#দোটানা ২
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_২০
আয়ান কোথায় যাচ্ছো?
দেখতে পাচ্ছো না অফিস যাচ্ছি।
আমাকেও সাথে নাও তোমার অফিস দেখে আসবো।
আমার অফিস কোনো জাদুঘর নয় যে গিয়ে সবাইকে দেখতে হবে।
কথাটা বলে আয়ান আর দাঁড়ালো না সেখানে গাড়ি স্টার্ট করে দিলো।
কেনো শুধু পালাই পালাই করো আয়ান আমার থেকে?কি নেই বলো আমার মাঝে যা তোমাকে আমার দিকে আকৃষ্ট করে না?আমিও দেখে নিবো কতোদিন আমার থেকে পালিয়ে বাঁচো।ধরা তো তোমাকে দিতে হবেই।
মি.এ্যরোগেন্ট,বেচারি আরোহীর সাথে আপনার এতো এ্যরোগেন্সি দেখানোর মানে জানতে পারি?
আগে বলো তুমি কেনো আমার গাড়িতে চেঁপেছো?আয়ান গম্ভীর কন্ঠে সামনে দৃষ্টি অটল অবস্থায় প্রশ্ন করলো আরুশিকে।আরুশি আলতো হেসে জবাব দিলো।
আমার মন চেয়েছে তাই।
মন চাইলে অফিস যাবে না,মন চাইলে জব ছাড়বে,আবার মন চাইলে আমার গাড়িতে চড়ে বসবে?
মন চাইলে অফিসও যাবো।দাঁত কেলিয়ে বললো আরুশি।
তুমি এখন আবার জবে যাবে?
না ভুঁত পুরিতে যাবো।
হোয়াট!
আরে আপনি তো গাড়িটা নিয়ে অফিস যাচ্ছেন যেখানে আমি জব করি।তবে তা আবার জিজ্ঞেস করছেন কেনো কোথায় যাবে।যত্তোসব।
আচ্ছা কোনো কথা সোজা বলতে পারো না তুমি?
আমি সোজাই বলি।বুঝেন আপনি উল্টো।
তোমার সাথে কথা বলাই ভুল।
তবে কথা বলেন কেনো?হুহ।
সায়ান বেলকোনি দিয়ে আয়ানের সাথে আরুশিকে বেরুতে দেখেছে যাতে ভিতরটা জ্বলে পুড়ে ছাই হচ্ছে ওর।আরুশির ছোটে আসা দেখে অল্পতে মনে হলো আরুশির সাথে কাটানো এমনই একটা মুহুর্তে।
সেদিন আরুশি সায়ানকে কিস করতে দেয় নি বলে রাগ করে এভাবেই গাড়িতে উঠে চলে আসছিলো আরুশির পাশ থেকে,তখন আরুশি ছোটে এসে ওর গাড়িতে চেঁপে বসলো।সায়ান কোনো মতে ওকে নামাতে পারলো না।এদিকে সেদিন আরুশি ওকে যা নাকানি চুবানি খাইয়েছে তা শুধু সায়ানই জানে।অবশেষে আরুশির সাথে কথা বলতে বাধ্যই হলো সে।রাগ করে কখনোই আরুশির সাথে বেশি সময় থাকতে পারতো না সায়ান।আরুশিকে জিম্মি করার ফন্দিতে নিজেই যেনো ওর কাছে জিম্মি হতো।আরুশি বরাবরই হাসিখুশি আর চঞ্চল মেয়ে। আরুশির সব কথা সব আচার আচরন সায়ানের ভালোই লাগতো।কিন্তু আজ বড্ড ভয় হচ্ছে সায়ানের।আরুশি অন্য জনের সাথে আছে।যদি আরুশিকে সেই অন্যজনের ভালো লেগে যায় আর আরুশিরও তাকে ভালো লাগে তখন কি হবে?প্রশ্নটা মাথায় ঘোরপাক খেতেই সায়ান কাউকে ফোন ঘোরালো।
ট্রাফিকে দাঁড়ালো আয়ানের গাড়ি,আরুশি জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছে আয়ান ফোনে কোনো ক্লায়েন্টের সাথে কথা বলছে তখন।হঠাৎ আরুশি দরজা খুলে বাইরে ছোটলো।আয়ান অবাকত্ব নিয়ে প্রশ্ন করলো।
এই মেয়ে কোথায় যাচ্ছো?
