আর একটিবার পর্ব-২২+২৩

0
288

#আর_একটিবার
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_২২

প্রায় ১ ঘন্টা ধরে বৃষ্টি পরছে। বৃষ্টির রাতে ঘুম ভালো হয়। কিন্তু সাঈদের চোখে ঘুম নেই। বিছানায় শুয়ে একবার এপাশ আর একবার ওপাশ ফিরছে। চিন্তাভাবনা তার ঘুম কেড়ে নিয়েছে। তার মন বলছে ওয়ালেট ইর্তেজাদের বাসায় রেখে এসেছে। যদি কেও খুলে দেখে ফেলে ইরিনার ছবি? সাঈদ উঠে বসলো। অস্থির লাগছে তার। মোবাইল হাতে নিলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ১ টা। এখন তো সবাই ঘুম। আর কাকেই বা কল দেবে? সাঈদ মোবাইল রেখে আবার শুয়ে পরলো।

ইরিনা শুয়ে আছে চোখ খুলে। বালিশের নিচে সাঈদের ওয়ালেট। ইরিনা ডান দিকে তাকাল। মাহা ঘুমাচ্ছে। ইরিনা বালিশের নিচে হাত ঢুকিয়ে ওয়ালেট বের করে খুলল। ছবিটা ইরিনার জন্মদিনে তোলা। সাঈদ নিজেই তুলেছিল। ইরিনার কাছে এক কপি ছবি আছে। সাঈদ নিজের কাছে কেন রেখেছে ছবিটা? ইরিনা বুঝে নিয়েছে সাঈদ তাকে ভালোবাসে। কিন্তু এটা কি আদৌও সম্ভব? ইরিনা ওয়ালেটটা রেখে লম্বা নিশ্বাস ফেলল। কাল কি সাঈদকে জিজ্ঞেস করবে? এসব ভাবতে ভাবতে কিছু সময় কেটে গেল। হঠাৎ খুব জোরে বজ্রপাতের শব্দ আসলো আর সাথে সাথে বিদ্যুৎ চলে গেল। বজ্রপাতের শব্দ শুনে মাহা লাফ দিয়ে উঠল। ভয়ে তার বুক কাঁপছে। মাহা উঠেছে বুঝতে পেরে ইরিনা মাহার হাত ধরে বলল,
“মাহা ডোন্ট ওয়ারি আমি আছি তোমার পাশে।”
“আ..আপু অন্ধকার কেন এখানে? হায় আল্লাহ আমি কি অন্ধ হয়ে গিয়েছি?”
ইরিনা ফিক করে হেসে বলল,
“ধ্যাত পাগলী, বিদ্যুৎ চলে গিয়েছে। তুমি শুয়ে থাকো আমি ইর্তেজাকে ডেকে বলছি জেনারেটর চালু করতে।”
মাহা হেলান দিয়ে বসলো। ভয়ে ঘাম ছুটছে তার। ইরিনা কয়েকবার ইর্তেজাকে ডাকলো। কিন্তু ইর্তেজার কোনো সাড়াশব্দ নেই। মাহা বলল,
“আপু আমি গিয়ে ডাকবো? ও হয়তো ঘুমাচ্ছে।”
“আচ্ছা যাও, দাঁড়াও মোবাইল নিয়ে যাও টর্চ অন করে নিও।”
ইরিনা মাহার কাছে মোবাইল দিলো। মাহা টর্চ অন করে খাট থেকে নেমে এগিয়ে গেল। দরজা খুলে বাহিরে গিয়ে ইর্তেজার ঘরের কাছে গেল। দরজা বন্ধ করা। মাহা ইর্তেজাকে ডাকলো। কিন্তু ভেতর থেকে সাড়াশব্দ নেই। মাহা ভ্রু কুঁচকালো। ইর্তেজা কি আদৌও ভেতরে আছে? মাহা দরজার কড়া ঘুরিয়ে দেখে দরজা খোলা। দরজা ঠেলে ভেতরে গিয়ে পুরো ঘরে টর্চ ঘুরিয়ে দেখে ইর্তেজা নেই। ইর্তেজাকে ডাকলো। কিন্তু এখনো কোনো সাড়াশব্দ নেই। মাহা ঢোক গিলল। ভয় করছে তার। হঠাৎ পেছন থেকে কেও তার মুখ চেপে ধরলো। মাহার হাত থেকে মোবাইল মাটিতে পড়ে টর্চ বন্ধ হয়ে গেল। কানে ইর্তেজার কন্ঠ ভেসে আসলো,
“হুশশ, আমি।”
ইর্তেজার কন্ঠ শুনে মাহা শান্ত হলো। ইর্তেজা তার মুখ ছাড়তেই মাহা ঘুরে ইর্তেজাকে ধাক্কা দিলো। ইর্তেজা হাসলো। মাহা বিরক্ত হয়ে ঝুঁকে মোবাইল হাতে নিয়ে পাওয়ার অন করলো। ডিসপ্লে কিছু ফেটেছে। মাহা রাগী কন্ঠে বলল,
“বেয়াদব, অসভ্য ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি।”
ইর্তেজা হেসে এগিয়ে গিয়ে মাহার গাল টেনে বলল,
“এই বাড়িতে আমি ছাড়া আর কোনো ভূত নেই।”
“হ্যাঁ জানি তুমিই সবচেয়ে বড়ো ভূত।”
“হুম, আর তুই আমার ভূতনি।”
মাহা হেসে দিলো। টর্চ অন করে বলল,
“জেনারেটর চালু করো প্লিজ। চারপাশ অন্ধকার। আমার কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছে।”
“আচ্ছা ঠিক আছে”
টর্চের আলো মাহার চেহারায় পরছে। ইর্তেজা মুচকি হেসে তাকিয়ে রইল তার দিকে। সে বলে বুঝাতে পারবে না মাহা তার জন্য কি। ঘুম ভালোবাসে মেয়েটাকে। মাহা বার বার এদিক সেদিক দেখছে। মেয়েটা এত ভীতু কিভাবে হলো? ইর্তেজার মায়া আরো বেড়ে গেল। মাহা ইর্তেজার দিকে তাকিয়ে বলল,
“যাও না তারাতাড়ি।”
“যাচ্ছি”
ইর্তেজা ঘুরে ঘর থেকে বের হলো। মাহাও তার পিছু পিছু গেল। ইর্তেজা জেনারেটর চালু করতেই চারপাশ আলোকিত হয়ে গেল। এখন শান্তি লাগছে মাহার। ইর্তেজা মাহার দিকে তাকিয়ে বলল,
“নেন ম্যাম আপনার জীবন আলোকিত করে দিলাম।”
“সত্যি তুমি আমার জীবন আলোকিত করে দিলে।”
ইর্তেজা মুচকি হেসে মাহার নাক ধরে টানলো।
“এখন তুমি গিয়ে ঘুমিয়ে পরবো। আপু একা ঘরে। আমিও যাই। আর একটা বাহানা বানাতে হবে।”
“বাহানা কেন?”
“মোবাইলের ডিসপ্লে নষ্ট হয়ে গিয়েছে তোমার কারণে। আমি কি সত্যি কথা বলবো যে তুমি..”
মাহা এইটুকু বলে থেমে গেল। ইর্তেজা এক ভ্রু উঁচু করে বলল,
“আমি কি?”
“কিছু না আমি যাই।”
বলেই মাহা পালালো। ইর্তেজা দাঁড়িয়ে হাসছে।

