তার শহরের মায়া ২ পর্ব-২৩

0
452

#তার_শহরের_মায়া ২
#পার্ট_২৩
#Writer_Liza_moni

অপ্রত্যাশিত মেসেজ টা দেখে অনু বেশ অবাক হলো। তাকে এমন কথা কে বলতে পারে? কিছুতেই কিছু মাথায় আসছে না তার।অনু মাথা ঘামালো না বিষয় টা নিয়ে।
লক্ষ লক্ষ তারায় ভরা আকাশের মাঝে থালার মতো একটা চাঁদ।তারা গুলো কী সুন্দর মিটি মিটি করে জ্বলছে। চাঁদের আলোয় আলোকিত চারপাশ।

ছাদের দোলনায় বসে কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে আর এত সুন্দর একটা মুহূর্ত একা একাই উপভোগ করছে তূর্য। চাঁদের দিকে তাকিয়ে তূর্য একা একাই মুচকি হেসে চাঁদের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো,

কী সুন্দর একটা রোমান্টিক মূহূর্ত।আজ একটা বউ নাই বইলা এক সাথে বসে এত সুন্দর একটা মুহূর্ত উপভোগ করতে পারছি না।

চাঁদ মশাই তুমি তো ভাই এক একাই সবার প্রেম দেখো। আমি যে সিঙ্গেল মরতাছি এইটা কি তুমি দেখো না?

চাঁদ যদি কথা বলতে পারতো তাহলে চাঁদ টা তূর্যর কথার জবাবে বলতো,
তুমি মিয়া অনেক আগেই তো একজনরে নিজের অজান্তেই মন দিয়ে বসে আছো সে দিকে খেয়াল নাই? আবার আমার বিরুদ্ধে আমার কাছেই অভিযোগ করো তুমি সিঙ্গেল সে খবর আমি রাখি না। দিনের বেলায় কিছু না দেখলে ও রাতের বেলায় সব দেখি। একটু আগে যে এক জন রে কিছু একটা পাঠাইছো ঐটা কিন্তু আমি দেখছি।সো নিজেরে সিঙ্গেল দাবি করা বন্ধ করো।

তূর্য আপন মনেই হাসলো।
.
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে অনু ড্রইং রুমে এসে যে এত বড় একটা ঝটকা খাবে তা ভুলে ও ভাবেনি সে। সকাল সাতটা বাজে।এত সকালে মাহির কে এখানে দেখে অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেল অনু।এত সকালে এই লোক এখানে কী করছে?

অনু কে দেখে মাহির বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।মা হয়তো রান্না ঘরে ফুফুর সাথে নাস্তা বানাচ্ছে। মাহির কিছু বলতে যাবে তার আগেই অনু দৌড়ে রান্না ঘরে চলে গেল। এতে মাহির একটু অপমান বোধ করলো।রান্না ঘরে গিয়ে মায়ের উদ্দেশ্যে বললো,

আম্মু মাহির ভাইয়া এখানে কেন?তা ও এত সকালে।

মিসেস আফরোজা কাপে চা ঢালতে ঢালতে বললো,
তোর সাথেই দেখা করতে আসছে।

কিন্তু কেন? আমার সাথে হঠাৎ দেখা করতে আসলো কেনো? উদ্দেশ্যে কী বলো তো তোমার ভাইয়ের ছেলের?

তোকে বিয়ে করতে চায়।

কীহ?এই টা কোনো কথা বললা তুমি?আমাকে বিয়ে করতে চায় মানে কি?

মিসেস আফরোজা অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
আমরা যেদিন এখানে আসবো সেদিন সকালে তোর বড় মামি আর মাহির আসছিল আমাদের বাড়িতে। তোর জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।

মানে কি এই সব এর? তুমি আর আব্বু কিছু বলো নি ওনাদের?

বলেছি।যাকে বলে অপমান করেছি।ওর মা তো রেগে মেগে আগুন হয়ে চলে গেছিল। মাহির হাল না ছেড়ে তোর সাথে দেখা করতে চলে আসছে।

তো আমি কী করবো?

ও কী বলতে চায় তা শুন।দেখ আগে কী বলে।

অনু ভ্রু কুঁচকে আবার ড্রইং রুমের দিকে চলে গেল।অনু কে দেখতে পেয়ে ও মাহির আগ বাড়িয়ে আর কথা বলতে চাইলো না।

অনু নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে মুচকি হেসে বললো,
কেমন আছেন ভাইয়া?

কেমন আছি?তা জেনে কী করবি? আমার কথা বাদ দে। তুই কেমন আছিস?

আমি তো বিন্দাস আছি। দেখতেই তো পাচ্ছেন।

হুম তা পাচ্ছি।
তোর সাথে দেখা করতে আসার একটা কারণ আছে অনু।

তা আমি বেশ ভালো করেই জানি ভাইয়া। আপনি অকারণে এত দূর থেকে আমার সাথে দেখা করতে আসতেন না।
তো কারণটা কী? বলেন শুনি।

মাহির কি দিয়ে কথা শুরু করবে তা ভেবে পাচ্ছে না।তাই কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইল।অনু সোফায় পা তুলে বসে কোলে কুশন রেখে গালে হাত দিয়ে মাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।

কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর মাহির বলতে শুরু করলো,

আসলো কথা টা কী ভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছি না। এত দূর থেকে এই পর্যন্ত এসেছি শুধু মাত্র তোর সাথে দেখা করার জন্য। আমি জানি আমি অন্যায় করেছি। তার জন্য শাস্তি ও পাচ্ছি। আমার রাতে ঘুম হয় না অনু।আজ কত গুলো রাত নির্ঘুমে কেটে গেছে আমার। আমার আব্বু ও আমার সাথে আর আগের মত কথা বলে না। আমি এখন বুঝতে পারছি আমার ভুল টা।অনু আমাকে একটা সুযোগ দিবি প্লিজ?

