গল্পঃ তুমি_ছারা_আমি_শূন্য
পর্বঃ ৫+৬
লেখকঃ #Mohammad_Asad
ছাদিক আর নিশাতের দূরত্ব যেন দুজন দুজনের ভালোবাসা বেড়ে দিয়েছে। আজ দিয়ে এক মাস হয়ে এসেছে। ছাদিক রাজশাহী চলে গেছে। ছাদিক আর নিশাতের কথা হয় তবে রাত্রে চুপিচুপি।
নিশাতের সঙ্গে একটা মজার বিষয় ঘঠে গিয়েছে। বিষয়টা নিয়ে অবশ্য নিশাত অনেক চিন্তিত।
নিশাত কালো হিজাব পড়ে কলেজের একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। একটা ছেলে এসে নিশাতকে বলে।
-আসসালামু আলাইকুম,
-উলাইকুম আস্সালাম,
-আপনার নাম কি একটু বলবেন প্লিজ,
-আমার নাম নিশাত আপনার?
-আপনার নামটা অনেক সুন্দর। আর আমার নাম আলামিন, আসলে আপনার সঙ্গে একটা কথা বলার ছিলো।
-হুম বলুন,
-কথাটা বলতে কেমন যানি লাগছে। আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে…….
-হুম বলে ফেলুন,
আলামিন ছিলো কলেজের বড় ভাই।নিশাতকে ভালো লাগতো আলামিনের, তাই নিশাতের সঙ্গে কথা বলতে এসেছে।
-আসলে হয়েছেটা কি!! তুমি কোনো ছেলের সঙ্গে কথা বলো না।
-তো
-তোমার বান্ধবীদের সঙ্গে কতটা দুষ্টুমি করো তুমি, তা আমি দূর থেকে দেখি আর মুচকি মুচকি হাঁসি।
-হি হি তাই।
-হুম তাই, আর কি যানেন?
-কি?
-আপনার হাঁসিটা না অনেক সুন্দর।
-আচ্ছা, আপনার আর কি আর কিছু বলার আছে? বলার থাকলে বলে ফেলুন।
-হুম অনেক কিছু বলার আছে।
-তাহলে সময় নষ্ট না করে বলে ফেলুন।
“আলামিন দূর্ঘশ্বাস ছেরে, একটা লাল টুকটুকে গোলাপ ফুল নিশাতের হতে দিয়ে বলে”
-আই লাভ ইউ, আমি তোমাকে ভালোবাসি।
-হোয়াট ডু ইউ মিন, কি বুঝাতে চান আপনি হ্যাঁ। আমাকে ভালোবাসেন মানে। এই জন্য এখানে এসেছেন এডিয়ট,
“নিশাত আলামিনের দেওয়া ফুলটা মাটিতে পিষিয়ে দেয়।
আলামিন নিশাতের চোখে দিকে তাকিয়ে বলে।
-সত্যি বলছি নিশাত, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
-স্যরি আমি আপনাকে ভালোবাসি না।
-তবে আমি তো তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে আমার অনেক ভালো লাগে, কখন যানি ভালোবেসে ফেলছি। দেখবে তুমিও আমাকে আস্তে আস্তে ভালোবেসে ফেলবে।
-স্যরি মিস্টার তা কখনো হবার না। স্যরি আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি। প্লিজ আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না বড় ভাই।, ” মুচকি হেঁসে কথা গুলো বলে নিশাত”
-এই মেয়ে, একদম আমাকে বড় ভাই ডাকবে না। আর আমি ভালোভাবে যানি তুমি কোনো ছেলের সঙ্গে রিলেশন করো না। তোমার বান্ধবীদের কাছ থেকে ভালোভাবে যেনেছি আমি।
-স্যরি, আপনার এইটা ভুল ধারনা। আসলে আমি একজনকে ভালোবাসি, নাম ছাদিক, আর ছাদিকের ব্যপ্যারে আমার বান্ধবীরা কেউ যানে না। স্যরি আপনার প্রপোজ একসেপ্ট করতে পারলাম না।
-দেখো তুমি আমার প্রপোজ একসেপ্ট করোনি ঠিক আছে। আস্তে আস্তে তোমাকে বুঝিয়ে দিবো কতটা ভালোবাসি আমি তোমাকে। তবে প্লিজ এমন করে বলো না, তুমি অন্য একজনকে ভালোবাসো।
-আরে ভাই, সত্যি বলছি আমি একজনকে ভালোবাসি নাম ছাদিক।
-আমার সঙ্গে মজা করছো কেন?
