তুমি হাতটা শুধু ধরো ২ পর্ব-১৬+১৭

0
245

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ১৬
#Jhorna_Islam
সোহা অনেক চেষ্টার পর একটা চিঠি ভালো করে লিখে।এইটায় ভালো মতো লিখতে পারলেও অনেক কাটাকাটি গেছে। তাই এইটা আবার নিচে ফেলে দেয়।

আরেকটা ভালো ফ্রেশ কাগজ নিয়ে সুন্দর করে আগেরটার মতো লিখতে থাকে।

ফেলে দেওয়া কাগজটা জানালা দিয়ে আসা বাতাসে উড়ে রুমের বাইরে চলে আসে।সোহা তা বুঝতে ও পারে নি।

সেতো আরেকটা চিঠি লিখতে বি’জি। উড়ে আসা চিঠিটা রুমের বাইরে এক কোণে গিয়ে জায়গা করে নেয়।তাও আবার কারো পায়ের কাছে।মানুষ টা তখন এই পাশ দিয়েই যাচ্ছিলো। কাগজে কি আছে কৌতূহল বসত উঠিয়ে হাতে নেয়। পরতে নিয়ে প্রথমেই দায়ানের নাম দেখে ব্রু কোঁচকায়। ভালো করে পড়তে নিবে ঠিক তখনই ফোনটা বেজে উঠে। তাই কথা বলতে বলতে নিজের রুমে ঢুকে কা’বা’র্ডের ভিতর চিঠি টা রেখে দেয়। তারপর আবার কথা বলায় মন দেয়।

সোহা ২য় নাম্বার চিঠিটা খুব নিখুঁত ভাবে যত্ন আর ভালোবাসা নিয়ে লিখে।একবার পরে দেখে নেয় কোনো ভুল আছে কিনা।নাহ কোনো ভুল নেই। এতো সময় পর পরিশ্রম স্বা’র্থক হলো।তারপর সুন্দর করে চিঠিটা ভা’জ করে।

চিঠি টা ভালো করে রাখবে এমন সময় নোহার ডাক শুনতে পায় সোহা।নোহা তাকে ডাকছে নিচে যাওয়ার জন্য খাবার খেতে।

সোহা নোহার ডাকে বেশ অবাক হয়। এতো তারাতাড়ি কেনো ডাকছে খাবার খাওয়ার জন্য?

তারপর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়।সাড়ে নয়টা বেজে গেছে অলরেডি। দায়ানদের বাড়িতে রাতের খাবার সকলে এক সাথেই সাড়ে নয়টার দিকে খায়। এতো সময় হয়ে গেলো চিঠি লিখতে গিয়ে সোহার কোনো হুঁশ ই নেই।সেই কখন এসব নিয়ে বসেছে।

তাই তাড়াহুড়ো করে হাতের ভাজ করে রাখা চিঠি টা বালিশের নিচে চা’পা দিয়ে রাখে।

বিছানা থেকে নিচে নামতে গিয়ে মেঝেতে তাকিয়ে দেখে রুম আর রুম রাখেনি।ছোটো খাটো একটা ডা’স্টবিন বানিয়ে ফেলেছে।

নোহা যে সোহাকে ডাকতে ডাকতে কাছাকাছি চলে এসেছে বুঝতে পারছে।কিছু সময়ের মাঝেই হয়তো রুমে এসে পরবে। তাই সোহা তারাতাড়ি নেমে সব গুলো হাত মু’চ’রি’য়ে রাখা চিঠি গুলো একে একে মেঝে থেকে উঠাতে থাকে।

মিনিট একের মাঝেই সব গুলো কাগজ তুলে ওড়নাতে ভরে নেয়। তারপর রুমের কোণে রাখা ঝুড়িতে একটু ঝুকে সব গুলো কাগজ ওড়না থেকে ঝুড়িতে ফেলে।

তারপর সোজা হয়ে দাঁড়ায় কোমড় ধরে।ঠিক তখনই নোহা ভিতরে ঢুকে।

সোহা বোনের দিকে তাকিয়ে ভাবে বাহ্ হোয়াট এ টাইমিং আপু।আমার কাজ ও শেষ তুই ও এ’ন’ট্রি নিলি।

— কিরে সোহা তোকে কখন থেকে ডাকছি শুনতে পাসনি?

