#অর্ধাঙ্গিনী(An Ideal Wife)
#পার্ট০৯+১০
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
আয়াজ চৌধুরী।বড়লোক বাপের উগ্র সন্তান।লন্ডন থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েট পাশ করে আমাদের কোম্পানিতে জয়েন করে ম্যানেজিং ডায়রেক্টর হিসেবে।সুদর্শন পুরুষ আর মাসিক ছয় ডিজিটের স্যালারি তাকে মেয়েদের কামনার বস্তু করে তুলে।সেও কম যায় না।সুযোগ হাতছাড়া করার পাত্র সে নয়।টাকার লোভ দেখিয়ে অনেক মেয়ের সাথে বিছানা শেয়ার করেছে।কিন্তু মেয়াদ অই একদিন। এক রাতের পর কোন মেয়েকে তার আর ভালো লাগে না।তার ক্যারেক্টারকে প্লে বয়ের সাথে তুলনা করলে ভুল হবে না।
.
.
বৃষ্টি আর আমার সুখের সংসার ভালোই চলছিল। ইচ্ছে ছিল মেঘ বৃষ্টির আকাশে একটা ছোট্ট রোদুসী বা রোদের আগমন ঘটবে।আমাদের প্রথম ম্যারেজ এনিভার্সেরিতে আমার অফিসের সব স্টাফদের কে ইনভাইট করা হয়েছিল।আমাদের বিয়েটা খুব একটা আয়োজন করে করতে পারিনি। তাই বৃষ্টির ইচ্ছে ছিল আমাদের ফার্স্ট ম্যারেজ এনিভার্সেরি সেলিব্রেট করার।পার্টির দিন আমি নিজে হাতে ওকে সাজিয়ে ছিলাম।
-উফ মেঘ ছাড়ো না। আর কত সাজাবা?আজকে আমাদের ম্যারেজ এনিভার্সেরি। বিয়ে না।
-শশশশশ।চুপ করে বস তো কথা বললে আরো দেরী হবে।
-মেঘ বুঝার চেস্টা কর একটু আমার অনেক কাজ আছে।
-হুম ডান। এবার চোখ খুল।
বৃষ্টিকে চোখ খুলে এক ধ্যানে আয়নায় তাকিয়ে আছে।আমি হালকা হেসে জিজ্ঞেস করলাম
-কী দেখছ ওভাবে?
-মেঘ তোমাকে আজকে অনেক কিউট লাগছে। মনে হচ্ছে আজকে আবার আমাদের বিয়ে হচ্ছে।
-যাহ বাবাহ।আমি ২ঘন্টা ধরে উনাকে সাজালাম আর উনি ড্যাবড্যাব করে আমাকে গিলে খাচ্ছেন।
-হয়েছে তোমার?সর যাব আমি।
বৃষ্টি উঠে চলে যাচ্ছিল। আমি পেছন থেকে ওর হাতটা টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলাম।ভারী লেহেঙ্গা আর গহনা পরে বেচারী তাল সামলাতে না পেরে আছড়ে পরল আমার বুকে।
আমি ডান হাতে ওর থুতনিটা উচু করে ওর লাল টকটকে ঠোট দুটোটে ঠোট ছুইয়ে দিলাম।বৃষ্টি চোখে বড়বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
-নজর টিকা লাগিয়ে দিলাম। এখন আপনি যেতে পারেন।
বৃষ্টি মুচকি হেসে সেখান থেকে দৌরে পালালো।
.
.
ডায়নিং এ দাড়িয়ে আমি আর বৃষ্টি গেস্টদের সাথে কথা বলছি।হঠাত করে দরজার দিকে চোখ পরতেই আমি থমকে গেলাম। আয়াজ চৌধুরি আমার বাসায়!!!!অফিসের সবার সাথে উনাকেও ইনভাইট করেছিলাম। কিন্তু আমার জানা মতে উনি কোন ফ্যামিলি ফাংশন এটেন্ড করেন না৷এই জন্যে আমি অনেকটা নিশ্চিত ছিলাম।তবে হুট করে আমার বাসায় কেন?পরের মুহুর্তেই বৃষ্টির দিকে চোখ গেল। অপরুপ লাগছে আমার বঊটাকে। মনে হচ্ছে আকাশ থেকে কোন পরীকে বউ সাজিয়ে মাটিতে নামানো হয়েছে।আয়াজ চৌধুরী একটা বাকা হাসি দিয়ে আমার দিকে এগিয়ে এলেন।
.
