তোকে ঘিরে পর্ব-১২+১৩

0
1120

#তোকে_ঘিরে❤
#পর্ব_১২
#ফাবিয়াহ্_মমো🍁

পূর্ণতা কঠিন হয়ে দাড়িয়ে থাকলেও ঠোঁটদুটো মৃদ্যু মৃদ্যু কেঁপে চোখের পানি লম্বাটে হয়ে পরছিলো। ইচ্ছা করছিলো পাগলের মতো জাপটে ধরতে! দুহাতের শক্ত বেষ্টনীতে নিজের সাথে মিশিয়ে রাখতে! পূর্বের গালে নিজের দুইহাত বসিয়ে অজস্র ঠোঁট ছুয়িয়ে দিতে! হঠাৎ নিরবতার প্রখরতায় আলতো ছিদ্র করে বলে উঠলো পূর্ব,

– আমি কি আপনাকে চিনি? হু আর ইউ?

পূর্ণতা বৈদ্যূতিক শক খাওয়ার মতো শিউরে উঠে কেপে উঠলো! চোখ হয়ে গেলো কঠিনের চেয়েও রুক্ষ স্থির! গাল বেয়ে চুইয়ে চুইয়ে থুতনি থেকে পড়তে লাগলো অজস্র অশ্রুপানি। হাতের তালু হয়ে উঠলো মুষ্ঠিবন্দী। পূর্ব খুবই বিরক্তির সাথে অবহেলার ভঙ্গিতে বললো,

– আরে আশ্চর্য তো! আপনি এভাবে নির্লজ্জার মতো দাড়িয়ে আছেন কেন? সমস্যা কি! সরবেন? যাবো আমি!

পূর্ণতা কঠোর হয়ে শক্ত চাহনিতে মূর্তির মতো দাড়িয়ে থাকলে পূর্ব ওকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। পূর্ব দরজার কাছে যাওয়ার আগমূহূর্তে হঠাৎ স্তব্ধ গলায় বলে উঠে পূর্ণতা,

– আপনি কি আমার পূর্ব না? যে আমাকে রাতের অন্ধকারে শেষবার দেখতে বাড়িতে এসেছিলেন?

পূর্বের পা থেমে যায় কন্ঠধ্বনির শীতলতায়। চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়ার চেষ্টা করে। শরীর বিনা অসুখেই প্রচুর দূর্বল দূর্বল লাগছে। মাথা ঘুরাচ্ছে। ব্রেন সকল বডির এক্টিভিটি কন্ট্রোল করতে পারছেনা। পূর্ব নিজেকে শক্ত করে মুখ না ঘুরিয়ে জোর গলায় বললো,
– না!

শব্দটা উচ্চারণ হতে দেরি পূর্ব দ্রুততার সাথে রুম থেকে চলে গেলো। ‘না’ শব্দটা ভ্রমরের মতো ভো ভো শব্দতালে পূর্ণতার ভেতরটাকে ধ্বংসাত্মক প্রকোপের মতো লন্ডভন্ড করছে! নিশ্বাস নিতেও এখন ভারী কষ্ট হচ্ছে! যাকে জানপ্রাণ উজাড় করে, দিনরাত ত্যাগ করে, মাসের পর মাস ধরে বড্ড উন্মাদের মতো খোজাখুজি করলো শেষে ব্যক্তিটা তাকে চিনতেই অস্বীকার করলো!

পূর্ণতার কান্না হয়তো আশপাশের মানুষকে আর্কষিত করছিলো না। কিন্তু পূর্ণতা নিজের উপর থেকে সক্ষমতা হারিয়ে ফেলল পূর্বের আচরনে। ধপ করে ফ্লোরে হাটু ছেড়ে দিলো পূর্ণতা। চোখ থেকে অথৈ জলোচ্ছ্বাসের মতো টপ টপ করে মোটা প্রস্থে জল গড়াচ্ছে। খানিকটা সময় না পেরুতেই বাইরে থেকে দৌড়ে এলো শ্রেয়া! পূর্ণতাকে ফ্লোরে বসে নির্বিকার ভঙ্গিতে কাদতে দেখে বুকটা মুচড়ে এলো তার! শ্রেয়া দৌড়ে পূর্ণতার কাছে এসে হাটু ভেঙে ফ্লোরে বসলো! নানা প্রশ্নের ছড়াছড়িতে নিশ্চল ভাবে বসা কান্নারত পূর্ণতাকে বিদ্ধ করলো! পূর্ণতা অনেকক্ষন পর শ্রেয়ার জোরাজুরিতে মুখ তুলে তাকালো কিন্তু ঠোঁট ভেদ করে কিছুই বলতে পারলো না। শীতলতায় আবেশ স্নিগ্ধময় চোখদুটো দিয়ে নির্বিঘ্নে অশ্রু ঝরাতে লাগলো পূর্ণতা। শ্রেয়া অস্থির হয়ে আয়মান ও রাজিবকে ফোন করে ঠিকানা বলে এদিকে আসতে বললো সেই সাথে সংক্ষিপ্ত করে বললো পূর্ণতার ঘটনা। ওরা দুজন দৌড়াতে দৌড়াতে খালি রুমের ভেতরে ঢুকে মধ্যখানে পূর্ণতা ও শ্রেয়াকে দেখতে পেলো। আয়মানের চেয়ে একদফা জোরে দৌড় দিলো রাজিব। পূর্ণতার সামনে ওরা হাটুমুড়ে বসতেই একঝাক প্রশ্নের তীর ছুড়ে দিলো।

– তুই ওকে দেখে কাঁদছিস কেন পাগল! তোর পূর্ব-পশ্চিম বাইরে বসে আছে! যা কথা বল!!

রাজিব আয়মানকে বাধা দিয়ে বললো,
– বেটা দিনদিন কি তোর বুদ্ধি পায়ের তলায় চলে যাচ্ছে! ওর হাল দেখে গেস করতে পারছিস না! ওই পূর্ব বদমাইশটা যে কিছু করেছে? পূর্ণতা! আমার দিকে তাকিয়ে বল ওই পূর্ব তোকে কি করেছে!
আয়মান রাজিবকে আলতো ধাক্কা দিয়ে পূর্ণতার সামনে থেকে সরিয়ে চেচিয়ে বলে উঠলো,

– পূর্ণতার চিন্তা আমারো আছে রাজিব! শুধুশুধু ঘটনা পুরো না জেনে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা উচিত না!
– রাখ তোর দোষী সাব্যস্ত করাকরি! আমি কি এখানে ড্রামা সিরিয়াল দেখতে বসে আছি?আমার সামনে আমার ফ্রেন্ড এভাবে কাদঁবে আর আমি বসে বসে ললিপপ খাবো? ফাজলামো করিস!!
– রাজিব বাড়াবাড়ি করছিস কিন্তু! থাম বলছি! পূর্ণতার কাছ থেকে ঘটনা না জেনেই লাফাবি না! কাহিনী কম কর!
আয়মানের শাষনবাণীতে রাজিব চুপ করে গেলো। আয়মান পূর্ণতাকে স্বাভাবিক গলায় আশ্বস্ত দিয়ে বলে উঠলো,

