তোর আসক্তি পাগল করেছে আমায় ২ পর্ব-১৭+১৮

0
707

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
১৭.
ড্রইং রুমে বাচ্চাদের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে সাঁঝ আর তাকে ঘিরে আছে বাকিগুলো তাদের দেখে মনে হচ্ছে তারা খুবই আনন্দিত হয়েছে সাঁঝকে পেয়ে তারা সাঁঝকে ঘিরে চিৎকার চেঁচামেচি করতে আছে ওখানে বাকিরাও আছে এমনকি বেলার নানিমাও আছেন। উপরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিচের দৃশ্য প্রত্যক্ষ করতে করতে বেলার চোখ মুখ অবাক আর বিস্ময়ের চরম সীমায় পৌঁছে হয়েছে। বেলার এখনও বোধগম্য হচ্ছেনা যে আসলেই নিচে হচ্ছেটা কি সাথে সাঁঝ এখানে কি করছে আর বাচ্চাগুলোকে দেখে মনে হচ্ছে তারা আগের থেকে সাঁঝের সাথে পরিচিত খুব ভালোভাবে কিন্তু কি করে? আর তার নানিমা তিনিই বা কি জানেন কতটুকু জানেন? ব্যবহার দেখেই তো মনে হচ্ছে যেনো খুশি ধরেনা যেনো জামাই এসেছে কিন্তু এটা কি করে সম্ভব সেটাই বুঝতে পারছেনা বেলা তার মাথায় কিছু আসছেনা সে ভ্রু কুঁচকে একের পর এক ঘটনা গুলো দেখে যাচ্ছে। বেলা সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামতে নামে দেখছে সবার কান্ড গুলো।

-“কি হচ্ছে এখানে? আর আপনি এখানে কি করছেন? বেলা গম্ভীর ভাবে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” বাচ্চারা এখন গিয়ে তোমরা ঘুমপার্টি করো কাল সকালে আবার মজা হবে ঠিক আছে? সাঁঝ সবার উদ্দেশে বলে ওঠে।

-“ওকে জিজু ভাইয়া। সবাই একসাথে চিৎকার করে বলে ওঠে।

বাচ্চাদের বলা”জিজু ভাইয়া”ডাক শুনে বেলা চমকে যায় অদ্ভূত অনুভূতি হতে থাকে, বেলা ভ্রু কুঁচকে একবার সাঁঝ আর একবার বাচ্চাদের চলে যাওয়া দেখতে থাকে তার মনে এখন একটাই প্রশ্ন তাহলে তার আর সাঁঝের ব্যাপারে কি সবাই জানে এমনকি বাচ্চারাও কিন্তু কি করে জানে আর কখন কিভাবে জানলো? ওদের কি তাহলে সাঁঝ বলেছে কিন্তু এটা কি সম্ভব? বেলার মনে এক এক করে প্রশ্ন উদয় হতে থাকে তবে সেইসব এখন সাইটে রেখে সাঁঝের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে তাকায় তবে বেলার এই দৃষ্টি উপেক্ষা করে সাঁঝ বেলার নানিমার সাথে গল্পে মেতে উঠেছে আর বেলার নানিমা মায়া চৌধুরীও একইরকম গল্পে মেতে রয়েছে সাঁঝের সাথে সে যে ওখানে দাঁড়িয়ে আছে সেটা কেউ দেখছে না বলা ভালো কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না। সবার এমন ব্যবহার দেখে বেলা বেজায় চটে যায় রাগে তার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে ।

-“কি হচ্ছে এখানে? আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি হচ্ছে টা কি এখানে? আর আপনি এখানে কেনো এসেছেন? বেলা এবার চিৎকার করে বলে ওঠে।

এতক্ষণ সাঁঝ মায়া চৌধুরীর সাথে গল্পে মশগুল থাকলেও বেলার এমন চিৎকারে থেমে গেছে সাঁঝ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে বাকিরাও ওখানে আছে তারাও এতক্ষন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা শুনছিল তবে বেলার চিৎকারে চমকে যায়। মায়া চৌধুরী তার নাতনীর দিকে একবার তাকিয়ে দেখে কেমন রেগে আগুন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

