তোর উঠানে বিকাল ছায়া পর্ব-২৬ এবং শেষ পর্ব

0
1231

#তোর_উঠানে_বিকাল_ছায়া🥀
২৬ তম খন্ড (অন্তিম খন্ড)
#লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা

হুস আসতে নিজেকে অন্ধকার ঘরে আবিষ্কার করে তমা।
হটাৎ কি হলো কিছুই বুঝতে পারছে না।
মাথা ঘুরাচ্ছে।
আগের কথা চিন্তা করতে চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতে-ই মনে আসছে না কিছু।।
হটাৎ রুমের লাইট জ্বলে উঠে
সামনে টিভিতে তার খুনের শিকার এবং সমস্ত পাপের শিকার সে নিজে করেছে এটা দেখতে পায়৷
তমা এটা দেখে চোখ কপালে উঠে যায়।
কি হচ্ছে? ও এগুলা কি করেছে?
দেখতে থাকে চারিদিকে কেউ আছে নাকি।
জদলি উঠে গিয়ে টিভি বন্ধ করতে গেলেই ওর হাতে হাতকড়া পরে।
–কে আমাকে এভাবে হাত কড়া পরায়। মানে কি ছাড়ুন আমাকে।
–সরি ম্যাম।
কনস্টেবল তমাকে নিচে নিয়ে আসে সেখানে সবাই উপস্থিত।
নির্ঝর পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে।
–কি হচ্ছে টা কি এগুলা তোর জানিস না আমার বাবা কে এক একটাকে ধরে জেলের ভাত খাওয়াবো। (চিল্লিয়ে)
–আমাকে জেলের ভাত খাওয়ানোর আগে নিজে জেল থেকে বেরোনোর রাস্তা খোঁজো তমা।
–বাবা কই আমাকে বাবাকে ফোন করতে দেও এক বার।
সব কয়টাকে মেরে দিবো।।
তমা ছুটার চেষ্টা করছে আর কথা গুলো বলছে।
নির্ঝর তমার দিকে তাকিয়ে কাউকে ইসারা করলো।
তখন বাইরে থেকে তমার বাবকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে আসা হলো।
তমা সেটা দেখে চুপ হয়ে গেল।
–তমার বলার মতে ওর আর ওর বাবার সম্মেলনে করা খুনের সংখ্যা ৩ কিন্তু না এটা হবে ৪।
কারন নিজের মাকে তমা মেরেছে।
হটাৎ আবিরের কথায় সবাই অবাক হয়ে যায়।
–হ্যাঁ ভাইয়া আজিজ রায়হায় না হয় তার স্বামী একটা সার্থপর কিন্তু তুমি তমা তোমার ত মা। জন্ম দিয়েছিল তিনি তোমায়।
শুধু মাত্র ছায়া কে বাঁচাতে চেয়েছিল বলে তুমি তাকেও মেরে দিলে তমা।
ছি তমা ছি ঘৃণা হয় এটা ভেবে আমি এতো নিচু মনের একটা মেয়েকে কখনো ভালোবাসি বলেছি।
ভাইয়া ওদের শাস্তির ব্যবস্থা করো।
–ওদের শাস্তি টা খুবই কঠিন এখানে আর এই বাপ মেয়ে থাকবে না।
ওদেরকে মহাসাগরে অবস্থিত ব্রিটিশ দের তৈরি করা পানির তলের জ্বেলে বন্দি থাকতে হবে চিরজীবন৷
যতো দিন না ওদের মৃত্যু হয়।
–এটাই ভালো হবে।
আমি চেয়েছিলাম তোর জন্য শাস্তির ব্যবস্থা কম করার কথা বলতে আপু তোকে আপু বলতেও ঘৃণা হয় এখন।
আমার নয় হয় পালিত মা তোর ত আপন মা।
কি করে পারলি তুই।
ছি।
জঘন্য থেকে জঘন্য তমা তুই।
নিয়ে জান ওকে। (ছায়া)
পুলিশ হেফাজতে তমাকে আর তমার বাবাকে নির্ঝর কথা মতো
পৃথিবীর সব থেকে কঠিন কারাগারে পাঠানো হয়।
ওদের পাপের শাস্তি হয়ত এতেও কম।