আরুশি কোনো উত্তর না দিয়ে বেড়িয়ে গেলো।আয়ানও বেশ বিরক্তি নিয়ে ওর পিছন গেলো।
এই মেয়েকে নিয়ে আর পারিনা।
আয়ান এগিয়ে গিয়ে দেখলো আরুশি একটা ভিক্ষুক মহিলাকে রাস্তা থেকে উঠাচ্ছে, আধ বয়সী মহিলাটি,কেউ একজন তাড়াহুড়োয় যেতে গিয়ে মহিলাটিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে যায়,সে এমন লোক পিছনে ফিরে তাকানোরও প্রয়োজন মনে করে নি যে কাকে ফেলেছে।আরুশির চোখে বিষয়টা গেলে আরুশি ছোটে গিয়ে উনাকে উঠালো।আশেপাশের কেউ তেমন এগিয়ে এলো না।আজকাল সবাই যে নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত,অন্যের কষ্ট আর খারাপ অবস্থা দেখার সময় কই তাও গরীবের।আরুশি
উনাকে একটা ভালো জায়গায় বসিয়ে পাশের দোকান থেকে এনে পানি পান করালো।তারপর উনার হালচাল জিজ্ঞেস করে উনার এই অবস্থার কারন জানতে গেলে উনি বললেন ২ জন ছেলে থাকা সত্ত্বেও কেউ তাকে মায়ের মর্যাদা দেয় নি তাই ভিক্ষা করে পেট চালায়।তখনি পিছনে এসে আয়ান বললো।
কি করছো আরুশি!রাস্তায় এসব ভিক্ষুকদের সাথে এমনটা হওয়া স্বাভাবিক তাই বলে তো তুমি সুপারগার্ল না যে সবাইকে প্রোটেক্ট করতে পারবে,চলে আসো উনাকে উনার হালে ছেড়ে।
হ্যাঁ আমি সুপারগার্ল না তবে আমি একজন মানুষ, আর সে হিসেবে যতোজনকে পারি সাহায্য করবো।আপনি জান।
আরুশি ৪ হাজার টাকা ধরিয়ে দিলো মহিলাটির হাতে তারপর বললো।
এই চার হাজার টাকা রাখেন,আমার কাছে বর্তমানে আর নেই।আপনার বাড়ি কোথায় বলেন?আমি যদি পারি চেষ্টা করবো আপনাকে কোনো কাজ পাইয়ে দিতে।মহিলাটি উনার বাড়ির ঠিকানা বললেন।পাশেরই এক বস্তিতে।তখন আয়ান একটা কাগজ এগিয়ে দিলো মহিলাটির দিকে তারপর বললো।
কাগজের এই এড্রেসে যোগাযোগ করে বলবেন আমাকে আয়ান চৌধুরী পাঠিয়েছেন কাজের জন্য।আপনার কাজ হয়ে যাবে। তা থালাবাসন ধোঁয়ায় কাজ পারবেন তো?
