তোর আসক্তি পাগল করেছে আমায় ২ পর্ব-১৯+২০

0
608

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
১৯.
চারদিকে শীতল হাওয়া বইছে অন্ধকারে ঝিঁঝিঁ পোকাদের ডাক রাতের নিস্তব্ধতার মধ্যে ভরিয়ে রেখেছে। বেলা এখনও স্তব্ধ হয়ে বসে আছে সাঁঝের কোলে আর তাকে নিজের সাথে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ঘাড়ে অধর চেপে রেখে আছে সাঁঝ। দুজনেই আজ স্তব্ধ হয়ে আছে জীবনের অঙ্ক মেলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বেলা একটু আগে সাঁঝের বলা প্রতিটা কথা শুনে প্রত্যেকটা ঘটনার সাথে মেলাতে চেষ্টা করে তবে সেখানে এতদিনে রাগ অভিমান আর ভুলের স্তূপ জমা থাকলেও আজ সব হিসাব প্রথম থেকে মেলানোর পর সেখানে শুধু সাঁঝের জন্যে জমানো ভালোবাসা দেখতে পায় যেখানে এতদিন সাঁঝের প্রতি রাগ আর যে অভিযোগ ছিল এখন দেখতে পাচ্ছে সেটা শুধু তার বোঝার ভুল ছিল আর কিছুইনা সেখানে তার ভুল বোঝার অভিযোগ করার কোনো ঘটনায় খুঁজে পাচ্ছে না। আর সেদিনের ঘটনার জন্যে সে কোনো ভাবেই সাঁঝকে দোষারোপ করতে পারেনা সেটা এর আগেও বেলা কখনো মন থেকে বিশ্বাস করেনি আর আজ তো তার কাছে পুরো বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে গেছে। না তার মনে আর কোনো ভুল বোঝা বা কোনো অভিযোগ নেই সেই ঘটনা নিয়ে তবে হ্যাঁ সব হিসাব মেলানোর পর জমা হয়েছে সাঁঝের উপর জমা হয়েছে প্রচণ্ড অভিমান আর রাগ সেই ঘটনা সে মন থেকে কখনই বিশ্বাস করেনি কিন্তু সাঁঝ নিজেই কোনো কথা বলেনি বা তার মনের মধ্যে থাকা সন্দেহ দূর করেনি বরং সে দূরে যেতে চাইলেই তাকে দূরে যেতে দিয়েছে তাকে দূরে করে রেখেছিলো ভাবতেই রাগে গা শিরশির করে ওঠে। বেলার গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে একের পর এক অশ্রুকনা যখন বেলার ধারণা ভুল প্রমাণ করার ছিল তখন দূরে রেখে এখন তাকে ভুল প্রমাণ করতে এসেছে এতটা বছর দূরে রেখে কষ্ট দিয়ে এখন ভালোবাসে এসেছে চায়না তার। সে কিছুতেই ক্ষমা করবেনা সাঁঝকে এত তাড়াতাড়ি আর আসল ঘটনা সে খুঁজে বের করবেই।

বেলার গলার উপরে ঘুরিয়ে জড়িয়ে রাখা সাঁঝের হাতের উপর ভেজা অনুভব হতে সাঁঝ সচকিত হয়ে যায়। মাথা ঘুরিয়ে দেখে বেলার গাল ভেজা কাঁদছে বেলা। সাঁঝ তাড়াতাড়ি করে বেলাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয় নিজের ওষ্ঠের সাহায্যে বেলার চোখের পানি শুষে নেয়। দুই চোখের উপরে নিজের অধর ছুয়ে দেয়। বেলা ফুফিয়ে উঠে সাঁঝের বুকে কিল ঘুষি বসিয়ে দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চায়। সাঁঝ বেলার মুখের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে বুঝতে পারে তার বউ অভিমান করে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে। আগের এত বছরের অভিমান কেটে গেলেও এই অভিমান এত তাড়াতাড়ি কাটার নয় এই অভিমান ভাঙতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে ভেবেই সাঁঝের মুখে মৃদু হাসি ফুটে ওঠে।

-“তোমার অভিমান জমিয়ে রাখো এখন চলো রাত হয়েছে কাল সকালে অফিস আছে ঘুমাতে হবে প্রতিদিন একটু একটু করে তোমার অভিমান ভেঙে দেবো আর কিছু উত্তর না বাকি থাক পরে দেওয়া যাবে। সাঁঝ মৃদু হেসে বেলার ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছুয়ে বলে ওঠে।

