ক্ষ্যাত ছেলে পর্ব-০৬

0
163

গল্প ঃ ক্ষ্যাত_ ছেলে
পর্ব ঃ_ ৬
লেখক ঃ অভ্র নীল

বিকেলে আমি সানজিদা দের বাসায় প্রাইভেট পড়াতে চলে আসলাম। এসে তাদের প্রাইভেট পড়াতে শুরু করলাম।

তাদের প্রাইভেট পড়া শেষ করে আমি যেই না রুম থেকে বের হই অমনি দেখলাম একজন লোক সোফায় বসে আছে। লোকটাকে কোথায় যেন একটা দেখেছি, কিন্তু কোথায় দেখেছি সেটা আর মনে পড়ছে না। আমি ওইখানে দাড়িয়ে থেকে এসব ভাবছি। তখন ওই লোকটি আমায় ডাক দিল। আমি এগিয়ে গেলাম। আর বললা,,,,,

অভ্র– আঙ্কেল আসসালামু আলাইকুম।

আঙ্কেল– ওয়ালাইকুমুস সালাম। বাবা কেমন আছো?

অভ্র– এইতো আঙ্কেল আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?

আঙ্কেল– হুম ভালো। আচ্ছা তুমি কী আমায় চিনতে পেরেছো?

অভ্র– আঙ্কেল আসলে আপনাকে কোথায় যেন দেখেছি? কিন্তু মনে করতে পারছি না।

আঙ্কেল– আরে তুমি আমায় চিনতে পারো নি। সেইদিন তুমি আমার গাড়ি ঠিক করে দিলে, এবার মনে পড়েছে?

অভ্র– ওহ আঙ্কেল আপনি!

আঙ্কেল– হুম! সেইদিন তোমার নামটাও জানা হলো না! বলতো তোমার নাম কী? তুমি থাকো কোথায়?

অভ্র– আঙ্কেল আমার নাম মোঃ অভ্র । আমি থাকি একটা বসতিতে। আমার বাবা-মা কেও নেই। আমার ছোট একটা বোন আছে। তাকে নিয়েই এখন আমার পুরো পৃথিবী।

এটা বলতেই আমার চোখের কোনে পানি জ্বমে গেল। তখন আঙ্কেল বললেন–

আঙ্কেল– আরে তুমি এখন থেকে নিজেকে আর এতিম মনে করবে না! আমরা আছি তোমার সাথে। তুমি আমাদের নিজের কেও মনে করতে পারো?

অভ্র– হুম আঙ্কেল পারবো।

এইভাবে আমি আঙ্কেলের সাথে গল্প করতে লাগলাম।

আমি আর আঙ্কেল গল্প করছি। তখন সানজিদা আমাদের জন্য নাস্তা নিয়ে আসলো। আমি নাস্তা করবো না, কিন্তু সানজিদা আর আঙ্কেলের জোরাজুরিতে নাস্তা করতেই হলো। যাইহোক আমি নাস্তা শেষ করে বাসায় চলে আসলাম।

এইভাবে আরও অনেকদিন কেটে গেল৷ এখন আমার আর সানজিদার সম্পর্ক আগের চেয়ে ও অনেকটাই ভালো হয়ছে। কিন্তু আমি তাকে বন্ধু হিসেবেই ভালোবাসি। কিন্তু সানজিদার ব্যবহার আমার তেমন একটা ভালো লাগে না। একদিন সানজিদা তার বাবাকে বলছে–

সানজিদা– আব্বু একটা কথা বলি!

আঙ্কেল বসে বসে খবরের কাগজ পড়ছিল। সানজিদার এইভাবে কথা বলাতে তিনি খবরের কাগজটা নিচে নামিয়ে বললেন–

আঙ্কেল– এখানে আই বস!

সানজিদা গিয়ে আঙ্কেলের পাশে বসলো। তখন আঙ্কেল বললেন–

আঙ্কেল– তা মা তুমি কী চাও সেটা সোজাসাপটা বলো দেখি!