জি বাবা।
ওকে ফাইন।তবে এখন বাড়ি যান।
তোমাদের দুজনকেই যেনো আল্লাহ খুশি রাখেন বাবা মা।আল্লাহ যেনো তোমাদের সংসার সবসময় সুখ শান্তিতে সমৃদ্ধ রাখেন।
কথাটা বলে মহিলাটি চলে গেলো।আয়ান আরুশি একে ওপরের দিকে অবাক দৃষ্টিতে একপলক তাকিয়ে আবারও চোখ সরিয়ে নিলো।কারন মহিলাটি ওদের স্বামী স্ত্রী মনে করেছে।
আরুশি উঠে পরলো গাড়িতে আর আয়ানও।ট্রাফিক ছেড়ে গেলো অল্পক্ষণে।একটু চুপচাপ থাকার পর আরুশি জিজ্ঞেস করলো।
আপনি তো গরীব দেখতে পারেন না তবে ওই মহিলাটিকে সাহায্য কেনো করলেন?
জানিনা।চুপ করে বসো আমার বেশি কথা পছন্দ না আর তুমি অনেক বেশিই কথা বলো।
আয়ানের কথায় আরুশির কেমন একটা খটকা লাগলো,আয়ান যেনো ওর উক্ত কথার নিচে বড় কোনো সত্য চাঁপা দিয়ে গেলো।
এই মি.এ্যরোগেন্টকে যতোটা বাজে মনে করেছিলাম এ দেখি তার এক কোনাও নয়।এখানে মনে হয় অন্য রহস্য আছে যা আমাকেই উন্মোচন করতে হবে।
আয়ান কেবিনে বসে আছে তবে আজ কোনো কাজে তার মন লাগছে না।আজকে সকালে আরুশির বলা কথাগুলো বার বার মনে চলাচল করছে।আরুশির আয়ানের ব্যক্তিত্বের লোক পছন্দ কথাটা যতোটা প্রশান্তি আয়ানের মনে এনে দিচ্ছে ততোটাই খারাপ লাগা কাজ করছে এই কথাটা ভেবে যে আরুশি বলেছে সে ভালোবাসে না আয়ানকে।তবে কি করবে আয়ান আরুশির ভালোবাসা দিয়ে তাও বুঝে উঠতে পারছে না।সে তো ছোট্টো আরুশিকে ভালোবাসে আরুশি ছাড়া কখনো কোনো মেয়ের দিকে আকৃষ্টতা অনুভব করে নি আয়ান।তবে এই আরুশির ক্ষেত্রে এমনটা কেনো ঘটছে?
রাতে সবাই খেতে বসলে সায়ান খাওয়ার মধ্যে হঠাৎ বলে উঠলো।
আমি একটা কোম্পানিতে জবের জন্য এপ্লাই করেছি।এন্ড আই হোপ আই গেট দ্যা জব।সায়ানের কথা শুনে সবাই একপ্রকার বিষম খেলো।অবাকের সহিত নিহান বললো।
জবে এপ্লাই করেছো মানে?
এপ্লাই করেছি মানে করেছি ডুড।আমি এতোটাও অপদস্ত না যতোটা তোমরা মনে করো।
হুম ভালো সায়ান।তবে তুমি আমাদের অফিসে জয়েন করতে পারতে অন্য কোথাও কেনো এপ্লাই করবে?
তুমিই তো চাও ড্যাড আমি যাতে নিজের নাম প্রতিষ্ঠা করি তোমার নাম ইউজ না করি,তারই চেষ্টা করছি মনে করো।যদি পারি নিজের নাম তুলে ধরতে তবেই না হয় ফ্যামিলি বিজনেসকে আলাদা করে দেখার চেষ্টা করবো। আর হ্যাঁ এটা সেদিনই হবে যেদিন তুমি নিজ হাতে আমাকে যোগ্য মনে করে ফ্যামিলি বিজনেস এর পার্ট বানাবে।কথাগুলো স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলে খাওয়াতে মন দিলো সায়ান।এদিকে সবার খাওয়া বন্ধ, ওদের কারো হজম হচ্ছে না সায়ানের এমন ব্যবহার।এ ওরা কোন সায়ানকে দেখছে।বাবার স্ট্যাটাস আর ক্লাস নিয়ে পরে থাকা সায়ান আজ অন্যের আয়ত্তে থেকে নিজ উদ্যোগে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে।কথাটা সত্যিই যে সহজে মেনে নেওয়ার মতো একদমই না।
রাতে আরুশি খাওয়াদাওয়া শেষে নিজের রুমের বেলকুনির ছোট দোলনায় বসে মনের সুখে গান করছিলো।
তাকে যদিও ভালো লাগছে…..কিছু প্রশ্ন মনে জাগছে,
মনে হচ্ছে যেনো ডাকছে সে আমায়……
আমি তারই কাছে জব্দ……. ভুলে থাকছি চেনা শব্দ,
আর যাচ্ছি বয়ে বয়ে দোটানায়…….