.
-কনগ্রাচুলেশন মিস্টার মেঘ।এন্ড অলসো হ্যাপি এনিভার্সেরি। তা আপনার ওয়াইফকে দেখছি না।কোথায় উনি?
বলেই এদিক ওদিকে তাকাতে লাগলেন।এতক্ষনে বুঝতে পারছি আয়াজ চৌধুরীর এখানে আসার আসল রহস্য।
-মি.মেঘ৷ কল ইওর ওয়াইফ প্লিজ।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও বৃষ্টিকে ডাকতে হল।আমার ডাক শুনে বৃষ্টি হাসি মুখে এগিয়ে গেল।আয়াজ চৌধুরী হা হয়ে বৃষ্টিকে দেখছে।মনে হচ্ছে যেন চোখ দিয়েই গিলে খাবে।আমার ইচ্ছে করছিল ওর নাক বরাবর একটা ঘুষি মেরে নাকটা ফাটিয়ে দিতে।
আয়াজ চৌধুরী ফুলের তোড়াটা এগিয়ে দিল বৃষ্টির দিকে।বৃষ্টি একবার আমার দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে তোড়াটা নিতে হাত বাড়িয়ে দিল।তোড়া দেওয়ায় ছলে সে বৃষ্টির হাত ছুয়ে দিল।আমি বৃষ্টির হাত থেকে তোড়াটা কেড়ে নিয়ে বললাম
-বৃষ্টি উনি আমাদের নিউ ডিরেক্টর।
বৃষ্টি হালকা হেসে উনাকে সালাম দিয়ে অন্য দিকে চলে গেল।আয়াজ চৌধুরী বৃষ্টির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছেন।উনার চোখে স্পষ্ট কামনার আভাস দেখতে পাচ্ছি আমি।
.
.
-মি.মেঘ তা যাই বলেন বউ পেয়েছেন লাখে একটা। নামটাও কি মিষ্টি।নাম বৃষ্টি হলেও বুকে আগুন লাগিয়ে দিয়ে গেল।
কথাগুলো বলেই উনি জঘন্য ভাবে হাসলেন।
পার্টির প্রতিটা মুহুর্তে উনি বৃষ্টির কাছাকাছি ঘেষার চেস্টা করেছেন।যাওয়ার সময় বৃষ্টিকে বললেন
-মিসেস রহমান আমি শুনেছি সুন্দরী রমনীরা নাকি ভাল রাধতে পারে না। তা আপনি যদি আপনার নিজে হাতে একটু চা বানিয়ে খাইয়ে আমার ধারনাটা ভুল প্রমান করতেন……?
উনার কথা শুনে বৃষ্টি আমার দিকে তাকাল। আমি দাতে দাত চেপে হালকা হেসে সায় দিলাম।বৃষ্টি হাসি মুখে বলল
-আপনার সময় হলে আসতে পারেন। তাছাড়া অতিথি আপ্যায়ন নবীজী(সাঃ) এর অনেক প্রিয় কাজের একটি ছিল।
-ওকে দেন।আজ চলি। ফ্রি থাকলে কল দিয়েন।
আয়াজ চৌধুরী চলে যেতেই আমি হাত ধরে টানতে টানতে বৃষ্টিকে রুমে নিয়ে আসলাম।রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে।
-কি দরকার ছিল উনাকে ইনভাইট করার?
-মেঘ উনি তোমার বস।
-সো হোয়াট?উনি অফিসে বস।বাসায় না।
-তাই বলে তুমি মেহমানদের মুখের উপর না করবে?
-আই ডোন্ট কেয়ার এবাউট অল দিস। আই জাস্ট কেয়ার এবাউট ইউ।বৃষ্টি তুমি জানো না অই লোক কতটা…..
