তার শহরের মায়া ২ পর্ব-২৮

0
566

#তার_শহরের_মায়া ২
#পার্ট_২৮
#Writer_Liza_moni

শুনো গো দখিনো হাওয়া প্রেম করেছি আমি
লেগেছে চোখেতে নেশা দিক ভুলেছি আমি।

বারান্দায় বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আনমনে গিটারে সুর তুলে গান গাইছে তূর্য। বেশ ভালো একটা মুডে আছে সে।
জুঁই তূর্যর কাছে এসে বললো,
হ্যাঁ ভাইয়া আমরা জানি। তুই প্রেমে পড়ে ডুবে গেছিস। কিন্তু তুই যে মেঘ আপুর সাথে প্রেম করছিস তা তো জানিনা।মেঘ আপু কে কী প্রপোজ করেছিস?কী রিয়েকশন করেছে?

তোর এই সব শুনে কী কাজ? ছোট ছোটোর মতো থাক।

ধুর ছাই। আমার ফ্রেন্ডরা তাদের ভাইদের সাথে কত্ত ফ্রী।কত কথা শেয়ার করে তারা।আর তুই?বড় ভাইয়া যেমন ছোট ভাইয়া ও তেমন।আজ আমার একটা বোন থাকলে তার সাথে মন খুলে কথা বলতে পারতাম।
জুঁই এর মনটা খারাপ হয়ে গেল। অন্যান্য সময় সে বোনের জন্য কখনো মন খারাপ করে না। কিন্তু তূর্য আর তিয়াস যখন এমন করে কিংবা বকা দেয় তখন সে খুব করে একটা বোনের অভাব ফিল করে।

জুঁই মন খারাপ করে রুমে চলে গেল। তূর্য ভ্রু কুঁচকে জুঁই এর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর বিড় বিড় করে বললো,

বেশি বেশি করে ফেলি হয় তো।পুঁচকি টা রাগ করছে।রাগ ভাঙাতে হবে। তূর্য গিটার টা রেখে জুঁই এর রুমে চলে গেল।যেয়ে দেখে,

জুঁই পড়ার টেবিলের উপর হাত ভাঁজ করে তার উপর মাথা রেখে বসে আছে।
তূর্য ধীর পায়ে জুঁই এর দিকে এগিয়ে গেল। জুঁই এর মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে জুঁই কে নরম গলায় ডাক দিলো।

জুঁই ফুল।সরি পুঁচকি বনু আমার।
জুঁই রাগ দেখিয়ে তূর্যর হাত মাথার উপর থেকে সরিয়ে দিলো।কষ্ট দিয়ে এখন আবার সরি বলতে আসছে।ঢং করতে আসছে আমার সাথে ঢং।
মনে মনে বললো জুঁই।

তূর্য জুঁই এর এমন ব্যবহার দেখে বুঝতে পেরে গেছে জুঁই তার এমন ইগনোরে খুব কষ্ট পায়। আসলেই দোষ টা আমারই।বড় ভাইয়া না হয় চুপ চাপ স্বভাবের। কিন্তু আমি তো কথা একটু বেশিই বলি। ছোট্ট বোনটার সাথে টুকিটাকি কিছু কথা শেয়ার করলে কী এমন ক্ষতি হতো?বোন তো অনেক বড় হয়ে গেছে।ইন্টারে পড়ছে পিচ্চি বনু টা। নিজের কাজের জন্য নিজেই নিজের উপর রেগে গেলো তূর্য। দুই হাত দিয়ে মাথার চুল গুলো টেনে দিয়ে আবারো জুঁই কে ডাকতে লাগলো।
কিন্তু জুঁই কোনো রিয়েকশন না করে আগের মতই বসে আছে।

