কথা দিলাম পর্ব-০২

0
4406

#কথা_দিলাম?
#পর্ব:২
#নিশাত আহমেদ
.
.
-আরহান,তুমি আবার ড্রিংক করে এসেছ?তোমাকে আমি কতবার বলেছি যে ড্রিংক করে আমার বাড়িতে আসবে না তুমি।
-(মাতাল কণ্ঠে)আমার মতো ছেলে ড্রিংক করবে না কীভাবে হয় বলো।

কথা বলতে বলতে সিয়ার গায়ের উপর ঢলে পরে আরহান।সিয়া কোনোমতে আরহানকে সামলে সোজা করে।

-তোমার মুখ থেকে গন্ধ আসছে আরহান।গা গুলাচ্ছে আমার।
-তুমি শুধু সেটাই দেখলে।আর আমার চোখে যে তোমার জন্য ভালোবাসা উতলাচ্ছে সেটা দেখলে না?
-আরহান,তুমি জানো যে আমি ড্রিংক করা পছন্দ করি না।

সিয়ার কথা শুনে আরহান এমনভাবে হাসা শুরু করে যেন সিয়া কোনো অবাস্তব হাস্যকর কথা বলেছে।

-হাসার মতো কিছু বলিনি আমি,আরহান।
-তুমি ড্রিংক করা পছন্দ করো না?আরে তোমাকে দেখলেই তো আমার নেশা ধরে যায়।রেড ওয়াইনেও এতো নেশা থাকে না।আই লাভ ইউ,বেবি।আই লাভ ইউ সো মাচ।

কথাটা বলেই সিয়ার গায়ে ঢলে পরে আরহান।এবার একেবারে অজ্ঞান।সিয়া অতিকষ্টে আরহানকে নিয়ে রুমে গিয়ে শুয়িয়ে দেয়।বেহুশ হয়ে ঘুমোচ্ছে আরহান।আর মাঝে মাঝে মুখ থেকে অস্ফুটস্বরে বের হচ্ছে,”আই লাভ ইউ,সিয়া।” সিয়ার চোখ ভরে আসে।এতই যখন ভালোবাসে তাহলে এত নোংরামো কেন করে ও?ওর ফিজিক্যাল নিড এতটাই বেশি যে বিয়ের এই একটা মাস আর অপেক্ষা করতে পারছে না?একটা বালিশ নিয়ে সোফায় শুয়ে পরে সিয়া।
.

.
ড্রইংরুমে সবাই বসে আছে।গম্ভীর মুখে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামলো আয়ান।আয়ানকে গম্ভীর দেখে মীরা কিছুটা চিন্তিত হলো।

-কিরে ভাই,কী হয়েছে।
-আপু,তিয়া ফোন করেছিল।আগামী মাসের ৭ তারিখে এংগেজমেন্টের দিন ঠিক করেছে ওর বাবা।প্রস্তুতি শুরু করো।
-সেকি!৭ তারিখ মানে তো অনেক কম সময়।তাহলে তিয়াকে বলে দিস পরশু শপিং-এ যাবো।আর ওর আঙুলের মাপও তো লাগবে।
-আমি কিছু বলতে পারবো না।যা বলার তুমি বলে দিও।আমার ঘুম পাচ্ছে।গুড নাইট।
-ভাই,শোন…

মীরার কথা শেষ হওয়ার আগেই উপরে চলে যায় আয়ান।ছেলেটার এত অ্যাটিটিউড কেন কে জানে।

-আম্মু,তোমার ছেলের এই লা পরোয়া ভাবটা কিন্তু আমার একদম ভালো লাগে না।
-ছেড়ে দে।জিনিসই তো ও ওরকমই।অনেক রাত হয়েছে।ঘুমোতে যা।
-হুম।

মুখে রাগের ছাপ নিয়ে রুমে চলে যায় মীরা।ভাইটার যে কী সমস্যা কে জানে?
.

.
ফজরের আযান শুনে ঘুম ভাঙে সিয়ার।প্রথমেই চোখ যায় বিছানার দিকে।আরহান উপুর হয়ে ঘুমোচ্ছে।সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ওয়াশরুমে চলে যায়।নামাজ পড়ে নিচে নেমে আসে সিয়া।বাড়ির সবাই উঠে গেছে।এক কাপ কফি বানিয়ে আরহানের কাছে আসে সিয়া।কিছুক্ষণ ঝাঁকিয়ে ঘুম থেকে তোলে ওকে।আরহানের মাথা ভার হয়ে আছে।সেটাই অবশ্য স্বাভাবিক।

-আরহান,কফিটা খেয়ে নাও।ভালো লাগবে।
-হুম।শুধু কফি খাওয়াও।
-আর কি খাবে বলো আমি এনে দিচ্ছি।
-যেটা খাবো সেটা আনা লাগবে না তোমার কাছেই আছে।

সিয়া খুব ভালোমতো বুঝে গেছে যে আরহানের নেশা এখনো পুরোপুরি কাটেনি।তাই একটু ভেবেচিন্তে এবং সাবধানে কথা বলতে হবে।

-আচ্ছা বেশ।এখন কফি খাও।বিয়ের পর তুমি যা চাও তাই পাবে।
-তাহলে এখন নিচে চলো।
-কেন?
-দরকার আছে তাই।

সিয়ার কিছু বলার আগেই ওর হাত ধরে নিচে টেনে নিয়ে যায় আরহান।

-বাবা,মা।

আরহানের চিৎকারে রান্নাঘর থেকে ছুটে আসেন সুরাইয়া বেগম।

-কী হয়েছে,বাবা?এত সকালে ডাকছ যে?
-মা,একটা কথা আপনাদেরকে জানানোর ছিল।আগামী ৭ তারিখ আমার আর সিয়ার এংগেজমেন্টের দিন ঠিক হয়েছে।কাল আমি সিয়াকে নিয়ে শপিং এ যাবো।
-৭ তারিখ?বেশি তাড়াহুড়ো হয়ে গেলো না?
-আমি তো পারলে আরো আগায়ে দিতাম।কিন্তু ফাইনাল ডেট ৭ তারিখ।
-আচ্ছা।তাহলে আমি নুসরাতকে বলে রাখবো সিয়ার সাথে চলে যাবে কাল।

আরহানের কথা শুনে সিয়ার ভেতরটা দমে গেলো।কেন যে আরহানের সাথে বিয়েতে খুশি হতে পারছে না ও।আরহান সিয়ার দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে উপরে চলে গেলো।পরেরদিন সকাল সকাল নুসরাত আর আরহানকে নিয়ে শপিং এ যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয় সিয়া।বিভিন্ন দোকানে ঘুরতে ঘুরতে দোতলার মাঝখানটায় এসে থেমে যায় সিয়া।ওর ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে আছে আয়ান।এতদিন পর আয়ানকে হঠাৎ দেখে অপ্রস্তুত হয়ে যায় ও।

চলবে…

(ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন দয়া করে)