– আমরা এতদূর যখন আসতে পেরেছি আমরা সফল হবোই!পূর্বকে তোর কাছে এনে দিবোই পূর্ণতা! প্লিজ বল পূর্বের সাথে কি কথায় হয়েছে, ও তোকে দেখে কি রিয়েক্ট করেছে?
আয়মানের পিছনে থাকা দূরবর্তী দরজার দিকে তাকিয়ে বললো পূর্ণতা,
– উনি আমাকে চিনে না। উনি নাকি আমার পূর্ব না।
শ্রেয়া ক্ষিপ্র গলায় তেড়ে বললো,
– বললেই হলো? বেটাকে মারলি না কেন? কষিয়ে দুটো লাগামহীন চড় দিতে পারলিনা!!
পূর্ণতা অশ্রুপূর্ণ চোখ দুটো দিয়ে শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
– উনাকে দেখলে আমার মারতে ইচ্ছে করেনা শ্রেয়া। আমি উনাকে মরে গেলেও চড় মারতে পারবো না।
আয়মান ঝগড়াটে গলায় বলে উঠলো,
– ঠাস ঠাস করে তো ঠিকই আমাদের দুটোকে মারিস! এখন জায়গা মতো হাত চালাবি সেটাই এখন পারিস না!
রাজিব আয়মানের পাশ থেকে সুর টেনে বললো,
– আয়মান ঠিক বলেছে পূর্ণ! একটাও মিথ্যে কথা বলেনি! তুই আমাদের…
পূর্ণতা কঠিন গলায় বলে,
– আমায় পূর্ণ ডাকবিনা রাজিব!
রাজিব আহত হয়। কথা শেষ না করলেও পূর্ণতার হুঙ্কারে কথা বলতে কষ্ট অনুভব হচ্ছে। আয়মান ব্যাপারটা টালার জন্যে পূর্ণতাকে বোঝায় বাইরে যেয়ে পূর্বের সাথে কথা বলতে। কেন সে ছয়নয় গন্ডগোল পাকাচ্ছে!ইচ্ছে করে পূর্ণতাকে না চেনার ভান ধরার মূল রহস্য কি জানতে চাচ্ছে এখুনি! পূর্ণতা তার কৌতুহলী মন নিয়ে উঠে দাড়ালো। ওড়না দিয়ে চোখ মুছে নিজেকে ঠিকঠাক করে আয়মান,শ্রেয়া ও রাজিবের সাথে বাইরে গেলো। শ্রেয়া মাঝখান থেকে বলে উঠলো,

– আয়মান? একটা কথা বলি? পূর্ণতা তুইও শোন। পূর্ব ভাইয়া কিন্তু দেখতে সিরিয়াসলি হ্যান্ডসাম। এটা জাস্ট আমি না। তুইও বলতে বাধ্য ! বল আয়মান? তুই একসেপ্ট করছিস না?
আয়মান পকেটে দুইহাত ঢুকিয়ে ভাবুক মুখ করে বললো,
– হুম।
রাজিব আরো একবার ক্ষুদ্ধ হলো আয়মানের কথায়। আয়মানের কাছে কি পূর্বই খুব সুন্দর? রাজিব কি দেখতে হ্যান্ডসাম না? আশ্চর্য !যে ছেলেরা একটু অসুন্দর তাদের প্রেমে কি মেয়েরা পরেনা? প্রেমে পরার কোনো অধিকার নেই? রাজিব তো বেশ সুন্দর ছেলে বলেই পরিবার পরিজনের কাছে মুখরিত। তাহলে পূর্ণতার নজরে কেনো সুন্দর লাগেনা? শ্রেয়ারও কি মনে হয় রাজিব সুন্দর না? পূর্বের কথা এতো গুরুত্ব দিয়ে কেন বলতে গেলো ও? এগুলো নিয়ে সবার অগোচরে ভাবতেই ভাবতে হঠাৎ ওদের সামনে তিনজন ছেলে এসে রাস্তা আটকালো। আয়মান রাগের পূর্বাভাসে বলে উঠলো,

– ওই মিয়া? রাস্তা ব্লক করেন কেন? দেখেন না আমরা হাঁটতেছি?

তিনজনের মধ্য থেকে একজন খুব ধারালো দৃষ্টিতে আয়মানকে দেখলো। অতপর শান্ত গলায় বললো,
– কথা আছে আপনাদের সাথে। তাই ব্লক করতে বাধ্য হয়েছি।
পূর্ণতার চোখে কৌতুহলের আবেশ থাকলেও বাকিদের রীতিমতো ভয়ে তটস্থ অবস্থা! না জানি আউট স্টুডেন্টের খবরটা জানতে পেরে এখন জেরা করতে এসেছে! পূর্ণতা আগ বারিয়ে বললো,
– জ্বি ভাইয়া বলুন কি কথা।

ছেলেটার গায়ে খয়েরী রঙের শার্ট। হাতে সালমান খানের মতো প্লাটিনামের ব্রেসলেট ঝুলছে। চুলগুলো এখনকার ছেলেদের মতো স্পাইক করে কাটা। কানের মধ্যে সিলভারের চিকচিক করা দুল। ছেলেটা হালকা কেশে গলা ঝেড়ে বলে উঠলো,

– একটু আগে যার সাথে আপনার দেখা হয়েছে সে আপনার কি হয়? মানে আপনার রিলেটিভ না অন্যকিছু..
– আপনি কেন জিজ্ঞেস করছেন? আর কার কথা জিজ্ঞেস করছেন সেটাও তো ক্লিয়ারলি বলছেন না। সমস্যা কি?
– আপনি রাগ দেখাচ্ছেন কেন আজব! আপনার সাথে আমি রাগ দেখাচ্ছি? সোজাসাপ্টা আন্সার দিতে কেন ঝামেলা করছেন?
– যার কাছে আমি কিছুই না তাকে কিভাবে পরিচয় দিবো, আশ্চর্য!
– এর মানে পূর্ব আপনার কিছুই না। ও বুঝেছি!! বুঝেছি!! ক্রাশ কেস। পাত্তা পাচ্ছেন না। আচ্ছা ক্যারি অন। বায়।

ছেলেটা অদ্ভুত একটা হাসি দিয়ে আমার সামনে থেকে চলে গেলো। মাথামুন্ডু কিছুই বুঝলাম না কেনো এসব প্রশ্ন করলো! ওদের দিকে তাকিয়ে দেখি আয়মান কিছুটা স্বাভাবিক হলেও রাজিব ও শ্রেয়া এখনো স্বস্তির নিশ্বাস হো হো করে ছাড়ছে। আয়মান আমার মাথায় চাপড় মেরে বললো,
– সাব্বাশ গরীরের এসিপি প্রদূমান! তোকেই খুজছে বাংলাদেশ!! যেভাবে ফটাফট জবাব দিলি!!মাশাআল্লাহ্!! বড় হয়ে গেছোস রে! বিয়ে দিতে হইবো!!

ওর কথা শুনে বাকি দুইটা দাত কেলানি মেরে হাসছে। কি খারাপ! আমি তীক্ষ্ম মেজাজে ওর বাহুতে ঘুষি মেরে বলি,
– বাটপার! আমি গরীবের এসিপি প্রদূমান?বাংলাদেলশ আমায় খুজেঁ?যত্তসব ফাজিলের মতো কথাবার্তা !

আমাদের বেশি বেগ পেতে হলো না পূর্বকে খুজঁতে। উনি এমন জায়গায় বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন যেখান থেকে পুরো ক্যাম্পাসের মানুষ স্পষ্ট দেখতে পাবে। আমরা চারটা যেয়ে উনার দলবলের সামনে হাজির হলে উনার পাশে বসা পটকার মতো একটুখানি মুখ। সেই ছেলে বলে উঠলো,

– এখানে কি চাই?
– ভাত চাই। দিবেন?
শ্রেয়া আমার পাশ থেকে একই স্টাইলে জবাব ছুড়লো,
– বুঝলেন ভাইয়া? একটা রেস্টুরেন্ট খুললেই পারেন আমরা এসে মাঝেমাঝে মাগনা খেয়ে যাব।
পূর্ব খুবই কটাক্ষ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। দৃষ্টিটা এতোই প্রবল যে আমি যদি একা থাকতাম উনি রাক্ষসের মতো আমাকে চিবিয়ে খেতেন! পটকা মুখের ছেলেটা চোখ ছোট করে বলে উঠলো,
– কেচির মতো জবান চলে কেন? বিপক্ষ দলের মাইয়া নাকি?