মাহা ঘরে গিয়ে দেখে ইরিনা ঘুমিয়ে পরেছে। চুপচাপ দরজা বন্ধ করে মোবাইল রেখে ইরিনার পাশে শুয়ে পরলো। হঠাৎ ইরিনার কন্ঠ ভেসে আসলো।
“এত দেরি হলো কেন মাহা?”
মাহা আমতা আমতা করে বলল,
“আপু, আসলে ইর্তেজা ঘুম ছিল। আবার অন্ধকার থাকার কারণে আমার চেয়ারের সাথে পা বেজে মোবাইল পড়ে গিয়েছিল। ডিসপ্লে একটুখানি নষ্ট হয়ে গিয়েছে, সরি।”
“সমস্যা নেই, তুমি ঠিক আছো?”
“হুম”
“আচ্ছা শুয়ে পরবো এখন।”
মাহা মাথা নাড়িয়ে ঘুরে শুয়ে পরলো। ইরিনা নিঃশব্দে হাসলো।

পরেরদিন……
সাগরিকা ড্রইংরুম পরিষ্কার করাচ্ছে সার্ভেন্টদের দিয়ে। শ্রাবণ এখনো ঘুম। বেশ কিছুক্ষণ পর কলিংবেল বাজার শব্দ আসলো। সাগরিকা সবাইকে কাজ করতে বলে গিয়ে দরজা খুলল। ইর্তেজা দাঁড়িয়ে আছে। সাগরিকা মুচকি হেসে তাকে ভেতরে আসতে বলল। ইর্তেজা সালাম দিয়ে ভেতরে ঢুকলো। সাগরিকা দরজা বন্ধ করে বলল,
“তোমার সাহসের প্রশংসা করতেই হবে। শ্রাবণ তোমর উপর রেগে আছে জানার পরও আসলে।”
“মাফ চাইতে এসেছি।”
“কেন মাফ চাইবে তুমি? আমি শ্রাবণকে বলেছি সব। আচ্ছা ইর্তেজা মাহা তোমাকে দেখে কেমন রিয়েক্ট করেছে। জানো আমি সারা সময় ভেবেছি তোমাদের এত বছর পর দেখা হলো। সে কি বলেছে তুমি কি বলেছো।”
“বলবো ম্যাম সব বলবো। তার আগে বস এর সাথে আমার কথা বলতে হবে।”
“আচ্ছা তুমি বসো আমি শ্রাবণকে ডাকছি।”

সাগরিকা ঘরে গেল। শ্রাবণ উঠে গিয়েছে। বাথরুমে আছে সে। সাগরিকা বিছানা গুছাডে লাগলো। শ্রাবণ বের হয়ে সাগরিকাকে দেখে মুচকি হাসলো। পা টিপে টিপে গিয়ে সাগরিকাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। সাগরিকা হেসে বলল,
“রোম্যান্স পরে করে নিও। ইর্তেজা এসেছে তোমার সাথে দেখা করতে।”
“আমার রোম্যান্সে বাঁধা দেয়া পাবলিকদের আমি ঘৃণা করি।”
“হয়েছে ঢং, এখন যাও আমি ঘর গুছিয়ে আসছি। আর খবরদার ওর সাথে ভালো ব্যবহার করবে।”
শ্রাবণ সাগরিকাকে ছেড়ে খাটে বসে বলল,
“আর কি কি বলতে হবে ম্যাম?”
“আপাতত ব্যবহার ঠিক রাখলেই হবে।”
শ্রাবণ সাগরিকার হাত ধরে চুমু দিয়ে বলল,
“তোমার জন্য সব করতে পারি।”
“সেটা আমি জানি, এখন যাও তারাতাড়ি।”
শ্রাবণ দাঁড়িয়ে সাগরিকার কপালে চুমু দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। ইর্তেজার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই ইর্তেজা দাঁড়াল। শ্রাবণ হাত আড়াআড়িভাবে ভাজ করে বলল,
“কি চাই?”
“বস আই এম সরি”
“তুমি আমাকে জিজ্ঞেস না করে এত বড়ো ডিসিশন কেন নিলে? একবার বলে দেখতে আমায়।”
“রিয়েলি সরি বস, আপনি চিন্তা করবেন না আমি সব ব্যবস্থা করে ফেলেছি। আপনি আমার সাথে চলুন আমি এখনই আপনাকে জমি নিয়ে দিচ্ছি।”
“এখন আর লাগবে না। বসো এখন কিছু কথা আছে।”
.
.
ফুল স্পিডে বাইক চালিয়ে সাঈদ ইরিনার বাসায় আসলো। তার কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে চিন্তায়। কলিংবেল বাজাতেই মাহা এসে দরজা খুলল।
“আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।”
“ওয়া আলাইকুমুস সালাম, ইর্তেজা বাসায় আছে?”
“ও তো সকাল সকাল উঠে কোথাও চলে গিয়েছে। আপনি ভেতরে আসুন এসে পরবে।”
সাঈদ ভেতরে গিয়ে বসলো। বার বার এদিক সেদিক দেখছে। ইরিনা হয় তো ঘরে। মাহা সাঈদকে বসতে বলে ইরিনার ঘরে গেল। সাঈদ দ্রুত রান্নাঘরে গেল। ঝর্ণা কাজ করছে। সাঈদ দ্রুত তার সামনে গিয়ে বলল,
“ঝর্ণা, একটা হেল্প লাগবে।”
ঝর্ণা সাঈদকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলল,
“আপনে আবার আইসেন?”
“হ্যাঁ আমি আসছি কারণ আমি বেহায়া। এখন প্লিজ একটা হেল্প করো।”
“কিয়ের হেলেপ?”
“গতকাল আমি আমার ওয়ালেট রেখে চলে গিয়েছি ভুলে। তুমি দেখেছো কোথাও?”
“ওয়ালেট আবার কি?”
“মানিব্যাগ, আমি ভুলে রেখে চলে গিয়েছি।”
“আমি জানি না, আমার উপরে সন্দেহ কইরেন না। আমি গরীব হইতে পারি কিন্তু চোর না।”
“আহা ঝর্ণা তুমি কেন আমাকে ভুল বুঝো বলো তো? ওয়ালেটের ভেতর ইরিনার ছবি ছিল। যদি কেও দেখে ফেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।”
“মনের কথা কইতে পারেন না কিন্তু মানিব্যাগে ছবি নিয়া ঘুরেন। আপনে অনেক আজব।”
“আল্লাহর ওয়াস্তে আস্তে বলো কেও শুনে ফেললে আমি শেষ।”
“আপনে না বললে আমিই আপাকে যায়া বইলা দিমু।”
সাঈদ ঝর্ণার হাত ধরে বলল,
“তুমি না আমার লক্ষী বোন। প্লিজ আমার ওয়ালেট খুঁজে দাও। আমার ভয়ে হাত পা কাঁপছে।”
তখনই দরজার পাশ থেকে মাহার কন্ঠ ভেসে আসলো,
“কি হচ্ছে এখানে?”
সাঈদ আর ঝর্ণা দরজার দিকে তাকাল। মাহা ভ্রু কুঁচকে রেখেছে। ঝর্ণা হাত ছাড়িয়ে বলল,
“ভাবী, সাঈদ ভাই আসলে.. ভাই বলেন না কি হইসে।”
ঝর্ণা সাইদকে ফাসিয়ে ঘুরে কাজ করতে লাগলো। সাঈদ আমতা আমতা করছে। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। মাহা তাদের অস্বস্তি হতে দেখে বলল,
“ভাইয়া, আপনাকে আপু ডাকছে।”
সাঈদ হাতমুঠো শক্ত করে ফেলল। মায়া মায়া চেহারা বানিয়ে ঝর্ণার দিকে তাকাল। ঝর্ণা দাঁত বের করে হেসে বলল,
“আপা ডাকে তারাতাড়ি যান।”
সাঈদ মাথা নিচু করে রান্নাঘর থেকে বের হলো। সাঈদ যেতেই মাহা ঝর্ণার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,
“ঝর্ণা, কি হচ্ছিল এখানে জানতে পারি?”
“ভাবী ভুল ভাইবেন না আমায়। হেই তো আমার ভাই লাগে।”
মাহা আর কিছু বলল না। এটা তাদের পার্সোনাল লাইফ ভেবে ইগনর করলো।

