#অর্ধাঙ্গিনী (An Ideal Wife)
#পার্ট১৭/১৮
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
পেছন থেকে হঠাত করে কেউ চোখ চেপে ধরায় কেপে উঠল কায়া।হাতের মধ্যে তরল কিছুর উপস্থিতি পেয়ে বাধন আলগা করে দিল রেওয়াজ।কায়া মুহুর্ত দেরী না করে পেছন ফিরে রেওয়াজের ঠোটদুটো আকড়ে ধরল।
কেবিনের কোনে দারিয়ে অফিসের কাগজ চেক করছিল সে।সুযোগ বুঝে রেওয়াজ টুপ করে কায়ার চোখটা চেপে ধরল। কিন্তু কায়া হুট করে এভাবে তাকে কিস করবে এটা ভাবে নি।ভেবেছিল হয়তো কায়া মুখ ফুলিয়ে কথা বলা বন্ধ করে দিবে।কায়া রেওয়াজের ঠোট ছেড়ে দিয়ে উল্টো দিকে ঘুরে দাড়াল।রেওয়াজ পুরাই থ বনে গেছে।
-কায়া তুমি ঠিক আছ?কায়া??
-একটা কথাও বলবানা রেওয়াজ। তুমি জানো আমি এই এক মাস কতটা কষ্ট পেয়েছি?
.
.
-আম সরি মাই লাভ।বাট মেঘের জন্য…
-শশশশশশ.…..।আমি জানি মেঘ। আমার কোন এক্সপ্লেইনেশন চাই না।আম জাস্ট সেয়িং আই মিস ইউ এন্ড আই লাভ ইউ।
রেওয়াজ কায়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।কায়ার কোমড়ে হাত পেচিয়ে মিশিয়ে নিল নিজের সাথে৷ দু গালে হাত দিয়ে তার কপালের সাথে কপাল ঠেকাল।একে অপরের নিশ্বাস বারি খাচ্ছে।কায়া চোখ দুটো বন্ধ করে আছে।আলতো করে কায়ার বন্ধ চোখ দুটোতে চুমু দিয়ে তার ঠোট দুটো দখল করে নিল রেওয়াজ।কায়া চোখ দুটো বড় বড় করে রেওয়াজকে দেখছে।রেওয়াজ সেদিকে পাত্তা না দিয়ে কায়ার হাত দুটো মুঠো করে বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিল।কায়াও আবেশে রেওয়াজের ভালোবাসা নিতে লাগল।
.
.
১৮ঘন্টার জার্নি শেষে বেশ ক্লান্ত মেঘ।হোটেলের রুমে ঢুকেই সে ফেশ হয়ে ঘুমের দেশে তালিয়ে গেছে।ঘুম ভাঙল ফোনের রিংটনে।এক হাতে চোখ কচলে আরেক হাতে ফোন রিসিভ করে কানে রাখল সে।
-Yes Olivia
-Sir You have a meeting in next week at Chicago.When will you leave?
-Olive I’m already here for some personal issues.Get the papers ready and come here within 2 days. We’ll discuss later the rest.
-Got it sir.
কল কেটে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াবে তখনি আবার ফোনটা বেজে উঠল।স্ক্রীনে best buddy নামটা দিকে দেখে হালকা হাসল মেঘ।
-মেঘ কই তুই?এয়ারপোর্টে থেকে তোর কোন খোজ নাই।হোয়্যার দা হেল আর ইউ?
-রিলাক্স বাডি। আমি হোটেলে।
-হোয়াট?তুই হোটেলে কেন?মেঘ আমার নিজের পারসোনাল ফার্ম হাউস আছে। কায়ার ফ্লাট আছে। তারপরেও তুই…
-আমি কায়া ভাবির কাছে যেতে চাচ্ছি না।বেচারি আমার জন্যে এম্নেই প্রবলেম ফেস করছে।তুই বরং তোর ফার্ম হাউসের এড্রেস্টা দে।আমি ফ্রেশ হয়ে চলে যাব।
-ওকে ফাইন।বাট আজকে রাতে তোর ভাবি তোকে ইনভাইট করেছে ডিনারে।ইউ মাস্ট কাম।
-ডান। বাই। সি আ।
-বাই।
ফোন রেখে ওয়াশরুমে চলে গেল মেঘ।
.
.
