তার শহরের মায়া ২ পর্ব-১৯

0
487

#তার_শহরের_মায়া
#পার্ট_১৯
#Writer_Liza_moni

তুই কথার মাঝে কল কেটে দিলি কেন?

না মানে আম্মু নেটওয়ার্কের সমস্যা তো তাই।

আমি আর তোর আব্বু আসবো আগামী কাল। তোর ফুফুর বাড়িতে থাকবো।

আচ্ছা আসিও।রাখছি এখন। পড়তে বসতে হবে। অনেক পড়া জমে আছে।

আজকে সব পড়ে উদ্ধার করে ফেল তুই।রাখছি আমি,,

হুম রাখো।
অনু কল কেটে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো।রিয়ানা মুচকি হেসে বললো কী হলো তোমার না অনেক পড়া জমে আছে? তুমি পড়তে না বসে শুয়ে পরলে কেন?

বললাম আর কি আম্মু কে। শরীরের উপর অনেক ধকল গেছে। এখন রেস্ট এর দরকার। লম্বা একটা ঘুম দিলেই শান্তি।
.
ভাই তুই ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিস আর আমাদের বললেই সমস্যা?

ভাই বিশ্বাস কর অনুর সাথে আমার তেমন কিছু নেই।আমরা শুধুই ফ্রেন্ড।

অর্ক আয়েস করে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে তূর্যর উদ্দেশ্যে বললো,
আমাদের এত দিনের ফ্রেন্ডশিপে আজ প্রথম দেখলাম আমাদের হ্যান্ডসাম বয় তাওহীদ তূর্য কিনা অন্য একটা মেয়ে কে তার বাইকের পিছনে নিয়ে ঘুরলো।এক দিন সেই বলে ছিল,
“আমার বাইকের পিছনে আমার আম্মু ছোট বোন আর অর্ধাঙ্গিনী ছাড়া অন্য কোনো মেয়ে কে বসাবো না।”

পছাস কেন রে ভাই?বিপদে পড়েই তো অনুকে বসাতে হলো।ওকে নিয়ে বাড়িতে যেতে হলো।

বিপদে পড়েই তোর কেন ঐ মেয়েটা কী জানি নাম অনু হ্যাঁ অনুর কথা মনে হলো বল তো?

সবুজের কথা শুনে তূর্য অবাক হয়ে ওদের সবার দিকে তাকালো।কিরে বল?

অদ্ভুত তো ভাই।ও আমাকে এই সমস্যা থেকে বের করতে পারবে বলেই তো আমি ওকে নিয়ে গেলাম মায়ের কাছে।

এত কথা না পেচিঁয়ে এক কথায় বলে দিলেই তো পারিস যে তুই মেয়েটার প্রেমে পড়ে গেছিস।

অর্কর কথা শুনে তূর্য হাসবে না কাঁদবে অবস্থা। সামান্য একটা ব্যাপার কে তোরা এত দূর নিয়ে চলে গেলি?তিল কে তাল বানিয়ে কী মজা পাস বলতো?আর এমন তো না যে তোরা এনির ব্যাপার টা জানতি না।
মা যদি এনির ন্যাকামিতে গলে যেতো? তখন তো ঐ মেয়ে কে আমার ঘাড়ে নিয়ে বয়ে বেড়াতে হতো। তোরা তো শুধু মজা নিতে পারিস।

ঘড়ির কাঁটা দশটা ছুঁই ছুঁই। তূর্য টং এর দোকান থেকে রেগে বের হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে বেস্ট ফ্রেন্ড গুলো এমন এমন কথা বলে যে মেজাজ ঠিক রাখা যায় না।
রাতের শহরটা ঝিকমিক করছে আলোয়।

বাড়ি ফিরে এসে গায়ের শার্টটা খুলে বিছানায় ছুড়ে মেরে ওয়াস রুমে চলে গেল।ওয়াস রুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে আছে তূর্য। কেন জানি রাগ হচ্ছে খুব।
মানুষের অনুভূতি কি এতোই সস্তা?

