তুমি হাতটা শুধু ধরো ২ পর্ব-১৮+১৯

0
360

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ১৮(বোনাস)
#Jhorna_Islam

প্রতিটা ভোর মানে নতুন দিনের আর নতুন কিছুর আগমন।
সোহা আজও ঘুম থেকে দেরি করে উঠতো।প্রতিদিন ই এমন হচ্ছিলো এলার্ম দিয়ে রাখলেও দেরি হয়ে যায়। আর দৌড়াদৌড়ি লেগে যায় কোচিং এ যাওয়ার সময়।

আজ দায়ানের মা নিজে এসে সোহা কে ঘুম থেকে ডেকে তুলে গেছেন।কাল অবশ্য রাতে খাবার টেবিলে সোহা নোহা কে বলেছিলো সকালে ঘুম থেকে উঠানোর জন্য।

দায়ানের মা সোহার কথা শুনে নিজে দায়িত্ব নেয়।যে তিনি উঠিয়ে দিবেন সোহাকে সকালে।নোহাকে উঠাতে হবে না । সোহা প্রথমে অমত করলেও পরে রাজি হয়।

তাই আজ দায়ানের মা সোহাকে ডেকে গেছেন।বলেছে ফ্রেশ হয়ে নিচে যেতে।সোহা ও মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়।

দায়ানের মা বেরিয়ে গেলে সোহা ও ওয়াশরুমের ভিতরে ঢুকে যায় ফ্রেশ হওয়ার জন্য।

ফ্রেশ হয়ে কোচিং এ যাওয়ার জন্য একেবারে তৈরি হয়ে সোহা নিচে নামে।

নিচে নেমে দেখে বাড়ির পুরুষ গণ খাবার টেবিলে বসে সকালের নাস্তা করছেন।কারণ সকলেই তাদের নিজ নিজ কর্মস্তলে চলে যাবে।

সোহা খাবার টেবিলের সামনে যেতেই দেখতে পেলো ওর বোন ওর দিকে তাকিয়ে হাসতেছে। সোহা ব্রু কোচকে বোনের দিকে তাকিয়ে রয়।

খাবার টেবিলে ডান পাশে দায়ানের বাবার পাশে একটা চেয়ার।আরেকটা বাম পাশে অর্থাৎ দায়ানের পাশে একটা চেয়ার। অন্য চেয়ার গুলো তে যেতে হলে ঘুরে যেতে হবে। তাই এই দুটোর যেকোনো একটাতেই বসতে হবে।

সোহা প্রথমে দায়ানের পাশের চেয়ারটা তে বসতে চাইলেও পরে মত পাল্টে ফেলে।সবাই কি ভাববে এটা ভেবে দায়ানের বাবার পাশের চেয়ারটা তে বসতে যেই না এগিয়ে যাবে।অমনি দায়ানের মা এসে দায়ানের পাশের চেয়ারটায় ধরে তারাতাড়ি বসিয়ে দেয়।

বিষয় টা খুবই দ্রুততার সঙ্গে করেন তিনি।দায়ান আর সোহা দুজনেই হকচকিয়ে দায়ানের মায়ের দিকে তাকায়।

বাকিরা দায়ানের মায়ের কান্ডে মিটমিটিয়ে হাসে।

দায়ানের মা এসব কে পাত্তা না দিয়ে সোহার সামনে খাবার দিতে থাকে। সোহার খুব অস্বস্তি হচ্ছে। সে বার বার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। হঠাৎ করে রুশের দিকে চোখ পরে।রুশ দাঁত কে’লি’য়ে হাসে সোহার দিকে তাকিয়ে। তারপর চোখ টিপ মারে। এরা জামাই বউ সোহার দিকে তাকিয়ে এমন হাসাহাসি কেনো করছে সোহার বোধগম্য হলো না।তাই আর এসব নিয়ে চিন্তার সাগরে ডুব ও দিলো না।নিজের খাওয়ায় মন দিলো।