বেশ কিছুক্ষণ ডাকার পর সরি বলার পর ও জুঁই তূর্যর দিকে তাকালো না। অভিমান করেছে খুব। তূর্যর কিছু একটা মনে পড়তেই রুমে চলে গেল।
তূর্য চলে গেলে জুঁই বসা থেকে উঠে বারান্দায় চলে যায়। চোখ থেকে নিজের অজান্তেই জল গড়িয়ে পড়ছিল। দুই হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে রাতের ঝিকিমিকি শহরটা দেখায় মন দিলো। কিছুক্ষণ পর চোখের সামনে এক জোড়া পায়েল ঝুলতে দেখে পেছনে ফিরে তাকায় জুঁই।

পায়েল দুটো দেখেই সব রাগ অভিমান হাওয়া হয়ে গেল। তূর্যর হাত থেকে ছোঁ মেরে পায়েল দুটো নিয়ে দেখতে লাগলো জুঁই।
চট্টগ্রাম থেকে আসার সময় নিয়ে এসেছিল পায়েল দুটো। জুঁই কে পরে দিবে দিবে করে আর দেওয়া হয়ে উঠেনি।আজ যেহেতু সুযোগ এসেছে সেই পায়েল দুটো দিয়েই না হয় অভিমানী বোনটার অভিমান ভাঙালো।

জুঁই তূর্যর পিঠে কয়েক টা কিল মেরে দিয়ে বললো,
আমাকে মিথ্যা কথা বলার কী দরকার ছিল?যখন আমি চেয়েছিলাম তখন তুই কী বলে ছিলি?
“নিজের জন্যই কিছু কিনি নাই আবার তোর জন্য পায়েল কিনবো।”

সারপ্রাইজ দিয়ে দিলাম আর কী।

কচুর সারপ্রাইজ। বলেই জুঁই আরো দুই টা কিল বসিয়ে দিল তূর্যর পিঠে।
তূর্য হাত দিয়ে পিঠ ঘষে বললো,
তুই আর অনুমেঘা আমার পিঠটা কে কী পেয়েছিস বল তো?যখন তখন কিল মেরে দিস।রোবট না তো আমি।এত জোরে কিল মারলে ব্যাথা পাই।

হিহিহি। তোর চওড়া পিঠে মারতে মজা লাগে।মেঘ আপু ও দেখি আমার দলের।বাহ বেশ ভালোই হলো। আমি আর মেঘ আপু মিলে তোকে ইচ্ছে মতো কিল মারতে পারবো।

দুটোকে আমি দুই চড় মারলে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।

আইছে আমাদের দেশের শক্তিশালী নাগরিক।
আচ্ছা এখন বলতো মেঘ আপুর সাথে কী প্রেম করছিস?

আর প্রেম। সরাসরি প্রপোজ করলাম না এখন ও।
মেয়েটার মন বুঝতে পারছি না।এই মনে হয় আমাকে পছন্দ করে আবার এই মনে হয় আমাকে দুই চোখে ও দেখতে পারে না।

জুঁই হেসে বললো,
আমি দেখি তোর জন্য কী করতে পারি।

তুই আবার কী করবি?

আগে তো মেঘ আপুর সাথে দেখা হোক। তার পর না হয় দেখিস কী করি? অপেক্ষা করতে থাক।

আচ্ছা। অপেক্ষায় রইলাম আমার পিচ্চি বোনটা কী করবে তা দেখার জন্য।

🖤
সামনে পরীক্ষা আর এই লোক এসে আমার সব কিছু উলোট পালোট করে দিলো গো।হায় এই বার আমার কী হবে?বইয়ের দিকে তাকালেই খালি ঐ বান্দরের মুখটা চোখের সামনে ভেসে বেড়ায়।

পড়ার টেবিলে বসে দাঁত দিয়ে কলম কামড়ে ধরে এই সব বিড় বিড় করছে অনু।
খাতায় এই পর্যন্ত প্রায় ১০বার ভুল করে তূর্যর নাম লিখে বসে আছে। পড়ার একটা লাইন লিখছে আর তার মাঝেই মনের ভুলে তূর্যর নাম লিখে ফেলছে।

তার পাশেই বসে এই সব কাহিনী দেখে হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে রিয়ানা।
পড়ার টেবিল থেকে উঠে চলে আসো।আজ আর তোমার পড়া হবে না।প্রেম রোগে ধরেছে তোমায়।

রিয়ানার মুখের দিকে তাকালো অনু। মেয়েটা একদম ঠিক কথাই বলেছে।আজ আর আমার পড়া হবে না। একদমই না।যে আকারে বইয়ের পাতায় ঐ লোকের নজর কাড়া হাসি মুখটা ভেসে উঠছে বাপরে। অনু বই বন্ধ করে গুছিয়ে রেখে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো। মাথায় শুধু তূর্যর বলা একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে,

এই যে পরমানু,,?

