গল্প ঃ ক্ষ্যাত_ ছেলে
পর্ব ঃ_ ৫
লেখক ঃ অভ্র নীল
সকালে উঠলাম। মাথাটা কেমন জানি ঝিম ধরে আছে। বিছানা থেকে উঠতে মন চাচ্ছে না। তারপরেও মন শরীরের সাথে একপ্রকার যুদ্ধ করে উঠলাম। উঠে ফ্রেশ হয়ে। রান্না করতে লাগলাম।
রান্না করছি। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো… আমি রিসিভ করলাম। ওই পাশ থেকে সানজিদা বলল–
সানজিদা– Gd morning! 🤗
অভ্র– Gd morning! কিছু বলবা?
সানজিদা– নাহ! কেন তুমি ব্যস্ত না কী?
অভ্র– আসলে আমি রান্না করছি!
সানজিদা– আচ্ছা তুমি রান্না করো। আর সঠিক টাইমে ভাসিটিতে চলে এসো কিন্তু!
অভ্র– আচ্ছা!
এটা বলে আমি ফোনটা রেখে দিলাম।
রান্না শেষ করে। গোসল করে, খাবার দাবার খেয়ে যথা সময়ে ভাসিটিতে চলে আসলাম। ভাসিটিতে ঢুকতেই লিজার ডাক–
লিজা– এই অভ্র শোন! এইদিকে আই।
আমি সেইদিকে গেলাম। সেখানে সানজিদা ও ছিল। আমি বললাম–
অভ্র– হুম কিছু বলবা?
লিজা– বাহ তোমাকে ত এই ড্রেসে ভালোই মানাইছে।
অভ্র– ধন্যবাদ!
সানজিদা আমার দিকে কেমন যেন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তখন আমি বললাম–
অভ্র– কী হলো? তুমি এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
সানজিদা তখন হকচকিয়ে বলল–
সানজিদা– নাহ কিছু না!
এরপর আমি তাদের সাথে আড্ডা দিতে লাগলাম। সত্যিই সানজিদা আর লিজা খুব ভালো মনের মেয়ে। তাদের বাবার এত টাকা থাকতেও তাদের মধ্যে কোনো অহংকার নেই। আমি কখনো ভাবিই নি, আমার কোনো বন্ধু হবে। কিন্তু এই দুইজন যে আমাকে বন্ধু হিসিবে গ্রহণ করবে আমি সেটা হয়তো স্বপ্নেও ভাবি নি।
যাইহোক,, আমরা আড্ডা শেষ করে ক্লাসে চলে আসলাম। একটা কথা বলে রাখি, আমার মাথা কিন্তু এখনো ঝিম ধরে আছে।
ভাসিটি শেষ করে আমি বাসায় চলে আসি। বাসায় এসে কিছু ভালো লাগছিল না। তাই খাবার না খেয়েই শুয়ে পড়লাম। জান্নাত ও বাসায় নাই, খেলতে গেছে। খুব শীত লাগছে। মনে হয় গায়ে জ্বর আসছে। তাই গায়ে একটা কাঁথা দিয়ে শুয়ে পড়লাম।
বিকেল,, ৫ঃ৩০ বাজে, আমি এখনো ঘুমিয়ে আছি। হঠাৎ করে ফোনটা বেজে উঠল। আমি নাম্বার না দেখেই রিসিভ করলাম–
অভ্র– আসসালামু আলাইকুম!
সানজিদা– ওয়ালাইকুমুস সালাম। এই তুমি এখনো পড়াতে আসলে না কেন?
অভ্র– কে সানজিদা””
সানজিদা– হুম! কয়টা বাজো ঘড়ি দেখেছো?
তখন আমি ঘড়ির দিকে তাকালাম। আর এক লাফে উঠে পড়লাম। আর বললাম—
অভ্র– এই যা এতো বেজে গেছে। আমি যাচ্ছি!
সানজিদা– এই শোনো শোনো!
অভ্র– হুম বলো!
সানজিদা– তুমি আমাদের বাসায় চলে আসো। সাদিয়া আমাদের বাসায় আছে। আর তুমিতো আমাকে অংক শিখাইতে চাইলে ভুলে গেছো।
অভ্র– ওহ সরি ভুলে গেছি। আচ্ছা তোমার বাসার ঠিকানা আমাকে দাও আমি যাচ্ছি।
তখন সানজিদা আমাকে তার বাসার ঠিকানা দিল। আমি তাড়াতাড়ি করে উঠে, একটু ফ্রেশ হয়ে সানজিদা দের বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।
প্রায়,, ২৫ মিনিট পর আমি তাদের বাসার সামনে চলে আসলাম। সাদিয়াদের বাসার মতোই সানজিদা দের বাসা টা ও অনেকটা বড়। আমি বাসার ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখি,, সানজিদা আর সাদিয়া বসে বসে গল্প করছে। সানজিদা আমাকে দেখে বলল–
সানজিদা– আজকে এতো দেরি করলে কেন?
অভ্র– ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। সরি! এখন চলো এমনিতেই দেরি করে আসছি।
সানজিদা– আচ্ছা চলো!
