#তোমাতে_আমাতে ২
লেখা আশিকা জামান
#পর্ব_৭_৮
চারপাশটা বেশ অন্ধকার! দুই পাশের গভীর অন্ধকার ভেদ করে আমাদের হুয়াইট কালার গাড়িটা তড়তড়িয়ে যাচ্ছে। এখন সময় কত? ফোনটা পার্স থেকে বের করতে চাইলাম। কিন্তু কেমন যেন তন্দ্রাচ্ছন্ন লাগছিলো। ইমনের দিকে সরু চোখে তাকাই। এতোক্ষণেও ও একবারের জন্যেও আমার দিকে তাকায়নি। খুব অভিমান হচ্ছে। আমার সব থেকে ভুল হয়েছে ওর সাথে এখানে আসা। আমি আর জীবনেও ওর সাথে কোত্থাও যাবোনা। ইমন তুমি খুব খারাপ!
আমি বাইরের দিকে তাকালাম। নিকষ কালো অন্ধকারে নিজেকে মিশিয়ে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে। ইমনের গলার স্বর শুনে আমি ওর দিকে তাকাই।
” এখন কি আপনি চেম্বারে আছেন?”
……………………
” বুঝতে পারছি, অনেকটা লেট হয়ে গেছে। বাট আমার খুব ইমার্জেন্সি। প্লিজ একটু ম্যানেজ করলে ভালো হয়।”
…………………………
” আচ্ছা, ধন্যবাদ বাচালেন।আমি ১৫ মিনিটের মধ্যেই আসছি।”
আমি আর ওকে কিছু জিজ্ঞাসা করলাম না। ও একটা ক্লিনিকের সামনে এসে গাড়িটা থামালো।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
” আস্তে, আস্তে নামো।
নামতে পারবে তো?”
” আমি বাসায় যাব, এখানে কেন নামবো?”
” হাওয়া খেতে। নামো বলছি।”
” আমার ভালো লাগছে না। বাসায় যাব প্লিজ”
” তোমাকে আমি নামতে বলেছি নামবে ব্যাস। আর কিচ্ছু শুনতে চাইনি ব্যাস।”
ইমন একদম চেচিয়ে উঠে আমাকে গাড়ি থেকে টানতে টানতে নামায়। আমি হাতের দিকে তাকাই। ফর্সা হাতের কুনইয়ের ঠিক উপরে লাল দাগ বসে গেছে। ব্যাথায় দুচোখের জল উপচে পড়তে লাগলো।
ইমন আমার দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললো,
” চলো।”
আমি ঠাই দাঁড়িয়ে ছিলাম বলে ও আমার হাত ধরে আবার টান দেয়। আমি ওর বুকে গিয়ে পড়ি।
” জেদ ধরে দাড়িয়ে আছো কেন? আমি কি বাঘ না ভাল্লুক! তোমাকে মেরে ফেলার জন্যতো আর নিয়ে যাচ্ছি না।ভালোর জন্যই নিয়ে যাচ্ছি এটুকু ভরসা করতে পারো। আমারতো কিছু জানার অধিকার নেই৷ তাই নিজে যা বুঝব তাই করবো। প্লিজ আমার কাজে বাধা দিও না দোহাই লাগে।”
আমি ওর চোখ মুখের দিকে তাকাই, চোয়াল শক্ত,অগ্নিশর্মা হয়ে আমার দিকেই পলকহীনভাবে তাকিয়ে আছে। আমি ওর পিছুপিছু ডক্টরের চেম্বারে ঢুকি৷
গাইনোকলোজিস্ট তাসফিয়া সহাস্যে আমাদের বসতে বলেন। ইমনের সাথে কিছু ফর্মাল আলাপ সেরে আমার দিকে মনোযোগ দেয়।
” ভাবি, কি কি সমস্যা একটু বিস্তারিত বলুনতো।”
আমি শুধু একবার চোখ তুলে ইমনের দিকে তাকিয়েছিলাম।
তাতেই ইমন বলে উঠলো,
” আদৃতা, আমার মনে হয় বাহিরে যাওয়া উচিৎ। তুমি বোধ হয় আনইজি ফিল করছো। ”
ইমন দাঁড়িয়ে পড়লো।
আমি চোখ মুখ কুচকে কিছু একটা বলতে চাইলাম। অস্ফুট সুরে বললাম,
” ইমন, শোন..”