দোটানায়………
তখনি সায়ান পিছন থেকে বলে উঠলো।
সব বারের মতো এই বারও তোমার সুরের প্রশংসা করতে হবে দেখছি আরুশি।
পাক ফিরেই ঝটফট আরুশি জবাব দিলো।
আগের তো সব কিছুই মিথ্যে ছিলো,তাই প্রশংসা গুলো যে সত্যি ছিলো তা কি করে মানি?অবশ্য আজও করলে তা সত্য হবার নয়।
সব সময় আমার মনে বাজে মানসিকতাই থাকবে সেটা তো আর বাধ্যতামূলক না।
ভালো মানুষিকতা কখনই বা দেখালে সায়ান যে তার আশা রাখবো।
বাদ দাও এই বিষয়।তোমার সাথে কথায় পেরে উঠবো না।শুধু তোমার অনুভুতি জানতে এসেছিলাম আমার জবে এপ্লাই করা নিয়ে।
এখানে আলাদা কি অনুভুতি হবে সায়ান?হ্যাঁ তুমি জীবনে ভালো কিছু করতে চাইছো তার জন্য আমি অনেক খুশি।শুধু বেস্ট ওফ লাক বলতে চাই।আল্লাহ যেনো তোমায় সফল করেন।
শুধু কি এইটুকুই?
তবে আর কি চাই তোমার সায়ান?ভালোবাসি বলবো না কি?হা হা।
ভালোবাসি কথাটা কি এখন তোমার কাছে শুধু মজার বিষয়।
বিষয়টা তোমার কাছে কখন বা জীবনের চরম সত্য ছিলো?
ভালোবাসো না আর আমাকে?
সেই ভালোবাসা দিয়ে তোমার কি করণীয় সেটা জানতে পারি?
উত্তর দিতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রস্থান করলো আরুশির রুম থেকে সায়ান।আরুশির এতে কিছু যায় আসলো না আবারও গান করতে মগ্ন হলো ও।
চলবে……….
#দোটানা ২
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_২১
সায়ানের খোঁজে বাড়ি এসেছে সুইটি।পরনে কাপড় বেশ সুবিধার নয়। হাঁটুর অনেক উপরেই তার শেষাংশ।আরুশি দরজা খুলে দিলেই সুইটি নাক কুঁচকে বললো।
ইউ ডার্টি গার্ল।সরো সামনে থেকে।আমাকে সায়ান বেবির কাছে যেতে দাও,দুই দিন থেকে আমার বেবিটা কেনো জানি আমার সাথে কোনো যোগাযোগ করে নি,না জানি কেমন আছে।অতঃপর সুইটি ভিতরে যেতে গেলে ল্যাংচি দিয়ে তাকে নিচে ফেলে দিলো আরুশি।মুখ থুবড়ে পরলো সুইটি।চেঁচিয়ে উঠে বললো।
ইউ ব্লাডি বি/চ,তোর সাহস হলো কি করে আমাকে ল্যাংচি মারার?