তারপর আমরা একটা রুমে চলে আসলাম। রুমটা খুবই গোছানো। আমি সেইদিকে তেমন একটা খেয়াল না করে তাদের পড়াতে শুরু করলাম৷
আমি তাদের পড়াচ্ছি৷ সাদিয়া ঠিকমতই পড়ছে। কিন্তু সানজিদা পড়ছে না! সে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। এটা আমার ভালো লাগছে না! তাই আমি বললাম–
সানজিদা– এই তোমাকে যে একটা অংক দিলাম সেটা করছো?
সানজিদা– বুঝতাছি না! একটু করে দাও!
অভ্র– আচ্ছা খাতা দাও।
সানজিদা তখন খাতা দিল। আমি অংক করছি আর সানজিদা কে বুঝিয়ে দিচ্ছি। তখন সানজিদার মা রুমে আসলো। আর বলল–
আন্টি– বাবা এরা দুজন কী ঠিকমতো পড়ছে?
অভ্র– আসসালামু আলাইকুম আন্টি!
আন্টি– ওয়ালাইকুমুস সালাম! তা এরা দুজন তোমাকে বিরক্ত করছে না তো?
অভ্র– না আন্টি!
আন্টি– এরা যদি তোমায় বিরক্ত করে তাহলে আমাকে বলবা। আমি একটা বেত দিয়ে যাবো! তারপর তুমি ওইটা দিয়ে এই দুজনকে ঠিক করবা! ঠিক আছে?
অভ্র– আন্টি সেটার মনে হয় দরকার নাই। এরা আমাকে বিরক্ত করছে না!
আমার আর আন্টির কথার মাঝে সানজিদা বললো–
সানজিদা– মা তুমি যাবা! আমাদের পড়াই সমস্যা হচ্ছে। যাও তো!
আন্টি– আচ্ছা যাচ্ছি৷
আন্টি রুম থেকে চলে গেল। আমিও তাদের পড়া শেষ করে বাসার কিছু কাজ দিয়ে, আমি বাসায় চলে আসলাম।
বাসায় এসে হালকা একটু রান্না করে নিলাম। আমি খেলাম সাথে জান্নাত কেও খাইয়ে দিলাম। তারপর আমি একটা জ্বরের ঔষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
মাঝরাতে, হঠাৎ আমার খুব শীত লাগতে লাগল। আমি আমার মাথায় হাত দিয়ে দেখলাম। অনেক জ্বর আসছে। তাই কষ্ট হলেও আমি উঠলাম৷ আর ওয়াশরুমে গেলাম। সেখানে গিয়ে মাথায় পানি দিতে লাগলাম।
এইভাবে অনেক্ক্ষণ পানি দিয়ে আমি আবারও এসে শুয়ে পড়লাম।
সকালে বালিশের নিচে থাকা ফোনটা বাজতে লাগল। বালিশের নিচ থেকে ফোন বের করে দেখি সানজিদা ফোন করছে। সে বলল–
সানজিদা– এই আজকে ভাসিটি তে আসবে না?
অভ্র– মনে হয় না! আমার শরীর ভালো না! আচ্ছা এখন রাখি আমার ভালো লাগছে না।
এটা বলে আমি ফোনটা রেখে দিলাম। সানজিদা কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে। আমি আবারও ঘুমিয়ে পড়লাম।
হঠাৎ,, মাথায় ঠান্ডা কিছু অনুভব করলাম। আমি মিটমিট করে চোখ খুললাম। আমি চোখ খুলে সানজিদা কে দেখতে পেয়েই এক লাফে দিয়ে উঠে পড়লাম। আর বললাম—
অভ্র– এই তু….তু…তুমি এখানে কী করো?
সানজিদা স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিল–
সানজিদা– কেন দেখতে পাচ্ছো না! তোমার মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছি। আর তুমি উঠলে কেন? তোমার শরীরে অনেক জ্বর তুমি শুয়ে পড়ো।
অভ্র– আরে আমার শরীর ঠিক আছে। আমার কিছু হয় নি! তুমি এখান থেকে যাও প্লিজ!
সানজিদা– কেন থাকলে সমস্যা কী?
অভ্র– আরে পাশের লোকেরা কী বলবে? তুমি এখান থেকে যাও প্লিজ!
সানজিদা– আরে যে যেটা বলল বলুক তাতে আামার কিছু যায় আসে না! তুমি শুয়ে পড়ো তো!
অভ্র– আরে তুমি বুঝতাছো না?
সানজিদা– আচ্ছা তোমার যেহেতু সমস্যা হচ্ছে আমি চলে যাচ্ছি। আর হে ঔষুধ গুলো খেয়ে নিও! আর হে পড়াতে আসিও কিন্তু!
অভ্র– আচ্ছা যাবে নি।
এরপর সানজিদা আমাদের বাসা থেকে চলে গেল। আমি এই মেয়ের কিছু বুঝি না! সে আসলে কী চায় আমার থেকে? আল্লাহই জানে।
********
বিকেলে আমি সানজিদা দের বাসায় প্রাইভেট পড়াতে চলে আসলাম,,,,,,
চলবে……?
ভুলত্রুটি মার্জনীয়🙂।