কখনো বা ইচ্ছা করে বুক ফাটিয়ে কাদি।কখনো বা অনুভূতি গুলোকেই মিথ্যে মনে হয়৷চাওয়া পাওয়ার খাতায় সবটাই শূন্য।খুব করে ইচ্ছে হয় দূরে কোথাও নিজেকে আড়াল করতে।কখনো বা নিজেকেই অপ্রয়োজনীয় মনে হয়।অনিভূতির আহ্বানে সাড়া দেওয়া বেহায়া মনটাও আজ বেখেয়ালী।নিস্বত
া গ্রাস করলে সবাই ছোটে পূর্নতার সন্ধানে। আমি অপরাগ হয়ে বসে থাকি শূন্যতার পানে চোখ রেখে।কিছু শূন্যতা কখনো পূর্নতা পায় না। তবে অন্য এক মিশ্র অনুভূতি শূন্যতার জোয়ারে ভাটার আগমনী বার্তা নিয়ে আসে।
আনমনে কথা গুলো ভাবছে বৃষ্টি।তার দৃষ্টি দূর আকাশের ওই নীল সীমানায় নিবদ্ধ।ছলছল চোখ বেয়ে বারিধারা নামবে এমন সময় মা ডাক শুনে বুকটা শীতল হয়ে গেল তার।
-Mamma I am home.পেছনে ফিরে দুহাত ছড়িয়ে দিল বৃষ্টি। নাদুস নুদুস একটা বাচ্চা গুটিগুটি পায়ে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরল তাকে।বৃষ্টি গালে মুখে চুমু খেয়ে কোলে তুলে নিল ছেলেকে।
-How was your first day Sweetheart?
-It was good mammah. But i missed you.
-Awwww honey. I missed you too.
বাচ্চাটা বৃষ্টির গালে কিস করে কোল থেকে নেমে গেল।
.
.
দরজার কাছে দাড়িয়ে মা ছেলের কান্ড দেখছিলেন মিস কিয়ারা।বৃষ্টিকে দেখে সে হাসি মুখে বলে ঊঠল
-Mrs.Rahman.Rod is a very cute and Intelligent boy.I hope he will shine in life.
কথাগুলো বলে বিদায় নিলেন তিনি।বৃষ্টি হাল্কা হেসে রোদের কাছে গিয়ে বসল।রোদ ব্যাগ থেকে বই খাতা বের করছে।বৃষ্টি রোদের মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে বলল
-আমার প্রিন্স কি করছে?
-ওহ মম।আমাল চুলে হাত দিও না।আমার এস্তাইল নত্ত হয়ে যায়।তখন মেয়েলা আমাকে দেখে হাতবে।
.
.
বৃষ্টি ছেলের কথা শুনে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।রোদ তার ছোট্টছোট্ট হাত দিয়ে চুলগুলো ঠিক করে বলল
-Mamma now i am looking ur prince.
-ওরে পাজিরে
বলেই মা ছেলে দুষ্টিমিতে মেতে উঠল…….
চলবে
#অর্ধাঙ্গিনী (An Ideal Wife)
#পার্ট১৮
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
সময়ের প্রবাহ কারো জন্য ধীর কারো জন্য বা দ্রুতো গতিতে হয়।কেউ বা সময়ের কাছে হার মেনে নেয়। কেউ বা সময়কে হার মানানোর চেষ্টায় মত্ত থাকে।আধারে যাদের পথ চলা তাদের কাল দীর্ঘায়িত হয়।কারন তারা কখনো আলোর খোজে ছোটে না।তারা আধারের শেষ টুকু খুজে বেরায়।কিন্তু আলোর পথে যাদের চলাচল তারা তাদের সময়টাকে আটকে রাখতে চায়।সময়ের অনেক আগেই তারা অনেকটা পেয়ে যায়।
মেঘ ও তেমনি আধার পথের যাত্রী।৫টা বছর যেন তার কাছে ৫যুগের মত মনে হচ্ছে। আধারের শেষ খুজতে খুজতে যেন সে জীবনের শেষ প্রান্তে পৌছে গেছে।অন্যদিকে বৃষ্টি নতুন করে বাচতে শিখেছে।রোদ কে ঘিরে।
.
.
কায়া আর রেওয়াজ মিলে ডায়নিং টেবিল সাজিয়ে নিয়েছে।এখন শুধু তাদের আসার পালা।কলিং বেলের শব্দ শুনে কায়া গিয়ে দরজা খুলল।ব্লাক স্যুট পড়া বুকে হাতে দাড়িয়ে থাকা মেঘকে দেখে চিনতে ভুল হয় নি তার।মেঘ কায়ার হাতে বুকেটা দিয়ে সালাম দিল। রেওয়াজ এগিয়ে এসে মেঘকে দেখেই দেখে খুশি হয়ে গেল।
-বারে.. ভাবীর এক ডাকেই চলে আসলি?আর আমি রোজ রোজ ফোন দিয়ে ঘ্যানারঘ্যানার করি৷তাও তোর কোন খোজই পাওয়া যায় না।
কায়া মেঘের ঘাড়ে হাত দিয়ে বলল
-এটাই ভাই বোনের ভালোবাসা। তুমি বুঝবে না।
কায়া রেওয়াজকে নিয়ে ডায়নিং টেবিলের দিকে আগালো।রেওয়াজ দরজাটা লাগাতে গিয়ে একজনকে দেখে আটকে গেল।লাইট অরেঞ্জ কালারের শাড়ির সাথে গোল্ডেন হিজাব পরিহিতা একজনকে দেখে রেওয়াজ বলে উঠল
-You must be Ms.Mrittika Enam?