বেলা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও পারেনা শেষে সাঁঝের বুকে মাথা গুঁজে দেয় সাঁঝ আলতো হেসে বেলাকে নিয়ে রুমে ঢুকে গ্লাস টেনে দিয়ে বিছানায় শুয়ে বেলাকে নিজের বুকে টেনে নেয়। আজ এত বছর তার বুকটা শান্ত হয়েছে আজ সে পরিতৃপ্ত এত বছর তার বুকটা খাঁ খাঁ করেছে তবে আজ তার বুক ভরে গিয়েছে শান্ত হয়েছে বেলার স্পর্শে। বেলা নিজের বুকের সাথে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে রেখে ঘুমের দেশে পাড়ি জমায়, বেলাও এতদিন পর নিজের মনের মধ্যে থাকা সমস্ত ভুল বোঝাবুঝি সমাপ্তি করে নিজের ভালোবাসার মানুষের বুকে মাথা রাখতে পেরেছে তার এতদিনের সমস্ত রাগ অভিমান ধুয়ে মুছে গেছে তার মানুষটা তারই আছে এটাই তার শান্তি। তবে আজকের জমা অভিমান কমবে না এত সহজে সাঁঝকে এত তাড়াতাড়ি কখনই রেহাই দেবেনা এবার বেলাও সাঁঝকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে রাগ করবে এতদিন যে জ্বালায় সে জ্বলেছে এবার সাঁঝের পালা।

—————

সকালে সাঁঝের আগেই বেলা উঠে গিয়েছে সাঁঝের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের পরিকল্পনা মাফিক প্ল্যান করে নেয় কিভাবে কিভাবে সাঁঝকে জব্দ করবে। সাঁঝ ঘুম থেকে উঠে রুমে বেলাকে না পেয়ে ফ্রেশ হয়ে একবারে রেডি হয়ে নিচে নেমে যায় সেখানে গিয়ে দেখে বেলা আগের থেকে রেডি হয়ে বসে আছে। সাঁঝের সাথে চোখে চোখ পড়তেই বেলা চোখ ঘুরিয়ে নেয়। ডাইনিং টেবিলে বেলা নানীমা বসে আছে সাঁঝের জন্যে সাঁঝ এসে নানীমাকে জড়িয়ে ধরে তারপরই বেলার পাশেই বসে পড়ে। বেলা নিজেই চুপ করে খেতে থাকে কিন্তু সাঁঝ আর তার নানীমা নন স্টপ বকবক করে যাচ্ছে বেলা মুখ বেকিয়ে খেয়ে যাচ্ছে।

-“বেলা হয়েছে তোর? বলতে বলতে ডাইনিং টেবিলের কাছে এসে থেমে গেছে শান্তা।

সে অবাক হয়ে সামনে তাকিয়ে আছে বেলা সাঁঝ আর নানিমার দিকে অবাক বিস্ময় হয়ে গেছে এই দৃশ্য দেখে। এদিকে শান্তা কে হঠাৎ করেই এখানে এসে এমন থামের মত করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বুঝতে পারে শান্তার এমন প্রতিক্রিয়ার কারণ। বেলা চুপ করে বসে থাকে বুঝতে পারে এবার তার দিকে প্রশ্নের ঝড় এসে নামবে।

-“কিরে শান্ত এত শান্ত হয়ে গেলি কেনো? আর বেলা টায় বা কোথায় এখনও রেডি হয়নি নাকি? রুহি ডাকতে ডাকতে ভিতরে আসে।

রুহির পিছন পিছন সারা ওম বেদ নিশান ও এসে দাঁড়ায় শান্তার মত তাদেরও চোখ গোল গোল হয়ে আছে তারা অবাক ও বিস্ময় ভরা চোখে সামনে বেলার পাশে বসে থাকা সাঁঝকে দেখতে থাকে। বেলা ওদের দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলেও মুখে সেই ভাব আসতে দেইনি তবে সেটা সাঁঝের বুঝতে বাকি নেই তবে সাঁঝ একদম নির্বিকার ভাবে বসে নানিমার সাথে গল্পে মশগুল হয়ে খেয়ে যাচ্ছে যেনো সে জানে না এখানেই কেউ এসেছে কি।

-“ভাইয়া তুই এখানে? সারা বিস্মিত হয়ে বলে ওঠে।

সারার ডাক শুনে সাঁঝ এবার ঘুরে তাকায় দেখে তার বোন বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। সারা জানে প্রতি সপ্তাহে তার ভাই কোথাও চলে যায় দু তিন দিনের জন্যে বাড়ি ফেরেনা কালকেও তাই বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিল তাহলেই কি প্রতি সপ্তাহে তার ভাই এখানেই আসতো কিন্তু কেনো সারা সব কিছু বুঝতে পারলেও তার উত্তর পায়নি তাছাড়া তার হিসাব ঠিক কিনা জানার জন্যে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-“তারমানে তুই এখানে আসার জন্যে কালকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিলি কিন্তু কেনো ভাই?

