তার শহরের মায়া ২ পর্ব-৩০

0
598

#তার_শহরের_মায়া ২
পার্ট_৩০
#Writer_Liza_moni

তনুর কথা শুনে অনু তো খুশিতে আত্মহারা।
সত্যি, সত্যি আমি খালামনি হবো?

তনু মুচকি হাসলো। ছোট্ট করে উত্তর দিল হুম।

আপুনি তুই যে কী দারুন একটা খবর দিলি কী বলবো। আমার যে এত্ত আনন্দ লাগতেছে।ইশশ ছোট একটা প্রান আসবে দুনিয়ায়। মিষ্টি করে খালামনি বলে ডাকবে।এর থেকে খুশির খবর আর কী হতে পারে? আমার যে কত্ত আনন্দ লাগতেছে তোকে বলে বোঝাতে পারবো না।

হইছে আর কিছু বলতে হবে না। তোর পরীক্ষার প্রস্তুতি কেমন?

আবার পরীক্ষা ধুর ভাল্লাগে না। রেজাল্ট দেখার পর নিজেই দেখে নিস পরীক্ষার প্রস্তুতি কেমন।

সোজা সাপ্টা উত্তর তোর কাছ থেকে আর পাওয়া হবে না। বুঝতে পারছি। তুই সেই আগের মতই রয়ে গেলি।

উঁহু একদমই না। আমি আগের চেয়ে অনেক বেশি বদলে গেছি। শুধু তা সবার ক্ষেত্রে প্রকাশ করি না।যাই হোক, মাহির ভাই এবং তার বউয়ের খবর কী? বিয়েতে গেছিলি?

আর বলিস না।বড় মামা নিজেই বাড়িতে চলে আসছিল আমাদের নিয়ে যেতে। মামাকে তো আর বারন করা যায় না।তাই যেতে হলো।

ওহ আচ্ছা।বউ কেমন?

বউ সুন্দর।যার ভাগ্যে যে ছিল আর কি।

সুখে থাকুক।

হুম। আচ্ছা মা ডাকছে।রাখি কেমন? তুই পড়ায় মন দে। রাতে ফ্রী হলে ফোন দিয়ে সবার সাথে কথা বলে নিস।

আচ্ছা ঠিক আছে। এখন রাখছি।টা টা।ঐ শুন,,,

হ্যাঁ বল।

সাবধানে থাকিস। নিজের যত্ন নিস।রাখছি। আল্লাহ হাফেজ।
অনু কল কেটে দিল। মোবাইল এর সব ফোন নাম্বার দেখতে গিয়ে হঠাৎ অনুর চোখ পড়লো তূর্যর মোবাইল নাম্বার এর উপর।অনু কি মনে করে যেনো তূর্যকে কল দিল।

তূর্য তখন রেস্টুরেন্টে বসে ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা এবং খাওয়া দাওয়া করছিল। হঠাৎ এই সময় অনুর কল পেয়ে খুশিতে লাফিয়ে উঠলো তূর্য।
তূর্য কল কেটে দিয়ে নিজেই আবার কল ব্যাক করলো।

আরেএএ আপনি এমন কেন বলুন তো? আমার ফোনে কী টাকা নেই যে কল কেটে আবার ব্যাক করছেন?

আমি এমনি। হঠাৎ কী মনে করে?

এমনিতেই।কী করেন?

এই তো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছি। আপনি?

বইয়ের সামনে বসে আছি। আপনাকে বিরক্ত করলাম তাই না?আড্ডার মাঝে ঝামেলা পাকিয়ে দিলাম। অবশ্য এর জন্য আমি সরি কিছুতেই বলবো না।কারন এমন হুট হাট বিরক্ত করা ছাড়ছি না আমি।

অনুর কথা শুনে হাসলো তূর্য।
বাব্বাহ।আজ দেখি আপনি অন্য মুডে আছেন।

আজ আমি অনেক খুশি।

হঠাৎ এত খুশি কেন জানতে পারি? না মানে আমি ও আপনার সাথে খুশি হতাম আর কী।

আপনি জানেন আমি খালামনি হতে চলেছি।

বাহ তাহলে তো আমি আঙ্কেল হতে চলছি।

ভালো হয়ে যান মিস্টার তাওহীদ তূর্য।বলেই অনু কল কেটে দিল। তূর্য হেসে উঠলো অনুর কান্ডে। তূর্য কে হাসতে দেখে অর্ক বলে উঠলো,

কীরে ভাই?এত হাসি কেন তোর মুখে?