— শুনেছিতো আপু।

— তো এখানে দাড়িয়ে আছিস কেন? জানিস না এই টাইমে যে এই বাড়িতে সকলেই রাতের খাবার খায়?

— জানিতো।

— তাহলে এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?

— আচ্ছা যাচ্ছি। তুমিও এসো।

তারপর নোহা কিছু একটা ভেবে বলে,,,এই এক মিনিট তুই রুমের কোণে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছিলি রে?

ককই কি ককরছিলাম আপু কিছুই না। আসলে চকলেটের খোসা ফেলতে ছিলাম ঝুড়িতে আরকি।ঐযে রুশ ভাইয়া যে আমায় চকলেট গুলো এনে দিয়েছে না ঐগুলোর।

তুই এখন রাতের খাবারের আগে কিসের চকলেট খাচ্ছিলি।পরে পেট ব্যাথা হলে কি হবে?

কিছুই হবে না আপু জাস্ট একটাই খেয়েছি।চলো এবার সবাই হয়তো বসে আছে আমাদের জন্য। আর আমারও প্রচুর খিদা লেগেছে।বলেই সোহা নোহা কে টেনে নিয়ে নিচে যেতে থাকে। মনে মনে স্বস্তির নিশ্বাস নিয়ে বলে,,ভাগ্যিস আপু আমার কথা বিশ্বাস করে নিয়েছে।

কাল সকালেই জমেলা খালাকে দিয়ে কাগজ গুলো ফেলে দিতে হবে।

——————————–

সোহা নোহার সাথে খাবার খেতে এসে দেখে সকলেই উপস্থিত আছে।এমনকি আজ দায়ান ও উপস্থিত। শরীরে ফর্মাল ড্রেস ই পড়া।হয়তো এখনই বাইরে থেকে এসেছে। আর দায়ানের মা এই সুযোগে দায়ানকে নিচ থেকেই হয়তো বলেছে সকলের সাথে খেয়ে নিতে।কাজের জন্য প্রতিদিন তো আর সবার সাথে খেতে পারে না।

সকলেই খেতে বসেছে জমেলা খালা বেড়ে দিচ্ছে। দুইটা চেয়ার খালি আছে শুধু এখন।রুশের দুই পাশে দুইটা। তাই সোহা কিছু না ভেবেই দায়ানের বড়াবড় রুশের ডান পাশে বসে পরে। নোহা গিয়ে রুশের বা পাশে বসে।

সোহা বসতেই দায়ানের বাবা বলে উঠে,, কি ব্যাপার সোহা মা তুমি আজ সবার পরে আসলে? খিদে লাগেনি না কি খাওয়ার কথা ভুলেই গিয়েছিলে?

আসলে বড় ফুপা কখন যে খাওয়ার সময় হয়ে গেলো বুঝতেই পারিনি।( দায়ানের বাবা কে সোহা আর নোহা বড় ফুপা বলেই ডাকে আর দায়ানের মা কে বড় ফুপি।)

ওহ আচ্ছা তাই বলো।আমিতো ভাবলাম খাওয়ার কথা হয়তো ভুলেই গেছো। তোমাদের দুই বোনকে কতো বলি একটু বেশি বেশি করে খাও।আজকাল কার দিনে শরীর এমন থাকে? দুইটায় ই শুকনো পাট কাঠি।

দায়ানের বাবার কথা শুনে সকলেই হেসে দেয়।

দায়ানের মা বলে,,চুপ করুন তো ওদের চুপচাপ খেতে দিন।আপনিইনা সব সময় বলতেন খাবার সময় বেশি কথা বলতে নেই।এখন দেখি আপনিই সবার থেকে বেশি কথা বলেন।

কি করবো বলোতো দুইটা মা পেয়েছি।ওদের দেখলেই আমার মনটা আকুপাকু করে কথা বলার জন্য।

সোহা আর নোহা মা তোমরা কি আমার কথায় বিরক্ত হও?

