তিক্ততার সম্পর্ক পর্ব-২২

0
2186

#তিক্ততার_সম্পর্ক
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ ২২

ইয়ানা মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে লাগলো এই বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য।

আরমানের একটা ক্লাস আছে অনার্স ৩য় বর্ষে, আজ যদিও ক্লাস নেওয়ার মুড নেই তবু মিস করতে চায় না আরমান। আরমান বাইরের বৃষ্টির দিকে তাকাতে তাকাতে ক্লাসে এগিয়ে যাচ্ছে। ইমার কথা আজ খুব মনে পড়ছে আরমানের। মেয়েটার বৃষ্টি অতিরিক্ত পছন্দ, বৃষ্টি হলে হয়তো তাকে বেধে রেখেও বৃষ্টিতে ভেজা থেকে আটকানো যাবে না। এমনই এক বৃষ্টির দিনে আরমান ইমাকে অনেক অপমান করেছিলো, ভাবতেই বুক চিঁড়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস বেড়িয়ে এলো।

——
বাইরে বৃষ্টি থেমে গেছে আরমান রুম থেকে বের হয় বাড়ির বাইরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। ড্রয়িংরুমে পা রাখতেই পিছলে পড়ে যেতে চায়। সামনের দেয়াল ধরে কোনো মতে নিজেকে সামলে নেয়। নিচে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে পিছলে যাওয়ার কারণ। ফ্লোরে তাকাতেই আরমানের মাথায় রাগ চড়ে যায়। মেইন ডোর থেকে শুরু করে নিচের রুমের দিকে গেছে পানির রেখা, একেবারে জবজব করছে। টাইলসে পানি পরার কারণে পিছলে গিয়েছিলো আরমান।

আরমান রেগে চিৎকার করে বললো, মা মা।

মাথায় টাওয়েল পেঁচিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসে ইমা, আরমানের দিকে এগিয়ে এসে বলে, মণি বাইরে কোথায় যেনো গেছে এখনো ফিরেনি হয়তো বৃষ্টির জন্য আঁটকে গেছে। ভাইয়া আপনার কী লাগবে আমাকে বলুন আমি দিচ্ছি।

আরমান রাগে দাত কিটমিট করে বললো, এখানে পানি কোথা থেকে এলো ?

ইমা ফ্লোরে পানি দেখে ভয়ে এক ঢোক গিললো। বৃষ্টি দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি দৌড়ে ছাঁদে চলে গিয়েছিলো ভিজতে। বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় ভেজা কাপড়ে চলে এসেছে আর তাতে ফ্লোর ভিজে একাকার অবস্থা।

ইমা ভয়ে ভয়ে বললো, আসলে ভাইয়া আমি ছাঁদে গিয়েছিলাম,,,,,

আরমান বুঝতে পেরে মাথা ঠান্ডা করে বলে, বৃষ্টি দেখে আর হুঁশ ছিলো না তাই না ? ভেজা শরীর মানুষকে দেখানোর জন্য মন উতলা হয়ে গিয়েছিলো ?

আরমানের কথায় ইমার ঘৃণায় সারা গা শিউরে উঠে, ভেজার আগে সে সবসময় দেখে নেয় আশেপাশের ছাঁদে কেউ আসে কি না। কেউ না থাকলে তবেই সে বৃষ্টিতে ভেজে আর আরমান তাকে এমন বাজে কথা বলতে পারে ভেবে ইমার নিজের প্রতি ঘৃণা হয়। আরমানের বরাবরই শান্ত মাথায় মানুষকে অপমান করার স্বভাব। রেগে গেলে চেঁচামেচি না করে শান্ত মাথায় অপমান করে। এই অবেলায় ইমা বৃষ্টিতে ভিজেছে শুনে অকারণে রাগ উঠে যায় আরমানের তাই এভাবে কথা শুনিয়ে দেয়।

