#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
০৮.
“কারণ আমরা ভুল মানুষে প্রেম নিবেদন করি”
প্রণয়ের কথায় সম্বিৎ ফিরে মিরার।নিজেকে ধাতস্থ করে সে।প্রণয়কে ছেড়ে দিয়ে চোখের পানি মুছে খানিকটা কেশে হাসার চেষ্টা করে বলে,
“আমি ঐ…”
মিরাকে মাঝপথে আটকে দিয়ে প্রণয় বলে,
“তুই জানিস আমার মিথ্যে পছন্দ না।ফারদার চেষ্টাও করবিনা”
মিরা প্রসঙ্গ এড়াতে বলে,
“গ্লাভস,এপ্রোণ কিছুইতো খুলিস নি।নাকি অপারেশন ছেড়েই এসেছিস?”
“তুই জানিস আমি কোনো কাজ মাঝপথে ফেলে আসিনা”
“আচ্ছা মাস্কটাতো খোল অন্তত”
“তুই চেয়ারে বস আমি আসছি”
বলেই আবারও ওটিতে ঢুকে পড়ে প্রণয়।বেশকিছুক্ষণ পর বেরিয়ে আসে স্টেথোস্কোপ আর এপ্রোণ হাতে।মিরার সামনে এসে তার দিকে সেগুলো এগিয়ে দিয়ে বলে,
“ধর”
মিরা সেগুলো ধরতেই মিরার পাশে বসে শার্টের হাতা গুটাতে ব্যস্ত হয়ে প্রণয় বলে,
“বল।হঠাৎ অরণকে ছেড়ে এলি যে?কোনো দরকার?”
“দরকার না হলে অবশ্যই এখানে একঘন্টা ধরে ওকে একা ফেলে বসে থাকতাম না”
কপাল কুচকে প্রণয় বলে,
“পেচাস নাতো।সোজাসাপ্টা বল”
“অরণ রেসপন্স করেছে”
ব্যাস!বাক্যটি শ্রবণ হতেই থেমে গেলো প্রণয়ের হাতজোড়া।শীতল হৃদয়ে উষ্ণতা ছেয়ে যেতে লাগলো।অধরে হাসি না ফুটলেও হাসলো প্রণয়ের চোখদুটো।নাসারন্ধ্র খানিকটা প্রসারিত করে বারকয়েক শ্বাস নিয়ে বললো,
“কিরকম রেসপন্স?কথা বলেছে নাকি হাত-পা নড়েছে?”
“না এমন কিছুইনা”
“তবে রেসপন্স কি করে হলো?”
“আমি ওর কপালের শিরা ফুলতে দেখেছি।নীলচে হয়ে ছিলো।যেমনটা কেউ রাগলে হয় তেমনটা।একটু আগেও চেক করতে গিয়েছিলাম।গিয়ে দেখলাম ওর হার্টবিট ও বেড়েছে আগের তুলনায়।দৌড়ালে বা অস্থিরচিত্ত হলে যেমন বাড়ে তেমনটা।কিন্তু ও রাগবেই বা কেনো আর অস্থিরই বা কেনো হবে?এমন কিছু কিভাবে সম্ভব?এতো বছরেও যা হয়নি তা আজ হঠাৎ কি করে হলো?”
মিরার কথায় পলক থমকায় প্রণয়ের।স্থির হয় তার দৃষ্টি।সে ভাবে ভোরবেলা অরণকে তার বলা কথাগুলো,
হাসপাতালে এসেই অভ্যাসবশত প্রণয় সবার আগে অরণকে যেই রুমে রাখা হয়েছে সেখানেই ঢুকে।ঢুকেই বন্ধুর পাশে চেয়ার টেনে বসে তার দিকে ঝুকে বলে,
“দোস্ত তুইতো সব শুনতে পাস তাইনা?তবে কেনো আমাদের কষ্টগুলো বুঝিস না?তুই কি আমাদের কষ্টগুলো শুনতে পাসনা?তবে উঠিস না কেনো?নাকি বুঝেও না বুঝার ভান ধরিস?তোকে সন্দেহ করেছিলাম বলে?তোর পবিত্র উদ্দেশ্যকে নোং!রা বলেছিলাম বলে?আমরা না ভাই ভাই?তবে ভাইয়ের করা ভুল মনে গেথে অভিমান করে আছিস কেনো?আমাকে মাফ করে ফিরে আসা যায়না?আমারটা বাদ ই দিলাম।তুইওতো ভালোবেসেছিলি।তবে কেনো মিরার কষ্টটা বুঝছিস না?বছরের পর বছর ভালোবাসার মানুষকে নির্জীব দেখতে কি তার ভালোলাগে?মেয়েটা তোকে কখনোই বলেনি ও ভালোবাসে তোকে,শুধুমাত্র তোর বন্ধুত্ব হারাবে বলে।তুই এমন স্বার্থপর তো ছিলিনা মামা।মিরা কিন্তু আমার মামি হিসেবে একদম পার্ফেক্ট জানিস?মেয়েটা তোর জন্য ব্যাকুল থাকে।কবে তুই চোখ খুলবি আর কবে তোকে বলবে ও তোকে ভালোবাসে।যদি রাজি না হস ভালো হবেনা বলে দিলাম!আমার খালুতো তোকেই হতে হবে এন্ড আই মিন ইট।আর শোন তোকে যে আমি এসব বলে দিয়েছি মিরুকে কিন্তু বলবিনা।মেয়েটা তোকে সারপ্রাইজ দিতে চায়।তাই আজও বলেনি ও তোকে ভালোবাসে কারণ তুই এভাবে মূর্তির ন্যায় শুয়ে থাকলেও কানতো সজাগ।মেয়েটা এখনো ভয় পায় রে!যদি তুই বন্ধুত্ব নষ্ট করে ফেলিস!আমি ভাবলেই তাজ্জব বনে যাই তুই মুক্তোর ন্যায় উজ্জ্বল ভালোবাসা ফেলে মরিচিকার পেছনে সারাটা জীবন দিলি!”