একদম না ফুপা।সোহা আর নোহা এক সাথেই বলে।

তারপর দুইবোন দুই জনের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে।

দায়ানের মা আবার বলে ঠিক আছে। অনেক কথা হয়েছে এবার খাও।

সোহা খেতে খেতে দায়ানের দিকে তাকায়। তখন দায়ান ও তাকায় সোহার দিকে দুইজনের ই চোখাচোখি হয়ে যায়।দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে বিনিময়ে মুচকি হাসে।

সোহা তারাতাড়ি চোখ নিচে নামিয়ে আবার খাওয়ায় মন দেয়।

খাওয়ার মাঝেই আবার দায়ানের কন্ঠ শুনতে পায়।

আহ্ আমাদের রুশ হুশ এর কি কপাল,,,এক সাইডে বউ আরেক সাইডে শা/লিকা নিয়ে খেতে বসেছে।

রুশ মুখের মাঝে মাত্র মাংসের হাড্ডি টা নিয়ে যাচ্ছিল কামড় দিতে।কিন্তু দায়ানের কথা শুনে থেমে যায়।

ভাই আমার পছন্দের হাড্ডি টা তে মাত্র কা’মড় বসাতে যাচ্ছিলাম।এখনই তোর আমায় নিয়ে ম’জা করতে মন চাচ্ছে। এখনের মতো ম’জা করা ছেড়ে দে একটু মনোযোগ দিয়ে খেতে দে।

তুই তো শুরু করে দিবি কিন্তু শেষ তো ইনি করবেন।ডান পাশে সোহাকে দেখিয়ে। রুশের কথা শুনে সকলেই হেসে দেয়।

আচ্ছা যা আজকের মতো তোকে ছেড়ে দিলাম।খা শান্তি তে।

তারপর সকলের আগেই দায়ান খাবার শেষ করে হাত ধুয়ে উঠে দাঁড়ায়। যেতে যেতে বলে,, আম্মু আমি গেলাম গিয়ে একটা লম্বা ঘুম দেওয়া লাগবে।কাল সকাল সকাল জটিল একটা অপারেশন আছে।তাই এখন ঘুমিয়ে মাথাটা কে শান্ত রাখতে হবে।

তারপর সকলেই একে একে খাবার শেষ করে যে যার রুমে চলে যায়।

সোহা আর নোহা ড্রয়িং রুমে বসে বসে টিভি দেখতে থাকে।কিছু সময় পরই নোহার ডাক পরে রুশ ডাকছে।কি নাকি রুশ খুঁজে পাচ্ছে না।নোহা সোহাকে ও নিজের রুমে যেতে বলে চলে যায়।

সোহা নোহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর বলে,,হুহ কিছু খুজেখুজে পাচ্ছে না ছা’ই।বাহানা দিয়ে নিজের বউ কে নিয়ে গেলো।

সোহা ও কিছু সময় টিভি দেখার পর আর ভালো লাগে না। একা একা সোহার এমনিতেও ভালো লাগে না। তাই টিভি অফ করে উপরে নিজের জন্য ব’রা’দ্দ’কৃ’ত রুমে চলে যায়।

রুমে গিয়ে কিছু সময় এফবিতে ঘুরে রেখে দেয়। প্রচুর ঘুম পেয়েছে।চিঠির কথা বে’মা’লু’ম ভুলে গিয়ে শান্তিতে ঘুমিয়ে যায়।

—————————————
সকালে ফোনের এলার্মে ঘুম ভেঙে যায় সোহার।এলার্ম বন্ধ করে আরো দশ মিনিট ঘুমিয়ে নেয়। আড়মোড়া ভেঙে বসে এবার ফোন হাতে নেয়। তারপর তাকিয়ে দেখে কোচিং এর আর মাত্র দশ মিনিট বাকি আছে।এখান থেকে কোচিং এর দূরত্ব প্রায় পনেরো মিনিট হেটে গেলে আধা ঘণ্টা। রুশই সোহাকে কোচিং এ ভর্তি করিয়ে দিয়েছে।

সোহা দৌড়ে বাথরুমে ঢোকে।তারপর পাঁচ মিনিটে যতটুকু পেরেছো তৈরি হয়েছে।দৌড়ে নিচে যাওয়ার সময় জমেলা খালার সাথে দেখা হয়।খালাকে বলে দেয় সোহার রুমের ঝুড়িতে রাখা কাগজ গুলো যেনো ফেলে দেয়। কাউকে যেনো আবার না দেখায়।খালা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।