আয়মান এতোক্ষন চুপ করে সব কথা গিললেও এবার সে তুঙ্গে চড়ে বললো,

– কিও মিয়া? জবান টাইন্না দেখছো কেচি না বটি? ফালতু কথা বলতে যাও কেন?

রাজিব আমার সাথে ঘটা অপমানজনক আচরনটা মেবি নিতে পারলো না। আয়মানের ঘাড়ে হাত রেখে ওকে পিছে ঠেলে ছেলেগুলোর দিকে এগিয়ে বলে উঠলো,
– তোর দলের লিডারই একটা বদমাইশ!খ্যাতের চামচারা কিভাবে ভালো ব্যবহার করবি! শালা খ্যাত!

পূর্বের পাশে বসা সাঙ্গু পাঙ্গুরা ক্ষেপে উঠলো আয়মানের কথায়! পূর্ব কিছু বলবেন তার আগেই রাজিব যেয়ে একটা ছেলেকে ঘুষি মেরে বসলো! ব্যস! শুরু হয়ে গেলো মারপিট! শ্রেয়া রাজিবকে সরানোর চেষ্টা করছে! এদিকে আমি আয়মানের হাত ছেলেটার গলা থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি! হঠাৎ পূর্ব বসা থেকে উঠে দাড়াতেই উনার দলের ছেলে কিনা জানিনা কোত্থেকে একদল ছেলে এসে আয়মান ও রাজিবকে মাটিতে ফেলে এলোপাথাড়ি মারতে মারতে মাঠের মাঝখানে নিয়ে গেলো! শ্রেয়া চিৎকার করছে না মারার জন্য! এদিকে আমি হতবিহ্বল হয়ে ছেলেগুলোকে ছেড়ে দিতে বলছি! অনুনয় করছি বারবার! ওরা কেউই ওদেরকে ছাড়ছেনা! আরো প্রচুর লাত্থি মেরে জখম করছে ওদের!!! শ্রেয়া ও আমি দূর থেকে ওদের দৃশ্য দেখে কেঁদে দিয়েছি। আমরা চারজন সবসময় একসাথে থেকেছি! বড় হয়েছি! আজ পূর্বের ছেলেদের হাতে ওরা বিনা দোষেই মার খাচ্ছে!!পূর্ব দাড়িয়ে দাড়িয়ে ওদের মার খাওয়া দেখছে! কিচ্ছু করছেনা! উনি থামতেও বারন করছেন না! দূর থেকে শুধু চুপচাপ দেখছে। উনি কেন করছেন এসব? আমি শ্রেয়ার দিকে তাকাই। শ্রেয়া ঠোট উল্টে কান্না করছে। ওর গাল গড়িয়ে পরা পানিগুলো হাতের তালুতে মুছতেই বলে উঠলো,

– পূর্ণতা..পূর্ণতা প্লিজ কিছু কর!! এভাবে চলতে থাকলে রাজিব আয়মান দুজনেই মারা পরবে!! পূর্ব ভাইয়াকে ছেড়ে দিতে বল পূর্ণতা! পূর্ব ভাইয়াকে রিকুয়েস্ট কর…

বলতে বলতেই চোখ কুচকে কেদেঁ দিয়েছে শ্রেয়া। আমি কান্না চোখে মাথা পিছু ঘুরিয়ে পূর্বের দিকে তাকালাম। উনি আমার বন্ধুদেরকে মার খাওয়াচ্ছেন কেন? আমার জন্য? আমি কেদেঁ দিয়ে বলে উঠলাম,

– পূর্ব কিভাবে দেখছে রে? ও আমার পূর্ব না!!ও আমার পূর্ব হবেই না। ও আমার জন্য আমার বন্ধুদের উপর ঝাঁজ মেটাবে?আমার জন্য উনি…

পূর্ণতা ঠোঁট কামড়ে শ্রেয়ার কাধে কপাল ঠেকিয়ে চোখের পানি ফেললো। শ্রেয়া নিজেকে কোনোরকমে সামলে পূর্ণতাকে সোজা করে দাড় করিয়ে নাক টেনে চোখ মুছে বললো,

– চল। ভাইয়ার পা ধরতে হলেও ধরবো তবুও আয়মান ও রাজিবকে ছাড়াবোই। তুই প্রমিস কর আর কক্ষনো এই বদ ছেলেটার জন্য কাদবিনা! খবরদার যদি কাদিস তাহলে মনে রাখবি আয়মান আর রাজিব তোর কেউ না!

পূর্ণতা ঢোক গিলে একবার ধূলোর ময়দানে মার খাওয়া আয়মান ও রাজিবকে দেখলো। আরেকবার দেখলো পূর্বের স্বাভাবিক ভঙ্গিতে হাতভাঁজ করে দাড়িয়ে থাকা সিচুয়েশনটা। শ্রেয়া পূর্ণতাকে নিয়ে চোখ পরিস্কার করতে করতে করতে পূর্বের সামনে একদম ঠান্ডা হয়ে দাড়ালো। পূর্ব এমন ভাব গাম্ভীর্যে অন্যদিকে দৃষ্টিপাত করলো যেনো পূর্ণতা বা শ্রেয়া কেউ ওর সামনে তো দূর! ত্রিসীমানা ধারেকাছেও নেই!শ্রেয়ার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে পূর্ণতার উপর! কিভাবে এই বজ্জাত ছেলেটার উপর মন দিয়ে বসেছে? হাও পসিবল?

– ভাইয়া আমরা কি করলে আমাদের বন্ধুদের ছেড়ে দিতে বলবেন? আমরা কি আপনার পা ধরবো? বলুন দয়াকরে!! কি করলে আমরা নিস্তার পাবো?

পূর্বের সামনে মাথা নিচু করে দৃষ্টি না দিয়েও আমি বলে দিতে পারি এই লোক পাক্কা কয়েক মিনিট কোনো জবাব দিবেন না। স্বভাব এতোই খারাপ যে সবসময়ের মতো চুপ হয়ে থাকবেন। আমি মাটি থেকে দৃষ্টি সরিয়ে পূর্বের দিকে তাকালাম। উনি এখনো মুখ ঘুরিয়ে দূরের একটা গাছ দেখছেন। শ্রেয়া কনুইয়ের ভাঝে চোখ লুকিয়ে কাঁদছে। পিছনে আরেকবার তাকালাম। রাজিবের অবস্থা ভালো দেখা যাচ্ছেনা। আয়মানের মাথার কাছ দিয়ে কানের পাশে রক্তের ঢল দেখা যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা চেয়ে চেয়ে আমাদের দূরবস্থা দেখছে। চোখ ফিরিয়ে মাথা নুয়ে দুই হাত জোড় করে বললাম,

– আমি হাতজোর করে ক্ষমা চাচ্ছি আমার সকল ভুলের জন্য। আমি আর কক্ষনো আপনার পথে কাঁটা হয়ে আসবো না। আমার উপর অনুগ্রহ করুন। এবং আমার বন্ধুদের ছেড়ে দিন। আমি আপনার পায়ে পরতেও রাজি। দয়া করে আমার বন্ধুদের ছেড়ে দিন।

পূর্ব সিড়ি ভেঙে পা চালিয়ে চলে গেলেন। শ্রেয়া নাক ফুলিয়ে লাল করে চোখ থেকে কনুইয়ের ভাজ সরাতেই আমার দিকে তাকালো। আমি পূর্বের কার্যকলাপ দেখার জন্য পিছন ফিরে দাড়িয়ে আছি। পূর্ব ওদের সবাইকে থামতে বলে আয়মান ও রাজিবকে মাটিতে ছেড়ে অডিটোরিয়ামের দিকে দলসহ চলে গেলেন।

