলে গেছি।”

“এ আর নতুম কি?সব সময়ই তোর এমন হয়।” এটা বলে তিহান ঔষধ খাইয়ে দিয়ে বলল”এখন চুপচাপ ঘুমা।”

“একটু আগেই তো ঘুমিয়ে উঠলাম।এখন আর ঘুম আসবে না।” নিশাত বলল।

“ও তাহলে পড়তে বস।”

তিহানের কথা শুনে নিশাত বলল”আমার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।ঘুমের জন্য তাকাতে পারছি না।😐”
এটা বলে বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে পড়লো।নিশাতের কাহিনি দেখে তিহান হেসে লাইট অফ করে দিয়ে মনে মনে বলল’আস্ত বান্দরনী’বলে চলে গেলো নিজের ঘরে।

সকাল নয়টা।একটু আগেই তিতির খান এসে নিশাতকে নাস্তা করিয়ে দিলো।নাস্তা শেষে নিশাত একটা ম্যাগাজিন পড়তে শুরু করলো।একটুপর মেহের এসে নিশাতকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলল”কি অবস্থা এখন তোমার?”

“এইতো ভালো।তোমার কি খবর?”

“ভালো।তিহান ভাইয়া আর তনয় বাসায় নেই?”

“না ওরা বোধহয় বাইরে গেছে।”

নিশাত আর মেহের কথা বলছিলো এর মাঝেই তিতির খান মেহেরের জন্য নাস্তা নিয়ে এলো।তারপর তিনজনে মিলে আড্ডা দেওয়া শুরু করলো।

মেহের যাওয়ার আধঘন্টা পর তনয় বাসায় এসে নিশাতের ঘরে গেলো।তারপর বলল”মেহের এসেছিলো?”

“হ্যা কেনো?”

“না এমনিই।”

নিশাতের মনে হলো না এমনই কারণ একটু আগে মেহেরও বারবার তনয়ের কথা জিগ্যেস করছিলো।নিশাত একটু বাজিয়ে দেখার জন্য বলল”জানিস মেহের আমাকে সব বলে দিয়েছে।”

তনয় কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বলল”কি বলেছে?”

“এইযে তোর আর ওর কথা।” নিশাত মুচকি হেসে বলল।

“আসলে আমার কোনো দোষ নাই ওই আমাকে প্রপোজ করছে।” তনয় মাথা চুলকে বলল।

নিশাত বেশ উৎসাহ নিয়ে বলল”তারপর, তারপর ?”

তনয় ভ্রু কুচকে বলল”তারপর,তারপর করছিস কেনো?তুই না সব জানিস?”

নিশাত দাত কেলিয়ে বলল”আরে না আমি জানি না।আর মেহেরও আমাকে কিছু বলে নি।আমিতো এমনিই তোকে বাজিয়ে দেখতে চেয়েছিলাম।”

তনয় নিশাতের দিকে তাকিয়ে চোখ ছোট ছোট করে বলল”বাটপার মহিলা তোকে আর কিচ্ছু বলবো না।”

“তুই বলবি না তোর ঘাড় বলবো।তাড়াতাড়ি বল নয়তো আমি খালামনিকে ডাকবো।”নিশাত শয়তানি হাসি দিয়ে বলল।

মায়ের কথা শুনে বেচারা তনয় পড়েছে বিপদে তাই আর কি বলতে শুরু করলো”গায়ে হলুদের রাতে ওকে দেখেই আমার ভাল্লাগছে কিন্তু বলার সাহস হয় নাই।তারপর যখন সবাই গান গাইছিলো।তখন ও আমাকে স্টেজের পিছনের ফাঁকা জায়গায় নিয়ে এস প্রপোজ করছে।আর আমিও এক্সেপ্ট করছি।”

নিশাত সব শুনে হাসতে হাসতে বলল”আমি বলছিলাম না একটা গেলে আরেকটা আসবে।এখন তুই তোর এক্স ক্রাশের সামনে গিয়ে ওকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলবি

‘চলে গেছো তাতে কি
নতুন একটা পেয়েছি,
তোমার থেকে আরো সুন্দরী।”

তনয় ওর মাথায় গাট্টা মেরে “ফাজিল” বলে চলে গেলো।

নিশাত হাসতে হাসতে কানে হেডফোন গুজলো গান শোনার জন্য কিন্তু ওর আবার নিজের গান না শুনলে ভালো লাগে না তাই কান থেকে হেডফোন খুলে নিজেই গাওয়া শুরু করলো

“মুছো কো থোড়া রাউন্ড ঘুমাকে
নিশাতকে যেছা চশমা লাগাকে
কোকোনাট পে চিনি মিলাকে
আজাও সারে প্লাজু উঠাকে।

অল দ্য নিশাত ফ্যান-বাবারে বাবা
ডোন্ট মিস দ্য চান্স
হে অল দ্য নিশাত ফ্যান-বাবারে বাবা
ডোন্ট মিস দ্য চান্স।

প্লাজু ডান্স, প্লাজু ডান্স, প্লাজু ডান্স।”

ওর গানের মাঝ দিয়েই তিহান বলে উঠলো”এবার দয়াকরে একটু থামুন মিস ইয়ো ইয়ো নিশাত সিং।”

তিহানের কথায় নিশাত থেমে ওর দিকে তাকিয়ে জিগ্যেস করলো”কই গেছিলা তুমি?”

“বাইরে একটু দরকার ছিলো।এখন তুই ঠিক করে বস তোর পায়ের ড্রেসিং করাতে হবে।”

“কালই তো করলে।” নিশাত ভ্রু কুচকে বলল।

“হুম প্রতিদিন ব্যান্ডেজ পাল্টাতে হবে।শুকানোর আগ পর্যন্ত।”

“আচ্ছা দাও পাল্টে।”

তিহান ওর পায়ে ড্রেসিং করছিলো হঠাৎ নিশাতের ফোনে একটা আননোম নাম্বার থেকে কল আসায় ও রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলল….

চলবে….

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)