-“সুরাজ যাও বাবা নাতজামাইয়ের ব্যাগ টা উপরে রেখে এসো। মায়া চৌধুরী বেলার কথার উত্তর না দিয়ে বলে ওঠে।

-” ব্যাগ উপরে রেখে আসবে মানে? আর কে নাতজামাই? কি হচ্ছে এখানে আমি কিছু জানতে চাইছি। বেলা ক্ষিপ্ত হয়ে বলে ওঠে।

বেলার নানীমা ইশারা করতেই সুরাজ বাবু সাঁঝের সাথে করে আনা ছোটো খাটো একটা লাগেজ টেনে উপরে বেলার রুমে নিয়ে চলে যায় বেলার কথার উপেক্ষা করে আর সাঁঝ চুপচাপ বেলার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বেলার রাগী মুখটা দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সে। বেলা শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে যাচ্ছে তার কথার কেউ কোনো উত্তর দিচ্ছেনা সবাই সাঁঝকে নিয়ে মেতে আছে এটা দেখেই তার রাগ আরো কয়েক ধাপ বেড়ে গেছে সে শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার নানিমার করা কাজ গুলো দেখে যাচ্ছে।

-“আসুরা মা তুই গিয়ে সাঁঝের খাবার টা উপরে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা কর। মায়া চৌধুরী বলে ওঠে।

-” জামাই যাও উপরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও অনেক রাত হয়েছে যাও ঘরে যাও বাবা। মায়া চৌধুরী সাঁঝের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন।

-“ওকে নানিমা তুমিও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো আর একদম চিন্তা করবে। মুচকি হেসে বলে ওঠে।

মায়া চৌধুরীকে নিয়ে একজন পরিচারিকা রুমের দিকে পা বাড়ায় সাঁঝ একবার বেলার দিকে তাকায় দেখে এখনও কেমন রেগে তাকিয়ে আছে এখন এখানে কেউ নেই সবাই সবার কাজে চলে গেছে সাঁঝ বেলার দিকে এগিয়ে গিয়ে বেলা কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটানে বেলাকে কোলে তুলে নিয়ে উপরের দিকে পা বাড়ায়। সাঁঝের কাজে প্রথম হতভম্ব হয়ে গেলেও তারপরেই হাত-পা ছোড়াছুড়ি শুরু করে কিল ঘুষিও ইতি মধ্যে বসিয়ে দিয়েছে সাঁঝ বেলাকে শান্ত করার জন্যে বেলাকে চেপে কিছুটা উঁচু করে তুলে নিয়ে নিজের মাথা ঝুঁকিয়ে বেলার ওষ্ঠদ্বয়ে ওষ্ঠ মিলিয়ে দেয় সাথে সাথে এক নিমেষে বেলা শান্ত একদম পাথর হয়ে যায় বেলার এমন অবস্থা দেখে সাঁঝ মৃদু হাসে। তবে সে এখনও বেলার অধর থেকে সরে যায়নি ছুয়ে রেখে রুমের মধ্যে এসে বিছানায় বসে সরে আসে সাঁঝ। বিছানায় বসে বেলা চোখ খুলে সাঁঝের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে বেলার এমন দৃষ্টি দেখে সাঁঝ মিষ্টি করে হেসে আবারো টুপ করে একটা চুমু বসিয়ে দেয়।

-“চুপচাপ শান্ত হয়ে থাকো তোমার সব প্রশ্নের উত্তর তুমি পেয়ে যাবে সুইটহার্ট। সাঁঝ নিজের শরীর থেকে কোট আলাদা করতে করতে বলে ওঠে।