বেশ কিছুক্ষণ পরে তূর্য ওয়াস রুম থেকে বের হয়ে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বেলকনিতে চলে গেল তূর্য।বেলকনি থেকে রাতের শহরটা বেশ ভালো করেই দেখা যাচ্ছে। তূর্যর কেন জানি খুব গান গাইতে মন চাইছে। রুমে এসে গিটার নিয়ে আবার বেলকনিতে চলে গেল।
সাদা রঙের বাগান বিলাস ফুলের গাছ টা তূর্যর বেলকনিতে উঁকি দিচ্ছে।
বেলকনিতে সাজানো টবের গাছ গুলোতে ফুলে ভরে আছে। তূর্য আনমনে গিটারে টুং টাং সুর তুলতে লাগলো।আজ রাতে আর ডিনার করবে না সে।পেটে ক্ষিদে নামক জিনিস টা ও থাকতে হয়।

তাকে অল্প কাছে ডাকছি
আর আগলে আগলে রাখছি
তবু অল্পেই হারাচ্ছে আবার
তাকে ছোব ছোব ভাবছি
আর ছুঁইয়েই পালাচ্ছি
ফের তাকেই ছুঁতে যাচ্ছি আবার।

এহেম এহেম
কাশির শব্দ শুনে তূর্য দরজার দিকে তাকালো।জুঁই দাঁড়িয়ে আছে তূর্যর দিকে তাকিয়ে। ঠোঁটে তাঁর মুচকি হাসি।
তূর্য কোনো রিয়েকশন না করে জুঁই এর উদ্দেশ্যে বললো,খাবো না আমি। বিরক্ত করিস না।

জুঁই এগিয়ে এসে মোড়া নিয়ে তূর্যর পাশে বসে বললো, আমি কী তোকে খাবার খেতে যাওয়ার জন্য ডাকতে আসছি নাকি?

তাহলে কেন আসছোস?

পড়ার টেবিলে বসে ছিলাম। তোর গান শুনে কেমন যেনো রহস্যের গন্ধ লাগলো নাকে। তাই রহস্যের উন্মোচন করার জন্য চলে আসছি।

কীসের রহস্যে?কি সব বকিস? তূর্য গলা উঁচু করে বললো,আম্মু তোমার মেয়ে মনে হয় পাগল হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দাও। পাগল বিদায় করো আমাদের বাড়ি থেকে।

তূর্যর কথা শুনে জুঁই ধুম ধুম করে ওর পিঠে কিল বসিয়ে দিল। আমি পাগল হইছি নাকি তুই মেঘ আপুর প্রেমে পাগল হইছোস?

ঠাসসস করে দিবো এক থাপ্পড়।কে বলছে এই সব কথা তোকে?

আমি এতো টা ও ছোট না বুঝলি?যতোটা তুই ভাবিস।

বকবক না করে যা এখান থেকে। এমনিতেই অর্করা এই প্রেম টেমের কথা বলে মেজাজ খারাপ করে দিয়েছে। আবার তুই ও আসছোস মেজাজ খারাপ করতে।

তুই যে গান গাচ্ছিলি তা শুনে আমি কেন সবাই ভাববে তুই নয়া নয়া প্রেমে পড়েছিস।

তুই যাবি এখান থেকে।নাহলে কিন্তু এখন মাইর খাবি।মা এখান থেকে। তোদের জন্য শান্তিতে এখন গান ও গাইতে পারবো না দেখছি।
.
সূর্য উঠতে দেরি। শহরের মানুষের ব্যস্ততা বারার দেরী নেই। সকাল হতেই সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজেদের কাজ কর্ম নিয়ে।