কী চাই?

আপনাকে।

কী সুন্দর সোজা সাপ্টা উত্তর দিয়ে দিয়েছে। তার নাকি আমাকে চাই।ইশ কত্ত শখ।

রিয়ানা সেই কখন থেকে অনুকে ডাকছে খাবার খেয়ে নেওয়ার জন্য।অনুর কান অব্দি যেনো সেই ডাক পৌঁছালো না।

রিয়ানা অনুর চুল টেনে দিয়ে বললো,
ও আমার বোন,
কল্পনার জগৎ থেকে বের হয়ে এই বার বাস্তবে আসো।যেই হারে তুমি অন্য চিন্তায় ডুবে আছো পুরো ম্যাসের সবাই এসে তোমাকে ডাকলে ও তুমি শুনতে পাবে না।মন মস্তিষ্কে সব কিছুতেই দেখছি আমাদের তূর্য ভাই বেশ গাঢ় করে প্রভাব ফেলেছে।

থাক ভাই আর কিছু বলে লজ্জা দিও না। এমনিতেই বহুত প্যারায় আছি ঐ লোকরে নিয়ে।আজ কত বড় ভয়ংকর একটা কথা বলেছে যানো?
তার নাকি আমাকে চাই।ভাবতে পারছো যে ছেলের জন্য তার অফিসের বসের মেয়ে এনি না কী যেনো একটা নাম সেই বড় লোকের মেয়ে পাগল সেই ছেলে নাকি আমাকে চায়।

এত বড় লোকের মেয়ে কে যখন পাত্তা দেয়নি তখন তোমাকে চায় মানে সত্যি ভালোবাসে। তোমাকে যেহেতু চায় তুমি ও তার হয়ে যাও।

না না বাবা। পরীক্ষার আগে আমি আর ঐ লোকের সামনে ও যাবো না। উনাকে দেখলেই আমার সব কিছু উলোট পালোট হয়ে যায়। আপাতত এই সব কথা বাদ দিয়ে উপায় বলো, উনাকে কী ভাবে এখন মন এবং মস্তিষ্ক থেকে বিদায় করবো।যে হারে জ্বালাচ্ছে আমাকে। শেষ পর্যায়ে এসে ডাব্বা মারার ইচ্ছে নেই আমার। আব্বু জানলে এই সব সোজা উপরে পাঠাই দিবে।
তনু আপু যা করছে তার পর ও ওর রেজাল্ট খুব ভালো ছিল।

উমম তুমি এখন উনাকে দেখলেই ইগনোর করবা। এবং উনাকে নিয়ে যত চিন্তা করো কল্পনার জগৎ এ ডুবে থাকো তা বাদ দিয়ে দাও।আর নিজেকে পড়ার মাঝে ডুবিয়ে রাখো তাহলেই হবে।

বলছো? সত্যি এমন করলে সাময়িক ভাবে উনাকে ভুলে থাকা যাবে?

তুমি দেখছি মেয়ে তূর্য ভাইয়ার প্রতি অনেক বেশি দূর্বল হয়ে গেছো।

হবো না?এই টা কি বলো?এত সুন্দর করে হাসলে এত কিউট কিউট কথা বললে এমনিতেই খুন হয়ে যাচ্ছি আমি।

বুঝেছি গো।প্রেম রোগে ভুগছেন আপনি। তূর্য নামক হোমিওপ্যাথির ডোজ আপনার সব সময় লাগবে।

চলবে,,,,