নীল সীমানার শেষপ্রান্তে পর্ব-১১

0
7122

#নীল_সীমানার_শেষপ্রান্তে
#Writer_Mahfuza_Akter
||পর্ব_১১||
;
;
;

জয় ক্লাবের দরজায় হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে আছে। এজীবনে কোনোদিন ক্লাবে আসেনি বেচারা! আজ এসে তো চক্ষু চড়কগাছ! সব ছেলে মেয়ে মাতাল হয়ে নাচছে, তারওপর বিভিন্ন কালারের লাইটেনিং আর লাউড মিউজিকে মাথা ধরে যাচ্ছে। আর মেয়েগুলোর ড্রেসআপ দেখে মনে হয় না এরা কোনো ভদ্র পরিবারের ছেলেমেয়ে।

কিন্তু চিন্তার বিষয় হলো তনিমাকে সে এখন কীভাবে খুঁজে বের করবে? তনিমা যদি আজ এখানে থাকে, তাহলে তো ওর একা আসার কথা না। কারণ এখানে সবাইকে দেখে মনে হচ্ছে কাপল। তার মানে তনিমা কি অন্য কোনো ছেলের সাথে এসেছে? জানতে হবে।

দূর থেকে একজোড়া চোখ জয়কে দেখার সাথে সাথে কানে ফোন গুঁজে বললো,
—“স্যার, জয় মাহমুদ ক্লাবে!!!

—“হোয়াটটট?? ও কোন দুঃখে এখানে আসবে?”

—“বিশ্বাস নাহলে মেইন ডোরের দিকে তাকিয়ে দেখুন। ”

নিবিড় মেইন ডোরের দিকে তাকিয়ে দেখলো জয় কাউকে খুজতে খুজতে ভেতরে ঢুকছে।

—” ওহহ নো!”
বলেই নিবিড় তনিমার হাত ধরে ক্লাবের পিছনের দিক দিয়ে বেড়িয়ে গেল।

এদিকে জয় পুরো ক্লাবের সব জায়গায় খোঁজ নিয়েও তনিমাকে পায়নি। এখন নিজের ওপরই রাগ লাগছে। কেন একটা অজানা-অচেনা নাম্বার থেকে কল পেয়ে ছুটে আসলো এখানে? এরকম জঘন্য জায়গায় মানুষ আসে নাকি?

জয় দ্রুত ড্রাইভ করে বাসায় ফিরে আসলো। ঘরে ঢুকে দেখলো, মুন সোফায় গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে। জয় গিয়ে মুনের মাথার কাছে বসলো। তার ভাবনা জুড়ে আজ একটা বিষয়ই বিরাজ করছে, মুনের এ অবস্থা কী করে হলো? ওর ঘুমন্ত চেহারা দেখে এটাও মনে হচ্ছে, কোনো কারণে ও অনেক ক্লান্ত। টেবিলে তাকিয়ে দেখলো খাবার রাখা আছে দুই প্লেট। তবে একটা খালি। তার মানে মুন রুমে খাবার আনিয়ে খেয়েছে?

জয় আর কিছু না ভেবে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিলো। এরপর মুনের ফোনটা হাতে নিয়ে অনিতার নাম্বার খুঁজে বের করলো। কারন সে মুনের ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে অনিতাকেই শুধু চিনে, একবার ফোনে কথা বলেছিল তাই।

রাত ১১:৫৫ বাজে। এতো রাতে একটা মেয়েকে কল দিবে? ব্যাপারটা কেমন যেন দেখালেও এছাড়া আর কোনো উপায়ও নেই। অগত্যা তাকে কল দিতেই হলো।
অনিতা কল রিসিভ করে সালাম দিয়ে কে কল দিয়েছে সেটা জিজ্ঞেস করল।
—“ওয়ালাইকুম আসসালাম, আমি জয় বলছি।”

অনিতা উত্তেজিত হয়ে বললো,
—“ভাউয়া, মুন ঠিক আছে তো? ওর কিছু হয়নি তো?”

জয় একটু অবাক হলেও বললো,
—“ওর কী হয়েছে সেটা জানার জন্যই তোমাকে ফোন দেওয়া। ওর হাতে, মুখে, গলায় কিসের দাগ?”

অনিতা আমতা আমতা করে বললো,
—“ভাইয়া আসলে,,,”
তারপর সবকিছু জয়কে খুলে বললো। সবকিছু শোনার পর রাগে ওর মাথা ফেটে যাচ্ছে। এতো কিছু হয়ে গেছে আর মুন ওকে কিছুই জানায়নি। জয় অনিতাকে বললো,
—“আমি যে সবকিছু জানি, এটা যেন মুন না জানে। ওকে কিছু বলো না।”

অনিতা অবাক হয়ে বললো,
—“কেন?”

—“কারণ ও এখন মানসিক ভাবে অনেক ভেঙে পড়েছে। তাই যদি ও জানে যে, আমি সবকিছু জানি তবে হয়তো অনেক হীনমন্যতায় ভুগবে। এটা আমি চাই না। ”

অনিতা জয়ের কথা শুনে ভাবছে,
—“হায়, মে মার যাওয়া!! কতো ভালোবাসে মুনকে!! আমাকেও যদি কেউ এতো বালোপাশতো!!”
___________________

