তুমি আমারই পর্ব-১৩

0
2614

#তুমি_আমারই
#পর্ব_১৩
#Sumaia_Jahan

আমার পুরো পৃথিবী অন্ধকার হয়ে গেছে। যাকে বিশ্বাস করি সেই আমাকে ঠকাচ্ছে। যার জন্য আমি আমার জীবনে সবচাইতে কঠিন সিদ্ধান্ত টা নিলাম নিজের জীবনের থেকে তার জীবনের কথা আগে ভাবলাম সেই কিনা আমাকে ঠকালো।আজ ভার্সিটি এসে ইশার কাছে জানতে পারলাম সেদিন আমার আর রোদ্দুরের বিয়ের আমরা যখন দিয়ার বাড়ি থেকে চলে আসলাম তারপরেই দিয়ার সাথে রাজিব ভাইয়ার ধুমধাম ভাবে বিয়ে হয়েছে। ওইদিন যে দুইটা বিয়ে হবে তা নাকি আগে থেকেই ঠিক করা ছিলো। ইভেন সবাই জানতো ওই দিন দুইটা বিয়ে হবে শুধু মাত্র আমিই জানতাম না।এমনকি দিয়াও নাকি জানতো।আমি ইশা থেকে কথা গুলো শুনে প্রথমে বিশ্বাস করিনি। কিন্তু তারপর ইশা আমাকে দিয়ার বিয়ের একটা ভিডিও দেখালো।ভিডিও টা ছিলো দিয়ার বিয়ের। ওখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে দিয়ার আর রাজিব ভাইয়ার পরিবারের সবাই একসাথে হাসি খুশিতে ওদের বিয়ে দিচ্ছে। ওদের দেখে বোঝাই যাচ্ছে অনেক দিনের ইচ্ছা পুরণ হলো সবার।

তারমানে ওই দিন আমার সাথে যা যা হয়েছিলো তার সবই সাজানো নাটক ছিলো।এ কারণেই ওইদিন সবাই এতো স্বাভাবিক ছিলো।আর দিয়ার মা কেন বারবার আমাকে সবকিছু মেনে নিতে বলেছিলো।আর আমি বোকার মতো ওদের নাটককে বিশ্বাস করে নিজের জীবনের এতো বড়ো একটা ক্ষতি করে ফেললাম। দিয়া ওর প্রতি আমার ভালোবাসার সুযোগ নিয়ে আমার এতো বড়ো একটা ক্ষতি করলো।আর আমি কিনা ওরই ভালোবাসা বাঁচানোর জন্য নিজেকে বলি দিলাম।এ পৃথিবীর মানুষ গুলো বড়োই অদ্ভুত সবাই মুখোশ ধারি।

আমি আর একমুহূর্তও সেখানে দাড়ালাম না সাথে সাথেই বাড়ি চলে এলে এলাম। আমার জবাব চাই কেন আমার কেন এতো নাটক করে আমাকে রোদ্দুর খান বিয়ে করলো।কি উদ্দেশ্য রোদ্দুর খানের আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে আজ এই রোদ্দর খানকে।রাগে আমার গাঁ ফেটে যাচ্ছে। তারপর বাড়ি এসে আমি খুজতে লাগলাম রোদ্দুর কে নিজের ঘরে গিয়ে দেখলাম ওখানে নেই। মনে হয় ছাদে আছে তাই ছাদে চলে এলাম।ছাদে এসে দেখি রোদ্দুর ছাদে দোলনায় আরাম করে বসে চোখ বন্ধ করে দিয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতেছে।বাহ!আমার জীবন তছনছ করে এখন আরাম করে বসে গান শুনতেছে।আমি রোদ্দুরের সামনে গিয়ে রেগে জোরে বললাম,

—- কেন করলেন আমার সাথে এই নাটক?

