#এই_মন_তোমারি
#পর্ব_১০
#লেখনীতে_নুজাইফা_নূন
-” শাফায়াত লাইট অফ করে সূরার শাড়ি চেঞ্জ করে তাকে শার্ট পরিয়ে বিছানায় এনে বসিয়ে দেয়।সূরার যেন লজ্জায় মরি মরি অবস্থা হয়ে গিয়েছে।সে ভুলেও শাফায়াতের দিকে তাকিয়ে দেখছে না।যা দেখে শাফায়াত সূরা কে ইজি করতে বললো , দেখো মেয়ে তোমার এতো লজ্জা পাওয়ার মতো আমি কিছুই করি নি।সো এসব লজ্জা পাওয়া বন্ধ করো বলে শাফায়াত সূরার কাছে বসে তার পা নিজের দিকে টেনে এগিয়ে নিয়ে যেতেই সূরা কেঁপে উঠে তোতলাতে তোতলাতে বললো, কি কি করতে চায়ছেন পুলিশ?”
-” তোমাকে আদর করতে।”
-” সত্যিই?”
-” হ্যাঁ।”
-” মিথ্যে বলছেন না তো পুলিশ?আদর করার নামে আবার ঔষধ খাওয়াবেন না তো? আমি কিন্তু আর কোনো ঔষধ খেতে পারবো না। ঔষধ দেখলেই আমার অস্থির লাগে।মাথা ঘোরে, বমি আসে।”
-“তুমি কি এক মিনিট ও চুপচাপ থাকতে পারো না। শরীরের যেকোনো একটা অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমরা অসুস্থ্য হয়ে যায়। আমাদের কথা বলার মতো কোনো মুড থাকে না। কিন্তু তুমি তো দেখছি ননস্টপ বকবক করেই যাচ্ছো। এক্সিডেন্ট এর কোনো ইফেক্ট তোমার উপর পড়ে নি। আর একটা কথা ও না বলে চুপচাপ থাকো।আর দেখো আমি কি করি?”
-” চুমু দিবি?”
-” শুধু চুমু না গা’ধা আরো অনেক কিছু দিবো বলে শাফায়াত সূরার দিকে এগিয়ে যেতেই সূরা আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়। তৎক্ষণাৎ শাফায়াত সূরার পা টেনে নিয়ে ক্ষতস্থানে মলম লাগিয়ে দেয়। ক্ষতস্থানে জ্বলে উঠতেই সূরা চিৎকার করে বলে , আমি জানতাম আপনি এমনই কিছু করবেন। পুলিশের কাজ ই হচ্ছে শুধু মিথ্যা কথা বলা। মানুষ কে বোকা বানানো।”
-“শাফায়াত সূরার হাতে মলম লাগাতে লাগাতে বললো, আর কোথায় আঘাত পেয়েছো দেখি?”
-” সূরা ইতস্তত বোধ করে বললো, আর কোথাও না।”
-” আমি জানি তুমি মিথ্যা বলছো।শাকিল বলেছিলো তুমি গুরুতরভাবে আহত হয়েছিলে।
-” ঐ রাস্তায় পড়ে যাওয়ার পিঠে একটু ছুঁলে গেছে। কিন্তু কোনো সমস্যা নাই। এরকম আঘাতে আমি অভ্যস্ত আছি।বাপ মা ছাড়া চাচির সংসারে বড় হয়েছি তো। আঘাত আমার নিত্যদিনের সঙ্গী ছিলো। জানেন সুন্দর ব্যাডা মানুষ চাচি আমাকে খুব মা’র’তো। একবার হাত থেকে পড়ে এক টা কাঁচের গ্লাস ভেঙ্গে গিছিলো।তার জন্য চাচি খুন্তি গরম করে ছ্যাঁকা দিছিলো। ব্যাথায় ছটফট করছিলাম আমি। কিন্তু চাচির মন গলে নি।”
-“আমি তো আর তোমাকে মা’র’ছি না। ঠিক মতো মেডিসিন নাও দেখবে তাড়াতাড়ি সুস্থ্য হয়ে যাবে।সব ক্ষত শুকিয়ে যাবে।”
-“শরীরের আঘাত না হয় ঔষধ দিয়ে সারিয়ে দিবেন। কিন্তু মনের আঘাত কি কখনো সারিয়ে তুলতে পারবেন ?জানি কখনো পারবেন না সুন্দর ব্যাডা মানুষ। আপনি তো আমার মতো গাইয়া অশিক্ষিত মেয়েকে কখনো নিজের বউ বলে মানতে পারবেন না। তাহলে কেন এতো সেবা যত্ন করছেন?”