রাজিবকে আমি টেনে তুলে আমার কাধে ওর একহাত রেখে বেরিয়ে এসেছি। শ্রেয়া আয়মানের কপালে শক্ত করে রুমাল ঠেসে ধরেধরে নিয়ে এসেছে। একটা উবার ঠিক করে আমরা ফার্মেসী থেকে ঔষুধ কিনে আমার বাসায় পৌঁছাই। আয়মান ও রাজিবকে আমার ডানপাশের গেস্টরুমে শুয়িয়ে দেই। ওরা এখন ঘুমের ডোজ পেয়ে ঘুমাচ্ছে। আয়মান কপালজোরে বেঁচে গেছে। ওর মাথার ডান দিকে আরেকটু হলে সেলাই লাগতো, আল্লাহ্ রহম করেছে। রাজিব পায়ে চোট পেয়েছে এমনেতে কঠিন কিছু হয়নি। শ্রেয়া ফ্রেশ হয়ে আমার একটা কুর্তি গায়ে বিছানায় বসে বাঁ দিকের জানালায় দৃষ্টি রেখে চুপচাপ। আমি নূরানীকে বলে দুপুরের খাবার রেডি করতে দিয়ে শ্রেয়ার ডানপাশে বসেছি। সামনের দেয়ালে ছোট্ট তারকাটায় ঝুলানো কালো দেয়ালঘড়িটায় টিক টিক টিক করে তিনটা বাজছে।

– পূর্ণতা? পূর্ব ভাইয়া যদি ওদের মেরে ফেলতো? আমরা আঙ্কেল আন্টিদের কি জবাব দিতাম?
শ্রেয়া জানালা থেকে দৃষ্টি না সরিয়ে একই ভঙ্গিতে প্রশ্ন করছে। আমি বালিশে মাথা লাগিয়ে সিলিংফ্যানের দিকে তাকিয়ে বললাম,
– জানি না শ্রেয়া। আজ আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা। আমার খুব অসহ্যকর লাগছে। মন চাচ্ছে ছাদ থেকে একটা লাফ দিতে!
শ্রেয়া মৃদ্যূ শিহরনে কেঁপে উঠলো। বুঝলাম শ্রেয়া এখনো কাদঁছে। কিছুক্ষণ পর আবার বললো ও,
– পূর্ব ভাইয়া কেন মারলো? কেন ওদের মারলো পূর্ণতা? তোর পূর্ব কেন ওদের কুত্তার মতো পেটালো? আছে জবাব?

আমি নিজেই যে উত্তর জানিনা সেই উত্তর কিভাবে শ্রেয়াকে বলবো? পূর্ব কেন হুট করে বদলে গেল সেটা নিজের কাছেই অজানা! চোখ বন্ধ করে ভাবলে মনেহয় পূর্ব ইচ্ছাকৃত ভাবে করেনি, বাধ্য হয়ে করেছে। আবার চোখ খুললে মনে হয় সব বানোয়াট প্ল্যানিং এবং ‘নোংরা’ বলার জন্য এভাবে উসিল উঠিয়েছে। মন ও মস্তিষ্কের তোলপাড় যুদ্ধে আমি ক্ষান্ত হয়ে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল নেই যখন চোখ খুলে চারপাশে দেখলাম তখন শ্রেয়া বা আয়মান বা রাজিব কেউই নেই! আমি উদ্বিগ্ন হয়ে চোখ কচলাতে কচলাতে সবখানে চেক করে আমার রুমে এলে দেখি নূরানী আমার বিছানা ঠিক করছে। বালিশ সাজিয়ে রাখতেই আমাকে দেখে বলে উঠলো,

– পূর্ণতা আপা, ওই আপা আর ভাইয়ারা যার যার বাসায় গেছে গা। আপনে ঘুমাইছিলেন দেইখা কেউ ডাকেনাই।
– রাজিব আয়মান? ওরা দুটো কোন আক্কেলে একা একা গেলো? কাউকে ডেকেছিলো?
নূরানী কাথা ভাজ করতেই বললো,
– আপা, শ্রেয়া আপায় দারোয়ান চাচারে বইলা ধরাধরি কইরা হেগোরে নিয়া গেছে। শ্রেয়া আপার বাপের গাড়ি আইছিলো নিতে।
– ও আচ্ছা। যাক বাসায় যেয়ে একটু রেস্ট করুক।

বলে রাখি, নূরানী পূর্ব সংক্রান্ত সকল ব্যাপার এবং আজকের ঘটে যাওয়া ঘটনাও জানে। কেননা, আমি ওকে সব বলেছি। গাড়ি ভাঙচুরের দৃশ্যের মতো আজকের ঘটনাও যে নূরানী পেটে চেপে রাখবে এই বিশ্বাস ওর উপর আছে। আয়মান, রাজিব ও শ্রেয়া যার যার বাসায় কি কি মিথ্যা বলবে জানিনা, কিন্তু এই ঘটনার এক চিলতে আভাসও আঙ্কেল আন্টিকে আচঁ করতে দিবেনা এটুকু ভরসা ওদের উপর আছে। যত বিপদ নিজের উপর নিবে তবুও আমাকে ধাক্কা দিয়ে হলেও বাচিঁয়ে দিবে! যার ফলাফল নিজেরা বাশঁ খাবে। তাও আমাকে ছাড়া।

রাতে খাওয়ার জন্য বাবা খুব জোর করলেও খেতে যাইনি। খাওয়ার ইচ্ছা নেই। বলতে গেলে বাচাঁর ইচ্ছাও নেই। মানুষ মন থেকে কিছু চাইলে নাকি পায়! আমি তীব্র থেকে তীব্রতর ভাবে পূর্বের খোঁজ চেয়েছি। কিন্তু যখন পেলাম…. আর বলতে পারছিনা এ ব্যাপারে। শব্দগুচ্ছ নেই। মানুষের সত্যিই কোনো স্বপ্ন দেখা বা তীব্র ইচ্ছা করতে নেই। যখন স্বপ্ন বা ইচ্ছা যেকোনো একটা পূর্ণ হবেনা, তখন রক্তাক্ত হবে ভেতরটা! আমাদের সমাজে তো যন্ত্রণা বোঝার কেউ নেই। সবাই তো থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টায়।

পরদিন ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে একটা ব্যাচ শেষ করে উদ্দেশ্যহীন পথে হাঁটা ধরেছি। বিকেল চারটা বাজলেও আকাশে তাকালে মনেহয় সন্ধ্যা সাতটা। ঝড়ো বাতাসের সাথে ঝুম বৃষ্টির আগমনী বোঝাচ্ছে বিকেলটা। বাসায় নূরানী এসময় ঘুমায়, টুকটাক কথা হবেনা, তাই যাওয়াটাও বৃথা। হাটঁতে হাটঁতে মানুষের ব্যস্ত পসরা গুটিয়ে তড়িঘড়ি করে রাস্তা ফাঁকা করতে দেখছি। আচ্ছা? বৃষ্টি আসলে মানুষ তাড়াহুড়ো করে কেন? বৃষ্টিতে ভিজে মনের গ্লানি গুলো ঝেড়ে ফেলতে চায় না কিসের জন্য? বৃষ্টির পবিত্র পানি গা থেকে কষ্টগুলো যে ধুয়েমুছে দেয় তা হয়তো কেউ জানেনা। বলতে না বলতে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামলো। রাস্তায় দাড়িয়ে আকাশে মুখ করে বৃষ্টি অনুভব করতে অদ্ভুত শান্তি লাগছে। চোখের পানির সাথে বৃষ্টির পবিত্র পানি একাকার হয়ে গাল বেয়ে রাস্তায় পরছে। কি দারুণ না? কেউ দেখতে পাচ্ছে না সোডিয়াম ক্লোরাইডের নোনা বিন্দু কনা।। আচ্ছা পূর্ব? আপনি এই শহরের বৃষ্টিটা অনুভব করছেন? দেখছেন কি ঠান্ডা? আমার খুব যন্ত্রণা হচ্ছে! আপনি সেগুলো জীবনেও দেখবেননা। কেন যে প্রকৃতি আপনার মতো নিষ্ঠুর, নির্মম, নিকৃষ্ট মানুষের সাথে মন বাধলো! এই মনটাকে কেটেকুটে নষ্ট করে নতুন করে প্রতিস্থাপন করতে ইচ্ছে হয়। আমার আর ভালো লাগেনা এই অসহ্যকর ব্যথা নিয়ে টো টো করে শহর ঘুরতে। আপনার চারপাশে ঘেরা রহস্যগুলো জানতে ইচ্ছে করে জানেন? উহু জানেনা। পূর্ব? আদৌ উত্তর পাইনি কেন আপনি ওই দুটোকে মেরেছেন! কেন সেদিন আমাকে চিনেও না চিনার ভান করেছেন! কেন আপনার ব্যাপারে ওই পটকামুখী ছেলেগুলো জিজ্ঞাসা করেছিলো! আদৌ জবাব পাইনি।