আমাকে আর কথা বলার সুযোগ দেয় নি বৃষ্টি। তার আগেই আমার ঠোটে ওর ঠোট ডুবিয়ে দেয়।………
চলবে
#অর্ধাঙ্গিনী(An Ideal Wife)
#পার্ট১০
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
আমাকে আর কথা বলার সুযোগ দেয় নি বৃষ্টি। তার আগেই আমার ঠোটে ওর ঠোট ডুবিয়ে দেয়।বৃষ্টির ঠোটগুলো সফটলি আমার ঠোটকে আকড়ে ধরল।আমি ওকে যত ছাড়ানোর চেস্টা করছি বৃষ্টির ঠোটগুলো তত আমাকে জাপটে ধরছে।এটা বৃষ্টির স্পেশাল টেকনিক।যখনি আমার রাগ ওঠে ও বুঝ শুঝ বাদ দিয়ে আমার ঠোট দুটোর উপর ঝাপিয়ে পড়ে।এত মিষ্টি খেয়ে কি রেগে থাকা যায় বল?
.
কথাটা বলে হালকা হেসে ফিরে তাকালো মেঘ।রেওয়াজ শব্দ করে হেসে উঠল।
-হাউ রোমান্টিক ম্যান!আল্লাহ জানে তুই এত রোমান্টিক একটা বউকে ফেলে এতদিন থেকে কিভাবে এই শহরে পড়ে আছিস।ম্যান সে তোর #অর্ধাঙ্গিনী। I mean she is damnly #An Ideal Wife.
তাচ্ছিল্যের সাথে হাসল মেঘ।
-হ্যা সে অর্ধাঙ্গিনী। তবে আমার না।
-তোদের কি ডিভোর্স?
– না রে।সেই সুযোগটাও ও আমাকে দেয় নি।সুযোগ দিলে…..
কথার মাঝখানে রেওয়াজের ফোনটা বেজে ওঠে। স্ক্রীনে কায়ার হাসিমাখা মুখটা ভাসছে।সেটা দেখে রেওয়াজের ঠোটেও একটা চওড়া হাসি ফুটে উঠল।মেঘ কফির মগটাত্র চুমুক দিয়ে বলল
-আই গেস ভাবী?
.
.
রেওয়াজ মাথা নেড়ে উঠে চলে গেল ফোনটা রিসিভ করতে।মেঘ কফির মগটার উপরে আঙ্গুল ঘুরাচ্ছে আর ভাবছে এক সময় বৃষ্টির ফোন এলে সেও এভাবে ব্লাশ করত।তার চোখ মুখও খুশিতে ভরে উঠত।কিন্তু দিনগুলো এখন কল্পনা মাত্র।রেওয়াজ কথা শেষ করে এসে বলল
-সরি ব্রো।নিড টু গো।রাতে দেখা হচ্ছে।সি আ লেটার ইন The Baxter Inn.
.
.
.
রেওয়াজ চলে যেতেই মেঘ নিজের রুমে এসে কাবার্ড থেকে একটা অ্যালবাম বের ককরে বসল।অ্যালবামটা খুলতেই বৃষ্টির হাসিমাখা একটা বিয়ের ছবি সামনে এল।মেঘ আবার চিন্তার সাগরে ডুব দিল
.
.
এনিভার্সেরির কয়েকদিন পরে এক শুক্রবারে বৃষ্টি রান্নাঘরে রান্না করছে আর মেঘ সুযোগ বুঝে তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাচ্ছে।কখনো পেটে স্লাইড করছে কখনো বা কপালের উপর নেমে আসা অবাধ্য চুলগুলোকে ফু দিয়ে উড়িয়ে দিচ্ছে।বৃষ্টি চেহারায় রাগী ভাব ধরে রাখলেও মুখে কিছুই বলছে না।সেও স্বামীর দুষ্টুমিগুলো উপভোগ করছে।এমন মিষ্টি কিছু দুষ্টুমি প্রতিটা মেয়েই তার স্বামীর কাছে আশা করে থাকে।মেঘ পেছন থেকে বৃষ্টিকে কাতুকুতু দেবে ওমন সময় কলিং বেজ বেজে উঠল। মুহুর্তে মেঘের চেহারাটা বাংলার পাচের মত হয়ে গেল।মেঘ মনে মনে যে বেল বাজিয়েছে তার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতে লাগল।
.
.
