তার জন্য পর্বঃ০৬

0
1180

গল্গ #তার জন্য
পর্ব#৬
লেখিকা#আফিফা আনতারা হুমায়রা

গাসসানের মা:আজ তুই যেই মেয়ের এক্সিডেন্ট ঘটিয়েছিস তার নাম আনতারা।
গাসসান :আমাদের বাসায় কেন থাকবে তার বাসায় যাবে না।
গাসসানের মা:না রে মেয়েটার কেউ নেই।ওর বাবা মা মারা গেছে।
গাসসান :ও,
আর তার স্বামী , শ্বশুর বাড়ির লোক ওরা..?
গাসসানের মা:মেয়েটার ডিভোর্স হয়ে গেছে।
আর শুন উপর তলার ডান দিকের রুমে ও থাকবে।তাই তোর সেদিকে যাওয়া বারন।
গাসসান :কেন,বারন কেন..?
আমার বাড়ী আমি যেদিক খুশি সেদিক যাব।
গাসসানের মা:মেয়েটা খাস পর্দা করে তাই কোন ছেলের সামনে যায়না। তাই তুই ঐ দিক যাবি না।ওদিকে তোর কোন জিনিস থাকলে আজ বিকেলের মাঝে আনিয়ে নিস।
বলে গাসসানের মা চলে গেল।

এক মাস হলো আনতারা এ বাড়িতে এসেছে। এই এক মাসে অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটেছে।
বাড়ির সবার রান্না এখন আনতারাই করে।আফিয়া খালা শুধু সাথে থেকে সবকিছু এগিয়ে দেয়।
বাড়ির সবাই পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে।আগে দু/তিন ওয়াক্ত বড়জোর পড়ত।
আফিয়া খালা আর আরিফ চাচা মাকে এখন আপা আর আমাকে বাবাই বলে ডাকে। আগে মা কে মেডাম আর আমাকে স্যার বলে ডাকত।
আর মা আরিফ চাচাকে ভাই বলে ডাকে কারন তিনি ময়ের বড়।আগে নাম ধরেই ডাকত।আর আফিয়া খালা ছোট হওয়ায় আফি আপা বলে।
আনতারা নাকি মাকে বলেছে ইসলামে সব মানুষের সমান অধিকার। আর রাসূল (সা.) বলেছেন,মুসলিমরা সবাই ভাই ভাই।এ কথা শুনার পরপরই মা এই নিয়ম শুরু করেন।

একদিন রাত ১ টা ৩০ মিনিটে গাসসান বাসায় আসে।যদিও সে ১২টার মধ্যেই আসার চেষ্টা করে কিন্তু মাঝে মাঝে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার কারনে দেরি হয়ে যায়।
একনাগারে কলিং বেল বাজিয়ে যাচ্ছে গাসসান, কিন্তু কারও খোলার নাম নেই।
আজ আনতারার কেন যানিনা খুব খারাপ লাগতেছে।শরীর ভার ভার লাগছে তাই ঘুমাতেও পারছে।হঠাৎ করে সে কলিং বেলের শব্দ পায়।ও জানে গাসসান ছাড়া কেউ নয়।সেই মাঝে মাঝে অনেক রাতে বাসায় আসে আর আরিফ চাচা দরজা খুলে দেয়।
কিন্তু আজ প্রায় ১০ মিনিট হয়ে গেল চাচা দরজা খুলে নি,কারন সে এখন বেলের শব্দ পাচ্ছে।হঠাৎ তার মনে পড়ে বিকেলে চাচা বলতেছিল তার জ্বর জ্বর লাগতেছে।তাই হয়ত অসুধ খেয়ে ঘুমিয়ে গেছে।আর জ্বর আসার কারনে হয়ত শরীর দূর্বল হয়েছে তাই জাগনা পাচ্ছে না।তাই অন্য উপায় না পেয়ে নিজেই গেল দরজা খুলতে।

দরজা খুলতেই,,
গাসসান :কি ব্যাপার চাচা আজ দরজা খলতে এত দেরি হলো যে,,বলে তাকিয়ে দেখে চাচা না আনতারা দরজা খুলে দিয়েছে।(আপদমস্তক কাপড়ে ঢাকা থাকার কারনে গাসসান এর বুঝতে অসুবিধা হয়না যে এটা আনতারা।
গাসসান রুমের দিকে পা বাড়াতেই আনতারার কন্ঠ শুনে থেমে গেল।গাসসানের মনে হচ্ছ এমন মিষ্টি কন্ঠ সে এর আগে কখন শুনেনি।
আনতারা:আমার জানা মতে আপনার কাজ ৯টার মধ্যে শেষ হয়।তাহলে এত দেরি হল যে,,যদি বলেন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়েছি তাহলে ৯ থেকে ১১ টা পর্যন্ত তো আড্ডা দিলে এনাফ।কারন ২ ঘন্টা অনেক সময়।আর রাত ১২টার আগেই বাসায় আসতে পারেন।
শুনুন কাল থেকে যদি ১২টার আগে বাসায় আসতে পারেন তাহলে আসবেন না হলে নয়।