পূর্ণতা মাথা নামিয়ে আঙ্গুলের ডগায় চোখ মুছে হাটতে হাটতে বাসা পেরিয়ে খানিকটা দূরে বৃষ্টির মধ্যেই রাস্তার ফুটপাতে বসে পড়লো। পা দুটো রাস্তায় রেখে হাটু তুলে কপাল লাগিয়ে দুইহাতের বন্ধনে হাটু ঘিরে ধরলো। মুষলধারে বৃষ্টি! রাস্তা একদম সুনশান আকার ধারন করেছে। জনমানবশূন্য রাস্তায় গাড়িও অটোমেটিক্যালি যাচ্ছেনা। পূর্ণতা মনের দহনে নিচুস্বরে কাঁদছিলো হঠাৎ কেউ বলে উঠলো,

– আই এম সরি পূর্ণ,

পূর্ণতার শরীর ঝিলিক দিয়ে উঠলো! চোখ খুলে ঝট করে হাটু থেকে মাথা উঠিয়ে তাকিয়ে দেখলো পূর্ব হাটু ভেঙ্গে ওর সামনে বসে আছে। বৃষ্টির পানিতে গা ভিজে চুপচুপে! চুলগুলো ভিজে কপালের উপর বাচ্চাদের মতো ছেয়ে আছে। সেখান থেকে চুয়ে চুয়ে বৃষ্টির পানি পূর্বের ঠোঁটের উপর পরছে। একটু পর পর বৃষ্টির পানির জন্য ঠোট টিপছে পূর্ব। বুকের ভেতরটা বৃষ্টির প্রতিটা ফোটার মতো ঝিমঝিম করে উঠছে পূর্ণতার ! দুচোখকে সে কিছুইতেই বিশ্বাস করতে পারছেনা! পূর্ব ওর সামনে বসে আছে! পূর্ণতা হাপানি রোগীর মতো ঠোট একটু খুলে নিশ্বাস ছাড়তেই পূর্বের উপর ঝাপিয়ে পরলো। দুইহাটু রাস্তায় লাগিয়ে পূর্বের দুইগালে হাত রেখে অজস্র ঠোঁট ছোঁয়াতে লাগলো পূর্ণতা! বৃষ্টির দাপুটে প্রবলতার মধ্যেই পূর্বের গালে, থুতনিতে, চোখের পাতায় পাগলের মতো ঠোঁট ছুয়িঁয়ে দিচ্ছে।একটু থেমে পূর্বের দিকে তাকিয়ে এ্যাস্থেমা রোগীর মতো জোরে জোরে নিশ্বাস ছেড়ে কপালের উপর থেকে চুলের আচ্ছাদন একহাতে পেছনে টেনে কপালে ঠোঁট ছুয়িয়ে দিলো পূর্ণতা। চোখ বন্ধ করে নিশব্দচিত্তে কাঁদছে। কিছুক্ষণ পর চোখ খুলতেই পূর্বের চুল ছেড়ে গালে হাত রাখলো পূর্ণতা।পূর্ব এতোক্ষন চোখ বন্ধ করে পূর্ণতার পাগলামির তর্জমা অনুভব করলেও এখন ধীরেগতিতে চোখের পাতা মেলে তাকালো। চোখদুটো ফুলে নাকের ডগার শেষপ্রান্ত লালবর্ণ হয়ে উঠেছে পূর্ণতার। পূর্ব স্নিগ্ধ কোমল কন্ঠে বলে উঠলো,

– আমাকে মাফ করে দিও পূর্ণ, ভার্সিটিতে তোমায় চিনতে…
পূর্বের ঠোঁটের উপর হাত রেখে পূর্ণতা মাথা ধীরভাবে মাথা ডানেবামে নাড়লো। অর্থ ছিলো,

– কোনো কথা না,

-চলবে

#তোকে_ঘিরে❤
#পর্ব_১৩
#ফাবিয়াহ্_মমো🍁

ভারি বৃষ্টিপাত!এমন তুমুল বৃষ্টিতে মেঘপূর্ণ আকাশের নিচে রাস্তায় পড়ে আছে পূর্ণতা! মাথার নিচে ফুটপাত অংশ এবং পা দুটো রাস্তায় ফেলা! বৃষ্টির ব্যাপক প্রবলতায় পথঘাট শূন্য হলেও শ্রেয়া ছাতি মাথায় পইপই করে ভার্সিটির আশেপাশে খুজছে! প্রচন্ড পা ব্যাথা নিয়ে বিছানা ত্যাগ করে রাজিবও পূর্ণতার খোঁজে ব্যাচে গিয়েছে!আয়মান আসতে চেয়েছিলো পারেনি শ্রেয়ার হুঙ্কারবানীতে। আয়মানের কপাল মারাত্মক ব্যথায় নাস্তানাবুদ সেটা রাজিব ও শ্রেয়া ভালোভাবে জানে তাই পূর্ণতার খোজাখুজিতে আয়মানকে আসতে নিষেধ করেছে। ভার্সিটির সবখানে খোঁজা শেষ করে রাজিবকে কল করলো শ্রেয়া,

– শ্রেয়া?কোনো খবর পেয়েছিস!
– পাচ্ছি না রাজিব! পূর্ণতা এখানে কোথাও নেই!কেউ ওকে দেখেনি!!
– অসম্ভব! পূর্ণতা ব্যাচেও নেই! গেল কোথায়?
– আমার প্রচুর ভয় হচ্ছে রাজিব! পূর্ণতা যদি আবার পাগলামো করে বসলো? মেয়েটা এখন স্থিতিতে নেই! প্রচুর ভয় হচ্ছে দোস্ত!!
– টেনশন করিস না। ওর বাসার দিকে আয়। ওখানে একটা কঠিন খোঁজা দে! আমি আসছি।