বলেই থামে প্রণয়।শ্বাস নিয়ে আবারও বলে,
“যাক গে।এগুলোতো প্রতিদিনই বলি।আজ নতুন আর ইন্টারেস্টিং জিনিস বলতে এসেছি শোন।লালগোলাপের কথা মনে আছে তোর?থাকবে নাই বা কেনো।তার বদৌলতেই তো তুই আজ এখানে।তাকে আমি বিয়ে করে নিয়েছিরে মামা।ভাবিস না ভালোবেসে বিয়ে করেছি।এতোটা স্বার্থপর বন্ধু তো আমি নই যে তাকে নিয়ে স্বপ্ন বুনবো যার জন্য আজ তুই নির্বাক,নির্জীব।যে আমার প্রাণকে নিষ্প্রা!ণ করতেও পিছুপা হয়নি তার জীবনকে জাহান্মা!ম করতে প্রণয়ও পিছুপা হবেনা!তুই দেখিস তোর এই পাঁচ বছরের মাসুল তাকে দিয়ে আমি সারাজীবন নেবো।যাকে ভালোবেসেছিলাম তাকে একেবারেতো শেষ করে দেয়া যায়না রে!তিলে তিলে শেষ করার চেষ্টাটুকু অন্তত করবো।সেগুলো তোকে সচক্ষে দেখতে হবেতো দোস্ত!তাই তোকে ঠিক হতেই হবে।চোখের পাতা উন্মুক্ত করতেই হবে।বুঝেছিস?”
.
.
.
.
.
.
“কিরে কোথায় হারালি?”
মিরার কথায় ভাবনায় ব্যা*ঘা*ত ঘটে প্রণয়ের।সে ব্যস্তভঙ্গিতে বলে,
“কিছুনা চল।”
মিরা যেতে যেতে বলে,
“বিয়ে তাহলে করলি ই?”
“হিম”
“আমি নাহয় এখানে ছিলাম।বাকিরা কী করেছিলো?ওদের কেনো সাথে নিস নি?”
প্রণয় আড়চোখে মিরার দিকে তাকিয়ে আবারও সামনে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
“যেখানে আমার প্রা!ণই নেই সেখানে নিশ্বাস নেয়াটা কি বিলাসিতা নয়?”
মিরা গোমড়াটেভাবে বলে,
“হিম।মিরতো কাল তোর বাড়ি গিয়েছিলো তোর বউকে দেখতে।দেখেছে?আমায়তো আর কল দেয়নি।হাসপাতালে আসবেনা নাকি?”
“জানিনা। রাতের দিকে তন্ময়ের রুমে দেখেছিলাম।এরপর আর দেখিনি”
“ভাবির ছবি দেখা।এখনও তো তাকে দেখাস নি আমাদের।আজ নাহয় দেখেই নেই যে এমন কাকে বেছে নিলি যার জন্য তোকে টেকনাফ চলে যেতে হলো!”
প্রণয় কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
“একেবারে বাকিসবার সাথে বাড়িতে এসেই দেখে নিস”
সবকিছু বলে নিশ্বাস নেয় অমৃতা।চাঁদের রেসপন্স না পেয়ে ফোন কানে লাগিয়েই বলে,
“হ্যালো আপু শুনছো?”
গম্ভীরভাবে চাঁদ বলে,
“শুনছি”
“তারপর থেকে আমি এখানেই।পূর্ণতা আপু হাসপাতালে গেছে।রবিন কিছুক্ষণের জন্য এসেছিলো।তাই তোমায় কল দিয়েছিলাম ওরটা দিয়েই।এতোটা বিবেকহীন হইনি যে বিয়ের আগেই ওর সাথে আমি…”
“তবে অন্যদিক দিয়ে ঠিকই বিবেকহীনের ন্যায় আচরণ করেছিস”
অমৃতা মৃদু হেসে বলে,
“কিছুটা বিবেকহীনতা যদি কারো জীবনে অনেকটা সুখ নিয়ে আসতে পারে তবে আমি বিবেকহীনই শ্রেয়”
“খুব বড় হয়ে গেছিস?”
“অনেকটাই”
“রাখছি”
“রেগে আছো এখনও?”
“জানিনা।আর কখনো কল দিবিনা আমায়।বিশেষ করে এই নম্বর দিয়ে।ভালো থাকিস”
বলেই কল কেটে ঠোট কা!ম!ড়ে বিছানায় আলগা হয়ে বসে চাঁদ।বেশকিছুক্ষণ এভাবে বসে থেকেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“তুই যা ভেবে এতবড় পদক্ষেপ নিতেও দু’বার ভাবিস নি।তা কখনোই হওয়ার নয়রে বোনটুসি।আমি চাইলেও আর তার কাছে ফিরে যেতে পারবোনা। আর তার কাছে যদি ফেরারই হতো কখনোই ছেড়ে যেতাম না!”
বলেই আরও বড় করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ায় চাঁদ।শাড়ির আচল সামনে এনে আবৃত করে নেয় নিজেকে পুরোপুরিভাবে।প্রণয়ের রুম থেকে বেরিয়ে গতকাল যে রুমে ঘুমিয়েছিলো সেটার উদ্দেশ্যেই পা বাড়ায়।মিনিট পাচেক বাদেই সেখানে পৌঁছায় চাঁদ।রুমে ঢুকে দেখে তার তিন ননদ একে অপরের উপর হাত-পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমিয়ে আছে।এরূপ দৃশ্য দৃশ্যমান হতেই মনে পড়ে যায় অমৃতা,নিমৃতা আর তার এভাবে একসাথে ঘুমানোর কথা।ম্লান হেসে আগে বাড়ে ননদদের দিকে।কাছে গিয়েই প্রথমে রিদির হাত রুবার পিঠের নিচ থেকে উঠিয়ে ঠিক করে দেয়।তারপর যায় রুবার পাশে শিফার কাছে।শিফার এক হাত তারই ঘাড়ের নিচে পড়ে আছে দেখে ঘাড় বা হাত ব্যা!থা হতে পারে ভেবে সেটাও ঠিক করে দেয় খুবই সন্তপর্ণে।এরপর খেয়াল করে তিনজনই বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।কোথাকার কাপড় কোথায় গেছে।কোনটা কোথায় উঠেছে সেদিকে কোনো হুশই তাদের নেই।খানিকটা হেসে তিনজনের কামিজ আর পায়জামাই ঠিক করে দিয়ে আলমারি থেকে গতকাল তার শাশুড়ির দেয়া শাড়িগুলো নিয়ে বেরিয়ে পড়ে চাঁদ।সিড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে প্রায় এক মিনিটের মতো হেটে প্রণয়ের রুমের সামনে হাজির হয়।দরজার সামনে এসে থমকায় চাঁদের পা জোড়া।এক বুক শ্বাস নিয়ে মনে মনে বলে,
“তাতে আমি ক্ষুন্ন,তার বিরাগেও ক্ষুন্ন”
বলেই পা বাড়ায় দরজার দিকে।দরজা পেরিয়ে ভেতরে আসতেই চোখ যায় বিছানার ঠিক উপরের দেয়ালে বিশাল বড় ফ্রেমে বাধাই করা প্রণয়ের ছবির দিকে।এলোমেলো চুলে আড়চোখে তাকিয়ে কালো রঙের একটা শার্টের হাতা গুটাচ্ছে সে,কপাল কুচকানো তবুও সবসময়কার মতো গম্ভীরভাব বিদ্যমান।হঠাৎ করেই চাঁদের মস্তিষ্ক তাকে জানান দেয় আজ সকালেও ঠিক এরকম কিছুই দেখেছে সে।এই শার্টটাই বোধহয় ছিলো,চুলও অনেকটা এমনই।পার্থক্য শুধু এখানেই যে,ছেলেটা তখন নবো কিশোর ছিলো বর্তমানে প্রাপ্ত বয়স্ক যুবক।চাঁদ সেদিকে তাকিয়েই বললো,
“বড়লোকেরা বুঝি এভাবেই নিজের রুমে এতোবড় ছবি টানাতে ভালোবাসে?”