আর বেলা চুপচাপ সবটা দেখে যাচ্ছে চোখে সেই রাগ টা এখনও বিদ্যমান হয়ে রয়েছে। এতক্ষণ এর ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো মনে করতেই তার মাথায় শুধু একটাই প্রশ্ন আসছে এইসব কি করে জানলো আর কিভাবে সাঁঝ কি করতে চাইছে। সাঁঝ নিজের শার্ট খুলে শরীর থেকে আলাদা করে বেলার উপর ছুড়ে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়, বেলা রাগে শার্ট ছুড়ে নিচে ফেলে দিতে গেলে কানে আসে সাঁঝের কথা।

-“সুইটহার্ট আমার লাগেজ থেকে আমার ড্রেস টা একটু বের করে দাও তো। সাঁঝ ভিতর থেকে বলে ওঠে।

বেলা শার্ট ফেলে দিতে গিয়েও দেয়না শার্ট থেকে সাঁঝের শরীরে ঘ্রাণ আসছে যেটা বরাবরই তাকে বিমোহিত করে তোলে, বেলা বিছানায় থেকে উঠে গিয়ে রুমের এক কোণে থাকা লন্ড্রি বিনে রেখে দেয় সাথে সাঁঝের লাগেজ থেকে তার জন্যে ড্রেস বের করে রাখে তবে সে অবাক হয় সাঁঝের লাগেজ খুলতে সেখানে তার জামা কাপড় ছাড়াও তার সমস্ত দরকারী জিনিষ পত্র আছে এগুলো দেখেই বেলার মনে প্রশ্ন জেগে ওঠে তাহলে কি সাঁঝ এখন এখানেই থাকবে বাড়ি থেকে চলে এসেছে কিন্তু কেনো? কি হয়েছে? আর এখানে সবার সাথে তার কিভাবে পরিচিত হলো কিভাবে আর তাদের ব্যাপারেও সবাই জানলো কিভাবে সেটাই মাথায় ঘুরছে তবে এইসব কিছুর প্রশ্ন জানতে হলে তাকে এখন শান্ত হয়ে থাকতে হবে। বেলা ওয়াশরুমে নক করে সাঁঝের ড্রেস ভিতরে দিয়ে দেয়।

এরই মধ্যে রুমে প্রবেশ করে কেউ বেলা মাথা ঘুরিয়ে দেখে তার মামনি আসুরা খাবার নিয়ে চলে এসেছে। নিচের ঘটনা দেখেই বেলা বুঝতে পারে যে সবাই সবকিছু জানে তাই খাবার রেখে চলে যেতে নিলেই বেলা আটকে দেয়।

-“মামনি তোমরা সবাই উনাকে কিভাবে চেনো? কবে থেকে পরিচয় তোমাদের সাথে। বেলা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” তুমি গোয়া যাওয়ার পরের দিনই জামাই বাবা এখানে এসেছিলেন আর তারপরেই এখানে প্রতিসপ্তাহে এসে এখানে থেকে কাটিয়ে যান সবার সাথে। আসুরা বানু হেসে বলে ওঠে চলে যান।

বেলা তার মামনির কথা শুনে অবাক গিয়ে যায় তবে তার যা উত্তর জানার ছিল সে পেয়ে গেছে এবার বাকি গুলো সাঁঝের থেকে জানতে হবে। তার চলে যাওয়ার পর মানে পাঁচ বছর আগে থেকে এদের সাথে সম্পর্ক সাঁঝের, পাঁচটা বছর তার সাথে কোনোরূপ সম্পর্ক রাখিনি তাকে দেখেই চিনতে পারিনি এমন ভাব তাহলে তার সাথে জড়িত সবার সাথে কেন সাঁঝের সম্পর্ক রাখলো বেলা বুঝতে পারে তার সাথে যোগাযোগ না থাকলে সে বাকি সবার সাথে সুসম্পর্কে ছিল তাহলে তার সাথে কেনো সাঁঝ তাদের জানিয়েছে তাদের বিয়ের কথা তাহলে এত নাটকের মানে কি? কি আছে এই সব কিছুর পিছনে কি রহস্য লুকিয়ে আছে তাকে আজই সব কিছু জানতে হবে।

চলবে….?

