#তার_শহরের_মায়া ২
#পার্ট_২৪
#Writer_Liza_moni
রিকশার জন্য রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে অনু আর রিয়ানা।একটু আগেই ফুফুর বাড়ি থেকে ম্যাসে আসে অনু। সূর্যের তাপ বলে দিচ্ছে অনেক বেলা হয়ে গেছে।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর একটা খালি রিকশা পায় অনু আর রিয়ানা।
রিকশায় উঠে রিয়ানা অনু কে বলে,
গতকাল তোমার জন্য একজন ম্যাসের সামনে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল।
অনু অবাক হয়ে বললো কে?চেনো তাকে?
হুম। চিনি।
তূর্য নাকি?
রিয়ানা মুচকি হেসে বললো হ্যা।ছেলেটাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছিল।
হঠাৎ আমার জন্য অপেক্ষা করছিল কেন? কোনো দরকার ছিল কী? তোমাকে কিছু বলেনি?
না আমাকে তেমন কিছু বলেনি।
আমি না তোমাকে না জানিয়ে তোমার নাম্বার ছেলেটাকে দিয়ে দিয়েছি।
এটা কোনো কথা বললা? অচেনা একটা ছেলে কে আমার পার্সোনাল ফোন নাম্বার দিয়ে দিলা?
আরে অচেনা না তো। তোমার খুব পরিচিত একজন।
তুমি কি তূর্যর কথা বলছো?
ঠিক ধরেছ। আমি তার কথাই বলছিলাম।
অনু আর কিছু বললো না। একটা ব্যাপার অনুর কাছে জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে।যে গত কাল রাতের আননোন নাম্বার থেকে ম্যাসেজ টা তূর্যই তাকে করেছে। কিন্তু অনু এটা বুঝতে পারছে না তূর্য কী তাকে সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছে?তাও এত অল্প সময়ে। এটা কি তার সত্যিকারর ভালোবাসা?নাকি শুধুই আবেগ?
এই সব হাবি জাবি চিন্তা করতে করতে ভার্সিটি এসে পৌঁছায় তারা।
রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দিতে যাবে কিন্তু রিকশা ওয়ালা ভাড়া না নিয়ে বলেন,
আমনে গো ভাড়া ভাইজান দিয়া দেছে আপা।আর ভাড়া দেওনের দরকার নাই।
বলেই রিকশা ওয়ালা চলে গেল।অনু চোখ ছোট ছোট করে তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
এত সময় ধরে তূর্য তাদের পেছনে বাইক নিয়ে আসছে।তা অনু দেখেনি।
ঠিক সেই সময় তূর্য অনুর সামনে বাইক থামায়। আচমকা এত কাছে বাইক থামতে দেখে অনু লাফ দিয়ে উঠে কয়েক পা পিছিয়ে যায়।তা দেখে রিয়ানা মুচকি হেসে বলে,
আমি ক্লাসে যাচ্ছি। তুমি কথা বলে এসো কেমন।
অনু কিছু বললো না।
তূর্য মাথা থেকে হেলমেট টা খুলে অনুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে দিয়ে বললো,
কেমন আছেন?
অনু তূর্যর কথার উত্তর না দিয়ে বললো,
আপনার খবর আছে।
ওম্মা সে কী? আপনি আমার খবর করবেন?তা কয়টার খবর শুনি?
বেশ রসিকতার স্বরে কথাটা বললো তূর্য। তাতে অনু একটু রাগ দেখিয়ে বললো,
আপনি রিকশার ভাড়াটা দিলেন কেন?
বিয়ের পর থেকে তো আমাকেই সব কিছুর খরচ দিতে হবে।তাই আগে থেকেই প্রেকটিস করছি।
তূর্যর সোজা সাপ্টা উত্তর।
পাগল হয়ে গেছেন আপনি?কী সব উল্টা পাল্টা কথা বলতেছেন। আপনার আম্মু কে কী বলবো আপনাকে পাবনার মেন্টাল হসপিটালে রেখে আসতে?