সারার কথার মধ্যে পিচ্চি রিয়া এসে উপস্থিত হয়ে যায় সাথে আরো কিছু পিচ্চি বাহিনী রিয়া সোজা সাঁঝের কাছে গিয়ে তার হাত জড়িয়ে ধরে সাঁঝ বসে থাকলেও তাকে ধরা রিয়ার কাছে বড়ই কঠিন তার হাত পর্যন্ত ঠিক আছে তবে রিয়ার বলা কথা সবাই কে স্তব্ধ করে দিয়েছে।

-“তিতুভাইয়া তুমি আমাল জল্যে তককেট নিয়ে আতবে।

সবাই অবাক হয়ে একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে ইশারায় বোঝার চেষ্টা করে ওই বাচ্চা মেয়েটা সাঁঝকে কি বলে সম্বোধন করলো তারা কি যেটা ভাবছে সেটাই নাকি অন্য কিছু সবাই ভ্রু কুঁচকে বেলার দিকে তাকায় বেলা ওদের দিকে তাকিয়ে অসহায় ভাবে লুক দেয় এতে বাকি গুলোর মনে সন্দেহ আরো প্রকট হয়।

-” জিজুভাইয়া আমার জন্যে ও আনবে। আরো একটা বাচ্চা স্পষ্ট ভাবে বলে ওঠে।

আর এটা শুনেই তারাও বুঝতে পারে তাদের ভাবনা ঠিক কিন্তু এটা কি করে সম্ভব সেটাই ভেবে পায়না। সারা তার ভাইয়ের দিকে প্রশ্ন চোখে তাকায়।

-” শ্বশুর আসবো তার জন্যে কেনোর কি আছে সারা শ্বশুর বাড়ি আসতে কি কারো মানা আছে নাকি। সাঁঝ তার বোনের দিকে তাকিয়ে ঘুরিয়ে উত্তর দেয় সে জানে তার ভীষণ বুদ্ধিমত্তি তার আর বুঝতে অসুবিধা হবে না।

সাঁঝের কথা শুনে বাকিরা যেনো আকাশ থেকে পড়েছে সবাই একবার বেলার দিকে দেখে তো একবার সাঁঝের দিকে তাকায়। সারা ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।

-“তারমানে বেলা…

-” বেলা তোর ভাবি আমার একমাত্র দুইবার বিয়ে করা বউ। সাঁঝ হেসে সারার কথার মাঝে বলে ওঠে।

সাঁঝের বলা কথা বাকিদের কাছে বজ্রপাতের মত করে শোনায় সবাই বিস্ময় নিয়ে বেলার দিকে তাকায় আর বেলা অসহায় হয়ে বাকিদের দিকে তাকায়।

চলবে….?

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
২০.
বেলা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে আর তার চারদিকে ঘিরে ওম বেদ নিশান শান্তা রুহি সারা দাঁড়িয়ে আছে রাগী রাগী মুখ করে। আজ যদি তারা ওই মায়ানীড়ে না যেতো তাহলে তারা তো কিছুই জানতে পারতো না আর না জানতো বেলার সাথে সাঁঝের সম্পর্ক। সাঁঝের মুখে থেকে বেলা তার বউ শোনার পর থেকেই তারা রেগে গেছে তারা সেই বেলার ছোটবেলার সাথী আর তারাই কিনা বেলার বিয়ের কথা জানেনা এমন কি সাঁঝ আর বেলার মধ্যে যে কোনও সম্পর্ক থাকতে পারে সেটাও জানতে পারিনি তারা তো সাঁঝের প্রতি বেলার অনীহা দেখেছিল তাহলে ওদের বিয়ে কি করে হলো কখন হলো তারা কিছুই জানে কেমন বন্ধু তারা।

-“কিরে তুই কি আমাদের নিজের ফ্রেন্ড মনে করিস? আমার তো মনে হয়না যে তুই আমাদের তোর কিছু মনে করিস? যদি মনে করতি তাহলে আমাদের কে অন্তত কিছু জানাতিস। রুহি কঠিন গলায় বলে ওঠে।