উনি আমার কথা শুনে চোখ খুলে কান থেকে হেডফোন খুলে আমার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,

—- এতো দেরি লাগে আসতে? আমি সেই কখন থেকে অপেক্ষা করে আছি তোমার জন্য?

উনার কথা শুনে আমি কিছুক্ষন স্তম্ভিত হয়ে রইলাম।আমি কি প্রশ্ন করলাম আর উনি আমাকে কি বলছেন।ওহো আমি তো ভুলেই গেছি উনি তো দি গ্রেট রোদ্দুর খান উনি পারেন না এমন কিছু তো হতেই পারে না।হয়তো আমি যে সব কিছু জেনে গেছি এটাও উনি জানেন।আমি রেগে বললাম,

—- সো মিস্টার রোদ্দুর খান আপনি তো সবই জানেন আমি এখন আপনাকে কি প্রশ্ন করতে এসেছি।

রোদ্দুর আবারও শান্ত গলায় বললো,

—- হুম জানি তো কি প্রশ্ন করতে এসেছো।

আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,

—- তো আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।কেন এতো নাটক করে বিয়ে করলেন আমাকে?কেন আমার জীবন টাকে ছারখার করে দিলেন?কেন?

উনি আরাম করে বসে চোখ বন্ধ করে বললেন,

—- কেন আবার প্রতিশোধ নিতে!

আমি অবাক হয়ে বললাম,

—- প্রতিশোধ! কিসের প্রতিশোধ?

উনি চোখ বন্ধ করে অবস্থায়ই বললেন,

—- সেকি তোমার স্মৃতি শক্তি এতোই দুর্বল! আমি তো শুনেছি তুমি লেখাপড়ায় খুব ভালো ইভেন প্রতিটা ক্লাসেই টপ করো।ঠিক আছে আমিই মনে করিয়ে দিচ্ছি তোমার আর আমার প্রথম দেখা যেন কিভাবে হয়েছিলো?

আমার এভার মনে পরলো,

সেই দিন আমাদের ভার্সিটি একটা অনুষ্ঠান চলছিলো।সব মেয়েরা শাড়ি পরেছে তো আমিও সেই দিন শাড়ি পরেছি।জর্জেট শাড়ি পরার কারনে শাড়ি টা সামলাতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো।তাই আমি শাড়ির কুচি ঠিক করতে করতে যাচ্ছিলাম হাঠাৎ করে একজনের সাথে ধাক্কা লেগে যায়। আর ধাক্কা লেগে সামনে থাকা লোকটা আমার উপর পরে যায়।আমি তারাতাড়ি লোকটাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে আমি ওঠে পরি এতোক্ষণে লোকটিও ওঠে যায়।লোকটি ওঠেই আমার দিকে কেমন যেনভাবে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ পর আমার দিকে লোকটার হাত বাড়িয়ে দেয় আমাকে ছোঁয়ার জন্য ঠিক তখনি আমি লোকটার মুখে একটা চড় বসিয়ে দেই। আর রেগে জোরে চিৎকার দিয়ে বলি,

—- মেয়ে দেখলেই ইচ্ছা করে ধাক্কা দিয়ে পড়ে যেতে ইচ্ছা করে আবার তাকে ছুঁয়েও দেখতে হয় তাই না।অসভ্য অভদ্রো লোক একটা ভার্সিটিতে দাড়িয়ে এসব অসভ্যতামি করছেন!

আমার চিৎকারে পুরো ভার্সিটির সবাই এসে গোল হয়ে দাড়িয়ে আমাদের কে দেখছে।লোকটা কিছু বলতে যয়াবে তার আগেই আমি আবারও বললান,

—- কি বলবেন সরি তো সরি বললেই কি আপনার সব দোষ শেষ হয়ে যাবে? শুনুন মিস্টার এরপর থেকে মেয়েদের সাথে অসভতামি করতে যাপয়ার আগে আজকের চড়টা মনে রাখবেন।

