আবার প্রেম হোক পর্ব-৫+৬+৭

0
478

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

০৫.
“ভাবিকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছিনা!”

শিফার এরূপ চেচানোতে বাড়ির সকলের ঘুমই উবে গেলো।বড়রা সকলেই শিফা,রুবা আর রিদির রুমের সামনে এসে জড়ো হলেন।সকলের চোখেমুখেই চিন্তার রেখা স্পষ্ট ফুটে উঠছে।সবাই ই ভয়ে আছে না জানি নতুন বউ বাড়ি ছেড়ে পালালো!এমনিতেই মেয়েটা তাদের ছেলেকে দু’চোখে দেখতে পারেনা।এভাবে জো!র করে বিয়ে দেওয়াটা ঠিক কি বেঠিক কারোরই জানা নেই।প্রণয়ের মা পুষ্পিতা জামান শিফাকে বললেন,

“চাঁদকে পাচ্ছিসনা?”

শিফা মাথা ডানে-বায়ে করে বলে,

“না খালামনি”

“এতো সকালে কোথায় গেলো মেয়েটা?”

রুবা বলে,

“ফুপি ভাবিকে আমরা শুইয়ে দিয়েই গেছিলাম।এখন এসে পুরো বাড়ি খুজে তন্ন তন্ন করেও কোথাও পেলাম না।”

রুবার মা বললেন,

“এই মেয়েটাকে আমার একটুও পছন্দ না।কোন বাড়ির মেয়ে যে তোমরা ধরে আনলে ভাবি!ছোটটা বিয়ের দিনই পালিয়েছে আর বড়টা বিয়ের পর।এমন মেয়ের সাথে ছেলেটা সংসার করবে কী করে?”

শিফার মাও বললেন,

“এভাবে বলা ঠিক হবেনা কিন্তু রায়হানের মা কথাটা ঠিকই বলেছে আপা।তোর যাচাই-বাছাই করে মেয়েকে আনা উচিত ছিলো”

প্রণয়ের বাবা তৌহিদুল চৌধুরী গম্ভীর কন্ঠে বললেন,

“চাঁদ মায়ের নামে আর কোনো কথা আমি শুনতে চাচ্ছিনা।পুষ্পি প্রণয়ের রুমে গিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করো রাতে দুজনের ঝ!গড়া হয়েছিলো কিনা?”

রিদি আমতা আমতা করে বলে,

“ফু…ফুপা আসলে…”

তৌহিদুল চৌধুরী বললেন,

“কি হয়েছে?”

শিফা রিদির হাতে চি*ম*টি কাটতেই রিদি বলে,

“কি…কিছুনাতো ফুপা”

আবারও সকলে মনোযোগ দেয় প্রণয়ের রুমের দিকে এগোতে আর শিফা রিদিকে ফিসফিসিয়ে বলে,

“কী করছিলি তুই?এখনই সবাই জেনে যেতোনা ভাবি ভাইয়ার সাথে কাল থাকেনি?তখন সবাই কী মনে করতো?”

রিদিও শিফার ন্যায় ফিসফিসিয়ে বলে,

“সেটাতো ভাবিনি”

রুবা রিদিকে খোচা মে*রে বললো,

“হ্যা সেটা কেনো ভাববা তোমার মন আর মস্তিষ্কেতো কেবল মির ভাইয়াই ঘুরে!”

রিদি লজ্জা পেয়ে খানিকটা রা*গ দেখিয়ে বললো,

“কথায় কথায় মিরকে আনবিনাতো।আমি এখন মোটেও তার কথা ভাবছিলাম না”

শিফা রিদিকে ভেংচিয়ে বলে,

“আহাগো সোনা আমার!স্কুল লাইফ থেকে ভাবতে ভাবতে ভার্সিটি লাইফে এসে ক্লান্ত হয়ে গেছো বুঝি?”

রিদি আড়চোখে শিফার দিকে তাকিয়ে বলে,

“রায়হান ভাইয়ার সামনেতো মুখের খৈ থাকেনা এখন আমায় খোচানোর বেলায় মুখে বুলি ফুটে গেছে না?”

রুবা শিফার গাল টে!নে দিয়ে বলে,

“আহাগো ভাবি আমার!লজ্জায় লাল নীল হয়ে যাচ্ছে।ইশ ইশ!দেখ রিদু দেখ”

রিদি শিফার অন্য গাল টে*নে বলে,

“এই একজনই পারে আমাদের বাচাল শিফুকে চুপ করাতে।যার মাঝে লজ্জার ছিটেফোটাও নেই সে লজ্জার নাইনটি পার্সেন্ট ছাড়িয়ে যায় কেবল রায়হান ভাইয়ার নাম শুনে?”

শিফা রা!গ দেখিয়ে বলে,

“নিজেতো মির ভাইয়ার দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারিস না আবার কথা বলছিস?”

রুবা হুহা করে হেসে দিয়ে বলে,

“মির ভাইয়া আর ভাইকে নিয়ে তোদের মাঝের ঝগ!ড়া দেখতে বেশ লাগে রে উড বি ভাবিস!”

শিফা গ*র*ম চোখে রুবার দিকে তাকিয়ে বলে,

“যেদিন আমার নন্দাই ওরফে জিজুর আগমন আপনার জীবনে ঘটবেনা?সেদিন পাওনার সাথে সাথে লাভও নেবো বুঝেছো ননদিনী?কি বলিস রিদু?”

রিদি আর শিফা হাই ফাইভ দিয়ে বলে,

“তা যা বলেছিস শিফু!”

রুবা কথা এড়াতে বলে,

“তোরা মনে হচ্ছে ভুলে গেছিস যে আমরা চাঁদ ভাবিকে খুজে পাচ্ছিনা?”

ওটির বাইরে বসে আছে মিরা।উদ্দেশ্য প্রণয়ের সাথে কথা বলা।চেয়ারে বসে দেয়ালের দিকে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করতেই তার চোখের সামনে ভেসে উঠে অরণের সাথে কাটানো কিছু মুহুর্ত,

“এই ডা*কি*নী সবসময় আমার বইয়ের পেছনে লেগে থাকবিনাতো!”

মিরা নাক ফুলিয়ে বলে,

“বই বই যে করিস বিয়ের সময় বই নিয়েই বিয়ে করিস ঠিক আছে?”

“বই নিয়ে বিয়ে করি আর যাই করি তোকে দাওয়াত দেবোনা শিওর থাক!”

মিরা ভেংচিয়ে বলে,

“ইশ!আমায় ছাড়া তোর বিয়ে হবে ক্যাম্নে মামা?”

“একটা হুরপরী আসবে আর আমায় নিয়ে ছু-মন্তর হয়ে যাবে দেখে নিস!”

এসব ভাবতে ভাবতেই ঠোটের কোনে হাসি ফুটে উঠেছিলোই মাত্র কিন্তু সাথে সাথে তা মিলিয়ে গেলো অরণের র*ক্ত*মা*খা শরীর কোলে নিয়ে মিরার তার শেষ কথোপকথন চোখের সামনে ভেসে উঠায়,

অরণ তার র!ক্তে আবৃত হাত মিরার গালে ছুইয়ে আস্তে আস্তে বলছে,

“চোখের সামনে এক সমুদ্র ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও অন্ধের ন্যায় এক ফোটা ভালোবাসার আশায় সারাটা জীবন বৃথা করে দিলাম রে ডা*কি*নী!আমার বোধহয় এ জী…জীবনে আর ভালোবাসা পাওয়াটা হবেনা।ভালোবাসাহীনই ম*র*তে হবে।প্রেমটা যে আমার হয়েও হলোনা বাঘিনী।বলা হলোনা আমি…..”

