দোটানা ২ পর্ব-১৮+১৯

0
435

#দোটানা ২
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_১৮

ছুট্টো আরুশির ছবি হাতে নিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে আয়ান,চোখ দুটি ছুট্টো আরুশিতেই সীমাবদ্ধ।

আর কখন ফিরবি আরুশি বল না?আর যে অপেক্ষা করতে পারি না রে।অনেক মনে পরে তোর কথা।চলে আয় এবার।

তখনি কেউ একজন ছবিটা ওর হাত থেকে ছিনিয়ে নিলে রাগে চটকে উঠে বসে আয়ান।আরুশি ছবিটা এক হাতে নিয়ে অপর হাত কোমড়ে রেখে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছে তার দিকে।আয়ান বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো।

এটা কেমন ব্যবহার আরুশি? আমার ছবিটা নিলে কোনো? দেও ওটা।

প্রথমতো এটা আপনার ছবি না এটা কোনো বাচ্চা মেয়ের ছবি।আর দ্বিতীয়ত আপনি এই বাচ্চা মেয়েকে আমার নামে কেনো ডাকছেন?আর তৃতীয়ত এই বাচ্চা মেয়েকে ঠিক চেনা চেনা মনে হচ্ছে। অনেকটা আমারই মতো লাগছেও।

ছবিটার দিকে তাকিয়ে মাথা চুলকে বললো আরুশি।আয়ান টান দিয়ে ছবিটা নিলো ওর হাত থেকে।তারপর অল্প অশান্ত ভাব নিয়ে বললো।

তুমি আরুশিকে চেনো?কোথাও দেখেছো ওকে?বলো না কোথায় দেখেছো?

আরে আপনি এতো অশান্ত হচ্ছেন কেনো?আমার ঠিক মনে নেই আমি একে কখন দেখেছি বা আদোও দেখেছি কি না।তবে চেনা লাগলো আমার কাছে।তা আপনার একে নিয়ে এতো উত্তেজনার কারন কি শুনি?ডাগর ব্যাটা হয়ে বাচ্চা মেয়ের প্রেমে পরতে লজ্জা করে না আপনার!দেখে তো মনে হচ্ছে ৬ বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে।

হ্যাঁ ৬ বছরের ছুট্টো আরুশি।আর আমি ওকে অনেক ভালোবাসি কোনো সমস্যা আছে তোমার?চলে যাও এখান থেকে আমাকে একা থাকতে দাও।

ধমকের স্বরে কথাগুলো বলে হতাশ মন নিয়ে গিয়ে আয়ান বেলকোনির এক ধারে দাঁড়ালো।আরুশিও কিছু একটা ভেবে ওর পাশে গিয়ে শান্তভাবে দাঁড়ালো অতঃপর বললো।

দেখেন আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাই নি।আমি জানতাম না মেয়েটি আপনার কাছে এতোটা গুরুত্বপূর্ণ নয়তো মজা করতাম না এভাবে।

ইট’স ওকে।

তা জানতে পারি মেয়েটা কে?
শান্ত স্বরে ব্যাথার্থ ভঙ্গি নিয়ে বললো আয়ান।

ছুটো বাবা আর ছুটো মায়ের একমাত্র মেয়ে আরুশি চৌধুরী আশা।আজ থেকে ১৯ বছর আগে হারিয়ে যায় আমাদের মধ্যে থেকে।কিন্তু তার স্মৃতি আজও আমার মন থেকে হারায় নি।ভালোবাসার মানে যখন জানতাম না তখন থেকেই ভালোবাসি আমি ওকে।সেই বয়সের কোনো স্মৃতিই মনে নেই আমার শুধু ও আর ওর স্মৃতি ব্যাতীত।কথাটা বলে দীর্ঘনিশ্বাস ফেললো আয়ান।আরুশিরও অনেক খারাপ লাগলো ওর জন্য।ওর কাঁধে সহানুভূতিময় হাত রেখে বললো।