“নিশাত রেগে দাঁত কটমট করে বলে”
-এই ছেলে নিজেকে মনে করো হ্যাঁ আমি মিথ্যা বলছি। আরে ভাই আমি যা বলছি সত্যি বলছি। বাই ভালো থাক। আর আমায় ভালোবাসার কথা কখনো মাথায় আনবি না ওকে। আর শোন, তুই আমাকে সারাজীবন জীবন দিয়ে ভালোবেসে গেলেও আমাকে পাবি না কখনো। কারণ আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি। “কথা গুলো বলে নিশাত ক্লাস রুমে চলে যায়। নিশাত বান্ধবীদের সঙ্গে একটাও কথা বলছেনা আজ। বান্ধবীরা যখন নিশাতের দিকে তাকাচ্ছে, তখন নিশাত মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
কলেজ ছুটির পর নিশাত সিয়েন্জিতে করে বাড়ি ফিরার জন্য উঠে বসে। তানিয়া দৌড়ে নিশাতের পার্শে বসে পড়ে সিয়েন্জিতে।
নিশাত তানিয়াকে দেখে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
-এই তোর কি হয়েছে রে? আজকে কথা বলছিস না কেন!! মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিস!
-কিছু হয়নি রে,
-কোনোকিছু নিয়ে টেনশনে আছিস নাকি? অথবা আমাদের উপর রাগ করে আছিস?
-হুম ঠিক ধরেছিস। আচ্ছা তানিয়া তুই তো আমার বেস্ট ফেন্ড তাইনা।
-হুম
-তাহলে, আলামিন বড় ভাইকে আমার সম্পর্কে কেন বলেছিস?
-হিহিহিহি যানতে চেয়েছিলো তাই বলেছি তাতে কি হয়েছে।
-তাতে কি হয়েছে মানে?
-আলামিন বড় ভাই, তোকে অনেক ভালোবাসে রে,
-এই থাপ্পড় খাবি কিন্তু। আচ্ছা তুই কিভাবে যানলি আমি রিলেশন করি না।
-কারণ তুই আমার বেস্ট ফেন্ড। তুই আমার সঙ্গে সবকিছু শিয়ার করিস।
-তুই আমার বেস্ট ফেন্ড হতে পারিস ঠিক আছে। তবে সবকিছু শিয়ার করবো তোর সঙ্গে আমি, কিভাবে ভাবলি? আমি একজনকে ভালোবাসি নাম ছাদিক।
-মানে,, তুই রিলেশন করিস। আমাকে বলিসনাই কেন?
-আমি কাউকে বলতে চেয়েছিলাম না তাই। আব্বু আম্মু যেনে গেলে। আমার বিয়ে দিয়ে দিবে বুঝছিস। তুই আবার এমন করিস না যেন! আমি রিলেশন করি এইটা আবার ঢোল পিটিয়ে সবাইকে যানিয়ে দিস। তারপর আব্বু আম্মু আমাকে ঠাড্ডাতে লাগুগ।
-স্যরি রে,,
-আর স্যরি বলতে হবে না। ওই ছেলেটাকে কালকে বলবি আমি রিলেশন করি। আর হ্যাঁ বলবি আমার কথা ভুলে যেতে, সারাজীবন আমাকে ভালোবেসে গেলেও লাভ হবে না।
তানিয়া মাথা নিচু করে বলে। “নিশাত আমি আরেকটা ভুল করে দিয়েছে”
-কি আবার ভুল করলি?
-তোর ফোন নম্বর আলামিন বড় ভাইকে দিয়ে দিয়েছি।
-মানে? কি করেছিসটা কি তুই।
-স্যরি রে,,
-তোকে আমি,
-স্যরি রাগ করিস না প্লিজ।
-আচ্ছা ঠিক আছে ভুল যেহেতু করে দিয়েছিস তুই। কালকে কলেজে এসেই বড় ভাইকে বলবি আমাকে ভুলে যেতে।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
.