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
১৮.
বারান্দায় আলো আধারির মধ্যে বেলাকে কোলে নিয়ে বসে আছে সাঁঝ। মৃদু হাওয়ায় বেলার চুল উড়ে এসে সাঁঝের মুখের উপরে আছড়ে এতে তার মনে কোনো রকম বিরক্তি নেই বরং সে বেশ উপভোগ করছে এই মুহূর্তটাকে। বেলাকে কোলে বসিয়ে জড়িয়ে রেখেই ঘাড়ের এক পাশে মুখ গুঁজে রেখেছে এতে সে দুটোই অনুভূতি একসাথে অনুভব করতে পারবে এক বেলার শরীরের বিমোহিত করে দেওয়া ঘ্রাণ সাথে চুলের ঘ্রাণ আর তার মুখের আছড়ে পড়া পাহাড়ের গায়ে জলের আছড়ে পড়ার মত। বেলা কোনো কথা না বলে পাথরের মত করে চুপ করে সাঁঝের কোলে বসে আছে তার মুখে কোনো বিকার নেই চোখ দুটো অদূরে অন্ধকারে মধ্যে নিবন্ধ করে রেখেছে। তার মনের ভিতরে যে প্রশ্নের ঝড় উঠেছে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হাতড়িয়ে যাচ্ছে কিন্তু কোনো কুল কিনারা পাচ্ছেনা শুধু একের পর এক মিলিয়ে যাচ্ছে সাঁঝের সাথে হওয়া কয়েকদিন এর সব ঘটনা একদম ঠিক প্যাজেলের মত করে।

আর আজকের ঘটে যাওয়া ঘটনায় বেলা আরো বেশি করে ঘেঁটে গেছে সাঁঝকে এখানে দেখা থেকে শুরু করে সবার ব্যবহার আর বিশেষ করে কিছুক্ষণ আগেই তার মামনি খাওয়ার দিয়ে যাওয়ার সময়ে যে কথা গুলো বলে গেলো সাঁঝ তার চলে যাওয়ার পরেরদিন থেকেই এখানে প্রতি সপ্তাহে এখানে থেকে যায় কিন্তু কেনো? বেলা সাঁঝকে জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলো সাঁঝ ওয়াশরুম থেকে ফেরার পর কিন্তু বেলাকে সেই মুহূর্তে একটা কথা বলতে না দিয়ে বেলার হাত টেনে পাশে বসিয়ে খাবারের প্লেট নিয়ে নিজে খেয়েছে সাথে তার মুখেও জোর করে দু তিনবার খাইয়ে দিয়েছে আর তারপরেই তাকে কোলে তুলে নিয়ে এই বারান্দায় এসে বসে সেই থেকে এখনও দুইজনের মধ্যে কোনো কথা হয়নি সাঁঝ বেলার মধ্যে মগ্ন হয়ে আছে আর বেলা দূরের দিকে তাকিয়ে বসে আছে পাথরের মত হয়ে।

-“আপনি এখানে কি করছেন? বেলা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাদের মধ্যেকার নীরবতা কাটিয়ে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

তবে বেলা তাদের মধ্যেকার নীরবতা কাটিয়ে জিজ্ঞেস করলেও সাঁঝ এখনও সেই অবস্থায় চুপ করে রয়েছে বেলার প্রশ্নের কোনও উত্তর দেয়নি বরং বেলার প্রশ্ন শুনে সে আরো একটুও শক্ত করে তার সাথে মিশিয়ে জড়িয়ে ধরে বেলার ঘাড়ে নিজের অধরের স্পর্শ বুলিয়ে দিতে থাকে সাঁঝের এই করতেই বেলা থেকে থেকে কেঁপে ওঠে শরীরের অনুরণন সরে হয় উত্তেজনায়, বেলা তার মধ্যে অনুভূত হওয়া অনুভূতি গুলোকে সাইটে রেখে নিজেকে সামলে শক্ত করে স্বাভাবিকের থেকে গম্ভীর হয়ে ওঠে।

