নাম না জানা পাখি পর্ব-১২

0
653

#নাম_না_জানা_পাখি
#নূর_নাফিসা_খুশি
#পর্ব_১২

খুশি কলেজ থেকে আজ সোজা রেস্টুরেন্টে যায়, হুট করে তো জব ছাড়া যাবে না তাই এই মাসের আর কিছু দিন বাকি আছে মাস শেষ করে আর করবে না। মাহিরকে অনেক বুঝিয়ে রাজি করিয়েছে খুশি। সেদিন মাহির খুশিকে অনেক জ্বালিয়েছে , মাহিরের ছেলে মানুষী দেখে সেদিন খুশি ওপরে ওপরে রাগ করলেও খুশির অনেক হাসি পাচ্ছিলো। সারাদিন খুশির সঙ্গে সময় কাটিয়েছে মাহির রাত ১০ টায় নিজে বাড়িতে দিয়ে গেছে।

খুশি রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখে রোদ দাঁড়িয়ে আছে খুশি রোদের কাছে গিয়ে বলে,,

“কি রে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো ভিতরে যাবি না?

” না আমি যেই জবের জন্য এতো কষ্ট করে পড়াশোনা করেছি, সেই জব টা হয়ে গেছে। আজ আমি এই রেস্টুরেন্টের জব টা ছেরে দিয়েছি তোকে এই খুশির খবর টা দেওয়ার জন্যই দাঁড়িয়ে ছিলাম। (রোদ হাসি মুখে বলে কথা গুলো)

“আরে বাহ কংগ্রাচুলেশন ! ট্রিট পাওনা কিন্তু।

” চল আজি দেই তোকে ট্রিট, তবে এই রেস্টুরেন্টে না অন্য টাই যাবো।

“কিন্তু এখন কাজে না গেলে স্যার বকা দিবে না?

” কিছু বলবে না চল তো তুই।

এই বলে রোদ খুশিকে টেনে নিয়ে চলে যায়, খুশি রোদ কে বলে।

“আরেক জন কে ট্রিট দেওয়া লাগবে তোর।

” কে?

“আমার বেস্টু অধরা।

” ওহ আচ্ছা ওই ঝগড়ুটা মেয়েটা, বল ওকে আস্তে।

“ওকে বাট ওর সঙ্গে একদম ঝগড়া করবি না, অধু অনেক ভালো তুই ওকে ভালো ভাবে বুঝলে তোর ও ভালো লাগবে।

” আচ্ছা ডাক ওকে।

খুশি অধরা কে ফোন করে রেস্টুরেন্টের নাম বলে দিলো সোজা ওখানেই যাবে অধরা। রোদ খুশি কথা বলছে আর হাসতে হাসতে যাচ্ছে। রাস্তা পার হওয়ার সময় রোদ খুশির হাত ধরে পার করিয়ে দেয়। রোদ অনেক ভালো একটা ছেলে, খুশিকে অনেক ভালোবাসে কেয়ার করে তবে সেটা শুধুই বন্ধুত্তর। কিন্তু সেটা তো অন্য কেউ বুঝে না তাই আজও বুঝলো মাহির। গাড়ি থেকে খুশি আর রোদ কে দেখে বুঝে নিলো তাড়া একে অপরের লাইক করে বা সম্পর্ক আছে। পুরনো ক্ষত আবার নাড়া দিয়ে উঠে মাহিরের। মাহির খুশির হাত অন্য ছেলের হাতে দেখতে পারবে না, কখনো না। রেগে চলে যায় মাহির সেখান থেকে,,

অধরা রেস্টুরেন্টে বসে আছে তখনি রোদ খুশি আসে। খুশিকে দেখে অধরার মুখে হাসি আসলেও রোদ কে দেখে তা চলে গেলো। রোদ অধরাকে দেখে মুচকি মুচকি হাসছে অধরা বুঝলো না তার হাসির কারণ।

আজ আর কোনো রকমের ঝগড়া করলো না অধরা রোদ বরং ভালো করে কথা বললো। তিন জনে অনেক আড্ডা দিলো খেলো অধরা রোদের প্রতি একটু ভালোলাগা কাজ করে কিন্তু কেনো বুঝতে পারে না। সারা বিকেল আড্ডা দিয়ে ঘুরাঘুরি করে নিজের নিজের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার সময় চলে এলো তাদের। খুশি বলে।