ভ্যাগের খেলা কেউ বুঝে না স্যার।তা তো শুধু আল্লাহর হাতে।আরুশি যদি আপনার ভাগ্যে লেখা থাকে তবে একদিন ঠিকই আপনার কাছে ফিরে আসবে।

হুম

সায়ান গাড়ি নিয়ে একটা নির্জন জায়গায় চলে গেলো,একটা বেশ উঁচু জায়গায়,অনেকটা পাহাড়ের মতোই।আজ আর টানলো না ওকে কোনো খারাপ জিনিস নিজের দিকে।না তো কোনো মেয়ের নেশায় মগ্ন হতে ইচ্ছে করছে আর না তো কোনো ক্লাবে যেতে, কোনো বাজে অভ্যেসও টানছে না ওকে আজ।কি হবে এমন মানুষদের সাথে থেকে যারা দুর্সময়ে পাশে থাকে না।প্রথমে রাগ করে ক্লাবে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু পকেট খালি নিয়ে কি করে সেখানে যেতো তাই রিফাত কে ফোন করে বলেছিলো বিষয়টা তখন সে বললো সায়ান যেনো নিজের বাবার পায়ে হাতে ধরে নিজের কার্ডগুলো ফিরিয়ে নিয়ে আসে এগুলো ছাড়া সে কিই বা করতে পারবে অথচ একবারও বললো না আমি আছি চলে আয় দুজন ফুর্তি করবো।এই রিফাতকে কতো সাহায্য করেছে টাকা দিয়ে তা সায়ানই জানে একমাত্র।এমনকি আরও কয়েকজন খুব ক্লোজ ফ্রেন্ডকেও বিষয়টা জানালে তারাও এমনটা বললো।সুইটি বিষয়টা শুনে তো যেনো আকাশ থেকে পরলো।ও সোজা বলে উঠলো।
ও মাই গড সায়ান বেবি…. এটা কেনো করলেন আংকেল? তুমি যে করেই হোক উনার কাছ থেকে ওসব কার্ড নিয়ে আসো।ওগুলো ছাড়া তুমি কেমনে কি করবে? এই মানুষগুলো একবারও জিজ্ঞেস করলো না সায়ানকে ও কেমন আছে।সায়ান তো ভুলেই গেছিলো সেদিন ক্লাবে মিরাজের দুই বন্ধু ওকে মারতে লাগলে ওর কোনো বন্ধু ওর হয়ে এগিয়ে আসে নি।বিপদে বন্ধুর পরিচয় হয় আর আজ সায়ানের ক্ষেত্রেও তাই হলো।অথচ যাকে সে অবহেলা করলো।রাস্তার মেয়ে বলে ধিক্কার দিলো।রেপ করাতে চাইলো প্রাণে মারতেও চাইলো দিনশেষে সেই তার খেয়াল করে।এমনকি যে পরিবারের অবাধ্য যায় সেই পরিবারের সদস্যারা তার সব দোষ একপাশে রেখে ওকে আপন করে রাখে।একটু আগেই দুই মা, নিহান এমনকি যায়ানও ফোন করে ওর খোঁজ নিয়েছে।কিছুই ভালো লাগছে না আজ সায়ানের। জীবনের কঠিন এক সত্যের সাথে সম্মুখীন হলো আজ সে।পারছে না এমন সত্য মেনে নিতে।আজ প্রথম তার মনে হলো বাবার টাকা ব্যতীত ও কেউ না।পৃথিবীতে তারাই আপন হয় যারা কারো টাকাকে নয় মানুষকে ভালোবাসে।আর সায়ানের ভালোবাসার মানুষ বলতে তার পরিবার আজ বোধগম্যে গেলো তার।পারছে না মনে শান্তি দিতে।এই সময়ে একজনই পারে তার মন শান্ত করতে সে জানে তাই তার ছবি নিজের চোখের সামনে ধরে আছে বর্তমানে।নিজের ওয়ালেটেই ছুট্টো আরুশির ছবি।জলে ভারী হয়ে আসা কন্ঠে সায়ান বললো।