আরমান আগের মতো রাগ চেপে রেখে বললো, কী হলো কথা বলছিস না কেনো ? নাকি ভেবেছিলি বৃষ্টিতে ভিজে অসুস্থ হলে বাড়ির কাজ করতে হবে না। শুন তুই যদি অসুস্থ হয়ে পঁচেও মরিস তাহলেও এই বাড়িতে কেউ নেই তোকে দেখার। তাই অসময়ে বৃষ্টিতে ভেজা বন্ধ কর।

কথাটা শেষ করে আরমান বড় বড় কদম ফেলে বের হয়ে গেলো বাসা থেকে। ইমা সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ফ্লোরের পানি মুছার ব্যবস্থা করে। মণি এসে দেখলে হয়তো আবার নতুন কোনো শাস্তি পেতে হবে।

—-
কারো সাথে সজোরে ধাক্কা লাগলে আরমানের অতীতে বিচরণের পালা শেষ হয়। বিরক্তি নিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে পিয়ন।

আরমান বিরক্ত হয়ে বললো, আকবর তুমি এভাবে দৌড়াচ্ছো কেনো ? এটা কী দৌঁড়ানোর জায়গা ?

আকবর হাঁপাতে হাঁপাতে বললো, স্যার মাফ কইরা দেন দেখি নাই, আমার তারা আছে যাইতে হইবো।

আকবর যেতে চাইলে আরমান বাঁধা দিয়ে বলে, তুমি এভাবে হাঁপাচ্ছো কেনো আর দৌড়ে কোথায় যাচ্ছো তুমি ?

আকবর ব্যস্ত গলায় বললো, স্যার সময় নাই ইশান ভাইকে খবর দিতে হইবো। নিচে হল রুমে কয়েকটা গুন্ডা মতোন ছেলে ইশান ভাইয়ের বড় আপুরে আটকাইয়া রাইখা কী সব বলতাছে। হেই অনেক কানতাছে স্যার, আমার যাইতে হইবো নাহলে দেরি করলে খারাপ কিছু হইয়া যাইতে পারে।

আরমান চমকে উঠে বললো, ইশানের বোন মানে ইয়ানার কথা বলছো তুমি ?

আকবর ইশানের নাম জানলেও ইয়ানার নাম জানে না। শুধু ইশান ভাইয়ের বড় আপু হিসাবেই চেনে ইয়ানাকে। তাই আরমানের প্রশ্নের উত্তরে বললো, জি স্যার এইটাই মনে হয় নাম।

আরমান ব্যস্ত স্বরে বললো, ওহ্ নো।

আকবর কিছু না বুঝে আরমানের দিকে তাকিয়ে আছে আর আরমান কিছু না ভেবে উল্টো ঘুরে হলরুমের দিকে দৌড় দিলো।

আকবর সেদিকে অবাক হয়ে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে ইশানকে বলার জন্য দৌড় লাগালো।

ফ্লোরে বসে ফুপিয়ে কাঁদছে ইয়ানা শাহিদ বিশ্রি হেঁসে ইয়ানার ওড়না ধরলো নিচু হয়ে। হিজাব পরে ওড়নাটা ভাজ করে একপাশে দিয়ে রেখেছিলো, তবু ইয়ানা ওড়না আঁকড়ে ধরলো দু’হাতে।

ইয়ানা কাঁদতে কাঁদতে বললো, প্লিজ আমার কোনো ক্ষতি করবেন না আমি আপনাদের পায়ে পড়ছি ভাইয়া।

বাইরে ঝুম বৃষ্টি ইয়ানার কান্না এই পাঁচ জানোয়ার ছাড়া আর কারো কানে পৌঁছাচ্ছে না। সবগুলো কুৎসিত হাসিতে উপভোগ করছে অসহায় মেয়েটার কান্না। শাহিদ ওড়না টান দিবে তার আগেই দরজায় কেউ সজোরে লাথি মারলো। সেই শব্দে সবাই সেদিকে তাকালো। শাহিদ একহাতে ইয়ানার ওড়না ধরে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে দরজার দিকে। কিছু বুঝে উঠার আগেই আরমান আর একবার লাথি মারতেই দরজা ভেঙে গেলো। মনে হচ্ছে রাগে আরমানের শরীরে সাতজনের শক্তি ভড় করেছে। আরমান দরজা দিয়ে ভেতরে আসতেই চোখ পড়লো ইয়ানার ওড়না ধরা শাহিদের হাতে দিকে। রাগে কপালের রগ ফোটে উঠলো। ঠান্ডা মাথায় অপমান করার মতো অবস্থা এখন আর নেই, এতো পরিমাণ রেগে গেছে। শাহিদ বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে আরমানের দিকে। আরমান দুকদম এগিয়ে এসে এক ঝটকায় ইয়ানার ওড়না ছাড়িয়ে নিলো শাহিদরে হাত থেকে। এতে শাহিদ রেগে গিয়ে এগিয়ে এলো আরমানের দিকে।