সাঈদ ইরিনার ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ভয় করছে তার খুব। বাহিরে সাঈদ দাঁড়িয়ে আছে। ইরিনা তার উপস্থি অনুভব করলো। সে সাঈদকে ডাকলো ভেতরে। সাঈদ মনে সাহস নিয়ে ভেতরে গেল। ইরিনাকে সালাম দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। ইরিনা বালিশের নিচ থেকে ওয়ালেট বের করে সাঈদের দিকে এগিয়ে দিলো। সাঈদ ওয়ালেট দেখে হেটে গেল। হাতে নিয়ে বলল,
“এখানে রেখে গিয়েছিলাম। আমি তো ভাবলাম চুরি হয়ে গিয়েছে হয়তো।”
“আমি দেখেই যত্ন করে রেখেছিলাম।”
“আপনাকে ধন্যবাদ”
“দেখে নাও সব ঠিক আছে কি-না।”
“আপনারা তো আমার আপনই। দেখতে হবে না।”
“তবুও সাঈদ, দেখে নাও।”
ইরিনা স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই কথা বলছে। সাঈদ নিশ্চিন্তের নিশ্বাস ফেলল। ইরিনাকে সে চিনে। অন্যের ব্যক্তিগত জিনিস কখনো দেখবে না। সাঈদ হাসিমুখে ওয়ালেট খুলল। সাথে সাথে তার হাসি উড়ে গেল। ইরিনার ছবিটা নেই। সাঈদ ইরিনার দিকে তাকাল। ইরিনা শান্ত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সাঈদ কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। ছবিটা কোথায় গেল? ইরিনা কি দেখেছে ছবিটা? সাঈদ মুখে জোরপূর্বক হাসি ফুটিয়ে বলল,
“হ্যাঁ ঠিক আছে”
“সত্যি সব ঠিক আছে?”
সাঈদের বুক কাঁপছে। ওয়ালেট পকেটে রেখে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল। ইরিনা লম্বা নিশ্বাস ফেলে বলল,
“সত্যি করে বলো তো। তোমার বন্ধুর বোন আমি। তা-ও বড়ো। তোমার থেকেও বড়ো আমি। তবুও কেন সাঈদ?”
সাঈদ কলিজা মোচড় দিয়ে উঠল। নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে তার। মাথা নিচু করে ফেলল। ইরিনা আবার বলল,
“ইর্তেজা জানতে পারলে তোমাদের বন্ধুত্ব শেষ হয়ে যাবে। আমি আমার ছোটো ভাইয়ের সামনে যেতে লজ্জা পাবো। আমি চাই না আমাদের সবার জীবন কঠিন হয়ে যাক।”
সাঈদ নিশ্চুপ। ঠিক এই কারণে সে ভয় পাচ্ছিল ইরিনাকে মনের কথা বলতে। ইরিনা আবার বলল,
“সাঈদ, যদি আমাকে মন থেকে সম্মান করে থাকো তাহলে সব ভুলে যাও।”
সাঈদ চোখ তুলে ইরিনার দিকে তাকাল। ধীরে ধীরে ইরিনার সামনে গিয়ে বলল,
“একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”
“হুম”
“আমাদের বয়সের ব্যবধানই আসল কারণ?”
“সাঈদ, বয়সের ব্যবধানের কথা বলছি না। আমাদের সম্পর্ক গুলো ভালো মতো দেখো তুমি।”
“আমি ছোটোবেলা থেকে আমাদের মাঝে একটাই সম্পর্ক দেখতে পেয়েছি। আর সেটা হলো ভালোবাসার।”
“স্টপ ইট, আমি তোমার সম্পর্কে কখনো এটা ভাবতেও পারি না। আর তুমি ভালোবাসার দাবী করছো?”
“তো আমি কি করবো এখন?”
“ভুলে যাবে সব। আমাকে নিজের মন থেকে মুছে ফেলো।”
সাঈদ জবাব দিলো না। নিঃশব্দে তাকিয়ে রইল ইরিনার দিকে। ইরিনা তার চাহনি দেখে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে বলল,
“আমার নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে। আমি চাই না তোমাকে ঘৃণা করতে।”
সাঈদ রাগী কন্ঠে বলল,
“কেন ঘৃণা করবেন আমায়? কি করেছি আমি?”
ইরিনা সাঈদের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুমি তোমার লিমিট ক্রস করেছো।”
“লিমিট ক্রস? সত্যি করে বলুন, কখনো আপনার সাথে বেয়াদবি করেছি? কখনো আমার ব্যবহার দেখে আপনার মনে হয়েছে আমি আপনাকে খারাপ নজরে দেখেছি?”
ইরিনা জবাব দিলো না। তার গলায় কান্না আটকে আছে। সাঈদ ঘনঘন নিশ্বাস ফেলতে লাগলো। গাল বেয়ে চোখের পানি পরছে তার। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে পানি মুছে বলল,
“আমি জানতাম আমার জীবনে এমন দিন আসবে। নিজেকে প্রস্তুত রেখেছিলাম। কিন্তু কি করবো? এই মন আপনাকে ছাড়া আর কারো কথা ভাবতে পারে না। তাই আমার কষ্ট হচ্ছে। জানি না আপনাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো আমি।”
ইরিনা হাতজোড় করে বলল,
“হাতজোড় করছি চুপ থাকো প্লিজ। কেও শুনে ফেলবে।”
“ধুর, শুনলে শুনুক। আমার এখন যায় আসে না।”
ইরিনা রাগী কন্ঠে বলল,
“যাও এখনই। আর কখনো এই বাসায় আসবে না।”
সাঈদ হাত এগিয়ে বলল,
“আমার ছবি ফেরত দিন চলে যাচ্ছি।”
“না, তুমি ভুলে যাবে আমায়। তোমার কাছে আমার আরো ছবি থাকলে সব ফেলে দেবে।”
“একদম চুপ”
সাঈদের ধমক শুনে ইরিনা চমকে উঠল। সাঈদ আবার বলল,
“আমাকে নিজের জীবন থেকে দূর করতে পারবেন। কিন্তু আমার মন থেকে নিজেকে বের করতে পারবেন না। আপনার কোনো অধিকার নেই আমার জীবনের উপর।”
“এবার সত্যি লিমিট ক্রস করছো।”
“হ্যাঁ করেছি, চুপচাপ আমার আমানত আমাকে ফেরত দিন।”
“দেবো না”
সাঈদ নিজেকে শান্ত করে বলল,
“আচ্ছা আমি ওয়াদা করছি আর কখনো আপনার সামনে আসবো না। আপনার এই ছবিটা আমি এত বছর অনেক যত্নে রেখেছিলাম। হ্যাঁ আরো অনেক ছবি আছে আমার কাছে। আপনার প্রত্যেকটা ছবি আমার কাছে অনেক মূল্যবান। প্লিজ ফিরিয়ে দিন।”
সাঈদের কান্নাজড়িত কন্ঠ ইরিনা বুকে গিয়ে লাগছে। বালিশের নিচ থেকে ছবিটা বের করে মাথা নিচু রেখে এগিয়ে দিলো। সাঈদ ছবিটা নিয়ে বলল,
“ধন্যবাদ, আসি।”
সাঈদ ঘুরে হাঁটা ধরলো। ইরিনা চোখ তুলে তাকাল সাঈদের দিকে। হাঁটতে পারলে হয়তো দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলতো আমিও ভালোবাসি তোমায়। কিন্তু পারবে না। হয়তো রাজি হয়ে যেত। হবে না, কারণ সে সাঈদের জীবনকে আরো কঠিন করতে চায় না।
.
.
ইর্তেজা আর শ্রাবণ বসে কথা বলছে৷ সাগরিকা ঘরে গিয়েছে। শ্রাবণের কোনো কথা ইর্তেজার মাথায় ঢুকছে। শ্রাবণ বলছে সে ভালো হয়ে যাবে আবার রেগে আগুন হয়ে বলছে যার যত শত্রু আছে সবগুলোকে মে*রে ফেলবে৷ ইর্তেজা এক সময় বিরক্ত হয়ে বলল,
“বস, আপনি আমাকে স্পষ্ট ভাবে বলুন তো আমাকে কি করতে বলছেন?”
“ইর্তেজা, যত পর্যন্ত আমার শত্রু গুলো বেঁচে আছে আমার প্রত্যেক কাজে ওরা বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করবে। আমি যে কাজ গুলো জীবনে করিও নি সেসবের অপবাদও আমার নামে দেয় তারা।”
“তো এখন আমি কি করবো?”
“আমার হয়ে তুমি বিল্ডারদের সাথে কথা বলবে। কাজ অবশ্য আমি সামলাবো।”
“আপনি আমার আর অগ্নি পরীক্ষা নিবেন?”
“তুমি আছো বলেই আমি নিশ্চিন্তে আছি। ধন্যবাদ আমার এত সাহায্য করার জন্য?”
“ম্যামকে আজমাইনের কথা বলেছেন?”
“আস্তে ইর্তেজা সাগরিকা শুনে ফেলবে।”
“তার মানে আপনি এখনো বলেন নি আজমাইন আর বেঁ*চে নেই?”
“না, আমি যদি বলি আজমাইনকে আমি ভুল করে মে*রে ফেলেছি। ও আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। আর আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।”
তখনই পেছন থেকে সূর্যের কন্ঠ ভেসে আসলো, “দেখলে আপু? আমি তোমায় বলেছিলাম আজমাইন ভাইয়ার সাথে ও নিশ্চয়ই কিছু করেছে।”
ইর্তেজা আর শ্রাবণ দ্রুত পেছনে তাকাল। সাগরিকা আর সূর্য দাঁড়িয়ে আছে।

