খেলাঘর পর্ব-১১

0
4098

#খেলাঘর
লেখকঃ শাওন
পর্বঃ১১

কয়েকটা দিন কেটে গেল, এই কয়েকদিনে লাজ ব্যাশ কয়েকবার ঐ মহিলাটির পরিচয় জানতে চেয়েছিল কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।মহিলাটি বার বার পরিচয় দিতে না করছে। আজকেও লাজ চেষ্টা করছে পরিচয় জানার জন্য…..
-“আন্টি প্লিজ, আপনার পরিচয় টুকু দেন আমাকে।নয়তো আমি কিছু করতে পারবো না।”
-“মানে?তুমি কি করতে চাচ্ছো?”
লাজ মুখ ফসকে কথাটা বলে ফেলল,যখন বোঝতে পারলো কি বলেছে তখন জিভে কামড় দিয়ে ধরলো।মহিলাটি সামনে এসে জিজ্ঞেস করলো,” চুপ করে আছো কেন? বলো একটু আগে তুমি কি করার কথা বলছিলে?”
-“ওহহ কিছু না।”
-“তুমি যদি আমার পরিচয় জানতে চাও,তাহলে তোমাকে সবকিছু খুলে বলতেই হবে।তা না হলে তুমি আমার সম্পর্কে কিছুই জানতে পারবে না।”
-“আপনি এতদিন বন্ধি ছিলেন বলেই আমাকে চিনতে পারছেন না নয়তো এই শহরের প্রায় সবাই আমাকে চিনে।লাজ,নাম টা ভদ্র শোনালেও আমি ততক্ষণ ভদ্র যতক্ষণ সামনের মানুষ ভদ্রতা পাওয়ার যোগ্য, আমাকে সবাই চিনে কারণ আমিই সেই মেয়ে যে কিনা ফারিদ তাকদিয়ার কে সবার সমানে কতগুলো চিরন্তন সত্য প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলাম, আমি সেই মেয়ে যাকে ফারিদ তাকদিয়ার অপহরণ করতে চেয়েছিল, আমি ই সেই মেয়ে যার সাথে বাবা-র অসম্মানের প্রতিশোধ নেবার জন্য মিথ্যা প্রেমের নাটক করেছিল ফারিদ তাকদিয়ারের ছেলে ফারাজ তাকদিয়ার। আর আমিই সেই মেয়ে যে কিনা প্রতিশোধ আর সত্যের মুখোশ উম্মচনের জন্য ব্যাল্কমেইল করে বিয়ে করেছিল ফারিদ তাকদিয়ারের ছেলে ফারাজ তাকদিয়ার’কে।”
লাজের প্রতিটা কথা শুনে ঐ মহিলাটা চমকে উঠলো।ওনি ছলছল চোখে লাজের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,”তুমি..তুমি ফারাজের স্ত্রী!”
-“হুম,আমি ফারাজের স্ত্রী। স্ত্রী কম শত্রু বেশী, কারণ ওর বাবা আর ও কালো ব্যবসা থেকে শুরু মেয়ে পাচার পর্যন্ত করে, তারচেয়ে বড় কথা সে আমার ভালোবাসা নিয়ে খেলেছে।”
-“তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে, ফারাজ এসব করতে পারে না। ও ওর বাবা-র মতো না!”
-” ও ঠিক কেমন তা আমি জানি, তাই আমি জেনে বোঝেই সবকিছু করবো।কিন্তু আমি এটা বোঝতে পারছি না ফারাজ কি সত্যি মেয়ে পাচার নিয়ে কিছু জানে না, নাকি ওর আমার সাথে নাটক করছে।”
-“ও নাটক করছে না, ও এসব কিছুই জানে না।”
-“আপনি এতটা বড় গলায় কি করে বলছেন? আপনি কি ওকে চিনেন নাকি!”
লাজের প্রশ্নের কি উত্তর দিবে মহিলাটি ভেবে পাচ্ছে না। লাজ মহিলাটিকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে আবার প্রশ্ন করলো,”কি হলো?বলুন আপনি কি করে ওদের চিনেন আর আপনার পরিচয় টা কি?”
-“এসব জানতে হলে তোমাকে অনেক আগে থেকে বলতে হবে, এত সময় হবে কি তোমার?”
-“আমার হাতে যথেষ্ট সময় আছে, আপনি দয়া করে সবকিছু বলুন আমাকে।”
-“তাহলে শোনো, আমার নাম মাহেরা….
লাজের ফোন বাজতে শুরু করলো, তাকিয়ে দেখে আয়েরা’র কল কিন্তু এই সময় আয়েরা কেন কল দিলো বোঝতে পারলো না লাজ। সে একটু দূরে সরে কলটা রিসিভ করতেই। আয়েরা’র আতংকিত কন্ঠ ভেসে আসে,”হ্যালো, লাজ! কোথায় তুই?”