তারপর আবার দৌড়ে বেরিয়ে যেতে নিতেই দায়ানের মা ডাকা শুরু করে। আরে সোহা মা না খেয়ে চলে যাচ্ছো কেন? খেয়ে তারপর যাও।নয়তো অসুস্থ হয়ে পরবে।

হবো না বড় ফুপি আজ একদম টাইম নেই দেরি হয়ে গেছে। আমি কিছু খেয়ে নিবো চিন্তা করো না।বলেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।

গেটের কাছে আসতেই দেখে দায়ান গাড়ি বের করছে।সোহাকে দেখে গাড়ি থামিয়ে দেয়। গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে বলে,,উঠে এসো আমিও তো ঐ রাস্তা দিয়েই যাই।নামিয়ে দিয়ে যাবো।

সোহা কথা বাড়ায় না। দৌড়ে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে।

সিট বেল্ট লাগাও।

তারপর সোহা সিট বেল্ট লাগিয়ে বসে।

সোহার কোচিং সেন্টারের সামনে দায়ান সোহাকে নামিয়ে দেয়। সোহা নেমে দায়ান কিছু বলার আগেই দৌড়ে ঢুকে গেছে।

তাই দায়ান ও গাড়ি চালিয়ে চলে যায়।

———————————-
দুপুরের দিকে সোহা ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফিরে।এখন মনে হয় সকলেই দুপুরের খাবার খেয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে। সোহা ও বাইরে থেকে তার এখানকার এক বান্ধবীর সাথে মিলে খেয়ে এসেছে।তাই উপরে উঠে রুমের দিকে এগিয়ে যায়। রুশের মায়ের রুমে কিছু কথা শুনেই পা চলা থেমে যায়। রুশের মা রুশের সাথে দায়ানের ব্যপারে কথা বলছে।

রুশ তুইতো তোর নিজের জীবন টা সাজিয়ে নিলি।আমাদের সব চিন্তা তো এখন দায়ানকে নিয়ে। ছেলেটা কি এমন ভাবেই থাকবে নাকি? বিয়ের বয়স তো কবেই হয়েছে।আমাদের ও তো ইচ্ছে করে দায়ানের সংসার দেখার জন্য।

কি করবো আমি মা।সকলে মিলেই তো ওকে বুঝিয়েছো।আমি কি কম বুঝিয়েছি? সে তো বুঝতে চায় না।

তিশাকে ভালোবেসে ছেলেটা সব সুখ হারিয়ে গেলো তাই না রে?

আহ্ মা এসব কথা এখন আর বলো না।দায়ান শুনলে কষ্ট পাবে।আমি নিজে ইনিয়ে বিনিয়ে অনেকবার বিয়ের কথা বা নিজের জীবনে কাউকে আনার কথা বলেছিলাম।

কিন্তু ও কি শুনবে? সেই এক কথা আমি বিয়ে করবো না।তিশা কে পাইনি আর কাউকে দরকার নেই।

সোহা এতটুকু শুনেই নিজের রুমে চলে আসে।সেতো ভুলেই গিয়েছিল দায়ানের মনে যে অন্য কেউ আছে।দায়ান তিশা আপুকে ভালোবাসে।আপু নেইতো কি হয়েছে উনিতো এখনো ভালোবাসে।

এ আমি কি করতে যাচ্ছিলাম? আমি যদি উনাকে চিঠি টা দিতাম তাহলে তো উনি আমার সাথে কথা বলা তো দূর বন্ধুত্বই রাখতনা। না না দেওয়া যাবে না।ভাগ্যিস দেই নি।তাহলেতো উনি আমায় খারাপ ভাবতো।

তারপর চিঠির কথা মনে হতেই দৌড়ে গিয়ে বালিশ টা উল্টায় চিঠি নেওয়ার জন্য। কিন্তু একি চিঠি কোথায়? কোথাও নেই।বিছানা উলটপালট করে খুজতে থাকে চিঠির কোনো চিহ্ন মাত্র নেই।আলামারি ও ঘেটে ফেলে কোথাও নেই।

উফফ সোহার মাথা টা এবার সত্যি সত্যি ধরে যায়।মনে মনে দোয়া করতে থাকে কারো হাতে যেনো চিঠিটা না পরে।তারপর মনে আসে জমিলা খালা কে বলেছিলো ঝুড়ি থেকে কাগজ গুলো নিতে এটা ও নেয় নিতো?

