এই মন তোমারি পর্ব-০৯

0
176

#এই_মন_তোমারি

#পর্ব_৯

#লেখনীতে_নুজাইফা_নূন

-” শাফায়াত সূরা কে কোলে করে নিয়ে বেরিয়ে আসার পর নাজমা দেওয়ান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে। তিনি এতোক্ষণ ইচ্ছে করে ওয়াশরুমে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলো শাফায়াত কি করে। তিনি চেয়েছিলেন আজ‌ই সূরা কে নিয়ে তার বোনের বাসায় চলে যাবেন। কিন্তু শাফায়াতের সূরার প্রতি কেয়ার দেখে তিনি তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করছেন। হসপিটালে শাফায়াত যখন সূরা কে জড়িয়ে ধরে ছিলো সেটা দেখে নাজমা দেওয়ান এর চোখ খুশিতে ছলছল করে উঠেছিলো। তিনি তখনি সিদ্ধান্ত নেন সূরাকে শাফায়াতের চোখের সামনে, তার কাছাকাছি রাখবেন।তাই তো তিনি ইচ্ছে করে সূরা কে রাতের খাবার মেডিসিন কিছুই দেয় নি। তিনি চান শাফায়াত নিজে সূরার কেয়ার করুক। সূরা কে একটু একটু করে নিজের মনে জায়গা দিক।তাকে ভালোবেসে কাছে টেনে নিক। শাফায়াত কে সূরা কে নিয়ে বের হয়ে যেতে দেখে তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো, ভাগ্যিস মাজেদা কে বুদ্ধি করে গ্ৰামে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।এবার আমি ও দেখবো দুজনের মধ্যে ভালোবাসা বাসি না হয়ে কোথায় যায়? একসাথে থাকতে থাকতে শাফির ঠিক সূরার প্রতি ভালোবাসা জন্ম নিবে।আর সেই দিন টা হবে আমার আনন্দের দিন।’

___________________________________
-” সূরার ঘুমের মধ্যে মনে হলো সে যেন শূন্যে ভাসছে।সে ঘুমের মধ্যেই চিৎকার করে বললো, ভূত ভাই ভূত ভাই দয়া করে আমার র’ক্ত খাস না।আমার পুলিশ বরের গাঁয়ে অনেক গোশত অনেক র’ক্ত আছে। আমার গাঁয়ে তো হাড্ডি ছাড়া কিছুই পাবি না। রাস্তার কু’কু’র ও আমার দিকে তাকিয়ে ভাবে সে আমার গোশত খাবে নাকি তার গোশত আমাকে দান করবে। তুই আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার পুলিশ বর কে ধর।”

-” সূরার কথায় শাফায়াত বিরক্ত হয়ে ধমক দিয়ে বললো, তুমি যদি তোমার ননস্টপ বকবক বন্ধ না করো আমি কিন্তু তোমাকে নিচে ফেলে দিয়ে বাকি যে হাতটা আছে সেটাও ভেঙ্গে দিবো। তারপর তুমি ও ভূতের দলে যোগ দিবে।”

-” শাফায়াতের ধমক খেয়ে সূরার ঘুম উবে যায়।সে তৎক্ষণাৎ এক হাত দিয়ে শাফায়াতের গলা জড়িয়ে ধরে বললো , আমাকে নিচে ফেলবেন না সুন্দর ব্যাডা মানুষ।আমার ভূত হ‌ওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই। আমি আপনাকে ছেড়ে ভূতের কাছে যাবো না।প্রতিত্তরে শাফায়াত সূরা কে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বললো, এইখানে চুপচাপ বসে থাকবে।আমি ফ্রেশ হয়ে এসে তোমাকে খাইয়ে দিবো।”

-” আমি এই তুলতুলে বিছানায় বসবো না পুলিশ।আমি ঠাস করে নিচে চলে যাবো তো।”

-” শাফায়াত প্রতিত্তরে কিছু না বলে কটমটে চোখে সূরা দিকে তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।যা দেখে সূরা ভয়ে একদম চুপসে গিয়ে বললো, যা বাব্বা আমি আবার কি করলাম? এ দেখি হা’গু দিলেও দোষ,পা’দু দিলেও দোষ।সূরার ভাবনার মাঝে হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ পেয়ে সূরা পাশ ফিরে তাকাতেই দেখলো শাফায়াত শুধু মাত্র ট্রাওজার পরা অবস্থায় রয়েছে।হয়তো শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে ।তার গা বেয়ে বিন্দু বিন্দু মুক্তোর মতো পানি পড়ছে। যা দেখতে বড্ড ভালো লাগছে সূরার। ইচ্ছে হচ্ছে একবার ছুঁয়ে দেওয়ার। শাফায়াত সূরা কে নির্লজ্জের মতো তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো,

-” হোয়াট দ্যা হেল আর ইউ ? এইভাবে নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে রয়েছো কেন?জীবনে কখনো ছেলে দেখো নি? নাকি ভাবছো আজ রাতে আবার কোন জায়গার গোশত ছিঁড়ে খাবা?”