আয় না বেবি এই ব্লাডি বি/চ এখন তোকে কোলে নিবে।কথাটা বলে আরুশি ওর চুল মুঠো করে ধরে পিঠ বরাবর কটা কিল আর ঘুষি বসিয়ে দেয়।
আর বলবি আমায় নোংরা মেয়ে বল?শাঁকচুন্নি।
মা গো মেরে ফেললো আমায়।ছাড়ো আমায়।
আগে সরি বল।
ওকে সরি, সরি ছাড়ো আমায়।
আরুশি সুইটিকে ছেড়ে দিলে সুইটি উঠে সায়ান সায়ান বলে সিঁড়ির দিকে এগুতে লাগলো, তখনি সিঁড়ি দিয়ে নামছিলো আয়ান।সুইটি আয়ানকে সায়ান ভেবে ওর দিকে ন্যাকা কান্না করে সায়ান বেবি বলে এগিয়ে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরবে তখনি আয়ান হোয়াট দ্যা হেল বলে তৎক্ষনাৎ জায়গায় থেকে সরে গেলো আর সুইটি আবারও মুখ থুবরে পরলো। আরুশি শব্দ করে হাসছে খিলখিল করে সায়ান এবং বাকি সবাই বাইরের আওয়াজ শুনে সেখানে জরো হলো মুহুর্তে। সায়ান নিচে নেমে সুইটিকে দেখে বেশ আশ্চর্য হলো।বিরক্তি নিয়ে বললো।
তুমি এখানে?
সায়ান বেবি,ওই আরুশি আমায় মেরেছে।কথাটা বলে সুইটি এগিয়ে যায় সায়ানকে জড়িয়ে ধরতে।সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে,সুইটি সায়ানকে জড়িয়ে ধরবে ঠিক তখন সায়ান ওকে টেনে নিজের রুমের দিকে নিয়ে যায়।
সুইটিকে রুমে নিয়ে গিয়ে কটমট স্বরে ওকে শাঁসালো সায়ান।
তুমি এখানে কি করছো সুইটি?আর এটা কেমন বিহেইব পুরো পরিবারের সামনে আমাকে জরিয়ে ধরতে গেয়েছিলে কেনো?
সো হোয়াট?তোমার পরিবার এখনও এতো অল্ড থিংকিং নিয়ে পরে আছে না কি?হা হা।
এক্সকিউজ মি সুইটি।আমার পরিবার ভদ্র,তোমার মতো অভদ্র নয়, আর প্লিজ নিজের অভদ্রতাকে স্মার্টনেস বলে সো ওফ করতে এসো না।সায়ান সুইটির বাজুতে চেঁপে ধরে ওকে নিজের অনেকটা কাছে নিয়ে এসে কথাগুলো বলছিলো তখন আরুশি রুমের দরজা ঢেলে ঢুকে ওদের ওমন অবস্থায় দেখে বললো।
ওপস সরি।আসলে আমার নক করা জরুরি ছিলো।আমার তো খেয়ালই ছিলো না সায়ান চৌধুরীর বড় একটা বেবি এসেছে কতো রোমান্টিক মোমেন্ট ক্রিয়েট হবে এখানে।আসলে বড় বাবা তোমাকে ডেকেছেন সায়ান তাই বলতে এসেছিলাম।তবে তুমি কন্টিনিউ করো পরে গেলেও চলবে,আমি চলি।চলে গেলো আরুশি।অস্থির হয়ে পিছু ডাক দিলো সায়ান,তবে তা শুনেও শুনলো না আরুশি।
আরুশি শুনো আমার কথা,আরুশি।
কি হয়েছে সায়ান ওই রাস্তার মেয়েকে নিয়ে তোমার এতো কি মাথা ব্যাথা? যাক না?