খাবার খেয়ে রুশ আর দায়ানের বাবা এক সাথেই উঠে দাঁড়ায়। ওরা একটু আগে বসেছে খাবার খেতে তাই আগেই খাওয়া শেষ হয়ে গেছে। দুজনে এক সাথেই অফিসে যাবে।সকলের কাছে ওরা বলে অফিসের জন্য বেরিয়ে পরে।

এবার নোহা আর রুশের মা কেও দায়ানের মা খাবার খেতে বসিয়ে দেয়।

সোহা খাবার খাচ্ছে কম এদিক ওদিক তাকাচ্ছে বেশি।দুয়েকটা করে মুখে দিচ্ছে। মনে হচ্ছে গুণে গুণে মুখে দিচ্ছে।

দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলে,,, এমন ভাবে খাচ্ছো কেনো?

না মানে আসলে,,,,,,

না মানে আসলে না করে চুপচাপ ভালো করে খাও।এমন ভাবে কেউ খাবার খায়?

সোহা দায়ানের দিকে তাকায়।

দায়ান সোহাকে চোখের ইশারায় ভালো করে খেতে বলে।

সোহা আবার খাবারের দিকে তাকিয়ে আগের মতোই খেতে থাকে। এবার বিষয় টা দায়ানের মায়ের চোখেও পরে।

সোহা মা কি হয়েছে? খাচ্ছো না কেনো মা, খাবার কি পছন্দ হয় নি?.

না বড় ফুপি আসলে খেতে ইচ্ছে করছে না।

আচ্ছা দাঁড়াও। বলেই দায়ানের মা সোহার প্লেট টা হাতে তুলে নেয়। তারপর সোহা কিছু বলার আগেই মু্খে খাবার দিতে থাকে। সোহার বারণ শুনলেতো সোহার প্লেটে যতটুকু খাবার ছিলো তা শেষ করে আবার নিয়ে।আরো কয়েক লোকমা খাইয়ে দেয়।

সোহা এবার কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে,,, আর দিও না প্লিজ।আমি আর খেতে পারবো না।তুমি আমায় দুই দিনের খাবার মনে হয় এক বারেই খাইয়ে ফেলেছো।আমি এবার নড়তেই পারবো না।

দায়ানের ও সোহার মুখের দিকে তাকিয়ে খুব মায়া হলো।তাই তার মাকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,আম্মু তুমি এই খাবারের অ’ত্যা’চার সোহার উপর প্রয়োগ করা শুরু করলে? এখন দিও না আর।দেখতে পাচ্ছো না বেচারি খেতে পারছে না।পরে আবার সব ব’মি করে ফেলে দিবে।এক জায়গায় যাবে এখন।ক্লাস করতে পারবে না অস্বস্তি তে পরবে।এখনের মতো ছেড়ে দাও বাসায় আসলে আবার শুরু করে দিও। বলেই মিটমিটিয়ে হাসতে হাসতে নিজের খাওয়ায় মন দেয়।

দায়ানের মা কে এবার নোহা ও বলে হ্যা বড় ফুপি ছেড়ে দাও নয়তো সত্যি সত্যি ব’মি করে দিবে।

আমার ইচ্ছে মতো খাওয়াতেই পারলাম না।মেয়েটা কতো শুকনো।এমন শুকনো হলে চলে নাকি?

নোহা হাসতে হাসতে বলে,,,সুযোগ তো পাচ্ছোই বড় ফুপি।সোহা কে মোটা করার।এখন না হয় ছেড়ে দাও।

সোহা এদের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারলো না।যে কথা বলে সে সময় শুধু তার দিকে তাকিয়ে রয়।

আচ্ছা ঠিক আছে বলেই উনি হাত ধুয়ে ফেললেন।দায়ান খাবার খেয়ে উঠে গেছে। উপর থেকে ফাইল আনতে হবে।সেই উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।

পিছন থেকে দায়ানের মা দায়ানকে ডাক দেয়। দায়ান ঘুরে দাঁড়াতেই বলে উঠে,,, সোহা কে তুই তোর সাথে নিয়ে যাবি।নিজে পৌঁছে দিবি।শুধু আজ না আজ থেকে প্রতিদিন ওকে সাথে করে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তোর।