-” আপনি এতো সুন্দর ক্যান পুলিশ? আপনি সুন্দর বলেই কি আমাকে ভালোবাসেন না? ঐ বুড়ো চেয়ারম্যান আমার বর হলে ঠিকই আমাকে ভালোবাসতো।”

-” বে’য়া’দ’ব অ’স’ভ্য মেয়ে একটা । ভালোবাসার কি বোঝো তুমি হ্যাঁ? যার নাক টিপলে এখনো দুধ বের হবে।তার মুখে সবসময় ভালোবাসার কথা। আর একবার যদি তোমার মুখে ভালোবাসার কথা শুনেছি তোমার মুখ আমি ভেঙ্গে দিবো।”

-” শাফায়াতের ধমক খেয়ে সূরা বিছানায় গাল ফুলিয়ে বসে রয়েছে । শাফায়াত নাজমা দেওয়ান এর রুমে এসে সূরার খাবার আর মেডিসিন নিয়ে এসে নিজে হাতে ভাত মেখে সূরা কে খাইয়ে দেয়। সূরা ও তৃপ্তি সহকারে সম্পূর্ণ খাবার শেষ করে। কিন্তু বিপত্তি বাধে ঔষধ খাওয়া নিয়ে। সূরা কিছুতেই ঔষধ খাবে না।এক পর্যায়ে শাফায়াত সূরা কে জোর করে ঔষধ খাইয়ে দেয়।যার ফলস্বরূপ সূরা গলগল করে বমি করে নিজের শাড়ি ভিজিয়ে দিয়ে শাফায়াতের ভয়ে কান্না করে দেয়।
সূরার কান্না দেখে শাফায়াতের রাগ নিমিষেই পানি হয়ে যায়।সে সূরার দিকে এগিয়ে গিয়ে সূরার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো, আমি কি তোমাকে মে’রে’ছি? নাকি বকা দিয়েছি? তুমি ঠিক কি করতে চায়ছো বলো তো? এমনিতেই একটা কেস নিয়ে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। থানা থেকে ফিরে এসে যে একটু শান্তি করবো তার ও উপায় নেই। তুমি কি বাচ্চা মেয়ে যে জোর করে তোমাকে ঔষধ খাওয়াতে হবে?”

-” আমি ঔষধ খেতে পারি না পুলিশ।”

-” সেটা পারবে কেন? পারবে তো শুধু আমার মাথা খেতে। আমার মাথা খেয়েই তো তোমার শান্তি মেলে। যেটুকু খাবার খেলে সেটা তো দিলে বমি করে উঠিয়ে।শাড়ি টাও নোংরা করে দিলে । আমি অনলাইনে তোমার ড্রেস অর্ডার করেছি। ড্রেস সকালে দিয়ে যাবে ‌। কিন্তু এখন কি পরবে তুমি? ”

-” আপনি আমাকে একটু ধরে ওশার রুমে নিয়ে চলুন। আমি ধুয়ে পরিষ্কার করে নিবো।”

-” ডাফার একটা। ধুয়ে পরিস্কার করে ভেজা কাপড়ে থাকবে তুমি?”

-” শাফায়াতের কথায় সূরা কিছু না বলে চোখের পানি ফেলতে লাগলো।”

-“সূরার থেকে কোনো রেসপন্স না পেয়ে শাফায়াত সূরা কে নিয়ে ওয়াশরুমে রেখে কাবার্ড থেকে নিজের একটা শার্ট নিয়ে সূরা কে বললো, আপাতত আমার এই শার্ট ছাড়া তোমাকে পরতে দেওয়ার মতো আর কিছু নেই। এখনকার মতো এই শার্ট পরো। সকালে তোমার ড্রেস চলে আসবে।”

-” সূরা অসহায় কণ্ঠে বললো, আমি কিভাবে পরবো? আপনি মা না হয় নুজাইফা কে একটু ডেকে দিন।”

-” এখন কটা বাজে জানো? বারো টা।এতো রাতে তোমাকে সাহায্য করার জন্য কি সবাই জেগে বসে রয়েছে?”

-” তাহলে?”

-” তাহলে আবার কি ? শাড়ি খোলো তাড়াতাড়ি । বিশ্রী গন্ধ আসছে।”

-” আপনার সামনে খুলতে পারবো না। আপনি বাইরে যান।”

-” আমার মাথা ব্যথা করছে মেয়ে। তোমার এতো রং তামাশা দেখার সময় নেই বলে শাফায়াত সূরার শাড়ির আঁচলে হাত দিতেই সূরা চিৎকার করে উঠলো।যা দেখে শাফায়াত সূরার মুখ চেপে ধরে বললো, গাধা এতো রাতে চিৎকার করে মানুষ জড়ো করতে চায়ছো তুমি?সবাই কি ভাববে সেই বিষয়ে কোনো আইডিয়া আছে তোমার? ঠিক আছে আমি লাইট অফ করে দিচ্ছি। তাহলে নিশ্চয় তোমার সমস্যা হবে না?”

-” ঠিক আছে।”

-” শাফায়াত লাইট অফ করে সূরার শাড়ি চেঞ্জ করে তাকে শার্ট পরিয়ে বিছানায় এনে বসিয়ে দেয়।সূরার যেন লজ্জায় মরি মরি অবস্থা হয়ে গিয়েছে।সে ভুলে ও শাফায়াতের দিকে তাকিয়ে দেখছে না।যা দেখে শাফায়াত সূরা কে ইজি করতে বললো, দেখো মেয়ে তোমার এতো লজ্জা পাওয়ার মতো আমি কিছুই করি নি।সো এসব লজ্জা পাওয়া বন্ধ করো বলে শাফায়াত সূরার কাছে বসে তার পা নিজের দিকে টেনে এগিয়ে নিয়ে যেতেই সূরা কেঁপে উঠে তোতলাতে তোতলাতে বললো , কি কি করতে চায়ছেন পুলিশ?”

-” তোমাকে আদর করতে।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।