#তুই_যে_আমারই
#আঁখি আজমীর নুরা
part 7
এরপর আমি মুখ ফুলিয়ে রেডি হয়ে নিলাম। রেডি হয়ে নিচে নেমে আসলাম। নিচে নেমে খালামনি থেকে বিদায় নিয়ে ভাইয়ার সাথে চলে গেলাম। ভাইয়া আমাকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে গেলেন।
আয়াজ অফিস যাওয়ার পর আয়াজের পিএ নুহাশ এসে আয়াজের কেবিনে নক করতে থাকে।
কাম! কোনো নিউজ?
ইয়েস বস। স্যার রিয়াদ সরকার নাকি দেশে বেক করেছে। কথাটা শুনে আয়াজ বাঁকা হাসলো। গুড জব। নজরে রাখবি অলওয়েজ।
জ্বি বস। বলেই নুহাশ চলে গেলো। এরপর আয়াজ নিজের কাজে মন দিলো।
এদিকে, ক্লাসে বসে বসে আঁখি ঝিমাচ্ছে। পাশ থেকে সাদিয়া কলম দিয়ে গুতাচ্ছে। কি হয়ছেরে বাল গুঁতাস কেনো?
তো কি করবো। ইংরেজি টিচার এভাবে তোকে দুইবার নোটিশ করছে। আরেকবারে দেখবি তোকে ক্লাস থেকে বের করে দিবে।
এই বালডার ক্লাস করতে মন চায় না। হালা টাকলু কি বুঝাই নিজেও জানে নাহ।
আঁখি,সাদিয়া দুইজনই দাড়ান। অনেকক্ষণ ধরে তোমাদের নোটিশ করছি। ক্লাসে বসে কিসের এতো কথা। দুইজনই আজকে পুরো ক্লাস কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকবা। এটাই তোমাদের শাস্তি।
এরপর দুইজনই কান ধরে দাঁড়িয়ে আছি। আর স্যার উপর মনে মনে ভিষণ রাগ হচ্ছে। স্যার যখন বোর্ডে কি যেনো লিখাচ্ছে। মাথার মধ্যে একটা দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো। খাতা থেকে একটা কাগজ ছিড়ে নিয়ে, মুচরিয়ে গোল করে নিয়ে, আস্তে করে এদিক ওদিক কেউ দেখছে কিনা দেখে, ধুম করে স্যারের মাথার উপর মেরে দিলাম। কিন্তু সবার চোখতো আর ফাঁকি দেওয়া যায় না। ঠিকি ক্লাসে কেউ একজন দেখে নিয়েছে। যার ফলস্বরূপ স্যার যখন কে মেরেছে বলে জিজ্ঞেস করে উঠলো, অমনি ফটাফট সে বলে দিলো আঁখি মেরেছে। আমি ওই মেয়েটার দিকে রাগী চোখে তাকালাম। যার অর্থ ক্লাস শেষে তোকে দেখে নিবো।
এদিকে স্যার আমায় বলল। এতো বেয়াদবি, স্যারদেরকে সম্মান করো না। আজকেই তোমার গার্ডিয়ান ডাকাবো। স্যার হয়তো আরো কিছু বলতো কিন্তু ঘন্টা পরে যাওয়ার কারণে আর কিছু বলল না। ক্লাস থেকে বেরিয়ে চলে গেলো। এরপর বাকি ক্লাস গুলো শেষ করে যখন ছুটি হলো তখন গিয়ে ওই মেয়েটাকে ধরলাম।
ওই তুই স্যারকে বললি কেন? তোকে এতো সত্যবাদী হতে কে বলছে। বলেই চুল টানতে লাগলাম। আর তারপর সাদিয়া বৃষ্টি এসে আমাকে থামালো।এরপর নিচে নেমে আসলাম।
নিচে নামতেই আমাকে প্রিন্সিপাল এর রুম থেকে ডাকা পাঠালো। এবার মনে মনে ভয় লাগছে। দোয়া পড়ে বুকে ফুঁ দিয়ে প্রিন্সিপালের রুমে ঢুকলাম। ঢুকেই রুমে যাকে দেখলাম ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে। কারণ সয়ং আয়াজ ভাইয়া বসে আছে আর ওই মেয়েটাও আছে দেখছি। আর আয়াজ ভাইয়া আমার দিকে চোখ মুখ লাল করে তাকিয়ে আছে। আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি।
আয়াজ ভাইয়া বলে উঠলো, স্যার এর মাথায় কাগজ ছুড়ে মেরেছিস কেন?