চলবে……..

#আর_একটিবার
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_২৩

সাগরিকা শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শ্রাবণের দিকে। সে আড়ালে সব কথা শুনেছে তাদের। এতদিন সে ভাবছিল আজমাইন বেঁচে আছে। শ্রাবণ তার যাতে ক্ষতি না করে, এর জন্য শ্রাবণের কথার মতো চলতো। সাগরিকাকে দেখে শ্রাবণ থমকে গেল। ইর্তেজার দিকে তাকাল রাগী দৃষ্টিতে। ইর্তেজা শ্রাবণের চাহনি দেখে ভ্রু কুঁচকে বলল,
“আমাকে এভাবে কেন দেখছেন?”
শ্রাবণ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“বলেছিলাম না আস্তে বলতে?”
“এখন সব দোষ আমার?”
“তোকে পরে দেখছি।”
বলেই শ্রাবণ সাগরিকার দিকে দৌড়ে আসলো। সূর্য সাগরিকার আগে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
“দূর থাকুন আমার বোনের কাছ থেকে।”
“সূর্য, এটা আমাদের পার্সোনাল ম্যাটার।”
“পার্সোনাল ম্যাটার? সিরিয়াসলি শ্রাবণ আহমেদ? বিষয় আজমাইন ভাইয়াকে নিয়ে আর আপনি বলছেন এটা আপনাদের পার্সোনাল ম্যাটার?”
শ্রাবণ সাগরিকার দিকে তাকাল। সাগরিকা এখনো চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে এখনই কান্না করে দেবে। সাগরিকা ইর্তেজার দিকে তাকাল। ইর্তেজা ঢোক গিলল। সাগরিকা হঠাৎ তাকে এভাবে কেন দেখছে। সাগরিকা ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে যেতে ইর্তেজাকে বলল,
“কি যেন বলেছিলে? ম্যাম, বস আপনাকে অনেক ভালোবাসে। উনি কখনো এমন কোনো কাজ করবে না যাতে আপনি কষ্ট পান। এমনই কিছু একটা বলেছিলে, তাই না ইর্তেজা?”
ইর্তেজা মাথা নিচু করে ফেলল। শ্রাবণ দ্রুত সাগরিকার দিকে এসে বলল,
“সা..সাগরিকা, আ..আমার কথা শোনো। আ..আমি আসলে…”
“চুপ থাকো শ্রাবণ, তোমার মুখ থেকে একটা কথা শুনতে চাই না।”
“তুমি না শুনলে আমি এক্সপ্লেইন করবো কিভাবে?”
“কি এক্সপ্লেইন করবে তুমি?”
সাগরিকা চিৎকার করে বলল কথাটা। তার এতোটাই কষ্ট হচ্ছে, যেন কলিজা ফেটে এখনই র*ক্ত বেরিয়ে যাবে। সাগরিকা ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে। শ্রাবণ কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। সাগরিকা আবার বলল,
“আমার আজমাইনকে তুমি মে*রে ফেললে শ্রাবণ?”
শ্রাবণ রাগী কন্ঠে চিল্লিয়ে বলল,
“ও তোমার আজমাইন না। খবরদার সাগরিকা, আমি ছাড়া তোমার জীবনে দ্বিতীয় আর কেও থাকবে না।”
“দ্বিতীয়? আরে দ্বিতীয় তো তুমি ছিলে। আমার আর আজমাইনের মাঝে এসেছিলে তুমি।”
শ্রাবণ সাগরিকার বাহু ধরে বলল,
“আমার পুরো কথা শোনো প্লিজ।”
সূর্য এসে সাগরিকাকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
“অনেক হয়েছে। আমি আর সহ্য করবো না। যে ভয়ের কারণে আমি চুপ ছিলাম সেই কারণ আর নেই। আমার বিশ্বাস হচ্ছে না আপনি এত নিচে নেমে গিয়েছিলেন।”
সূর্য কান্না জড়িত কন্ঠে বলল। সাগরিকা সূর্যকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। সূর্য সাগরিকার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“আমি তোমাকে আর এখানে থাকতে দেবো না। অনেক হয়েছে। তুমি এতদিন এখানে ছিলে ভাইয়াকে মুক্ত করানোর জন্য। সে তো অনেক আগেই মুক্ত হয়ে গিয়েছে।”
সাগরিকা কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“আমার আজমাইন আর নেই সূর্য। আমি অপরাধী হয়ে গেলাম। আমার জন্য ও ম*রে গেল।”
শ্রাবণ কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। বুকের বা পাশে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে তার। এতদিন সাগরিকা যে বলতো সে শ্রাবনকে ভালোবেসে ফেলেছে? তাহলে আজমাইনের জন্য এত কাঁদছে কেন? সূর্য শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি আপনাকে শেষবারের মতো বলছি। আপনি আমার বোনকে রেহাই দিন এবার।”
“কিসের রেহাই? আমি সাগরিকাকে কখনো কষ্ট দিয়েছি? আমি সবসময় ওকে ভালোবেসেছি। ওর জন্য কি না করেছি? এত সহজে আমি ওকে ছাড়ছি না।”
সাগরিকা সূর্যকে ছেড়ে শ্রাবণের বরাবর দাঁড়িয়ে বলল,
“সহজে ছাড়বে না? আমাকেও মা*রবে এখন? তো মে*রে ফেল প্লিজ। আমার আর বাঁচতে ইচ্ছে করছে না।”
শ্রাবণ সাগরিকার গালে হাত রেখে বলল,
“তুমি এমন কেন করছো? তুমি না বলেছিলে আমাকে ভালোবাসো। তো কেন আজমাইনের জন্য আমাকে ঘৃণা করছো বলো তো।”
সাগরিকা শ্রাবণকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
“একসাথে থাকলে একটা বোবা প্রাণীর প্রতিও মায়া জন্মে যায়। তুমি তো তাও মানুষ।”
শ্রাবণ সাগরিকার দিকে তাকিয়ে রইল। সাগরিকা চোখের পানি মুছে ইর্তেজার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুমি সব জানতে তাই না? তুমি সব জানতে কিন্তু আমাকে বলো নি। অথচ আমাকে বলতে শ্রাবণ আমাকে অনেক ভালোবাসে।”
“আপনাকে উনি সত্যি অনেক ভালোবাসে। তাই তো উনি এত কিছু করলো আপনার জন্য। আজমাইনকে উনি ইচ্ছে করে মারে নি। হ্যাঁ উনার দ্বারা একটা ভুল হয়েছে। উনি লুকিয়েছে আপনার কাছ থেকে এসব। যা উনার একদমই উচিত হয়নি।”
শ্রাবণ রাগে গজগজ করতে করতে বলল,
“তোকে এত কথা কে বলতে বলেছে? তোর কথা শুনে সাগরিকা আমাকে আরো ভুল বুঝবে।”
“খু”’ন আপনি করেছেন। ম্যামের কাছ থেকে লুকিয়েছেন আপনি। বলেছিলাম না সব বলে দেন। কিন্তু শুনেন নি আমার কথা।”
