তোর উঠানে বিকাল ছায়া পর্ব-১৮

0
808

#তোর_উঠানে_বিকাল_ছায়া🥀
১৮তম খন্ড
#লেখিকা-লামিয়া রহামান মেঘলা

ছায়া চোখ বন্ধ করে ঘন নিশ্বাস নিচ্ছে।
আর পেছন থেকে দুটো হাত ছায়ার পেট জড়িয়ে ছায়াকে আকড়ে ধরে রেখেছে
কিছু সময় পর বাঁধন টা আলগা হতে লাগলো
ছায়া চোখ বন্ধ করে ছিল।
বাঁধন আলগা হবার আভাস পেয়ে ছায়া পেছনে ফিরে চিল্লিয়ে ওঠে,
–নির্ঝর।
ছায়ার চিল্লানো শুনে সবাই নিচে চলে আসে রুহি লাইট জ্বালিয়ে দেয়।
ছায়া দাঁড়িয়ে আছে,
রুহি জলদি ছায়ার কাছে যায়৷
–কি হয়েছে ছায়া।
–রুহি নির্ঝর ছিল এখানে।
–কোথায় ছায়া৷।
–রুহি ও এখানে ছিল আমি দেখেছি ও এখানে ছিল এখনি ছিল।
ছায়া উত্তেজিত হয়ে গেছে,
–ছায়া থাম এখানে কপউ নাই ।
তুই কেন একা নিচে এসেছিস।
–বিশ্বার কর রুহি ও এখানে ছিল।
–আচ্ছা চল ঘরে চল।
–না যাবো না।
ওকে আসতে বল আবার।
ছায়ার অবস্থা দেখে নয়লা বেগম কেঁদে দেন।
আবিরের চোখ টলমল করছে,
–ঘরে চল দেখছি চল।
–না আমি বলছি তোরা বিশ্বাস করছিস না।
ছায়ার নিশ্বাস ঘন হয়ে আসে।
দম আঁটকে যেতে থাকে।
রুহি চট করে ছায়াকে ধরে বসে।
ধিরে ধিরে ছায়ার চোখ বুজে আসে,
–সত্যি বলছি ওকে দেখেছি।
ধিরে কথাটা বলে ছায়া রুহির কোলে ঢুলে পরে।
***
ছায়াকে বিছনায় শুইয়ে দিয়ে রুহি পাশে বসলো।
নয়লা বেগম ছায়ার পাশে বসে আছে,
–মেয়েটার এই অবস্থা আর চোখে সহ্য হচ্ছে না৷
ভিশন কষ্ট হচ্ছে আমার৷
–কি করব আন্টি কিছুই করার নেই।
–হে আল্লাহ আমার হাসিখুশি পরিবার টা ফিরিয়ে দেও।
,
,
,
সে রাতে কেউই ঘুমাতে পারলো না।
ছায়ার জ্বর চলে এলো।
জ্বরের ঘোরে বার বার নির্ঝরের নাম।
ছায়া চোখ বন্ধ করে অচেতন অবস্থায় নির্ঝর কে ফিল করে।। ভালোবাসা বুঝি এমন হয়।
ডক্টর ছায়াকে চেকাপ করছে,
–মিসেস.চৌধুরী ছায়াকে রক্ত দিতে হবে।
ওর অবস্থা দিন দিন যা হচ্ছে তাতে বাচ্চা মা কাউকে বাঁচানো সম্ভব হবে না।
ওকে পর্যাপ্ত খাবার খাওয়ানোর ব্যবস্থা করুন৷
পারলে এখান থেকে সরিয়ে নিয়ে জান।
নির্ঝর এর অস্তিত্ব থেকে দুরে যেখানে ওর সাথে আপনারা সবাই থাকবেন৷
ওকে নির্ঝর এর কমতি কখনো ফিল করতে দিবেন না।
যদিও নির্ঝর এর কমতি কখনোই ছায়াকে ছাড়বে না।
তাও যতোটা পারেন।।
আপাততঃ ছায়া ঘুমাক।
ঘুম থেকে উঠলে ওকে খাবার দিয়েন।
ডক্টর চলে যায়।
রুহি নিচে আসে ছায়ার জন্য কিছু রান্না করতে।
নয়লা বেগম ছায়ার পাশে।
রুহির চোখে পানি বার বার মুছে দিচ্ছে কিন্তু আবার ভরে যাচ্ছে।
ছায়ার অবস্থা দেখার মতো অবস্থা পরিবারের কারোর নেই।
সত্যি মেয়েটাকে দিন দিন এভাবে মরতে দেখাটা সহ্য হচ্ছে না করোর।
রুহি রান্না করছিল তখন রান্না ঘরে আবির প্রবেশ করে,
–তুমি কাঁদছো
হটাৎ আবিরের কন্ঠ পেয়ে রুহি চমকে ওঠে।