…….
কি হলো?
এবারও আমি চুপ। কজ কোনো উত্তর নেই
এবার আয়াজ জোরে চিল্লিয়ে উঠলো। আর বলল কি হলো কথা বলছিস না কেন? আর এই মেয়ের চুল ছিড়েছিস কেন? ড্যাম ইট!
এরপর আয়াজ টেবিল থেকে বেত নিয়ে সকল টিচারদের সামনে হাতে পিঠে চটাস চটাস বেশ জোরে জোরে অনেকটা বারি দিলো। আমি মাথা নিচু কান্না করতে লাগলাম।
আয়াজ ভাইয়া চিল্লিয়ে এবার আমাকে বলল, যাও মেয়েটাকে সরি বলো। আমিও ভয়ে ভয়ে গিয়ে মেয়েটাকে মাথা নিচু করে সরি বললাম। এরপর আমি চুপ করে দাড়িয়ে আছি। অমনি আয়াজ ভাইয়া আমাকে বলল স্যার এর কাছে ক্ষমা চেয়েছিস?
আমি এবার স্যার এর সামনে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে বললাম, আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমি আর এমন অপরাধমূলক কাজ দ্বিতীয় বার করবো না।
স্যার তৎক্ষনাৎ আমাকে বলল, তুমি তোমার ভুল বুঝতে পারছো এই ই অনেক। আমার বিশ্বাস ২য় বার এই ধরনের কাজ করবা না।
আয়াজ এবার বলে উঠলো যা গিয়ে গাড়িতে বস। আমি আসছি।
আমিও অফিস কক্ষ থেকে বের হয়ে কাঁদতে কাঁদতে গাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
এদিকে অফিস কক্ষ থেকে সবাই বেরিয়ে যাওয়ার পর রফিক স্যার আয়াজ কে বলে উঠলো, মিঃ আয়াজ মেয়েটাকে এভাবে সবার সামনে না মারলেও পারতেন। আসলে এই বয়সে বাচ্চারা এমন একটু আধটু দুষ্টু হয়। দীর্ঘদিন যাবত শিক্ষকতা করছি, এসব নলেজ আমাদের আছে।
আয়াজ বলল, ও অন্যায় করেছে তাই শাস্তি পেয়েছে। অন্যায়টা যেহেতু সবার সামনে করেছে, তাহলে শাস্তিটা কেনো আড়ালে পাবে। সবার সামনেই পাওয়ায় উচিত। হোক সেটা বড়ো অন্যায় বা ছোট অন্যায়। আর শিক্ষকদের সাথে কেমনে বিয়াদবি করে। মা বাবার পরেই শিক্ষকের স্থান। যেসব স্টুডেন্টরা শিক্ষকদের সম্মান করতে জানে না। তারা গুরুজনদের কিভাবে সম্মান করবে? এসব বিষয়ে আমি অন্তত প্রশ্রয় দেয় না।
আসলে মিঃ আয়াজ আপনি যে কথা গুলো বলেছেন, এসব কথা গুলো যদি সকল গার্ডিয়ানরা বুঝতো তাহলে ছেলেমেয়েরা এতোটা বিগড়ে যেতো না।
অকে স্যার আজ তাহলে আসি।
জ্বি অবশ্যই।
এরপর আয়াজ বেরিয়ে গেলো। গাড়িতে উঠে দেখলো, আঁখি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। চোখ মুখ ফুলে একাকার করে ফেলেছে। আমি আর কিছু না বলে গাড়িটা স্টার্ট দিয়ে বাসার দিকে রওনা হলাম।
বাসায় পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে বাসায় চলে গেলাম। আর কান্না করতে করতে উপরে চলে গেলাম। আমাকে এভাবে কাঁদতে কাঁদতে উপরে উঠতে দেখে খালামনি অবাক হয়ে যায়। আয়াজকে ভিতরে আসতে দেখে আমি ওকে আস্ক করলাম। কিরে কি হয়েছে? মেয়েটা এভাবে কাঁদছে কেন?
ভুল করেছে তাই শাস্তি পেয়েছে।
কি করেছে?
