তার জন্য পর্বঃ০৭

0
1082

গল্প#তার জন্য
পর্ব#৭
লেখিকা#আফিফা আনতারা হুমায়রা

….সময় চলমান।সে তার নিজ গতিতে চলতে থাকে।না কারো সুখে, না কারো দুঃখে আর না কারো মৃত্যুতে সে থেমে থাকে।কিয়ামত দিবসের আগ পর্যন্ত সে বিরতিহীনভাবে চলতে থাকবে।কারো সাধ্যি নেই যে তাকে ধরে রাখে।

দেখতে দেখতে ৫ মাস হয়ে গেল আনতারা গসসানদের বাড়িতে এসেছে।এই ৫ মাসে অনেক কিছু বদলেছে। গাসসানদের বাড়ী যেন এক টুকর জান্নাতে পরিনত হয়েছে।গাসসানের না,আফিয়া খালা,আরিফ চাচা আর গাসসান সবাই ৫ ওয়াক্ত নামায পড়ে।আরিফ চাচা আর গাসসান সর্বদা চেষ্টা করে জামাতে নামায পড়ার।তারা সবাই কুরআন পড়া শিখেছিল অনেক আগে আর অনেক দিন না পড়ার কারনে প্রায় ভুলতেই বসেছে কুরআন তেলাওয়াত করা।তাই গাসসানের মা আর আফিয়া খালা আনতারার কাছে আবার কুরআন পড়া শেখে।আরিফ চাচা আর গাসসান একজন হুজুরের কাছ থেকে শেখে।যেদিন গাসসান শুনেছে কুরআনের ১ হরফ পড়লে ১০ নেকী আর নামাযে ভুল তেলাওয়াতেরর নামায শুদ্ধ হয় না সে দিনেই সে একজন হুজুর ঠিক করে কুরআন শেখার জন্য।এখন আর দাড়িও সেভ করেনা গাসসান। খোচা খোচা দাড়ি হয়েছে তার দেখতে আগের থেকে বেশ লাগে।অফিসের কর্মচারীর সাথে এখন আর অযথা রাগারাগি করেনা।কেউ ভুল করলে তাকে সুন্দর করে বুঝিয়ে দেয়।

এদিকে আনতারার ডেলিভারির ডেডও এগিয়ে আসছে।গাসসানের মা,আফিয়া খালা আর আরিফ চাচা তাকে নিয়ে খুব টেনসন করে।গাসসান যে টেনসন করে না তা নয়,ধরতে গেলে সেই বেশি টেনসন করে,কিন্ত কেন করে তা সে যানেনা।আনতারাকে সে একবারেই দেখেছে।আর মাঝে মাঝে কোন দরকারে কথা হয়েছে তাদের।এতেই কেন জানিনা গাসসান আনতারার প্রতি টান অনুভব করে।

গাসসানের মা:আনতারা তোমার কি আর কোন জামাকাপড় নেয়া লাগবে..?
আনতারা:এত আগে না গেলে কি হয়না।
গাসসানের মা:গাসসানের কড়া নির্দেশ আজই যেতে হবে।পারলে তুমি গিয়ে বল।
আনাতারা:(মুখ ভেংচি দিয়ে)তোমার অমন হাতি মাড়কা ছেলের সাথে কথা বলতে বয়ে গেছে।
গাসসানের মা:তা পরবি তো একথা গাসসানের সামনে বলতে।
(আনতারা যদিও বাহিরে থেকে দেখায় যে সে গাসসানকে ভয় পায় না,কিন্তু কথা বলার সময় ভিতরে ভিতরে ঠিকি কাঁপে, না জানি কখন ষাড়ের মত দেয় একটা সাট।আর সেটা কেউ না বুঝলেও গাসসানের মা ঠিক বুঝে।)
এত কথা বাদ দাও তোমার আর কোন কিছু লাগবে কিনা বল..?
আনতারা:(মুখ ভার করে) না লাগবে না।