-“আমার সাথে জড়িত মানুষের সাথে সম্পর্ক রাখার মানে কি যেখানে আমার সাথে সব কিছুই একটা মিথ্যের উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে? কেনো এইসব প্রহসন আরো কি কিছু বাকি আছে?বেলা গম্ভীর থেকে গম্ভীর ভাবে বলে ওঠে।

বেলার করা প্রশ্ন শুনেই সাঁঝের ঠোঁট থমকে যায় বেলার ঘাড়ে এক জায়গায় গাড়ো হয়ে চেপে বসে থাকে, সাঁঝের বুঝতে অসুবিধা হয়না বেলার মধ্যে হতে থাকে তুফানে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া।

-“কে বলেছে তোমার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক ছিলোনা! কে বলেছে আমি তোমার থেকে দূরে ছিলাম! আর কে বললো আমি সব কিছু প্রহসন করছি! আর সব কিছু মিথ্যার উপর ভিত্তি করে মানেকি! আমাদের বিয়েটা কি তুমি মিথ্যা বলতে পারো, তুমি কি এটা নিজে জোর দিয়ে বলতে পারবে যে তুমি নিজে এই বিয়েটা মানোনা, এই আমাকে মানোনা! বলো বলতে পারবে আছে তোমার কাছে এই প্রশ্নের উত্তর? সাঁঝ শান্ত শীতল কন্ঠস্বরে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

সাঁঝের এমন শান্ত শীতল কন্ঠস্বর শুনে বেলা কেঁপে ওঠে, সাঁঝের করা প্রত্যেকটা প্রশ্নই তার ভিতরে নাড়িয়ে দিয়েছে। সাঁঝের প্রতিটা কথার ভার এত ছিল যে বেলার এখন দম বন্ধ হয়ে আসছে সত্যিতো সে নিজেই কখনই এই বিয়ে অস্বীকার করতে পারবে না আর না কখনো করেছে সে যতো মুখে বলুক সব কিছু তারপরেও সে মন থেকে এই বিয়েটা মানে আর সাঁঝ তাঁকে কিভাবে সে অস্বীকার করবে এই মানুষটা কে অস্বীকার করা মানেই নিজেকে অস্বীকার করা যে মানুষটার থেকে দূরে থেকেও যাকে সব সময়ে নিজের মনে রেখেছিলো যাকে এক সেকেন্ডের জন্যেও নিজের মন থেকে দূরে সরাতে পারিনি সেখানে কিভাবে অস্বীকার করবে সে এই মানুষটার থেকে দূরে ছিল ভুলে থাকার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু পারেনি সে। এখনও পর্যন্ত এই মানুষ তার কাছে আসলেই সে দুর্বল হয়ে পড়ে তার মধ্যে দেখা যায় মিশ্র অনুভূতি সেখানে অস্বীকার করার প্রশ্নই তো আসেনা তবে হ্যাঁ এগুলোর বাইরে যা আছে সেটা রাগ অভিমানের স্তূপ জমে আছে বেলার মনে সাঁঝের জন্যে তবে কখনো ঘৃণা করিনি আর না অস্বীকার।

সাঁঝ বেলার চুপ থাকা দেখেই বুঝতে পারে তার প্রশ্ন শুনেই বেলার বিশাল তুফান চলছে মেয়েটা নিজেকেই প্রশ্ন বিদ্ধ করে যাচ্ছে তাই সাঁঝ বেলাকে গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে।