এরপর আয়াজ সবকিছু খুলে বলে।
এবার রোজিনা চৌধুরী চুপ মেরে গেলো। কারণ বলার মতো কিছুই নেই। ছেলে যা করেছে ঠিকই করেছে। তাই চুপচাপ রোজিনা চৌধুরী রান্নাঘরে চলে গেলো। আর আয়াজ নিজের রুমে।
আঁখি রুমে এসে বেগ রেখে ওয়াশরুমে ঢুকে কান্না করতে থাকে। হাতে পিঠে পানি লাগতেই ভিষণ জ্বলছে। ডান হাতটা কিছুটা কেটেও গিয়েছে। পানি লাগতেই অনেক জ্বালা করছে। ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে চোখের জল ফেলতে লাগলাম। আর ভাবছি, আসলেই আমার এটা করা ঠিক হয়নি। কিন্তু তাই বলে সবার সামনে মারবে । ভিষণ অভিমান হচ্ছে।
দরজায় কে যেনো নক করছে। কিন্তু আমার এই মুহূর্তে কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না। তাই চুপটি মেরে থাকলাম। বাইরে গলা শুনে বুঝলাম আজিফা আপু।
উফফ এই মেয়ে দরজাতো খুলছেই না উল্টো চুপ করে আছে। কোনো জবাবই দিচ্ছে না।
বিরক্ত হয়ে আজিফা নিচে চলে গেলো।
আজিফা কে নিচে আসতে দেখে রোজিনা চৌধুরী জিজ্ঞেস করলো, কিরে আজিফা আঁখি কোথায়?
কোথায় আবার। উপরে দরজা আটকে বসে আছে। ডাকছি যে কোনো সাড়াশব্দ দিচ্ছে না।
আয়াজ এতক্ষণ ওদের কথা শুনছিলো। এবার আয়াজ বলল তুই খেতে বস আমি দেখছি। বলেই আয়াজ উপরে উঠে গেলো।
উপরে উঠে আঁখির রুমপ নক করতে লাগলাম। কিন্তু মেয়েতো খুলছে ও না, আর রিপ্লাই ও করছে না। তাই আমি এবার ডাক দিলাম।
আঁখি! আঁখি!
আমি এতক্ষণ বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদছিলাম। আয়াজ ভাইয়ার আওয়াজ শুনে তাড়াতাড়ি উঠে বসলাম। চোখ গুলো দুই হাতে মুছে দরজাটা খুলে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি।
আয়াজ আঁখির দিকে এক নজর তাকালো। দেখেই মনে হচ্ছে এতক্ষণ কান্নাকাটি করেছে। হঠাৎ আঁখির হাতের দিকে চোখ পরলো। দেখলাম হাতে বেন্ডেজ করেছে। স্লিভলেস গেঞ্জি পরাই মারের দাগ গুলো স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।
আমি হাতটা ধরতে যেতেই, হাতটা সরিয়ে ফেললো।
এদিকে উনাকে দেখে কান্না যেনো আরো বেশি পাচ্ছে। এবার আর ধরে রাখতে পারলাম না। ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলাম।
আয়াজ কিছু না বলে হাতটা ধরে নিয়ে খাটে বসিয়ে দিলাম। আর এদিক ওদিক চেক করতে লাগলাম। কোথায় কোথায় লেগেছে। পিঠে দেখলাম পিঠেও কয়েকটা দাগ বসেছে। আসলে এতোটা মারা ঠিক হয়নি। কিন্তু কি করবো অন্যায় যে সহ্য করতে পারি না। তারউপর এভাবে স্কুল থেকে ফোন দিয়ে বিচার দিলো। তাও আবার নিজের বউয়ের নামে। বিষয়টা আসলেই প্রত্যেকের জন্য অপমান জনক।
আয়াজ এবার যেখানে যেখানে লাল বসে গেছে ওখানে অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিলো। আর আজিফাকে চিল্লিয়ে বলল উপরে খাবার পাঠিয়ে দিতে।
রহিমা আন্টি খাবার নিয়ে আঁখির রুমে দিয়ে আসলো। এরপর আয়াজ ভাত মেখে আঁখির মুখের সামনে ধরলো। কিন্তু আঁখি মুখে তুলছে না। ননস্টপ কেঁদেই যাচ্ছে।
হা কর?
কিন্তু নাহ হা তো করছেই না। মাথাটা অবধি নিচে থেকে উপরে তুলছে না। বোঝায় যাচ্ছে অনেক অভিমান করেছে। পিচ্চিটার তাইলে আমার উপর অভিমান হয়েছে।
তাই আমি…….
চলবে