আরমানের কলার চেপে ধরে বললো, এই কে রে তুই আমার কাজে নাক গলাচ্ছিস ?

আরমান নিজের কলারে দিকে তাকিয়ে আউট অব কন্ট্রোল হয়ে গেলো রাগে। ছেলেরা সব সহ্য করলেও কলারে হাত সহ্য করতে পারে না, এতে শান্ত ছেলেটাও রেগে যায় আর সেখানে আরমান আগে থেকেই রেগে বম হয়ে আছে। আরমান মুখে কিছু না বলে হাতটা মুচড় দিয়ে ধরে সজোরে লাথি বসিয়ে দিলো শাহিদের পেটে। শাহিদ ছিটকে দূরে সরে মাটিতে পরে গেলো আর পেট চেপে কাতরাতে লাগলো। ইয়ানা দেয়াল ধরে ধীরে ধীরে দাঁড়ালো। এখনো ভয়ে সারা শরীর কাঁপছে ইয়ানার। শাহিদকে মারতেই সাথের চারজন তেড়ে আসতে লাগলো আরমানের দিকে। আরমান আশেপাশে তাকিয়ে এখানে অনুষ্ঠান হলে সাজানো জন্য যে স্টিলের কাঠামো ব্যবহার করা হয়ে সেগুলোর একটা লম্বা পাত দেখতে পেলো। দ্রুত সেটা উঠিয়ে সবকটাকে পিটাতে লাগলো, নিজের ভেতরের সব রাগ উগ্রাতে লাগলো। সবকটা ফ্লোরে পরে ছটফট করছে আর চিৎকার করছে কিন্তু আরমানের সেদিকে হুশ নেই। তখনই দৌড়ে রুমে প্রবেশ ইশান আর তার বন্ধুরা। রাগে ইশানের চোখ মুখও লাল হয়ে গেছে। ইয়ানাকে দেখে দৌড়ে তার কাছে গেলো।

ইশান ব্যস্ত হয়ে ইয়ানার হাত-পা চেক করতে করতে বললো, আপু ঠিক আছিস তুই ?

ইয়ানা কোনো মতে ইশারায় বুঝালো সে ঠিক আছে। ইশান এবার রেগে তাকালো সামনে আরমান তখনও মেরে যাচ্ছে ওদের। ইশানও দাঁড়িয়ে না থেকে মারতে শুরু করলো, ইশান ইচ্ছে মতো লাথি মেরে যাচ্ছে। অবস্থা খাবাপ বুঝতে পেরে ইশানের বন্ধুরা ইশানকে জোর করে সরিয়ে আনলো৷ ইতিমধ্যে অনেক প্রফেসর চলে এসেছে আরমানকেও কয়েকজন মিলে টেনে সরিয়ে আনলো জোর করে। দু’জনকেই আঁটকে রাখা দায় হয়ে পড়ছে।

সবাই বলছে, আর মারলে মরে যাবে তখন ঝামেলা হয়ে যাবে।

সবগুলোর অবস্থা করুন, নাকমুখ দিয়ে রক্ত ছুটে গেছে। আরমান রেগে এক ঝটকায় সবার বন্ধন থেকে নিজেকে ছারিয়ে নিলো। ইশানও নিজেকে ছাড়িয়ে বোনের কাছে গিয়ে ইয়ানার মাথা নিজের বুকে জড়িয়ে নিলো। ইয়ানা শুধু ইয়াদের কলিজা নয় ইশানেরও প্রাণ। আর সেখানে কেউ আঘাত করতে চেয়েছে সেটা কীভাবে মেনে নিবে ?

