তুই যে আমারই পর্ব-০৬

0
5791

#তুই_যে_আমারই
#আঁখি আজমীর নুরা
part 6

নিচে গিয়ে দেখলাম আঁখি টেবিলে খেতে বসে, পৃথিবীর যত তালবাহানা আছে সব করছে। যতটা না খাবে তার থেকে বেশি তালবাহানা করবে। সবজি যেন এই মেয়ের শত্রু।
কি হচ্ছে এখানে? আমার গলা শুনে আম্মু বলল ওহ তুই নামছিস। দেখ কি জ্বালানি জ্বালাচ্ছে আমাকে এই মেয়েটা। আমাকে দেখে যেনো আঁখি চুপসে গেলো। আমি কিছু না বলে আঁখির পাশে একটা চেয়ার টেনে বসলাম। আর আঁখির প্লেটটি নিয়ে, তরকারি শাক সব দিয়ে ভাতগুলো মেখে দিলাম। আর মুরগি মাংসের লেগ পিসটা দিয়ে প্লেটটি আঁখির সামনে দিলাম।

নে শুরু কর। আমি একবার প্লেটের দিকে তাকাচ্ছি তো একবার খালামনির দিকে তাকাচ্ছি। ভিষণ কান্না পাচ্ছে। খালামনি আমাকে না দেখার ভান করে কিচেনে চলে গেলো।

কি হলো প্লেট নিয়ে বসে আছিস কেনো? খাওয়া শুরু করবি নাকি, মাইর খাবি? আর নেক্সট টাইম থেকে তুই আমার সাথে বসে খাবি। আমিও আস্তে আস্তে বহু কষ্টে খাবার গুলো শেষ করলাম। খেয়ে উঠে চলে যেতে নিলাম, তখনই ভাইয়া বলে উঠলো উপরে গিয়ে ঘুমাবি। কোথাও গিয়েছিস তো মাইর একটাও মাটিতে পরবে না গম্ভীর গলায় বলে উঠলাম। জ্বি ভভভাইয়া আর কককোথাও যাবো না।

তারপর উপরে গিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। আসরের আযানের শব্দে ঘুম থেকে উঠে গেলাম। উঠে ফ্রেশ হয়ে নামায পরে নিলাম। তারপর নিচে নামলাম। নিচে নেমে এক মগ গরম কফি খেয়ে নিলাম। ঘুম থেকে উঠার ফলে মাথাটা ভিষণ ভার হয়ে আসছিলো তাই কফিটা খাওয়ায় এখন কিছুটা ভালো লাগছে।

আজিফা আপু সোফায় বসে বসে মোবাইল টিপছে। আমি আস্তে করে উঠে আজিফা আপুর পাশে গিয়ে বসলাম। আর দেখলাম আপু বসে বসে ফেসবুকে স্ক্রল করছে। আমি ও আপুর মোবাইলের দিকে দেখতে লাগলাম। আসলে আমার কোনো মোবাইল নেই। আয়াজ ভাইয়া সাফ সাফ মানা করে দিয়েছে, মেট্রিকের আগে কোনো মোবাইল যেনো আমাকে দেওয়া না হয়। শরীরে ভিষণ ঠাণ্ডা লাগছে। সোয়েটার ও গায়ে দিয়েছি, তাও ভিষণ শীত করছে। আমি আস্তে করে সোফায় শুয়ে পরলাম গুটিশুটি মেরে।

আজিফা আপু আমাকে এভাবে শুয়ে পরতে দেখে জিজ্ঞেস করলো, কিরে মাত্রই না ঘুম থেকে উঠলি। আবার এভাবে শুয়ে আছিস কেনো?
এমনি আপু ভিষণ ঠাণ্ডা লাগছে।
কিরে তোর চোখ মুখ এমন লাল হয়ে আছে কেন? মাথায় হাত দিয়ে দেখলাম গাঁ টা ভিষণ গরম। হাতটা যেন পুড়ে যাবে এমন সিচুয়েশন। কিরে গায়ে জ্বর বাঁধালি কিভাবে
আম্মু! আম্মু!
কিরে কি হয়েছে এমন চেঁচাচ্ছিস কেন? কী সমস্যা তোর?
দেখো তোমার ভাগ্নের গায়ে জ্বরে হাত দেওয়া যাচ্ছে না। কি যাতা বলছিস। দেখি সর। আম্মু কি হয়েছে। ইসসস হাত তো পুড়ে যাচ্ছে। কেনো যে আজকে বৃষ্টিতে ভিজতে গেলি।মনে মনে যা ভেবেছিলাম তাই হয়েছে। আজিফা থার্মোমিটার টা
নিয়ে আয়তো।