এ বাড়িতে রুহি এই ৩ মাস আছে কিন্তু এই ৩ মাসে আবির কখনো তার সাথে কথা বলে নি।
রুহি চোখ মুছে বলল,
–জি না ভাইয়া।
–কেঁদো না ছায়ার অবস্থা দেখে কষ্ট হচ্ছে সবার কিন্তু তুমি অসুস্থ হলে কে দেখবে বলো আমাদের।
তুমি এক মাত্র ভরসা।
তুমি সেদিন না আসলে কি করে যে কি সমাল দিতাম আমি নিজেও জানি না।
–এভাবে বলবেন না।
আমার কেউই নেই ছোট থেকে যখন স্কুলে ভর্তি হয়েছি প্রতিট স্কুলে এবং কলেজেও ছায়াকে পেয়েছি৷। ওকে আমি সব সময় পরিবার মনে করেছি৷
আমার ত কেউ নেই ওর এমন বিপদে ওকে একা ফেললে আমাকে নেমখারাম এর খেতাব নিতে হবে।
ও কখনো আমার দুঃখের সময় আমাকে ছেড়ে যায় নি।
–তুমি খুব ভালে রুহি৷
নাহলে দেখো না তমা ত ছায়ার আপন বোন নাহলেও চাচাত বোন রক্তের সম্পর্ক।
তাও আজ ছায়ার এই অবস্থার জন্য এক মাত্র তমাই দায়ি।
–আপনার অবস্থা ও কিন্তু ভালো না।
তমা শুধু ছায়াকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় নি আপনার ভালোবাসা কেও ও মজা বানিয়ে ছেড়েছে।
–আমার কথা বাদি দেও ভাইকে হারিয়ে সব কিছু শূণ্য শূণ্য লাগে।
–সত্যি নির্ঝর ভাই এ বাড়ির বট ছায় ছিল।
–হুম।
–খাবার হয়ে গেছে আমি ওকে খাইয়ে দিয়ে আসি।
–আচ্ছা।
–আপনিও খেয়ে বেরিয়ে পরুন।
–হ্যাঁ আমাকে ত অফিস যেতে হবে।
রুহি আবিরকে খাবার দিয়ে ছায়ার রুমে চলে আসে।
আবির খেয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে।
ছায়াকে দেখে এখন শুধু কষ্ট হয়।
চোখের নিচে কালো দাগ।
রোগাটে এক দম রোগাটে।
চোখ দুটো গর্তে চলে গেছে।
দেখে মনে হয় তার অস্তিত্ব কিছু দিনের মধ্যে বিলিন হয়ে যাবে।
নয়লা বেগম সারাট দিন বসে থাকে মেয়েটার কাছে।
রুহি চেষ্টা করে কিছু খাইয়ে দেবার।
কিছুতেই কিছু হয় না।
নির্ঝর এর কমতি কোন মতে ছায়ার উপর থেকে যাবে না।
ছায়াকে কোন মতে ঘুমিয়ে দিয়ে রুহি গোসলে চলে যায়৷
নয়লা বেগম ছায়াকে গভীর ঘুমে মগ্ন দেখে নামাজ পড়তে যায়।
ছায়া রুমে একা।
কেউ নেই চারিদিকে,
নিস্তব্ধ পরিবেশ।
ঘুমের মাঝেই ছায়ার মনে হতে লাগলো কেউ তাকে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করছে।
খুব কাছে এসেছে ছায়ার।
এতোটাই কাছে যে তার নিশ্বাস আর ছায়ার নিশ্বাস মিশে যাচ্ছে এক সাথে।
–তোমার কাছ দিয়ে আসা ঘ্রাণ টুকুতেও শুধু মাত্র আমার অস্তিত্ব ছায়া।
অন্য কারোর না৷। খুব জলদি ফিরে আসব।
তোমার থেকে আর দুরে থাকবো না।। খুব ভালোবাসা দিবো তোমায়।।
এতোই ভালোবাসা দিবো যে তুমি এই কষ্টের দিন গুলোকে ভুলে যাবে।
লোকটা ছায়ার ঠোঁটে গভীর স্পর্শ দিয়ে চলে আসে।
লোকটা সরে আসতে ছায়া আবছা চোখ দু’টো খুলে আবার বুজে নেয়।
এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি এক মাত্র ঘুমি ছায়াকে দিতে পারে।
চলবে,