আর বলতে পারলোনা অরণ।মিরার কোলেই মাথাটা শব্দ করে পড়ে গেলো।হাতটা হয়ে গেলো অসাড়!বুলি তার এলো ফুরিয়ে।র!ক্তে মাখোমাখো হয়ে গেলো মিরার সারা শরীর!বুকে সেই অসহ যন্ত্রণা সহ্য হলোনা মিরার।দিন দুনিয়া ভুলে গিয়ে অরণের সারামুখে হাত বুলিয়ে সে বললো,

“অরণ?এই অরণ?ওঠনা।অরণ?অরণরে?”

“অরনের বাচ্চা!ওঠ বলছি।ওঠনারে!”

আরও অনেক্ক্ষণ ডাকার পরেও যখন অরণ উঠেনা তখন কান্নায় ভে!ঙে পড়ে বলে,

“অরণ?এই অরণ!শোননা।আমি না তোকে ভালোবাসি রে।অনেক ভালোবাসি অরণ!কেনো আমায় ভালোবাসলিনা?কেনো তোকে অন্য কাউকে ভালোবাসতে হলো?কেনো তুই আমার হলিনা?”

কারো হাতের স্পর্শ নিজের কাধে টের পেতেই চোখ খুলে মিরা।পুরোনো স্মৃতি মনে করতেই চোখ হয়ে উঠে অশ্রুসিক্ত।সামনে প্রণয়কে দেখে নিজেকে সামলাতে ব্যর্থ হয় সে।জাপটে ধরে প্রণয়কে।প্রণয়ের বুকে মুখ গুজে ফুপিয়ে কেদে উঠে মিরা আর বলে,

“আমরা যাকে ভালোবাসি কেনো ভালোবাসেনা তারা?”

অপারেশনের মাঝেই একজন নার্স এসে প্রণয়কে বলেছিলো ‘ডক্টর মাইশাত মিরা ওটির বাইরে আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন’।তখন সেদিকে তোয়াক্কা না করলেও অপারেশন শেষে সেই অবস্থায়ই হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে পড়ে প্রণয়।এসেই র*ক্ত*মা*খা গ্লাভসসহ হাতে মিরার কাধে হাত রাখতেই দ্রুতগতিতে মিরা উঠে প্রণয়কে জড়িয়ে ধরে উক্ত কথাটি বলে।

“তোমাদের সাহস কী করে হলো আমায় না জানিয়েই আমার বোনকে একটা অপরিচিত ছেলের কাছে বিয়ে দিয়ে দেওয়ার?”

চাঁদের খালা বোনের ছেলেকে সামলাতে বলেন,

“দেখ চৈত্র তখন পরিস্থিতিটাই…”

হুং!কার ছেড়ে চৈত্র বললো,

“পরিস্থিতি জাহা!ন্নুমে যাক খালাম্মি।আমার চাঁদটাকে আমার অজান্তেই তোমরা বিদায় করে দিলে কী করে?যেই মেয়ে ভাইকে ছাড়া একটা ডিসিশনও নেয়না সে কী করে বিয়ের মতো অতো বড় একটা ডিসিশন নেয় মা?অমৃতার যেহেতু বিয়েতে মতই ছিলোনা কেনো ওর বিয়ে ঐ ডাক্তারের সাথে ঠিক করেছো তোমরা খালাম্মি?”

চৈত্রের খালা বললেন,

“অমি খুশিই ছিলো।চাঁদ যখনই জামাইর নামে উল্টাপাল্টা বললো মেয়েটা ওর পিছু গিয়ে…..”

চৈত্র তীক্ষ্ণ নজরে তার খালার দিকে তাকিয়ে তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,

“তো তুমি বলতে চাইছো চাঁদ অমৃতাকে উষ্কিয়ে চলে যেতে বলেছে আর তোমার মেয়ে বাচ্চাদের মতো যা বুঝ চাঁদ ওকে দিয়েছে সেই বুঝ নিয়েই জাস্ট হাওয়া হয়ে গেছে তাইতো খালাম্মি?”

“আমি সেটা…”

চে*চিয়ে চৈত্র বলে,

“তুমি সেটাই বলেছো খালাম্মি!তুমি আমার বোনের উপর ইন্ডাইরেক্টলি অপ!বাদ দিচ্ছো যেটা আমি মোটেও সহ্য করবোনা।আমার ঢাকা থাকার সুযোগ নিয়ে আমার বোনটাকে এমন এক জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছো যেই ছেলেকে আমার বোন চিনেওনা।জাস্ট রিডি*উকু*লাস!”

চৈত্রের মা বললেন,

“বারবার যে বলছিস তোর বোন ছেলেকে চেনেনা চেনেনা।বলার আগে পুরো ঘটনা শুনেতো নিবি!ছেলেকে তোর বোন ভালো করেই চেনে।নাহলে এভাবে ভরা মজলিশে কেউ কাউকে অপ*মা*ন করতে পারেনা।আর ভুলে যাস না ছেলে যেই মেডিকেল থেকে পাশ করে ডাক্তার হয়েছে তোর বোনও একই মেডিকেলের ফার্স্টগার্ল হয়ে এসেছে তাও তিনবছর!আমারতো মনে হয় এই ছেলের সাথেই কিছু হওয়ায় টেকনাফ চলে….”

চৈত্রের মেজাজ সপ্তম আকাশে চড়তেই গ!র্জে উঠে সে বলে,

“জাস্ট শাটা!প আম্মু!যা জানোনা তা নিয়ে বলবেনা বলে দিলাম।আমার চাঁদের গায়ে কোনো কল*ঙ্ক নেই কোনো ক*লঙ্ক নেই!”

বলেই সেখান থেকে চলে আসে সে।এসেই হাইওয়েতে উঠে রিক্সা করে রেলওয়ে স্টেশনে চলে আসে।সেখান থেকে রওয়ানা দেবে ঢাকার উদ্দেশ্যে!গন্তব্য তার বোন চাঁদের শ্বশুরবাড়ি।ঘন্টা খানেক পর ট্রেন আসতেই ট্রেনে চড়ে বসেই র*ক্তু!চক্ষু নিয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে মনে মনে বলে,

“যে শহর তোর থেকে তোর সবকিছু ছি*নি*য়ে নিয়েছে সেই শহরে তোকে আর এক মুহুর্তও থাকতে দেবোনা ছোটি!”

To be continued…

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

০৬.
দরজার কড়াঘাতে নড়েচড়ে উঠে চাঁদ।একইসাথে ফোনও বেজে উঠে তার।বেশ বিরক্তবোধ করে সে।কোনটা রেখে কোনটা করবে ভাবতে ভাবতেই কল কেটে যাওয়ায় বিছানা ছেড়ে উঠে আসে দরজা খুলতে।পরনের শাড়ি ঠিক করে দরজা খুলতেই দেখতে পায় বাড়ির সকল বড়রা রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন।চাঁদকে দেখে যেনো তারা কিংকর্তব্যবিমুঢ়!চাঁদ মাথায় ঘোমটা দিতে দিতে বললো,

“কোনো দরকার ছিলো মা?সবাই একসাথে যে?আমি কি বেশি দেরি করে ফেললাম?আসলে মাথাটা….”

পেছন থেকে তৌহিদুল চৌধুরী সামনে এসে বললেন,

“তুমি কোথায় ছিলে?ওরা নাকি তোমায় পুরো বাড়ি খুঁজেও পাচ্ছেনা?”