সোহা দায়ানের মায়ের কথায় বলতে নিবে এসবের দরকার নেই বড় ফুপি। আমি যেতে পারবো।বেশি দূরে না তো।কিন্তু বলতে পারলো না।

সোহা কিছু বলার আগেই দায়ানের কথা শুনতে পায়।

“ঠিক আছে আম্মু নিয়ে যাবো।” সোহা তুমি পাঁচ মিনিট ওয়েট করো আমি ফাইল টা নিয়ে তৈরি হয়ে আসছি।

সোহা অবাক হয়ে দায়ানকে দেখে।এক কথায় সোহাকে প্রতিদিন নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজি হয়ে গেলো? এসব ভাবা যায়? আজকি সোহার অবাক হতে হতে কাটবে নাকি।

নোহার ও ততক্ষণে খাওয়া শেষ। সোহা দৌড়ে বোনের কাছে যায়।

— এই আপু ব্যাপার কিরে?

— কিসের ব্যাপার?

— তুই আমার দিকে তাকিয়ে ঐসময় এমন করে হাসতে ছিলি কেনো? বল আমাকে কাহিনি কি?

— কাহিনি কি থাকবে কিছুই না।আমি কি হাসতে পারবো না? হাসতে কি আমার মানা নাকি?

— তা হবে কেন? কিন্তু আমাকে দেখেইতো তুই হাসছিলি।

— তাহলে শোন কেনো হাসছিলাম।খুশিতে।আমার যে কি খুশি লাগছে তোকে বোঝাতে পারবো না।রীতিমতো লুঙ্গি ডান্স দিতে ইচ্ছে করছে। বুঝতে পারছিস তুই কি পরিমাণ খুশি আমি?

— কি নিয়ে এতো খুশি তুই? সুখবর আছে নাকি কোনো।খালা মনি হতে যাচ্ছি?

— নোহা সোহার মাথায় আস্তে করে থা”প্প”ড় মেরে বলে,, তুই আবারো প্রমাণ করলি তুই কোন লেভেলের গা”ধী।বিয়ে হয়েছে কয়দিন রে তুই যে এখনই খালামনি হওয়ার স্বপ্ন দেখিস।বাচ্চা হওয়া কি এতোই সহজ? নাকি অনলাইন থেকে ডাউনলোড করা যায় কোনটা?

–তাহলে তুই আমায় বলছিস না কেনো? বলনা আমায় কি নিয়ে তুই এতো খুশি।রুশ ভাইয়া ও তোর মতো করে আমার দিকে তাকিয়ে তখন হেসেছে।সাথে আবার চোখ ও মেরেছে। বল প্লিজ আপু আমিও শুনে একটু খুশি হই।

— না বোন বলা যাবে না। এটা তোর জন্য একটা বড় সারপ্রাইজ বুঝলি?

ধূর,,,,,,,,,

তখনই দায়ান ফাইল হাতে নিচে নেমে এসে সোহা কে বলে,,, সোহা চলে এসো।

নোহা সোহাকে ঠেলে বলে,,যা যা তারাতাড়ি যা।

তারপর ওদের দুইজনের দিকে তাকিয়ে নোহা মুচকি হাসে।

————

দায়ান আর সোহার বিয়ের ব্যাপারটা সকালেই পরিবারের সকলের কাছে জানায় দায়ানের মা। সকলেই শুনে বেশ অবাক হয়।

রুশ বলে উঠে দায়ান জানে এসব?

হ্যা দায়ানের থেকে অনুমতি পেয়েই আমরা এগিয়েছি।দায়ান রাজি সোহাকে বিয়ে করতে। শুধু কয়েকদিনের সময় চেয়েছে।নোহা ওদের কথা নিশ্চুপ হয়ে শুনছে।

রুশ তো সেই খুশি হয়েছে। সেও মনে মনে সোহাকে দায়ানের জন্য ভেবে রেখেছিলো।কিন্তু কাউকে জানানোর সাহস হয়নি।এমনকি নোহা কে ও না।

রুশের মা বলে উঠে কিন্তু বড় ভাবি।আমার ভাই আর সোহা কি রাজি হবে?