আরুশিরে একমাত্র তুই ব্যতীত কেউ আমায় বুঝবে না রে।আজ বড্ড একা লাগছে নিজেকে।কেনো হারিয়ে গেলি বল তো?তুই থাকলে হয়তো এমন পথে কখনো আসতাম না।তুই যে আগলি নিতি আমাকে নিজের প্রেমডোরে।হারিয়ে যেতাম আমি তাতে।জীবন লিখে দিতাম তোর নামে।

একটু সময় সহানুভূতি দেখিয়ে আবারও নিজের ফর্মে এলো আরুশি।জোরে একটা চিমটি কাটলো আয়ানের বাজুতে তবে তার শক্ত বাজুতে চিমটি কাটতে গিয়ে নিজেই ব্যাথা পেলো।

মা গো এটা আপনার বাজু না লোহা?

চিমটি কেনো কাটতে আসলে আমায়?

আপনি কি একটা দেবদাস ফর্মে বসে আছেন।এদিকে পোলাউ রান্না করতে গিয়ে খিচুড়ি বানিয়ে দিয়েছেন তার কি?

কি বলতে চাইছো তুমি?আমি কখন এসব রান্না করলাম?

আল্লাহ এই কোন বেক্কলের পাল্লায় পরলাম?সোজা কথা শুনেন।আপনি কেনো মা বাবাদের ওসব বলতে গেলেন?এখন উনারা জোর করে সায়ানের সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দিবে তখন কি হবে বলেন?

হোয়াট?নো ওয়ে তোমার বিয়ে সায়ানের সাথে হবে না।আমি হতে দিবো না।তুমি চিন্তা করো না।

ও মা এ দেখি মার থেকে মাসির দরদ বেশি হচ্ছে। আমার বিয়ে সায়ানের সাথে হলে আপনার কি? ভাবসাবে তো দেখছি বিয়ের কথা শুনে আপনার যথারীতি জ্বর আসতে চললো।ললাটে সন্দেহের ভাজ ফেলে বললো আরুশি।আয়ান আমতা কন্ঠে বললো।

না এমন কিছু না।আসলে সায়ানের মতো ফালতু একটা লোক তোমাকে ডিজার্ভ করে না তাই।তা তুমি তো ওর বউয়ের মর্যাদা পেতেই এসেছো যতোটুকু আমি জানি তবে তোমার ওকে বিয়ে করতে এখন সমস্যা কি শুনি?সন্দেহ ভঙ্গিতে আয়ান কথাটা বললে হকচকিয়ে উঠে আরুশি।আমতা কন্ঠে আরুশিও জবাব দিলো এবার।

ওই এসেছি তো সেজন্যই। তবে ওর আমার প্রতি যে ব্যবহার এখন তো ওর আশেপাশে থাকতেও ভয় করে তাই আরকি।

হুম তুমি ভয় পেয়ো না।আমি আছি।তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারো।

ওকে আমি যাই।

আরুশি থতমত হয়ে রুম থেকে প্রস্থান করলো।

আরুশিকে রুমে ডাকালেন মা বাবারা।নিধী নিহান নিরব কথা ওকে ঘেরাও করে বসে আছে।আয়ান একসাইডে দাঁড়িয়ে। আরুশি মধ্যেখানে।

বাবা আমার মনে হয় সায়ানের সাথে আরুশির বিয়ে না দিলেই ভালো হবে।কারন সায়ান ওকে কখনো শান্তিতে বাঁচতে দিবে না।ও একজন নিকৃষ্ট মানুষে পরিণত হয়েছে।