আপনি যদি আমার সাথে যান তাহলে আমি সেখানে যেতে রাজি।যাবেন নাকি? বাসের টিকিট কাটবো?
আপনি আসলেই পাগল হয়ে গেছেন।
তূর্য বিড় বিড় করে বললো
আপনার জন্য মিস পরমানু।
তূর্যর কথা বুঝতে না পেরে অনু চোখ পাকিয়ে বললো,
বিড় বিড় করে আমার নামে কী বলতেছেন আপনি?
তা আপনাকে কেন বলবো?
অনু বিরক্ত হয়ে উঠছে তূর্যর ত্যাড়া কথায়।একটা প্রশ্নের ও ঠিক ভাবে উত্তর দিচ্ছে না সে।
আমি গেলাম। আপনার মত অর্ধ পাগলের সাথে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তর্ক করতে পারবো না। বলেই অনু পেছনে ফিরে হাঁটা ধরলো।
মিস পরমানু শুনুন,,
অনু পেছনে ফিরে বললো কী চাই?
চাই তো অনেক কিছু। কিন্তু আপাতত আপনাকে এটা বলতে চাচ্ছি বিকেলে আপনার ম্যাসের সামনে অপেক্ষা করবো।দয়া করে বিকেলে আপনার মূল্যবান সময় থেকে কিছু টা সময় নিয়ে আমার সাথে দেখা কইরেন।
আমি পারবো না।
আমি কিন্তু অপেক্ষা করবো।
আপনি যা ইচ্ছা করতে থাকুন। আমি গেলাম।
দূর থেকেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অনু আর তূর্য কে কথা বলতে দেখলো মাহির। কিন্তু কী কথা হয়েছে অনু আর তূর্যর মধ্যে তা ঠিক করে শুতে পায়নি। শুধু এইটুকু কথাই তার কান অব্দি পৌঁছে যে, বিকেলে অনু যেনো তূর্যর সাথে দেখা করে।সে অপেক্ষায় থাকবে। মাহির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গেল।
.
.
ক্লাসের ভেতরে ঢুকতেই রিফা এসে অনুর মুখের ভেতর একটা চকলেট পুরে দিলো।
কী হয়েছে?এত খুশি খুশি লাগছে কেন তোদের?
আমাদের কেয়ার বিয়ে।
ওহ শুভ কামনা রইলো।তো কার সাথে বিয়ে?
কেন?এত দিন ধরে যার সাথে প্রেম করেছি তার সাথে। তাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে জীবনে ও করতাম না।
ভালোবাসি যাকে বিয়ে ও করবো তাকে।
বেশ ভালো।তা বিয়েটা কবে হচ্ছে শুনি?
সামনের সপ্তাহে।
কেয়া অনুর হাতে একটা বিয়ের কার্ড দিয়ে বললো,
আসবি কিন্তু। না আসলে দেখিস আমি ও তোর বিয়েতে যাবো না।
আচ্ছা বুঝলাম। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করছিস কেন?এক্সাম শেষ করে ও তো বিয়ের পিঁড়িতে বসতে পারিস।
আমি ও অবশ্য তাই চেয়ে ছিলাম। কিন্তু ওর পরিবার চাচ্ছে সামনের সপ্তাহে বিয়ের কাজ সেরে ফেলতে।
যা ভালো মনে হয় কর। জীবনটা তো তোর। একটা কথা বলি? কিছু মনে করিস না।
কেয়া অভয় দিয়ে বললো আরে না।কী মনে করবো?বল তোর যা ইচ্ছে। আমি কিছু মনে করবো না।
হুঁ। রবি ঠাকুর কী বলে ছিল জানিস?
উনি তো অনেক কথাই বলছে। তুই কোনটার কথা বলবি শুনি?
