কথা দিলাম পর্ব-০১

0
5563

?কথা_দিলাম
-পর্ব:১
-নিশাত আহমেদ

নিজের হবু স্বামীর বিছানায় অন্য একটা মেয়েকে চাদরে মুরানো অবস্থায় দেখছে সিয়া।মেয়েটা বেঘোরে ঘুমোচ্ছে।এই দৃশ্য দেখে যেকোনো মেয়ের হৃদয় ভাঙার কথা কিন্তু সিয়ার কাছে এটা খুবই স্বাভাবিক।ধীর পায়ে ভেতরে ঢোকে সিয়া।বিছানায় শুয়ে থাকা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে নিজের সাথে তুলনা করছে।কিছুক্ষণ পরই ওয়াশরুম থেকে আরহান বেরিয়ে আসে কোমরে তোয়ালে পেঁচিয়ে।শাওয়ার নিয়ে বের হলো।চুলগুলো এখনো ভেজা।পানি গড়িয়ে পরছে।সিয়াকে দেখে বাকা হাসে আরহান।

-বেবি,তুমি চলে এসেছ?

আরহানের গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় সিয়া।আরহানের মুখ থেকে হাসি এখনো সরেনি।তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে সিয়ার দিকে তাকায় ও।

-আর কত মেয়ের জীবন নষ্ট করবে আরহান?আর কত মেয়ের জীবন নিয়ে খেলবে?
-তুমি আমাকে এসব কথা বলছ কেন?তুমি কি ভুলে গেছ আমার মতো ছেলেদের স্বভাবই হচ্ছে মেয়েদের জীবন নিয়ে খেলা।এই জন্যেই তো আমাদের বলা হয় প্লে বয়।তবুও তোমাকে ভালোবাসি তাই বিয়ে করবো।
-ভালোবাসো?আমাকে?তোমার মতো ছেলেদের মুখে এই শব্দটাই মানায় না আরহান।তোমার মতো ছেলেদের জন্য আজ ভালোবাসাও কলঙ্কিত।
-আহ্।রেগে গেলে তোমাকে যা লাগে না।মনে হয় এক্ষুনি…

সিয়ার কাছে এসে সিয়ার গালে হাত ছোঁয়ায় আরহান।সিয়া ছিটকে আরহানের হাত সরিয়ে দেয়।

-ছোঁবেনা তুমি আমায়।তোমার ছোঁয়ায় ঘৃণা হয় আমার।
-তাহলে কীভাবে হবে?বিয়ের পরে তো তোমার সারাশরীরে শুধু আমার ছোঁয়াই থাকবে।
-ছি!কতটা নোংরা মানসিকতা তোমার?নিরুপায় নাহলে আমার জীবনে তুমি থাকতে না।কিন্তু আমি বিয়ে তোমাকেই করবো।শুধু ঐ একজনের জন্য।

দ্রুত পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় সিয়া।গাড়িতে উঠে চোখ মুছে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।তারপর ড্রাইভ শুরু করে বাড়ির পথে।
.

.

এক কাপ কফি আর সিগারেট নিয়ে বারান্দায় এসে বসে আয়ান।কফির মগটা টেবিলের উপর রেখে সিগারেটটা ধরায়।আকাশ মেঘ করেছে।বৃষ্টি নামবে নিশ্চিত।একমনে ভাবছে আয়ান,এরকম একটা দিনেই ওর জীবনে এসেছিল মেয়েটা।বৃষ্টির পানিতে ভিজছিল মনের আনন্দে।কিন্তু আজ আর ওর জীবনে নেই মেয়েটা।সে আজ অন্য কারো হাত ধরে চলে,অন্য কারো বুকে মাথা রেখে ঘুমায়।আয়ানের ভাবনার মাঝেই।ফোনের স্ক্রিনে টুপ করে একটা মেসেজ নোটিফিকেশন আসে।মেসেজটা পড়ার আগে সেন্ডারের নামটা দেখে নেয়।মেসেজ ওপেন করার আর ইচ্ছা থাকলো না।ফোনটা রেখে সিগারেট টানতে শুরু করে আয়ান।এদিকে মেসেজের রিপ্লাই না পেয়ে সরাসরি কল করে বসে বার্তা প্রেরণকারী।আয়ানের সেদিকে খেয়াল নেই।আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ও।পাঁচবার ফোন কেটে যাওয়ার পর ষষ্ঠবার ফোন রিসিভ করে আয়ান।অপরপাশ থেকে একটা মিষ্টি কণ্ঠ ভেসে আসে,