-” কথাটা শাফায়াতের কানে বারবার বাজতে লাগলো। সত্যিই তো সে কি আদৌ পারবে সূরা কে নিজের স্ত্রীর মর্যাদা দিতে? সূরা কে নিজের মনের উঠোনে জায়গা দিতে? তাকে ভালোবেসে কাছে টেনে নিতে?না এটা সে কখনোই পারবে না। এমন একটা অশিক্ষিত গাইয়া মেয়েকে কখনো নিজের স্ত্রীর বলে স্বীকার করতে পারবে না সে।নেহাত সে তার আম্মি কে অনেক বেশি ভালোবেসে তার অসুস্থতার কথা চিন্তা করে মেয়েটার সেবা যত্ন করছে । ব্যাস আর কিছুই না।”
-” শাফায়াতের থেকে কোনো রেসপন্স না পেয়ে সূরা বললো, কিছু বলছেন না কেন পুলিশ?আমাকে একটু ভালোবাসলে আপনার কি এমন ক্ষতি হবে? আমি গাইয়া অশিক্ষিত এটাই তো আপনার সমস্যা তাই না? আমি যদি মেলা শিক্ষিত হয় টিভির নায়িকাদের মতো ছোট ছোট জামা পরি তখন কি আমাকে তুই ভালোবাসবি পুলিশ?”
-” সূরার কথায় শাফায়াতের মনে হলো সূরা যেন হুট করে বুঝদার হয়ে গিয়েছে, কেমন যেনো বড়দের মতো কথা বলছে। শাফায়াত কথা ঘুরিয়ে ধমকের সুরে বললো, তুমি ছোট মানুষ ছোট মানুষের মতো থাকবে। ভালোবাসার কি বোঝ তুমি হ্যাঁ? তোমার এখন পড়াশোনা করার বয়স,এসব প্রেম ভালোবাসা নয়।”
-“শাফায়াতের কথা শুনে সূরা মনে মনে বললো আমি একদিন ঠিক তোর যোগ্য হয়ে উঠবো সুন্দর ব্যাডা মানুষ।আর সেদিন তুই যেমন আমাকে পাত্তা দিস না আমি ও তেমনি তোকে পাত্তা দিবো না বলে সূরা বিছানায় শুয়ে পড়লো।যা দেখে শাফায়াত তাকে টেনে তুলে বললো, তোমার সমস্যা কি হ্যাঁ?বলছি না তোমার ক্ষত স্থানে মলম লাগাতে হবে। এতো জ্বালাচ্ছো কেন আমাকে তুমি?”
-‘ সূরা প্রতিত্তরে কিছু না বলে চুপচাপ বিছানায় শুয়ে ঘুমের ভান ধরে পড়ে থাকলো।এক পর্যায়ে শাফায়াত বিরক্ত হয়ে নিজেও বিছানায় গিয়ে সূরার থেকে দূরুত্ব বজায় রেখে শুয়ে পড়লো।”
___________________________________
-” মাঝরাতে প্রকৃতির ডাকে ঘুম ভেঙ্গে যায় সূরার।সূরার ঘুম ভাঙ্গতে বুঝতে পারে সে শাফায়াতের বুকের উপর শুয়ে আছে।আর শাফায়াত তাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। ব্যাপার টা বেশ ভালো লাগে সূরার।তার ইচ্ছে করে শাফায়াতের বুকে মাথা রেখে শুয়ে থাকতে। এদিকে তার পেটে গন্ডগোল শুরু হয়ে গিয়েছে।তাকে ইমার্জেন্সি ওয়াশরুমে যেতে হবে। কিন্তু তার পায়ের ব্যাথায় হাঁটার শক্তি টুকু নেই তার।সূরা একবার ভাবে শাফায়াত কে ডাকবে। কিন্তু শাফায়াতের ঘুমন্ত চেহারা দেখে সূরার মায়া হয়। তার ইচ্ছা হয় না শাফায়াতের ঘুম নষ্ট করতে। সূরা কিছুক্ষণ শাফায়াতের ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে তার খোঁচা খোঁচা দাড়ি তে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, ইশ্ আমার বর টা কতো সুন্দর। একদম যেন হোটেলে কাঁচের মধ্যে রেখে দেওয়া কালো কালো মিষ্টি। হোটেলে কাঁচের মধ্যে রাখা কালো মিষ্টি গুলোর প্রতি লোভ থাকলেও যেমন সেই মিষ্টি ছুঁয়ে দেখার সাধ্য আমার ছিলো না। ঠিক তেমনি আপনার প্রতি লোভ থাকার পর আপনাকে আমার ছুঁয়ে দেওয়ার সাধ্য নেই সুন্দর ব্যাডা মানুষ। পরক্ষণেই সূরা কিছু একটা ভেবে বললো, আপনি আমাকে মানুন বা না মানুন পবিত্র কালেমা পড়ে আমাদের বিয়ে হয়েছে।আর বাঙ্গালী মেয়েদের একবার ই বিয়ে হয়। আপনার প্রতি অধিকার আছে আমার। হোক না সেটা সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে বলে সূরা শাফায়াতের কপালে চুমু দিয়ে আস্তে আস্তে বিছানা থেকে নেমে গেল। সূরা বিছানা থেকে নেমে কোনোমতে খোঁড়া তে খোঁড়া তে দুই তিন কদম এগিয়ে পায়ের ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠে নিচে বসে পড়ে।নিজেকে বড্ড অসহায় লাগে সূরার।”
চলবে ইনশাআল্লাহ।