কোন ভ্রুক্ষেপ না করে হন্তদন্ত হয়ে রুমের বাহিরে চলে গেলো। কিছুক্ষণ বাহিরে তাকিয়ে আমি ডাক্তারের দিকে মনোযোগ দিলাম।
উনি ভাবলেশহীনভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে মুচকি হেসে বললেন,
” হয় হয়, যেখানো ভালোবাসাটা বেশি সেখানেও রাগটাও বেশি৷ ব্যাপার না।”
আমিও ফিচেল হেসে সব কিছু খুলে বললাম। উনি কিছু টেস্ট দিলেন আর এক্ষুনি করাতে বললেন। ইউরিন আর ব্লাড টেস্ট করানোর পর আবার ইউ এস জি করাতে হবে। মহাবিরক্ত লাগছিলো। সবচেয়ে কষ্ট লাগছিলো ইমনের রামগরুড়ের ছানার মত মুখটা দেখে। কেন যে এতো রাগ করে মানুষটা!
ইউ এস জি করার পর ডাক্তার ইমনকে ডেকে বললেন,
” ডক্তর ইমন, আপনারতো খুব বিপদ। আমিতো খুবই চিন্তিত । ”
আমি চমকে উঠে ডাক্তারের দিকে তাকাই।
” মানে, কোন সমস্যা?”
ইমন শুকনো মুখে ডাক্তারের দিকে তাকায়।
” সমস্যাতো বটেই। কিন্তু ইমন আপনি যে কি করে সব দিক সামলাবেন সেটাই বুঝতেছিনা।”
ডাক্তার ফারহানা মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো।
” কি হয়েছে প্লিজ আমাকে বলুন। খুব খারাপ কিছু
কি?”
” তা একটু, সমস্যা আছেই।”
” আচ্ছা, আপনি কি আদৌ বলবেন? দেখতে পাচ্ছেন আমি এসির ভেতরেও ঘামতেছি। প্লিজ হেয়ালি না করে বলুনতো। ”
ইমন একদম উচ্চস্বরে কথাটা বলেই দাড়িয়ে পড়লো।
” কুল, বি কুল। এইরম সময়ে আপনার এতো উত্তেজনা আপনার স্ত্রী সন্তানের জন্য মারাত্নক ক্ষতিকর।”
” মানে কি?. আমাদের বেবি হয়নি বলেছিতো একবার।” ইমন থমথমে গলায় বললো।
আমি বুঝতে পারছিলাম না উনি এরকম হেয়ালি কেন করছেন। ভয় কান্নায় আমার গলাটা ধরে আসতে লাগলো।
” হুম, তাতে কি। হয়নি হবে। ” ডাক্তার ফারহানা ইমনের সামনে এসে দাড়ালো।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
” কংগ্রাচুলেশনস মিঃ এন্ড মিসেস ইমন। আপনাদের দুজনকে একি সুতোয় বাধতে এবার আরেকজন আসছে।”
” মানে?”
ইমন বেকুবের মত প্রশ্ন করলো।
” আরে বুদ্ধু ইমন, আপনি বাবা হচ্ছেন।”
বলেই ডাক্তার ফারহানার কি হাসি। হাসতে হাসতে বললো কালকে এসে রিপোর্টগুলো ডাক্তার তাসফিয়াকে দেখিয়ে যাবেন।
ইমন হাস্যোজ্জ্বল মুখে আমার দিকে তাকায়।
” চলুন, বাবুর মা বাবু।”
আমি ৩২ পাটি দাত বের করে ওর দিকে তাকালাম।
তারপর ও আমার হাত ধরে নিচে নামলো।
” কিগো গাড়িতে উঠতে পারবেন? নাকি কোলে করে উঠাবো?”
” না, আমি উঠতে পারি । এখন আর গরু মেরে জুতা দান করতে হবেনা।”
আমি কপট রাগ দেখিয়ে ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটটায় বসলাম।
ও গাড়িতে উঠেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
“আমি না সত্যিই একটা বুদ্ধু। তুমিতো আমাকে একসপ্তাহ আগেই বলেছিলে পিরিয়ড মিসিং এর কথাটা। আমি বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম। আমি বুঝতেই পারিনি এরকম একটা সারপ্রাইজ পাবো। এক্সট্রেমলি সরি বউ।”
” হইছে ছাড়৷ এতো ক্ষন আমার উপর যত যত রাগ দেখালেন এইগুলার কি হবে?”
” আগে বল তুমি কেন আমাকে জানাওনি তোমার শরীর খারাপ। ”
” না জানাবো নাতো৷ জানালে তো তুমি আগেই গেস করে নিতে এটা আমার ধারনা ছিলো। সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম অন্যভাবে। কিন্তু তুমি যে ঘোড়ার ডিম কিছুই বুঝতে না এটা এতোক্ষনে বুঝলাম। তুমি আমার কচুর ডাক্তার”.