“আমিতো এখানেই ছিলাম বাবা”

পুষ্পিতা জামান পেছন থেকে শিফাকে কান টে*নে সামনে এনে বললেন,

“এরা চেচিয়ে চেচিয়ে বলছিলো তোমায় নাকি কোথাও খুঁজে পাচ্ছেনা।”

এরপর রুবাকে সামনে এনে বলেন,

“পুরো বাড়ি তন্ন তন্ন করেছিস তাইনা?পুরো বাড়ির মধ্যে কি প্রণয়ের রুম পড়েনা?নাকি ওটা ভিন গ্রহে অবস্থিত?”

রুবা আমতা আমতা করতেই শিফা বলে,

“খালামনি আসলে মানে ঐ যে হয়েছে কি…”

শিফাও কিছু বলতে পারছেনা দেখে চাঁদ বলে,

“আসলে মা দরজা আটকানো ছিলোতো তাই হয়তো ওরা ভেবেছে প্রণয় একাই ঘুমাচ্ছে”

প্রণয়ের খালা ভ্রু কুচকে বলেন,

“এমনটা কেনো ভাববে?আর দরজা খুলে বাসর রাতে কেউ ঘুমায়?ক’দিন বাদে নাকি ডাক্তার হবে এতোটুকু কান্ডজ্ঞান তোমার মধ্যে নেই?”

প্রণয়ের ফুপি তৌহিদুল চৌধুরীকে বললেন,

“ভাই তুমি গিয়ে ফ্রেশ হও।আমরা এখানে আছি”

“ঠিক আছে কিন্তু চাঁদ মায়ের সাথে কোনো বা*জে ব্যবহার করবিনা তোরা কেউ সাবধান!”

“হ্যা হ্যা চিন্তা করোনা”

আস্বস্ত হয়ে তৌহিদুল চৌধুরী প্রস্থান করলেন।তিনি যেতেই রুবার মা বললেন,

“শিফার মা ঠিকই বলেছে তোমার দেখছি কোনো কান্ডজ্ঞান ই নেই।এই বেশে শ্বশুর-শাশুড়িদের সামনে আসতে লজ্জা করলোনা?গোসল যখন করোই নি অন্তত মুখ হাত ধুয়েতো ঘুমাতে পারতে নাকি?কাল তো অনেক বড় বড় কথা বলেছিলে এমন সুন্দর জামাই পেয়ে সব কথা ভুলে গেলে?”

চাঁদ কিছু বুঝতে না পেরে বলে,

“আমি কিছু বুঝতে পারছিনা আন্টি?”

প্রণয়ের চাচি বললেন,

“তুমিতো দেখছি বড়ই ঘাড়!ত্যা*ড়া মেয়ে!বড়দের সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে আছো?লজ্জা শরমের কি মাথা খে*য়ে*ছো?তুমিতো অতোটা ছোট না যে বুঝতে পারছোনা।প্রণয়েরও কি কোনো জ্ঞান নেই নাকি?তোমার মতো লাগাম*হী*ন মেয়েকে কিছু শেখাতে পারলোনা?”

চাঁদ বেশ অসহায় ভঙ্গিতে তাকিয়ে বললো,

“আমি সত্যিই কিছু বুঝতে পারছিনা আন্টি হয়েছেটা কী?আমি কি কিছু করেছি?আপনারা এভাবে বলছেন কেনো?”

প্রণয়ের মা বললেন,

“আহহা রিনা,ঊষা এভাবে মেয়েটাকে জেরা করছো কেনো তোমরা?মা তুমি কি কোথাও ব্যথা পেয়েছো?পড়ে গিয়েছিলে কি?নাকি প্রণয়ের সাথে ঝ!গ!ড়া হয়েছে?”

চাঁদ কিছু বুঝতে না পেরে এদিক সেদিক তাকাতেই দেখতে পায় তার ননদেরা ইশারায় ঠোটের কোনা দেখাচ্ছে।হঠাৎ করেই তার মনে পড়ে সে ব্যথা পেয়েছিলো।তৎক্ষনাৎ লজ্জায় সে আড়ষ্ট হয়ে পড়লো।সবাই তাকে আর প্রণয়কে নিয়ে কি সব ভাবছে ভেবেই তার কান গরম হয়ে এলো।দৃষ্টি নত করে বললো,

“না মা।তেমন কিছুইনা।ঝ!গ!ড়া হওয়ার কিছুই নেই।আমাদের মাঝে তেমন কথাও হয়না।আর আমি বাথরুমে প*ড়ে গিয়েছিলাম।সেজন্য হালকা ব্যথা অবশ্য পেয়েছি।সেরে যাবে চিন্তা করবেন না”

এ কথা শুনে প্রণয়ের খালা,ফুপি আর চাচি বেশ লজ্জায় পড়লেন।বিব্রতবোধও করলেন।ছোটছোট মেয়েদের সামনে কিসব বলে ফেললেন!প্রণয়ের চাচি বললেন,

“ভাবি আমি একটু আসছি।উজানের বাবা বেরিয়ে পড়বেন গেলাম”

প্রণয়ের ফুপিও বাহানা দেখিয়ে বলেন,

“ভাবি তুমি কথা বলো আমার একটু কাজ আছে”

বলেই প্রস্থান করলেন।একইভাবে তালবাহানা করে পুষ্পিতা জামানের বোন শুষ্মিতা জামানও কেটে পড়লেন।সকলে যেতেই পুষ্পিতা জামান চাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

“ওদের কথায় কিছু মনে নিওনা।কেমন?”

“না না মা ঠিক আছে সমস্যা নেই।”

“প্রণয় কোথায়?”

“সম্ভবত হাসপাতালে গেছে”

“কখন?”

“ফজরের দিকে”

“সেকি!বিয়ের একদিনও হলোনা আর ও এতো সকালে হাসপাতালে চলে গেলো?”

“জরুরী কিছুই হয়তো।বেশ তাড়াহুড়োয় গেছে”

“আচ্ছা তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও মা।নাকি আরেকটু রেস্ট নিবে?”

“ক’টা বাজে মা?”

“দশটা বেজে কত যেনো।তোমার শরীর খারাপ লাগলে আরেকটু ঘুমাও সমস্যা নেই”

“কি বলেন এসব মা!এতো বেলা হয়ে গেছে আর আমি ঘুমিয়ে ছিলাম!”

“আমরাও ঘুমিয়েই ছিলাম।শিফাদের চেচানোতে উঠেছি।নাহয় দেরিতেই উঠতাম।কাল এগারোটার দিকে না বাসায় আসলাম?ঘুমোতে ঘুমোতে তিনটার উপরে বেজেছে বৈকি!”

“আর ঘুমোবোনা মা।আমি গোসল করে নিচে আসছি।”

“আচ্ছা এসো”

“কিন্তু মা…”

“হ্যা মা?”

“ব্লাউজটা না ঢিলা হচ্ছে।”

“কারোটাই লাগেনি?”

রিদি সামনে এসে বলে,

“ফুপি ভাবি আমাদের থেকে অনেকটাই চিকন।পেটের দিকটা একটু বেশি ই চিকন।ওখান দিয়েই মূলত ঢিলা বেশি।এজন্যই লাগেনি।সেফটিপিন দিয়ে রুবার টাই পরেছে।বিশ্বাস করতে পারো রুবার টাও লাগেনি?কেমন চিকনি বউ পেয়েছো হ্যা?”

