ক্ষ্যাত ছেলে পর্ব-০৪

0
173

গল্প ঃ ক্ষ্যাত_ ছেলে
পর্ব ঃ_ ৪
লেখক ঃ অভ্র নীল

বাসায় আসার সময় একটা হোটেল থেকে রাতের খাবার কিনে নিলাম। কারণ, সাদিয়াদের বাসা থেকে আসার সময় সানজিদা আমার হাতে কিছু টাকা দিয়েছিলো। আমি নিতে চাইনি সে আমাকে জোড় করে দিলো।
তবে আমি জানি, জান্নাত আজ অনেক অনেক খুশি হবে। আমিও আজ অনেক খুশি। সাদিয়ার বাবা আমাকে মাস শেষে যে পরিমান টাকা দিবে তাতে আমার আর জান্নাতের অনেক ভালো মতো চলে যাবে৷ আমাকেও আর রিকশা চালাতে হবে না। আমি মনের আনন্দে রাস্তা দিয়ে হাটছি।

হঠাৎ, দেখলাম একটা লোক গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে। আর তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে খুব টেনশনে আছে। তিনি বার বার কাকে যেন ফোন দিচ্ছিলো। আমি এগিয়ে গেলাম, আর বললাম—

অভ্র– আঙ্কেল কিছু কি সমস্যা?

লোকটি– হুম! আমার গাড়িটা খারাপ হয়ে গেছে। ম্যাকানিককে ফোন দিচ্ছি কিন্তু ধরছে না! এইদিকে আমার একটা জরুরি মিটিংও আছে।

অভ্র– আঙ্কেল আপনি যদি কিছু মনে না করেন। আমি আপনার গাড়িটা একটু দেখি!

লোকটি– আচ্ছা!

আমি গাড়ির ডিকিটা খুললাম। দেখলাম তেলের লাইনটা জাম হয়ে গেছে। তাই আমি সেটা খুলে পরিষ্কার করে আবারও লাগিয়ে দিলাম। আর লোকটিকে বললাম–

অভ্র– আঙ্কেল স্টার্ট দেন দেখি?

এবার তিনি স্টার্ট দিতেই গাড়িটা চালু হয়ে গেল। তিনি গারি থেকে নেমে মানিব্যাগ থেকে কিছু টাকা বের করে বললেন–

লোকটি– বাবা! এই নাও কিছু টাকা রেখে দাও তুমি!

অভ্র– না আঙ্কেল টাকাটা আপনি আপনার কাছেই রেখে দেন। আর কাওকে সাহায্য করে তার কাছে থেকে কিছু নেওয়া হলো পাপ। আচ্ছা আঙ্কেল আমি তাহলে যাই।

এটা বলে আমি বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।

বাসায় গিয়ে দেখে জান্নাত ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি তাকে ডাক দিলাম–

অভ্র– জান্নাত, জান্নাত, এই ডাইনি উঠ। দেখ আমি তোর জন্য কী নিয়ে আসছি?

জান্নাত ঘুম ঘুম চোখে বলল–

জান্নাত– ভাইয়া তুমি আসছো? কী নিয়ে আসছো আমার জন্য?

অভ্র– এই দেখ আমি তোর জন্য হোটেল থেকে খাবার নিয়ে আসছি।

জান্নাত একটা লাফ দিয়ে উঠে বলল–

জান্নাত– কী সত্যি দাও দেখি।

আমি তাকে খাবারের পেকেট টা খুলে দিলাম। সে খুশি মনে খেতে লাগলো।

খাবার পর্ব শেষ করে,, জান্নাত আবারও ঘুমিয়ে পড়লো। আর আমি বই নিয়ে পড়তে বসলাম। সামনে আমার পরীক্ষা।

আমি পড়াশোনা শেষ করে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। আজকে আর রিকশা নিয়ে বের হলাম না। কারণ, এখন আমার আর রিকশা না চলালেও চলবে। এখন আমার জীবন চলার মতো একটা বাবস্থা হয়ে গিয়েছে।

********

রেডি হচ্ছি ভাসিটি তে যাবো বলে। সানজিদার দেওয়া শার্ট আর জিন্সের মধ্যে একটা পড়ে। ভাসিটির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

ভাসিটিতে ঢুকেই আমি একপ্রকার শক খেলাম। আমি দেখলাম, সানজিদা কে একটা ছেলে পুরা কাম্পাসের সামনে হাটু গেড়ে প্রপোস করেছে।
আমার বুকের বাম পাশটা হঠাৎ কেমন যেন করতে লাগলো। হয়তো আমিই সানজিদার ব্যাপারে একটু বেশিই ভেবে ফেলেছি। সে হচ্ছে বড়লোকের দুলালি। আমি কীভাবে তার ভালোবাসা আশা করি। আমিতো একটা ক্ষ্যাত! তবে আমার একটু কষ্টই হচ্ছে কারণ সে আমার প্রথম ভালো লাগা।
আমি সেখান থেকে মাথা নিচু করে চলে গেলাম।