” হ্যা আমি তোমার কচুর ডাক্তার এবার খুশি৷ তারমানে তুমি আগে থেকেই জানতে যে কনসিভ করেছো?”
” নাহ, সে কি করে। মাত্রইতো জানলাম।” বলেই ফ্যা ফ্যা করে হাসতে লাগলাম।
” মাত্র জানলে নাহ, আমার সাথে ইয়ার্কি মারো৷ এত চালাক বউ মানুষের হয় কেন?”
” কারণ তুমি বেকুব আর রামগরুড়ের ছানার মত অলটাইম মুখ করে রাখো তাই এটা তোমার শাস্তি।”
” হুম, আগে বাসায় যাই। তারপর দেখি কে কাকে শাস্তি দেয়।”.
” আচ্ছা, আমরা কি যাবো নাকি ঝগড়া করবো। ”
ইমন আমার কপালে চুমো খেয়ে বললো,
” নাগো, আমি আমার বাবুর মা বাবুর সাথে মোটেও ঝগড়া করতে চাইনা। লাভ ইউ বাবুসোনা।”
ইমন আমার চিবুকে আবার চুমো একে দিতে লাগলো।
অজান্তেই আমার হাত ওর গলায় চলে গেলো। এরপর শক্ত করে গলা জড়িয়ে ধরলাম।
” উমম এখন না গলা ছাড় লক্ষীটি । আগে বাসায় যাই৷ তারপর… ”
আমি হাত ছাড়িয়ে লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। আমি জানি ও ইচ্ছে করে আমাকে লজ্জায় ফেলেছে। অবশ্য এতে আমারি দোষ, আজোঁ প্রথমদিনের মতই ওর কার্যকলাপে লজ্জা পাই।
#পার্ট ০৮
বেইজমেন্ট এ গাড়ি পার্ক করেই ইমন দুষ্টু হাসিতে আমাকে ঘায়েল করে একদম কোলে তুলে নেয়। আমি মনে করার চেষ্টা করি, বিয়ের পরে ও আমাকে ঠিক কতবার কোলে নিয়েছে? আমার কিচ্ছু চোখে ভাসছেনা। ভালোলাগার আবেশটা এতোটাই আচ্ছন্ন করে আছে যে আমি অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সমস্তটাই ভুলতে বসেছি। মোহাগ্রস্তের মত অজান্তেই গলায় হাত চলে যায়। আস্তে আস্তে করে সহসাই নীল চোখে ডুবতে থাকি। লিফটের কাছাকাছি আসতেই ও বলে উঠলো।
” এত খুশি হওয়ার কিছু নাই।আমি কিন্তু তোমাকে নয়, বাবুকে কোলে নিয়েছি।”
আমি কপট রাগ দেখিয়ে বললাম,” নামাও আর আদিখ্যেতা করতে হবে না।”
আমি একরকম জোর করেই নেমে গেলাম।
” আদি, এভাবে কেউ নামে, যেকোন সময় পড়ে যেতে পারতে।”
কথা-কাটাকাটি না করে লিফটে উঠে গেলাম। মেইন দরজার কাছে আসতেই বাসায় হট্টগোলের আওয়াজ আসলো। বোধ হয় কেউ এসেছে। আর দরজাটাও খোলা ছিলো। ঢুকেই দেখি মা বাবা এসেছে। দুই বেয়াই বেয়াইন মিলে বেশ মজাতেই আড্ডাবাজি চলছে। আর এরা এতোটাই হাসি ঠাট্টাতেই ব্যাস্ত যে আমারের দুজনকে নোটিশ করতেও ভুলে গেলো।
আমারতো নিজের বাসায় নিজেকেই এলিয়েন মনে হচ্ছে।
ইমন হালকা একটু কাশি দিলো মনোযোগ আকর্ষন করার জন্য। সবাই পিছনে ফিরলেও এমন একটা এক্সপ্রেশন দিলো যেন এটা একটা স্বাভাবিক বিষয়।
” আমরা মনে হয় ভুল করে ভুল সময় ঢুকে পড়লাম।”
ইমন কথাটা বলেই সামনে থাকা সবার দিকে তাকালো।
” তোদেরতো আরো আগে আসার কথা ছিলো, এতো লেইট হলো।” মামনী কথা থামিয়ে বললো।
মাঝে আবার আমিই কথা বললাম, মা বাবার দিকে তাকিয়ে।
” তোমরা কতোক্ষন আসছো? কই আমিতো কিছু জানিনা।”
” আসছি অনেকক্ষন। আচ্ছা তোমরা বরং রুমে যাও ফ্রেস হও।”
আমি মা’র কথায় কিছুটা দুঃখিত বোধ করলাম। আমি ভেবেছিলাম আমাকে না পেয়ে বোধ হয় উনারা খুবই দুঃখিত বোধ করবেন। কিন্তু না আমি ভুল। উনারা আমাদের অনুপস্থিতে বেশ মজাতেই আছেন। আমি চুপ করে গেলাম।