সোহার ব্যাপারটা ছেড়ে দে ছোটো।তারপর সোহার দায়ানের প্রতি ভালোবাসার কথা ও চিঠির কথা সকলকেই বলে,,এটা ও বলে সোহা কে যেনো চিঠির ব্যাপারে কেউ কিছু না বলে।আর ওদের বিয়ের কথা উঠেছে এটাও।

সোহা দায়ানকে ভালোবাসে শুনে কেউ কিছু আর বললনা।সকলেই চায় দায়ান ঘুরে দাড়িয়ে নিজের জীবন টা আবার নতুন করে শুরু করুক।আর সকলেরই এটা ভরসা আছে যে দায়ান সোহাকে খুব সুখে রাখবে।কষ্ট পেতে দিবে না।সবাই মিলেই সোহার পরিবার কে রাজি করাবে বলে ঠিক করে নেয়।।

নোহা ও এতে সায় দেয়। তারতো খুশি ধরছেই না।সোহা সারাজীবনের জন্য তাহলে তার কাছেই থাকবে।আহ্ কি আনন্দ। খবর টা জানার পর থেকে নোহা হাসি খুশি দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। ঠিক করেছে বাবা মা রাজি না হলে নিজে বোঝাবে।

—————–

দায়ান সোহাকে বলে তারাতাড়ি করে গাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

সোহা দায়ানের সাথে হাটায় না পেরে দৌড়াতে থাকে। দৌড়ে দায়ানের পাশে যায়।গিয়ে আরেক বিপত্তি ঘটে।ভুলবশত পা বে’কা’য়দা’য় পরে চিৎ হয়ে পরতে নেয়।

ভয়ে চোখ মুখ বন্ধ করে বলে,,গেলো গেলো।আমার নাক মুখ সব গেলো।

তারপর অনেক সময় হয়ে যাওয়ার পরও যখন ব্যথার কোনো চিহ্ন পাওয়া গেলোনা শরীরে তখন চোখ তুলে তাকায়।

তাকিয়ে দেখে দায়ান তার খুব কাছে।আর মিটমিটিয়ে হাসছে।বুঝতে আর বাকি নেই দায়ান পরতে যাওয়ার আগেই ধরে ফেলেছে।

সোহা এক দৃষ্টিতে দায়ানের হাসির দিকে তাকিয়ে রয়।

কি ম্যাডাম এভাবে থাকার ইচ্ছে নাকি? কোচিং এ যাবেন না?

সোহা তারাতাড়ি করে উঠে ঠিক হয়ে দাড়ায়।

দায়ান সোহার জন্য গাড়ির দরজা খুলতে খুলতে বলে,,সাবধানে হাটবানা যদি এখন পরে যেতে তাহলে কি হতো?

তারপর ইশারায় উঠে বসতে বলে।

সোহা চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসে। দায়ান ঘুরে এসে নিজেও উঠে বসে। তারপর কিছু না ভেবে সোহার অনেকটা কাছাকাছি চলে আসে।

দায়ান এতো কাছে আসায় সোহা ঘাবড়ে যায়।দায়ানের কড়া পার্ফিউমের সুবাস এসে নাকে বারি খাচ্ছে।

সোহা চোখ ছোটো ছোটো করে দায়ানের দিকে তাকায়।দায়ান তার সিট বেল্ট বেধে দিয়ে সরে গেছে। সোহা লম্বা করে একটা দ’ম নেয়।

দায়ান গাড়ি চালাতে শুরু করে সোহার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে আবারো মিটমিটিয়ে হাসে। যা সোহার চোখ এড়ায় না।সোহা ভাবতে থাকে কি হয়েছে এদের। সকলে আজ এমন ভাবে হাসছে কেনো?

“আজকি হাসার দিন মানে হাসি দিবস নাকি?”

#চলবে,,,,,,,

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ১৯
#Jhorna_Islam

গাড়ি চালাতে চালাতে হঠাৎ করেই দায়ান সোহাকে প্রশ্ন করে পড়াশোনা কেমন চলছে তোমার?