যথারীতি সকল ক্লাস করে। আমিও বাসায় চলে আসি। বাসায় এসে কিছু ভালো লাগছিল না তাই মায়ের একটা ছবি বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

বিকেল, ৪ঃ৩০ এ উঠে আমি রেডি হতে লাগলাম। কারণ, ৫ঃ১৫ থেকে আমার প্রাইভেট পড়াতে যেতে হবে। তাই আমি রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। সাদিয়াদের বাসার উদ্দেশ্যে।

সাদিয়াদের বাসায় গিয়ে দেখি, সানজিদা আজকেও তাদের বাসায় আসছে। আমি তাকে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করে সাদিয়াকে পড়াতে শুরু করলাম।
*******

পড়ানো শেষে, আমি সাদিয়াদের বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম। তখন পিছন থেকে সানজিদার ডাক–

সানজিদা– এই অভ্র দারাও!

আমি পিছন ফিরে বললাম–

অভ্র– জী কিছু বলবেন?

সানজিদা তখন পিছন থেকে একটা ফোনের বক্স বের করে আমাকে দিয়ে বলল–

সানজিদা– এই নাও এটা তোমার জন্য। তুমি এখন একজন স্যার! আর তোমার কাছে ফোন না থাকলে কেমন জানি একটা দেখাই। তাই তোমাকে দিলাম। আর হে এটা গিফট মনে করো না! এটার সম পরিমান টাকা আমি একসময় তোমার কাছ থেকে পুশে নিবো।

অভ্র– মানে!

সানজিদা– তোমায় মানে বুঝতে হবে না! এখন যাও! আর হে এতে সিম তোলা আছে। আমি তোমায় রাতে ফোন দিব। আচ্ছা।

এটা বলে সে হাসতে হাসতে চলে গেল। আর আমি সেখানে বোকার মতো দাড়িয়ে রইলাম।
******
মেয়েটা কী অদ্ভুত তাই না! সে কখন কোন মাইন্ডে থাকে আমি বুঝতেই পারি না।
যাইহোক আমি বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।

বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া সেরে। আমি সেই ফোনের বক্সটা খুললাম। এই প্রথম কোনো ফোনে আমি হাত দিলাম। এইরকম কিছু কখনো কপালে জোটে নি। আমি ফোনটা দেখি। মনে হয় অনেক দামি। আমার একটা সমস্যা এটা তো আমি ইউজ করতে পারি না। তাই আমি সেটা বালিশের নিচে রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম।

হঠাৎ করে ফোনটা বাজতে লাগল। তাই আমি বালিশের নিচ থেকে ফোনটা বের করলাম। আর রিসিভ করলাম–

অভ্র– আসসালামু আলাইকুম 🙂

— ওয়ালাইকুমুস সালাম। আমাকে চিনতে পেরেছো আমি সানজিদা।

অভ্র– ওহ আপনি

সানজিদা– কেন অন্য কাওকে।আশা করছিলে না কী?

অভ্র– আরে না না! সেই রকম কিছু না! আচ্ছা কী কারনে ফোন দিয়েছেন সেটা বলেন!

সানজিদা– এই তোমাকে না আমি আপনি করে বলতে নিষেধ করছি। (রেগে গিয়ে)

অভ্র– ওহ সরি!

সানজিদা– আচ্ছা এখন কী করো?

অভ্র– এইতো শুয়ে আছি। আপনি ওহ তুমি?

সানজিদা– আমিও শুয়ে আছি।

অভ্র– আচ্ছা তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?

সানজিদা– হুম করো! এতে আবার পারমিশন নিতে হবে?

অভ্র– আজকে যে ছেলে তোমাকে প্রপোস করেছিল, তুমি কী তার প্রপোজাল একসেপ্ট করছো?

সানজিদা তখন হাসতে লাগল। আর বলল–

সানজিদা– আরে ধুরর তুমি কী যে বলো! আমি তার প্রপোজাল একসেপ্ট করার বদলে তাকে ঠাটিয়ে একটা চড় মারছি। তার সাহস কত সে আমাকে প্রপোস করে!

অভ্র– ওহ আচ্ছা।

সানজিদা– তবে তুমি যদি আমায় প্রপোস করো তাহলে আমি একসেপ্ট করবো। (ফিসফিস করে)

অভ্র– কিছু বললা?

সানজিদা– আরে না! আচ্ছা তুমিতো অংক খুব ভালো পারো তাই না!

অভ্র– হুম মোটামুটি! কেন?

সানজিদা– তুমি কী আমাকে একটু হেল্প করবা! মানে তুমি কী আমাকে পড়াতে পারবা। আমার না অংক বুঝতে খুবই সমস্যা হয়।

অভ্র– আচ্ছা ভেবে দেখবো?

সানজিদা– ঠিক আছে। এখন তাহলে রেখে দিই। কাল কথা হবে। তুমি এখন ঘুমাও!Gd n8🥰

অভ্র– আচ্ছা!

এটা বলে সানজিদা ফোনটা কেটে দিল। আমিও ফোনটা রেখে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

চলবে….?

ভুলত্রুটি মার্জনীয় 🙂।