তার শহরের মায়া ২ পর্ব-২৯

0
475

#তার_শহরের_মায়া ২
#পার্ট_২৯
#Writer_Liza_moni

সারাদিন না খেয়ে অনুর পিছনে ঘুরলে কী শরীর ভালো থাকবে?

খাবার টেবিলে সবার সামনে মায়ের মুখে এই কথা শুনে লজ্জা পেল তূর্য। তার পাশেই বাবা বসে খাবার খাচ্ছেন।

মা! সবার সামনেই কথা টা বলার কী দরকার ছিল?

হি হি হি,, ছোট ভাইয়া লজ্জা পাইছে। থাক আম্মু ভাইয়া কে আর লজ্জা দিও না।মেঘ আপু কে তাড়াতাড়ি বিয়ে করিয়ে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসো।

আচ্ছা আমি একটা কথা বলতাম।
বাবার কথা শুনে সবাই বাবার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।

তিয়াস এর বিয়ের দিনই তূর্যর ও বিয়ে হয়ে গেলে ভালো হবে না?

বাবার কথা শুনেই জুঁই লাফিয়ে উঠে বলতে লাগলো গুড আইডিয়া।খরচ ও কম হবে। আনন্দ ও বেশি হবে।আর একসাথে দুই ভাইয়ের বিয়ে খাওয়ার সৌভাগ্য হয় কয় জনের?
দারুন একটা আইডিয়া কিন্তু।

বাবার কথা শুনে তূর্যর গলায় খাবার আটকে গেল।কী বলে না বলে?এখনো বুঝলোই না তার পরমাণু তাকে ভালোবাসে কিনা আর এখানে বাবা মা বিয়ের চিন্তা ভাবনা শুরু করে দিছে?বাহ বাহ।
.
.
মাহিরদের বাড়িতে আজ বিয়ের আমেজ। খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে সব কিছু। হ্যাঁ আজ মাহিরের বিয়ে।আর কত দিন বেচারা সিঙ্গেল থাকবে?
মাহির তার মায়ের পছন্দের মেয়ে রূপসা কে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায়।সে মন থেকে তনু কে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
অনু তনু এবং তাদের পরিবারের সবাই কে দাওয়াত দেওয়া হয় মাহিরের বিয়েতে।

অনুর আর দুই দিন পর থেকেই পরীক্ষা।তাই সে এখন পরীক্ষা নিয়ে চিন্তায় আছে।মাহিরের বিয়ের দাওয়াত খাওয়ার এত সময় নেই তার। রাত দিন এক করে বইয়ের মাঝে ডুবে আছে সে। তূর্য কে ও মন, মস্তিষ্কের আশেপাশে ও আসতে দিচ্ছে না।

তনু কে অনেক করে বলেছে মাহির।তার বিয়েতে এসে যেনো বউ দেখে যায়।বড় মামার কথায় আসতে রাজি হলো তনু। কিন্তু আরাফাত তাকে আসতে দিতে চায়নি। বিয়ের পর আর খাগড়াছড়িতে আসা হয় নি দেখে আরাফাত আর তনু আরাফাত এর অফিসের ছুটিতে চলে আসে।এসেই দাওয়াত পেল মাহির এর বিয়ের।

সব কাজিনরা মিলে মাহির কে হলুদের ছোঁয়া দিয়ে যাচ্ছে।এক কোনায় মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে তা উপভোগ করছে তনু। তনুর থেকে কিছুটা দূরে আরাফাত ফোনে কারো সাথে কথা বলছে।

মাহির কে দেখে বেশ খুশিই মনে হচ্ছে।এক এক করে সবাই হলুদ ছোঁয়ানো শেষ হলে তনু আর আরাফাত যায় মাহির কে হলুদের ছোঁয়া দিতে।
তনু মাহিরের গালে হলুদের ছোঁয়া দিয়ে বললো,
দাম্পত্য জীবন সুখের হোক মাহির ভাই। এখন আর নিশ্চই আমাদের ভাবীর সাথে কোনো চিটারি বাটপারি করবেন না।