ধুতির পায়জামা একহাতে আলগি করে পানি বাচিয়ে একটা রিকশা করলো শ্রেয়া! ছাতা হাতে থাকা সত্ত্বেও বেশ ভিজে গেছে শরীরটা। রিকশার হুড উঠিয়ে রিকশাওয়ালাকে দ্রুততার সাথে ঠিকানায় নিয়ে যেতে বললো। কোলে ভিজে যাওয়া ছাতাটা বন্ধ করে রেখে রিকশাওয়ালার দেওয়া পলিথিনটা দুহাতে মেলে ধরলো!বৃষ্টির ঝাপটা যেনো হিংস্র হয়ে উঠছে। দুহাতে শক্ত করে ধরা প্লাস্টিকের পলিথিনটা বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে!! শ্রেয়া পলিথিনটার শেষ প্রান্তে পা দিয়ে চেপে নিজেকে ঢেকে দুপাশটা রিকশার হুডে চেপে ধরলো। তবুও বৃষ্টির ছাটে মুখ ভিজে যাচ্ছে শ্রেয়ার! ঠিক পনের মিনিট পর রিকশার ভাড়া চুকিয়ে দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করলো পূর্ণতা এসেছে কিনা। কিন্তু পূর্ণতা সেই সকালে বেরিয়েছে আর নাকি ফিরেনি। শ্রেয়ার মন বসে যাচ্ছে পূর্ণতার নিখোঁজ অবস্থা দেখে। এভাবে হাতে হাত রেখে বসে থাকা যায়? শ্রেয়া আবার ছাতা খুলে বৃষ্টির মধ্যে বাসার কাছাকাছি রাস্তায় চেক করতে গেলো। সবখানে দেখা শেষ শুধু পূর্ণতার বাসায় কাছে কিছু রাস্তায় দেখা বাকি। পথিমধ্যে রাজিবও লেংড়া পায়ে উপস্থিত হলে দুজনে একসাথে খুজতে খুজতে খানিকটা দূরে রাস্তায় উপরে পূর্ণতাকে চেতনাশূন্য হয়ে পড়ে থাকতে দেখে! রাজিবের বুকটা ছলকে উঠলো! সে লেংড়া পা দিয়েই খুড়িয়ে খুড়িয়ে দ্রুতগামীতে সর্বোচ্চ বেগে পূর্ণতার কাছে গেলো। শ্রেয়া ছাতা ফেলেই ভোদৌড়!

অদম্য চেষ্টায় পূর্ণতাকে বাসায় নিয়ে গেলো শ্রেয়া ও রাজিব। রাজিবের মনটা বিষন্ন ভারে নিষ্প্রাণ হয়ে আছে। পূর্ণতাকে নিয়ে যেটার আশঙ্কা করেছিলো তাই হয়েছে! ও বাসায় না গিয়ে রাস্তায় বসে হ্যালুয়েশনের শিকার হয়েছে। অতিরিক্ত মেন্টালি ফোর্সের কারনে পূর্ণতা সেন্সলেস হয়ে রাস্তায় পরে গেছে। শ্রেয়া ও রাজিব পূর্ণতার দুইপাশে বিছানায় আসন করে বসে আছে। শ্রেয়ার চুলসহ পুরো জামা ভিজে শেষ। রাজিবের কালো শার্টটাও গায়ের সাথে লেপ্টে আছে খাপে খাপ। নূরানী দুটো টাওয়াল দিয়ে চা আনতে চলে গেলে বেশ খানিকক্ষন পর শ্রেয়া নিরবতা ছিন্ন করে বলে উঠে,
– রাজিব, আমি কিছু ভাবতে পারছিনা পূর্ণতাকে নিয়ে। ও এমন ছিলো না। ওর ব্যবহার কক্ষনোই এমন ছিলো না। আজ যদি আমরা খুজে না পেতাম?
রাজিব ডানহাত দিয়ে চুলগুলোকে পেছনে টেনে মুখভর্তি নিশ্বাস ছাড়লো। পূর্ণতার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
– ওকে সাইক্রিয়াস্টিটের কাছে নিবি? এভাবে চলতে থাকলে পাবনায় পাঠাতে আর সময় লাগবেনা। আন্টি যদি বায় মিস্টেকেও এই ঘটনার ব্যাপারে জানে তো…
চোখ বন্ধ করে আরেকটি দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো রাজিব। শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
– আমি কালই সাইক্রিয়াটিস্টের এ্যাপয়েন্টমেন্ট কনফার্ম করছি। আয়মানকে আমি বুঝিয়ে বলবো। তুই জাস্ট পূর্ণতাকে হ্যান্ডেল করিস,কেমন?
– ঠিক আছে। রাজিব? একটা কথা বলবো?
– ফরমালিটি করছিস কেন বলতো?
– একচুয়েলি ফরমালিটির প্রয়োজন ছিলো তাই। দোস্ত তুই পূর্ণতাকে ভুলার ট্রায় কর।মেয়েদের কাছে এসব ফিলিংটিলিং কখনো চোখ এড়ায় না। মুখে না বললেও আকার ইঙ্গিতে এগুলা বুঝার মতো ঐশ্বরিক ক্ষমতা সব মেয়েদের আছে। ছেলেরা হয়তো এটা জানেনা।
– তুই ভাবছিস পূর্ণতা জানে..
– আমি ভাবছিনা। আমি সিউর হয়েই বলছি পূর্ণতার তোর ফিলিংয়ের ব্যাপারে সবটাই জানে, বুঝে এবং অনুভব করে। বাট ফ্যাক্টস ইজ, পূর্ণতা তোর জন্য এ্যাফেকশান ফিল করেনা। যেটা করে সেটা জাস্ট বন্ধুত্বের ফিলিং।
রাজিব মাথা নিচু করে বিছানার উপর দৃষ্টি ফেলে। মন প্রচন্ড খারাপ লাগছে! প্রচণ্ড!
– রাজিব, তুই যেমন আমার বন্ধু। পূর্ণতাও সেম। আমি চাইনা তোর জন্য আমাদের এই চারজনের ফ্রেন্ডশিপটা নষ্ট হোক। তোর ছোট্ট ভুলের কারনে পূর্ণতা আরো প্রেশারে পরুক,অবশ্যই তুই এটা চাস না।

রাজিব উত্তরে কি বলবে জানেনা। পূর্ণতা নামক দূর্বলতার কাছে রাজিবের স্থিরবুদ্ধিসম্পন্ন মাথাটা কাজ করেনা। আচ্ছা প্রেমাত্মক ব্যাপারটা এতো ভয়াবহ কেনো?যেখানে মস্তিষ্কের সাথে মনের মিল হয়না!!কি অদ্ভুত!

.
নিয়মশৃঙ্খলার সাথে ন্যায়নীতি যুক্ত হয়ে তৈরি হয় ‘রাজনীতি’। রাজনীতি ব্যাপারটা শুনলে মনেহয় রাজা রাজা ভাব। আসলে ব্যাপারটা মোটেও কিন্তু তা না। ‘রাজ’ শব্দটা রাজ্যের মানুষের জন্য সৃষ্টি হয়েছে এবং সৃষ্টি করেছে নতুন নীতি তথা ‘রাজনীতি’। ধর্মগ্রন্থের মাধ্যমে যেমন পরিবারের প্রতিটা মানুষ ধর্মনীতিতে দীক্ষিত হয়ে উঠে। ঠিক তেমনি রাজ্যে বসবাস করা প্রতিটা প্রজার জন্য সুষ্ঠুভাবে কাজ সম্পাদনের প্রেক্ষিতে রাজনীতির সূচনা ঘটে। কিন্তু যুগে যুগে রাজ্য বিলুপ্ত হলেও রাজনীতির চর্চা আজো ধুমধামের সাথে মাতিয়ে চলে। যেটা হয় তীব্র রূপে! প্রবল আন্দোলনের উল্লাসে! দেশ পরিচালনায় যেমন সৎ, সমাজসেবক, ন্যায়নিষ্ঠ যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষ লাগে। তেমনি লাগে আগামীর জন্য নতুন এক নেতামুখ। আজকের ছাত্রসমাজ আগামীর সেই নতুন নেতায় পরিণত হওয়ার জন্য তীব্রগতিতে রাজনীতি নামক অনিশ্চিত পথে নামে। সদ্য উজ্জীবিত টগবগে তরুণরা পরিবার ছেড়ে পড়াশোনার তাগিদে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসে যুক্ত হয় রাজনীতির বিভিন্ন অঙ্গ সংঠনে। নিজেকে যুক্ত করে দেশের মানুষের জন্যে কিছু করার তাগিদে। তাদের মনপ্রাণ উত্তেজিত হয় বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং কাজের মাধ্যমে নিজেকে প্রদর্শন করতে। সবার মধ্যে নিজেকে পরিচিত করার মতো সুপ্ত খায়েশ থাকে। যেটা মেয়েদের ক্ষেত্রে কম তবে ছেলেদের মধ্যে দেখা যায় বড্ড বেশি। ছেলেরা সবার কাছে সমাদৃত হতে চায়, পরিচিত মুখ হাতে চায়, মানুষ তাদের এক নামে চিনুক তা যেনো খুব বেশি করেই চায়। তা যদি হয় রাজনীতি! তাহলে তো কথাই নেই। গরম রক্তে উত্তেজিত মানসিকতায় ঝেপে পরে। নিজেকে বিনিয়োগ করে দীর্ঘ মায়াজাল রাজনীতিতে।