খবরদার যদি ওকে আবার রাস্তার মেয়ে বলেছো,আমি ভুলে যাবো তোমার সাথে আমি কখনো রিলেশনে ছিলাম।আজ থেকে আর আমাকে খোঁজতে এসো না।
তোমার সাথে ব্রেক আপ।
ব্রেক আপ মিনস।
ব্রেক আপ মিনস ব্রেক আপ।নাও গেট লস্ট ফ্রোম হেয়ার।
সায়ান।
গেট লস্ট সুইটি,নাহলে আমি গার্ড ডাকতে বাধ্য হবো।
তুমি এমনটা করতে পারলে আমার সাথে?
হ্যাঁ পারলাম,নাও গো।
সুইটি তেজ দেখিয়ে চলে গেলো।
আয়ান খেতে বসেছে এদিকে আরোহী ওকে সার্ভ করতে ব্যস্ত।আয়ান আরুশিকে বলেছিলো সার্ভ করতে তখন আরুশি উঠার আগে আরোহী এসে সার্ভ করতে শুরু করলো।আয়ান বিরক্তি নিয়ে বললো।
এই যে আমি আরুশিকে বলেছি সার্ভ করতে।
তো আমার হাতে কি কাটা লাগানো যে সার্ভ করতে পারবো না।
লাগবে না তোমার সার্ভ করা আমি নিজে নিয়ে নিবো যা লাগে।সরো সামনে থেকে।
আরে আয়ান এমনটা করো না তো,দেখো না ঠিকমতো না খেয়ে কেমন শুকিয়ে গেছো তুমি,এমনটা করলে হয় বলো?আমি এসেছি না এখন তোমার পুরো খেয়াল রাখবো।চলো হা করো আমি খাইয়ে দিই।
হোয়াট?অবাক হয়ে বললো আয়ান।
হ্যাঁ হা করো না।
আয়ানের ঘা ঘেঁষে যতোটা পারে পাশে আসার চেষ্টা করছে আরোহী।আরুশি হাসতে হাসতে নেই।
আরে আয়ান স্যার খেয়ে নিন না।এতো আদর করে তো খাইয়ে দিচ্ছে বেচারি আরোহী।বাবা মায়েরাও তো আশেপাশে নেই কাম ওন।কথাটা বলে মুখ চেঁপে হাসলো আরুশি।আয়ান বুঝতে পারলো আরুশি ওর অবস্থার উপর মজা নিচ্ছে।তবে আয়ানকে এখান থেকে বেরুতে হবে।এই আরোহীকে ও ভালো করেই চিনে।মা বাবার একমাত্র মেয়ে।সায় দিয়ে মাথায় তোলা।এক নাম্বারের চিপকু যা আয়ানের মোটেও পছন্দ না।নিহান নিধীদের সাথে একপ্রকার গায়ে পরে এসেছে ওর স্বভাব কারোই পছন্দ না তেমন।আয়ান আর সেখানে না থেকে বেঁচে যাওয়ার ফন্দিতে চট করে উঠে পরলো চেয়ার থেকে,তারপর বললো।
আমার খিদে নেই।আমার নিজের হাত আছে আমি খেতে পারি।আমার পাশে আসার চেষ্টা করবে না এই বলে দিলাম।আরুশি চলো রেডি হয়ে আসো অফিসে দেরি হচ্ছে।
আরুশি উঠে হাসতে হাসতে চলে গেলো।আয়ান এক মুহুর্তও আর দাঁড়ালো না সেখানে।
নিরব সায়ানকে রুমে ডাকিয়ে নিয়ে বললো।
সায়ান তোমার বন্ধু বান্ধবদের বুঝিয়ে বলো চৌধুরী ম্যানশনে অভদ্রতা কেউ পছন্দ করে না।সামনে থেকে কেউ আসলে যাতে তার খেয়াল করে।নিরবকে অবাক করে দিয়ে সায়ান বললো।
চিন্তা করো না ড্যাড সামনে থেকে এমন কিছু হবে না।
চলে গেলো সায়ান কথাটা বলে।নিরব সায়ানের ব্যবহারে অবাকের পর অবাক হচ্ছে। এতো সহজে বিষয়টা মেনে গেলো সায়ান।যা অন্য সময় হলে মোটেও সম্ভব হতো না।সায়ানের মধ্যে হুট করে এতো পরিবর্তন বেশ চিন্তায় ফেললো এবার নিরবকে।
আরুশি রেডি হয়ে বেরুবে তার আগেই সায়ান তার সামনে প্রকট হলো।
কি হয়েছে সায়ান রাস্তায় কেনো দাঁড়িয়ে আছো?সরো সামনে থেকে অফিসে যেতে হবে আমায়।
ওই সুইটির সাথে আমার আর এখন কোনো সম্পর্ক নেই।
তাতে আমার কি?