আরমান রেগে হুংকার ছেড়ে বললো, এই রাস্কেল গুলো ভার্সিটিতে ঢুকলো কী করে ? এটা কী কোনো ক্লাব যে রাস্তার কুকুরও ঢোকে পরবে ?

আরমানের হুংকারে শুধু স্টুডেন্ট নয় উপস্থিত প্রফেসররাও ভয়ে কেঁপে উঠলো। আরমানকে কেউ কিছু বলতেও ভয় পাচ্ছে । তখনই প্রিন্সিপাল এসে উপস্থিত হলো।

আরমানের দিকে তাকিয়ে বললো, এখানে এতো গ্যাঞ্জাম কিসের আরমান ?

আরমান রেগে শাহিদের চুলের মুঠি ধরে একটু উঁচু করে প্রিন্সিপাল স্যারকে দেখিয়ে বললো, স্যার বাইরের এই কুকুরগুলো ভার্সিটির ভেতরে ঢুকে আমাদের ভার্সিটির স্টুডেন্ট ইয়ানার উপর আক্রমন করেছে। আমি জানতে চাই এরা এখানে ঢুকলো কী করে ? প্রত্যেকটা গেইটে সিকিউরিটি গার্ড আছে তারা কী করে সারাদিন ? আজ আমি ঠিক সময়ে না আসলে ইয়ানার সাথে কী হতে যাচ্ছিলো বুঝতে পারছেন স্যার ?

শেষের কথা আরমান অনেকটা রেগে বললো তাতে প্রিন্সিপাল গম্ভীর গলায় বললো, আরমান তুমি ভুলে যাচ্ছো তুমি তোমার স্যারের সাথে কথা বলছো ?

আরমান রাগ কিছুটা কন্ট্রোল করে বললো, স্যার আমি ভুলে গেলেও আপনি মিস ইয়ানার পরিচয়টা ভুলবেন না। মিস্টার আবরার হামিদ ইয়াদ যদি আপনার কাছে তার বোনের সিকিউরিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাকে কী উত্তর দিবেন সেটা মনে রাখেন।

ইয়াদের কথা শুনেই প্রিন্সিপালের গলা শুকিয়ে গেলো। ইয়াদের কোম্পানি থেকে প্রতি বছর মোটা অংকের টাকা ডোনেশন পায় এই ভার্সিটি। সেটাও শুধু ইয়ানার জন্য।

আরমান আবার বললো, যেখানে মিস্টার আবরার হামিদ ইয়াদের বোনের কোনো সেফটি নেই সেখানে তাকে রাখবে তো ?

ইশান চুপ করে দাড়িয়ে আছে কারণ তার যা বলার ছিলো সব আরমান বলে দিয়েছে। সে ইয়ানাকে সামলাতে ব্যস্ত। এদিকে প্রিন্সিপালের অবস্থা খারাপ হয়ে গেলো আরমানের কথা শুনে। ইয়াদকে সে ভালো করে চেনে, ইয়ানাকে নিয়ে এসে প্রথম দিনই তাকে ভালো করে বুঝিয়ে দিয়ে গেছে ইয়ানা কোনো কমপ্লেন করলে এই ভার্সিটির বারোটা বাজাতে তার দুমিনিটও লাগবে না। ইয়াদ সেদিন জাহিদের ঘটনার পরও প্রিন্সিপালকে ভদ্র ভাষায় ভয়ংকর হুমকি দিয়েছিলো।

আরমান ইয়ানার সামনে দাঁড়িয়ে রাগি গলায় বললো, কেঁদে কেঁদে অনুরোধ করার থেকে নিজেকে নিজে রক্ষা করতে শিখো।