এদিকে নিচে এতো চেঁচামেচির কারণে আয়াজ রুম থেকে বেরিয়ে আসে। আর নিচে এসে দেখে সোফার মধ্যে আম্মু আঁখির মাথাটা কোলে নিয়ে বসে আছে। আম্মুর ফেস দেখে মনে হচ্ছে চোখে মুখে চিন্তার ভাব ফুটে ওঠেছে।
কিন্তু আঁখির কি হয়েছে। দৌড়ে নিচে নামলাম। আমাকে নামতে দেখে আম্মু বলল তুই এসেছিস, দেখনা বাবা মেয়েটার জ্বরে গাঁ তো পুড়ে যাচ্ছে।
আমি কিছু না বলে আঁখির কপালে আর গলায় হাত। আসলেইতো! ততক্ষণে আজিফা থার্মোমিটার নিয়ে নিচে হাজির হয়ে গেছে। আমি আঁখির কাছ থেকে থার্মোমিটার টা নিয়ে জ্বরটা মেপে দেখলাম। মাই গড ১০৪°!

আমি তাড়াতাড়ি করে ডক্টর কে ফোন দিলাম। ডক্টর আসতে আসতে বাসায় ততক্ষণে বেসিক ট্রিটমেন্ট গুলো আম্মু দিচ্ছে। এরপর ডক্টর এসে চেক-আপ করে, মেডিসিন লিখে দিলো। আর বলল ভয়ের কিছু নেই। বৃষ্টিতে ভিজার ফলে এমনটি হয়েছে। এই বলে উনি চলে গেলেন।

আমি আঁখিকে কোলে করে নিয়ে উপরে নিয়ে গেলাম। কারণ ছোটো বেলা থেকেই এই মেয়ের একটু জ্বর হলেই নেতিয়ে পড়ে। রুমে নিয়ে গিয়ে খাটের উপর শুয়ে দিলাম। রহিমা আন্টি সুপ এনে দিলো।গরম গরম কোনোরকমে একটু খাওয়ালাম
এবার ঝামেলা শুরু মেডিসিন নিয়ে। কিছুতেই মুখে তুলছে না। তাই আর না পেরে একটু পানির সাথে মিশিয়ে লিকুইড করে হালকা চিনি মিক্স করে জোর করে খাইয়ে দিলাম।
আজিফা বসে বসে জলপট্টি দিচ্ছে। ততক্ষণে আমি গিয়ে মাগরিবের নামাজ টা আদায় করে নিলাম। নামাজ কমপ্লিট করে এক কাপ কফি খেয়ে নিলাম। নয়তো মাথাটা ধরবে।

রাতে সবাই ডিনার করতে বসলাম। আলতাফ চৌধুরী বলল,তা আয়াজ সিঙ্গাপুরের প্রজেক্ট টার কী খবর?
এইতো আব্বু ভালো। কিছুটা কাজ বাকি আছে। ওগুলো কালকে অফিসে কমপ্লিট করে নিবো।
হুম…
এরপর আর কেউ কোনো কথা বললাম না। চুপচাপ খাবার শেষ করে যে যার যার রুমে চলে গেলো।
আর আমি যাওয়ার সময় আম্মুকে বলে গেলাম। আঁখির সাথে আমি থাকছি। রাতে টেনশন করার কিছু নেই। আমি আছি সব সামলে নিবো।
আচ্ছা ঠিক আছে। গুড নাইট।

এরপর আমি আঁখির রুমে এসে দরজা আঁটকে আঁখির পাশে গিয়ে বসলাম। আর মাথায় হাত দিয়ে দেখলাম জ্বর কিছুটা কমেছে। এরপর লাইটটা অফ করে, টেবিল ল্যাম্পটা অন করে দিয়ে বই পড়তে লাগলাম। কারণ আমার এখন ঘুম আসবে না। আধা ঘণ্টা যেতেই দেখলাম আঁখি এক হাত দিয়ে আমার পেট জড়িয়ে ধরলো আর একটা পা আমার গায়ের উপর তুলে দিলো।
আমি মুচকি হেসে বই পড়াই মন দিলাম। কিন্তু আমার তো জানায় ছিলো না যে, এই মেয়ে স্থির হয়ে ঘুমানোর মেয়ে নয়।
পা যেটা বাকি ছিলো ওটাও তুলে দিয়েছে।

কিন্তু প্রবলেম এখানে নয়, দশটা মিনিট নিরবে ঘুমোচ্ছে না। একবার এই পাশ ফিরছে আবার ওই পাশ। একবার লাথি মারছে তো আবার পেটের উপর মাথা দিয়ে ঘুমুচ্ছে।