তোমার কি সত্যিই কিছু না?কোনো যায় আসে না?
আজব তো আমার কেনো যায় আসবে?তোমার গার্লফ্রেন্ড তোমার যা ইচ্ছে তা করো তাতে আমার কি?সরো তো।
সায়ানকে অল্প ধাক্কায় সরিয়ে আরুশি চলে গেলো।অসহায় দৃষ্টিতে ওর পানে তাকিয়ে রইলো সায়ান।
গাড়িতে বসে আছে আয়ান আরুশি।
তুমি তখন আমার অবস্থার মজা নিচ্ছিলে না?
হ্যাঁ,হা হা।আরোহী আর আপনাকে যা মানায় তা কি আর বলতে?আমি কি বলি ওকে বিয়ে করে নিন।বেচারি আপনার প্রেমে ঢুবে তলিয়ে গেছে অনেক দূর,এখন ওকে মরা থেকে আপনিই বাঁচাতে পারবেন।হাহা হুহু।
আমি অন্য কাউকে বিয়ে করলে তোমার খারাপ লাগবে না?
আমার কেনো খারাপ লাগতে যাবে?আমি তো আপনার বিয়েতে নাচবো ভাবছি।
কথাটা মোটেও ভালো লাগলো না আয়ানের।নিরাশতায় ভরলো মন।
সায়ান আজ জব ইন্টারভিউ দিলে একটা কোম্পানির ম্যানেজার পদে নিয়োগ হলো,সায়ানের কোয়ালিফিকেশন যথেষ্ট ভালো তাই তার জব পেতে কোনো সমস্যা হলো না।অনেক খুশি হলো সায়ান তাতে।প্রথমেই খবরটা আরুশিকে জানাতে চাইলো তাই ফোন উঠিয়ে আগে তাকে কল করলো তবে সে ফোন উঠাচ্ছে না।এদিকে আরুশি ইচ্ছে করেই সায়ানের কল ধরলো না।
আজ বাড়ি ফিরতে অনেকটা রাত হওয়ায় আরুশি ক্লান্তিতে গাড়িতেই ঘুমিয়ে গেছে আয়ানের সাথে কিছু সময় বকবক করে।আজ সারাদিন অফিসে খুব কাজ ছিলো।বর্তমানে ট্রাফিকে আটকে আছে দুজন, আরুশি ঘুমের দেশে ঘুমানোর আগে গাড়িতে গান চালিয়েছিলো,আয়ানের গান পছন্দ না তাই শুনতে চায় নি কিন্তু আরুশির জেদের কাছে সে ব্যার্থ সবসময়।আরুশি ঘুমানোর পর ও চাইলেও গান বন্ধ করতে পারতো তবে তা করে নি।মন সায় দেয় নি তার আর তা করতে,ভালোই লাগছিলো যেনো আরুশির পাশে বসে গান শুনতে।
বর্তমানে গান চলছে….
তোকে একারে দেখার লুকিয়ে কি মজা,
সে তো আমি ছাড়া কেউ জানে না……
তোকে চাওয়ারা পাওয়ারা নয় রে সোজা,
সে তো আমি ছাড়া কেউ জানে না…….