আড়চোখে চাঁদ রিদির দিকে তাকালো।তা দেখেই রিদি বললো,

“এবার বুঝি ভাবি ননদকে আর রে!হাই দেবেনাগো ফুপি!”

বলতেই চাঁদ রিদির কান ম*লে দিয়ে বলে,

“তবে রে পাজি!”

পুষ্পিতা জামান চাঁদকে বললেন,

“তুমি তোমার মাপগুলো রুবার কাছে দিয়ে দিও আমি ওকে দিয়ে টেইলারে পাঠিয়ে দিবো”

“ঠিক আছে মা”

পুষ্পিতা জামান চলে যেতেই চাঁদের তিন ননদ চাঁদকে ধরে রুমের ভেতর এনে বিছানায় বসিয়ে নিজেরাও বসে পড়ে।শিফা তাড়াহুড়ো করে বলে,

“ভাবি তুমি এ রুমে কী করো?”

রুবা বলে,

“তুমি না আমাদের রুমে ঘুমিয়েছিলে?”

রিদি কিছু বলছেনা দেখে চাঁদ তাকে বলে,

“তুমি চুপ করে আছো কেনো তুমিও কিছু বলো?”

শিফা চাঁদের বাহু ঝাকিয়ে বলে,

“বলোনা ভাবি!ভাইয়ার আর তোমার কি প্যাচাপ হয়ে গেছে?”

ভ্রু কুচকে চাঁদ বলে,

“কিসের প্যাচাপ?আর তার আগে তোমরা বলো সারারাত কোথায় ছিলে?রুমেতো আসোনি”

রিদি বলে,

“আমরা কাজিনরা আড্ডা দিচ্ছিলাম ভাবি”

“কাজিনরা?”

শিফা বলে,

“হ্যা।আমি,রুবা,রিদি,তন্ময় ভাইয়া,উজান ভাইয়া আমরা আমরাই আরকি”

রুবা প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলে,

“ভাবি তোমার মাপগুলো লিখে রেখো।আমি পরে নিয়ে যাবো।এখন অনেক ঘুম পাচ্ছে।গেলাম”

রিদি বলে,

“আমিও যাই আমারও অনেক ঘুম পাচ্ছে।চল তোরাও”

বলেই তিনজনে সেখান থেকে চলে আসে।ওরা চলে যেতেই চাঁদ দরজা আটকে দিয়ে ফোন হাতে নিয়ে কাপা কাপা হাতে ডায়াল করে ‘আর ভাইয়া’ নামক নাম্বারটিতে।প্রথমবার রিসিভ হয়না বিধায় চাঁদ দ্বিতীয়বার ডায়াল করতেই ওপাশ থেকে রিসিভ করলে গম্ভীর কন্ঠস্বর শোনা যায়,

“হ্যালো?”

চাঁদ থমকে যায় আওয়াজটি শুনে।কখনো ভাবেনি ভাগ্য তাকে আবার সেই মানুষগুলোর কাছেই এনে হাজির করবে যাদের থেকে সে একসময় পালিয়েছিলো বহু মাইল দূরে!চাঁদ কাপা কাপা কন্ঠে বলে,

“হ্যা…হ্যালো..ভা…”

চাঁদকে বলার সুযোগ না দিয়ে সে বলে,

“অমি তোমার বোন বোধহয় করেছে নিয়ে যাও”

“হ্যালো আপু?”

খানিকটা কেশে চাঁদ বলে,

“বল”

“তুমি আমার সাথে রেগে নেইতো?”

“আমরা তাদের সাথে রাগী যারা আমাদের আপন।আপনি আমার কে হন যে আপনার সাথে রেগে থাকবো?”

অমৃতা ফুপিয়ে বলে,

“আমার সাথে এভাবে কথা বলোনা আপু প্লিজ।আমার কষ্ট হচ্ছে”

“আর তুই যা করেছিস তারপর আমাদের কারো কষ্ট হয়নি?”

“তুমিতো কিছু জানোনা।আমি যা করেছি তোমার আর জিজুর জন্যই করেছি”

“জিজু?”

“হ্যা প্রণয় জিজু”

অবাক হয়ে চাঁদ বলে,

“আমার বিয়ের ব্যাপারে তোকে কে বলেছে?”

“বলার কি আছে আপু।সবটাতো আমাদের প্ল্যানই ছিলো”

তাচ্ছিল্যের সুরে চাঁদ বলে,

“তার মানে সত্যিই তুই প্রণয়ের সাথে মিলে এতোকিছু করলি?একটাবার ভাবলি না খালামনি,খালুর কি হবে?আর নিমৃতারই বা কী হবে?তোর এই কাহিনীর পর ওর ভবিষ্যৎ টা কতটা ঝু*কি*পূ*র্ণ হয়ে যাবে ভেবেছিস একবারও?”

অমৃতা নির্দ্বিধায় বললো,

“অতোকিছু আমি ভাবতে চাইনি ভাবিওনি।আমি শুধু জানি তুমি আমার বোন কম বেস্ট ফ্রেন্ড বেশি।আর আমার বোন তার ভালোবাসার থেকে দূরে চলে আসবে সামান্য ভুল বুঝাবুঝির জন্য সেটা আমি হতে দিতে পারিনা।আর প্রণয় জিজু তোমার জন্য কতটা ডেসপারেট তা আমি অনেক ভালোভাবেই জানি।রবিন তোমাদের পুরো শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রেমের আলাপন আমার সাথে করেছে।”

“সেসব রাখ।তুই এখন কোথায় আছিস?”

“বলছি বলছি।সবই বলছি।তার আগে এমনটা কেনো করেছি তা শোনো।আমি তোমায় শুরু থেকেই বলি।প্রায় বছরখানেক আগের কথা।তুমি তখন ফাইনাল ইয়ার দিবে।সেই সুবাদে আমি,তুমি আর আমাদের বাকি কাজিনরা ঘুরতে গিয়েছিলাম না?তখনকারই একটা পিক আমি রবিনকে সেন্ড করেছিলাম।এরকিছুক্ষণ পরই রবিনের হোয়াটসঅ্যাপ থেকে কল আসে।কলটা করেছিলো প্রণয় ভাইয়া।রবিন আর ভাইয়া তখন একসাথেই বসে ছিলো কিনা!এতোগুলো মানুষের মাঝেও ভাইয়া তোমায় ঠিক চিনে নিয়েছে।তুমি মাস্ক পরা ছিলে তবুও!ভালোবাসাতো এমনই হয় তাইনা?এরপরই আমার থেকে সে জানতে পারে তুমি টেকনাফ আছো।বিশ্বাস করো আপু সেদিন ভাইয়ার এক্সাইটমেন্ট এতোটা ছিলো যে আমি বলে বুঝাতে পারবোনা।আমি তার সম্পর্কে যতটুকু শুনেছিলাম সে নাকি মেয়ে এ!লা!র্জে!টিক!আমার সাথে রবিনের বাকি সব বন্ধু-বান্ধবীরা কথা বললেও এই প্রণয় ভাইয়া কখনোই বলেনি।শুধুমাত্র তোমার খোজ-খবর নিতে রোজ কল দিতো।এমনকি ভিডিও কলে তোমায় আড়ালে দেখতোও।এমন আরও অনেক কিছু।সে যে তোমাতে কতটা আসক্ত আমি তা আস্তে আস্তে বুঝতে পেরেছিলাম।এরপর রবিনের কাছ থেকে সব জানার পর আমি ভেবে নিয়েছিলাম তোমাদের যে করেই হোক এক করবো।আমি আর প্রণয় ভাইয়া মিলেই সবটা পরিকল্পনা করি।আমার আর ভাইয়ার বিয়েটা পুরোটাই নাটক ছিলো।তা শুধু আমি,রবিন আর ভাইয়াই জানতাম।”

“বিয়েটা যদি তোর সাথে হয়ে যেতো?”