-” তোর সাথে যে আমার ভাইয়ার একটা সম্পর্ক আছে তুই যে আমার ভাবি হস এটা আমাদের জানালে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেতো? সারা অভিমানী কন্ঠে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” আমরা মনে করতাম আমরা তোর অনেক কাছের তুই আমাদের তোর কাছের মানুষ ভাবিস কিন্তু আজকে সেটা প্রমাণ হয়ে গেলো তুই আমাদের কে কিছুই ভাবিস না। শান্তা ঠান্ডা গলায় বলে ওঠে।

-” সত্যি কি আমরা বন্ধু হিসাবে এই টুকু জানার অধিকার রাখিনি তোর কাছে? ওম বলে ওঠে।

-“তুই কি আমাদের কে একটুও বিশ্বাস করিস না যে এই কথা টা আমাদের কে বলতে পারিস নি? নিশান বলে ওঠে।

-“আমরা নাকি তোর জিগ্রি দোস্ত অথচ তোর জীবনের এতবড় একটা ঘটনার কথা আমরা কিছুই জানি না ছিঃ নিজেদেরই লজ্জা লাগছে এখন আমরা বলি তুই আমাদের বেস্ট ফ্রেন্ড তোকে আমরা তোর থেকেও বেশি জানি কিন্তু আজ সেটা প্রমাণ হয়ে গেলো। বেদ খুবই শান্ত ভাবে বলে ওঠে।

বেদ নিশান ওম শান্তা রুহি সারা সবার কন্ঠে আজ অভিমান আর কষ্ট ফেটে পড়ছে তাদের জন্যে সত্যি এটা খুবই কষ্টের যে তারা যাকে বেস্ট ফ্রেন্ড প্রাণের বন্ধু ভাবে অথচ তার বিষয়ে তারা কিছুই জানে না এত দিন তাঁরা সবাই নিজেদের সুখ দুঃখ সব একসাথে ভাগাভাগি করে এসেছে আর আজ এই পর্যায়ে এসে জানতে পারছে তাদের প্রাণ বেলার বিয়ে হয়েছে কারোর সাথে তার সম্পর্ক আছে কিন্ত তারাই জানে না। এটা তাদের কাছে খুবই লজ্জার ব্যাপার নিজেদের কি আর তারা প্রাণের বন্ধু বলে দাবি করতে পারে যেখানে এত বড় খবরই তারা জানে না সেখানে মনে হয়না তারা কখনো বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল বলে থাকলে অন্তত এইভাবে কোনো কিছুর থেকে অজানা থাকতো না।

বেলা চুপ করে বসে আছে তার চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রুধারা বেয়ে চলেছে সবার প্রশ্ন গুলো আজ তাকে খুব যন্ত্রণা দিচ্ছে সে নিজেও জানে তার সামনে দাঁড়ানো ছেলে মেয়ে গুলো তাকে তার থেকেই খুব বেশি ভালোবাসে তার জন্যে কোনো কিছুরই পরোয়া করেনা সব কিছু করতে পারে আর তার জীবনের ব্যাপার তারা কিছুই জানেনা অবশ্যই এটা যন্ত্রণার ব্যাপার সে সত্যি তাদের কে খুব কষ্ট দিয়েছে।তারা যে প্রশ্ন গুলো করেছে সেগুলো সত্যি তো তারা তো এখন এটাই মনে করবে এই ঘটনার পর।

-“চল আমাদের এখানে আর কোনো কাজ নেই। আমাদের ওর জীবনে কোনো প্রয়োজন চল। রুহি বলে ওঠে সবার উদ্দেশ্যে।

-” রুহি! বেলা কান্না ভেজা আহত কন্ঠে বলে ওঠে।

বেলার ডাকে সবাই এবার দৃষ্টি বেলার উপরে দেয় বেলার চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে কেমন অসহায় ভাবে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে বেলার এই কান্না তারা কোনো ভাবেই সহ্য করতে পারেনা তাই তারা তাদের চোখ ঘুরিয়ে নাহলে বেলার এই কান্না মাখা চেহারা দেখে তারা গলে যাবে কিন্তু তারা এখন সেটা চায়না আজ তারা খুব কষ্ট পেয়েছে। যেটা এত তাড়াতাড়ি মেটার নয়। বেলা আজ তাদের সবাই কে অনেক কষ্ট দিয়েছে যেটা একদম মেনে নেওয়ার নয় তাই এখন এক মুহূর্তের জন্যও বেলার দিকে তাকানো যাবেনা। বেলা কি তাদের এই কথাটা বলতে পারতো না তাহলে সত্যি কি তাদের একটুও বিশ্বাস ভরসা করেনা নাকি এর পিছনে অন্য কোনো কারণ আছে তবে যাইহোক থাকুক না কেনো বেলা ভুল করেছে।