গম্ভীর কন্ঠে বললো নিরব…..দেখো আয়ান এ বিষয়ে আমরা একটা সিন্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি এখন শুধু আরুশি মায়ের মর্জি জানা বাকি।
দেখো মা আরুশি সায়ান এতোটা নিচে নামবে কখনো ভাবি নি।ওর সাথে বিয়ে দিয়ে তোমার জীবন অনিশ্চয়তায় ফেলতে চাই না আমরা।এ বিষয়ে এখন তোমার মতামত জানতে চাই।তুমি আমাদের ঘরে আমাদের মেয়ে হবে থাকতে পারবে সারাজীবন। কিন্তু সায়ানকে তোমার উপযুক্ত বলে মনে হয় না আমাদের।বলো মা এবার তুমি কি চাও।তুমি যা চাইবে তাই হবে।কথাটা শুনে আরুশি মনে অনেক সস্তি পেলো।স্বাভাবিকভাবে বললো।

আপনাদের সিদ্ধান্ত আমার কাছে যথার্থ। আপনারা তো আমার মা বাবার মতোই।আপনারা কখনো আমার খারাপ চাইবেন না এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত।যে জীবনে আপনাদের মতো মা বাবাদের পেয়েছি সে জীবনে সায়ানের মতো কাউকে আমার চাই না।
নিধী এবার আরুশির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো।

আমরা তোমার বাবা মায়ের মতো না।আমরা তোমার বাবা মা ই।আজ থেকে তুমি আমায় মা আর নিহানকে বাবা বলে ডাকবে। নিরব স্যার আর কথা তো তোমার বড় বাবা আর বড় মা আছেনই।

আরুশি অল্প অবাকত্ব নিয়ে বললো।সত্যি আমি আপনাকে মা বলে ডাকতে পারবো!

একদম…. তুমি আমারই মেয়ে।
অতি খুশিতে আরুশি জড়িয়ে ধরলো নিধীকে।সবার মুখে আনন্দের হাসি ফুটলো।

সারারাত সেই উঁচু স্থানে একা বসে কাটালো সায়ান।মনের পীড়ন এখনও কম হয় নি একচুলও।সাত সকালে বাড়ি চলে আসলো।ফ্রেস হয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে পরলো বিছানায়।রাত থেকে পেটে খাবারের এক টা দানাও পরে নি,তবে খিদেও যেনো তার বিলুপ্তি পেয়েছে। মনের কোনে শুধু শান্তির খোঁজ তার ।হঠাৎ কারো কন্ঠ কানে ভেসে এলে অশান্ত মনে শান্তির খোঁজ পেলো সায়ান,চোখ তুলে সেই ব্যক্তির দ্বিধার করতে যেয়েই প্রশান্তির মাত্রা আরও বেড়ে গেলো ওর।নরমাল একটা থ্রিপিচ এ আজ এই প্রথম কাউকে এতোটা ভালো লাগলো সায়ানের।সব সময় মেয়েদের ছুটো কাপড় দেখে তাদের স্ট্যাটাসকে বড় করে দেখা আর নিজের সাথে তাদের তুলনা করতে ব্যস্ত থাকা সায়ানের এই প্রথম বার থ্রিপিচ পরিহীতা কাউকে অতুলনীয় মনে হলো।রাস্তার নোংরা বলে তাচ্ছিল্য করা মেয়েটার একজলক তার মনের পাহাড় সমান নিরাশা মুহুর্তেই কাটিয়ে দিয়েছে ভাবতেও তা কাল্পনিক মনে হচ্ছে সায়ানের।সায়ান অবাক ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে আরুশির পানে।আরুশি তখন ওকে ডাক দিয়ে খেতে বলে খাবারের প্লেট টেবিলে রাখতে ব্যস্ত ছিলো,এবার আবারও বললো আরুশি।

খেয়ে নাও সায়ান।ঘরের সবারই তোমাকে নিয়ে খুব টেনশন তবে তোমার কর্মের ফলস্বরূপ কেউ তোমার মুখ দেখতে ইচ্ছুক নয় এই মুহুর্তে তাই পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব মনে করে তোমার জন্য খাবার নিয়ে এলাম ছুটো মায়ের কথায়।চুপচাপ নাস্তা করে নিও ভালোমানুষের মতো।
তারপর আরুশি যেতে নিলে সায়ান বললো।

চাকরদের দিয়েও খাবার পাঠানো যেতো আরুশি,তুমি কেনো নিজে আসতে গেলে জানতে পারি?