.
কলেজ থেকে ফিরেই নিশাত ছাদিককে ফোন দেয়।
-আসসালামু আলাইকুম,,
-উলাইকুম আস্সালাম নিশাত কেমন আছো?
-এই তো অনেক ভালো আছি তুমি?
-হুম আমি অনেক ভালো আছি।
“নিশাত অভিমানী শুরে বলে”
-হু ভালো থাকারি কথা। আমার এই পচা মুখটা দেখতে হচ্ছে না যে।
-হা হা, নিশাত
-হু
-কি করো এখন?
-এই কলেজ থেকে ফিরে,, গোসল করে সুয়ে আছি।
-তাই,
-হুম তাই,
-ভাত খাওনি এখনো।
-হুম খেয়েছি তুমি?
-স্কুল চারটের সময় ছুটি। তারপর খেয়ে নিবো।
-মানে?
-না মানে,, এখন টিফিনের সময় হয়েছে। আর আমি বাজারের খাবার খেতে একদম পচ্ছন্দ করি না।
-উহু রে, আইছে আমার হনুমান। সারাদিন না খেয়ে থাকো তাহলে। কষ্ট হয়না তোমার।
-না তো,, অবভ্যাস হয়ে গেছে।
-কেন টিফিন নিয়ে যাওনা তুমি?
-নাহহ্ এইসব নিয়ে আসতে একদম ভালো লাগে না।
-ঠিক আছে মহারাজ। আগে বিয়েটা করে নিই তারপর তোমাকে দেখাচ্ছি।
-কি দেখাবে?
-অনেক কিছু। হিহিহিহি
-পেত্নী
-হু
-ঘুমিয়ে পড়ো এবার। অনেক কালান্ত আছো হয়তো কলেজ থেকে ফিরে।
-হিহিহিহি হুম, তবে তুমি কি কালান্ত হওনা একটুও? এতো গুলো স্টুডেন্টকে পড়াও।
-নাতো একটুও কালান্ত হইনা অভ্যাস হয়ে গেছে।
-হিহিহিহি পাগল একটা।
-হুম তোমারি তো।
-হু আমারি তো, আমার ছারা আর কার হিহিহিহি।
-পাগলী
-আচ্ছা হনুমান একটা বলার ছিলো।
-হুম বলো।
নিশাত আজকের ঘঠে যাওয়া ঘটনাটা বলতে চেয়েছিলো। বলতে গিয়ে আবার থেমে যায়। ছাদিক যদি অযথা চিন্তা করে, এমনিতেই সারাদিনে অনেক কালান্ত থাকে ছেলেটা। এই ভেবে, আজকের ঘঠে যাওয়া ঘটনাটার সম্পর্কে কিছু বলছেনা নিশাত।
-পেত্নী চুপ হয়ে গেলে যে। কি যেন বলতে চেয়েছিলে।
-নাহহ্ কিছু না।
-আচ্ছা বাই ঘুমিয়ে পড়ো এবার। রাত্রে কথা হবে।
-হিহিহিহি আচ্ছা,
-পেত্নী একটা,
ছাদিক ফোনটা কেঁটে দেয়। আসলে ছাদিক আজকে মিমের সঙ্গে ঝগড়া করে এসেছে। ওহহ্ বলা হয়নি মিম হচ্ছে ছাদিকের খালাতো বোন। ছাদিকের বাবা-মা মারা যাওয়ার পর থেকে মিমদের বাড়িতে মানুষ হয়ে আসছে ছাদিক। ছাদিক মিমকে নিজের বোনের চোখে দেখে।
তবে মিম এমনটা বলবে ভাবতে পারেনি কখনো ছাদিক। মিম নাকি ছাদিককে ভালোবাসে। ছাদিক মিমকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করছে। তুই আমার খালাতো বোন তোর সঙ্গে কিভাবে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলি বল?
-তাতে কি হয়েছে। খালাতো বোনকে কি বিয়ে করা যায় না নাকি?