যাকে ভালোবাসবে তাকে বিয়ে করবে না।এমন হাজারো বাস্তব কাহিনী আছে যে, একটা মানুষ আরেকটা মানুষ কে ভালোবেসে বিয়ে করেছে। কিন্তু বিয়ের পর আর সেই ভালোবাসা টা বজায় থাকে না। খুব কম মানুষই আছে যারা ভালোবাসে বিয়ে করে সুখী হয়েছে। আবার এমন ও আছে, ভালোবাসার বিয়ে অথচ ৯-১০ বছর পর বিচ্ছেদ হয়েছে।
কেয়া একটু ভীতু কন্ঠে বললো,
বিয়ের আগেই ভয় দেখাচ্ছিস? দোয়া কর মাইয়া।যেনো আমাদের ভালোবাসাটা মৃত্যুর পর ও বজায় রাখতে পারি। ভীষণ ভালোবাসি যে তারে।
মুখের ভেতর চিপস দিতে দিতে রিফা বলে উঠলো,
তোর এই কথা গুলো শুনে আমার বিয়ে করার শখ মিটে গেছে। আমি আর ও কই ভাবলাম বাড়িতে যাইয়া ওরে কমু বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোর জন্য। কিন্তু এখন আর শাহস পাইতাছি না।সেগুড়ে বালি। ধুর ছাই।
অনু হেসে ফেললো।বাদ দে এই বিষয়। আমাকে গতকাল এর নোটগুলো দে তো।
.
.
তূর্যর পরিবারের সবাই মিলে তৈরি হচ্ছে তিয়াস এর জন্য মেয়ে দেখতে যাওয়ার। সবাই তৈরি হয়ে বসে আছে। অথচ তূর্যর এখন ও কোনো খবর নেই।এই দিকে পাত্রীর পরিবারের সবাই অলরেডি রেস্টুরেন্টে চলে গেছে। সেখানেই মিট করবে দুই পরিবার।আর এক সাথে লাঞ্চ।
আম্মু দেখছো ছোট ভাইয়া এখনো আসেনি। দেরি হয়ে যাচ্ছে না।
তাই তো দেখছি।ওকে একটা ফোন করে দেখ কোথায় আছে ও।
উফফ তৃণা। তূর্য কে আবার বাড়িতে আসতে হবে কেন? ওকে কল করে রেস্টুরেন্টের নাম জানিয়ে দাও।ও চলে আসবে সেখানে। আমরা বসে না থেকে চলে গেলেই তো হয়।আর মেয়ে তো আমরা তিয়াস এর জন্য দেখতে যাচ্ছি। তূর্যর জন্য নয়।তিয়াস আমাদের সাথে থাকলেই তো হলো।
হ্যাঁ। আব্বু ঠিক কথা বলেছো। আমি গাড়ি বের করছি। তোমরা আসো। বলেই তিয়াস চলে গেল। মিসেস তৃনা তূর্য কে কল করে জানিয়ে দেন কোথায় যেতে হবে। বাড়ির বড় ছেলের বিয়ের জন্য পাত্রী দেখতে যাবে আর মেয়ে তো সবার পছন্দ করতে হবে।
আর মেয়ের ও তো ছেলে কে পছন্দ হতে হবে।তাই তো তিয়াস দেবদাস লুক ছেড়ে স্মার্ট হয়ে গেছে। তূর্যর মতো বেশি ফর্সা না হলে ও শ্যামলা রঙের তিয়াস কে দেখতে বেশ মায়াবী লাগে। কোঁকড়ানো চুল গুলো যেনো তার সৌন্দর্য আর ও বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে।
সবাই মেয়ে দেখতে গেলে ও তূর্য গেলো না। বাড়িতে ফিরে এসে গোসল করে বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল। মোবাইল হাতে নিয়ে অনু কে একটু জ্বালানোর জন্য একটা ম্যাসেজ লিখে পাঠিয়ে দেয়। বিকেলের অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে সে।
মোবাইল এ ম্যাসেজ আসার শব্দ পেয়ে কৌতূহল নিয়ে অনু তা সিন করে দেখে,
“ভালোবাসবেন?”
বৃষ্টি জোছনায় ভেজা বারান্দায় আপনি আর আমি
এক কাপ চায়ে দু জোড়া ঠোঁটের চুমুক।
চলবে,,,