সানজিদা তখন একটু ভয়য়ের সুরে বলল–

সানজিদা– আব্বু আসলে অভ্র দের বাসা তো আমাদের বাসা থেকে অনেক দূরে। আর আমাদের বাসার কোনার ওই রুমটা তো ফাঁকাই পড়ে আছে। তুমি যদি বলো তাহলে আমি অভ্র কে আমাদের বাসায় থাকতে বলি। তার তো কেও নেই। সে যদি এখানে থাকে তাহলে তার একাকিত্ব ভাবটা কমে যাবে। আর সামনে আমাদের টেস্ট এক্সামও আছে। তুমি তাকে থাকতে দিলে, আমরা দুজন একসাথে পড়াশোনা করতাম আর কী। আর তার ছোট্ট একটা বোনও রয়েছে। আমার তো ছোট কোনো বোনও নেই। তাকে দিয়ে না হয় আমার ছোট বেনের অভাবটা পূরণ করে নিব। প্লিজ আব্বু তুমি মানা করো না🥺

সানজিদা শেষের কথাটা একটু কাঁদো কাঁদো গলায় বলল। কারণ সে জানে তার বাবাকে এইভাবে বললেই তার কাজটা হবে।

শফিক আঙ্কেল তার দিকে তাকিয়ে আছে। আর মুচকি মুচকি হাসছে। তখন সানজিদা বলল–

সানজিদা– কী হলো বলো?

আঙ্কেল– বা বা আমার মেয়েটা এতো বড় হয়ে গেছে। সে এখন নিজের চিন্তা বাদ দিয়ে মানুষের চিন্তা করতেও শুরু করেছে। আচ্ছা যা তুই অভ্র কে আমাদের বাসায় থাকতে বলিস। এবার খুশি তো!

সানজিদা জোড়ে একটা আব্বু ডাক দিয়ে আঙ্কেলকে জড়িয়ে ধরে। তখন তার বাবার কপালে একটা চুমু খায়।

সানজিদা সেখান থেকে তার রুমে চলে আসে। আর ভাবতে থাকে,, অভ্র কে আমাদের বাসায় আসতে বললে সে নিশ্চিত না করে দিবে। তখন সে জ্ঞান দিতে শুরু করবে। তাই ভালো হবে আমি তাকে না বলেই তার সব জিনিস আমাদের বাসায় নিয়ে চলে আসবো৷ তাকে একপ্রকার সারপ্রাইজ দিবো।
সানজিদা আরও বলে,, বাবু তোমাকে তো আমি আমার এই মনের ঘরে জায়গা দিয়েই দিছি। এখন তো আমাদের বাসাতেও তোমায় জায়গা করে দিলাম। তুমি চিন্তা করো না তুমি শুধু আমার। এটা বলে সানজিদা তার খাটের উপর থাকা কোলবালিশকে জড়িয়ে ধরে।

এইদিকে, আমি এখন আরও ২ টা প্রাইভেট পড়াই। এতে আমার আর জান্নাতের খুব ভালো মতোই দিন চলে। আজকে খুব ক্লান্ত লাগছিল। তাই সানজিদা কে ফোন করে বলে দিলাম। তাকে আজ আর পড়াতে যেতে পারবো না!
**************
সকালে উঠে আমি যথাসময়ে ভাসিটিতে চলে গেলাম। সামনে আমার টেস্ট এক্সাম তাই ভাসিটি মিস দেওয়া যাবে না।
পুরা ভাসিটি সানজিদা কে খুজলাম। কিন্তু কোথাও তাকে পেলাম না। তারমানে সে আজ ভাসিটি তে আসে নি। আমি তাকে ফোন দিলাম। কিন্তু তার ফোনও বন্ধ! আমার মাথায় একটু চিন্তা হতে শুরু করলো,, সানজিদার কিছু আবার হলো না তো!
যাইহোক আমি সব ক্লাস করে ১ টা টিউশনি পড়িয়ে বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে আমিতো নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না। এ কী আমার বাসার……………

চলবে……?

ভুলত্রুটি মার্জনীয়🙂।