তোমার কাছে তো আমি তোমার বাড়ির চাকরদের থেকেও নিকৃষ্ট তাই আমার এই কাজ করারটা তো তোমার কাছে স্বাভাবিক মনে হওয়া উচিত তাই না?আলতো হেসে জবাবটা দিয়ে প্রস্থান করলো আরুশি।জবাবটা সায়ানের মনে আবারও নিরাশতায় ভরে দিলো।

চলবে……..

#দোটানা ২
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_১৯

আরুশির কাজের মেয়ে মিতালির সাথে ভালোই শখ্যতা হয়েছে।সব কাজের লোকের সাথেই আরুশির ভালো সম্পর্ক। তবে মিতালি ওর সমবয়সী হওয়ায় সখ্যতা একটু বেশিই।দুজন একসাথে বসে প্রায় সময়ই গল্প করে।আজও তার ব্যাতীক্রম কিছু হয় নি।দুজন বাগানের দোলনাতে বসে আছে,আরুশির চুলে তেল দিয়ে দিচ্ছে মিতালি,মিতালি আরুশিকে নিজের স্বামী সম্পর্কে অনেক কিছু বলছে।ওর বিয়ের ৫ বছর হয়েছে কিন্তু ওর স্বামীর ভালোবাসা ওর জন্য একচুলও কম হয় নি,দুজন পালিয়ে বিয়ে করেছিলো,ওর স্বামী টেক্সি ড্রাইবার।নিজেদের প্রেমকাহিনী বলছে মিতালি আরুশির কাছে আরুশিও মন দিয়ে তা শুনছে,অবশেষে নিজের প্রেম কাহিনী বলা শেষ হলে মিতালি আরুশিকে জিজ্ঞেস করলো।

আচ্ছা আপু তোমার আর সায়ান সাহেবের প্রেম কাহিনী বলা যাবে?মানে তুমি উনার মধ্যে কিসব গুণ দেখে উনার প্রেমে পরলে,বলো না?

কথাটা শুনে আরুশির মুখের উজ্জ্বল হাসিটা অল্পতে বিলুপ্তি পেলো,তা মিতালির চোখ এরালো না,মিতালি বুঝতে পারলো হয়তো তার এই প্রশ্ন করাটা ঠিক হয় নি তাই বলে উঠলো।

আচ্ছা আপু তুমি বলতে না চাইলে থাক।

আরে না তেমন কিছু না।আসলে ভালোবাসা এমন একটা জিনিস যা কখনো শরীর,রুপ সৌন্দর্য, গুণাগুণ দেখে হয় না।ভালোবাসা একটা রোগ যে রোগ যেখানে সেখানে যখন তখন যার তার উপর বিনা কারনেই ভর করতে পারে।কথাটা বলে হাসলো আরুশি তারপর আবার বললো। তাই সায়ানের বেলায়ও আমি এসব কিছুই দেখি নি,ওটা এমনিতেই হয়ে গেছে।

হুম,তা সব মেয়েরাই নিজের জীবন সাথীর একটা আলাদা প্রতিচ্ছবি নিজের মনে রাখে।মানে একটা পছন্দের ব্যক্তিত্ব মন জোরে থাকেই।তো তুমি বলো তোমার কেমন ব্যক্তিত্বের লোক পছন্দ।

পছন্দ। আসলে পছন্দের কথা যদি বলা হয় তবে আমারও আছে।যেমন আমি চাই আমার জীবনসাথি যে হবে সে আমায় অনেক ভালোবাসবে যেমন সব মেয়েরাই চায়।তাছাড়া আমাকে যথেষ্ট সম্মান করবে,আমাকে বুঝবে।আর হ্যাঁ লোকটা কিন্তু সৎ,সাহসী, সত্যবাদী, কর্মী আর আত্মনির্ভরশীল হতে হবে,অলস বা পরনির্ভরশীল লোক কিন্তু আমার মোটেও পছন্দ না একদম।আর হ্যাঁ কেরেক্টারে কোনো গোলমাল হলেও চলবে না।

