তার জন্য অন্তিম পর্ব (প্রথম অংশ)

0
1230

গল্গ #তার জন্য

#অন্তিম পর্ব (প্রথম অংশ)

লেখিকা#আফিফা আনতারা হুমায়রা

আজ প্রায় এক সপ্তাহ হচ্ছে। আনতারা লক্ষ করছে যে গাসসানের মা তাকে কিছু একটা বলতে চাচ্ছে কিন্তু বলতে পারছে না।তাই আনতারা নিজে থেকেই বলল,,
আনতারা:মা, তুমি কি কিছু বলতে চাও আমাকে।
আনতারার কথা শুনে তিনি যেন কোন মূল্যবান রত্ন পেয়েছেন বলে মনে হয়।
গাসসানের মা:জান আশু পরী না গাসসানকে বাবা বলে ডাকে।
আনতারা :হু,জানি তো।কিন্তু কি তাতে কি হয়েছে..?
গাসসানের মা:জানতো আমার গাসসানটা এখন আর আগের মত নেই।এখন খুব করে চেষ্টা করে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মানার। আর আশু পরী আসার পরতো রাগটাও নেই আগের মত।আমার ছেলে বলে বলছি না।তুমিও তো লক্ষ করেছ বিষয়টা।
আনতারা:তো কি হয়েছে।..?
গাসসানের মা:আশু পরী তো গাসসানকে বাবা বলে ডাকে।যখন বড় হয়ে শুনবে ও আশু পরীর বাবা না তখন কিন্তু খুব কষ্ট পাবে বাচ্চটা। আর মোটামুটি অনেকে যানে গাসসান আশু পরীর বাবা।তাই বলছিলাম কি তুমি যদি গাসসানকে বিয়ে করতে রাজি হও।
গাসসানের মা এতখন কথাগুলো নিচের দিক তাকিয়ে বলছিলেন।কারন আনতারার চোখের দিকে তাকালে কথাগুলো হয়ত নাও বলতে পারতেন।কথা বলা শেষে তিনি আনতারার দিকে তাকালেন,দেখলেন আনতারার চোখে পানি।
আনতারা:তুমি আমাকে নিজের মেয়ে মনে করনা তাই না।
আনতারার কথা শুনে ওনার বুকটা স্যাত করে উঠল।আচ্ছা তিনি কি কষ্ট দিয়ে ফেললেন মেয়েটাকে।
গাসসানের মা:আসলে মা আমি ওভাবে….
তিনি কথাটা শেষ করার আগেই,,
আনতারা:যদি নিজের মেয়ে মনে করতে তাহলে এভাবে বলতে পারতে না।বলতে যে,আনতারা আমি চাই তুই গাসসানকে বিয়ে কর।কিন্তু তুমি সেটা না করে কত কিছু বলছ।আচ্ছা তোমার কি একটুও ভরসা নেই তোমার মেয়ের উপর, যে সে তোমার কথা শুনবে।আর সেই শুরু থেকে আমাকে এখন অব্দি তুমি করে বল কোই গাসসানকে তো বল না।ওনাকে তো তুই করে বল।আমিও তো তোমাকে আপনি থেকে তুমি বলি তাহলে।
আনতারার কথা শুনে গাসসানের মা অনেকটা শান্তি পেলেন।

সেদিনের সেই ঘটনার ১৫ দিন পর আনতারা আর গাসসানের বিয়ে হয়।প্রথমে যদিও সম্পর্কটা জগাখিচুড়ি টাইপ ছিল কিন্তু ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যায়।কারন কে কাকে কি বলবে ভেবে পেতনা দু’জন।
সময়ের সাথে সাথে তাদের সম্পর্কের গভীরতাও বাড়ে।এখন অবস্হা এমন যে কেউ কিছু বলার আগেই অন্যজন বুঝে যায় সে কি ভাবছে। আর মাঝে মাঝে তাদের খুনশুটি তো রয়েছেই।তাদের খুনশুটির মাধ্যে আশু পরী মাঝে মাঝে ঢুকে সেটাকে আরও খুনশুটিময় করে তোলে।বেশ সুখেই কাটছিল তাদের জীবন।

কুকুরের ঘেঁউঘেঁউ শব্দে ধ্যান ভাঙ্গে গাসসানের। ফিরে আসে বর্তমানে।চারদিক অন্ধকার। শুধু ঝিঝি পোকার ডাক আর মাঝে মাঝে কুকুরের ডাক শোনা যাচ্ছে।