-“আমি বাসায়, তোর কন্ঠ এমন শোনা যাচ্ছে কেন? কি হয়েছে তোর?”
-“আমার কিচ্ছু হয়নি,তুই একটু প্লিজ তারাতাড়ি আমার বাসায় আয়, আমার তোকে কিছু কথা বলার আছে।প্লিজ তারাতাড়ি আয় নয়তো অনেক দেরী হয়ে যাবে।”
-“আমি এক্ষুনি আসছি!”
লাজ ফোনটা রেখে ব্যাগটা হাতে নিয়ে মহিলাটিকে উদ্দেশ্য করে বলল,” আমার একটা জরুরি কল এসেছে আমাকে এক্ষুনি যেতে হবে। আপনি প্লিজ সাবধানে থাকবেন, কেউ কলিংবেল চাপলে দরজা খুলবেন না। আমি আসি!”
-“সাবধানে যেও!”
লাজ আয়েরা’র বাসায় কলিংবেল চাপার সাথে সাথে আয়েরা দরজা খুলে দেয়।লাজ বলে,” কি এমন হয়েছে যে তুই আমাকে এত জরুরি ভাবে আসতে বললি?”
-“সবই বোঝতে পারবি।তার আগে তুই পানিটা খা।”
আয়েরা লাজের দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো।লাজ হালকা পানি খেয়ে বলল,” আমি ঠিক আছি তুই বল কি হয়েছে?”
-“তুই জানতে চেয়েছিলি না তোর বাবা মার খুনী কে?”
-“হুম,এখনো জানতে চায় আমি সেই খুনী কে?”
-“আমি জানি সেই খুনী কে?”
-“হুয়াট!তুই জানিস তাহলে আমাকে এতদিন বলিস নি কেন?”
-“আমাকে না করেছিল!”
-“কে?কে তোকে না করেছে আর কে খুনী!চুপ করে থাকবি না, বল আমাকে!”
-“ফারাজ!”
লাজ থমকে দাঁড়ায়,সে এটা কি শুনলো?ফারাজ তার বাবা মায়ের খুনী!ফারাজ তার বাবা মাকে মেরেছে তারপর তার সামনে ভালো মানুষের নাটক করছে!লাজ জিজ্ঞেস করলো,”তুই কি করে জানলি ফারাজ খুনী?”
-“আমি নিজের চোখে ওর হাতে পিস্তল দেখেছিলাম, আন্টি আমাকে ফোন করে বাসায় ডেকেছিল আমি গেইটের সামনে থাকতে গুলির আওয়াজ আসে, দৌড়ে ভিতরে এসে দেখি আঙ্কেল আন্টি নিচে পরে আছে আর ফারাজ পিস্তল হাতে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো।”
-“তাহলে তুই আমাকে সেদিন কেন এই কথা বলিস নি?”
-“ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, ফারাজ আমাকে বলেছিল এসব কথা যেন কেউ জানতে না পারে। সময় হলে সবটা নাকি খুলে বলবে।”
-“আর কি খুলে বলার বাকি আছে ওর? মেরে ফেলল তো বাবা মাকে,আর কি করবে ও বল আমাকে!”
বলেই লাজ কান্না করতে করতে ফ্লোরে বসে পরলো। আয়েরা এসে তাকে জড়িয়ে ধরলো। দুজনই জরিয়ে ধরে কান্না করছে। লাজের ফোন কল আসলো তাকিয়ে দেখে ফারাজের কল।সে প্রথমবার কল না ধরলেও ২য় বার কল রিসিভ করে শান্ত গলায় বলে,” হ্যালো!”
-“লাজ কোথায় তুমি?তোমাকে অনেককিছু বলার আচে।”
-“আমারো তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে!”
-“আচ্ছা তুমি কোথায় বলো,আমি আসছি।”
-“আসবে? আচ্ছা আসো,আমাদের বাড়িতে”
-“আমি খুব তারাতাড়ি আসছি!”
ফারাজ কল কেটে দিলে আয়েরা জিজ্ঞেস করে,” কিরে কি বলল ফারাজ?”
-“আমাকে নাকি তার অনেককিছু বলার আছে!”
-“তুই যাবি?”
-“হুম,আমি যাবো।ওর পাপের ফল আমি দিবো আর তা আজকেই!”
-“কিন্তু লাজ!”
-“ভয় পাস না,তোর কথা আসবে না এখানে, আর হ্যা আজকে আমার কিছু হয়ে গেলে তুই প্লিজ ঐ মহিলাটাকে দেখিস!”
লাজ আর কোনো কথা না বলে সোজা চলে গেল।