“হলে হতো তাতে তোমার কী?আমি হয়ে যেতাম মিসেস রুহায়ের প্রণয়!”

“হ্যা তো হলিনা কেনো?ভালো সুযোগই তো ছিলো।এমন হ্যান্ডু ছেলেইতো সারাজীবন খুজেছিস”

অমৃতা হুহা করে হেসে দিয়ে বলে,

“ইশশিরে!আমার আপুটা দেখি জ্ব!লে পু*ড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে!তোমার ঐ লাল লাল রা*গী চেহারা দেখতে বড্ড ইচ্ছে করছেগো আপু”

“ফাজলামো করিস না অমি।আমায় তুই বলেছিলি তোর বয়ফ্রেন্ডের নাম রবিন।কিন্তু সে যে ঢামেকে পরতো তা কখনোই বলিস নি কেনো?”

“তুমি কখনো জিজ্ঞেস করোনি তাই”

“তুই প্রণয়কে বিয়ে করে রবিন ভাইয়াকে ঠকাতে চাচ্ছিলি কি করে অমি?তোর বিবেকে বাধলোনা?বিয়েটা হয়ে গেলে ভাইয়া নিশ্চয়ই খুব কষ্ট পেতো”

“রবিনের থেকে দেখি তোমার বেশি কষ্ট হচ্ছে এটা ভেবে।তবে এটা একদমই অসম্ভব।কারণ ভাইয়া আমায় ছোটবোনের মতোই দেখে আর বড় কথা হলো ভাইয়া কেবলই তোমায় ভালোবাসে।আর আমিতো রবিনকে ছাড়া অন্য কাউকে কল্পনায়ও আনিনা।কিন্তু ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো ভাইয়া তোমার সম্পর্কে যা যা বলেছে সবটাই হুবুহু মিলে গেছে।তুমি যে বিয়ের দিন তাকে দেখে এভাবে ভ!ড়*কে যাবে ভাইয়া সেটা আগেই বলেছিলো।আমিই বিশ্বাস করিনি।কারণ তুমিতো চুপচাপ স্বভাবের মেয়ে।কিন্তু সেদিন তুমি আমায় ভুল প্রমানিত করলে।যে তোমায় এতো নিখুঁতভাবে চেনে-বুঝে তার মনে তোমার জন্য ঠিক কতটা ভালোবাসা লুক্কায়িত আছে আমি জাস্ট ভাবতে পারিনা!আমি চাই তোমাদের ‘আবার প্রেম হোক!”

চাঁদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,

“সেটা আর কখনোই সম্ভব না”

“সম্ভব করানোর জন্যইতো তোমাদের বিয়েটা এভাবে দিলাম”

“বেশি কথা না বলে বল যে তুই কোথায় আছিস?তুই কি বিয়ে করে ফেলেছিস?দেখ অমি এভাবে একটা ছেলের সাথে থাকাটা….”

“আহহা হাইপার হচ্ছো কেনো?সবটা বলছিতো!”

বিয়ের দিন রাতে,

সকলের সামনে চাঁদের পিছু অমৃতা আসলেও সে চাঁদের কাছে যায়না।সে নিজের রুমের বারান্দা টপকে বাগানে চলে আসে।সেখানে আগে থেকেই তার বয়ফ্রেন্ড রবিন উপস্থিত ছিলো।তার সাথে আরও একটা মেয়ে আছে।মেয়েটাকে অমৃতা চেনে।অমৃতা তাকে দেখে বলে,

“পূর্ণতা আপি তুমি?তুমিও এসেছো?”

পূর্ণতা অমৃতার মাথায় হাত রেখে বলে,

“কিভাবে না আসতাম বলো?তোমার মতো মিষ্টি একটা মেয়েকে এভাবে কেউ কি করে মতের বি!রু*দ্ধে বিয়ে দিতে পারে?তাছাড়া তুমিতো আমার উডবি ভাবি!”

অমৃতা পূর্ণতাকে জড়িয়ে ধরে বলে,

“থ্যাংক ইউ সো মাচ আপু”

পূর্ণতাও অমৃতার পিঠে হাত রেখে বলে,

“থ্যাংক্স বলতে হলে রবিনকেই বলো।ও ই আমায় এনেছে।বলেছে এভাবে একা ছেলে মেয়ে গেলে লোকে নানান কথা বলবে।তাই আমিও এসেছি।তোমায় ঢাকা নিয়েই বিয়ের ব্যবস্থা করবো আমরা”

অমৃতা পূর্ণতাকে ছেড়ে দিয়ে বলে,

“আমি এখনই বিয়ে করবোনা আপু।বাবা-মায়ের অনুমতি ছাড়া বিয়েটা সম্ভব না।তাদের রাজি করিয়েই করবো।আশা করছি তারা একদিন ঠিক রাজি হবে।তুমি আমায় প্লিজ তোমার বাসায় কয়েকটা দিন থাকতে দিবে?”

পূর্ণতা হেসে বলে,

“কয়েকটা দিন কেনো পাগলি?তোমার যতদিন ইচ্ছা থেকো।আপাতত এসব গয়না টয়না খুলে রুমে রেখে এই বোরকাটা পরে আসো।আমাদের এখনই যেতে হবে।যেতে যেতে সকাল হয়ে যাবে।তাড়াতাড়ি করো”

To be continued….

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

০৭.
অমৃতা পালিয়ে যাবার আগমুহূর্তে তার বিছানার পাশে রাখা টেবিলে একটি কাগজ ভাজ করে সন্তপর্ণে রেখে যাওয়ার উদ্দেশ্যে হাত বাড়াতেই নজরে আসে তার আর তার মা-বোনের সাথে কাটানো একটি সুন্দরতম মুহূর্তের ফ্রেমবন্দী ছবি।ছবিটি দেখে মুখে হাসি ফুটে উঠে তার।মুহূর্তেই যেনো মিলিয়েও যায় সেই হাসিটুকু।চোখেমুখে ভীড় করে অনুতাপের ছোয়ারা।ছবিটার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বলে,

“আমি সত্যিই খুব লজ্জিত মা।এছাড়া যে আর উপায় নেই!”

বলেই বোরকা পরে একটা ওড়না মাথায় পেচিয়ে, মুখে মাস্ক লাগিয়ে বের হয় এক অজানা গন্তব্যে।সে জানেনা তার নেওয়া এই সিদ্ধান্ত কতটুকু যুক্তিযুক্ত হবে।তবুও তার দৃঢ় বিশ্বাস আজকের নেওয়া এই সিদ্ধান্ত আগামীর শ্রেষ্ঠতম সিদ্ধান্তের একটি হবে।এই ভাবনা মন আর মস্তিষ্কে ধারণ করে প্রথমবারের মতো নিজ গন্ডি পেরিয়ে অচেনা এক শহরে দ্বিধাহীনভাবে চললো অমৃতা,পাশে তার এক বুক ভরসার স্থল,তার প্রেমিক পুরুষকে নিয়ে।

চাঁদের রুমের দরজায় অনবরত কেউ ঠকঠক আওয়াজ তুলেই যাচ্ছে।বেশ বিরক্তবোধ করে চাঁদ উঠে এসে দরজা খুলতেই তার খালাকে দেখে বলে,

“খালামনি?”