কোনো উত্তর খুঁজে না পেয়ে চাঁদ আগে বাড়ে।প্রণয়ের আলমারিতে শাড়িগুলো রাখতে উদ্যত হয়।তাই আলমারির দিকে এগোয় সে।পরক্ষণেই আবার বিছামার উপর একটা একটা করে শাড়িগুলো আলাদা করে রাখে।কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে লালের মধ্যে কালো পাড়ের শাড়িই চাঁদের দৃষ্টিকে সম্মিহিত করে।সে সেটাই বেছে নিয়ে বাকিগুলো আলমারিতে রেখে দিয়ে সেখান থেকে কালো রঙের ফুল হাতার কুচকে আসা একটা টিশার্টও সাথে নেয়।
বিকাল তখন চারটা বেজে সাত মিনিট।রুবা এক হাতে চোখ ডলতে ডলতে অপর হাতে একটা কাগজ নিয়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নামছে।বারবার হাই তুলছে সে।চোখেমুখে বিরক্তিকর ভাবটাও স্পষ্ট ফুটে উঠেছে তার।ঘুম পুরোপুরি না হওয়ায় বেশ চ!টে আছে সে।সিড়ি দিয়ে নেমে নিচে এসে ডাইনীং এ শিফা আর রিদিকে দেখে আরও বেশি ক্ষে!পে উঠে সে।রুবাকে ক্ষ্যা!পাতে শিফা মুরগীর রান হাতে নিয়ে মাং!স টেনে ছিড়ে চিবাতে চিবাতে রিদিকে বলে,
“মুরগীটা যা হয়েছে না!ঝোলটা আরও বেশি মজা”
বলেই রিদিকে হাত দিয়ে গু!তিয়ে রুবার দিকে ইশারা করে।রুবাকে দেখে রিদিও জর্দা খেতে খেতে বলে,
“জর্দাটাও কিন্তু কম যায়না শিফু।প্রত্যেকটা আইটেম খেয়ে মনে হচ্ছে বিয়ে বাড়িতে চলে এসেছি।প্রণয় ভাইয়ার বিয়ের খাবারের চেয়েও আজকের টা বেশি জোস”
শিফা মুখের ভাতটুকু গিলে বলে,
“দেখতে হবেনা কে রেধেছে।আমিতো ভাবতেই পারিনি চাঁদ ভাবি এতোকিছুতে এক্সপার্ট বাই গড!”
রিদি পানি খেয়ে বলে,
“হিম আমাদের অলরাউন্ডার ভাবি”
রুবা সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রা!গে ফুলছিলো।বারবার নিশ্বাস নিচ্ছে আর ছাড়ছে।এসব দেখে ঘুম তার উবেছে মিনিট দুয়েক আগেই।বর্তমানে এসব কথা শুনে দাতে দাত চেপে পরনের ওড়না মাথায় দিয়ে হনহনিয়ে ছুটলো দরজার দিকে।ঘুম কম হওয়ায় দিকবিদিক খুজে পাচ্ছেনা সে।তার উপর মেয়েদুটোর ঢং!রাগে কেবল দাত খিচছে।কখন কাকে কি বলে ফেলবে ঠিক নেই।আপাতত সে এখান থেকে যেতে পারলেই বাচে।দরজার কাছে যেতেই বলিষ্ঠ দেহের কারো কাধের সাথে ধাক্কা লেগে ফ্লোরে পড়ে যায় রুবা।হাড়টাড় বোধহয় ভে!ঙেই গেলো তার!ধপ করে পড়ায় কপালেও চো!ট পেয়েছে।রুবাকে পড়ে যেতে দেখে রিদি,শিফা দুজনেই খাবার রেখে হুড়মুড়িয়ে আসে।এমনিতেই মেজাজ চ!টে ছিলো।এবার যেনো বাধই ভে!ঙে গেলো।রুবা বসা থেকে উঠে চেচিয়ে বলে,
“এই শা*লা তোর সাহস তো কম না!”
“থা!প!ড়ি!য়ে গালের সব দাত ফে!লে দেবো বেয়াদব মেয়ে!”
এক হুং!কারেই রুবা নিশ্বাস নেওয়া ব*ন্ধ করে দিলো।চোখের পলক থমকে গেলো।মাথা তার ভনভন করছে।শিফা আর রিদি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কেবল।নিচতলার সকলেই গ*র্জ*ন শুনে বেরিয়ে আসে যার যার কামড়া থেকে।
To be continued….
#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
০৯.
সবেমাত্র হলরুমে পা দিয়েছিলো প্রণয়।অপরিচিত এক লোকের তারই বাড়িতে দাঁড়িয়ে তার বোনকে অপ!মান করতে দেখে কপাল কুচকালো তার।সে এপ্রোণ আর স্টেথোস্কোপ হাতে নিয়েই ভেতরে প্রবেশ করলো।ছেলেটার পাশ দিয়ে গিয়ে সোফায় আয়েশ করে বসে পাশেই হাতের জিনিসগুলো রেখে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে শার্টের কলার উচু করতে করতে পায়ের উপর পা তুলে বলে,
“আমার বাড়িতে এসে আমারই বোনকে হু!ম!কি দিচ্ছেন?ইমপ্রেসিভ”
আঁড়চোখে প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে ছেলেটা বললো,
“বাট আই আম নট সারপ্রাইজড অ্যাট অল।তার বেয়াদবির আইডল যে সামনে বসে থাকা তার অ!হং!কারী ডাক্তার ভাই তা বুঝতে কালবিলম্ব হচ্ছেনা আমার”
বেশ শান্তভাবে প্রণয় বললো,
“কার বাড়িতে দাঁড়িয়ে আছেন আপনি তা জানেন কি?”