“আমার কাছে তো স্কুটি আছে, রোদ তুই অধরাকে বাড়িতে দিয়ে আই তোর বাইকে। আমার বাসা তো উল্টো দিকে আর তুই ওই রাস্তা দিয়েই যাবি।

” কোনো সমস্যা নেই আমি রেখে আসবো। (রোদ)

“থাক না আমি একা যেতে পারবো। (অধরা)

” না না কখনো না, একা ছারতে পারবো না আমি তোকে। তোর একা চলা ফেরার অভ্যেস নেই রোদ দিয়ে আসুক রোদ তুই নিয়ে যা। (খুশি)

অধরা আর কিছু বললো না রোদের বাইকে চলে গেলো, খুশি ও নিজের স্কুটি নিয়ে চলে গেলো।

“তোমার নাম্বার টা দেওয়া যাবে?

রোদের এহেম কথায় চমকে যায় অধরা তবে রোদ কে বুঝতে দেয় না, অধরাও মনে মনে এটাই চাইছিলো কিন্তু বলতে পারছিলো না। রোদ আবার বলে,,

” না মানে খোজ খবর নিতাম আর কি আমার ফ্রেন্ডের বেস্টু বলে কথা।

রোদের কথায় হেসে দেয় অধরা, তারপর নাম্বার টা দিয়ে দেয়। দুই জনে গল্প করতে করতে চলে যায়।

খুশি আজ জলদি বাসায় আসায় খুশির আম্মু অবাক হয়, বলে।

“আজ এতো জলদি যে।

” হুম আম্মু আজ রেস্টুরেন্টে যাওয়া হয়নি। রোদ আছে না আমার ফ্রেন্ড ও নিউ জব পেয়েছে তাই ট্রিট দিতে নিয়ে গেছিলো।

“ওহ আচ্ছা তুই ফ্রেশ হয়ে আই কথা আছে।

খুশি ফ্রেশ হতে চলে যায় আর ভাবতে লাগে আম্মু কি কথা বলবে?

জলদি জলদি ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে খুশি আম্মুর কাছে যেতে লাগে আম্মুর রুমে কিন্তু আম্মু বাইরেই সোফায় বসে আছে। খুশি যায় ওর আম্মুর কাছে গিয়ে দেখে আম্মু নুডলস করে রেখেছে। খুশি গিয়েই খেতে লাগে আর বলে,,

” কতদিন পরে তোমার হাতে নুডুলস খেতে পারলাম আম্মু।

খুশির আম্মু হাসে,, খুশি বলে।

“কি বলবে বলছিলে তুমি?

” হ্যাঁ আমি চাইছি তোর বিয়ে দিতে, আমি কয়দিন বেচে আছি বল? আমি বেচে থাকতে তোর সংসার দেখে যেতে চাই। তোর কোনো পছন্দের ছেলে থাকলে বল আমায় আমি কথা বলবো তার পরিবারে।

আম্মুর কথা শুনে খুশি চকমে যায়, বিয়ে তো তার হয়ে গেছে মাহিরের সঙ্গে এটা আম্মু কে কি করে বলবে? বিয়ে টা যে ভাবেই হোক বিয়ে তো বিয়েই নাকি। কিন্তু কি করবে খুশি এখন কি বলবে তার আম্মুকে বলে দিবে সে বিয়ে করে নিয়েছে। কিন্তু মাহির তো ভালবেসে বিয়ে করেনি তাকে, যদি পরে মেনে না নেই আম্মুর ক্ষতি হয়। খুশিকে চুপ থাকতে দেখে আম্মু আবার বলে।

” কিছু বলছিস না যে।

“আম্মু আমাকে কিছু দিন সময় দাও তারপরে বলছি।

খুশি ভেবে নেয় কাল সকালে রাহুলকে পড়াতে গিয়ে কথা বলবে মাহিরের সঙ্গে।

পরের দিন সকালে উঠে বিরিয়ানি বানিয়ে নিয়ে যায় খুশি। খুশি গিয়ে রাহুলকে পড়াতে লাগে। পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে মাহিরের রুমের দিকে তাকায় কিন্তু মাহির কে দেখতে পায়না খুশি হয়তো ঘুমাচ্ছে।

