তোর উঠানে বিকাল ছায়া পর্ব-২৪

0
663

#তোর_উঠানে_বিকাল_ছায়া🥀
২৪ তম খন্ড (সব রহস্য খোলাসা)
#লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা

–নির্ঝর কি হচ্ছে এগুলা।
আমাকে বুঝান৷
প্লিজ রুহির সাথে,
–তোমার কি মনে হয়।
আমি কোন ক্ষতি হতে দিবো।
বিশ্বাস নেই আমার উপর।
–আছে ত খুব বিশ্বাস আছে তাই জন্য ত চুপ ছিলাম।
–কথা দিচ্ছি আবার সেই শান্তি ফিরিয়ে আনবো।
আবার সুখের মুখ দেখবো সবাই।
–সত্যি ত!
–৩ সত্যি।
নির্ঝর ছায়ার গালে হাত রেখে কথাটা বলে।
ছায়া চোখ বন্ধ করে নেয়।
অশান্তি গুলো মাথায় চেপে বসেছে।
এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তির একটাই উপায় তা হলো এই রহস্য ভেদ করে আসল সত্যি জানা৷
–ছায়া!
–জি!
–গল্পটা শুনবে?
–কিসের গল্প।
–এক রাজার গল্প।
ছায়া চোখ খুলে তাকায়।
নির্ঝর এর চোখে মায়া আকা।
ছায়া মৃদু হেসে বলে,
–বলো শুনি।।
–ভালোবাসি।
–গল্প শুনাবেন না।
–আজ না সঠিক সময় এলে শুনাবো।
ঘুমাও।
নির্ঝর ছায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
একটা সময় ছায়া ঘুমিয়ে যায়।
নির্ঝর ছায়াকে বুকে নিয়ে ভাবতে থাকে পুরোনো দিনের কথা।
বয়স নির্ঝর এর তখন মাত্র ৬,
ছোট ভাইকে পৃথিবীতে আনতে গিয়ে মা মারা যায়৷
ছোট্ট ছেলেটি মাত্র ৬ বছরে যেন অনেক বড়ো হয়ে গেছিল।
নিজের স্কুলের টাই নিজে বাধা শিখে গেল।
জুতার ফিতা গুলো নিজে বাঁধা শিখে গেল।
যেখানে স্কুল যাবার আগে মাকে না পেলে ছেলেটি বাড়ি মাথায় করে নিতো।
সেখানে নিজের ব্রেকফাস্ট নিজে করে এখন।
কারোর খাইয়ে দেওয়া লাগে না।
৬ বছর বয়সে মাত্র ক্লাস ১ এ পড়ে সে।
বাবার অফিস।
ভাই এর জন্য একটা পালিত মা রাখা।
কিন্তু সে ভাই এর ভালো খেয়াল রাখতে পারে না।
ভাই কাঁদে সারা দিন কাঁদে।।
স্কুলে যাবার আগে যে ছেলে দৌড়ে দৌড়ে ব্রেকফাস্ট করত আজ সে ছেলে ভাই এর কপালে চুমু দিয়ে নিচে আসে।
এক জন ড্রাইভার তাকে পৌঁছে দেয় স্কুলে।
আর নিয়ে আসে।
এভাবে বেশ কিছু দিন কাঁটার পর,
নির্ঝর এর বাবা বুঝতে পারেন তার ছেলে দুটোর জন্য কোন মা লাগবে।
তখন তিনি ঘরে এলটা লাল টুকটুকে বউ নিয়ে আসেন।
যে পরির মতো আসে নির্ঝর এর জীবনে।
মায়ের মতো খেয়াল রাখে।
ভালোবাসে।
কিন্তু শুধু মাত্র একটা জিনিস এ সে নির্ঝর কে কষ্ট দিতো তা হলো আদনানের বিষয়ে।
নয়লা বেগম নিজের চিরটা জীবনে শুধু কষ্ট করেছে৷
নির্ঝর এর জন্য