“না আছে জানার ইচ্ছা না ছিলো এসব বড়লোক মানুষদের বাড়িতে প্রবেশ করার ইচ্ছা।নেহাৎ ই বোনটার জন্য আসতে বাধ্য হয়েছি।এসে ভালোই হলো, তাকে এখানে রেখে যাবার মতো ভুল চিন্তা মাথা থেকে জাস্ট চেপে গেলো”
রুবার ভাই রায়হান ছেলেটার সামনে এসে বলে,
“আমার বোনের থেকে দু’হাত পেছনে যান”
প্রণয়ের দিক থেকে ঘাড় ঘুড়িয়ে রায়হানের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ছেলেটা বলে,
“আপনার বেয়াদব বোনের কাছ ঘেষে থাকতে এখানে আসিওনি।তবে আপনাদের একটা উপদেশ দিচ্ছি।সময় থাকতে আদব-কায়দা শেখালে তার বড় ভাইদের থেকেও বড় তাও আবার অপরিচিত কাউকে গা!লি দেবার মতো ভুল সে করতোনা।অবশ্য যাদের নিজেরই ম্যানার্স নেই তারা ছোটদের আর কিই বা শেখাবে?”
রায়হান ভ্রু কুচকে বললো,
“গা!লি?”
“আপনাদের বড়লোকদের কী সমস্যা জানেন?আপনাদের কেউ কিছু বললে তাদের দমাতে নিজেদের স্ট্যাটাস নিয়ে বড়াই আপনাদের করতেই হবে।সে ভুল আপনাদের নিজেদেরই হোক না কেনো,বাজি হারা যাবেনা ভুলেও!”
“ক্লিয়ারলি বলবেন রুবা করেছে টা কী?”
“আপনার বোনের বড়দের প্রতি সম্মান নাইবা থাকতে পারে তবে আমার আছে।”
রায়হান আশেপাশে থাকা সব বড়দের দেখে উক্ত কথাটির অর্থ বুঝতে পেরে গম্ভীরভাবে শিফাকে বললো,
“শিফা?রুবা কী করেছে উনাকে?”
রায়হানের কন্ঠে চমকে যায় শিফা।গলায় কথা আটকে আসে তার।এই একটা ছেলের সাথে কথা বলতে গেলেই তার জড়তা কাজ করে সর্বদা।আজ যেনো গলা তার মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে।তাই সে মৌনতা অবলম্বন করাকেই শ্রেয় মনে করলো।রায়হান কন্ঠ উচিয়ে বললো,
“আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি!”
শিফার বদলে রিদি বলে,
“ভা…ভাইয়া।আসলে আমরা খাচ্ছিলাম।হঠাৎ আওয়াজ পেয়ে এসে দেখি রু..রুবা বসা থেকে দাঁড়িয়ে উনাকে….”
“উনাকে?”
রিদি আটকে আটকে বলে,
“এ..একটা কথা বলেছে”
রায়হান তার ডান হাতের পাশে টেবিলের কাছে থাকা ফুলদানিটা হাত দিয়ে ঘু!ষি!য়ে ফ্লোরে আছ*ড়ে বলে,
“টেল মি দ্যা ট্রুথ ড্যাম ইট!”
রিদি ভয়ে চোখ খিচে নেয়।শিফা রীতিমতো ঘামাচ্ছে।এ ছেলেটা রাগলে কাউকেই ছাড় দেয়না।রুবাকেও যে ছাড়বেনা তা ভেবেই অন্তরাত্মা কা!প!ছে তার।সে কিছু বলবে তার আগেই শুনতে পায় রুবার নিম্ন কন্ঠস্বর,
“আমি উনাকে শা*লা বলেছি।ধাক্কা লেগে পড়ে গিয়েছিলাম।হাতে,কপালে ব্যাথা পেয়েছি।তাই উঠেই রেগে বলেছিলাম ‘শা*লা তোর সাহস তো কম না’। জাস্ট এইটুকুই।হ্যা মানছি ভুল হয়েছে।মেজাজ খারাপ ছিলো বলে এভাবে বলে ফেলেছি।আই আম সরি ভাইয়া”
রায়হান রুবার কথা শুনে রুবার হাত ধরে হ্যাচকা টে!নে তার সামনে দাড় করিয়ে শীতল কন্ঠে বলে,
“আমারও মেজাজ খারাপ হচ্ছে।এন্ড নাও আয় উইল স্লা!প ইউ”
বলেই হাত উচিয়ে রুবার গাল বরাবর নিতেই তার হাত কেউ ধরে ফেলে।রায়হান বাকা চোখে তাকায় সেদিকে।কপাল খানিকটা কুচকায় তার।রুবার চোখ বন্ধ ছিলো বিধায় হাতের স্পর্শ না পেয়ে সে ঢোক গিলে চোখ মেলে তাকায়।অতঃপর অবাক চোখে পাশে থাকা ছেলেটার দিকে তাকায় রুবা।তার ভাই প্রণয় বাদে আর কারো কথা মান্য করেনা।যখন যা ইচ্ছা তাই করে।কাউকে পরোয়াও সে করেনা।প্রণয়ের পর রায়হানকেই সবাই অনেকটা ভ*য় পায়।অথচ সামনে থাকা ছেলেটা দিব্বি তার ভাইয়ের কাজে বা!গ!ড়া দিলো?এবার তার ভাইয়ের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে?ভাবতে ভাবতেই চাঁদের উচ্চস্বর শুনে বাম পাশে তাকালো রুবা,
“ভাই!”
খুব জোরে উৎফুল্লতার সহিত ‘ভাই’ শব্দটুকু উচ্চারণ করেই চাঁদ ছুটলো রায়হানের হাত ধরে রাখা সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার দিকে।ছেলেটাও চাঁদকে দেখে রায়হানের হাত ছেড়ে বোনের দিকে আগে বাড়লো।দু’হাত প্রসারিত করে জড়িয়ে ধরলো বোনকে।ডান হাত মাথায় রেখে মাথার তালুতে আলতো করে চুমু খেলো বোনের।অতঃপর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“একটাবার ভাইকে বলতে পারতি।ভাই তৎক্ষণাৎ ছুটে আসতাম”
চাঁদ ভাইকে ছেড়ে বলে,
“তুমি এ বাড়ি চিনলে কী করে?আর হঠাৎ এলে বললেনা আমায়?”
“সবার কথায় বিয়েও করে ফেললি তা আমায় বলেছিলি তুই?”