.
– মিস পূর্ণতা, আপনি কি জানেন আপনার হ্যালুয়েশনের কারনে মেন্টালি দিক থেকে কেমন ক্ষতি হচ্ছে?
– না।
– বেশ, তাহলে শুনুন। আপনি মিষ্টার আয়াশ ওয়াসিফ পূর্ব নামে একটা ছেলেকে নিয়ে দিনরাত যে ডুবে থাকেন এতে আপনি দিনদিন মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ঝুকে পরছেন।
– ওহ্। পূর্ণতার কোনো ভাবাবেগ নেই। স্বাভাবিক উত্তর।
– এভাবে যদি চলতে থাকে আপনি মাইন্ডে কোনো স্মৃতি ক্যাপচার করতে পারবেন না। ইউ ক্যা স্যা, লস অফ মেমোরি।
– তবুও মরবো না? ব্রেন স্টোক হবেনা?

সামনে বসা ডাক্তার বেশ বিষ্মিত হয়ে যায় পূর্ণতার উদ্ভট কথায়। এই মিষ্টি চেহারার মেয়েটা মরার চিন্তা করছে? মাই গড! কি ডেডফুল সিচুয়েশান! ডাক্তার টেবিল থেকে চশমা নিয়ে চোখে এটে দুহাত মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় টেবিলে রাখল।

– মিস পূর্ণতা প্লিজ নিজের জন্য না হলেও আপনার ফ্রেন্ডগুলোর কথা চিন্তা করুন। আপনার জন্য ওরা আমার পায়ে ধরে তাৎক্ষণিক এ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েছে। আমি কখনো সিরিয়াল ছাড়া রোগী দেখিনা, বাট আপনার জন্য আমি আমার প্রোফেশনাল লাইফে এই প্রথম রুলস ব্রেক করলাম। জাস্ট আপনার বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে। বুঝছেন?
– আমি ওদের বারন করেছিলাম এখানে আনতে। ওরা শুনেনি।
– ওরা আপনার সিচুয়েশন টলারেট করতে পারছেনা মিস। প্লিজ নিজেকে প্রোপার করুন, একতরফা ফিলিংয়ের জন্য নিজেকে শেষ করবেন না। আগে রিলেশন ছিলো আপনার?
– ছিলো। কিন্তু তার জন্য আমার অনুভূতি এখন নেই।
– এটা লাভ না। একতরফা ফিলিং।
– ওটা একতরফা ছিলো না। উনি প্রথম ঝুকেছেন। আমি তো পরে…
– মেবি উনার দিক থেকে সাময়িক মোহ ছিলো। যেটা আপনার ক্ষেত্রে একটু একটু করে বিপদজ্জনক ফিলিংয়ে কনভার্ট হয়েছে। আপনার জন্য বেটার এটাই হবে তাকে ভুলে যান। লাইফে নিজের থট ক্লিয়ার রেখে এগিয়ে যান। এই নশ্বর পৃথিবীতে একা এসেছেন, একাই আপনাকে ফিরে যেতে হবে। সেখানে এই অপ্রীতিকর যন্ত্রণা পুষে নিজের ক্ষতি করবেন না।
– আপনাকে একটা প্রশ্ন করি ডক্টর?
– অফকোর্স, কন্টিনিউ।
– ধরুন, আপনার ও আমার অচেনা অজানা একটা প্লেসে সামনাসামনি দেখা হয়েছে। প্লিজ নোট ইট..আমি খুবই জখম এবং সেন্সলেস। আর আপনি গাড়ি দিয়ে আপনার কাজিনদের সাথে একটা ট্রাজেডি ঠেকাতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু আমাকে রাস্তায় পরে থাকতে দেখে আপনি সবকিছু ভুলে আমাকে তুলে এনে সেবা করলেন। আপনার কাজিনরা সেটা একদম সহ্য করতে পারছে না। এখানে আপনি কি করবেন? মানে মেয়েটার জন্য কি করতেন জানতে চাচ্ছি।
– ওয়েল আপনার প্রশ্নের জবাবে আমি বলবো, আপনাকে হসপিটালে পাঠিয়ে সেখানে নার্সকে বলে কিছু টাকা রেখে চলে আসতাম।
– এটুকুই করতেন? আর কোনো সাহায্য করতেন না?
– আমার কাজিনরা যদি আপনাকে নিয়ে অকয়ার্ড ফিল করে আমি অবশ্যই আপনাকে বেশিক্ষন রাখতে দায়বদ্ধ হবো না। তবে হিউমেনিটির জন্যে আপনার সেন্স ফিরার আগ পযর্ন্ত ওয়েট করতাম। দ্যান সেন্স ফিরলেই আমার রিসপন্সিব্লিটি শেষ।

ডক্টরের কথা শেষ হতেই পূর্ণতা খিলখিল করে হেসে দিলো। ডক্টর ভ্যাবাচেকা খেয়ে কৌতুহল দৃষ্টিতে চোখ থেকে চশমা খুলে টেবিলে রাখল। পূর্ণতা মুখে হাত চেপে হাসি থামাতেই বলে উঠলো,
– সরি সরি…আসলে আপনার কথা শুনে আমার কেন যে হাসি পেল জানিনা। কিন্তু আপনি জানেন? পূর্ব উনার সব কাজিনকে সামনে রেখে আমার সেবা করেছে। ইভেন, উনার কাজিনরা আমার পায়ে ব্যথা দিয়ে গাড়ি থেকে একটা রাস্তায় ফেলেছিলো। আমি তখনও খুব অসুস্থ ছিলাম। কথাই বলতে পারতাম না। বাট উনি কিভাবে যে আমায় খুজে পেলেন আদৌ জানিনা। আমাকে বাড়িতে পৌছে দিয়ে উনি মাঝেমাঝে আমার সাথে দেখা করতে আসতেন। শুধু দেখাই করতেন। ওরকম বদ মতলব, আমি উনার কাছ থেকে কখনো ফিল করিনি। এ ব্যাপারে কোনো উত্তর দিবেন?