সকাল আটটা বাজে। সূর্যের আলো পর্দার ফাঁক দিয়ে ঢুকে তূর্যর চোখে পড়তেই ভ্রু কুঁচকে মুখ ঘুরিয়ে নিল সে।এত সাধের ঘুম টাকে নষ্ট করে ফেলতে চাইছে না সে।
.
সকাল সকাল মাহির আর মাহিরের মা এসে হাজির অনুদের বাড়িতে।অনুর আব্বু আম্মু ঢাকার পথে রওনা দেওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে নিয়েছেন। কিছুক্ষণ পরেই বের হবেন তারা।এই অসময়ে মাহির আর মাহিরের মা কে দেখে যেমন অবাক হয়েছে তার থেকে ও বেশি বিরক্ত হয়েছেন অনুর আব্বু আম্মু।

অনুর মা মুখে জোর পূর্বক হেসে মাহিরের মা কে জড়িয়ে ধরে বললো,বড় ভাবি হঠাৎ এত সকালে?

মাহিরের মা মুখ বাঁকিয়ে বললো আমি আসতে চাইছি নাকি? মাহির জোর করে নিয়ে এলো।

মাহির সোফায় বসে আছে।সে যে উদ্দেশ্যে আসছে সে বিষয়ে কী করে বলবে বুঝতে পারছে না।কী দিয়ে কথা শুরু করবে ভেবে পাচ্ছে না।

অনুর মা ও সোফায় গিয়ে বসলেন।মাহিরের উদ্দেশ্যে বললেন,কি রে কী অবস্থা তোর?

মাহির মুচকি হেসে বললো,এইতো ভালো।ফুফু মনি তোমাকে একটা কথা বলার ছিল। সেই কথাটা বলার জন্যেই আমি বেহায়ার মতো আবার আসছি। আমার একটা প্রস্তাব আছে। তুমি না করো না প্লিজ। অনেক ভেবে চিন্তে আমি আসছি তোমার কাছে। আমাকে আর ছোট করো না প্লিজ।

এত কথা না বলে আসল কথাটা বল।কী প্রস্তাব?

মাহির কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে একট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,আমাকে শেষ বারের মত একটা সুযোগ দিবে?

তুই কী বলতে চাস ক্লিয়ার করে বল।এত কথা পেছানোর কী আছে?

আমি অনুকে বিয়ে করতে চাই।

মাহিরের কথা শুনে অনুর মা বেশ রেগে গেলেন।তিনি ঝাঁজালো কন্ঠে বলে উঠলেন,ঠাস করে এক চড় মেরে আমার মেয়ে কে বিয়ে করার শখ মিটিয়ে দিবো তোকে।এত কাহিনী করার পর ও আবার কোন মুখে বলতে আসিস আমার মেয়েকে বিয়ে করবি? আমার মেয়েরা কী খেলার পুতুল?
তোর কী সামান্য পরিমাণ লজ্জা নেই?সে দিন তনুর সাথে বিয়ের সময় কিছু বলিনি দেখে এত বেড়ে গেছিস তুই?

মাহির মাথা নিচু করে বসে আছে। এমন সব কথা শোনার জন্য সে প্রস্তুত ছিল।সে খুব ভালো করেই জানতো তার ফুফু তাকে কিছু না বলে ছাড়বে না।মাহিরের মা তেতে উঠে বলতে শুরু করলেন,

দেখো আফরোজা তোমার মেয়েরা ও ধোঁয়া তুলসী পাতা না। আমার ছেলে কে এত কথা বলে অপমান করছো কেন তুমি? ভুলে যেও না ও তোমার ভাইয়ের ছেলে।

আমার মেয়েরা কেমন সেটা আমার থেকে ভালো তুমি জানো। আমার মেয়েদের নামে কোনো কিছু আজ পর্যন্ত শুনেছো বলে মনে পড়ছে না আমার।আর তোমার ছেলে কে আমি এখন ও তেমন কিছুই বলিনি। ছেলে কে জন্ম দিয়েছো ঠিকই। কিন্তু ঠিক মতো তাকে মানুষ করতে পারলে না। আমার ভাইয়ের ছেলে বলেই এখনো এখানে বসে থাকতে পারছে।

চলবে,,,,