তিনি চাঁদকে উপেক্ষা করে রুমে ঢুকে শব্দ করে বলে যাচ্ছেন,

“অমি?অমি মা?কোথায় তুই?সবাই তোর অপেক্ষা করছে যে।বিয়ে পড়িয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে বেরুবেওতো?”

চাঁদ অবাক হয়ে বলে,

“অমিকে খুজছো কেন খালামনি?ওতো এখানে নেই”

চাঁদের খালা ভ্রু কুচকে বললেন,

“নেই মানে?আমরা সবাই স্পষ্ট দেখেছি ও তোর পিছু এসেছে”

“আমার পিছু এসেছে?কই নাতো!আসলে রুমে আসবেনা কেনো?”

“আসেনি মানে?”

“সত্যিই আসেনি।কিছু হয়েছে খালামনি?”

“এতোকিছু করার পরেও বলছিস কিছু হয়েছে কিনা?ছেলেরা যে এখনো বিয়েটা করাতে চাচ্ছে এটাইতো সাত কপালের ভাগ্য।মেয়েটাকে এখন কোথায় খুজবো আমি?এই তুই ওকে কোথায় রেখেছিস বলতো?”

চাঁদ ভড়!কে বলে,

“কোথায় রেখেছি মানে?কিসব বলছো খালামনি?আমি অমিকে কোথায় রাখবো?”

চাঁদের খালা চিন্তাগ্রস্ত হয়ে বলেন,

“দেখ মা আমি জানিনা জামাইর সাথে তোর কি হয়েছে বা তাকে কি করে চিনিস।দয়া করে আমার মেয়েটাকে কোথায় লুকিয়েছিস বলে দে।বিয়েটা হতে দে প্লিজ!আমি তোর কাছে হা…”

চাঁদ সাথে সাথে তার খালার হাত ধরে ফেলে বলে,

“ছি খালামনি এসব কী?দেখো।এখানে তাকাও। আমার দিকে তাকাও”

বলেই চোখের চশমাটা খুলে পাশে রেখে দু’হাতে তার খালার হাত ধরে তার দিকে মলিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,

“আমার চোখ দুটোর দিকে তাকাও খালামনি।দেখো।দেখে বলো এ চোখে কি হিং!সে বা কোনোপ্রকার রাগ দেখতে পাচ্ছো?যেই বোনটাকে ছোট থেকে আপন বোনের তুলনায় এতটুকু স্নেহও কম দেইনি, তার জীবনের এতো সুন্দর মুহুর্ত আমি নষ্ট করে দেবো?কোনোকিছু না জেনে বা ভেবে আমি এমনটা করবো?যে খালামনিকে মায়ের মতো ভালোবাসি তার সম্মান নিয়ে এরকম বা!জে কাজ তোমাদের চাঁদবুড়ি করবে খালামনি?তোমার মন কি তাই বলে?”

চোখে অশ্রু নিয়ে চাঁদের খালা বলেন,

“নারে মা!না।আমি জানি তুই না জেনে কোনো কিছুই করিস না।এমন বি!চ্ছি!রি কাজ তুই করবিনা এও জানি।তবে মায়ের মন তো?কতকিছুই বলে।তোর এই খালামনিকে মাফ করে দিস মা?তখন তোকে ওভাবে না বললে… ”

“আমি বুঝতে পেরেছিলাম খালামনি।তোমার মুখে আমার জন্য যতো বি!ষা*ক্ত বাক্যই বেরুক না কেনো চোখ আর মন যে অন্যকিছুই বলে তা আমি ঢের বুঝতে পারি।বেশি সময় নেই।চলো অমিকে খুজি।হঠাৎ কোথায় যাবে?”

হাপাতে হাপাতে নিমৃতা চাঁদের রুমে এসে তার মা আর চাঁদকে দেখে বলে,

“পুরো বাড়ি খুজেছি মা।আপুকে কোথাও পাচ্ছিনা।চাঁদ আপু আর আপুর রুমটাই বাকি এখন শুধু”

“চাঁদের রুমে নেই।ওর রুমেই চল”

“চলো”

বলেই তিনজনে একসাথে চিন্তিত ভঙ্গিতে অমৃতার রুমের দিকে এগোয়।

অমৃতার রুমে আসতেই তারা দেখতে পায় অমৃতার পরনের সকল গয়না বিছানার উপর রাখা আর বারান্দার দরজাটা খোলা।নিমৃতা আর চাঁদ সেদিকেই যায়।গিয়ে দেখতে পায় এক ওড়নার সাথে কয়েকটা ওড়না বাধা আর গ্রিলের সাথে সেটাকে দড়ির মতো করে বেধে নিচের দিকে রাখা।বেশি উচু নয় বলে যে বেশ সহজেই নিচে নামা যাবে তা সুনিশ্চিত।কেনোনা অমৃতাদের বাড়িটা এক তলা বিশিষ্টই।নিমৃতা চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলে,

“আপু!আপু কি পালালো?কেনো পালালো?”

চাঁদ নিমৃতার দিকে তাকিয়ে ভা!ঙা গলায় বলে,

“আম..আমি জানিনা।চল খালামনিকে বলতে হবে”

চিন্তিত ভঙ্গিতে রুমে এসে দেখলো তার খালা একটা কাগজের দিকে তাকিয়ে চোখে জল নিয়েও হাসছেন।চাঁদ কিছু বুঝতে না পেরে বলে,

“খালামনি অমি…”

চাঁদের কথাকে তার খালা ই সম্পূর্ণ করেন,

“পালিয়ে গেছে?”

নিমৃতা পলক ঝাপটে বলে,

“তুমি কি করে জানো?”

“চিঠিতে পড়েছি”

চাঁদ সামনে এসে বলে,

“দেখি কী লিখা এতে?”

চাঁদের খালা কাগজটা ভাজ করতে করতে বলেন,

“মেয়েটা মান সম্মান সব খুই!য়ে দিলোরে!”

“মানে?”

“বয়ফ্রেন্ডের সাথে পা!লি!য়ে!ছে।পা*লা*বেই যখন বিয়েতে রাজি হলো কেন?”

চাঁদ ভ!ড়!কে বলে,

“বয়ফ্রেন্ডের সাথে?সত্যিই পা!লালো?আমাকেতো বলেছিলো তোমাদের সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়ে সুখী হওয়ার চেষ্টা করবে।যার জন্যই আমি এই বিয়েটার বি*রু*দ্ধে প্রথমে কিছুই বলিনি”

তীক্ষ্ম দৃষ্টি চাঁদের দিকে নিক্ষেপ করে তার খালা বলেন,

“তুই ওর প্রেমের ব্যাপারে জানতি?”

দৃষ্টি নত করে চাঁদ বলে,

“আ’ম সরি খালামনি”

তাচ্ছিল্যের সুরে তিনি বলেন,

“সবাই সবটা জানে।জানিনা কেবল আমি!এই হলো আমার মেয়েরা!”