-“তোরা আমাকে ভুল বুঝছিস আমি কখনই তোদের কে নিজের পর ভাবিনি বা অবিশ্বাস করিনি কখনো, আর অবিশ্বাস করার প্রশ্ন আসেনা। আমি তোদেরকে নিজের প্রাণের বন্ধু ভেবেছি কখনই নিজের থেকে আলাদা ভাবিনি। তোরা প্লিজ আমাকে ভুল বুঝিস না। বেলা রুদ্ধ কণ্ঠে বলে ওঠে।

-” তাহলে তোর জীবনের এই কথাটা আমরা কেনো জানিনা কেনো এই অধ্যায় আমাদের অজানা কেনো বলতে পারিস? শান্তা বলে ওঠে।

-” আমরা তোর বন্ধু তাহলে আমাদের এই কথাটা তোর থেকে জানার কথা কিন্তু আমরা অন্যের মুখ থেকে সেটা জানতে পারছি কেনো এটা হবে বলতে পারিস? সারা অভিমানী ভাবে বলে ওঠে।

-” তোদের মনে আছে তোরা সবাই গোয়া যাওয়ার আগেই একমাসের জন্যে কানাডা গেছিলি? তোরা সেখানে গেলেও আমি যেতে পারিনি নানীমার অসুস্থতার জন্যে আমিই তোদের জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম মনে পড়ে? বেলা সবার দিকে তাকিয়ে কান্না ভেজা কন্ঠে বলে ওঠে।

-” হ্যাঁ আমরা সবাই ফেস্টিভেলের জন্যে কানাডা সারার মামা বাড়ি গেছিলাম আমাদের সাথে তোর ও যাওয়ার কথা ছিল, আমরা কেউ যেতে চাইনি কিন্তু তুই আমাদের কে বাধ্য করেছিলিস আমাদের যেতে। শান্তা বলে ওঠে।

-” হ্যাঁ আমি জানি আমিই তোদের বাধ্য করেছিলাম কারণ আমি চাইনি আমার জন্যে তোদের সবার আনন্দ মাটি হোক। তোরা চলে যাওয়ার পরই ঘটনা টা ঘটে আর এই ঘটনা টায় জীবন পুরো উল্টো পাল্টা করে দেয়। বেলা বলে ওঠে ।

-” কি এমন ঘটে ছিল যার জন্যে বিয়ে হয়েছিলো তোদের? শান্তা বলে ওঠে।

-” তোরা চলে যাওয়ার দুদিন পরেই মায়ানীড়ে রিসা খান এসেছিল তার সঙ্গে ছিলো আনিস। নানীমার শরীর আরো খারাপ হয়ে যাওয়ার জন্যে নানীমাকে হসপিটালাইজড করতে হয়েছিলো সুরাজ আংকেল আর মামনি নানীমার কাছে ছিল বাড়িতে তখন আমি একাই ছিলাম।

-” কি বলিস ওই হারামজাদা আনিস আবারো এসেছিল আর ওই মহিলা ছিঃ এত খারাপ কেনো এসেছিলো সেখানে? শান্তা রাগে বেলার কথার মাঝে বলে ওঠে।

-” শান্তা কিছুক্ষণের জন্যে শান্ত হয়ে যা আর বেলাকে বলতে দে। সারা বলে ওঠে।

-“সেদিন আমি হসপিটাল যাব বলে রেডি হয়ে নিচে নামতে দেখতে পাই নিচে রিসা খান আনিস নিচে সোফায় বসে আছে আর ওদের থেকে দূরে বসে ছিল একজন কাজী আর ওদের ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিল কয়েকজন গার্ড। হটাৎ করে এমন কিছু হতে আমি কিছুটা চমকে যাই আমি কিছু বলব বা করব তার আগেই ওরা আমাকে দেখে নেয়। বেলা এই পর্যন্ত বলেই চুপ হয়ে যায় তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে পাঁচ বছর আগেকার সেই ঘটনা।