শ্রাবণ ইর্তেজার কলার ধরে বলল,
“মুখ বন্ধ রাখ নাহলে তোকেও মে*রে ফেলবো।”
সাগরিকা তালি বাজাতে বাজাতে বলল,
“বাহ, খুব সুন্দর কথা বললে শ্রাবণ। যে উচিত কথা বলবে তাকেই মে*রে ফেলবে তাই তো?”
ইর্তেজা নিজেকে ছাড়িয়ে সাগরিকাকে বলল,
“আমি চাই না ভুল বুঝাবুঝি হোক। ম্যাম আপনি উনাকে মাফ করে দিন।”
সাগরিকা সূর্যের দিকে তাকিয়ে বলল,
“দেখলি সূর্য! এই ছেলের মাথাটাও গিয়েছে শ্রাবণের সাথে থাকতে থাকতে।”
ইর্তেজা নিশ্চুপ হয়ে গেল। সে জানে সে যা যা বলছে সব ভুল। খু’নের মাফ নেই। শ্রাবণ দৌড়ে এসে সাগরিকা হাত ধরে বলল,
“আমাকে আর একটিবার সুযোগ দাও সাগরিকা। আমি ওয়াদা করছি অনেক ভালো হয়ে যাব অনেক। তুমি যা বলবে তাই করবো।”
সাগরিকা তালিচ্ছ্যের হাসি দিয়ে বলল,
“যা বলবে তাই করবো। পারবে আজমাইনকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে?”
“এমন কোনো কথা বলো না যেটা করা আমার পক্ষে সম্ভব না।”
নিজের হাত ছাড়িয়ে সাগরিকা বলল,
“তাহলে যেতে দাও আমায়। আমি তোমাকে সহ্য করতে পারছি না।”
“আমাকে ছেড়ে যেও না সাগরিকা। আমি ম*রে যাব তোমাকে ছাড়া।”
“তো ম*রে যাও। তোমার মতো অমানুষ বেঁচে থাকলেই দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে।”
সূর্য এসে বলল,
“আপু শান্ত হও। ওর যদি লজ্জা শরম থাকে তোমাকে থামাবে না। চলো আমার সাথে।”
সূর্য সাগরিকা হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল। শ্রাবণ থমকে দাঁড়িয়ে আছে। সাগরিকা একটা বারো তার দিকে ফিরে তাকাচ্ছে না। শ্রাবণ চিৎকার করে সাগরিকাকে ডাকলো। না, তবুও সাগরিকা তার ডাকে সাড়া দিলো না। শ্রাবণের নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। চোখ ঘোলাটে লাগছে। হাত পা থরথর করে কাঁপছে। শ্রাবণ পড়ে যেতে নিলো দ্রুত ইর্তেজা এসে তাকে ধরে ফেলল। শ্রাবণ ইর্তেজাকে দেখে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলল,
“ছাড় আমায়, তোকে বলেছিলাম না বাসায় আসলে আজমাইনের কথা তুলবি না? দেখ কি হলো! আমার সাগরিকা আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। একবারো আমার দিকে তাকায় নি। ঘৃণা করে আমার সাগরিকা আমায়।”
শ্রাবণ ঘনঘন নিশ্বাস নিতে লাগলো। ইর্তেজা আবার এসে বলল,
“আপনি শান্ত হোন। আমি ওয়াদা করছি ম্যাম ফিরে আসবে আপনার কাছে।”
শ্রাবণ রাগী দৃষ্টিতে ইর্তেজার দিকে তাকিয়ে বলল,
“সাগরিকাকে আমি ফিরে না পেলে তোর জীবন তছনছ করে দেবো। আমি সাগরিকাকে না পেলে তুইও তোর মাহাকে পাবি না।”
ইর্তেজার মাথা গরম হয়ে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“আমার মাহাকে মাঝে আনবে না বলে দিচ্ছি। নাহলে ভুলে যাব তুমি কে।”
“কি করবি তুই?”
“তুই জানতে চাস আমি কি করতে পারি?”
ইর্তেজা আর শ্রাবণ অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল একে অপরের দিকে। শ্রাবণ বলল,
“আমি শ্রাবণ আহমেদ, যা বলি তাই করি। তুই ভাবতেও পারিস না আমি কি কি করতে পারি।”
“আমি ইর্তেজা, তত পর্যন্ত ঘুমন্ত বাঘ হয়ে থাকবো যত পর্যন্ত কেও আমার বোন আর মাহাকে মাঝে না আনবে। একবার তারা মাঝে আসলে আহত বাঘ হয়ে যাব। আর একটা সুস্থ বাঘের থেকে আহত বাঘ বেশি ভয়ংকর হয়। এই কথা নিজের মাথায় ঢুকিয়ে রাখ শ্রাবণ আহমেদ।”
বলেই ইর্তেজা হাঁটা ধরলো। শ্রাবণ হাতমুঠো শক্ত করে রেখেছে। রাগে চিল্লিয়ে বলল,
“আমাকে তুই হুমকি দিলি ইর্তেজা?”
ইর্তেজা শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল,
“উঁহু, আমি তো ওয়ার্নিং দিলাম। রাগ তোলার জন্য কিছু না পেয়ে আমাকে মাঝে টানলি কেন? ঠিক আছে, আমিও প্রস্তুত আছি।”
“তোর কাউন্টডাউন শুরু। নিজেকে বাঁচাতে পারলে বাঁচিয়ে দেখা আমার কাছ থেকে।”
ইর্তেজা বিরক্ত হয়ে ঘুরে হাঁটা ধরলো। শ্রাবণ তাকে অকারণে মাঝে কেন নিয়ে আসলো বুঝতে পারছে না। ইর্তেজা দ্রুত বেরিয়ে এদিক সেদিক দেখলো। সাগরিকা আর সূর্যকে দেখা যাচ্ছে না। ইর্তেজা দ্রুত গতিতে হাঁটা ধরলো। সূর্যের বাসায় যাচ্ছে সে। বাসায় গিয়ে দেখে দরজায় তালা ঝুলানো। তারা এখানে আসে নি তো কোথায় গিয়েছে? ইর্তেজা দাঁড়িয়ে থেকে চিন্তায় ডুবে গেল।
.
.
শ্রাবণ সাগরিকার ছবির দিকে তাকিয়ে আছে। ছবির উপর হাত বুলিয়ে বুকের সাথে ধরে বলল,
“আমার উপর কেন এত রাগ তোমার? আর একটিবার সুযোগ দাও প্লিজ। ওয়াদা করছি অনেক ভালো হয়ে যাব। তুমি গর্বিত হবে যে আমি তোমার স্বামী। তুমি আমার না হলে তোমাকে আমি..তোমাকে আমি মে*রে ফেলবো সাগরিকা।”
শ্রাবণ সাগরিকার দিকে দিকে তাকিয়ে আবার বলল,
“সত্যি বলছি, তুমি আমার না হলে আর কারো হতে দেবো না।”
শ্রাবণের চোখ গড়িয়ে পানি পরলো। তখনই দু’টো ছেলে আসলো এগিয়ে। শ্রাবণকে উদ্দেশ্য করে একজন বলল,
“বস, যা যা বলেছেন সব প্রস্তুত করেছি। এখন কি করবো?”
শ্রাবণ ছবির দিকে তাকিয়ে থেকেই বলল,
“সবাইকে তুলে নিয়ে আসো। আর হ্যাঁ, সাগরিকার যাতে কিছু হয়। তার একটু কষ্ট হলে তোমার জান নিয়ে নেবো।”
“ওকে বস”
ছেলে দু’টো চলে গেল। শ্রাবণ ছবির উপর হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
“বিশ্বাস করো ইচ্ছে করে মারি নি। অনেক রাগ হয়েছিল আজমাইনের কথা শুনে। তুমি তো আমার। তোমার মনে অন্য কেও কেন থাকবে বলো? তোমার মনের ভেতর থাকার অধিকার একমাত্র আমার।”