নিমৃতা বলে,

“মা তুমি…”

গ*র্জে উঠে চাঁদের খালা বলেন,

“একদম চু*প!আরেকটা কথাও শুনতে চাইনা আমি”

চাঁদ করুন চোখে তাকিয়ে বলে,

“খালামনি নিমু কিছু জানেনা।ওকে বকো না প্লিজ”

চাঁদের খালা রুম থেকে বেরুতে বেরুতে বলেন,

“কী করবো না করবো সেটা এখন আমার বিষয়।কেউ কোনোপ্রকার নাক গ!লা!বি না”

বলেই ক্ষিপ্র গতিতে ছুটেন বিয়ের আসরে।পিছু নেয় চাঁদ আর নিমৃতাও।

“অমৃতাকে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা।ক্ষমা করবেন বিয়েটা হওয়া সম্ভব না।আপনারা বরং আসুন”

বলেই মাথা নত করে ফেললেন অমৃতার মা।

প্রণয়ের ফুপি তে*তে উঠে বলেন,

“বিয়ে হবেনা আর আসুন মানে?ছেলেখেলা পেয়েছেন নাকি হ্যা?যখন যার যেভাবে ইচ্ছা অপ!মান করে যাচ্ছেন।বোনঝিকে দিয়ে অ!পমা!ন করিয়ে স্বাদ মেটেনি?এখন বলছেন মেয়েকে পাচ্ছেন না?”

চাঁদের খালা মাথা নিচু রেখেই বলেন,

“পুরো বাড়ি খুজেছি কোথাও অমি নেই।এই মুহুর্তে বিয়েটা কি করে করাবো বলবেন আপা?”

“কী করবেন মানে?মেয়েকে খুজবেন খুজে আনবেন।যদি না মেয়ে কোনো ছেলের সাথে পা!লা!য় তো”

চাঁদকে দেখে প্রণয়ের চাচি সামনে এসে বলেন,

“এই মেয়েই হয়তো মেয়েকে কোথাও লুকিয়েছে।এই মেয়ে সমস্যা কী তোমার?আমাদের ছেলেকে অপ!মান করে পেট ভরেনি?এখন আবার নাটক শুরু করেছো?”

চাঁদ কিছু বলার পূর্বেই চাঁদের খালা বলেন,

“মেয়েটা কোথায় গেছে জানিনা।হঠাৎ এমন কেনো করলো বুঝতে পারছিনা।দয়া করে আপনারা আমাদের বিষয়টা বুঝার চেষ্টা করুন।মেয়ে ছাড়াতো বিয়ে করানো যাবেনা।আমরা সত্যিই খুব লজ্জিত”

হঠাৎ করেই পুরুষালি গম্ভীর কন্ঠে চমকে উঠে সকলে,

“কে বলেছে মেয়ে নেই?দু-দুটো মেয়ে সামনে দাঁড়িয়ে আছে আপনি তাও বলছেন মেয়ে নেই?একজন অবশ্য খুবই ছোট,আমার সাথে যাবেনা।তবে অপরজনকে বিয়ের উপযুক্ত বলেই মনে হচ্ছে”

চমকে তাকায় চাঁদ প্রণয়ের দিকে।চাঁদের মা সামনে এসে বলেন,

“কি বলতে চাইছো তুমি?”

খানিকটা কেশে প্রণয় বলে,

“এটাই যে,যার জন্য আমার বিয়েটা ভা!ঙ!তে চলছে তাকে দিয়েই আমি তা জোড়া লাগাতে চাই শাশুড়ী আম্মু”

নিমৃতা অবাক হয়ে বলে,

“ভাইয়া আপনি অমিপুর বদলে চাঁদ আপুকে চাচ্ছেন?”

প্রণয় ভাবলেশহীনভাবে বলে,

“সেরকমই অনেকটা।”

চাঁদের বাবা বললেন,

“তোমাকে দেখে যথেষ্ট ভদ্রই মনে হয়।তবে এরকম চিন্তাভাবনা দেখে আমি অসন্তুষ্ট হচ্ছি”

প্রণয় চাঁদের বাবার সামনে এসে বলে,

“অসন্তুষ্ট হবেন না আব্বু।আপনার মেয়ে ঢামেকে পড়তো এটা অজানা নয় কারোরই।আর আমাকে যে সে ভালোকরেই চেনে তাও নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝেছেন।অমৃতা বিয়েটা করবেনা বলেই হয়তো পালা!লো।আর আপনার মেয়েওতো চেয়েছে যাতে ওর সাথে আমার বিয়েটা না হয়।কেনো জানেন?যাতে করে আপনার মেয়েই আমার স্ত্রী হয়।আমি কেবল তার ইচ্ছেটাই পূরণ করতে চাচ্ছি”

এরূপ কথা শুনে ভ!ড়!কা!নো দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চাঁদ প্রণয়ের দিকে।আর প্রণয়কে আবারও বলতে শুনে,

“আর বিশ্বাস করুন তাকে কোনোপ্রকার অযত্নে রাখা হবেনা।আমার মা-বাবা নিজ মেয়ের মতোই আদর করবেন বলেই আমার বিশ্বাস”

চাঁদের বাবা গম্ভীরভাবে বললেন,

“তুমি হঠাৎ আমার মেয়েকে কেনো বিয়ে করতে চাচ্ছো?”

“বোনকে ভা!গি!য়ে দিয়ে আমার সম্মান টা নষ্ট করলোনা?সাথে আপনাদেরও।আমি সবার সম্মান ধরে রাখতে চাই বলেই প্রস্তাব দিলাম।আম্মু আব্বুকে একটু বুঝান না প্লিজ”

শেষের কথাটা চাঁদের মায়ের দিকে তাকিয়েই বললো প্রণয়।প্রণয়ের এভাবে চাঁদের বাবা-মাকে আব্বু-আম্মু ডাকাতে সেখানে উপস্থিত সকলেই ভড়!কালো।বিশেষ করে প্রণয়ের নিজ পরিবার।

চাঁদের মা হাসফাস করে বললেন,

“দেখো বাবা এভাবে না জেনে মেয়েকে হঠাৎ বিয়ে…”

প্রণয় চাঁদের মা’কে থামিয়ে দিয়ে বলে,

“না জেনে কি করে আম্মু?’ছেলে যেকোনো মেয়ের জন্যই পার্ফেক্ট।সচক্ষে না দেখলে এটা আমি বিশ্বাস ই করতাম না।’একটু আগে এ কথাটা আমি আপনার মুখেই শুনেছি।আমাতে সমস্যা কোথায়?”

চাঁদের মায়ের পরিবর্তে চাঁদের বাবা বললেন,

“তুমি আমায় আর চৈত্রের মা’কে যেভাবে আব্বু আম্মু বলে আপন করে নিচ্ছো ঠিক সেভাবেই আমাদের মেয়েটাকে বিয়ে করে নিয়ে ভালোবাসতে পারবে তো নাকি হুজুগের বশেই বলছো?”

প্রণয় নির্দ্বিধায় বললো,

“আমি মনে করি বিয়ে যেহেতু একটা পবিত্র বন্ধন,এতে আল্লাহর বরকত থাকে।সেহেতু আল্লাহই সবটা ঠিক করে দেবেন অবশ্যই”

চাঁদের বাবা বললেন,

“আমি আমার পরিবারের সাথে আলাপ করে জানাচ্ছি”

“আপনাকে শ্বশুর বানানোর অপেক্ষায় বসে রইলাম আব্বু”

চাঁদের রুমে সকলে উপস্থিত হতেই চাঁদকে সবাই জেঁ!কে ধরে।কেনো সে অমৃতাকে পা!লা!তে সাহায্য করলো।চাঁদের পরিবর্তে তার খালা বললেন,

“অমিকে চাঁদ পালা!তে কোনো সাহায্যই করেনি।অমি নিজেই পালিয়েছে।ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে।মেয়েটা নাক কা*টি!য়ে ছাড়লো।ভাগ্যিস সবাই ভেবেছে চাঁদের জন্য মেয়েটা নেই।নাহলে কেলে*ঙ্কা*রি হয়ে যেতো”

চাঁদের মা বললেন,

“তাহলে এখন কি করবো?”