দৌড়ে নিচে রান্না ঘরে জমেলা খালার কাছে আসে।খালা বসে বসে তরকারি কাটতেছিলো।সোহা হাঁপাতে হাঁপাতে এসে জানতে চায় খালার কাছে যে সে কোনো কাগজ পেয়েছে কি না ঝুড়ি বাদে।ওর রুমের অন্য কোথাও বা বালিশের নিচে থেকে।

জমেলা খালা জানায় সে পায় নি আজ রুম ও ঝাড়ু দেয়নি।শুধু ঝুড়ি টা নিয়ে এসে পরে।

সোহা তারপর জিজ্ঞেস করেছিলো ওর রুমে অন্য কাউকে যেতে দেখেছে কি না।

তিনি জানায় দেখেন নি।

সোহা নিজের রুমে এসে বসে পরে। কোথায় হাওয়া হয়ে গেলো চিঠিটা? আর যাই হোক এই বাড়ির কারো হাতে যেনো না পরে।

কেন যে তিশা আপুর কথা আর দায়ানের তিশার প্রতি ভালোবাসার কথা একবারো ভাবলো না চিঠি টা লিখার আগে।

সোহা মনে মনে ঠিক করে দায়ানকে বলবেনা ভালোবাসার কথা। গোপনে ভালোবেসে যাবে।যদি দায়ান ওর কাছে ভালোবেসে আসে কখনো সেই দিনটার অপেক্ষায় থাকবে।বাকিটা না হয় আল্লাহ যা চায় তাই হবে।

#চলবে,,,,,,,,,,

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ১৭
#Jhorna_Islam

হোয়াট আম্মু!
তুমি কি পা/গলে হয়ে গেছো? এসব কি যা’তা বলছো? তুমি ধারণা করতে পারছো তুমি কি বলছো?
কিছু না ভেবেই একটা বলে দিলেই হলো নাকি?
আমি আর সোহা? এটা কখনো পসিবল?

তুমি এটা ভাবলে কি করে আম্মু হাও?

কেনো কি হয়েছে?

— তুমি এখনো বুঝতে পারছো না?

— নাহ্ বল শুনি তোর সমস্যা টা কি সোহাকে নিয়ে? ওকি দেখতে শুনতে খারাপ? নাকি মেয়ে হিসেবে ভালো না,কোনটা বল আমায়?

— এসব কিছু না আম্মু। মেয়ে হিসেবে সোহার কোনো তুলনাই হয় না। ওর মতো কাউকে লাইফে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।

— তাহলে তুই সেই ভাগ্য হাতে ঠেলে দূরে কেন সরিয়ে দিচ্ছিস?

আম্মু তুমি সব জেনেও কেনো অবুঝের মতো আচরণ করছো? এসবের ভূত তোমার মাথায় কি করে চাপ’লো?

যেভাবেই চা’পুক না কেনো সেইটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। প্লিজ বাপ আমার রাজি হয়ে যা।সোহাকে বিয়ে করে নে।নিজের জীবন টা আবার সুন্দর করে গুছিয়ে নে।তোকে এভাবে দেখতে আমার আর তোর আব্বুর ভালো লাগে না। তোকে নিয়ে জানিস কতো টেনশনে থাকি? এমন ভাবে কি থাকা যায়? একা একা কেউই থাকতে পারেনা।ভালো ভাবে বাঁচার জন্য কাউকে জীবনে প্রয়োজন। একান্ত প্রয়োজন। বুঝতে পারছিস?

দায়ান অসহায় দৃষ্টিতে একবার মায়ের দিকে তো একবার বাবার দিকে তাকায়। তারপর বলে,,,আব্বু তুমি এ’ট’লি’স্ট আমায় বুঝো।আম্মুকে বোঝাও।তুমি চুপ করে আছো কেনো?