আরে আপু সেক্ষেত্রে তো তোমাকে সায়ান ভাইয়াকে ছেড়ে আয়ান ভাইয়ার প্রেমে পরা উচিৎ ছিলো।হা হা।
মজার ছলে কথাটা বলে ফেললো মিতালি।

তখন অফিসে বের হচ্ছিল আয়ান হঠাৎ ওর আরুশিকে সাথে নিয়ে যেতে মন চাইলে ওর খোঁজে বাগানের দিকে গেলো আর তখনি ওদের বলা কথাগুলো স্পষ্ট তার কানে গেলো তবে আয়ানকে ওরা খেয়াল করলো না।

এদিকে সায়ানও বাগানের একসাইডে দাঁড়িয়ে কাউকে কল করছিলো তবে ওপর পাশের ব্যক্তি ফোন ধরছিলো না,ঝোঁপের আড়ালে হলেও অনেকটা পাশে থাকায় তখন ওদের কথা স্পষ্ট ওর কানেও যায়।

এদিকে মিতালির জবাব হিসেবে আরুশি আলতো হেসে বললো।
আরে না কারো ব্যাক্তিত্বের সাথে নিজের পছন্দ মিলে গেলো বলে কি তার গলায় ঝুলে পরতে হবে!বলি নি ভালোবাসা এসব কিছু দেখে হয় না।আর আয়ান স্যারকে আমি ভালোবাসি না এটাই সত্য।তবে এটাও ভুলো না যে ওরা দুই ভাই কিন্তু সপ্নেও আমাকে ভালোবাসার কথা ভাববে না।কারন আমি একটা রাস্তারই মেয়ে ওদের জন্য বুঝেছো….ওকে ছাড়ো আমার কাজ আছে অন্য সময় আবারও আড্ডা দিবো কেমন।কথাগুলো বলে আরুশি উঠে যেতে নিলে আয়ানের মুখোমুখি হলো।হঠাৎ আয়ান সামনে পরতেই আরুশি থতমত হয়ে উঠলো।

এই যে আপনি এলিয়েন না কি এভাবে হুট করে সামনে আসেন কেনো?এখনই হার্টে যদি এ্যাটাক আসতো আমার।

অফিস না গিয়ে এখানে তেল মাখা হচ্ছে তোমার?চলো অফিসে দেরি হচ্ছে।গম্ভীর কন্ঠে বললো আয়ান।

আমি অফিস যাবো না আর।আমি জব ছেড়েছি।বাবা মায়েরা বলেছেন আপনারা দুই ভাইয়ের আশেপাশে না থাকতে।

আমি আবার কি করলাম তোমার সাথে?আমার সাথে তোমার কোনো রিস্ক নেই জবে থাকতে পারো তুমি,চলো এবার।

এই যে আপনি আপনার রাস্তায় হাঁটুন। এই আরুশি এখন ঠান্ডা পানিও ফু দিয়ে খাবে।যা করেছেন দুই ভাই মিলে আমার সাথে তারপর আর কারো উপর বিশ্বাস নেই আমার।তাছাড়া এখন আমার জবেরও কোনো দরকার নেই,আমিও এখন এ বাড়ির মেয়ে।ছুটো বাবা মা আমাকে এডপ্ট করছেন জানেন?

ও মা বলো কি ছুটো বাবা মা অবশেষে একটা ডাগর মেয়েকে এডপ্ট করছে।

ওই আমাকে ডাগর বলছেন কেনো আপনি?আপনি জানেন আপনি বুড়ো কুমড়ো?