শ্রাবণ ছবির উপর চুমু দিয়ে আবার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো।
.
.
সাগরিকা কপালে হাত দিয়ে বসে আছে। কাঁদবে? কাঁদলে তো আজমাইন ফিরে আসবে না। নাহলে এতক্ষণে তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতো। সূর্য পেছনে ফিরে সাগরিকার দিকে তাকাল। বোনকে সে বাসা থেকে কিছুটা দূর নিয়ে এসেছে। যাতে কিছুক্ষণ শান্তিতে নিশ্বাস নিতে পারে। বাসায় নিয়ে গেলে শ্রাবণ তাদের খুঁজে বের করতো। সাগরিকা মাথা তুলে সূর্যের দিকে তাকিয়ে বলল,
“এখন কি করবো বুঝতে পারছি না। ফিরে যাবো শ্রাবণের কাছে?”
“ভাইয়ার মৃ*ত্যুর কথা জানার পর পারবে তার সাথে থাকতে?”
“সূর্য আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে আজমাইনের জন্য। কিন্তু শ্রাবণকে ঘৃণা করতে পারছি না। জানিস, ও আমার অনেক যত্ন নেয়। আমার জন্য সব করতে পারে।”
“কিন্তু ভাইয়ার মতো প্রাণ দিতে পারবে না।”
সাগরিকা মাথা নিচু করে ফেলল। চোখের কোণায় অশ্রু জমে চোখ টলমল করছে। চোখের সামনে আজমাইনের চেহারা ভাসছে। কি মধুর সম্পর্ক ছিল তাদের। খুনসুটি ঝগড়া লেগেই থাকতো। সাগরিকা কখনো বলতে পারবে না আজমাইন তাকে কষ্ট দিয়েছিল। এমন একজন মানুষ তার কারণে কত ভয়াবহ মৃ*ত্যু পেলো। আচ্ছা, আজমাইন কিভাবে ম*রেছে? শ্রাবণ কি অনেক কষ্ট দিয়ে মে*রেছে তাকে? সাগরিকা বুক কাঁপছে। সূর্যের দিকে তাকিয়ে বলল,
“সূর্য, তোর কি মনে হয়! শ্রাবণ আজমাইনের লা*শের সাথে কি করেছে?”
সূর্য কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“আমি আন্দাজ করতে পারছি না। ওর কাছ থেকেই জানা যাবে।”
“আমাকে নিয়ে যাবি?”
“কোথায়?”
“আজমাইনের বাসায়”
.
.
ইর্তেজা ফুটপাতে হাঁটছে। সাগরিকাকে খুঁজেছে অনেক জায়গায় কিন্তু পায়নি। হার মেনেছে ইর্তেজা। সে জানে শ্রাবণ কোনো মতো সাগরিকাকে খুঁজে বের করবেই। ইর্তেজা দাঁড়াল। কোথায় ফাঁসলো সে? মাহা আর ইরিনাকে নিয়ে ভয় করছে তার খুব। লম্বা নিশ্বাস ফেলে আবার হাঁটা ধরলো। বাসায় পৌঁছে দেখে দরজা খোলা। ভেতরে ঢুকে চেয়ারে বসে ঝর্ণাকে ডাকলো। সাড়াশব্দ নেই। ইর্তেজা ভ্রু কুঁচকালো। দ্রুত উঠে ইরিনার ঘরে গেল। ঘরে কেও নেই। কিন্তু ইরিনার মোবাইল ভেঙ্গে মাটিতে পড়ে আছে। ইর্তেজা দ্রুত গিয়ে মোবাইল হাতে নিলো। ভয় করছে তার। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আপু বলে ডাকলো। জবাব নেই। মাহাকেও ডাকলো। এখনো কোনো জবাব আসলো না। ইর্তেজা দৌড়ে রান্নাঘরে গেল ঝর্ণাও নেই। দ্রুত ঝর্ণার নাম্বারে কল করলো। সিম বন্ধ বলছে। ইর্তেজা কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। তখনই মোবাইলে কল আসলো। শ্রাবণের নাম্বার ভাসছে স্ক্রিনে। ইর্তেজা রিসিভ করে কানে ধরলো।
“হ্যালো”
“সাগরিকাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না ইর্তেজা।”
“আমিও অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাই নি।”
“আমি জানি না সাগরিকাকে না পেলে আমি কি করবো।”
ইর্তেজা লম্বা নিশ্বাস ফেলে বলল,
“শ্রাবণ আহমেদ, আপনার চিকিৎসার প্রয়োজন তা কি জানেন? আপনি নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মেরেছেন।”
“তোকে কে বলেছিল সাগরিকার সামনে আমাকে খারাপ করতে।”
“উচিত কথা বলেছিলাম আমি। ভুল করেছিলেন আপনি সাগরিকাকে কিছু না বলে।”
“আমার সাথে গেইম খেলছিস তুই?”
ইর্তেজা থতমত খেয়ে গেল। শ্রাবণের মাথা হয়তো খারাপ হয়ে গিয়েছে। তাই তো যা মুখে আসছে বলছে। শ্রাবণ আবার বলল,
“তুই জানিস না ইর্তেজা আমি কি কি করতে পারি।”
ইর্তেজার মাথায় র*ক্ত উঠে গেল। রাগী কন্ঠে বলল,
“এই ফিল্মি ডায়লগ না দিয়ে কি করবি করে দেখা।”
“ওকে ওয়েট”
শ্রাবণ নিজের কান থেকে মোবাইল সরিয়ে ইরিনার কানে ধরলো, “ডাক তোর ভাই কে।”
ইর্তেজা চমকে উঠল এই কথা শুনে। অপর পাশ থেকে ইরিনার কন্ঠ ভেসে আসলো,
“ইর্তেজা, ইর্তেজা কোথায় তুই?”
“আপু তুমি ঠিক আছো তো?”
অপর পাশ থেকে ইরিনার জবাব আসলো না। শ্রাবণ মোবাইল সরাতেই একটা ছেলে ইরিনার মুখে কাপড় বেঁধে দিলো। শ্রাবণ গিয়ে মাহার কানে মোবাইল ধরে বলল,
“তোর বয়ফ্রেন্ডকে বল আমার সাগরিকাকে যেভাবেই হোক নিয়ে আসতে নাহলে এদিকে র*ক্তের বন্যা করে ফেলবো।”
মাহা শ্রাবণের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। শ্রাবণ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“এভাবে কি দেখছিস? থাপ্পড় মেরে সব দাঁত ফেলে দেবো।”
মাহা রাগে গর্জে উঠল,
“কি করবি তুই? তোর মতো গু*ন্ডা আমার আব্বু পকেটে নিয়ে ঘুরতো। এসব হুমকি শুনে আমি ভয় পাই না।”
মাহা মোবাইলের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ইর্তেজা যাই হোক তুমি ওর একটা কথা শুনবে না।”
শ্রাবণ রাগের বশে মাহার গালে সজোরে চড় মেরে দিলো। ইর্তেজা টের পেয়ে চিৎকার করে বলল,
“শ্রাবণ আমার মাহা আর বোনকে ছেড়ে দে।”
শ্রাবণ মোবাইল কানে ধরে বলল,
“তোর মাহাস সাহস কি করে হলো আমাকে চোখ দেখানোর? সাগরিকাকে নিয়ে আয় নাহলে ওর চোখ বের করে ফেলব আমি।”
“তুই আমার বোন আর মাহাকে মাঝে টেনে ভালো করিস নি। এখন আমার থেকে নিজেকে কিভাবে বাঁচাবি ভাবতে থাক।”
ইর্তেজা কল কেটে দৌড়ে গেল।