দরজাটা খুলতেই মেঘ যেন ১০০০ভোল্টের ঝটকা খেল।আয়াজ চৌধুরী তার বাসার সামনে দাড়িয়ে।তার ঠোটে একটা জঘন্য নোংরা হাসি ঝুলছে। কিচেন থেকে বৃষ্টি হাত মুছতে মুছতে বেড়িয়ে এল।
-কে এসেছে মেঘ?
বৃষ্টির গলার আওয়াজ শুনে আয়াজ চৌধুরী তার দিকে নজর দিলেন।শাড়ির একটা কোনা কোমড়ে গুজা।সাদা মসৃন পেট দৃশ্যমান।বৃষ্টির কোমড়ের ভাজে চোখ আটকে আছে আয়াজ চৌধুরীর।বৃষ্টি বুঝতে পেরেই আচলটা খুলে মাথায় ঊড়িয়ে নিল।তারপর হাসি মুখে এগিয়ে এল। বৃষ্টিকে দেখে আয়াজ চৌধুরী বলে উঠল
-এইদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম ভাবলাম বৃষ্টির হাতে এক কাপ চা খেয়ে যাই। ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড।
মেঘ কিছু বলার আগেই ইনা হাসিমুখে বলল
-আরে আসেন না।বাইরে কেন?ভিতরে আসেন।
মেঘ যতটানা অবাক হয়েছে তার চেয়ে বেশি রাগ হচ্ছে বৃষ্টির উপরে।কি দরকার খাল কেটে কুমিড় আনার!
আয়াজ চৌধুরী কথার ছলে লাঞ্চ আওয়ার পর্যন্ত দেরী করলেন।ভদ্রতার খাতিরে বৃষ্টিও তাকে লাঞ্চ করে যাওয়ার জন্যে জোরাজুরি করতে লাগল।আয়াজ চৌধুরী যেন এটারই অপেক্ষায় ছিলেন। এক বাক্যে তিনি রাজি হয়ে গেলেন।মেঘ সবটা দেখছে আর রাগে ফুসছে।না পারছে সইছে না পারছে কিছু বলতে।
লাঞ্চ শেষে আয়াজ চৌধুরী তৃপ্তির ঢেকুর ছেড়ে বললেন
-ধন্যবাদ আমার ধারনাটাকে ভুল প্রমান করার জন্যে। মেঘ সাহেব আপনি সত্যি অনেক লাকি বৃষ্টির মতো ওয়াইফ পেয়ে।She is such an ideal wife.
মেঘ অনিচ্ছা সত্ত্বেও হাসল।
.
.
আয়াজ চৌধুরী চলে যেতেই বৃষ্টি বলে উঠল
-মেঘ আমি জানি উনি বাসায় না অফিসে তোমার বস। কিন্তু বাসায় আসা কোন মেহমানকে আমি অসম্মান করতে পারব না।
-বৃষ্টি তুমি জানো না উনি অনেক বড় প্লে বয়।
-সো হোয়াট মেঘ?
-What do you mean by so what Brishty?He is a damn playboy. And you are saying so what?তুমি কি সামান্যও আন্দাজা করতে পারছ না উনি কেন বারবার আমাদের সামনে ঘেসার চেস্টা করছেন?
বৃষ্টির দুহাত ধরে চেচিয়ে উঠল মেঘ।
-আহ মেঘ ছাড়ো আমাকে।লাগছে।
-লাগুক এর চেয়ে কয়েকগুন বেশি আমাকে লাগছে। তুমি আর আয়াজ চৌধুরীর সাথে কথা বলবে না এটা আমার ফাইনাল কথা।নাহলে তোমার আর আমার রাস্তা আলাদা।
কথাগুলো বলেই বৃষ্টিকে ধাক্কা দিয়ে চলে গেল মেঘ। বৃষ্টি চেয়ে আছে মেঘের যাওয়ার পানে।ঠোটে তাচ্ছিল্যের হাসি।আজ তাদের সম্পর্কে ভালোবাসার বদলে হিংসা আর সন্দেহ বেশি কাজ করছে।তাদের সম্পর্কের বুনিয়াদ হয়ে দাড়িয়েছে তৃতীয় এক ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক।টুপ করে একফোটা জল গড়িয়ে পড়ল তার চোখ বেয়ে।……..
চলবে