.
.
নামটা শুনে থমকে গেল মেঘ।চটজলদি ঘাড় ঘুরিয়ে যা দেখল তার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না।মুখ থেকে মৃদু স্বরে বেরিয়ে এলো
-বৃষ্টি…..
বৃষ্টি মেঘকে দেখে যেন মরুভূমিতে পানি খুজে পেল।চোখে পানি টলমল করছে।কথা বলার জন্যে এগোতে যাবে তার আগেই মুখ ঘুরিয়ে নিল মেঘ।কায়া দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরল।বেশ খুশি সে নিজের বেস্ট ফ্রেন্ডকে পেয়ে।বৃষ্টি যেন মুর্তি হয়ে গেছে।নরার শক্তি টুকুও পাচ্ছে না।
-Am i late sweety?
পিচ্চি একটা বাচ্চার ভয়েস শুনে হেসে দিল কায়া। হাটু গেড়ে বসে রোদের গাল দুটো টেনে দিল সে।
– No. u aren’t honey.
-Come on mamma. lets go.
মাম্মা ডাক শুনে পেছনে ফিরে তাকাল মেঘ। ঘৃনায় তার গা রি রি করছে। পারছে না সে সেখান থেকে চলে যেতে।বৃষ্টিকে তার এই মুহুর্তে প্রচন্ড অসহ্য লাগছে।মুখটা শক্ত হয়ে আছে তার।রেওয়াজ ব্যাপারটা কিছুটা আন্দাজ করতে পারলেও তেমনটা আমলে নেয় নি।খেতে বসে বেশ দুষ্টুমি করছে রোদ।রেওয়াজ আর কায়া বেশ উপভোগ করছে। মেঘ কোন রকমে খেয়ে উঠে পড়ল।
.
.
খাওয়া শেষে সবাই মিলে আড্ডা দিতে চাইল। কিন্তু মেঘ নিষেধ করছে বার বার। অনেক করেও তাকে রাজী করানো যায় নি। রেওয়াজ দেখছে মেঘের মধ্যে হিংস্রভাবটার বিস্তার ঘটছে ধীরে ধীরে।রোদের সামনে কোন উল্টো বিহেব করলে ব্যাপারটা সুখকর হবে না।তাই সে মেঘকে নিয়ে ফার্মহাউসে চলে গেল।
.
.
মাঝরাতে ব্যালকনিতে বসে হাটুতে মুখ গুজে কাদছে বৃষ্টি।ছোট্ট ছোট্ট দুটো হাতের অস্তিত্ব পেয়ে মুখ তুলে তাকালো সে।রোদকে দেখে মুখে হাসি ফুটে উঠল তার।
-ডোন্ট ক্রাই মাম্মা। তুমি পাপ্পাকে মিস কর তাই না?আমিও পাপ্পাকে অনেক মিস করি মাম্মা।ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নিল বৃষ্টি।
বিছানায় অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে মেঘ। দুই তিনটা মদের বোতল পাশে গড়াগড়ি খাচ্ছে।নেশা মাথায় চড়ে আছে তার।কিন্তু কোনভাবেই রাগ কমছে না।চোখের সামনে সবটা ঝাপসা হয়ে আসছে তার।ধীরে ধীরে তালিয়ে যাচ্ছে ঘুমের অতল সমুদ্রে।
দুটো হাত ধীরে ধীরে কোমড় আকড়ে নিল কায়ার।
-আমি ঘুমাইনি রেওয়াজ।
-তাতে কি?নিজের বঊকে ভালোবাসছি।কার কি?
কায়াকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিল রেওয়াজ। তার দৃষ্টি কায়ার ঠোট দুটোতে নিবদ্ধ।কায়া কিছু বলতে৷ যাবে তার আগেই টুপ করে ঠোট দুটো আকড়ে নিল রেওয়াজ।একটা হাত কায়ার কোমড় আকড়ে আছে।আরেকটা হাত অবাধ পিঠটাতে বিচরন করছে।ভালোবাসার এক নতুন বাধনে আবদ্ধ হচ্ছে তারা।………
চলবে