শ্রাবণ মোবাইলের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলো। মাহার দিকে তাকিয়ে বলল,
“ইর্তেজা বেশ সাহসী। সে ভাবছে আমার সাথে লড়াই তে পারবে সে।”
মাহা অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল শ্রাবণের দিকে। শ্রাবণ ঝুঁকে মাহার চোখে চোখ রেখে বলল,
“ইর্তেজা যেমন তোমার জন্য পাগল আমিও আমার সাগরিকার জন্য পাগল। ইর্তেজার কারণে আমি সাগরিকাকে হারাতে চলেছি। আবার আমার জন্য ইর্তেজা তোমাকে হারাতে চলেছে। দেখি দুই পাগলের মধ্যে কোন পাগলের জিত হয়।”

সময় ঘনিয়ে গেল। এখন সময়টা সন্ধ্যা। শ্রাবণ তার বাসাতেই তাদের তুলে নিয়ে এসেছে। ইরিনা রাগে কটমট করছে। ইর্তেজাকে বলেছিল এসব থেকে দূর থাকতে। কিন্তু ছেলেটা শুনে নি। মাহার দৃষ্টি দরজার দিকে। সে জানে ইর্তেজা আসবে। তার চিন্তা হচ্ছে ইরিনার জন্য। ইরিনা ঔষধ না খেলে অসুস্থ হয়ে পরবে। মাহা শ্রাবণের দিকে তাকাল। ইজি চেয়ারে বসে সিগারেট টানছে। মনে মনে শ্রাবণের চোদ্দগুষ্টিকে গালাগাল করলো মাহা। সে বুঝতে পারছে না ইর্তেজা কেন এই মানুষটার সাথে ছিল এতদিন? মাহা আবার দরজার দিকে তাকাল।