দায়ানের বাবা এবার নড়েচড়ে বসে। এতোসময় মা ছেলের কথা চুপ করে শুনছিলেন তিনি।

দায়ান আশায় আছে এইটা ভেবে তার বাবা তার পক্ষে থাকবে।কিন্তু দায়ানের আশায় এক বালতি পানি ঢেলে তিনি ও বলে উঠেন দেখ দায়ান আমিও তোর মায়ের সাথে একমত। তোর মা যা বলছে মেনে নে।কারো জন্য কারো জীবন থেমে থাকে না।

দায়ান বাবার কথা শুনে বলে উঠে,,, বাহ্ ভালোইতো।দুইজন এক হয়ে নেমেছো।

আমার এই ছন্ন ছাড়া জীবনে ওকে কেন জড়াতে চাচ্ছো তোমরা? নিজের ইচ্ছেতে মেয়েটার জীবন নষ্ট করতে চাচ্ছো? আমার অতীত তোমাদের জানা নেই? মেয়ে টা কে কেনো ঠকাতে চাচ্ছো তোমরা? আমার লাইফে কেউ ছিলো আম্মু। এটা নিশ্চই তোমরা ভুলে যাও নি?

ছিলো দায়ান। এখন তো আর নেই।পা’স্ট আর প্রেজেন্ট এর মাঝে বিস্তর ফা’রা’ক সেটা তোমাকে বুঝতে হবে। সে আর তোমার লাইফে এখন নেই।

দায়ান কিছু সময় মায়ের দিকে তাকিয়ে রয়। তারপর কোলে গিয়ে শুয়ে পরে।আমি পা/গল হয়ে যাবো আম্মু। আমি আর পারছি না।এসব নিতে পারছিনা আমি।

দায়ানের মা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,,,সব ঠিক হয়ে যাবে। তুই আমাদের কথাটা মেনে নে।সব দেখবি কি রকম সুন্দর হয়ে গেছে। ঐ মেয়েটা তোর অন্ধকার জীবনের আলো হয়ে আসবে।

বাবা মায়ের উপর তোর বিশ্বাস আছে তো?

দায়ান মাথা নাড়িয়ে জানায় আছে।

তাহলে আমাদের কথাটা মেনে নে। আমরা কখনো তোর খারাপ চাইবো না।কোনো ভুল কিছু করবোও না।যেটাতে করে আমাদের ছেলে খারাপ থাকে।বাবা মা সব সময় বেস্ট ডিসিশনটাই বেছে নেয় তাদের সন্তানের জন্য।

আম্মু আমার আর সোহার বয়সের পার্থক্য জানো? ওতো একটা পিচ্চি মেয়ে।আমার সাথে তো ওর যাবে না আম্মু।

এসব বয়সের পার্থক্য কোনো ব্যপার না দায়ান। যদি লাইফ পার্টনার টা সঠিক হয়।আমার আর তোর আব্বুর বয়সের পার্থক্য তেরো বছরের।আমাদের মধ্যে এই নিয়ে কোনো ধরনের সমস্যা হয়েছে? হয়নি তো।তোর ও হবে না।

আমার লাইফের এতোকিছু জেনেও কেনো ওরা আমাকে সোহার জীবনে মানবে আম্মু? ওর বাবা মা কখনো মেনে নিবেন না। আর সোহা ও মেনে নিবে না আমায়।কেউই তার জীবন সঙ্গী অন্য জনকে ভালোবাসছে সেটা সহজে মেনে নিবে না।

দায়ানের মা ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,,, এতোসব নিয়ে তোর ভাবতে হবে না। সব আমার আর তোর বাবার উপর ছেড়ে দে।আমরা দুইজন সব সামলে নিবো।তুই শুধু রা’জি হয়ে যা। সোহার বাবা মায়ের সাথে আমি আর তোর বাবা কথা বলবো।আর সোহার ব্যাপারটা আরো আগে ছেড়ে দে।