চাঁদের খালা বললেন,

“ছেলে কিন্তু ভালোই আপা।তুই চাঁদকে দিয়ে দে।এতে করে অমির ব্যাপারটা ধামাচাপা দেওয়া যাবে”

বিস্ফোরিত নয়নে চাঁদ তাকায় তার খালার দিকে।তাকিয়ে থেকে বলে,

“তুমি এমনটা কী করে বলছো খালামনি।ঐ ছেলেকে বিয়ে করার প্রশ্নই আসেনা”

কারোর কিছু বলার পূর্বেই চাঁদের বাবা সকলকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

“তোমরা বাইরে যাও।আমার মেয়ের সাথে আমার একান্ত কিছু কথা আছে।কেউ দ্বিতীয়বার প্রশ্ন করবেনা কেনো বাইরে যেতে বলেছি।যেতে বলেছি মানে যাবে।”

এ কথা শুনে কেউই সেখানে থাকার প্রয়োজনবোধ করলোনা।দরজার সামনে সকলে যেতেই একটা ছায়া সেখান থেকে সরে পড়লো। চাঁদের বাবা দরজা আটকে দিয়ে ভেতরে এসে চাঁদের সম্মুখে দাড়িয়ে বলেন,

“ছেলে কি কোনো নে/শাপানি করে মা?”

চাঁদ বাবার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে,

“এ কথা কেনো বলছো আব্বু?”

“যা জিজ্ঞেস করেছি উত্তর দাও”

“না।করেনা”

“ছেলের নিশ্চয়ই চরিত্রে সমস্যা আছে।মেয়ে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়?”

চাঁদ ভ্রু কুচকে বলে,

“এসব কি বলছো আব্বু।এমনটা কেনো হবে”

“তাহলে অবশ্যই বড়দের সম্মান করেনা।বড়লোকি ভাব দেখায়?”

“এগুলো কেনো বলছো আব্বু?”

“বুঝেছি নিশ্চয়ই ভু*য়ো ডাক্তার?”

“কিসব বলছো!সে এগুলোর কিছুইনা”

এবার বেশ শান্ত ভঙ্গিতেই চাঁদের বাবা ইহাদুল ইসলাম বললেন,

“তাহলে সমস্যা কোথায় মা?তুই কেনো বিয়েটা করতে চাচ্ছিস না?”

এ কথার উত্তরে আর কিছুই বলতে পারলোনা চাঁদ।দৃষ্টি নত করতে নিলেই ইহাদুল ইসলাম বলেন,

“দৃষ্টি নত করলেই মেয়ের দৃষ্টি পড়তে পারবোনা এতোটা অবুঝ বাবাও আমি নই।আমি জানিনা ছেলেটাকে তুই কিভাবে চিনিস বা তোর কে হয়।তোদের সম্পর্ক কী।কেনোইবা হুট করে ভাইয়ের সাথে এতো দূর পাড়ি জমিয়েছিস।তবে কিছুটা হলেও আজ আন্দাজ করতে পারছি হয়তো।ছেলেটার মধ্যে কোনো ভে!জা!ল নেই রে মা।একজন বাবার থেকে বেশি তার মেয়েকে কেউ ভালোবাসতে পারেনা।পারবেওনা। তবে ছেলেটার চোখে তোর জন্য আমি ভালোবাসার বিশাল সমুদ্র দেখতে পেয়েছি।হয়তো সবাইকে বোঝাচ্ছে বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় তোকে বিয়ে করবে বা প্র*তি*শো*ধপ্রবণ তবে আমার কেনো যেনো মনে হচ্ছে তোকে বিয়ে করার জন্যই ছেলেটা এতদূর এসেছে।নাহলে অপরিচিত কারো বাবা-মা’কে এভাবে অনায়াসে আম্মু-আব্বু ডাকা যায়না রে মা।আর তুই যত ঘৃ*ণা মূলক কথাই তার বি!রু*দ্ধে বলিস না কেন তোর চোখেও যে তার জন্য মায়াটা আমি দেখেছি।এইযে তাকে নিয়ে বাজে কথা বলায় তোর চোখে ক্রো!ধ স্পষ্ট এটা নিয়ে কী বলবি বল?”

চাঁদকে চুপ করতে দেখে ইহাদুল ইসলাম বলেন,

“কি হলো বল”

চাঁদ ইতস্তত করতে করতে বললো,

“আ..আসলে আব্বু আমি এ বিষয় নিয়ে হয়তো ক্লিয়ারলি বলতে পারবোনা তবে তাকে বিয়ে করতে পারবোনা যে!”

“কী সমস্যা?”

“তাতে সমস্যা নেই।সমস্যা আমাতে।আমি তার উপযুক্ত নই”

“ক*ষি*য়ে থা!প্প!ড় লাগাবো একটা!আমার চাঁদ মেয়ে ঐ আকাশের চাঁদের চেয়েও অপরূপ।ঐ চাঁদের চেয়েও আমার মায়ের মন বিশাল!সে কেনো উপযুক্ত হবেনা?”

“আব্বু…”

“তুই এটা মানিসতো যে বাবা-মায়ের সিদ্ধান্ত ক্ষেত্র বিশেষ বাদে অন্যথায় সন্তানের জন্য খারাপ হতে পারেনা?”

“হিম”

“তাহলে আজও এই বাবাকে ভরসা কর।দেখবি তোর বা তার কারোরই খা!রাপ হবেনা”

“আব্বু তুমি…”

“ছেলেবেলায় উপরের দিকে ছু!ড়!লে যেভাবে বিশ্বাস করতে আব্বু ধরেই ফেলবো আজও সেভাবে আব্বুর আশ্বাসে বিশ্বাস করে বিয়েটা করে নেওয়া যায়না মা?”

এ কথার পরে চাঁদ আর দ্বিমত করতে পারেনি।সবটা মেনে নিয়েছে।বাইরে এসে সকলের মত নেয়ার পর চাঁদের গায়ে জড়ানো হয় মেরুন রঙের এক ভারী শাড়ি যেটা প্রণয় নিজেই এনেছে।তার কাছে এ শাড়ি কি করে এলো বা সে এটা কেনো এনেছে জিজ্ঞেস করার মতো সাহস কারোরই নেই।তাই এর উত্তর অজানাই থেকে গেলো।চাঁদকে সাজানো হলো প্রণয়ের বঁধুরূপে।আংটিবদল হলো দুজনের।প্রণয়ের কথানুযায়ী চাঁদের হাতে প্রণয়ের নামের মেহেদীও দেওয়া হলো।এমনকি তাদের দুজনকে হলুদও লাগানো হলো ছোটখাটোভাবে।সবটাই প্রণয়ের ইচ্ছানুযায়ী।সকলে বিস্মিত,স্তম্ভিত এবং চূড়ান্তভাবে অবাক!ছেলেটা যেনো চাঁদকে বিয়ে করতেই এসেছে।চাঁদ না করেছে অমত না দেখিয়েছে আগ্রহ।সে ছিলো পুরোটা সময়ে নির্বাক,ভাবলেশহীন।অতঃপর বা*ধা বি!প!ত্তি পেরিয়ে দুজনের মাঝে বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধন সৃষ্টি হলো।কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে ভীষণ কাছে চলে এলো তারা,একে অপরের থেকে ভীষণ দূরে সরে গিয়েছিলো যারা।কাছে এসেও মনের দূরত্ব দীর্ঘই রয়ে গেলো।তবুও কি তাদের আবার প্রেম হবে?

To be continued…