মাথা নিচু করে চাঁদ বলে,
“তখন পরিস্থিতি…”
“পরিস্থিতি জা!হা!ন্নুমে যাক।আমি তোকে নিতে এসেছি”
“কোথায়?”
“কোথায় আবার বাড়িতে”
“কিন্তু একদিন শ্বশুর বাড়ি থাকতে হয়।পরদিন যায়।এটাইতো নিয়ম না?”
ভ্রু কুঞ্চিত করে চাঁদের ভাই বলে,
“তুই বিয়েটা মেনে নিয়েছিস?”
চাঁদ জবাবে কিছু বলেনা।দৃষ্টি সরিয়ে ফেলে ভাইয়ের থেকে।তা দেখে সে বলে,
“যাদের চিনিসনা তাদের মেনে নিচ্ছিস?তাও আবার এমন ম্যানারলেস মানুষদের?যারা বড়দের সম্মানতো করেইনা।ছোটদের এমনকি মেয়েদের গায়ে হা!ত তু*ল*তে যাদের হাতও কাপেনা?”
“হা!ত তুলেছে?”
“শোন ছোটি,ভাই কি তোর খারাপ চাই?”
চাঁদের জবাবের আগে প্রণয়ের মা সামনে এসে বলেন,
“ভাইয়েরা কখনোই তাদের বোনের জন্য খারাপ চায়না।চাইতেও পারেনা।তবে তোমার বুঝতে হবে বিয়েটাতো হয়ে গেছে।এখানে অবশ্যই আল্লাহর ইচ্ছা আছে।আল্লাহ ওদের জোড়া উপর থেকে বানিয়ে পাঠিয়েছেন বলেই ওরা আজ একসাথে।তোমার এটা মানতে হবে”
“মানা না মানাতো পরের বিষয় আন্টি।আমি কি করে শিওর হবো আমার বোনটা এখানে সুখে থাকবে?তার কোনো সমস্যা হবেনা?যেখানে তার শ্বশুরবাড়ির লোকের ব্যবহার মার্জিত নয়।এসেই হুটহাট গা!লি শুনতে হলো তাও আবার হাটু সমান বয়সের মেয়ের কাছ থেকে।”
চাঁদ অবাক হয়ে বলে,
“কে গা!লি দিয়েছে তোমায়?আর আমি কিছু ভা!ঙা*র আওয়াজও শুনেছি।”
রুবা চাঁদের সামনে এসে বলে,
“ভাবি আমি আসলে ওভাবে বলতে চাইনি।আমার ঘুম হয়নি।ঘুম না হলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে।তার উপর আবার ওরা দুজন আমারই সামনে তোমার রান্না করা খাবার দেখিয়ে দেখিয়ে খাচ্ছিলো।আরও রেগে গিয়েছিলাম এতে।এমন সময়ই উনার সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যাই।তোমার ভাইয়ের যা শরীর!আমি ফ্লোরে পড়ে গেছি ভাবি।কোমড়ে রগ ফা!প!ড়ে গেছে বোধহয়।কপালেও ব্যাথা পেয়েছি।দেখো ফুলে গেছেনা?তখন মুখ ফস্কে শা*লা বের হয়ে গেছে।কিন্তু আমি… ”
“কী বলেছিলে?”
“ইম…আসলে মানে..এভাবে বলা ঠিক হয়নি”
“বলেছো টা কী?”
“শা*লা তোর সাহস তো কম না”
বলেই মাথা নত করে রুবা।তা দেখে চাঁদ রুবার থুতনী উচিয়ে হেসে বলে,
“বোকা মেয়ে।মন খারাপ করেনা।আসলে আমার ভাই এসব পছন্দ করেনা।গা!লাগা*লি,ইয়ারকি এসব।আর তুমিতো তুই করেই গা!লি দিয়েছো।ভাই তাই বেশি রেগে গেছে।তুমি ভাইয়ের অনেক ছোট।তোমার মুখে এসব মানায় না।আসলে কারো মুখেই এসব মানায় না।এটা উচিতও না।তাও আবার অপরিচিত কেউ হলেতো মোটেওনা।মূলত এজন্যই ভাইয়া চেতে গেছে।”
বলেই নিজের ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে চাঁদ আবারও বলে,
“ভাই তুমি এজন্য এভাবে বলছো?রুবা মেয়েটা অনেক ভালো।ওরা তিনজনই খুব ভালো।আমায় ভীষণ যত্ন করে।ভাবি ভাবি বলেও ক্লান্ত হয়না।ভাবি কম বোনের মতো ট্রিট করে বেশি।আর মা তো আরও ভালো।উনার মেয়ে নেই।দুটো ছেলেই।তাই তার মেয়ে হয়ে গেলাম।আর বাবাকে আমি আগে থেকেই চিনি।এই পরিবারে আর সবাই আমার বিপক্ষে থাকলেও বাবা কখনোই আমার সাথে কোনো অন্যায় হতে দিবেন না।আর আমার দেবর তন্ময়?সে ভীষণ দুষ্টু আর চঞ্চল।আমায় সবসময় হাসিখুশি রাখে।স্নেহ করে খুব।ভাবি হিসেবে সম্মানও অনেকখানি করে।তুমি এখনো আমার চিন্তা করবে বলো?”
“আর তোর স্বামী?”
ভাইয়ের কথায় ঠোটজোড়া থমকায় চাঁদের।শ্বাস নিয়ে বলে,
“সময়ের গতিতে সবটা ঠিক হয়ে যাবে”
“তাই না?”
“হিম”
“তো তুই এখানেই থাকবি?”
প্রণয়ের চাচি সামনে এসে বলেন,
“বাড়ির বউ বাড়িতে থাকবেনা তো কোথায় থাকবে?যত যাই হোক তোমার বোন এ বাড়ির বউ।তাও আবার বড় বউ।অনেক দায়িত্ব আছে।সবটা সামলাতে হবে তাকে”
“বিয়ে যেহেতু সবাই মানছেন তাহলে আমি আর কিই বা বলতে পারবো।তবে একটা কথা অবশ্যই বলবো।আমার বোনের অযত্ন হলে বোনকেতো নেবোই।আপনাদেরও ছেড়ে কথা বলবোনা।সে আপনারা যত বড়লোকই হন না কেনো”
প্রণয়ের বাবা কথাটা শুনে বলেন,
“মেয়েকেতো নিতে দেবোনা কোনোক্রমেই।পারলে তোমায়ও রাখতাম।তবে আমারতো কোনো মেয়ে নেই”
“ঘর জামাই হওয়ার ইচ্ছে নেই আংকেল।আচ্ছা এবার আমি আসি।বোনকে পাঠিয়ে দিবেন।আর তুই কোনো প্রয়োজন হলেই কল দিবি।আমি আসি”
প্রণয়ের মা চাঁদকে বললেন,
“তোমার ভাইয়ের নাম?”