ফারাজ লাজদের বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই দেখতে পেল লাজ উল্টো দিক হয়ে দাড়িয়ে আছে। ফারাজ এসেই বলতে লাগলো,”লাজ, আমি জানি না কথাটা শোনার পর তোমার কি করতে ইচ্ছে হবে কিন্তু আমি আজকে আর কোনো কিছু লুকাবো না।আজকে সব সত্য আমি তোমাকে বলবো! তোমার বাবা মা’র খুনীকে আমি খুঁজে পেয়েছি, আর সেই খুনী হলো…”
-“তুমি নিজেই!”
বলেই লাজ ঘুড়ে ফিরলো,চোখগুলো লাল লাল হয়ে আছে আর ছলছল করছে।হাতে পিস্তল দেখে ফারাজ অবাক হয়ে যায় তারচেয়েও অবাক হয়ে যায় লাজের কথাটা শুনে।সে অবাক হয়ে বলে…
-“হুয়াট!তুমি এসব কি বলছো?”
-“আমি যা সত্যি তাই বলছি,তুমি নিজ হাতে মেরেছো আমার বাবা মাকে! কি ক্ষতি করেছিল ওরা তোমার? কেন মারলে তুমি ওদের? তোমার আর তোমার বাবা-র ব্যবসার মাঝখানে কাটা হয়ে তো আমি এসেছিলাম তাহলে কেন তুমি ওদের মারলে?”
বলেই লাজ কেঁদে দিলো, ফারাজ ওর সামনে এগোতে নিলে লাজ গুলি সামনে ধরে বলে,”খবরদার তুমি যদি এক পা সামনে আগাও তলো আমি গুলি চালিয়ে দিবো!”
-“ওকে ওকে, কিন্তু লাজ একটু শান্ত হও,তোমার ভুল হচ্ছে, আমি খুনী নয়!”
-“আমি আর কোনো মিথ্যা শুনতে চায় না, আমি আর কোনে নাটক দেখতে চায় না।ভুল যখন তুমি করেছো তাহলে তার শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে। ”

লাজ গুলিটা ফারাজের সামনে ধরলো, ফারাজ বার বার বলছে তার কথাগুলো একবার শুনতে।কিন্তু লাজ কোনো কথায় কানে নিচ্ছে না,সে কাঁপা কাঁপা হাতে শুট করে নিলো। বিকট আওয়াজ করে গুলি বের হলো, লাজ চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলল। ফারাজ বোঝতে পারলো লাজ গুলিটা করেই দিয়েছে তাই সেও চোখ বন্ধ করে দিলো। কিন্তু সে কোনো কিছু অনুভব করতে না পেরে চোখ খুলে দেখে গুলি তার শরীরে লাগেনি, লাজ চোখ খুলে তাকালো।

#চলবে