আবিরের জন্য।
নিজের ছেলেটাকে ত সে কাছেই পায় নি।
ভাগ্যের এক বাজে খেলা এটা৷।
নির্ঝর এর বয়স তখন ৮।
একটা ফুটফুটে বাচ্চা কোলে এক ভদ্র মহিলা নির্ঝর এর বাবার কাছে আসেন।
ভদ্রমহিলা দেখতে বেশ স্মার্ট।
কিন্তু হিজাব পরিহিত সে।
কিছু সময় পর তার পিছন দিয়ে আসেন একজন ভদ্রলোক।
নির্ঝর লক্ষ করে বুঝতে পারে তারা এক সুখী দম্পতি।
তারা বাবার ঘরে যায়।
নির্ঝর তখন বই নিয়ে বাবার ঘরে যাচ্ছিল।
বাকি দুনিয়া, আবির, নয়লা বেগমের কাছে নির্ঝর এর বাবা ভীষন রাগী মানুষ হলেও,
নির্ঝর এর কাছে তার সব থেকে কাছের বন্ধু ছিল সে।
তখন নির্ঝর এর পড়ার টাইম ছিল।
তাই সে বাবার রুমে গেল।
ওই দম্পতির সাথে।
ভদ্রমহিলা নির্ঝর কে দেখে হাসি মুখে প্রশ্ন করে,
–কেমন আছো বাবা?
–আলহামদুলিল্লাহ আন্টি আপনি?
–আলহামদুলিল্লাহ বাবা।
আপনার ছেলেট ভীষন মিষ্টি মি.চৌধুরী।
–ধন্যবাদ মিসেস.খান।
বসুন।
তারা দু’জন বসে।
হটাৎ তাদের কোলে কথা মেয়ে বাবুটা কান্না শুরু করে।
তখন নির্ঝর বলে,
–আন্টি কিছু মনে না করলে ওকে আমার কাছে দিবেন?
–তুমি সামলাতে পারবে বাবা।
–হ্যাঁ আমি আমার ভাইকে সামলায়।
ভদ্রমহিলা নির্ঝর এর কোলে বাচ্চা টাকে দিলো।
সত্যি বাচ্চা টা নির্ঝর এর কোলে গিয়ে থেমে গেল।
–মিস্টার. চৌধুরী আজিজ রায়হায় এর প্রোমোশন টা আটকান প্লিজ।
–কেন?
–আমার পরিবার কে মারার চেষ্টায় আছে আমার নিজের ভাই।
–কি বলছেন।
–হ্যাঁ।
আমার বাবার দেওয়া সম্পত্তি দুই ভাগে ভাগ করার পর এক অংশ তার ছিল অন্য অংশ আমার৷
আমার তখন কিছুই ছিল না বাবা যখন মারা যায়৷
কিন্তু বড়ো ভাইয়ার হাতে চাকরি ছিল।
আর ছিল তার স্ত্রী।
তখন থেকেই আমায় আলাদা করে দেয়।
ধিরে ধিরে নিজের বড়ো বিজনেস দাঁড় করায়।
আমি আমার ছোট্ট মেয়ে ছায়ার নামে সব দিয়ে দিয়েছি।
আমার মৃত্যুর পর সব তার৷। কিন্তু আমরা মারা গেলে আমার মেয়েটার জীবন টা শেষ হয়ে যাবে। ওর ১৮ বছরের আগে মৃত্যু হলে ওর সম্পত্তি একটা এতিম খানা পাবে।
আমার বিশ্বাস আমরা থাকি না থাকি৷
১৮ বছর হতে হতে ও বুঝতে পারবে সব।
দয়া করুন।
আপনি প্রোমোশন টা আটকে দিন ভাইয়ার।
–দেখুন মিস্টার. খান আপাদের কাছে কোন প্রমাণ নেই নিছক শুধু মাত্র সাক্ষীর ভিত্তিতে আমি তার প্রোমোশন আটকাতে পারি না।
–এই জন্য ত আপনার কাছে আসা।
–ক্ষমা করবেন এটা সম্ভব না।
সে দিন নির্ঝর সব শুনেছিল।
আর ঠিকই ধরেছেন বাচ্চা টা ছিল ছায়া।