আরাফাত ও শুভ কামনা জানালো মাহিরের নতুন জীবনের জন্য।তনু আর আরাফাত কে দেখেই যে কেউ বলে দিবে হ্যাপি কাঁপল।
.
.
রাত ১০টা বাজে।অনুর ম্যাসের রুমের জানলা টা খোলা।অনু বিছানায় শুয়ে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে মুখে পড়া আওড়াচ্ছে। সামনে যেনো পরীক্ষা না আস্ত একটা বাঁশ বাগান অপেক্ষা করছে বাঁশ দেওয়ার জন্য।

অনু বিছানা থেকে উঠে ওয়াস রুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিলো। ঘুম তাড়ানোর সামান্য একটু চেষ্টা আরকি।
ওয়াস রুম থেকে মুখ ধুয়ে বের হয়ে এসে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে তোয়ালে রাখতে যাবার সময় অনুর চোখ পড়লো জানালার বাইরে।
বাইকের আলো জ্বলছে। এবং ল্যাম্প পোস্টের আলোয় মানুষ টাকে চিনতে একটু ও অসুবিধা হলো না অনুর।

এই লোক তো মহা পাগল।এত রাতে এখানে কী করছে?
এত রাতে ম্যাস থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় নেই।

অনু বিছানার উপর থেকে মোবাইল টা নিয়ে তূর্য কে কল করলো।

রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে এত সময় তূর্য জানালার দিকে তাকিয়ে ছিল।অনু কে জানলার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুচকি হাসলো।অনুর কল কেটে দিয়ে সে নিজে কল ব্যাক করলো।

আরেএএএ আপনি কি পাগল?এত রাতে এখানে কী করছেন?

আমি তো পাগলই। আপনার জন্য পাগল।

মেয়েদের হোস্টেলের সামনে এত রাতে দাঁড়িয়ে থাকলে পাবলিক এ কেলানি দিবে।তাই এত রাতে এখানে দাঁড়িয়ে আবেগি কথা বলে আমাকে ইম্প্রেস করার চেষ্টা না করাই ভালো।

চার দিন পর দেখছি আপনাকে।এই চার দিন কে চারটা বছরের মতোই মনে হয়েছে।

ঢং কইরেন না তো। দুই দিন পর আমার পরীক্ষা আর আপনি আসছেন ঢং করতে।

ওম্মা।আগে বলবেন না। আমি তো এই সব এর খবর রাখি না।তাই জানতাম ও না। পড়তে বসুন।মন প্রাণ দিয়ে পড়ুন। পরীক্ষার এই সময়টায় আমাকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলবেন একদম। বুঝলেন?মন দিয়ে পড়তে থাকুন।

বাপরে।কত জ্ঞান দিচ্ছে আমাকে। আচ্ছা একটা কথা বলি?

হুম বলুন।

কেমন আছেন?

ধুর ছাই। আমি ভাবলাম বলবেন যে ভালোবাসেন তা না জিজ্ঞেস করছেন কেমন আছি?
এত সময় একটুও ভালো ছিলাম না। এখন অনেক বেশি ভালো আছি।

ন্যাকামি পছন্দ না আমার। এই সব কথা আমাকে না বললেই খুশি হবো।

আচ্ছা ম্যাম আর বলবো না।সরি। আপনি কেমন আছেন?

পড়ার ঠেলায় হেব্বি খারাপ আছি। আপনি এখনি বাড়িতে যাবেন।

আচ্ছা ঠিক আছে।যাচ্ছি এই ভাবে তাড়িয়ে দেওয়ার কি আছে?