খুশি রাহুলকে পড়িয়ে বেরিয়ে যায় মাহিরের ফ্লাটের দিকে। ফ্লাটে দিয়ে বেল না বাজিয়ে মাহির খুশিকে সেদিন একটা চাবি দিয়েছিলো সেটা বের করে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে। মাহির উঠে নি এখনো মনে হয় খুশির। খুশি রান্না ঘরে গিয়ে ঝটপট বিরিয়ানি টা বের করে গরম করে নেয়। সকালের করা তাই থান্ডা হয়ে গেছে। গরম করে খাবার টেবিলে সাজিয়ে রেখে মাহিরের রুমের দিকে যায়। আজ খুশি ভেবেই এসেছে মাহিরের সঙ্গে এই বিয়ে নিয়ে কথা বলবে এই বিয়ের ফিউচার কি সেটা ঠিক করবে। খুশি মাহিরের রুমে গিয়ে নক না করেই ভিতরে ঢুকে পরে। ভিতরে গিয়ে খুশির চোখ খুলে পরার মতো অবস্থা হয়।

খুশির পা থমকে যায় মাহিরকে কে দেখে চোখ থেকে পানি পরতে লাগে। খুশি ভাবে নি মাহির এমন করতে পারবে, মাহির যতই রাগ দেখাক অভিমান থাক না কেনো খুশি কে যে মাহির ভালোবাসে এটা খুব ভালো করে জানতো খুশি। কিন্তু খুশি যেটা জানতো সেটা কি ভুল? খুশির ধারণা ভুল ছিলো? খুশি ভাবে নি মাহিরকে একটা মেয়ের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখবে।

জারা মাহির একে অপরকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে, তাদের দেখে এমন মনে হচ্ছে যেনো গত রাতে বাসর রাত ছিলো তাদের।

দরজা খোলার আওয়াজে মাহির খুশির দিকে তাকায় খুশিকে এমন করে তাকিয়ে থাকতে দেখে, মাহিরের তো কোনো ভাবান্তরই হলো না। মাহির যেনো চাইছিলো খুশি তাকে এমন করে দেখুক। মাহির টি শার্ট পরতে পরতে বলে।

“কারো রুমে আসলে যে নক করে আসতে হয় সেটা কি জানা নেই নাকি?

খুশি কিছুই বলে না শুধু অবাক হয়ে তাকিয়েই আছে মাহিরের দিকে। বিয়ে টা যে করেই হোক না কেনো মাহির তার স্বামী আর পৃথিবীর কোনো মেয়েই তার স্বামীকে অন্য মেয়ের সঙ্গে দেখতে পারবে না। খুশিরও ঠিক তাই বুক ফেটে যাচ্ছে তার। সব কিছু শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু আজিব ব্যাপার কিছুই করার শক্তি পাচ্ছে না খুশি।

খুশি কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়, ব্যাগ নিয়ে ফ্লাট থেকেও বেরিয়ে যায়। মাহির খুশির যাওয়া দেখলো শুধু কিছু বললো না। খুশি যেতেই মাহির জারা কে বিছানা থেকে টেনে তুলে বলে।

” তুমি এখন আস্তে পারো আমার কাজ হয়ে গেছে।

” সকাল সকাল ফোন করে কেনো ডাকলে আমায়? আর ওই মেয়ে কেনো এসেছিলো তোমার ফ্লাটে? আর তুমি আমাকে এই নাটক টা কেনো করালে? এটা ড্রামা না হয়ে সত্যি ও তো হতে পারতো। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি আমি তোমার কাছে সব খুশি হয়ে দিয়ে দিতাম মাহির।

“তোমার কি মনে হয় তোমার মতো সস্তা মেয়ের সঙ্গে মাহির রাত কাটাবে? হাউ ফান্নি।

” তুমি আমাকে সস্তা বলতে পারলে মাহির?(জারা রেগে)

“যে নিজ ইচ্ছায় পরপুরুষের সঙ্গে রাত কাটানোর অফার দিতে পারে সে সস্তা না হয়ে কি আর হবে?

জারা রেগে কিছু বলতে যাচ্ছিলো তার আগেই মাহির জারার হাত ধরে ফ্লাট থেকে বের করে দেয়। ভিতরে এসে বিরিয়ানির সুন্দর একটা সুগন্ধি পায়। এই বিরিয়ানির সুগন্ধি খুশির হাতের। সেদিন ও ঠিক একি পেয়েছিলো। খাবার টেবিলে গিয়ে দেখে বিরিয়ানি মাহির ঝটপট ফ্রেশ হয়ে এসে খেতে লাগে। যেনো একটু আগে কিছুই হয়নি সব স্বাভাবিক।

চলবে?