” মামনী, কেন দেরি হলো ওসব পরে বলছি। কিন্তু তোমরা যেভাবে গল্প গুজবে মশগুল আছো বাসায় চোর ঢুকে গেলেওতো কিচ্ছুটি টের পেতে না।”
“কি আর করবো? বুড়ো মানুষ, এতো কি খেয়াল থাকে। বাসায় নাতিপুতি কিছুতো তোমরা আনবেই না। মন টন কি সবসময় ভালো থাকে। থাকলে ওরাই বলতো, দাদাভাই দরজা খোলা, লাগাও। উফ্ কি ফিলিংস ভাবতে পারছো। ”
শ্বশুর মশাই একগাল হেসে কথাকথাটা বললো। আমারতো এখন ভয় হচ্ছে ইমনটা না জানি সবার সামনে এখন খবরটা দিয়ে দেয়। আমিতো লজ্জায় শেষ হয়ে যাবো। একবার ওর মুখভঙ্গি বুঝার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কিছুই বোধগম্য হচ্ছেনা। মানুষের মন পড়ার কোন যন্ত্র থাকলে অবশ্যই আমি ওটা এক্ষুণি এপ্লাই করতাম।
” বাবা, তোমার স্বপ্নটা যে পূরণ হতে যাচ্ছে এবার। ”
ইমন মিনমিন করে কথাটা বললেও আজকে বাবা ঠিকি শুনে ফেললো।
” কি বললি? আবার বলতো?”
বলে বাবা একরকম দাঁড়িয়ে পড়লো।
” কি আবার, তোমরা দাদা-দাদি হচ্ছো।
নানা-নানি হচ্ছো আমার আর কি।”
কথাটা বলেই ইমন ঠোট উল্টালো।
সবাই একদম খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। শুধু মাই আমার দিকে সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
” আদৃতা, সত্যিইতো। ইমন কি বলছে?”
আমি লজ্জায় কাচুমাচু করছিলাম দেখে ইমনই বললো,
” হ্যাঁ, কালকে রিপোর্ট দিবে। তবে কনফার্ম। ”
মা আমার দিকে হাত বাড়িয়ে বললো,” চল মা রুমে চল। অনেক ধকল গেলোতো, যা ফ্রেস হ।”
” ইমনের মা, যাও মিষ্টি নিয়াসো। এমন খবর শুনে কি মিষ্টি মুখ না করে থাকা যায়। ”
শ্বশুর মশাই অতিউৎসাহে মাকে বললেন।
” তাতো বটেই। ভাবি আজকে কি খুশির দিনেই না বাসায় আসলাম। কি কো ইন্সিডেন্স!”
বাবা বললো।
” হ্যাঁ, যাচ্ছি। ইমন যা তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে এসো। এখনো কেউ ডিনার করেনি তোদের জন্যই বসে ছিলো। খাবিতো।”
ইমন মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।
মা আমাকে হিড়হিড় করে টানতে টানতে রুমে নিয়াসে।
আমি ওয়াশরুমে যাবো কিন্তু তার আগেই মা উদ্ভুত সুরে নাকি কান্না কাদতে লাগলো।
আমি অবাক না হয়ে পাড়লাম না।
” মা, অসময়ে এমন করে কান্না জুড়লে কেন?”
” অসময়, না। তুই কি করে বাচ্চা পালবি? বল তোর কত কষ্ট হবে এসব ভেবেইতো আমার গায়ে কাটা দিচ্ছে। আমার ছোট্ট মেয়েটার নাকি বাচ্চা হবে। এ কি করে সম্ভব। কতইবা বয়স হইছে। এই অকামটা না করলে চলছিলো না।”
মা’র কথা শুনে আমার চরম মেজাজ খারাপ হচ্ছে। মনে হচ্ছে পাতালে ঢুকে যাই।
“উফ্, মা কি সব বলছো। আমার যথেষ্ট বয়স হয়েছে। এইসব কান্না বন্ধ করোতো। কই খুশি হবা তানা তার ছোট্ট মেয়ে ছোট্ট মেয়ে। মেয়ে যে কবে বড় হবে তোমার চোখে স্বয়ং আল্লাহপাকই জানেন।”
” বুঝবি বুঝবি, মায়ের কত জ্বালা। কয়দিন পর যখন হবে বুঝবি..”