অনু বুঝতে পেরে ও না বুঝার ভান করে বললো
কীসের সুযোগ দিতাম?

আমাকে বিয়ে করবি? আমি তোকে অনেক বেশি ভালোবাসবো। তোর কোনো কিছুর অভাব হবে না।যখন যা চাইবি তাই দিবো।যে সময় যেই বায়না ধরবি তাই পূরণ করবো।তোকে একটু ও কষ্ট দিবো না। আমি তোকে বিয়ে করতে চাই।দেখ তুই যদি রাজি হোস তাহলে ফুফু মনি আর ফুপা সবাই রাজি হবে।

মাহির কথা শুনে অনু একটা হাই তুললো। অনু কে দেখে মাহির বুঝতে পারছে না ও অবাক হলো না কেন? কোনো রিয়েকশন ও নাই।

চা খাবেন ভাইয়া?
আম্মু কে আনতে বলবো? আম্মুর হাতের চা কিন্তু সেই মজার। আপনি তো আগে অনেক বার খেয়েছেন।

অনু?

শুনতেছি বলুন ভাইয়া।

আমি তোকে সিরিয়াস একটা কিছু বলেছি। বিষয়টাকে সিরিয়াসলি নিচ্ছিস না কেন?

অনু মাহিরের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে গলা উঁচু করে বলতে লাগলো,
আম্মু দুই কাপ চা দিও তো।

আমার কথার কী কোনো মূল্যে নেই তোর কাছে অনু?

ওমা এটা কী বললেন মাহির ভাই। আপনার কথার মূল্য থাকবে না কেন?এত সময় তো আপনি লেকচার দিলেন আর আমি বসে বসে তা গিলছি।একটু পর আমি লেকচার দিমু আপনি তা মাথায় ঢুকাই নিবেন। লেকচার দিতে গেলে আমার আবার গলা শুকিয়ে যায়। তাই চা আনতে বললাম।

মিসেস আফরোজা চা নিয়ে আসলেন না।অনুর ফুফুকে দিয়েই পাঠিয়ে দিলেন দুই কাপ চা।

অনু চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে মাহিরের উদ্দেশ্যে বললো,
কি জানি বলছিলেন ভাইয়া?উমম মনে পড়েছে। আমি এখন আবার হুটহাট সব ভুলে যাচ্ছি। কিছু মনে কইরেন না।

জানেন তো মানুষের জীবন টা খুব ছোট। এই জীবনের সময়টা কখন ফুরিয়ে যাবে আপনি আমি কেউই বুঝতে পারবো না। ছোট এই জীবনে আমরা কত শত ভুল করে বসে থাকি তা আমরা নিজেরাও খেয়াল রাখি না।
একটা সময় যা ছিল তা পুরাই আবেগ ছিল।আর সেই আবেগ টা এখন আমার নেই। আমি আপনাকে শুধু একটা কথাই বলবো নিজের ভুল গুলো শুধরে নিতে শিখেন।তনু আপুকে ভালো বাসতেন আপনি। আবার সেই আপনি আমাকে ভালোবাসতে চান? সিরিয়াসলি ভাই? হুদাই এই সব করে সবার কাছে নিজেকে ছোট প্রামন কইরেন না। এই সব বন্ধ করুন।
জীবনটা ছোট। অল্প সময়ের এই জীবনে ভালো কাজ করুন।সৎ পথে চলুন।আর কিউট একটা মেয়ে দেখে বিয়ে করে ফেলুন যলদি। অনেক দিন হয়ে গেল বিয়ে খাইনা।

তার মানে তুই আমাকে বিয়ে করতে চাস না?তাই তো?

এটা আবার জিজ্ঞেস করতে হয় বোকা ছেলে।

আচ্ছা ঠিক আছে।আসি আমি। ভালো থাক।
যদিওবা আমি জানতাম যে তুই রাজি হবি না।তাও শেষ বারের মতো চেষ্টা তো আমি করেছি।

নাস্তা করে যান ভাইয়া।চা ও তো খাইলেন না।চলে যাচ্ছেন কেন?

থেকে কী হবে?

সেটা ও কথা। আচ্ছা যান তাহলে। আল্লাহ হাফেজ।

মাহির অনুর দিকে তাকিয়ে জোর পূর্বক হেসে চলে গেল। রান্না ঘর থেকে মিসেস আফরোজা হাসতে হাসতে বের হয়ে অনুর কাছে এসে অনুর গাল টিপে দিয়ে বলল,
তুই এত ফাজিল হয়েছিস কবে থেকে শুনি?

আমি কী সব সময় এমন ফাজলামি করি নাকি?মাঝে মাঝে ফাজিল শয়তানে কাতুকুতু দিলে তখন একটু ফাজলামি করি আর কী।এর জন্য তুমি আমাকে ফাজিল বলবা?এটা কিন্তু ঠিক না। ভালো হয়ে যাও আম্মু ভালো হয়ে যাও।

দাঁড়া তুই।

অনু কে আর পায় কে। রুমে চলে গেল সে তৈরি হতে।এখান থেকে এখন ম্যাসে যাবে।আর ম্যাস থেকে রিয়ানার সাথে ভার্সিটি চলে যাবে।

চলবে,,,