হোয়াট?চটে গিয়ে বললো আয়ান।

শুনতে পাননি।বুড়ো কুমড়ো আপনি।হুহ।

চলে গেলো আরুশি,বাড়ির ভিতর।

আয়ানও আরুশির সাথে গেলো।এদিকে সায়ান সেখানে ঘটে যাওয়া সবকিছু প্রথম থেকে শেষ অব্দি শুনতে এবং দেখতে পেলো,অতঃপর সেও ঘরের ভিতর যেতে শুরু করলো।

রুমে আসলো সায়ান তখনি নিহান এসে সায়ানের কাছে গাড়ির চাবি চাইলো,সায়ান না দিলে তাকে বুঝিয়ে বললো।

দেখো সায়ান ভাইয়াকে তুমি ভালো করে চিনো, কারো কথা শুনবে না ও।বয়স তো তোমার কম হয় নি,এবার না হয় নিজের দায়িত্বটা বুঝতে শিখো,নিজে প্রতিষ্ঠিত হও কারো নামের তোমার কোনো প্রয়োজন হবে না।দেখো না আয়ান আমাদের নিজেদের কোম্পানি সামলানোর পাশাপাশি সেই কোম্পানির বিভিন্ন শাখা বিভিন্ন জায়গায় নিজের দমেই প্রতিষ্ঠিত করছে, সে সবকিছু শুধু ওর শ্রম আর অধ্যবসায় থেকে।যদি ভাইয়া ওকে সম্পত্তি থেকেও কখনো বেরও করে দেন তারপরও ওর কোনো ঠেকা হবে না।কারন ও নিজেকে এভাবে গড়েছে যাতে কখনো কারো উপর নির্ভরশীল না হতে হয়।ও নিজের একটা নাম প্রতিষ্ঠিত করে নিয়েছে সায়ান।

হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ আমিই তো বোজা।আমাকে কারো পছন্দ নয়।সবার সৎ, সত্যবাদী,কর্মী, সভ্য লোকই পছন্দ ওই আয়ানেরই মতো আমাকে কারো পছন্দ না,কারো না,চাই না আমি কারো নাম।নিজের নাম প্রতিষ্ঠিত করে দেখবো কি করা যায়।নিয়ে নাও তোমাদের এই গাড়িটাও।

অতিরিক্ত রাগে গর্জে উঠে সায়ান চাবিটা দিয়ে দিলো নিহানের হাতে।নিহান নরম স্বরে বললো।

দেখ সায়ান তুই কিন্তু আমাদের ভুল বুঝছিস।

যা বোঝার আমি একদম ঠিক বুঝেছি।আমাকে একা ছেড়ে দাও ডুড প্লিজ।

নিহান নিরাশ হয়ে চলে গেলো,সায়ানের চোখ দিয়ে জল গড়াতে শুরু হলো এবার।অনেক কষ্ট পেয়েছে আজ সে।সত্যিই তো বাবার নাম ব্যতীত ওর নিজস্ব কোনো সত্তা নেই।এমনকি আরুশির পছন্দের ব্যক্তিত্বও আয়ান,সায়ানের কোনো গুণ আরুশির পছন্দের না।আসলে উক্ত এই বিষয়টাই সায়ানের মন খুঁড়ে খাচ্ছে। আরুশির ওকে পছন্দ নয়।বরং আরুশির আয়ানের মতো ব্যক্তিত্ব ভালো লাগে।তবে যদি আরুশি আয়ানকে ভালোবেসে যায়,মনে ভয় ঢুকেছে সায়ানের।কিন্তু কেনো ওই রাস্তার মেয়ের পছন্দের সীমারেখায় আসতে চায় সায়ান তার জবাবও নেই তার কাছে।শুধু মাথায় আরুশির বলা কথা ঘুরছে ওর এই মুহুর্তে। আরুশির সৎ,সত্যবাদী,সৎচরিত্রবান,আত্মনির্ভরশীল ব্যক্তিত্ব পছন্দ।

আয়ান আরুশিকে খুঁজতে লাগলো ঘরে ঢুকে তবে কোথাও সে নেই।হঠাৎ ওকে খুজে পেলো ওদের পুল সাইডে বসে আছে পানিতে পা ডুবিয়ে। আয়ান গিয়েই ওকে টেনে তুললো।

এই এখানে কেনো বসে আছো? অফিস চলো।

আরে আপনার মাথায় কোনো সমস্যা আছে না কি?না কানে সমস্যা?জব ছেড়েছি বলেছি না আমি কানে শুনতে পাননি না আপনি।

মুখে বললে জব ছাড়া হয় না।

ওকে আমি রেজিকলেশন দিবো।

আমি তোমাকে জব থেকে বের করবো না।

কিন্তু কেনো রে ভাইজান?