সে দিন ওই দম্পতি চলে যাবার পরের দিন আজিজ রায়হান এর প্রোমোশন হয়।
আর তার মাত্র ৭ দিনের মাথায় মৃত্যু হয় সেই দুই দম্পতির।।
ব্যাস নির্ঝর ছোট থেকে ছায়ার উপর অত্যাচার হতে দেখে এসেছে
ছায়া শখ এর উপর সব সময় প্রভাব দিয়েছে তমা।
আজো তাই করছে।
নির্ঝর এর পিতা কখনো নিজের ছাড় অন্য কিছুকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে নি।
তাই আজ ছায়া মা বাবা হারা এতিম।
যদি নির্ঝর এর বাবা আদনান কে মেনে নিত তবে হয়ত আজ এমনটা হতো না।
নয়লা বেগম কে নিজের সন্তান ছাড়া থাকতে হতো না।
এটাই কারন নির্ঝর কখনো আদনান কে মারতে চায় নি।
তার মা যে তাদের জন্য অনেক করেছে।
যদি সে দিন প্রোমোশন আটকে দিতো আজিজ রায়হান এর তবে হয়ত আজ ছায়ার মা বাবা জিবিত থাকত।
ছায়াকে বাঁচিয়ে রাখার একটাই কারন ছিল। আজিজ রায়হান এর।
তমার সাথে তমার প্রতিটা পদক্ষেপ এর সাথে ছিল আজিজ রায়হান।
সম্পত্তি আর সম্পত্তি কেউই বুঝে না আজ মরলে যে কাল দু দিন।
অদ্ভুত এ দুনিয়া।
ছায়া ছোট থেকেই কষ্ট পেয়ে এসেছে।। কিন্তু এখন সময় তাকে তার বিচার দেওয়ার৷
উপযুক্ত প্রমান পেয়ে তবে আজিজ রায়হান আর তমাকে শাস্তি দিবে নির্ঝর।
যার জন্য সে অপেক্ষা করছে সঠিক সময়ের।
,
বর্তমান,
ছায়া গভীর ঘুমে মগ্ন।
নির্ঝর ছায়ার কপালে চুমু দেয়।
একটা বাচ্চা মেয়ে লাগে ছায়াকে।
,
এদিকে,
চোখের পানি গুলো যেন বাঁধ ভেঙেছে।
ঝরতেই আছে।
কোন মতেই থামছে না।
রুহি জানালার কাছে গিয়ে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে।
শাড়ির আঁচল নিচে পরেছে।
সে দিকে তার খেয়াল নেই।
শাশুড়ী মায়ের রুমে এই জানালা টা তার ভীষন প্রিয়।
কাজ না থাকলে এখানে এসে বসে থাকতো।
কিন্তু আজ যেন ভিশন কষ্ট গুলে এই জানালার বাতাস শুনতে পাচ্ছে।
কেউ না বুঝলেও প্রকৃতি যেন বুঝতে পারছে মনের মাঝে চাপা কষ্ট অনুভব করছে রুহি।
–মা রে আর কতো বসে থাকবি আয় খেয়ে নে।
হটাৎ নয়লা বেগমের কথায় ধ্যান আসলো রুহির।
–না মা তোমরা খেয়েছো এটাই অনেক।
–মা রে এমন করিস না মা।
–মা প্লিজ আমার গলা দিয়ে খাবার নামবে না।
নয়লা বোগম নিজের অসহায় চেহারাটা আবার এক বার রুহির মাঝে দেখতে পাচ্ছে।
যদিও নয়লা বেগমের কারন অন্য আর রুহির কারন অন্য তাও আজ নিজের বউ দের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পেয়ে ভীষন চাপা কষ্ট অনুভব করছেন তিনিও।
চলবে,