“চৈত্র”
প্রণয়ের মা কোমল সুরে বলেন,
“বাবা চৈত্র?আজ নাহয় থাকো।রাতের দিকে এমনেও পাঠাতাম ওদের।তোমাদের বাড়িওতো গিয়ে থাকতে হবে।বোন আর বোন জামাইকে নিয়ে যেও একবারে?”
চৈত্র শান্তভাবে জবাব দেয়,
“বোন জামাই কি আদৌ বিয়েটা মানে আন্টি?”
বলেই আড়চোখে তাকায় প্রণয়ের দিকে।প্রণয় কোনোকিছুর দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে তাও খুব মনোযোগ সহকারে।তা বুঝতে পেরে প্রণয়ের দৃষ্টি অনুসরণ করে চৈত্র।
চাঁদের মুখে ‘ভাই’ ডাক শুনে এভাবে ছেলেটার দিকে চাঁদের দৌড়ে আসা দেখেই বসা থেকে তড়িৎ গতিতে উঠে দাঁড়ায় প্রণয়।ছেলেটার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে চাঁদের দিকে দৃষ্টি জ্ঞাপন করে সে।।সামনে থাকা ছেলেটা যে চাঁদের বড় ভাই এটা তার মস্তিষ্কে পৌছেও পৌছাচ্ছেনা।ভাই-বোনের মাঝে কী আলাপ হচ্ছে সেদিকেও খেয়াল নেই তার।থাকবে কেমন করে?তার মস্তিষ্কে আপাতত তার সামনে দাড়িয়ে থাকা লাল-কালো শাড়িতে আবৃত নারীটিই বিচরণ করছে।এই রূপেই প্রথম চাঁদকে সে দেখেছিলো।সেদিনও লাল-কালোর সংমিশ্রণে চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছিলো প্রণয়ের।সে জ্ঞানশূন্য হয়ে এমন এক কান্ড করে বসেছিলো যা কেউ কখনো ভাবেনি।আনেনি কল্পনায়ও।প্রণয় নিজেও অবাক হয়েছিলো সেদিন।তবে সেদিনের সেই ঘটনার ফলেই ঘটে প্রণয়ের জীবনে এক গোলাপের বিচরণ।গোলাপটি কেবলই তার।তার একান্ত লালগোলাপ।আজও লালগোলাপের বেশে চাঁদকে দেখে অতীত নামক বইয়ের প্রথম পাতাটি নাড়াচাড়া দিয়ে উঠে মস্তিষ্কে।
To be continued….
#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
১০.
শুরুটা কিছুটা এভাবেই হয়,
.
.
.
.
.
.
.
“মামা আজ নবীনবরণ হলে ভালোই হতো রে!”
“তুই আবারও শুরু হয়ে গেছিস?”
“ওর তো কাজ ই এটা।এতে নতুন কী?”
দূর থেকে একটা মেয়ে ছেলেগুলোর সামনে এসে বললো,
“এই মির আবারও কোনো মেয়ের কথাই বলেছে না?”
বলেই মিরের কান ম!লা দিতে দিতে বললো,
“এই শা*লা তোর কয়টা লাগে রে?এই পর্যন্ত কয়জনের এক্স হয়েছিস বলতো?”
মির মেয়েটার হাত কান থেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বললো,
“আহহা ছাড়তো।লাগছে আমার”
“লাগুক।আরও বেশি করে লাগুক”
মির এবার রে!গে মেগে বললো,
“দেখ মিরা ভালো হচ্ছেনা কিন্তু।তুই নিজের মন মর্জিমাফিক চলিস না।নিজের মনের কথা বলিস…”
সম্পূর্ণ কথা পূর্ণ করার আগেই মিরা ধ!ম!কে মিরকে বললো,
“আর একটা ফালতু কথা যদি আমি তোর মুখ থেকে শুনি তাহলে তোকে আর আ!স্ত রাখবোনা বলে দিলাম”
“কী করবি?কী করবি টা কি তুই আমার?শুনি একটু।আরে শুনাই না”
“এমন ধো!লা!ই দেবোনা যে বাপ-দাদা চৌদ্দ গোষ্ঠীর নামও ভুলে যাবি”
মির ফোড়ন কেটে জবাব দিলো,
“তার জন্য তো তুই আছিসই।ভুলে গেলে মনে করিয়ে দিবি।আফটার অল আমার বাপ-দাদা তো তোরও বাপ আর দাদা।একচুয়ালি চৌদ্দ গোষ্ঠীও রাইট?”
মিরা রে!গে দাত কিড়মিড়িয়ে বললো,
“মিরের বাচ্চা!”
“একেতো নিজের ই ভাইকে শা*লা বলিস তার উপর আবার কথায় কথায় বাবাকে মাঝে নিয়ে আসিস।কী?কী মনে করিস টা কী তুই নিজেকে?”
“কী মনে করি মানে?তুই আমার সাথে এভাবে কি করে কথা বলছিস মির?”
“আর তুই কী করে বলছিলিস?”
তাদের ঝ!গ!ড়ার মাঝেই ভ্রু কুচকে একটা ছেলে বললো,
“এই তোরা কি থামবি?কী শুরু করলিটা কী ভাই?তোদের জন্য আমার কনসানট্রেশন নষ্ট হলো”
তাদের মধ্য থেকে আরেকটা ছেলে বললো,
“তোর এই যেখানে সেখানে বই পড়ার স্বভাব কবে যাবে বলবি?মানে তোর জীবনে কি পড়া ছাড়া আর কিছুই নেই?”
আরেকটা মেয়ে হাসতে হাসতে বললো,
“ন আকার না।এত্ত বড় নাআআআআআআআ!না মানেতো বুঝিস ই নাকি?”
ছেলেটা খানিকটা রাগ দেখিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,
“মজা উড়াচ্ছিস তাইনা?”
বলেই ম্লান হেসে সেখান থেকে চলে যেতে লাগলো।ঠিক তখনই মেয়েটা কিছুটা চেচিয়ে বললো,
“রা!গ কেনো করিস?চাশমিশ?এই ডাফার!”
মিরা গম্ভীর হয়ে বললো,
“জানিস ই যখন রাগ করে কেনো রা!গাস?”