এই মেয়ে আবার ভাইজান বললে কিন্তু খবর আছে।

আচ্ছা তবে মিস.এ্যরোগেন্ট আপু আমি অফিস যাবো না হয়েছে এবার।

তোমাকে না আমি।

কথাটা বলে আয়ান আরুশির দিকে এগিয়ে গেলে আরুশি পিছাতে গিয়ে পানিতে পরে গেলো,আর পরার সাথে সাথে পানিতে ঝাপটে চেঁচিয়ে বলতে শুরু করলো।

আমি সাতার জানি না স্যার।বাঁচান আমায়।
কথাটা শুনে আয়ানও ঝাপটে পরলো পানিতে আরুশিকে বাঁচাতে।আরুশিকে ঝটপট পানি থেকে উঠিয়ে নিয়ে এলেও ও অজ্ঞান হয়ে যায়,আয়ান অস্থির হয়ে পরে তাতে,ওর গালে হাত দিকে ডেকে ওকে তোলার চেষ্টা করছে।

আরুশি,আরুশি, চোখ খুলো।কি হলো তোমার?আরে নিশ্বাস তো ওর চলছে তবে জ্ঞান আসছে না কেনো,মনে হয় না পানি খেয়েছে,কিন্তু। না দেরি করলে হবে না ওকে ডাক্তারে নিয়ে যাই।অতঃপর আরুশিকে ডাক্তারে নেওয়ার উদ্দেশ্যে কোলে নিতে গেলে আরুশি খিলখিল করে হেসে উঠলো। হতভম্ব হলো আয়ান আরুশির এহেন কান্ডে।আরুশি হাসতে হাসতে বললো।

আপনিও না মি.এ্যরোগেন্ট এক নাম্বারের বোকা ভাইজান দেখছি।আরে আমার নিশ্বাস চলছিলো আর আপনি তো আমাকে ঝটপট উঠিয়ে নিয়েছিলেন পানি থেকে এইটুকুতে কি কেউ পানি খাবে?আপনার বোঝা উচিৎ ছিলো আমি এসব নাটক করছি।তাছাড়া আমি সাতার ভালোই জানি।হা হা।

হেসে নাও, মানুষের ইমোশন্স তো তোমার কাছে ফাজলামোর জিনিস মাত্র,জানো কতোটা ভয় পেয়ে গেছিলাম।না জানো না তুমি আর কখনো জানতেও পারবে না।

অভিমানী ভঙ্গিতে কথাগুলো বলে চলে গেলো আয়ান,আরুশি অবাক হলো ওর এমন ব্যবহারে।

আরে উনি এমন অভিমান করলেন কেনো!আর আমি পানিতে পরে মরে গেলেও বা উনার কি?উনি কেনো ভয় পাবেন!

আয়ানের অনেক অভিমান হয়েছে আরুশির উপর তাই কাপড় পাল্টে আর কারো সাথে কোনো কথা না বলেই গাড়িতে এসে উঠে পরলো,তখনি কোথাও থেকে এক ছুটে আরুশিও ওর পাশের সিটে এসে বসলো।আয়ান ওকে কিছু বলবে তখনি আয়ানের পাশের জানালার সাইডে এসে দাঁড়ালো আরোহী।মোটেও সহ্য করতে পারে না আয়ান এই আরোহীকে।ওকে দেখতেই মুখে বিরক্তির ভাব চলে আসলো আয়ানের।আরোহী নিহান নিধীদের সাথে এসেছে।আয়ানের দাদুর ফুফাতো ভাইয়ের নাতনি ও।আয়ানের নামে ওর দিনের শুরু আর রাতের শেষ।

চলবে………