রুহি সব দেখছিল।
সব বুঝতে পেরে চোখের পানি মুছে আবিরের দিকে তাকায়।
নির্ঝর বুঝতে পেরে নয়লা বেগম কে ইসারা করে।
তিনি তার রুমে চলে যায়।
নির্ঝর ছায়াকে নিয়ে রুমে চলে আসে।
আবির রুহির দিকে গিয়ে বলে,
–সরি বউ ভুল হয়ে গেছে।
–সরি আমি অনেক ভুল বুঝছি কিছু সময়ের জন্য হলেও।
–নারে পাগলি তোরে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।
আর কাঁদতে দিবো না।
রুহির চোখের পানি মুছিয়ে বলল আবির।
রুহি মৃদু হেসে আবিরের বুকে মুখ গুজলো।
সত্যি শান্তি লাগে এখানে মাথা দিলে।
সারা দিনের ক্লান্তি দুর হয়।
মনে হয় জেন কতো আপন করে পেলাম তাকে।
,
–ছায়া।
–হুম।
–কি করো।
–ভাবছি।
–কি ভাবছো।
–আমার জমজ বাবু হলে সামলাবো কি করে?
-;কেন?
–আমি মেডিকেল পরিক্ষা বা কি করে দিবো।
আমার ত এমনে ১ বছর পিছায় গেলাম।
–আরে প্যারা নাই চিল আমি আছি ত।
–কি করবেন?
আমার ঘটতি কি ভাবে মিটাবো।
–আমি দেখবো সেটা সরকারি না হলে বেসরকারি ভাবে পড়াবো চিন্তা করো না।
–আপনি এতো ভালো কেন?
–ও মা এটা কেমন কথা।
–এটা সত্যি কথা আমার এতো ভালো লাগে কেন?
নির্ঝর এবার সত্যি কারেন্ট সক্ট খেলো বোধহয়।
ছায়া তাকে কখনো এভাবে বলে নি আজ প্রথম।
–ছায়া মাথা ঠিক আছে তোমার?
–হ্যাঁ আছে ত মাথা ত পুরাই ঠিক আছে।
–মনে তুমি ঠিকঠাক মেজাজে এসব বলছো

–হ্যাঁ ঠিকঠাক মেজাজে বলছি
–ওরে দুষ্টু।
–হ্যাঁ আমি ত দুষ্টু সাথে বাবুর আম্মু।
–আচ্ছা বাবুর আম্মু। অসুস্থ বলেই না বেঁচে যাও।
ছায়া নির্ঝর এর কথা শুনে ২৪ পাটি দাঁত বের করে হেঁসে দেয়।
,
,
,
,
কেটে গেল ২ টা বছর,
আজ ছায়ার মেডিকেল পরিক্ষার রেজাল্ট দেওয়ার কথা।
রুহি ভার্সিটিতে এডমিশন নিয়েছে। এমনিও দু’জন ভালো স্টুডেন্ট ছিল।
কিন্তু ছায়ার ইচ্ছে ছিল ভার্সিটিতে পরার আগে থেকেই তাই সে ভার্সিটির পিপারেশন নেয়।
আর ছায়ার পিছনে নির্ঝর সারা দিন রাত এক করে দিয়েছে।
বউ এর শখ ডক্টর হবে।
পুরন না করে পারা যায়৷
ছায়া বেশ সুস্থ হয়ে যায় বেবি হওয়ার পরে।
ছায়ার একটা মেয়ে বাবু আর একটা ছেলে বাবু হয়।ছেলে বাবু টার নাম রাখা হয় আফনান চৌধুরী । আর মেয়ে বাবু টার নাম রাখা হয় নাবিলা চৌধুরী।
বাসার সবাই তাদের নিয়ে ব্যাস্ত থাকে।
ছায়ার মেডিকেল পরার স্বপ্ন টা কিছুটা রুহির জন্য সম্ভব হয়েছে।
রুহি সব সময় বাচ্চা দুটোকে সামলে রাখতো।
বাচ্চা দুটোর ২ বছর বয়স হতে চলল।
ছায়া পায়চারি করছে,
রুহি বলছে শান্ত হতে কিন্তু ছায়া ত ছায়া।
ওর চিন্তায় মাথা ফেটে যাচ্ছে।
কিছু সময় পর নির্ঝর আর আবির আসে।
ছায়া নির্ঝর এর দিকে তাকিয়ে দেখে নির্ঝর এর মুখটা ফ্যাকাসে।
ছায়ার এবার আরও চিন্তা হতে শুরু করে
–কি হয়েছে নির্ঝর?