আরমান কথাটা বলে আবার শাহিদকে একটা লাথি মেরে বের হয়ে যায় হলরুম থেকে। ইয়ানা এখনো ইশানের বুকে লুকিয়ে আছে বলা চলে, ভয়টা এখনো কাটেনি তার। ইশান চিন্তা করছে ভাইয়া এসব জানতে পারলে কী করবে ? ইশান বেশ বুঝতে পারছে তার কপালেও খারাপ কিছু আসে। ইশান ভার্সিটিতে থাকা সত্ত্বেও ইয়ানা এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে পরে সেটাই উত্তর চাইবে।

প্রিন্সিপাল সবাইকে যার যার ক্লাসে যেতে বলে আর ইশানের দিকে এগিয়ে এসে বলে, তোমার ভাইয়াকে এসব জানানোর প্রয়োজন নেই আমি এদের কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করছি আর যাদের সাহায্যে ভার্সিটিতে ঢুকেছে তাদেরও কঠিন শাস্তি দেবো আমি।

ইশান কঠিন গলায় বললো, আমি না বললেও ভাইয়ার কাছে পৌঁছাতে খুব বেশি সময় লাগবে না, এই সব ঘটনা।

ইশান ইয়ানাকে নিয়ে বের হয়ে আসে আজ আর ক্লাস করা হবে না। ইয়ানা গাড়িতে উঠে বললো, ভাইয়াকে কিছু বলার প্রয়োজন নেই।

ইশান অবাক হয়ে বললো, কিন্তু আপু ভাইয়া পরে জানতে পারলে আমার খবর করবে।

ইয়ানা বললো, কিছু হবে না।

ইশান আর কথা বাড়ালো না গাড়ি স্টার্ট দিলো বাসায় যাওয়ার জন্য। ইশান মনে মনে কিছু ঠিক করে নিলো। এদিকে আরমান নিজের কেবিনে বসে চেয়ারে হেলানো দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাগ কামানোর চেষ্টা করছে কিন্তু তাতে লাভ হচ্ছে না। বারবার শাহিদের হাতে ইয়ানার ওড়না চোখের সামনে ভাসছে সেই দৃশ্য। আরমান টেবিলের ঠান্ডা পানির গ্লাসটা ঢকঢক করে শেষ করে দিলো।

২৫.
টেবিলের উপর মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে ইয়াদ ৷ কিছুতেই মাথাটা সোজা রাখতে পারছে না। চোখ দুটো অসম্ভব জ্বালা করছে। রনিত নক করলে ইয়াদ মাথা তুলে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে আসতে বললো। রনিত ইয়াদের দিকে তাকিয়ে চমকে গেলো ইয়াদের পুরো মুখ লাল হয়ে গেছে তবে দেখে মনে হচ্ছে না রেগে থাকার জন্য।

রনিত ভয় নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, স্যার আপনি ঠিক আছেন ?

ইয়াদ গম্ভীর গলায় বলার চেষ্টা করলো, আমি একদম ঠিক আছি আমার আবার কী হবে ?

রনিত বললো, স্যার আপনার চোখ মুখ অতিরিক্ত পরিমাণ লাল হয়ে গেছে। চোখ দেখে মন হচ্ছে রক্ত বের হবে এখনই।

ইয়াদ রেগে বললো, রনিত তুমি সবসময় বেশি কথা বলো কেনো ? ফাইলটা রেখে চলে যাও।

রনিত ভয়ে আর কথা না বাড়িয়ে বের হয়ে আসে আর ইয়াদ নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে লাগলো সঠিকভাবে কাজ করার।

——
ইমার হঠাৎ মনে পরে যায় বিয়েতে মায়ের দেওয়া সেই গিফটের বাক্সটা গ্রহণ করলেও খোলে দেখা হয়নি। সেটা খুলে একটা চিঠি পেয়েছে ইমা যেটা পরে চোখের বাঁধ ভেঙে গেছে ইমার। নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ সন্তান মনে হচ্ছে ইমার কাছে। ইচ্ছে করছে দৌড়ে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে। কিন্তু সেটা যে এখন আর সম্ভব নয় কোনোদিন। একবার যদি অভিমান ভুলে তখন গিফটটা দেখতো হয়তো মাকে জড়িয়ে কাঁদার ইচ্ছেটা পূরণ করতে পারতো ইমা।

চলবে,,,