শ্রাবণ ইজি চেয়ারে বসে উপরে থাকা ঝুমুরের দিকে তাকিয়ে আছে। কাঁচের তৈরী ঝুমুর। চারপাশে লাইট লাগানো। লাইট গুলো জ্বালালে পুরো হলরুম আলোয় ভরে যায়। সাগরিকার অনেক পছন্দের এটা। শ্রাবণ মুচকি হাসলো। তখনই একজন বলল,
“বস, ম্যাম এসেছে।”
শ্রাবণ দ্রুত চোখ খুলে দরজার দিকে তাকাল। সাগরিকা দাঁড়িয়ে আছে। শ্রাবণ উঠে দাঁড়াল। চোখে অশ্রু জমে গিয়েছে আনন্দে। তখনই ইর্তেজা আসলো। সাগরিকার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে পকেট থেকে রিভলবার বের করে সাগরিকার মাথার পাশে রেখে শ্রাবণের দিকে তাকাল। শ্রাবণ চমকে উঠল। ইর্তেজা সাগরিকার দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে বলল,
“আমি চাই নি আপনাকে বিসর্জন দিতে। মাফ করে দিয়েন।”
“আমাকে এমনিতেও ফিরতে হতো। শ্রাবণের সাথে আমার অনেক হিসাব এখনো বাকি আছে। এখন চুপ থাকো। শ্রাবণ যাতে না বুঝতে পারে এই রিভলবারে গু*লি নেই।”
ইর্তেজা শ্রাবণের দিকে তাকাল। শ্রাবণ রাগে গজগজ করতে করতে বলল,
“তোর সাহস তো কম না। আমার সাগরিকাকে ব্যবহার করছি তুই।”
“তোর থেকেই তো শিখেছি। তুই আমার বোন আর মাহাকে ব্যবহার করলে আমি সাগরিকাকে কেন ব্যবহার করতে পারবো না?”
“তোর বোন আর মাহার টুকরো টুকরো করে ফেলবো।”
“তাহলে আমিও সাগরিকাকে মে*রে ফেলবো।”
শ্রাবণ হাতমুঠো শক্ত করে ফেলল। ইর্তেজা সাগরিকাকে হাঁটতে বলল। সাগরিকা ধীরপায়ে হেটে গেল। ইর্তেজা সাগরিকার মাথায় রিভলবার ধরে রেখেছে। সাগরিকা দাঁড়িয়ে শ্রাবণকে বলল,
“দেখো তোমার গুনাহের শাস্তি আমি পেতে যাচ্ছি। এখন শান্তি লাগছে তো তোমার।”
শ্রাবণ সাগরিকার কথা শুনে ইর্তেজার দিকে তাকাল। ইর্তেজা বলল,
“আমার বোন আর মাহাকে যেতে দে শ্রাবণ। তাহলে আমিও তোর সাগরিকাকে ছেড়ে দেবো।”
“আগে আমার সাগরিকাকে যেতে দে।”
“তাহলে আগে আমার বোনকে ছাড়।”
শ্রাবণ নিজে গিয়ে মাহা আর ইরিনার হাতের বাঁধন খুলে ফেলল। ইর্তেজাকে বলল,
“দুজনকেই ছেড়ে দিলাম। আমার সাগরিকাকে ফিরিয়ে দে।”
ইর্তেজা মাহাকে ইশারায় বলল ইরিনাকে নিয়ে বের হতে। মাহা মাথা নাড়িয়ে ইরিনার দিকে হেটে আসলো। হুইলচেয়ার ঠেলে ইর্তেজার দিকে এগিয়ে আসলো। সাগরিকা ইর্তেজার দিকে তাকিয়ে বলল,
“যাও তোমরা, আর নিজের কথা রাখবে।”
“কিন্তু, আপনি..”
“আমার যা হওয়ার হবে তুমি যাও।”
ইর্তেজা রিভলবার নিচু করতেই সূর্য পুলিশদের নিয়ে আসলো। শ্রাবণ ও তার লোকেরা চমকে উঠল। শ্রাবণ সাগরিকার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকাল। সাগরিকা শ্রাবণের দিকে তাকাল। পুলিশরা কাছে আসতেই শ্রাবণ সাগরিকার হাত ধরে টেনে পকেট থেকে রিভলভার বের করে সাগরিকার গলায় ধরে দাঁড়াল। সবাই দাঁড়িয়ে পরলো এই দৃশ্য দেখে। সাগরিকার শান্ত দৃষ্টি শ্রাবণের দিকে। সে জানতো এমন কিছুই হবে। শ্রাবণ নিজেকে বাঁচানোর জন্য যে কিছু করতে পারে। শ্রাবণ সাগরিকার দিকে অশ্রু চোখে তাকিয়ে বলল,
“ধোঁকা দিলে তুমি আমায়?”
“এত বছর তুমি আমায় ধোঁকায় রেখেছিলে। অনুভব করতে পারছো আমার কেমন লেগেছে?”
“তোমাকে ভালোবেসে কি আমি ভুল করেছি?”
“কাওকে ভালোবাসা ভুল না। ভালোবাসায় ভোগ না ত্যাগ করা শিখতে হয়।”
“তুমি কখনোই আমার ভালোবাসা বুঝো নি সাগরিকা। আজমাইনকে মুক্ত করতে চেয়েছিলাম। তার আগেই আমার লোক কল দিয়ে বলে প্রচুর ব্লাড লস হওয়ায় আজমাইন ম*রে গিয়েছে। ভয়ে বলি নি। আমি মৃ*ত্যু থেকেও বেশি ভয় পাই তোমার থেকে দূর হওয়া। কিন্তু ম*রতেও ইচ্ছে করে না। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে তোমার থেকে দূর হওয়া। তুমি জানতে চেয়েছিলে আমি তোমার জন্য কি কি করতে পারি, দেখবে?”
সাগরিকা তাকিয়ে রইল শ্রাবণের দিকে। শ্রাবণ উপরে তাকাল। সে ঝুমুরের বরাবর নিচে দাঁড়িয়ে আছে। শ্রাবণের চাহনি দেখে সাগরিকাও তাকাল। ভ্রু কুঁচকালো। সে যা ভাবছে শ্রাবণ কি সত্যি তাই করবে? সাগরিকা “শ্রাবণ” নাম ধরে ডাকতেই শ্রাবণ সাগরিকাকে ধাক্কা দিয়ে দূর ঠেলে ঝুমুরের বরাবর গু*লি করলো। সাগরিকা মাটিতে ছিটকে পরলো। মাহা গিয়ে তাকে ধরলো। ঝুমুরের একটা শিকড় ভেঙ্গে গিয়েছে। একজন পুলিশ শ্রাবণকে থামানোর জন্য হাতে গু*লি করলো। গু*লি শ্রাবণের বাহুতে লাগলো। শ্রাবণ থেমে গেল। পুলিশ দৌড়ে গেল তার শ্রাবণ আবারো ঝুমুরে ২ টো গু*লি করলো। শিকড় ভেঙ্গে ঝুমুর পড়ে গেল শ্রাবণের উপর।

চলবে…….