“জ্বি ভালো।”

মন দিয়ে পড়াশোনা করো।স্যাররা যা বলে সব মাথায় রাখবে।এডমিশনে কাজে লাগবে বুঝতে পারছো?

আচ্ছা।

তারপর গাড়ির মধ্যে আবার নীরবতা।সোহা বাইরের বেস্ত শহর দেখছে।গাড়ির জানালার কাচ নামানো আছে। সকালের দমকা হাওয়া সুর সুর করে গাড়ির ভিতরে প্রবেশ করছে।এতে করে সোহার চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাও চোখ সরাচ্ছে না।বিষয় টা সে উপভোগ করতে পারছে। বাতাসের তোড়ে চুল গুলো এলোমেলো হয়ে উড়ে চলেছে।

কিছু চুল গিয়ে দায়ানের মুখেও আছড়ে পরছে।যার ফলে নাকে মুখে সু’রসু’রির সৃষ্টি করছে। তাও কিছু বলছে না দায়ান। চুল থেকে একটা শ্যাম্পুর মিষ্টি গন্ধ নাকে এসে বারি খাচ্ছে।

কোচিং সেন্টারের সামনে এসে দায়ান গাড়ি থামায়।

সোহা গাড়ি থেকে নামতে নিবে এমন সময় দায়ান হাত ধরে আঁটকায়। সোহা দায়ানের দিকে ফিরে তাকায়।

দায়ান সোহার চাহনি কে পাত্তা না দিয়ে সোহাকে টান দিয়ে কিছু টা নিজের কাছে নিয়ে আসে। সোহা কিছু টা হকচকায়।তো’ত’লা’তে তো’ত’লা’তে বলে,,,,কিকিহয়েছেএএ?

বাতাসে উড়ে সোহার চুল গুলো সব এলোমেলো হয়ে গেছে। দায়ান হাত দিয়ে সব সেট করে দিচ্ছে।

সোহা হা করে সব ভুলে দায়ানের দিকে তাকিয়ে রয়।

দায়ান চুল গুলো ঠিক করে হঠাৎ ই মাথা থেকে কিছু একটা নিয়ে সোহার ডান হাত টা টেনে ধরে হাতের তালুতে গুঁজে দেয়।

সোহা তাকিয়ে দেখে একটা পাতা।হয়তো উড়ে এসে চুলে আঁটকে গেছে। সোহা পাতাটার দিকে একবার তো দায়ানের দিকে একবার চোখ তুলে তাকায়।

তারপর আবার উঠতে নিবে,,,বাট দায়ানের কথায় থেমে যায়।

“-ন’ড়ে না প্লিজ। ”

দায়ান নিজের পকেট থেকে কিছু একটা বের করছে।সোহা তা বোঝার চেষ্টা করছে।

দায়ান তার রুমাল টা পকেট থেকে বের করে সোহার মুখের কাছাকাছি চলে আসে। দায়ানের উষ্ণ নিশ্বাস সোহার মুখে এসে বার বার বারি খাচ্ছে। সেই নিশ্বাসে সোহার ও যেনো নিশ্বাস আটকে আসছে।জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে সে।

দায়ান নিজের রুমাল দিয়ে সোহার চোখের কোণে থাকা লেপ্টে যাওয়া কাজল মুছে দেয়। তারপর মুছা শেষে সোহার মুখের দিকে ভালো করে তাকিয়ে একটা ফু দিয়ে সরে আসে।

দায়ান মুখে ফু দেওয়ায় সোহা চোখ পুরোপুরি বন্ধ করে ফেলে। মনে মনে ভাবে লোকটা কি আমায় পা/গল করে দম বন্ধ করে মারতে চাইছে নাকি? উনি কি আদৌ বুঝতে পারছেন আমার মনে ঝড় চলছে। ইশশ সেই ঝড় টা যদি উনি টে’র পেতো।

সোহার ভাবনায় ব্যা’ঘা’ত ঘটিয়ে দায়ান বলে উঠে,,, এমন ভাবে খোলা চুল আর চোখে কাজল দিয়ে বাইরে আসবা না ঠিক আছে?