“মজা লাগে তাই”
“তাই বলে তুই কারো ইমোশনে হা!র্ট করতে পারিস না”
“আমি কারো ইমোশনে কেনো হা!র্ট করবো ভাই?ও সবসময়ই একটু রাগ করে।এবারও তাই করেছে”
“রাগ?হাহা!হিম।রাগ করেছে।হ্যা,রা*গ ই তো করেছে!”
বলেই মিরাও সেখান থেকে চলে গেলো আর মেয়েটা বাকিদের বললো,
“মিরার আবার কী হলো বুঝলাম না”
মিরা ছেলেটাকে অনুসরণ করে দৌড়ে এসে তার কাছে দাড়ালো।ছেলেটা ক্লাসের শেষ কর্নারের দিকে দাঁড়িয়ে ছিলো।সে মিরাকে দেখে বললো,
“কেনো এসেছিস?”
মিরা খানিকটা হেসে ছেলেটার চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
“কেনো আসি?”
ছেলেটাও চোখে চোখ রেখে ম্লানভাবে বললো,
“কী দরকার?”
“তোরই বা কী দরকার যে অভিমান বুঝেনা তার সাথে অভিমান করার?”
ছেলেটা খানিকটা চমকালো।চোখের দৃষ্টি এলোমেলো হয়ে গেলো নিমিষেই।দৃষ্টি সরিয়ে বললো,
“অভিমান?কীসের অভিমান?কার সাথে আর কেনোইবা করবো।কিসব বলিস?”
মিরা ছেলেটার দু’কাধে হাত রেখে নিজের দিকে ঘুরাতে ঘুরাতে বললো,
“অরণ?অরণ?”
“এই অরণের বাচ্চা?এখানে তাকা।তাকা বলছি!”
অরণ গম্ভীর থাকলেও মিরার দিকে তাকাতেই হাসতে বাধ্য হলো।হাসতে হাসতেই বললো,
“মানে রাগও ভাঙাবি আবার খবরদারিও করবি?এই নাহলে মিরা দি ডা!কি!নী?”
এ কথা শুনে মিরা অরণকে মা!র!তে লাগলে অরণ হাসতে হাসতে বললো,
“সরি সরি বাঘিনী”
অরণের সাথে এবার মিরাও হাসিতে যোগ দিলো।সাথে চোখের কোন পানিতে চিকচিক করতে লাগলো।অরণ মিরাকেও হাসতে দেখে ওর দিকে তাকিয়ে আ!ৎ!কে উঠে বললো,
“মিরু?”
“এই?কাদছিস তুই?”
মিরা চোখের পানি মুছে অরণের মাথায় গা*ট্টা মে!রে বললো,
“পূর্ণ ঠিকই বলে।তুই আসলেই ডাফার।আমি কাদবো কেনো?”
“তাহলে হাত দিয়ে কি মুছলি?আমায় বল কী হয়েছে?মিরের কথায় হা!র্ট হয়েছিস?ওর মুখে কিছু আটকায় না জানিস ই তো।আর মন থেকে কিছু বলেওনা।নাকি আমি কিছু করলাম?”
“ধুর!মিরের কথা আমি কখনোই গায়ে মাখি না।তাছাড়া ও আমার ভাই।আমার থেকে বেশি ওর সম্পর্কে আর কে ই জানবে?আর তুইও কিছু করিসনি।হাসতে হাসতে চোখে পানি এসে গেছে”
“শিওর তুই?আর কিছুনাতো?”
মিরার কিছু বলার পূর্বেই ওদের সব ফ্রেন্ড সেখানে হাজির হয়।পূর্ণতা এসেই অরণের হাত টে!নে ওর কাধে মাথা রেখে বলে,
“সো সরি মামা।আমি তোকে সত্যিই হা!র্ট করতে চাইনি।বিশ্বাস কর।আমিতো সবসময়কার মতো শুধু মজাই করতে চেয়েছি।বন্ধুত্বে যদিও সরি চাওয়াচাওয়ি নেই তবুও আমায় মাফ করবিনা?”
অরণ পূর্ণতাকে ছাড়িয়ে নিজের সামনে দাড় করিয়ে দু’বাহুতে হাত রেখে বলে,
“মাফ কেনো চাচ্ছিস বোকা?আমি হা!র্ট হইনি।এমনিতেই রাগ করে এসেছি আর কিছুনা।”
“কিন্তু মিরু যে….”
“আমি সত্যি ই রাগ করিনি।মানে হা!র্ট হইনি”
পূর্ণতা এবার মিরার দিকে তাকিয়ে বললো,
“দেখেছিস?অরণকে আমার থেকে ভালো আর কে ই বা বুঝতে পারে?কখন রাগ করে কখন কী?আর কিভাবে রাগ ভাঙাতে হয় দেখলি?”
মিরা এবার অরণের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলো।হঠাৎ করে অরণের চোখ মিরার দিকে পড়লো আর সেও তাকালো।মিরা খানিক হেসে তৎক্ষনাৎ দৃষ্টি সরিয়ে বললো,
“হ্যা দেখলাম তো।খুব ভালো করেই দেখলাম আর শিখলাম ও।”
রবিন সবার অ্যাটেনশন সিক করে বললো,
“তোরা পরেও ইমোশনাল হতে পারবি।আজ ফার্স্ট ডে অফ নিউ ইয়ার?ভুলে গেছিস?অরণ আর মিরাকেতো সেজন্যই নিতে আসলাম।এতক্ষণে নিশ্চয়ই কলেজে ঢুকেও গেছে”
অরণ মেজাজ খারাপ করে বললো,
“কেনো এমন করিস বলতো?জানিসই তো ও কখনো রাজি হবে না।মেয়েদের থেকে দশ হাত দূরে না থাকলে যার অ!স্ব!স্তিবোধ হয় সে কী করে কাউকে কি*স করবে?”
মিরা ফোড়ন কেটে বললো,
“এই তোর মতলব টা কী?আমি,পূর্ণ আর রিহা কি থা*র্ড পার্সন?”
“আরে আমি সেটা… ”
পূর্ণতা বিরক্তি নিয়ে বললো,
“তোর কিছু বলতে হবেনা।চুপচাপ চল নাহলে কিন্তু পরেরবার থেকে ডেয়ার তোকে দেবো।তাও আবার এর চাইতেও ডে!ঞ্জারা!স।বুঝেছিস?”
