তার শহরের মায়া ২ পর্ব-২০

0
583

#তার_শহরের_মায়া ২
#পার্ট_২০
#Writer_Liza_moni

দশটার দিকে তূর্য ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে গেলে রান্না ঘর থেকে মা শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে বের হয়ে আসেন। তূর্যর সামনে বসে কিছু বলার জন্যে বেশ উসখুস করতে থাকেন। তূর্য পরোটা ছিঁড়ে ভাজি নিয়ে মুখে পুরে চিবাতে চিবাতে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
আম্মু কী কিছু বলবা?

মিসেস তৃনা চোখের চশমা টা হাতে নিয়ে নরম কাপড় দিয়ে মুছে আবারও চোখে লাগিয়ে তূর্যর দিকে তাকিয়ে বললো,
একটা কথা বলতাম।

হুম বলো না।এত দ্বিধাগ্রস্ত দেখাচ্ছে কেন?

না আমার কথাটা তুই ঠিক কি ভাবে নিবি আমি তা ঠিক বুঝতে পারছি না। আচ্ছা তুই কী সত্যিই অনু কে পছন্দ করিস না?

তূর্য পানি খাওয়ার জন্য গ্লাস হাতে নিয়ে ছিল। মায়ের দিকে এক নজর তাকিয়ে গ্লাসের সব পানি শেষ করে টেবিলের উপর বেশ জোরেই গ্লাসটা রাখলো।

কিরে কিছু বলছিস না কেন?

হঠাৎ এই কথা জিজ্ঞেস করছো কেন বলো তো?

পাশের রুম থেকে জুঁই এসে তূর্যর পাশে দাঁড়িয়ে বললো,মেঘ আপু কে আমার আর মায়ের বেশ ভালো লেগেছে। পছন্দ হয়েছে বলতে পারিস।

তূর্য জুঁই এর দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো,তো কি হইছে? পছন্দ হতেই পারে। মেয়েটা দেখতে তো আর খারাপ না। আচার আচরণ ও খারাপ না।

তূর্যর কথা শুনে মিসেস তৃনা চট করে বলে উঠলেন, তাহলে তোর কেন ওকে পছন্দ না?

আমি আবার কখন বললাম পরমানু কে আমার পছন্দ না?

মিসেস তৃনা সন্দিহান দৃষ্টিতে তূর্যর দিকে তাকিয়ে বললো, তুই ঐ দিন ও বলে ছিলি তোর জন্য হাত কাটছে তার পর ও তোর মেয়েটাকে পছন্দ না।
মায়ের কথা শুনে তূর্যর হুস ফিরল। তূর্য আমতা আমতা করে বলতে না লাগলো,
না মানে,আসলে
ওকে তো আমার ভালোই লাগে না। শুধু শুধু আমার পেছনে পড়ে আছে।কত বলেছি আমার জন্য যেন পাগলামি না করে। তবু ও তো আমার কথা শুনে না। আচ্ছা মা তুমি বলো যার জন্য আমার মনে কোনো ফিলিংস আসে না। তাকে আমি কি করে ভালোবাসবো বলো তো? মেয়েটা আমার কথা একদম শুনতে চায় না।
এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে দম ছাড়লো তূর্য। মিসেস তৃনা আর জুঁই খুব মনোযোগ সহকারে এতক্ষণ ধরে তূর্যর কথা গুলো শ্রবণ করছিল।

আচ্ছা তাহলে এটাই তোর কথা যে অনুকে তোর পছন্দ না?

আরে আমি ওটা কখন বললাম আমি তো এনি,,,
না না অনু,হ্যাঁ অনু কেই তো আমার পছন্দ না।

আচ্ছা। তাহলে তো আর কোনো সমস্যা নেই।

আচ্ছা এই সব কথা কেন জিজ্ঞেস করতেছো বলো তো?

তুই তো জানিসই।তিয়াসের জন্য মেয়ে দেখতেছি আমরা। কিন্তু কোনো মেয়ে কে ঠিক তেমন পছন্দ হচ্ছে না।অনু কে যখন তোর পছন্দ না তখন তিয়াসের জন্য ওকে দেখলাম।

মিসেস তৃনার বলা কথা টা যেনো তীরের মত গেঁথে গেল তূর্যর বুকের বাঁ পাশে। তূর্য বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মলিন মুখে মায়ের দিকে তাকিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে রুমে চলে গেল।যদি ও তার এতটা খারাপ লাগার কথা ছিল না। তবু ও নয়া নয়া অনুভূতি তো,,,

“সব অনুভূতি কি আর সবার জন্য আসে?আর যার জন্য আসে সে কি সেই অনুভূতির মূল্য বুঝে?”

মাহির আর মাহিরের মা অনুর মায়ের অপমান সহ্য করতে না পেরে অনুদের বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল।মাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে মাহির ঢাকার পথে রওনা দিলো। উদ্দেশ্যে অনুর কাছে যাওয়া।