তারপর দায়ানের মা মনে মনে বলে,, তুই তো জানিস না। সোহা নামের মেয়ে টা তোকে কতো ভালোবাসে।আমার আর তোর আব্বুর তো সেই প্রথম দিন থেকেই সোহাকে তোর জন্য পছন্দ। মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম তুই একটু স্বাভাবিক হলেই তোর আর সোহার চার হাত এক করে দিবো সকলের সম্মতি তে।

————————————-
সোহার বালিশের নিচে রাখা দায়ানকে নিয়ে লিখা চিঠি টা আর কেউ নয় দায়ানের মা পেয়েছে। সোহা যখন কোচিং সেন্টার এর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গিয়েছে তখন তিনি উপরে উঠে আসেন।জামেলা খালা তখন ঝুঁড়ি নিয়ে চলে গেছে।

দায়ানের মা বিছানার চাদর নিয়ে রুমে প্রবেশ করে।

অনেকদিন হয়ে গেছে সোহার রুমের বিছানার চাদর বদলানো হয়নি। কিছু টা ময়লা ময়লা হয়ে আছে।তাই আরেকটা বিছিয়ে সেটা ধোয়ার জন্য নিয়ে যাবেন।

রুমে ঢুকে বিছানায় গিয়ে বসে। তারপর বালিশ টা কোলে তুলে নিয়ে কা’ভা’র খুলতে যাবে,এমন সময় চোখ যায় বালিশ যেখানে রেখেছিলো ঐখানে একটা কাগজের দিকে।

এইখানে এটা রেখে দিয়েছে মেয়েটা? আর জায়গা পায়নি নাকি।পরেতো হাড়িয়েও যেতে পারে।দরকারি কাগজ হলে।তারপর সেটা হাতে উঠিয়ে নেয়।

কৌতূহল বসত দেখে নেয় ওটা কিসের কাগজ।তারপর চিঠিটা পরে দায়ানের মায়ের চোখে খুশির পানি চিকচিক করতে থাকে।কয়েক দিন ধরে দায়ানের মা সোহা আর দায়ান কে নিয়ে যে স্বপ্নটা মনের মধ্যে গেঁথে রেখেছেন।সেটা আরেক ধাপ বেড়ে গেলো।সোহা দায়ান কে ভালোবাসে।তার মানে দায়ানের মা এতোদিন ধরে যেটা ভেবে রেখেছিলো সেটা সম্ভব।

তারাতারি করে উনি চিঠিটা নিয়ে বালিশ টা যথা স্থানে রেখে সোহার রুম থেকে বের হয়ে যায়।

তারপর নিজের রুমে ঢুকে যত্ন সহকারে চিঠিটা রেখে দেয়। দায়ানের বাবা বাড়ি আসলে সব জানায়।কারণ দুইজনেই দায়ানের জন্য সোহাকে পছন্দ করে ছিলো কিন্তু বলার সাহস হয়নি। এখন যেহেতু সোহা ও দায়ানকে চায়।তাহলে তারা যে করেই হোক এই দুইজন কে এক করবে।

তারপর ভেবে চিন্তে দায়ান হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলে উনাদের রুমে ডেকে নিয়ে আসে।তারপর বলে যে,,উনারা চায় দায়ান সুখে থাকুক ভালো থাকুক এটা দেখে শান্তিতে মরতে চান।এজন্য দায়ান কে বিয়ে করতে হবে। তাও আবার সোহাকে। সোহাকে উনারা দায়ানের জন্য পছন্দ করেছে।

———————————-

তোর চোখে ও আমি সোহার জন্য বন্ধুত্বের চেয়েও বেশি কিছু দেখেছি।তুই হয়তো এখন বুঝতে পারছিস না।সময় হলে ঠিক বুঝতে পারবি।কথা গুলো দায়ানের মা মনে মনেই বলেন।

আমি নিজের লাইফের সাথে কারো লাইফ জড়াতে চাচ্ছিলাম না আম্মু। আবারো বলছি ভালো করে ভেবে দেখে নেও।

আমারা অনেক ভেবে তারপর সিদ্ধান্ত টা নিয়েছি দায়ান।বয়স তো আর কম হলো না।ভালো মন্দ সবই বুঝি।বাবা মায়ের উপর ভরসা রেখে আশা করি ঠকবে না।বাবা মা কখনো তাদের সন্তানের সাথে বে’ঈ’মানী করে না।কোটিতে হাতে গুনা দুয়েকজন পাবে যারা এমন করে।