আমি রাখছি। তূর্য কে কিছু বলতে দেওয়ার আগেই অনু কল কেটে দিল।
আস্ত একটা পাগল এই লোক। মুচকি হেসে জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে বিদায় জানালো অনু।তা দেখে তূর্য মুচকি হেসে হেলমেট পরে বাইক স্টার্ট দিলো। তূর্য চলে গেলে অনু জানলা বন্ধ করে বিছানায় এসে বই গুছিয়ে ফেললো। এখন আর এক বিন্দু পরিমাণ ও পড়া মাথায় ঢুকবে না।তা অনু ভালো করেই জানে।
.
.
জেমির সাথেই তিয়াসের বিয়েটা ফাইনাল হয়ে গেল। জেমি তেমন রান্না করতে জানে না।তাই সে মায়ের সাথে রান্না শিখতে ব্যাস্ত।তিয়াস আর জেমির মধ্যেকার সম্পর্ক কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। প্রথম প্রথম জেমির সাথে কথা বলতে কিছু টা সংকোচ বোধ করতো।

জেমি ও লজ্জা পেতো।আজ জেমি তিয়াস কে জানিয়েছে তার জন্য নিজের হাতে রান্না করে নিয়ে আসবে। বিয়ের আগেই এত আয়োজন। না জানি বিয়ে পর কী করবে? ভাবতেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছে তিয়াস।

তিয়াস কে এত খুশি হতে দেখে তূর্য বলে উঠলো,
এত খুশি হবার কিছু নেই। বিয়ের পর তোমার জীবন টাই রান্না করে খেয়ে ফেলবে। তখন আর এত আদর যত্ন থাকবে না।

সমস্যা কি রে ভাই তোর? বিয়ের আগেই তুই ভয় দেখাচ্ছিস? অবশ্য দেখালে ও আমার কিছু যায় আসে না। তোর ভাবী অনেক ভালো।

সেটা না হয় বিয়ের পরই দেখবো আমরা।
বলেই তিয়াসের চুল এলোমেলো করে দিয়ে রুমে চলে গেল তূর্য।

তিয়াস হ্যাবলার মতো তূর্যর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।
.
মাহির আর রুপসার বিয়ের দিন আজ। বেশ জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে কমিউনিটি সেন্টারে।

তনুর আজ মাহির কে দেখলেই কেন জানি হাসি পাচ্ছে।আজ যে মাহির এর বিয়ে তা ভাবতেই পারছে না তনু।

রুপসা কে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো তনু।
না মেয়েটা দেখতে খুবই সুন্দরী। শুধু একটু মোটা মাহির থেকে। সমস্যা না মটু আর পাতলুর এই জোরা টা বেশ মানাবে।
তনু রুপসার দুই গাল টেনে দিয়ে বাচ্চাদের মতো করে বললো আমার গুলুমুলু ভাবি টা। নতুন জীবনের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

মাহির রুপসার পাশে দাঁড়িয়ে তনুর কারবার দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। কিছু কিছু সময় বড় একটা দীর্ঘশ্বাস অনেক কথা বলে।

তনু, তোমার ঔষধ এর সময় হয়ে গেছে।আসো আমার সাথে।

আরাফাত তনু কে নিয়ে চলে গেল। ঔষধ খাইতে ভাল্লাগে না তো।

ভালো না লাগলে ও খেতে হবে। মাত্র দুই দিন এর জন্য আছে ঔষধ।এর পর আর খেতে হবে না।

তনু মুচকি হেসে আরাফাত এর হাত থেকে ঔষধ গুলো নিয়ে খেয়ে নিল।

অনু কে খুব মিস করছে তনু। বাড়িতে এসে ফ্রেশ হয়ে ছাদে চলে গেল সে।অনুর সেই দোলনায় বসে অনু কে কল করলো।একটা নিউজ অনু কে জানানো হয়নি।জানলে না জানি কতটা খুশি হবে পুচকি বোনটা।

তিন বার রিং হতেই অনু কল রিসিভ করে বললো,
কীরে কেমনে কেমনে মনে পড়লো আমাকে?

আমার তোকে সব সময়ই মনে পড়ে। তোরই পড়ে না।

আমি এখন পড়াশোনা নিয়ে কত্ত ব্যাস্ত। তোর থেকে ভালো রেজাল্ট করতে হবে না।

তুই যে খালামনি হবি সে খবর কী রাখিস?

চলবে,,,,