-বিয়ে করা যায়, তবে তোকে আমি নিজের বোন মনে করি। প্লিজ এমন করিস না।
-তবে আমি তো তোকে ভালোবাসি। ছোট্ট থেকেই ভালোবাসি। আমিও যানি তুই আমাকে ভালোবাসিস।
-হুম বাসি তবে বোন হিসেবে।
ছাদিক আর মিমের মধ্যে অনেক কথা-কাটাকাটি হয়। তাইতো সারাদিন ছাদিকের মন খারাপ আজ। মিমের বয়সটা অনেকটাই কাচা। সবে মাত্র ১০ম শ্রেণির ছাত্রী মিম। বুঝতেই তো পাচ্ছেন মিম কতটা পিচ্চি। মিম একটু চঞ্চল কথা বেশি বলে আর মারামারি করতে ভালোবাসে।
.
.
স্কুল ছুটি হয়ে গেলে। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে বাড়িতে ফিরে ছাদিক। বাড়ির কলিংবেল বাজাতেই দরজা খুলে দেয় মিম।
এমনটা এর আগে কখনো হয়নি। মিম সবসময় ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত থাকে। মাঝে মাঝে ছাদিকের রুমে এসে দুষ্টুমি করে মিম।
মিম কান্না চোখে ছাদিকের দিকে তাকিয়ে আছে।
-এই মিম কান্না করছিস কেন?
-এমনি ভিতরে আয় আগে।
-পড়তে বসেসনি আজকে?
-নাহহ্
ছাদিক বাড়ির ভিতরে ঢুকেই, মিমকে বলে উঠে। “এই মিম কান্না করছিস কেন?
-এতোক্ষণ কোথায় ছিলি?
-এই তো বাইরে,
-মানে,, কয়টা বাজে খেয়াল আছে তোর?
ছাদিক ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত নয়টা। ” হিহিহি রাত নয়টা বেজে গেছে। কি হয়েছেটা যানিস তো। স্কুল ছুটির পর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলাম তারপর মাগরিবের নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হয়ে এসে দেখি আমার এক বন্ধু তার সঙ্গে একটু কথা বলতে বলতে,,”
মিমের সামনে দাঁড়িয়ে মাথা চুলকোতে চলকোতে কথাগুলো বলছে ছাদিক।
-কথা বলতে বলতে কি হলো বল।
-কিছু না রে,,।
-আর কিছু বলতে হবে না তোকে। এবার চল ভাত খেয়ে নিবি।
-আমার লক্ষি বোনটা।
-হুহুহুহহহহু এ্যা এ্যা এ্যা এ্যা।
-এই কান্না করছিস কেন?
-আমাকে বোন বললি কেন?
-তুই আমার বোনি তো। আমার কোনো বোন নেই তাই তো তোকে এতোটা ভালোবাসি আমি।
-এ্যা, কোনোদিন তো লক্ষি বোন বলিস নাই তুই আমাকে। আজকে ভালোবাসার কথা বলেছি বলে, বোন বলছিস তাই না।
-আরে পাগলী না।
-আচ্ছা ছাদিক আমি কি তোর বউ হতে পারি না?
-নাহহ্ কখনো না।
-কেন হতে পারি না? তোকে তো আমি অনেক ভালোবাসি।
-মিম দেখ, আমাকে রাগাবি না বলে দিলাম। চল এবার ভাত খেয়ে নিবি।
-হু
-খালা খালু ভাত খেয়েছে মিম?
-হুম খেয়েছে।
ছাদিক পেন্টের পকেট থেকে একটা চকলেট মিমের হাতে দিয়ে বলে।
-মিম এই নে তোর পচ্ছন্দের চকলেট।
-থান্কু,,
-আচ্ছা মিম তুই আমাকে নাম ধরে ডাকিস কেন?
-কারণ আমি তোকে ভালোবাসি।
-ওহ আচ্ছা।
.
.
খালু এখন অনেকটাই বৃদ্ধ হয়ে গেছে। তাই আগের মতো কাজকর্ম করতে পারে না। ছাদিকের জগ্যতা আর খালুর কিছু প্রতেষ্ঠায় বড় স্কুলে চাকরিটা পেয়েছে ছাদিক। মিমদের পরিবারের দাইত্ব এখন ছাদিকের ঘাঁড়ে। তাই তো ছাদিক একটু কিপ্টে। আর খালা খালু ছাদিককে অনেক ভালোবাসে। তা কখনো বলে বুঝানো যাবেনা।
.