কথা গুলো বলেই আমি সেখান থেকে চলে আসলাম।পরদিন হঠাৎ করেেই দিয়ার বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। জামাই বড়ো বিজনেস ম্যান নাম রোদ্দুর খান।দিয়াকে ওর হবু বরের সাথে দেখা করার জন্য একটা রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলো আমাকেও ওর সাথে নিয়েছিয়েছে আমি ওর হবু বরকে দেখে মারাত্মক রকমের শকট খেলাম।কারন কারন দিয়ার হবু বরই কালকের সেই লোকটা।উনি আমাকে দেখেই বললেন,

—- আ’ম ভেরি সরি কালকে যা হলো আমি সত্যি ইচ্ছা করে করিনি আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দিবেন।

আমি একটু হেসে বললাম,

—- আরে না না আপনাকে ক্ষমা চাইতে হবে না আমি আসলে কালকে খুব রেগে ছিলাম তো তাই রাগের বসে ওসব বলে ফেলেছিলাম।প্লিজ ক্ষমা চেয়ে আমাকে লজ্জা দিবেন না।বরং আমি খুবই লজ্জিত কালকের ব্যবহারের জন্য। প্লিজ আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিবেন।

উনিও হেসে বললেন,

—- আপনার জায়গায় যে-কেউ থাকলে ঠিক এই কাজটাই করতো।আপনি লজ্জিত হবেন প্লিজ! আর আমি কিন্তু আপনার ব্যবহারে খুবই ইমপ্রেস মেয়েরা নিজেদের আত্মরক্ষা নিজেরা করুক এটা তো খুবই ভালো ব্যপার!

আমিও হেসে বললাম,

—- ধন্যবাদ ভাইয়া।

আমাদের কথাবার্তা নিরব দর্শকের মতো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলো দিয়া।এবার মুখ খুলে বললো,

—- তোরা একে অপরকে চিনিস?

আমি মাথা নেরে হ্যাঁ বললাম। আর সাথে কালকে ঘটনাটা বললাম। দিয়া শুনে তো হাসতে হাসতে শেষ। আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,

—- এখানে হাসির কি হলো?

দিয়া হাসি থামিয়ে বললো,

—- কালকে যেই মুখে গালাগালি দিয়েছিস আজ সেই মুখে সরি বলছিস?জীবনে প্রথমবার তুই কাউকে সরি বললি।

আমি আবারও ভ্রু কুঁচকে বললাম,

—- এখানে হাসির কি আছে আমি কখনো কাউকে সরি না বললেও কোনোদিন যে বলবো না এটা বলেছি কখনো?

দিয়া বললো,

—- তা বলিস নি কিন্তু আমার খুব হাসি পাচ্ছে তাই আমি হাসবো হুম।

তারপর আমরা তিনজনে মিলেই জমিয়ে আড্ডা দিলাম সেইদিন।

আমি ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে এসে বললাম,

—- সেদিন তো আপনি বলেছেন আপনি সব কিছু মিটমাট করে নিয়েছিলেন।তাহলে কিসের প্রতিশোধ?

রোদ্দুর এবার চোখ খুললে আমার কাছে এসে গম্ভীর গলায় বললো,

—- তুমি কি করে ভাবলে আমি সেই চড়ের কথা সেই অপমানের কথা ভুলে যাবো।তুমি আমাকে পুরো ভার্সিটির সামনে অপমান করেছো এতো সহজে কি করে ছেড়ে দিতাম আমি তোমায়।

আমি আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,

—- একটা চড়ের জন্য আপনি আমার জীবনটা তচনচ করে দিবেন?

উনি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ছাদ থেকে চলে গেলেন।আর আমি ছাদেই দাড়িয়ে ছিলাম।একটা চড়ের জন্য আমার জীবনের মোড় এভাবে গুড়ে যাবে আমি কখনো ভাবিনি।

চলবে,,,,,

[ভুল গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর ভুলগুলো ধরিয়ে দিবেন]