আনতারার কথা শুনে টাস্কি খেল গাসসান বলে কি এই মেয়েটা।বাচ্চা একটা মেয়ে আর আমাকে আদেশ দেয়,আবার তার বাসায় থেকেই।গাসসান এর ইচ্ছে করছে দু/চার কথা শুনিয়ে দিতে কিন্তু কেন যানি পারছে।গাসসান অনেক রাগী যদি কেউ কিছু বলে তাহলে তার হাল সে বেহাল করে দেয়।কিন্তু এই মেয়েটার বেলায় কোন কথায় মুখ থেকে বের হচ্ছে না।
গাসসান ছোট্ট করে বলে:হু।
আনতারা:আসলে সারাদিন কাজ করার পর যে কাররই ক্লান্ত লাগে,সে চায় একটু ঘুমাতে।আর আপনি এত রাতে আসার কারনে চাচার ঘুমের অসুবিধা হয়।আপনাকে দরজা খুলে দিতে হয়,খাবার গরম করে দিতে হয়।আর তার উপর আজ চাচার জ্বর।
কথাটা শুনে গাসসানের খারাপ লাগে আসলেই তো আনতারা ঠিক বলেছে।সে নিঃশব্দে ফ্রেস হতে গেল।ফ্রেস হয়ে এসে দেখে টেবিলে খাবার সাজান।খেয়ে রুমে যাওয়ার সময় আনতারা ডাক দেয়।
আনতারা:আসলে আমি দুঃখিত,,ওভাবে তখন বলতে চাইনি।এ কদিনে কেন জানিনা মেজাজ টা খিটখিটে হয়ে গেছে।
গাসসান ঠিক আছে বল চলে গেল।
এ ঘটনার সাত দিন পর।

গাসসান :মা মা।
গাসসানের মা:কি হয়েছে, এভাবে ষাড়ের মত চিল্লাচ্ছিস কেন।
গাসসান :(রাগী চোখে ওর মায়ের দিকে তাকাল)
ইদানিং দেখতেছি আনতার আসার পর থেকে তোমাদের সাহস একটু বেড়ে গেছে বলে মনে হচ্ছেনা।
গাসসানের মা:(মিনমিনিয়ে)কি বলবি বল।(হু,আসছে আমাদের উপর খবরদারি দেখাতে,কই কাল আনতারাকে তো কিছু বলতে পারল না।আসলে কাল যখন ওরা কথা বলছিল তিনি উপর থেকে সব দেখেন।আর ভাবেন মেয়েটাকে যদি গাসসানের বউ বানাতে পারতেন,,মনে মনে)
গাসসান :মা (জোরে চিল্লিয়ে) কই হারায় গেছ।এখানে আছ তারপরএ শুনতে পাওনা সেই কখন থেকে তোমাকে ডাকতেছি।
গাসসানের ডাকে তার হুশ আসে।
গাসসানের মা:হ্যাঁ, কি বলবি বল।
গাসসান :এগুলো কি..?
গাসসানের মা:কেন দেখতে পাচ্ছিস না নাস্তা।যা খেয়ে তুই অফিসে যাবি।
গাসসান :নাস্তার এমন দশা কেন।মনে হয় দেখে আছে, আর আমাকেই খেয়ে নেয়ার পরতারা করতেছে ,, আমি ওদের কি খাব।
আসলে আজ আফিয়া খালা রান্না করছে।তাই এমন দশা।এতদিন রান্না না করার ফল।কারন এতদিন আনতারাই রান্না করছে।
আর গাসসানের ও অভ্যাস হয়ে গেছে আনতারার হাতের রান্না খেয়ে। তাই এগুলো ভালো লাগতেছেনা।
গাসসান :আনতারার কি শরীর খারাপ, আজ রান্না করেনি যে।
গাসসানের মা:না শরীর খারাপ নয়,ও বলে দিয়েছে যে নামায পড়বে না তার জন্য ও রান্না করতে পরবে না।
গাসসান :What..?
আসলে গাসসান নামায পড়েনা।তাই তাকে নামায পড়ানোর এই উপায় বের করেছে আনতারা।কারন সে জানে ওর হাতের রান্না যে একবার খেয়েছে সে থাকাতে অন্য কারো হাতের রান্না তারা খাবে না।

এদিকে গাসসানের অবস্হা দেখে মা,আফিয়া খালা আর আরিফ চাচা মিটমিটিয়ে হাসছে।
আজ তিন / চার দিন ধরে আফিয়া খালার রান্না খেয়ে বিরক্ত গাসসান, তাই ঠিক করছে আজ থেকে নামায পড়রে তার পরও আফিয়া খালার রান্না খাবে না।

প্রথম প্রথম ফজর নামায মিস গেলেও এখন আর যায়না।পাক্কা নমাযি হয়ে গেছে।এখন চেষ্টা করে ৫ ওয়াক্ত নামাযই জামাতে পড়তে।
চলবে……..