স্মৃতিপট…

বেলা সিঁড়ির উপরে দাঁড়িয়ে অবাক চোখে নিচে তাকিয়ে আছে আনিস আর রিসা খান বসে আছে আর তাদের ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকজন গার্ড আর থেকে কিছুটা দূরে বসে আছে কাজী। হটাৎ করেই ওদের দেখে বেলা ঘাবড়ে যায়। বাড়িতে কেউ নেই সুরাজ আংকেল মামনি সবাই হসপিটাল বাচ্চা গুলো গেছে স্কুলে শুধুমাত্র তিনজন বাচ্চা রয়ে গেছে তারা খুবই ছোটো তাই। বেলা কিছু বলবে বা করবে তার আগেই আনিস বেলাকে দেখে নেয় সাথে সাথে বিশ্রী হেসে সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বেলার দিকে পা বাড়ায়।

-“তোমরা এখানে কি করছো? কেনো এসেছো এখানে? আর এইসব কি হচ্ছে? বেলা কিছুটা চিৎকার করে বলে ওঠে।

বেলা কথার মাঝে তার ফোন নিয়ে ডায়াল করে দেয় কল লগের উপরে থাকা নাম্বারে আনিসের সাথে কথায় ব্যস্ত রেখে ফোন কলে রেখে পকেটে রেখে দেয়। হটাৎ করে এখানে রিসা খান আর আনিসকে দেখে বিপদ সংকেত পেয়ে যায় তাছাড়া এখন বাড়িতে কেউ নেই সাথে বাচ্চা গুলোও আছে আর আগের আনিসের কাহিনি বেলার জানা তাই আর বেশি রিস্ক নেইনি এখানে যা কিছু ঘটে যেতে পারে।

-“কেনো বেবি আমাদের এখানে দেখে অবাক হয়ে গেছো বুঝি! আহারে, আমার বেবিটা তুমি কি ভেবেছিলে তুমি আমার থেকে পালিয়ে বেঁচে যাবে। সেদিন আমার হাত থেকে তুমি বেঁচে গেলে ইস তুমি যদি সেদিন চিৎকার না করতে তাহলে সেদিন আমি তোমাকে পেয়ে যেতাম ইস তোমাকে পেয়েও হাত ছাড়া করতে হয়েছিলো কি যে কষ্ট তোমাকে বলে বোঝাতে পারব না বেবি। আনিস বেলার একদম সামনে দাঁড়িয়ে কিছুটা ঝুঁকে গিয়ে বেলার ঘ্রাণ শুকে বলে ওঠে।

-“আরে আনিস বেটা তখন পাওনিতো কি হয়েছে আজ তো তোমার সামনেই আছে আজ কেউ বাধা দেওয়ার মতো বাড়ি একদম ফাঁকা। রিসা খান বলে ওঠে।

-” ইয়েস আন্টি আমি আগে এই পাখি কে শুধু টেস্ট করতে চেয়েছিলাম উফ কিন্তু আমি এখন এই পাখি কে নিজের খাঁচায় বন্দি করতে চাই যখন ইচ্ছা তখনই টেস্ট করা যাবে। আনিস বিশ্রী হেঁসে বলে ওঠে।

-” ছিঃ আপনার লজ্জা করেনা একজন মেয়ে হয়ে আরো একজন মেয়ে কে এই ভাবে অপমান করতে তাও একটা বিশ্রী নোংরা বাজে ছেলের সঙ্গে আমার বিরুদ্ধে প্রলুব্ধ করতে আপনি সম্পর্কে আমার মা হন নাকি ছিঃ ভাবতেও আমার ঘৃণা করে। বেলা চিৎকার করে বলে ওঠে।

-” কে তোর মা? আমি তোর কোনো মা নই আর তোর মত মেয়ের জন্যে আনিসের থেকে ভালো ছেলে আর কোথাও পাবিনা না জানি এই গতর দেখিয়ে কতজন কে পাগল করেছিস আর না জানি কোথায় কি করে রেখেছিস তাই পাচ্ছিস নিয়ে যে অন্তত তোর একটা হিল্লে হয়ে যাবে। রিসা খান বলে ওঠে।

-” আসো বেবি আজই আমি তোমাকে আমার সিল মেরে দেবো এই মুহূর্তে তোমাকে বিয়ে করব আর তারপর তোমার এই নরম শরীরটার সাথে খেলব। আনিস নোংরা ভাবে বলে ওঠে।