বিকেলে,
বারান্দায় লম্বা-কালো-ঘন চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে খোলা হাওয়া উপভোগ করছি। আজ সকাল থেকে মাথা ব্যথার বাহানা দিয়ে একটুও বাইরে যাইনি। জয়ের আচরণ টাও কেমন যেন লাগলো। কালকে রাতে কতবার কতকিছু জিজ্ঞেস করল আর সকাল হতে না হতেই একদম চেঞ্জড। তারওপর সবাইকে বলে গেছে রুমে গিয়ে আমায় যেন কেউ ডিস্টার্ব না করে। তাই কেউ আসেওনি। আমার এটা ভেবে অনেক ভাল্লাগছে যে, কারো কাছে কোনো জবাবদিহি করতে হবে না। তবে অদ্রি ভাবিকে জানানো দরকার।

এমনসময়ই অদ্রি রুমে ঢুকলো।

আমার পাশে এসে দাড়াতেই আমি ভাবীকে সবকিছু খুলে বললাম। এদিকে অদ্রি সব শুনে বললো,
—“এতো কিছু হয়ে গেছে আর তুই আমায় এখন বলছিস? আর এই দাগ গুলো লুকানোর জন্য এতো কিছু? এসব ছেলেদের তো মেরে ফেলা উচিত। কী ভালোবাসে হে? ঘোড়ার ডিমের ভালোবাসা বলে ওটাকে। তোর বিয়ে হয়ে গেছে, এটা জানার পর ও তোকে ডিভোর্স দিতে কেন বলবে? ভালোবাসলে কি পেতে হবে নাকি? তুই সুখে থাকবি এটা যদি চাইতো তাহলে বুঝতাম যে ও তোকে ভালোবাসে। কিন্তু না, ও কী করলো? তোর ওপর ঝাপিয়ে পড়লো!! ভালোবাসার মানুষকে কেউ অসৎ উদ্দেশ্য স্পর্শ করতে পারে?”
অদ্রি ভীষণ রেগে বললো কথাগুলো।

আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি।

—“তুই কী ভেবেছিস এভাবে নিজেকে লুকিয়ে রাখলে সব সমস্যার সমাধান হবে? কয়দিন এই একঘরে পড়ে থাকবি তুই? ”

আমি ছলছল চোখে তাকিয়ে বললাম,
—“কিছু করো না, ভাবী! এ দাগ গুলো যেন তাড়াতাড়ি চলে যায় তার ব্যবস্থা করো, প্লিজ। ”

অদ্রি কিছু একটা ভেবে বললো,
—“আচ্ছা, দাঁড়া। একটা ওয়ে আছে। আমি আসছি।”

অদ্রি নিজের ঘরে গিয়ে ড্রয়ারে হাত দিবে ওমনি ওর ফোন বেজে ওঠলো। ফোন হাতে নিয়ে দেখলো আহিল কল করেছে।

—“হ্যাঁ, আহিল। কী খবর?”

আহিল হতাশ হয়ে বললো,
—“অনেক খারাপ। ভাবী এই তনিমা আর ওর বর পাতায় পাতায় চলে না বর্তমান শিরায় শিরায় চলে। বুঝলে?”

—“আমি জানি, ওরা অনেক এক্সপার্ট। কী হয়েছে এখন সেটা বলো।”

—“কাল তো ও হাতে নাতে ধরা পড়তো জয়ের হাতে। কিন্তু ওরা সিক্রেট এজেন্ট লাগিয়েছে। তাই জয় পৌছানোর সাথে সাথে পালিয়েছে। ”

—“যাব্বাবাহ!! এখন কী করবে?”

—“ভাবছি। একটা মাস্টার প্ল্যান করে রেখেছি। তবে ঐটা ইমপ্লিমেন্ট করতে সুযোগ খুজতে হবে। ”

—“কী প্ল্যান? ”

—“এখন বলবো না। দেখি কী হয়?”
বলেই বাঁকা হাসলো আহিল।

অদ্রি ভাবি কিছুক্ষন পরেই আমার হাতে একটা টিউব ধরিয়ে দিলো।
—“এই নে ধর। এটা দিলেই দাগ চলে যাবে দু-তিন দিন সময় লাগবে আর কি!”

আমি অবাক হয়ে বললাম,
—“এটা কী?”

—“এটা স্কিন লাইটেনিং ক্রিম। অনেক ভালো কাজ করে। নিশ্চিতে ব্যবহার করতে পারবি।”

আমি ক্রিমটার ওপর দিয়ে লেখা গুলো দেখছিলাম, তখনি মনে হলো কোনো কিছু ভনভন করছে। আমি তাকিয়ে দেখলাম, আমার ফোন ভাইব্রেট করছে কেউ কল দেয়ায়। রিসিভ করতেই রাদিফ বললো,
—“বইন রে বইন, বহুত বড় অঘটন ঘইটা গেছে গা।”

আমি বিচলিত হয়ে বললাম,
—“কী হয়েছে? ”

—“হিম রে উপরমহলের কয়েকজন লোক ছাড়াইয়া নিয়া গেছে। ভাইয়ে কিছু করা পারে নাই। তাদের কথার বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা কারো নাই। তার চেয়েও বড় খবর কী জানোস?”

আমার সারা শরীর থরথর করে কাপছে। হিম ছাড়া পেয়ে গেছে। এবার আমায় আর ছাড়বে না ও। এই হিমেল বাতাসেও আমার সারা শরীর ঘামছে।
রাদিফ আবার বলে উঠলো,
—“ওই ছ্যাড়ি! শুনতাছস আমার কথা। ”

আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
—“হুম, কী বড় খবর? ”

—“হিম এখন নিরুদ্দেশ হইয়া গেছে। ওর বাড়িতেও যায় নাই, কোনো ফ্রেন্ড বা রিলেটিভের বাড়িতেও না। ওরে কোথাও খুইজা পাওয়া যাইতাছে না।”

-চলবে………