.
ছাদিক আর মিম খাবার টেবিলে বসে আছে। ছাদিক মিস্টি হেঁসে মিমকে বলে উঠে।
-মিম, তোর তো বয়স অনেক হয়ে’গেছে।
-হুম
-এই বছর বিয়েটা করে নিবি নাকি?
-নাহহ্, বিয়ে করলে তোকে করবো।
-পাগলী একটা। তোর বিয়ে দেওয়া দাইত্বটা আমার বুঝলি। এমন পাগলামি করিস না প্লিজ বোনটি।
-হুহুহু এ্যা এ্যা।
-পিচ্চি একটা,, সবেমাত্র ১০ম শ্রণিতে তুই।
-বুঝতেই তো পাচ্ছো কতটা বড় হয়ে গেছি আমি।
-হুম অনেক বড় হয়ে গেছিস একদম পাকা বুড়ি।
-হিহিহিহি
-তোর পাগলামী গুলো কখনো যাবেনা?
-হু যাবেনা তো।
-মিম এর পর থেকে আজেবাজে কথাগুলো
বলবি না কখনো ওকে।
-কখন আজেবাজে কথা বললাম আমি?
-ভালোবাসি, বউ বানাবী এই কথা গুলো বলবি না কখনো।
-কেন?
-কারণ আমি তোকে ভালোবাসি খুব ভালোবাসি তবে নিজের বোনের মতো করে। খালু খালা এইসব যানতে পারলে অনেক কষ্ট পাবে।
-আচ্ছা আমি যখন অনেক বড় হয়ে যাবো। তখন কি আমাকে বিয়ে করবি?
-মিম
ছাদিক মিমির চোখের দিকে রাগি ভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। মিম একটু ভয় পেয় বলে।
-স্যরি,,
-তুই না আমার লক্ষি বোন। তারাতাড়ি ভাত খেয়ে নে। তারপর পড়তে বসবি।
-উহু কখনো না। তোর কাছে তো না। আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।
-আচ্ছা ঠিক আছে। ভাত খেয়ে নে আগে।তারপর ঘুমিয়ে পড়বি।
-হিহিহিহি থান্কিউ।
(চলবে?)
গল্পঃ #তুমি_ছারা_আমি_শূন্য
পর্বঃ ৬
লেখকঃ #Mohammad_Asad
“নিশাত রাতের ভাত খেয়ে টেবিলে বই নিয়ে পড়তে বসে। তখন প্রায় রাত ১০ঃ৩০ মিনিট। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে কে যেন অনেকবার ফোন দিয়েছে অপরিচিত নম্বর থেকে। ফোনটা সাইলেন্ট করে রাখার জন্য বুঝতে পারেনি নিশাত। নিশাত অপরিচিত নম্বরটাতে যখন ফোন দিতে যাবে তখনি ওই নম্বর থেকে ফোন আসে। নিশাত ফোন রিসিভ করে।
-হ্যালো,,
-হ্যাঁ বলুন, এতোবার ফোন দেওয়ার মানেটা কি?
-আসলে তোমার সঙ্গে কথা বলতে খুব ইচ্ছে করছিলো আমার।
” নিশাত বুঝে যায় ছেলেটা আর কেউ না আলামিন কলেজের বড় ভাই।”
-কেন কথা বলতে ইচ্ছে করছিলো? আর আপনি কে?
-আমি আলামিন, তোমার হবু জামাই।
-হবু জামাই মানে?
-হুম হবু জামাই,
-থাপ্পড় দেখেছেন কখনো?
-নাতো,
-থাপ্পড়টা আপনার গালে পড়বে। এমন উটভট চিন্তা কখনো মাথায় আনবেন না।
-আমি তোমাকে ভালোবাসি নিশাত।
-তবে আমি তো আপনাকে ভালোবাসি না। আমি শুধু একজনকে ভালোবাসি ছাদিক।
-এই ছাদিকটা কে,, ওর পাঁ আমি ভেঙে রেখে দিবো।
-তাই নাকি?