বেলা আর সহ্য করতে না পেরে এক ঘুষি বসিয়ে দেয় আনিস এর মুখে হঠাৎ করে এমন আক্রমনে আনিস কিছুটা আঘাত পায় তবে রুখে দাঁড়ানোর আগেই বেলা আরো আঘাত করতে শুরু করে দাঁড়ানো অবস্থায় লাথি মেরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় সিঁড়ি থেকে আনিস বেলার ধাক্কা সহ্য করতে না পেরে নিচে গড়িয়ে পড়ে যায়। মাথা নাক দিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করে রিসা খান বেলার এমন রূপ দেখে গার্ডকে ইশারা করে বেলার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে বেলা রিসা কে তার দিকে আসতে দেখে মাথার থেকে কাঁটা খুলে ছুড়ে মারে রিসার দিকে কাঁটা খুব একটা ধারালো আর ভারী না হলে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা যেতেই পারে কারণ কাঁটা কলমের মত ভারী ছিল তাই সঠিক নিশানা করে ছুড়ে দিতে সেটা পায়ের পাতায় গিয়ে গেঁথে যায় সূচালো দিকটা গিয়ে আর জোরে আর নিশানা করে ছুড়ে দেওয়ার জন্যে ঠিক ঠিক ভাবে আঘাত লাগে আর গেঁথে বসে যায় । সাথে সাথে রিসা খান চিৎকার করে ওঠে।

ইতি মধ্যে বেলা আরো কিছু করবে তার আগেই গার্ড একজন বাচ্চাকে তুলে নিয়ে আসে বাচ্চা দেখে বেলা থেমে যায়। আর বেলার থেমে যাওয়া দেখে নিজেদের যন্ত্রণা ভুলে রিসা খান আর আনিস শয়তানি হেসে ওঠে।

-“ওকে এখানে কেনো নিয়ে এসেছ? বাচ্চাকে যেখান থেকে নিয়ে এসেছ সেখানেই রেখে এসো। বেলা চিৎকার করে বলে ওঠে।

তবে বেলার কথা কেউ শোনে না। আনিস উঠে দাঁড়িয়ে বেলার দিকে আবারো পা বাড়ায় আর রিসা ততক্ষণে নিজের পা থেকে কাঁটা তুলে ফেলে দেয়।

-” ভেবেছিলাম তোকে বিয়ে করে নিজের বন্দি বানাবো কিন্তু না তোকে আমি এমনি ভোগ করব নিজের আস মিটিয়ে তারপর তোকে ব্রোথেলে ছুড়ে ফেলে দেবো এই আনিসকে আঘাত করার শাস্তি তোকে পেতে হবে। আনিস বেলার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে দাঁত মুখ খিঁচে বলে ওঠে।

আনিসের কিছু করার আগেই রিসা বেলার দিকে এগিয়ে গিয়ে বেলার গালে থাপ্পড় মেরে দেয় পর পর চারটে বেলা শুধু চুপচাপ মার খেয়ে যাচ্ছে তার কিছু করার নেই সে কিছু করতে পারতো নিজেকে রক্ষা করতে কিন্তু এখানে বাচ্চাকে তুলে নিয়ে এসেছে তাই সে নিরুপায় শুধু অপেক্ষায় আছে সে কারোর।

-“আমাকে আঘাত করিস নোংরা মেয়ে ছেলে তোর এত বড় সাহস আজ তোর এমন অবস্থা হবে না তুই কল্পনা ও করতে পারবি না। বলেই রিসা বেলার মাথা সিঁড়ির রেলিং এ ঠুকে দেয়।