কথাগুলো দায়ান গাড়ির সিটে মাথা হেলিয়ে চোখ বন্ধ রাখা অবস্থাতেই বলে।

সোহা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে দায়ানের দিকে তাকায়।

দায়ান সোহার সারা শব্দ না পেয়ে চোখ খোলে দেখে সোহা ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।

না মানে দেখো না সব এলোমেলো হয়ে যায়। বাইরের মানুষ তো তোমায় পা/গল বলবে।তাই বললাম।এবার যাও। সাবধানে থাকবে,আর বাড়িতে ও সাবধানে যাবে।

দায়ানের কথা মতো সোহা গাড়ি থেকে নেমে আসে।

দায়ান তারাতাড়ি গাড়ি চালিয়ে চোখের সীমানা পেরিয়ে চলে গেছে। সেই দিকে সোহা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়।

মনটা কেন যানি বার বার পুলকিত হচ্ছে।

—————————————-
সোহা আর দায়ানের বিষয় টা দায়ানের বাবা আর রুশের মা জানায় সোহার বাবা মা কে।

সব শুনে ওরা চুপ করে থাকে।কি বলবে হয়তো ভেবে পাচ্ছে না। হঠাৎ করে এসব শুনলে তো কিছু বলার ও থাকে না।ওনারা ও বলতে পারছেন না। ওনারা রাজি নাকি রাজি না এটা ও বোঝার উপায় নেই। ওনারা তেমন কিছুই বলেন নি যে বোঝা যাবে ওনাদের উত্তর।

উনারা চুপ থাকায় দায়ানের বাবা বলে উঠে,,, দেখেন ভাইজান।আপনারা আমাদের সব কিছু জানেন।এমনকি দায়ানের অতীত ও আপনাদের অজানা নয়। কিন্তু এতে তো ছেলেটার কোনো দোষ নেই তাই না?

আপনাদের কি আমাদের ছেলের অতীত নিয়ে সমস্যা?

” না না ভাইজান তেমন কিছু না। আসলে কি বলবো বুঝতে পারছি না।’ মাত্র বড় মেয়েটার বিয়ে হলো।এতো তারাতাড়ি ছোটো মেয়েকে নিয়ে ভাবি নি তো তাই।

তাছাড়া দায়ান কি আমাদের সোহাকে মেনে নিবে?

দায়ানের কোনো আপত্তি নেই ভাইজান। ও নিজে মত দিয়েছে।

আপনারা না করবেন না ভাইজান আমার অনুরোধ। বড় মেয়ে টা কে যেমন আমাদের দিয়েছেন।তেমন ছোটো মেয়েটাকেও চাইছি।আমি নিজে কথা দিচ্ছি কোনো কষ্ট পেতে দিবো না।নিজের মেয়ের মতোই রাখবো।

তারপর সোহার বাবা জানায় ভেবে চিন্তা করে জানাবে।ওনাদের যেনো এক দিন সময় দেয়।

তারপর সোহার বাবা বুদ্ধি করে সোহাকে কল দেয়।এটা সেটা নানান কথা জিজ্ঞেস করে। কথার ছলে দায়ানদের পরিবারের সকলে কেমন তা জিজ্ঞেস করে। সোহা তো তার মনের আনন্দে সকলের প্রশংসা করতে করতে মুখে প্রায় ফে”না তুলে ফেলেছে।সব থেকে বেশি দায়ানের কথাই বলেছে।এটা করে ওটা করে,ঘুরতে নিয়ে যায়। কোচিং এ প্রতিদিন নিজে দিয়ে আসে। কথার ছলে ভুলেই গেছে কার সাথে কথা বলছে।দায়ানের কি প্রশংসা।

সোহার বাবা যা বোঝার বুঝে নিয়েছেন। কথা শেষ করে একটা কথা দিয়েই।

” বাবার উপর ভরসা রাখো আম্মু তোমার মনের চাওয়াটা হয়তো কিছুটা আ’ন্দাজ করে ফেলেছি।”

তারপর আর কি সোহার বাবা খুশিতে রাজি হয়ে যায়। কিন্তু এখনই সোহাকে বিয়ে দিতে চান না।আরো দুয়েক বছর পরে দিতে চান।