-হুম তাই।
-আচ্ছা দেখা যাবে,
-নিশাত আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি খুব।
-তবে আমি তো আপনাকে ভালোবাসি না মিস্টার।
-আস্তে আস্তে ভালোবেসে ফেলবে আমাকে, শুধু সময়ের অপেক্ষা।
-তাই নাকি?
-হুম তাই,,
-আচ্ছা দেখা যাবে। তবে বলে রাখলাম আমাকে সারাজীবন ভালোবেসে গেলেও আমাকে পাবেন না।
-হা হা তাই নাকি?
-হুম তাই,
-আমি যা চাই না পেলে কেঁড়ে নেই,, তুমি কি যানো নিশাত।
-যানার কোনো ইচ্ছে নেই আমার।
নিশাত দাঁত কটমট করে ফোনটা কেঁটে দেয়। রেগে আগুন হয়ে গেছে নিশাত। আলামিনকে ব্লক লিস্টে রেখে দেয়। আমাকে এইসব বলে হুমকি দেয় বজ্জাত বেড্ডা।
নিশাত ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত 11:02 মিনিট। নিশাত আবার পড়াই মন দেয়। 12:20 মিনিটে আবার কার যেন ফোন আসে নিশাতের ফোনে। রেগে ফোনটা রিসিভ করে নিশাত।
-এই বজ্জাত ছেলে আবার ফোন দিয়েছিস কেন? “চৈচিয়ে কথা গুলো বলে নিশাত।
-আসসালামু আলাইকুম,, পেত্নী রাগ করে আছো যে। কি হয়েছে তোমার। আর চৈচিয়ে উঠলে কেন?
“নিশাত নিজের জিহ্বায় কামড় দেয়। ইসস এটা তো আমার পাগলটা। আরেকটুর জন্য আরো গালি দিতে চাইছিলাম।
-হিহিহিহি তুমি?
-হুম আমি,, আজকে এতো রেগে আছো যে।
-হিহিহিহি কিছু না এমনি।
-পেত্নী একটা,, কি করো এখন?
-এই তো পড়তে বসেছিলাম। এখন বই রেখে ঘুমানোর জন্য রেডি হচ্ছি।
-ওহহ্ আচ্ছা।
-হুম তুমি কি করো?
-একা রুমে সুয়ে আছি।
-আচ্ছা হনুমান, তোমার খালাম্মার বাড়িতে কে কে আছে?
-খালু খালা, মিম, আর আমি চারজন।
-ওহহ্ আচ্ছা, মিমটা কে?
-আমার খালাতো বোন,,
-আচ্ছা
-হুম
-আচ্ছা আমাকে কবে বিয়ে করবে? ভালো লাগছে না তোমাকে ছারা।
-ইসস রে পেত্নীটা,, প্রতেদিন এক কথা বলো কেন। এতো ইচ্ছে আমার কাছে থাকার?
-ঔই হনুমান, ঢং করবা না বলে দিলাম। ইসস মনে হয় ওর বুঝি ইচ্ছে করেনা।
-হুম ইচ্ছে করে তো খুব।
-তাহলে এমন ঢং করো কেন?
-আর মাত্র ১১টা মাস তারপর তোমাকে নিজের করে নিবো।
-হিহিহিহি
-হ্যাঁসো কেন পেত্নী?
-আমি কিন্তু অনেক দুষ্টুমি করবো তোমার সঙ্গে।
-আচ্ছা ঠিক আছে। যত ইচ্ছে দুষ্টুমি করো।
-হুম করবোই তো। আর অনেক শাসন করবো তোমাকে। তুমি তো সেদিন বলেছিলে তোমার দুষ্টু মিষ্টি একটা বউ চাই, যে তোমাকে শাসন করবে।
-হুম চাই তো খুব।
-হিহিহিহি
-আবার হ্যাঁসো কেন?
-তোমার জীবনটা তেজপাতা বানিয়ে দিবো একদম দুষ্টুমি করে।
-তাই
-হুম তাই,
-আমার বউটা দেখছি খুব দুষ্টু।
-হুম দুষ্টু তো। একটু বেশিই দুষ্টু।
-আচ্ছা ভালোভাবে পড়াশোনা করো।
-হুম,
-আচ্ছা নিশাত ইমু কিভাবে ব্যবহার করতে হয়?