বেলা আঘাত পেয়ে নিচের দিকে কিছুটা গড়িয়ে যায় তবে সে নিজেকে সামলে উঠে দাঁড়িয়ে যায় এরই মধ্যে আনিস তার দিকে এগিয়ে এসে তাকে স্পর্শ করতে যাবে তার আগেই বাড়িতে এক এক করে গার্ডে ভরে যায় সে কয়জন গার্ড বাড়ির মধ্যে ছিল তাদের মাথায় গান চেপে ধরে আর অন্য গার্ডের কোলে থেকে বাচ্চা উদ্ধার করে। হটাৎ করে বাড়িতে এত গার্ড আসতে দেখে রিসা আর আনিস ঘাবড়ে যায় তার উপরে তাদের গার্ডের মাথায় গান ধরে আছে দেখে তারা দুজন কিংকর্তব্যবিমূড় বনে যায়। এতক্ষণ লিভিং রুমের এক কোণে বসে থাকা কাজী ভয়ে চুপ চাপ দেখে যাচ্ছিলো এখানে যা হচ্ছিলো কিন্তু এখন এই ভয়ানক অবস্থা তার অবস্থা ও কিছুটা পানি পানি। বাড়ির মেইন গেট দিয়ে একজন পুরুষ কে ঢুকতে দেখেই বেলার মুখে হাসি ফোটে আর রিসা আর আনিস এক ভাবে দেখতে থাকে বাড়িতে এই মাত্র আসা ছেলেটার দিকে। তাদের সামনে দাঁড়িয়ে সুদর্শন এক পুরুষ যদিও তার মুখে মাস্ক লাগানো আছে তাই পুরো মুখটা দেখা যাচ্ছেনা তবে মুখ না দেখা গেলেও নিঃসন্দেহে বলা যায় তাদের সামনে সুদর্শন পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে ফর্সা কপাল শার্টের বাটান দুটো খোলা থাকায় গলার কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে যা দেখে অবশ্যই বলা যেতে পারে সামনে দাঁড়ানো ব্যাক্তিটি ফর্সা গড়নের সাথে লম্বা আর হাট্টা কাট্টা পেটানো শরীর দেখেই যে কেউ বলতে পারে সামনে দাঁড়ানো ব্যাক্তি কোনো হ্যান্ডসাম পুরুষ। রিসা তো চোখ দিয়ে গিলে খাওয়ার মতো করে সামনে দাঁড়ানো ব্যাক্তি কে দেখে যাচ্ছে। ততক্ষণে বেলা দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে সিঁড়ির উপরে বসে পড়ে থাপ্পড় আর মাথা ঠুকে দেওয়ায় তার মাথা ঝিম ঝিম করছে। বেলার মুখ দিয়ে অস্পষ্ট ভাবে আওয়াজ বেরিয়ে আসে।

-“জিন্দেগি..

সামনে দাঁড়ানো ব্যাক্তিটি গার্ডদের ইশারা করতে তারা এগিয়ে এসে আনিসকে ধরে নিচে নামিয়ে তিন চারজন মিলে একসাথে পেটাতে থাকে আনিসের চিৎকারে ওখানে বাচ্চাটাও কেঁদে ওঠে। রিসা এতক্ষণ সামনে দাঁড়ানো ব্যাক্তিকে দেখে গিলে খেলেও এখন তার ভয়ে বুক ঢিপ ঢিপ করছে আনিসের মার দেখে। সামনে দাঁড়ানো ব্যাক্তিটি আসতে করে তার মাস্ক মুখে থেকে খুলে দিতে রিসা হা হয়ে যায় বিস্ময়ে সাথে বেলাও বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকে।

-“সাঁঝ রওশন । রিসার মুখ দিয়ে অস্পষ্ট ভাবে বেরিয়ে আসে।

সাঁঝ এগিয়ে এসে রিসার সামনে দাঁড়িয়ে কষে থাপ্পড় লাগিয়ে দেয় রিসার গালে পরপর থাপ্পড় দিতেই থাকে থামার কোনো নামই নেই থাপ্পড় খেয়ে যতক্ষন না রিসা আর নিতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে ততক্ষণ থাপ্পড় মারতে থাকে। রিসা পড়ে যেতেই সাঁঝ পকেটে থেকে নিজের রুমাল বের করে যে হাত দিয়ে থাপ্পড় দিয়েছে সেই হাতটা ভালো করে মুছে নিয়ে রুমাল টা ছুড়ে ফেলে দেয়। মাথা ঘুরিয়ে পাশে তাকাতেই দেখতে পায় বেলা অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে সাঁঝ কোনো কথা না বলে বেলাকে নিজের কোলে উঠিয়ে নিয়ে নিচে এক কোণে সোফায় বসে থাকা কাজীর সামনে গিয়ে বসে তারপরেই বিয়ে পড়াতে বলে তাদের হঠাৎ করে এত কিছু হয়ে যাওয়াতে বেলা স্তব্ধ হয়ে গেছিলো আর বেশি করে ফ্রিজ হওয়ার কারণ সাঁঝ নিজেই সে তখন ঘোর থেকে বের হতে পারেনি যখন বিয়ে পড়ানোর কথা বলে তখন বেলা অবাক চোখে সাঁঝের দিকে তাকিয়ে ছিল বেলা কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারিনি সেখানেই সেদিন সাঁঝের কথা মত তাদের বিয়ে হয়ে যায় ধর্ম মতে।

-“হোয়াট তারমানে তুমি আমার ভাবি হও! ভাইয়ার বিয়ে করা বউ?

চলবে…?

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন..। নিজেদের মতামত জানাবেন ।