বর্তমান

গাসসান মনে মনে ভাবে আনতারা, আশু পরীকে নিয়ে চলে যাবেনাতো তার জীবন থেকে।কথাটা ভাবতেই আতকে ওঠে গাসসান। শরীরের লোম দাড়িয়ে যায় ভয়ে।সে তো থাকতে পারবেনা আশু পরীকে ছাড়া, সেতো কলিজা ওর।আর আনতারা সেতো ওর হ্রিদপিন্ড।হ্রিদপিন্ড ছাড়া সে থাকবে কেমন করে।#তার জন্য তো ওর এই অমূল পরিবর্তন,,আল্লাহর এত নিকটে যাওয়া।#তার জন্য তো তার সংসারটা একটু টুকরো জান্নাতে পরিনত হয়েছে। সে চলে গেল গাসসান হয়ত মরে যাবনা কিন্তু জীবিত হয়েও মৃত হয়ে থাকবে।

হঠাৎ চাপা কাঁন্নার আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গে আনতারার।উঠে দেখে জায়নামাযে বসে কাঁদছে গাসসান। বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে ওর।আজ সকাল থেকেই গাসসানের মন খারাপ দেখে ওর ও মন খারপ ছিল।আর এখন গাসসানের কাঁন্না দেখে বুকটা ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।ধীর পায়ে উঠে ও গাসসানের দিয়ে এগিয়ে যায়।হাত রাখে গাসসানের কাঁধে।

আসলে গাসসানের মন তখন এতটাই অশান্ত ছিল যে সে ভেবে পায়না কি করবে।পরে অশান্ত মনকে শান্ত করতে জায়নামাযে দাঁড়িয়ে পড়ে।

*****অশান্ত মনে শান্তি মিলেনা যখন কোনখানে,
তখন শান্তি মিলে তো শুধু আল্লাহর কুদরতি পদতলে******

কাঁধে কার হাতের অস্তিত্ব অনুভব করে গাসসান। বুঝতে অসুবিধা হয়না যে এটা আনতারার হাত।
আনতারা:গাসসান,, গাসসান
এতক্ষণ গাসসান চাপা স্বরে কাঁদলেও আনতারার কথা শুনে তাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।কেঁদে কেঁদে বলে,,
গাসসান :আমা..কে ক..খন ছে..ড়ে যাবে….নাত।
কাঁন্নার জন্য ভালকরে কথাও বলতে পারছে না গাসসান।
আনতারা:গাসসান দেখেন আমার দিক।
গাসসান আনতারার কথায় পাত্তা না দিয়ে ওকে আরও দৃঢ়ভাবে জড়িয়ে ধরে বলে,,
গাসসান :আমাকে কখন ছেড়ে যেওনা প্লিজ। না হলে মরে যাব আমি।
এবার গাসসানের কথা শুনে আনতারাও কেঁদে দেয়।কেঁদে কেঁদে দু’হাতে গাসসানের মুখ ধরে ওর মুখের দিকে তুলে ধরে।
আনতারা:গাসসান,, গাসসান আমার দিক তাকান প্লিজ।আমার চোখের দিক তাকান।
আনতারার কথা শুনে গাসসান ওর চোখের দিকে তাকিয়ে শান্ত হয়ে যায়।কারন সে আনতারার চোখে ওর জন্য ভালোবাসা দেখতে পারছে।শুধু ওর জন্য।আনতারা চোখ ওকে বলছে কখন ছেড়ে যাবেনা ও তাকে।
আনতারা:কি হয়েছে আপনার হঠাৎ এমন কথা কেন বলছেন।আর আজ সকাল থেকে আপনার মন খারাপ কেন..?
গাসসান ওকে সকালের কথা বলে।
গাসসানের কথা শুনে আনতারা বলে,, আপনি কি পুর কথা শুনেছিলেন..?
গাসসান মাথা দুলিয়ে না যানায়।
আনতারার এবার খুব হাসি পায় গাসসানের ফেস দেখে।বেচারা পুর কথা না শুনেই কত কিছু ভেবেছে।
আনতারা:আপনি জানেন আমি আয়ূশকে কি বলেছি..?
গাসসান :কি..?
আনতারা:আমি বলেছি আশু পরী আপনার মেয়ে।
গাসসান :সত্যি বলছ।
আনতারা:(কপট রাগ দেখিয়ে)আপনার কি মনে হয় আমি মিথ্যা বলি।
গাসসান :না বলো না তো।
গাসসান দেখল আনতারা মুখ ফুলিয়ে আছে।
গাসসান :দেখ বৌ আমি কান ধরেছি তার পরও রাগ করনা প্লিজ। তুমি যদি চাও তাহলে চৌরাস্তার মোড়ে গিয়ে কান ধরে উঠবস করব তার পরও রাগ করোনা।
আনতারা হেসে দিল গাসসানের কান্ড দেখে।
আনতারা:হয়েছে থাক আর নাটক করতে হবেনা।আপনি রাস্তায় গিয়ে কান ধরে উঠবস করেন আর লোকে বলুক আমি দাজ্জাল।
…………চলবে।