আসলে আজ আনতারাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হবে।যদিও ডাক্তার ১০ দিন পরের ডেড দিয়েছে, কিন্তু গাসসানের কড়া নির্দেশ আজওই যেতে হবে।আর ওর আদেশ অমান্য করার সাধ্য কারো নেই।তাই না চাইতেও আনতারাকে আজই যেতে হচ্ছে।এ জন্য আনতারা গাসসানের ২৮ গুষ্টি উদ্ধার করছে, মানে শ্বশুর বাড়ির সহ।
আনতারা হাসপাতালে থাকাকালে গাসসান প্রতিদিন এসে ওর খবর নিয়ে যায় কিন্তু রুমে প্রবেশ করে না।সে চায়না আনতারা তার জন্য অসস্তিতে পড়ুক।

আজ আনতারার বেবি হয়েছে।আল্লাহর রহমতে সিজার করতে হয়নি।একজন নার্স একে বেবিটাকে গাসসানের কোলে দিয়ে গেল।
নার্স :এই নিন আপনার মেয়ে।ঠিক ময়ের মত হয়েছে। যেন মায়ের কার্বন কপি।আপনার সাথে একটুও মিল নেই।বলে নার্স চলে গেল।কারন সে তো জানেনা গাসসান এই ছোট পরীটার বাবা নয়।
(নার্স এর কথা শুনে গাসসানের মা ভাবে যদি এমনটা হয়,যদি তার গাসসান ছোট পরীটার বাবা হয় আর আনতারার দায়িত্ব নেয় তাহল কেমন হয়।তিনি আগে থেকেই আনতারাকে আর ছেলের বউ বানাতে চাইতেন,তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়াও করেন তিনি। কিন্তু কি ভাবে বলবেন কথাটা আনতারাকে।যদি আনতারা ভুল বোঝে ওনাকে।সেই ভয়ে আর বলা হয়না তার)
বেবিটাকে কোলো নিয়ে গাসসানের এক ধরনের ভাল লাগা কাজ করে, শান্তি অনুভব করে মনের মাঝে।কিন্তু কোথাও যেন শূন্যতা অনুভব করে।কারন সে তো আর সত্যি সত্যি ছোট পরীর বাবা নয়।আচ্ছা সে যদি পরীটার বাবা হয়ে যায় তাহলে।মাকে বলবে আনতারার সাথে কথা বলতে।পরে ভাবে না থাক আনতারা যদি ভাবে আমরা ওর অসহায়ত্বের সুজগ নিচ্ছি তাহলে।আর ভুল বুঝে যদি পরীটাকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যায়।এখন তো তাও চোখে দেখতে পারছে,কোলে নিতে পারছে তখন সেটাও আর হবে না।

ছোট পরী ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে।গাসসান তো আশু পরী (আনতারার মেয়ে) বলতে পাগল,আর আশু পরী গাসসানকে দেখতে পেলেই তার কোলে উঠতে চায়।এখন অবস্হা এমন যে মাঝে মাঝে আনতারাও পারে না ওর কাঁন্না থামাতে কিন্তু গাসসান কোলে নিলেই ভদ্র মেয়ের মত চুপ হয়ে যায়।
আশু পরী এখন রাতেও গাসসান এর কাছে থাকে মাঝে মাঝে।কারন তার বয়স ৯ মাস তাই তেমন সমস্যা হয়না।আর গাসসান তো দু’পায়ে খাড়া আশু পরীকে ওর কাছে রাখতে।
এমনি একদিন গাসসান আশু পরীর সাথে খেলছিল। তখন হঠাৎ আশু পরী আধ আধ কন্ঠে বা…বা,,বা…বা বলে ওঠে।
আশু পরীর মুখে বাবা ডাক শুনে গাসসান এর চোখ থেকে দু’ফোঁটা আনন্দ অশ্রু ঝরে পরে।
গাসসানের মা সব দেখছিলেন,,তিনি বুঝেন যে তার ছেলে খুব করে চায় আশু পরীর বাবা হতে।গাসসান কিছু বলেনি,কিন্তু তিনি তো মা তাই সন্তান বলার আগেই বুঝে যান।আচ্ছা তিনি একবার বলে দেখবেন আনতারকে।আল্লাহ চাইলে তো হতেও পারে।
……..চলবে।