প্রথমে সকলে অমত করলেও পরে রাজি হয়। কিন্তু শর্ত হলো দুইজনের আ’ক’দ করিয়ে রাখবেন।

সোহার বাবা রাজি হয়। এখন না আর দুয়েক মাস পরে করতে বলে।সোহার পড়াশোনা নয়তো হবে না।সকলেই সম্মতি জানায়। তাই দায়ান আর সোহা কাউকেই এই বিষয়ে কিছু জানায় নি।ওরা মন থেকে কাছে।আসুক একে অপরের বুঝোক।

সোহার পরিবারের সকলেই খুশি হয়।তাদের দুই মেয়ে এক সাথেই রাজ রানী হয়ে থাকবে।

——————————–

এমনি দিন যেতে থাকে প্রতিদিন দায়ানই নিয়ে যায় সোহাকে। আজ দায়ানের একটা সা’র্জারি থাকায় সকাল সকাল চলে যেতে হয়েছে। সোহা তখন ও ঘুমে।

যাওয়ার আগে দায়ানের মা কে অবশ্য বলে গেছে ড্রাইভার কে বলে রাখতে সোহা কে দিয়ে আসার জন্য।

আজ দায়ানের মা ও কাজের কারণে সোহাকে ডাকার কথা বেমালুম ভুলে যায়। তাই ঘুম ভেঙে উঠে দেখে কোচিং এর সময় প্রায় হয়ে গেছে। তারাতাড়ি করে তৈরি হয়ে ছোট লাগায়।

কারো কোনো কথা শুনার সময় নাই।একটা এক্সাম আছে।বাইরে খেয়ে নিবে বলেই দৌড়।

কোচিং এ এসে দেখে খাতা দিয়ে দিয়েছে। সোহা দৌড়ে গিয়ে নিজের সিটে বসে।

স্যার সোহার কাছে এসে খাতা দিতে দিতে বলে,,,কি ব্যাপার সোহা আজ এতো লেট? পরিক্ষার কথা ভুলে গিয়েছিলে নাকি?

না স্যার।আসলে জ্যাম ছিলো তো তাই আরকি।

তাই নাকি আমারতো অন্য কিছু মনে হচ্ছে। চোখে কিন্তু এখনো ঘুম লেগে আছে তোমার। বলেই চমৎকার করে হাসলো স্যার। খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে সকলের সাথে এই স্যার। বয়স ও বেশি না।অনেক মিশুক স্যার। সোহার অনেক ভালো লাগে বিষয় টা।

সোহা বিনিময়ে কিছু বলে না।খাতা নিয়ে লিখতে থাকে।
সকালে খাওয়া হয়নি।কাল থেকেই শরীরটা ভালো লাগছে না।তার উপর সেই অসহ্য কর চিনচিনে ব্যথা বুকে।রীতিমতো কপালে ছোট ছোট ঘামের উৎপত্তি হচ্ছে। সোহা লিখছে আর চিন্তা করছে।বাড়ি যাবে কি করে।আবার না শ্বাস কষ্ট শুরু হয়।

অর্ধেক লিখে আর লিখতে ইচ্ছে করতেছে না।যা লিখেছে তাতে পাশ নাম্বার উঠলেই হলো। বুক ব্যাথায় লিখতে ইচ্ছে করছে না।

বাড়ি গিয়ে খেতে হবে।তারাহুরো তে টাকা ও আনতে ভুলে গেছে নয়তো কিছু খেয়ে নিতো।

ভাবতে ভাবতেই গিয়ে খাতা জমা দেয়।

স্যার অবাক হয়ে বলে,,কি হয়েছে? খাতা জমা দিয়ে দিচ্ছো কেন? কমন পরে নি, নাকি অন্য কোনো সমস্যা?

না স্যার তেমন কিছু না। আসলে শরীরটা একটু খারাপ লাগছে বাসায় চলে যাবো।

অনেক অসুস্থ? যেতে পারবা নাকি যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিবো?