নতুন নতুন প্রেমে পড়লে হাসি খুশি একটু বেশিই থাকে।আর এটাই হলো ওর হাসির রহস্য।

তোর কল্লা। সবুজ তুই সব সময় এক চামচ বেশিই বুঝিস।

হ্যাঁ তা আমি জানি। কিন্তু আজ আমি যা বলেছি তা একদমই ঠিক বলেছি।

মাফ কর ভাই।আর কিছু বলিস না।
.
.
প্রতিদিন এর তুলনায় আজ অনুর ঘুম একটু বেশিই তাড়াতাড়ি ভেঙে গেল। বাইরে এখনো আলো ফুটে নি।ব্যাস্ত নগরী এখনো ঘুমিয়ে আছে। তবে হালকা পাতলা গাড়ির শব্দ শোনা যাচ্ছে।অনু অনেক চেষ্টা করেও আর ঘুমাতে পারলো না। তার পাশেই শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে আছে রিয়ানা।অনু বিছানা থেকে উঠে ওয়াস রুমে চলে গেল ফ্রেশ হওয়ার জন্য।ফ্রেশ হয়ে এসে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে মোবাইলে সময় দেখে নিলো।৪টা ১৫ বাজে।

এই সময়ে ঘুম টা ভেঙে যাওয়ার কোনো মানেই হয় না।আজ থেকেই ১০টায় তার পরীক্ষা শুরু।অনু্র মাথায় কিছু আসলো না এত সময় সে কী করবে এটা একা। কিছুক্ষণ বিছানায় থ মেরে বসে থেকে ভাবলো,
একটু লম্বা সময় নিয়ে পড়া গুলো রিভিশন করলে সময়টা চলে যাবে।

যেই ভাবা সেই কাজ। সময়টা কে নষ্ট না করে কাজে লাগানোটাই বুদ্ধিমানের কাজ। কারন সময় টা চলে গেলে সময় টা আর ফিরে আসবে না।একটা সময়ে গিয়ে আবার এই সময়ের জন্য আফসোস করে বলতে যেনো না হয়,ইশ ঐ আগের সেই সময়টা যদি আবার ও ফিরে পেতাম।

ফজরের আযানের ধ্বনি কানে যেতেই ঘুম ভেঙ্গে যায় তূর্যর।সব সময় এই সময় তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। কিন্তু সবাই জানে এবং দেখে বেলা ১০টা অব্দি পড়ে পড়ে ঘুমায় সে।আসলে ব্যাপারটা হলো,
ফজরের নামাজ আদায় করে বারান্দায় বসে বসে দিনের আলো ফুটতে দেখে সে।দিনের আলো ফুটতে দেখার অনুভূতি টা একদমই ভিন্ন। অদ্ভুত এক সুন্দর অনুভূতি কাজ করে মনে।
চার পাশে আলোয় আলোকিত হয়ে গেলে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে আবারো ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমায়।

বিছানা থেকে নেমে ওয়াস রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আজ সে মসজিদে চলে গেল নামাজ পড়তে। নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হলো না তূর্য। আজ আর সে বাড়ি ফিরবে না। কেন জানি মন চাইছে না।তাই সে মসজিদ এর বারান্দায় বসেই আলো ফোটার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।

অনু নামাজের অযু করতে যাওয়ার আগে রিয়ানা কে বেশ কয়েক বার ডাকলো।রিয়ানা উঠছি বলে এখনো উঠার নাম নেই।

অনু একাই নামাজ আদায় করে নিলো। নামাজ পড়া শেষ হলে রিয়ানা কে মেরে মেরে ঘুম থেকে উঠিয়ে বললো,
আজ থেকে পরীক্ষা শুরু। আমার চোখে ঘুম নাই।আর তুমি কত শান্তিতে ঘুমিয়ে আছো। চিন্তা হয় না তোমার?