-“আমি জানি তোমার মনে অনেক প্রশ্নের ঝড় উঠেছে তবে সব উত্তর তুমি পাবে। তবে এটা জেনে রাখো তোমার আমার বিয়ে কখনই মিথ্যে ছিলোনা আমি মন থেকেই তোমাকে বিয়ে করেছিলাম নিজের স্ত্রী মানি তখন আমাদের ধর্ম মতে বিয়ে হয়েছিলো তবে তোমার বয়স তাছাড়াও এমন কিছু কারণ ছিলো যার আমাদের রেজিস্ট্রেশন হয়নি আমি শুধু অপেক্ষায় ছিলাম সঠিক সময়ের আর এতদিন আমি কখনই তোমাকে নিজের চোখের আড়াল করিনি দূর থেকেই আমি তোমাকে চোখে চোখে রেখেছিলাম তোমার প্রত্যেকটা গতিবিধির উপরে আমার নজর ছিল। তোমার মনে হতে পারে আমি তোমার থেকে দূরে ছিলাম তোমাকে না চেনার ভান করতাম কিন্তু দেখতে গেলে আমি পাঁচটা বছর তোমার থেকেও এক বিন্দুর জন্যেও দূরে যায়নি হতে পারে সশরীরে তোমার সাথে ছিলাম না কিন্তু প্রতি মুহূর্তে তুমি নজরবন্দিতে ছিলে তোমার প্রত্যেকটা বিষয়ের উপরে আমার নজর থাকতো।
আমি তোমাকে শুধু দূরে রেখেছিলাম কিন্তু তোমাকে দৃষ্টির বাইরে করিনি আর না মনের বাইরে করেছিলাম। তুমি গোয়া যাওয়ার পরই আমি এখানে আসি নিজেই নানিমার সাথে আমাদের বিয়ের বিষয়ে জানিয়ে দেই তোমার অনুপস্থিতে আমি তোমার হয়ে সমস্তটা খেয়াল রেখেছি কারণ আমি কখনই চায়নি যে তোমার ভালোবাসার মানুষ তোমার কাছের মানুষ গুলো কষ্ট পাক তোমার জন্যে কোনো অসুবিধায় পড়ুক আর তাছাড়াও ওরা তোমার মানে আমারও কাছের তাই ওদের সাথে বাকি সময়টা কাটিয়ে যেতাম আর নানিমার খেয়াল রাখতাম যাতে তোমার অনুপস্থিতর জন্যে নানিমা কষ্ট না পাক।
আমি কখনই তোমাকে নিয়ে প্রহসন করিনি করার প্রশ্নই আসেনা যাকে হৃদয়ে জায়গা দিয়েছি তাকে নিয়ে প্রহসন করার স্পর্ধা নেই আমার।

তোমার মনে আমাকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে সাথে এটাও জানি আমাকে অনেক অভিমান জমেছে সাথে আমাদের মাঝে গভীর সম্পর্ক শুরু হওয়ার আগেই সবকিছু থমকে গেছে আর তারপরেই তোমার মনে জমেছে মেঘ সাথে এটাও মনে হয়েছে সব কিছু মিথ্যে আমাদের মধ্যে যা ছিল সব মিথ্যে আমাদের মাঝের দূরত্ব পাঁচটা বছর আমরা দূরে ছিলাম তোমার মনে হয়েছে আমি তোমাকে ভুলে ছিলাম তাই একটু একটু করে তুমিও আমাকে ভুল বুঝলে আর এখনও সেই প্রশ্ন তোমার মনে আমি আবার এতগুলো বছর পর কেনো তোমার জীবনে ফিরে এসেছি কেনো তোমাকে আবার আমার মায়ায় জড়িয়ে নিচ্ছি তোমার মনে পড়ে সেই দিনের কথা যেদিন শুরু হয়েছিলো আমাদের মধ্যেকার দূরত্বের সৃষ্টি? কিন্তু তুমি কি বলতে পারবে তুমি যে কারণে আমার দূরত্ব করে নিয়েছিলে সেটা মন থেকে মানো? সাঁঝ শীতল গলায় বলে ওঠে।

সাঁঝের বলা এক একটা কথা বেলার মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি করে অস্থির হয়ে ওঠে দম আটকে আসছে তার এই কয়েকদিন তার সাথে ঘটা ঘটনা গুলো হিসাব মেলাতে গিয়েও উদ্ধার করতে পারিনি কিছু তবে আজ সাঁঝের মুখের থেকে বলা কথা গুলো শুনেই তার সব কিছু তাল গোল পাকিয়ে যাচ্ছে বেলা একেবারে স্তব্ধ হয়ে গেছে।

চলবে….?

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন..। নিজেদের মতামত জানাবেন ।