বলুন না।
নির্ঝর নিশ্চুপ হয়ে বসে বিছনায়।
তা দেখে ছায়ার আরও ভয় হয়।
–নির্ঝর হচ্ছে টা কি বলুন না।
ভাইয়া আপনি ত বলুন।। (আবির কে উদ্দেশ্য করে)
–ভাইয়া ই বলতে পারে গো বইন আমি জানি না।
–নির্ঝর প্লিজ বলুন।
–কি আর বলব ছায়া।।
–কেন হয় নি চান্স। (কাঁদো শুরে)
–না।
–মানে.
–মানে তোমায় বেসরকারি মেডিকেল এ আর কষ্ট করে পড়তে হবে না।
নির্ঝর এর কথা শুনে রুহি লাফিয়ে উঠে।
ছায়া নির্ঝর কে একটা কিল দেয়,
–ভয় পাইয়ে দেয়।। ।
নির্ঝর হেসে দেয়।
নয়লা বেগম মিষ্টি নিয়ে আসে।
সবাই মিষ্টি মুখ করে।
ছায়ার জন্য রাতে ছোট করে একটা অনুষ্ঠানের মতো করা হয় বাসার সবাই মিলে।
অনেক রান্না করে।
রাতে খাবার সময়।
হটাৎ সবার মাঝ থেকে রুহি উঠে দৌড় দেয় ওয়ারুমের দিকে।
ছায়া ব্যাস্ত হয়ে রুহির কাছে প্রশ্ন করে কি হয়েছে।
রুহির শরীর খারাপ হতে শুরু করে।
–আবির রুহিকে ঘরে নিয়ে চল।
নির্ঝর এর কথায় আবির রুহিকে নিয়ে বেডরুমে শুইয়ে দেয়।
নির্ঝর চেকাপ করতে বসে।
কিছু সময় পর মুখে হাসি টেনে বলে,
–কনগ্রাস ভাই।
নির্ঝর এর হাসিতে কারোর বুঝতে বাকি রয় না কাহিনি কি।
ছায়া গিয়ে রুহিকে জড়িয়ে ধরে।
–আমার সুন্টুমুন্টু মা হবে রে।
মেরে জান টু৷
ময়না টু৷
আমি ভিশন খুশি।
–বাহ এক দিনে এতো কিছু এতো শুখ আল্লাহ আমার কপালে লিখছে।
আমি নামাজ পড়ে দিবো আজি।
নয়লা বেগম গিয়ে বউ কে আদর করে দিলো।
পরিবারের সবাই খুশি।
আজ।
১৬ কলা যে পূর্ণ হলো।
আর কি চাই।
ছেলে মেয়ে নাতি নাতনি কে নিয়ে শুখি পরিবার।
আহা এ কি মধুর পরিবেশ।
সত্যি অসাধারণ।
পরিবারের সবাই খুশি।
ভালোবাসা আনাচে কানাচে ভরপুর।
শুধু শুধু কি বলে একটা কালো রাতের পর দিন ঠিকি আসে।
সূর্য এমন ভাবে কিরন দেয় যে চির চেন অন্ধকারকে ভিশন অচেনা মনে হয়।
হাজার ঝড়ের পর তাদের পরিবারে শুখ।
নির্ঝর এর উঠানে তিব্র রোদে বিকালের মিষ্টি ছায়া তার জীবন টাকে আরও রঙিন করে দিলো।
আজ তবে এইটুকু থাক।
ওদের কে এবার বিদায় জানানোর পালা।
সমাপ্তির খাতাটা টেনে দি।
❤️সমাপ্ত❤️