রিয়ানা চোখ ডলতে ডলতে বিরক্ত নিয়ে বললো,
ওভার থিংকিং ভালো না। পরীক্ষা তো কী হয়েছে? বিষয়টা কে প্যারা হিসেবে না নিয়ে চিল করো।দেখবা পরীক্ষায় না লিখেই ফার্স্ট ক্লাস হয়ে গেছো।

হ্যাঁ বলছে তোমারে।স্যার রা তো মনে হয় আমার মুখ দেখেই নাম্বার দিয়ে দিবে?

দিলে ও দিতে পারে।স্যাররা ও আপডেট হইছে না।

বেশি কথা বলতেছো ঘুম থেকে উঠে।যাও মুখ ধুয়ে অযু করে নামাজ পড়ে নাও। ফজরের নামাজ পড়লে সারা দিনটাই ভালো কাটবে।

রিয়ানা ওয়াস রুমে চলে গেলে অনু সকালের জন্য নাস্তা বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এই এক সপ্তাহ ধরে রিয়ানা একাই সব কিছু করছে।অনু একটা কাজ ও করেনি। অথচ অনুর প্রতি মেয়েটার কোনো অভিযোগ নেই।
আজ নিজে কিছু না করলে নিজের কাছে ও খারাপ লাগবে।
.
.
ভোরের আলো ফুটেছে অনেক সময় হয়ে গেছে। চার দিকে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ। তূর্য মসজিদ থেকে বের হয়ে রাস্তায় হাঁটতে লাগলো।গলির রাস্তা এখন ফাঁকা। গতকাল অনুকে এক বারের জন্যও দেখতে পায়নি।আজ ভাবলো সকাল সকাল যদি একটু দেখা যায় তাহলে দিনটাই ভালো কাটবে।

তূর্য খুব ভালো করেই জানে অনুর রাতে আর ভালো ঘুম হয় নি।অল্প চিন্তাতেই ঘুম আসে না মেয়েটার। সেখানে আজ আরো তার ফাইনাল এক্সামের প্রথম দিন।আজ তো আরো বেশি ঘুম না আসার কথা।
অদ্ভুত ভাবে এই মেয়ের শহরের মায়ায় পড়ে গেছি। না জানি তার শহরের মায়ায় সারাজীবন আটকে থাকতে পারবো কিনা। আমি তো তার শহরের মায়ায় আটকে থাকতে চাই সারাজীবন।এমনকি মৃত্যুর পর ও।

দুই জনের জন্য নাস্তা বানিয়ে ফেললো অনু।রিয়ানাকে কিছুই করতে দেয়নি সে। নাস্তা বানানো শেষ হলে দুই জনেই এক সাথে খেয়ে নিল।

সময় এখন আর দাঁড়িয়ে নেই।বেলা প্রায় আটটা বাজছে। বেশ অনেকক্ষণ ধরে অনু কে এক নজর দেখার জন্য দাঁড়িয়ে আছে তূর্য। অথচ একটা বারের জন্য হলেও অনু জানলার কাছে যায়নি এবং বারান্দায় ও যায়নি।

কোথায় তূর্য ভাবলো অনুকে দেখে দিন শুরু করবে তা আর হলো কই?এই পর্যন্ত কত জন কে যে দেখা হয়ে গেছে শুধু মাত্র অনু কেই দেখা হলো না।

অনু আর রিয়ানা একে অপরকে পড়া জিজ্ঞেস করা নিয়ে ব্যস্ত। তূর্য যে বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে সেই কথা জানেই না অনু।জানলে হয়তো অনেক আগেই সোজা তূর্যর সামনে গিয়ে বলতো,,

আমার পরীক্ষায় ফেল করার কারণ হতে আসছেন আপনি?

চলবে,,,,,