ডক্টরের মুখে অদৃশ্য তালা লেগে গেলো। যাকে একতরফা বলে গলা হাকিয়ে উনি লেকচার দিচ্ছেন সেটা কি আসলেই একতরফা? উত্তর পেলেন – ‘না, একতরফা না।’ ডক্টর টেবিল থেকে লম্বা স্বচ্ছ কাঁচের গ্লাস তুলে পুরোটা পানি খেয়ে ঠোট মুছে বললেন,
– আপনার তথাকথিত মিষ্টার কোথায়?
– জানা নেই। আপনি কিন্তু উত্তরটা দেননি আঙ্কেল।
– আন্সার দেওয়ার মতো ওয়ার্ড মিলাতে পারছিনা মিস। গোজামিল কেস আপনার ঘটনাটা। একদিকে মনেহচ্ছে সে আপনার প্রতি উইক! আবার আপনার এই নাজুক সিচুয়েশন দেখে মনে হয় একতরফা!আপনাকে কিছু মেডিসিন লিখে দিচ্ছি। এ্যান্জাইটির মেডিসিন। অতিরিক্ত উদ্বেগ সমস্যা কিছুটা কমাবে।

পূর্ণতা ডক্টরের কাছ থেকে প্রেসক্রিপশন স্লিপ নিয়ে বেরিয়ে আসে। শ্রেয়া ও রাজিব চুপচাপ করিডোরে পায়চারি করছিলো পূর্ণতাকে দেখে ওরা এগিয়ে গেলো। পূর্ণতা ম্লান দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি ফ্লোরে নিক্ষেপ করে হাটতে লাগলো। রাজিব ফস করে ওর হাত থেকে স্লিপটা নিয়ে পকেটে পুরে চলে এলো ওর বাসায়। পূর্ণতার মা আজ হসপিটালে না গিয়ে বাসায় বসে টিভি দেখছেন। হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলে উনি টিভির রুম থেকে ড্রয়িংরুম পেরিয়ে দরজা খুলতেই দেখেন পূর্ণতা ও তার ফ্রেন্ডরা। পূর্ণতার মা খোদেজা কবির পূর্ণতার উদ্দেশ্যে বলে উঠেন,
– কই গিয়েছিলি?
– মরতে। পূর্ণতার বির্মষ গলায় জবাব।

এই উত্তর শুনে শ্রেয়াদের সামনেই ঠাস করে চড় মারলেন খোদেজা। মেয়ের ত্যাড়া উত্তর শুনলে উনি রাগ দমিয়ে চলতে পারেন না! হাত উঠিয়ে নয়তো কাঠের মোটা স্কেলে কয়েক ঘা মেরে দেন তৎক্ষণাৎ। পূর্ণতা চোখ নিচু করে অশ্রু ছেড়ে দিলে শ্রেয়া ওকে আগলে ধরে বলে উঠে,
– আন্টি আপনি ওকে মারলেন কেন? ও তো অসুস্থ আন্টি!!
খোদেজার কড়া গলায় উত্তর,
– শারীরিক অসুস্থ হলে কক্ষনো মারতাম না! কিন্তু পাগলামিপূর্ণ অসুস্থতার জন্য আমি মারতে বাধ্য হবো! ভেতরে আসো তোমরা। রাজিব, আসো।

‘ডিপ্রেশন’ শব্দটা ভয়ংকর ঘাতক! একটা মানুষের চেতনাশক্তিকে খুন করতেও সক্ষম! পূর্ণতা ডিপ্রেশনভুক্ত রোগী ছিলো এবং উদ্বেগপূর্ণ সমস্যায় জর্জরিত ছিলো। গবেষণায় জানা গেছে, বিশ্বে পূর্ণতাদের মতো রোগীর সংখ্যা কয়েক মিলিয়ন ছাড়িয়েছে। যেখানে দিনদিন ভূতুড়ে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে এই সংখ্যা। প্রায় ৬০% মানুষ চিকিৎসা গ্রহন করেও ডিপ্রেশন থেকে পরিত্রাণ পায় না। অনেকে ডিপ্রেশ্ড হয়ে বেছে নেয় মৃত্যুর পথ। হতাশা, যন্ত্রণা, অবহেলা থেকে জন্ম নেয় ‘ডিপ্রেশন নামক নিরবখুনি’।আচ্ছা? যারা আমাদের আশেপাশে হাসছে তারা কি প্রকৃতপক্ষে খুশি আছে? না নেই। একবার তাদেরকে নিরিবিলি পরিবেশে এনে জিজ্ঞেস করে দেখুন। জানতে পারবেন, একটা হাসিখুশি মানুষের মধ্যেও আছে ডিপ্রেশনের আহাজারি। আসলে, ‘হাসিখুশি মানুষরা সবচেয়ে বেশি মুখোশধারী’। কেউ না মানলেও আমি মানি।

– শ্রেয়া, রাজিব? চা খাবি?

– আমি লং চা খাবো। রাজিব তুই বল,
– আমি কিছু খাবো না রে।
নূরানী চায়ের আদেশ পেয়ে চলে যেতেই রাজিব, শ্রেয়া ও পূর্ণতা বিছানায় গোল হয়ে বসে। পূর্ণতা চোখ নিচু করে আছে। শ্রেয়া ফোন নিয়ে চ্যাটের মাধ্যমে আয়মানের কাছে সব ঘটনা জানিয়ে দিচ্ছে। রাজিব সারারাত ঘুমায়নি। পূর্বের বিষয় নিয়ে খুবই চান্ঞ্চল্যকর একটা তথ্য পেয়েছে যা এখন বলার জন্য আকুপাকু করছে রাজিব। হাতে হাত ডলে ঠোট কামড়ে উশখুশ করছে।

শ্রেয়া ফোন হাতে ব্যাপারটা আড়চোখে লক্ষ করতেই বলে উঠে,
– রাজিব তুই ঠিক আছিস? সাপের মতো মোচড়াচ্ছিস কেন?
– ধুর! তুই আর উদাহরন পাস না?
– এক চড় মেরে বত্রিশ দাঁতের মাড়ি ফোকলা দিবো! কি নিয়ে কুইকুই করছিস খুলে বল। লুকাবি! তো খাবি চড়!
রাজিব ঠোট ভিজিয়ে গলা ঝেড়ে পূর্ণতার দিকে একবার তাকিয়ে শ্রেয়ার উদ্দেশ্যে বলে উঠে,
– আমি পূর্বের ব্যাপারে কিছু জানতে পেরেছি দোস্ত। বলবো?
পূর্ণতা দৃষ্টি তুলে রাজিবের দিকে সহায় হয়। শ্রেয়া কোল থেকে বালিশ ফেলে চেচিয়ে বলে উঠে,
– কি জেনেছিস! তাড়াতাড়ি বল!!
– পূর্ব নাস্তিক। ও বামপন্থীর লোক ছিলো। ধর্মে টর্মে বিশ্বাস করেনা। এখন যাদের সাথে পলিটিক্স করছে তারা ভালো না।
পূর্ণতার চোখ স্থির হয়ে গেছে রাজিবের কথা শুনে! ‘নাস্তিক’? কি বলে!! শ্রেয়া দুহাতের তালুতে ঠোঁট ঢেকে অক্ষিগোলক বিশাল করে তাকিয়ে আছে। রাজিব ওদের থমথমের অবস্থা দেখে ঢোক গিলে আবার বলে উঠলো,

– পূর্বের প্রচুর শত্রু! সেদিন যে আমরা মার খেয়েছি ওরা পূর্বের দলের লোক ছিলো না।
– মানে!, পূর্ণতার জোরালো গলায় চিৎকার!
– মানে খুব স্পষ্ট। পূর্ব তোকে বাঁচানোর জন্যই সেদিন তোকে চিনার চেষ্টা করেনি। মনে আছে? ওইযে মেয়েদের মতো কানে দুল! খয়েরী রঙের শার্ট পড়ুয়া একটা ছেলে এসেছিলো? ওরা যাচাই করতে এসেছিলো দোস্ত! তুই যদি একবার বলতি তুই পূর্বকে ভালোকরে চিনিস! মেবি আজ তুই আমাদের সামনে থাকতি না। পূর্ব ইনডাইরেক্টলি তোকে বাঁচাচ্ছে!

-চলবে

#FABIYAH_MOMO 🍁