“হা…হ্যা হ্যা…. চল।যাচ্ছিতো”
সকলে ক্যাম্পাসে আসতেই দেখলো কাউকে ঘিরে সবাই দাঁড়িয়ে আছে আর গিটারের টুংটাং শব্দ ভেসে আসছে।মিরা সেখানে এসে তার বন্ধুকে মেয়েদের মাঝে দেখে মেজাজ চ!টে গেলো।অতঃপর চেচিয়ে বললো,
“চোখ খুলে আশেপাশে দেখ ছা!গ!ল কোথাকার।”
মিরার আওয়াজ শুনতেই গিটারের আওয়াজ বন্ধ হলো আর একটা ছেলে তার চোখ থেকে কালো রঙের আই মাস্ক খুলে ভ্রু কুচকালো।অতঃপর তাকালো মিরার দিকে।মিরা ইশারায় তাকে সেখান থেকে চলে আসতে বললো।কিন্তু মেয়েদের ভিড়ে সে সেখান থেকে বেরুতে পারছেনা।তাই কুঞ্চিত ভ্রুযুগোলকে আরও কুঞ্চিত করে গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“আপনারা তো জানেন আমি আমার সামনে এতো মেয়ে মানুষ পছন্দ করিনা।ইন ফ্যাক্ট মেয়ে মানুষ আমার আশেপাশে থাকলে আমি সেই রাস্তা দিয়ে যাই ই না।সো প্লিজ লিভ মি আলোন”
সেখান থেকে একটা মেয়ে বুকের বা পাশে হাত রেখে বললো,
“হায়!এই অ্যাটিটিউডেইতো বারবার ম*রে যাই জান!”
এসব দেখে পূর্ণতা ভিড় ঠেলে সামনে এসে বললো,
“আর তোকে কতবার বুঝাবো ক্যাম্পাসে বসে গান তো দূরে থাক গিটারও বাজাবিনা?”
“গান কখন গেলাম?”
ছেলেটার কথায় পাত্তা না দিয়ে পূর্ণতা তাকে টে!নে ভিড় থেকে বাইরে আনলো।আনতেই মির ছেলেটার উদ্দেশ্যে বললো,
“তোর দেখি খুব সাহস মামা!”
“হঠাৎ এই কথা?”
“আজ কোন দিন জেনেও এসেছিস?”
ছেলেটা মনে পড়ার ভঙ্গিতে বললো,
“ওহ!হ্যা।কারণ আমার জবাবও তোরা জানিস”
মিরা বললো,
“চল তাহলে।ফার্স্ট ইয়ারের অনেকে ঢুকে ক্লাসেও চলে গেছে”
ছেলেটা সেখানে দাড়িয়েই বললো,
“যাওয়ার কী দরকার?বল কোথায় পার্টি লাগবে তোদের?”
রবিন বললো,
“আগেই কেনো হার মানছিস?এবার কোনো সুন্দরী পড়তেও তো পারে?”
এমনসময় ওদের ফ্রেন্ড রিহা দৌড়িয়ে ওদের সামনে এসে হাপাতে হাপাতে বললো,
“আমি আজকে সেই লেইট হয়েছি মামা।হোপফুলি তোরা শুরু করিসনি?আর রবিন, বে!কু!ব কোথাকার!সব মেয়েরাই সুন্দর ছিলো।এই শা*লা*র নজরে বোধহয় ছিলোনা।”
শেষের কথাটা রিহা সেই ছেলেটার দিকে তাকিয়েই বললো।
মির বিরক্ত হয়ে বললো,
“একসাথে কত কুয়েশ্চন করিস?”
“অন্তত তোর মতো বা*রো ছেলে নিয়ে ঘুরিনা ”
“হোয়াট!আমি ছেলে নিয়ে ঘুরি?”
“আমি ছেলে আর তুই মেয়ে নিয়ে সেটা বলেছি উফ!”
মির বললো,
“আচ্ছা থাম।তোর সাথে ঝ!গড়া পরে করবো।মামা!যা দেখ কোন রমনী গেট দিয়ে ঢুকছে।গো এন্ড কি-স হার টা!ই!ট!লি”
মির কথাটা গিটার হাতে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বললো।
অরণ সাথে সাথে নাক ছি!টকে বললো,
“ছিহ!সবাই লাগে তোর মতো?”
গিটার হাতে ছেলেটা অরণকে বললো,
“ভাই তুই ই বুঝা।এসব আমার দ্বারা একেবারেই অসম্ভব।ওরা পার্টি পেলেই তো হলো নাকি?”
মিরা ছেলেটার দু’কাধ ধরে সামনের দিকে ঘুরিয়ে ধা*ক্কা দিয়ে বললো,
“ওর কিছু বুঝাতে হবেনা।তুই বল কাকে দেখলি?যাকেই দেখেছিস যা করতে বলেছি করে আয়”
মিরার আকস্মিক ধা*ক্কায় নিজেকে পড়া থেকে একটুর জন্য বাঁচাতে সক্ষম হয়ে সামনে তাকাতেই ছেলেটা দেখলো লাল-কালো ড্রেসাপে খয়েরী রঙা চতুর্কোণা চশমা পরহিতা একটি মেয়ে হাসতে হাসতে গেট দিয়ে ঢুকছে।
রিহা মিরকে বলছে,
“এবার টাকা পার পার্সন টেনকে করে নেবো বুঝেছিস?”
রবিন বললো,
“আর হোলডে ফ্রিতে ট্রিট!”
সবাই কথা বলতে বলতে হাসছে আর অরণ ওদের থামিয়ে তোতলাতে তোতলাতে বলছে,
“দা.. দাড়িয়ে দাড়িয়ে স্বপ্ন না দেখে সা…সামনে তাকিয়ে দেখ।আই জাস্ট কান্ট বিলিভ অন মাই আইস!”
সবাই হা করে সামনে তাকিয়ে দেখলো ছেলেটা মেয়েটার সামনে গিয়ে ডান হাত পকেটে ঢুকিয়ে বাম হাতে গিটার মাঠে ধরে রেখে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পথ আটকালো।আরেকটু হলেই ছেলেটার বুকে মেয়েটার মাথা ঠু*কে যেতো।মেয়েটা খানিকটা পেছনে চেপে বললো,
“এক্সকিউজ মি?চোখে কি কম দেখেন?”
ছেলেটা সামনের দিকে ঝুকে মেয়েটার ডান কানে ফিসফিসিয়ে বললো,
“আপনার চাইতে একটু হলেও বেশি দেখি….”
বলেই নিঃশ্বাস আটকে খানিকটা থেমে পেছনের দিকে আসতে আসতে মেয়েটার ডান গালে শব্দহীনভাবে আলতো করে ঠোট ছু!ই!য়ে বললো,
“মিস রেডরোজ”
To be continued….