পারবো স্যার আসি।বলেই সোহা বেরিয়ে আসে।

স্যার তার চিন্তিত ভঙ্গিতে সোহার যাওয়ার পানে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।

সোহা বাইরে এসে আরেক বিপত্তি তে পরে।ড্রাইভার কে বলেও নি।উনিতো কোচিং টাইম শেষ হলে নিতে আসবে। টাকা ও নেই যে সে নিজে চলে যাবে।

——-

দায়ান তার সার্জারী শেষ করে আজ বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে। সাকসেসফুল হয়েছে সে।লোকটা তার নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। পরিবারের মুখে যখন সাকসেফুল হয়েছে শুনে হাসি ফোটে উঠে দায়ান সেটা খুব করে ইনজয় করে।ডাক্তারদের তো এটাতেই স্বার্থক।

আজ আর তেমন রুগি নেই।কয়েকজন ছিলো সেগুলো অন্য ডাক্তার কে দিয়ে দায়ান এসে পরেছে।

গাড়ি চালাতে চালাতেই অভ্যাস ব”শত সোহার কোচিং সেন্টারের দিকে চোখ যায়। গেটের দিকে তাকিয়ে ব্রু কোচকে ফেলে।সোহা এই সময় গেটের সামনে দাড়িয়ে কি করছে।তারপর ঘড়ির দিকে তাকায়। আরো অনেক সময় বাকি সোহার কোচিং টাইম শেষ হতে।

ভাবতে ভাবতেই গাড়িটা দাড় করায়। সোহা এদিক ওদিক তাকিয়ে রয়েছে বিরক্ত কর দৃষ্টিতে। হঠাৎ সামনে এসে গাড়ি থামায়।কিছু টা পিছিয়ে যায়। তারপর ভালো করে তাকিয়ে দেখে দায়ান।

মনে মনে সোহা আল্লাহ কে ধন্যবাদ জানায়।দায়ান না আসলে সোহা কি করতো নিজেও জানে না।
দায়ান চোখের ইশারায় সোহাকে গাড়িতে উঠে আসতে বলে,নিজে ডোর খুলে দেয়।

সোহা কোনো কিছু না বলে তারাতাড়ি গিয়ে বসে পরে। তারপর চোখ বন্ধ করে রাখে।বাম হাত দিয়ে বুকে কিছু সময় পর পর ড’লছে।

দায়ান চুপচাপ সোহার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রয়। সোহা কে দেখে মনে হচ্ছে কিছুটা অসুস্থ।

— ” কি হয়েছে ঠিক আছো?”

— না তেমন কোনো না।

— কেমন কিছু?

সোহা চুপ থাকে।

— শরীর ঠিক আছে?

–“হু”

মিথ্যা বলতে বলিনি।কথাটা তে এতোটাই জোর ছিলো যে সোহা কিছু টা কেঁপে ওঠে। আমতা আমতা করে বলে,,, আসলে একটু একটু খারাপ লাগছে।

— বুক ব্যাথা করছে?

হুু।

সকালে নিশ্চই খাবার খাওনি!

আসলে দেরি হয়ে গিয়েছিলো তো তাই।

দায়ান সোহার দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে গাড়ি চালাতে শুরু করে। তারপর একটা রেস্টুরেন্টে এনে গাড়ি থামিয়ে নিজে নেমে আসে।

সোহাকে আর কিছু বলার সুযোগ দেয়নি।সোহার হাত ধরে আস্তে করে গাড়ি থেকে নামিয়ে হাঁটা দেয় ভিতরে।তারপর কর্ণার টেবিলে গিয়ে সোহাকে বসিয়ে দেয়। ওয়েটার কে ডেকে এক গাদা খাবার অর্ডার করে।

বেচারি সোহা হা করে দায়ানের কান্ড দেখছে। এতো খাবার কে খাবে?

বলছি যে আমি এতো,,,,,,,,,,,

নো মোর ওয়ার্ড যা যা অর্ডার করেছি চুপচাপ পেটে চা”লান করবে। বাড়তি কোনো কথা শুনতে চাই না।

#চলবে,,,,,,,,,