-হিহিহিহি ঠিক তো। ইমু তো খুলে দিছিলাম। ডাটা চালু করো ভিডিও কল দিচ্ছি।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
নিশাতের কথা মতো ছাদিক ফোনের ডাটা চালু করে। আর রুমের লাইটটা জালিয়ে দেয়। নিশাত ভিডিও কলে ফোন করলে ছাদিক রিসিভ করে।, নিশাত ছাদিককে দেখার সঙ্গে সঙ্গে দুই হাত দিয়ে নিজের মুখ লুকিয়ে নেই।
-ইসস আমার বউটা দেখছি খুব লজ্জা পেয়েছে।
“নিশাত দুই হাত দিয়ে নিজের মুখ লুকিয়ে নিয়ে আছে। তা দেখে ছাদিক মুচকি মুচকি হেঁসে যাচ্ছে।”
-পাগলী একটা হাতটা সরাও দেখি। তোমাকে ভালো করে দেখি।
-নাহহ্ সরাবোনা।
-কেন,
-এমনিতেই,
-তাহলে কল কেঁটে দিচ্ছি।
নিশাত নিজের মুখ থেকে হাত দুটি সরিয়ে নেয়। ছাদিক ভিডিও কলের মাধ্যমে নিশাতকে দেখছে। নিশাতের প্রেমে আবার পড়ে যায় ছাদিক।
-আচ্ছা নিশাত তুমি এতো সুন্দর কেন বলোতো।
-ইসস পাম দিচ্ছে কতো।
-কিছু বললে নিশাত?
-নাহহ্ কিছু বলিনাই।
-আচ্ছা।
-হিহিহিহি তুমি তো অনেক মটু হয়ে গেছো আগের চেয়ে।
-হা হা তাই নাকি,।
-হুম তাই,
-জামাই যদি একটু মটু হয় সমস্যা কি নিশাত।
-সমস্যা তো আছেই।
-কি সমস্যা?
-একটা রিকশায় তুমি চড়লে তো ভেঙে যাবে একদম। হিহিহিহি।
-পেত্নী আমি কি এতোটাই মটু।
-আরে হনুমান,, তোমাকে মটু মজা করে বললাম। এতোটা সুখে গেছো কেন?
-কে বললো আমি সুখে গেছি।
-আয়নার কখনো দেখেছো নিজেকে।
-সময় হয়ে উঠেনা।
-তাহলে আজকে ঘুমানোর আগে দেখে নিও নিজেকে। একদম চিতল মাছের মতো হয়ে গেছো।
“ছাদিক এবার রাগি চোখে নিশাতের দিকে তাকিয়ে আছে।”
-কি বললা তুমি, আমি এতোটাই চিকন হয়ে গেছি।
-হনুমান স্যরি রাগ করোনা।
-হু,
-তুমি তো আমার জামাই,, একটু সুখে গেছো তাই বলছি। ঠিক মতো খাওনা কেন?
আমি তোমার কাছে থাকলে মজা দেখাতাম তোমাকে।
-তাই
-হুম তাই, টিফিন বানিয়ে দিতাম তোমাকে,, না নিয়ে গেলে অনেক বকা দিতাম।
“ছাদিক মিস্টি হেঁসে বলে”
-আমার বউটা দেখছি শুধু দুষ্টু না। ডাইনিও একদম।
-হিহিহিহি আমি পেত্নী, ডাইনি, দুষ্টু সব নাকি?
-হুম সব তার সঙ্গে তুমি আমার মিস্টি একটা বউ।
-হনুমান তুমি আমার থেকে বয়সে অনেক বড়। তাই আমি তোমার পিচ্চি বউও,
-আমার দুস্টু মিস্টি বউ।
-হুম, নিজের একটু যত্ন নিও।
নিশাত আর ছাদিক অনেকক্ষণ থেকে কথা বলে। কথা শেষে ছাদিক ফোনটা বালিশের কাছে রেখে দেয়। ড্রেসিং টেবিলে নিজেকে দেখে ছাদিক। ইসস নিশাত তো ঠিকি বলেছে আমি অনেক চিকন হয়ে গেছি। অযথা টেনশন করার জন্য এইসব হচ্ছে আমার। কাল থেকে একটু নিজের যত্ন নিতে হবে।
(চলবে?)