-কখন থেকে ফোন করছি।ফোন ধরছিলে না কেন?আর মেসেজও তো সিন করোনি।এইবার ফোন না ধরলে সরাসরি তোমার এপার্টমেন্টে গিয়ে হাজির হতাম।
-তাই নাকি?ভাগ্যিস ফোনটা তুলেছিলাম।
-এত বিরক্ত আমার উপর?
-বিরক্ত না।তোমার উপর বিরক্ত হতে যাবো কেন?কী বলবে বলো।
-আগামী মাসে আমাদের এংগেজমেন্টের দিন ঠিক করেছে বাবা।প্রস্তুতি শুরু করে দিও।
-হুম..আর কিছু?
-আয়ান,তোমার মধ্যে কোনো এক্সাইটমেন্টই নেই।
-এতে এক্সাইটমেন্টের কিছু নেই।আমি বাড়িতে বলে দেবো।আর কিছু বলার থাকলে বলো না হলে রাখি।
-বুঝেছি।এখন তোমার সাথে কথা বলা মানে মাথা বিগড়ানো।তোমার এই ডোন্ট কেয়ার ভাবটা আর গেলো না।বাই।

বিরক্ত হয়ে ফোন কেটে দেয় অপরপাশের মিষ্টিকণ্ঠী।আয়ান হেসে ফোনটা টেবিলের উপর রেখে আবার সিগারেটটা হাতে নেয়।ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে।খানিক্ষণ বাদেই ঝমঝম করে নামে তুমুল বৃষ্টি।বৃষ্টি সহ্য হয় না আয়ানের।এমন একটা বৃষ্টির দিনই ওর জীবনে এসেছিল হাজারটা স্বপ্ন নিয়ে।কিন্তু কোনোটাই পূরণ করেনি।সবই ভাসিয়ে দিয়ে চলে গেছে।কফির মগটা নিয়ে রুমে চলে যায় আয়ান।
.

.

বাড়িতে ঢুকে কারোর সাথে কথা না বলে রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয় সিয়া।অঝোরে কাঁদতে থাকে টেবিলে মুখ গুজে।নিজের জীবনটাকে এখন অভিশপ্ত লাগছে ওর।একটা মানুষ এসে ওর জীবনটা তছনছ করে দিয়ে গেলো।আরহান চরিত্রহীন,অভদ্র হলেও সিয়াকে ভালোবাসে।কিন্তু ওর এই অপবিত্র ভালোবাসাটা সহ্য হচ্ছে না সিয়ার।যখন একজন মানুষ মনে জায়গা করে নেয় তখন অন্য কাউকে সেই জায়গাটা দেওয়া অসাধ্য।তবুও সিয়া দিয়েছে।একজনকে ভুলে গিয়ে আরহানকে নিজের জীবনে জায়গা দিয়েছে।কিন্তু ও যে প্রথম ভালোবাসা ছিল।কীভাবে ভুলবে ওকে?প্রত্যেকটা দিন সিয়াকে আরহানের অশ্লীলতা সহ্য করতে হয়।ওর প্রতিটা কাজ,প্রতিটা কথা অশ্লীল লাগে সিয়ার কাছে।তবুও লোকটা সিয়ার হবু স্বামী।এই ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দেয় সিয়া।

রাতে খাওয়া শেষে ঘুমোতে যাবে এমন সময় দরজায় নক করার আওয়াজ পায় সিয়া।ও জানে কে এসেছে আর কি অবস্থায় এসেছে।দরজা খোলে সিয়া।নেশা ভরা চোখে সিয়ার দিকে তাকিয়ে বাকা হাসছে আরহান।

চলবে…