তনু কে সে সারা জীবন এর জন্য হারিয়ে ফেলেছো। শুধু মাত্র অনুর অনুভূতি নিয়ে ডেয়ার খেলার জন্য।অনু যদি তাকে এখন মাফ করে দেয় তাহলে একটা মানুষ কে যত টা ভালোবাসা যায়,যত ভাবে তাকে খুশি করা যায় সব রকম চেষ্টা করবে সে।প্রিয় মানুষ হারানোর যন্ত্রণা ইশশ কী বিষাদময়!
.
.
আজ শুক্রবার।আজ অনুর ছুটি। ভার্সিটি ও নেই, টিউশনি ও নেই।বেলা প্রায় ১২টা।রিয়ানা আর অনু দুজনে মিলে বেশ তোড় জোর করে রান্না শেষ করলো।গরমে ঘেমে একাকার হয়ে যাওয়া ক্লান্ত অনু বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। বেশি ঘেমে গিয়ে শরীর ঠান্ডা না করে গোসল করলে ঠান্ডা লেগে যাবে। তখন গলা ব্যথা,সর্দি যা তা অবস্থা হবে।অনু কিছুক্ষণ চুপ করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকলো।প্রায় ঘন্টা খানেক আগেই অনুর বাবা ফোন করে জানিয়ে দিয়েছেন উনারা গাড়িতে উঠে গেছেন।আসতে আসতে যদিও বিকেল গড়িয়ে যাবে।

অনু শোয়া থেকে উঠে গোসল করার জন্য কাপড় নিয়ে বাথরুমে চলে গেল।

তূর্য বিছানায় শুয়ে শুয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছে।বালিশ জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে আছে।মুডটা অফ হয়ে আছে। কেন মুড অফ হয়ে আছে তা সে বুঝতে পারছে না।তবে এই টুকু ঠিক বুঝতে পারছে যে,অনু কে তার বড় ভাইয়ের বউ হিসেবে সে মেনে নিতে পারবে না।
মায়ের অনু কে এতটাই পছন্দ হয়েছে যে তিনি পরমানু কে বাড়ির বউ করে ছাড়বে। ধুর এর থেকে তো এনিকেই নিয়ে আসা ভালো ছিল। আমি বিয়ে করতে না চাইলে তো আর জোর করে বিয়ে দিতো না।
কেন যে এমন পাকনামি করতে গেছিলাম?

জুঁই তূর্যর রুমের দরজায় কয়েক টা টোকা দিয়ে বললো, ভাইয়া দরজা খোল।

কানে হেডফোন লাগানো থাকায় তূর্য শুনলো না। জুঁই আরো বেশ কয়েক বার ডাকলো তূর্য কে। তূর্যর কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে জুঁই দ্রুত মায়ের কাছে চলে গেল। মায়ের রুমে গিয়ে জুঁই ভিতী কন্ঠে বলল,
আম্মু ছোট ভাইয়া রুমের দরজা খুলছে না।কত বার করে ডাকলাম কোনো সাড়া পেলাম না।

দেখ গিয়ে মরার ঘুমিয়ে আছে।

আমি যে এত জোরে জোরে ডাকলাম শুনলো না?আসো না একটু,,,,

মিসেস তৃনা চোখ মুখ কুঁচকে জুঁই কে তার পেছনে পেছনে আসতে বলে তিনি তূর্যর রুমের দিকে চলে গেলেন।
কয়েক বার তূর্য কে ডাকলেন তিনি। তূর্য ততক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে। মিসেস তৃনা এবার বিরক্ত হয়ে জোরে দরজাটা ধাক্কা দিলেন। সাথে সাথে দরজা খুলে গেল। মিসেস তৃনা দ্রুত হেঁটে গিয়ে তূর্যর কান মলে দিলেন। তূর্য ধরফরিয়ে শোয়া থেকে উঠে মায়ের দিকে তাকিয়ে কান ডলতে লাগলো।

বাপরে বাপ।কানে হেডফোন লাগিয়ে ঘুমিয়ে আছিস এত বার ডাকলাম কোনো শব্দ পেলাম না। আমি তো ভাবলাম তুই বোধ হয় মরেই গিয়েছিলি।

জুঁই এর কথা শুনে মিসেস তৃনা চোখ গরম করে জুঁই এর দিকে তাকিয়ে ঝাঁজালো কন্ঠে বললেন,
ঠাস করে দিবো এক চড়।এই সব কোন ধরনের কথা?যখন যা মুখে আসে তাই বলতে হবে তাই না?

মায়ের বকুনি শুনে গাল ফুলিয়ে তূর্যর রুম থেকে বের হয়ে গেল জুঁই। আমি কী কথাটা সিরিয়াস ভাবে বলেছি নাকি?মা শুধু শুধু সিরিয়াসলি নিলো কথাটা।আর কিছু কমুই না।

কী হইছে?তোমরা এই ভাবে আমার রুমে এসে ঢুকলা কেন এই ভর দুপুরে?

তুই আজ বাইরে আড্ডা দিতে গেলি না কেন?

মিসেস তৃনার কথা শুনে বেশ অবাক হলো তূর্য।কে বলতেছে এই কথা? আম্মু তুমি ঠিক আছো তো? না মানে তোমার শরীর ঠিক আছে?

এত ঢং করতে হবে না। প্রতিদিন তো ঘুম থেকে উঠেই আড্ডা দিতে বেরিয়ে যাস।আজ গেলি না তাই বললাম।

মন চায়নি তাই যাই নি।ভালো লাগছিল না।

সেকি শরীর খারাপ না তো আবার?সিজন চেন্জ হচ্ছে। এখন কিন্তু সবার শরীরর খারাপ হচ্ছে। জ্বর উঠে নাই তো আবার?
মিসেস তৃনা তূর্যর দিকে এগিয়ে এসে তূর্যর কপালে হাত রেখে দেখলো গা গরম কিনা।

তূর্য বেশ বিরক্তি নিয়ে বললো,
শরীরর ঠিক আছে।
এমনিতেই ভালো লাগছিল না।

এমনিতে কী কারো আবার খারাপ লাগে নাকি?

আচ্ছা আম্মু মানুষের কী শুধু শরীরের অসুখ হয়?মাঝে মাঝে তো মনের ও কঠিন অসুখ হয়।

চলবে,,,,,,