হঠাৎ আরুশির উপর আয়ানের নজর গেলে সেই দৃষ্টি সেখানেই থমকালো।ঘুমন্ত আরুশির উপর থেকে নজর সরানোর ক্ষমতা কুলিয়ে উঠতে পারছে না আয়ান,চলতে থাকা গানের প্রতিটা লাইন যেনো তার মনের ভিতর বর্তমানে চলারত অনুভুতির প্রতিফলন ঘটাচ্ছে। আরুশিকে নিয়ে মনে আলাদা আকর্ষণ আলাদা এক টান অনুভব করতে পারছে আয়ান।একটুতে ট্রাফিক ছাড়লে পিছনের গাড়ির হর্নে ধ্যান ভাঙলো আয়ানের।তাই আর দেরি না করে নিজেকে সামলে গাড়ি স্টার্ট করলো।
বাড়িতে এসে গাড়ি থামিয়ে আরুশিকে ডাকলো আয়ান,নরম কন্ঠে ডাক দিলেও এক ডাকেই আরুশির ঘুম ভাঙলো।বিরক্তি নিয়ে উঠে বললো আরুশি।
এই যে আপনার শান্তি নাই?যখন তখন ডিসটার্ব করেন কেনো?
দেখো বাড়ি এসে গেছি তাই ডেকেছি।
হ্যাঁ আমিও দেখতে পাচ্ছি বাড়িটাকে।ডেকে ডেকে দেখাতে হবে না।যত্তোসব।
অতিরিক্ত বিরক্তি নিয়ে চলে গেলো আরুশি ঘরের ভিতর।আয়ানও আর কিছু না বলে চলে এলো ঘরে।
আরুশি ঘরে এসে আগে নিজের রুমে আসলো,তবে রুমের লাইট জ্বালানোর আগেই কেউ একজন দরজা লাগিয়ে তাকে নিজের সাথে লেপ্টে ধরে নিয়ে লাইট জ্বালিয়ে দিলো,লোকটা সায়ান।আরুশি নিজেকে ছাড়াতে চাইলেও পারছে না।
কি করছো সায়ান ছাড়ো।
ছাড়বোনা।আগে বলো তুমি আমার ফোন কেনো উঠালে না?
আমার ইচ্ছে করে নি তাই।
কেনো ইচ্ছে করে না তোমার আমার সাথে কথা বলতে?
কেনো ইচ্ছে করবে সেটা বলো?তোমার মতো নোংরা মানুষের সাথে কথা বলতে কখনোই আমার কোনো ঠেকা থাকতে পারে না।
আমি এতোটাই নিকৃষ্ট?
হ্যাঁ।
ঠিক তখন আয়ান রুমে এলে দৃশ্যটা ওর চোখে পরলো,সাথে সাথে গায়ে জ্বলা দিয়ে উঠলো ওর।তেড়ে এসে সায়ানকে ছাড়ালো ধাক্কা দিয়ে আরুশির কাছ থেকে।
তোর সাহস হলো কি করে সায়ান আরুশিকে এভাবে জব্দ করার?
আমি আরুশিকে জব্দ করি বা না করি তাতে তোর কি?তুই কেনো ওর পিছন সবসময় ঘুরঘুর করিস?ও আমার বউ ভুলিস না।
কি বললি ও তোর বউ?নকল কাগজে কেউ বউ হয় না সায়ান আর বাবা মায়েরাও তোর বিয়ে ভেঙে দিয়েছে সেই কবে তাই এসব মিথ্যা আশ জমিয়ে রাখিস না।
বিয়ে ভেঙেছে মানে?
হ্যাঁ সায়ান আমাদের বিয়ে আর হবেনা।আমি নিজেই তোমাকে আর বিয়ে করতে চাই না বাবা মাকে জানিয়েছি,প্লিজ এখন রুম থেকে বেরোয়।
সায়ান বেশ চিন্তুক হয়ে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে হনহনিয়ে।
চলবে………..