তুমি আমাদের একমাত্র ছেলে আমাদের সব চাওয়া পাওয়া, আশা ভরসা সব কিছু তোমায় নিয়ে।আশা করি তুমি আমাদের নি’রাশ করবেনা।

ঠিক আছে আম্মু তোমরা যা ভালো বুঝো তাই করো।আমি আর বাঁধা দিবো না। জীবনে একটা বড় সিদ্ধান্ত তো আমি নিয়েছিলাম।এবার না হয় তোমরা নিলে।

দায়ানের বাবা মায়ের মুখে দায়ানের কথা শুনে হাসির রেখা ফোটে উঠে। দায়ান সেই হাসি মুগ্ধ চোখে দেখে।

সে লাইফ টা আবার সাজাবে।স্বপ্ন দেখবে নতুন করে। ভেবে নেয়।

———————————————————-
সোহা অনেক ভেবেও যখন চিঠি টা কোথায় আছে বুঝতে পারলো না।তখন ভাবনাই ছেড়ে দিলো।

ধূর আর ভাববেই না।হয়তো ঐ ঝুড়িতে ভুল করে ফেলে দিয়েছিলো।আর জমেলা খালা তা নিয়ে ফেলে দিয়ে এসেছে।

নয়তো এতক্ষনে তো কিছু একটা ঘটতই যদি কারো হাতে চিঠি টা পরতো। নিশ্চয়ই চিঠি টা যার হাতেই পরতো সে যেই হোক চুপ করে থাকতো না।

অনেক ভেবে চিন্তা করতে করতে মাথা ধরিয়ে ফেলেছে।তাই আর এসব নিয়ে কোনো চিন্তা করবে না।এতো ভাবনা চিন্তায় শরীরে ক্লান্তি ভ’র করেছে। চোখ ঘুমে বু’জে আসছে।
এখন একটা লম্বা ঘুম দরকার।

তাই বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলো।কিছু সময়ের মধ্যেই দুই চোখের পাতায় ঘুম নেমে এলো।আর ঘুমিয়ে ও গেলো।

দায়ান তার বাবা মায়ের রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় সোহার রুমের দরজায় চোখ যায়।দরজা টা খোলাই আছে।দায়ান দরজার কাছে এগিয়ে আসতেই বিছানার উপর ঘুমন্ত সোহাকে দেখতে পায়।

কিছু সময় দরজার বাইরেই দাড়িয়ে সোহার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে রয় দায়ান।মেয়ে টা কো’ক’ড়ে শুয়ে আছে। হয়তো শীত লাগছে।তার উপর দরজা এমন হা করে খোলা রেখে কেউ ঘুমায়? দায়ান সোহার রুমের ভিতর ঢুকে।

এগিয়ে গিয়ে সোহার পাশে দাঁড়ায়। কোনো কিছু না ভেবেই পায়ের নিচ থেকে কা’থা’টা নিয়ে সোহার শরীরে মেলে দেয়।তারপর সোহার মাথায় হাত দিতে গিয়ে ও থেমে যায়। কিছু একটা ভেবে সোহার মুখের দিকে তাকিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। তারপর রুম থেকে বেরিয়ে দরজাটা চাপিয়ে দেয়।

আবার বাবা মায়ের রুমের দিকে এগিয়ে ন’ক করে।

দায়ানের বাবা মা দরজার দিকে তাকিয়ে কিছু বলবে,, তার আগেই দায়ান বলে,,,

“আম্মু আমি সোহাকে বিয়ে করতে রাজি আছি।” তবে আমার একটু সময়ের প্রয়োজন। ওর মনে কি চলছে সেটা আমি জানতে চাই।আর ওর সাথে ভালোবাসাহীন ভাবে কোনো সম্পর্কে জড়াতে চাই না।নিজের মন থেকে ওকে গ্রহন করতে চাই।৷

আশা করি বুঝতে পেরেছো।বলেই দায়ান নিজের রুমে চলে যায়।

#চলবে,,,,,,,,,