উফফ এই ডিস্টার্ব এর জন্য আর বইটাও পড়া হলো না। বিরক্ত হয়ে শুয়ে পরলাম। কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবার নড়াচড়া শুরু হয়ে গেলো। কিন্তু এবার মেজাজ যেনো আকাশে উঠে গেছে। কারণ ব্লাঙ্কেটটা টান দিয়ে কই যেনো নিয়ে গেছে। কারণ শীতের দিনে আর যায় সহ্য করা গেলেও ব্লাঙ্কেট টান দিয়ে নিয়ে যাওয়া এসব কিছু সহ্য করা যায় না। কিন্তু নিয়ে গেছে তো গেছে, নিজের গায়েও নেই। নিজে খালি আমিও খালি।

আবার উঠে ব্লাঙ্কেটটা নিয়ে ওর গায়ে জড়িয়ে দিলাম। আর নিজেও দিলাম। এবার আঁখিকে বুকে নিয়ে শক্ত করে চেপে ধরলাম। যেনো আর নড়াচড়া করতে না পারে। আর মনে মনে ভাবছি এটারে নিয়ে সারাজীবন সংসার করবো কেমনে।

ভোরে আযান আর এলার্ম এর শব্দে আয়াজের ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। চোখ খুলে নিজের বুকের উপর ঘুমন্ত মায়াবীনির দিকে চেয়ে রইলাম। গালে একটা চুমু দিলাম। তারপর হঠাৎ করে চোখ পড়লো গলার নিচে কালো তিলটার দিকে। যা আঁখিকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে। আমি কিছুক্ষণ তিলটার দিকে তাকিয়ে থেকে আস্তে করে ওখানে কয়েকটা চুমু দিলাম। আর গলার মধ্যে নিজের নাকটা স্লাইড করতে লাগলাম। কিন্তু পরক্ষণেই আবার এলার্ম বেজে ওঠতে ঘোরটা কেটে গেলো। তারপর ঠোঁটে কয়েকটা চুমু দিয়ে উঠে পরলাম।

উঠে ফ্রেশ হয়ে নামায আদায় করে নিলাম। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ভোরের পাখি গুলো দেখছি। ছয়টা বাজতেই জগিং এ চলে গেলাম। জিম জগিং শেষ করে ওয়াশরুমে গিয়ে একটা গোসল দিয়ে নিলাম। রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই পাশের রুমে চোখ পরলো। দেখলাম আঁখি এখনো ঘুমচ্ছে। এই মেয়ের ঘুম কি এখনো শেষ হয় নি। সেই সন্ধ্যা থেকে ঘুমোচ্ছে। মেজাজটাই যেনো বিগড়ে গেলো।
রুমে ঢুকে চিল্লিয়ে উঠলাম।
আঁখি! আঁখি
জোরে জোরে ডাকতে লাগলাম।
ঘুমের মধ্যে এমন চিল্লানোতে ধড়ফড় করে উঠে বসলাম। উঠেই এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম। আসলে ভিষণ ভয় পেয়েছিলাম।

কি হলো এখনো ঘুম ফুরোই নি। ঠাডিয়ে মারবো এক চড়। ওঠ! যা ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়। রেগে চিৎকার করে কথা গুলো বলে উঠলাম।
এদিকে আমি ভয়ে কোনো রকম উঠে এক দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম। আর দোয়া ইউনুস পড়ে পড়ে বারবার বুকে ফুঁ দিতে লাগলাম। বুকের ভিতর হার্ট এখনো ভিষণ জোরে জোরে বিট করছে।

তারপর আস্তে আস্তে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে নিচে গেলাম।
নিচে নামতেই, খালামনি জিজ্ঞেস করলো এখন কেমন লাগছে।
হুম খালামনি ভালো।
কে বলেছিলো কালকে বৃষ্টিতে ভিজতে। সরি খালামনি। হয়েছে! হয়েছে! নাস্তা করে নে। সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট করে নিলাম।

আয়াজ ভাইয়া টেবিল থেকে যাওয়ার সময়, আমাকে গম্ভীর গলায় বলে উঠলো, উপরে গিয়ে ইউনিফর্ম পরে আয়। স্কুলে যাবি।
মেয়েটা অসুস্থ। আজকে না গেলে কি হয়।

এতোটা সিক নয় যে আম্মু যেতে পারবে না। আর এখানে কি করবে, মাঠে দৌড়াদৌড়ি করবে আর এর গাছের ওর গাছের ফলপাকড় চুরি করার জন্য। কোনো দরকার নেই। আর তাছাড়া আমিও অফিস থাকবো। এই মেয়ে আরো কাউকে মানবে না। স্কুলে থাকলে একদিকে থাকবে। আর এমনিতেই এক মাস পরই নাইনের ফাইনাল এক্সাম। যা ফাঁকিবাজ। পড়াশোনা টা কন্টিনিউ থাকা দরকার।

আম্মুও আর কিছু বলল না। আমি মুখটাকে বাংলার পাঁচের মতো করে উপরে চলে গেলাম রেডি হওয়ার জন্য।
চলবে