” আচ্ছা, বুঝার চেষ্টা করবো।”
আমি ইমনের পায়ের শব্দে পেছনে তাকাই। ওর হাতে প্লেটে মিষ্টি। আমি প্লেট থেকে মিষ্টি নিয়ে মায়ের হা করা মুখে পুরো মিষ্টিটাই একেবারে ঢুকিয়ে দেই।
” নাও মিষ্টি খেয়ে, একটু মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতো।”
মা অসহায় চোখে আমার আর ইমনের দিকে তাকায়। গাল ফুলিয়ে মিষ্টি খাওয়ার দৃশ্য দেখতে আমার বেশ লাগছে। ইমন অবশ্য বেকুবের মতই তাকিয়ে আছে।
আমি ওয়াশরুম থেকে আসার পর ইমনকে হাত পা ছাড়িয়ে বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখি। মা বোধ হয় অনেক আগেই চলে গেছে।
” কিগো যাও ফ্রেস হয়ে আসো।”
ইমন শোয়া থেকে উঠে আমার সামনে দাঁড়ায়।
” জানো, আমি না তোমাকে মিষ্টি খাইতে দিতে চাইছিলাম। কিন্তু তুমি..”
আমি ওকে থামিয়ে বললাম,
” কিন্তু আমি মিষ্টি খাই না। যাও যাও ফ্রেস হয়ে আসো।”
ইমন কথা বাড়ালো না। হ্যাঁ সরাসরি ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।
ফ্রেস হয়ে এসে যখন আমার হাতের পীরিচে মিষ্টি দেখতে পায়, ঘরকাপা হাসিতে পুরো ঘর আচ্ছন্ন হয়ে যায়।
আমার মুখে মিষ্টি পুরে দিয়ে নিজেও আমার দিকে মুখ ঝুঁকিয়ে আনে। ও ঠিক কি করতে চাইছে আমি তখনো বুঝতে পারিনি। শরীরের কাপুনিতে পীরিচ পড়ে যাওয়ার উপক্রম হতেই আমি সর্বশক্তি দিয়ে ওকে সরিয়ে দিলাম।
এখনো শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগলো।
” কি হলো?”
” তুমি কি করলে এটা?”
” কি আবার, মিষ্টি মুখ।”
” নিজের মুখে নিয়ে নিজেই খাওনা। আমাকে খেতে দিয়ে নিজেই পুরোটা খেয়ে নিলে।”
” হুম, তুমিতো খাওনা তাই আরকি। একঢিলে দুই পাখি মারলাম। এই ধর আমার মিষ্টি খাওয়াও হলো তোমাকে চুমোও খাওয়া হলো। মিষ্টি মিষ্টি চুমো। এমন সময় কেউ ধাক্কা দেয়।”
কথাটা বলেই ইমন একহাতে আমাকে কাছে টেনে নেয়।
” ইউ আর এ্যা গ্রেট অসভ্য। যাও ছাড়ো। ”
” আহ্ কি কম্পলিমেন্ট। মেয়েদের মুখ থেকে অসভ্য শুনতে হলে কপাল লাগে। এইটা শুনলেইতো মাথায় অর্ধেক রোমান্স চড়ে বসে।”
এতোক্ষণে ও আমার কোমড় জড়িয়ে ধরেছে।
” ছাড়ো, এক্ষুনি খেতে ডাকবে।”
চোখ মুখ কুচকে কথাটা বললাম।
” উঁহু, একদম ছাড়তে ইচ্ছে করছে না।”
ইমন আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানার দিকে এগুতে থাকে।
” নামাও, বাবু তোমার কোলে এখন একদম উঠতে চায়নি।”
” সে জানি, বাবুর মাকে আগে আদর করে নেই। তারপর বাবুর কথা শুনবো । ”
আমাকে বিছানায় শুইয়ে দিতে দিতে ইমন কথাটা বললো।
” এই প্লিজ, মা বাবা চলে যাবে একটু পরেই। ইশ এখন ছাড়ো।”
” মিষ্টি চুমো খাওয়ার সময় ধাক্কা দিয়েছো আর অসভ্য বলে মাথা বিগড়ে দিয়েছো। ইট’স টাইম ফর অসভ্যতামি। ডোন্ট ডিস্টার্ব।”
কথাটা বলেই ইমন অশান্ত অবাধ্য চুমোতে ঠোট, চিবুকের ভাজ, গলায় ভরিয়ে দিতে লাগলো।
আস্তে আস্তে আমিও ভালোলাগার আবেশে ওকে খামচে ধরে থাকলাম।
চলবে…