#নীল হতে নীলান্তে
#লেখিকাঃ তামান্না
পঞ্চম পর্ব
অর্নিতার চোখ বেয়ে জল ধারা বয়ে চলেছে।
অর্নিতার মনে হচ্ছে এতদিনের জমে রাখা ক্ষোভ সে আজ এই দিনে মিটাবে!
মেয়েটি গগণ বিদারী চিৎকার করে উঠলো- আল্লাহ্ গো!
কেউ আমারে বাচান!
এরপর মেয়েটি একটা লোকের পা জড়িয়ে ধরে বলল-
ভাই আমারে ছাইড়া দেন, আমার দুইটা পোলা ঘরে,
কাজ কইরা খাই ভাই! আমার সর্বনাশ কইরেন না!
কারোর কাছে মুখ দেখাইতে পারুম না আমি!
লোকটি মেয়েটিকে লাথি দিয়ে ফেলেদিল,
তা দেখেই সেই দলের কিছু লোক
হাসাহাসি করতে লাগল।
অর্নিতার যেন সহ্যের সীমা পার হয়ে যাচ্ছে।
অর্নিতা তার লুকানো পিস্তল টা বেড় করে গুলি করবে তার আগেই অরুপ তাকে ধরে ফেলেছে।
অর্নিতা তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো –
ছাড়ুন!
ওদের এভাবে ছাড়া যাবে না!
অরুপ অর্নিতার হাত থেকে পিস্তল নিয়েনিল।ঞ
অরুপ- শান্ত হোন অর্নিতা! এমন করবেন না!
অর্নিতা- পিস্তলটা দিন আমাকে,
অরুপ- পিছনে ফেরে দেখুন!
অর্নিতা অরুপ কে ধাক্কা দিয়ে পিছনে তাকালো।
দেখল পুলিশের লোকজন! পুলিশ দেখে অর্নিতা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল।পুলিশের লোকজন সেই লোকগুলোকে ধরে ফেলেছে।
অর্নিতা মেয়েটির দিকে ভালো করে দেখছে, মেয়েটি কোথায়? মেয়েটিকে দেখতে চাইছে সে।
নারী কনস্টেবল এর সঙ্গে দাড়িয়ে আছে মেয়েটি!
অর্নিতা মেয়েটির কাছে যেতে চাইলো! কিন্তু যেতে পারলো না তার হাত বাধা! সে যখন তখন আবেগী হয়ে যেতে পারবে না। তাকে শক্ত হতে হবে।
অর্নিতার মনে হলো থাক দূর থেকেই দেখি।
আজ এই সময়ে সে মেয়েটিকে বাচাতে পারল।
অর্নিতার মনে হলো সে সফল হয়েছে! বাচাতে পেরেছে একটি মায়ের সম্মান!
অর্নিতার মনেহলো আজ এই সময় হয়তো এই মায়ের সম্মান বাচানোর জন্যই বিধাতা তাকে পাঠিয়েছে।
একজন পুলিশ অফিসার এগিয়ে এলেন।
সেই পুলিশ অফিসার- স্যার, আপনাদের আরো ফোর্স প্রয়োজন ছিল। এভাবে আসা উচিৎ হয়নি।
অরুপ- তা অবশ্য ঠিক! কিন্তু আমাদের এত লোকের প্রয়োজন ছিল না আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করতে পারি।
কিন্তু হঠাৎ আমাদের সামনে এমন কিছু গটবে তা আমরা ভাবতে পারিনি।
পুলিশ অফিসার – জ্বী সেটাই তবে এ এলাকায় এসব ঘটনা বেশিই ঘটে।
অরুপ- আপনারা ঠিক সময়ে না আসলে অনেক বড় গঠনাই গটে যেতো। ধন্যবাদ আপনাকে সঠিক সময় আসার জন্য।
পুলিশ- আপনাদের ও ধন্যবাদ,
অর্নিতা- একটা কাজ করুন মেয়েটির পরিচয় নিয়ে আসুন। আমি মেয়েটির সাথে কথা বলতে চাই।
পুলিশ অফিসার – এখন? নিয়ে আসবো উনাকে?
অর্নিতা – না! নিয়ে আসার দরকার নেই মেয়েটার পরিচয় নিয়ে রাখুন। আর ওকে ওর বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যাবস্থা করুন। দেখে বিধ্বস্ত মনে হচ্ছে।
পুলিশ অফিসার মাথা নাড়িয়ে চলেগেল।
_______________________________________
অরুপ অর্নিতাকে নিয়ে বসিয়ে দিল গাড়িতে,
অর্নিতা বসে আছে, ফরহাদ, জামিল ও আছে।
অরুপ- অর্নিতা আজ আপনি যা করতে যাচ্ছিলেন তা ঠিক নয়, আমরা তো আসছিলাম, আমরা সবাই মিলে তাদের ধরতাম নাকি?
অর্নিতা- আপনারা আসতে আসতে ওই মেয়েটির সাথে যা হয়ে যাওয়ার তা হয়েযেতো
অরূপ- তবুও, ভেবে দেখুন আপনি একটা ছদ্মবেশে আছেন! গোপনীয়তা আপনার কাজ সেখান থেকে বেরিয়ে আপনি কিনা পিস্তল বের করে গুলি করতে যাচ্ছিলেন? এই কাজটার জন্য আপনাকে কত সমস্যায় ভুগতে হতো আপনি বুঝতে পারছেন?
অর্নিতা- তার জন্য আমি হাত গুটিয়ে বসে থাকতাম!
আর ঐ নরপিশাচ রা মেয়েটাকে ছিড়ে খুবলে খেতো?
এই আপনার মন মানসিকতা?
অরুপ- আমি সেটা বলিনি! বুঝতে চেষ্টা করুন!
অর্নিতা- আপনারা কি বুঝবেন? একটা মেয়েকে তার সন্তানের সামনে ধর্ষণ করা?
কি বুঝবেন নির্যাতিত হওয়া?
সমাজের সামনে মুখ দেখাবে কিভাবে সেই চিন্তায় একজন নারী গলায় ফাসির দড়ি সেচ্ছায় বাধে!
শুধুমাত্র নিজের জীবন দিয়ে সবার থেকে আড়াল হয়ে বাচতে।
বুঝবেন না! মেয়েটির যদি আজ কিছু হতো তার সঙ্গে শেষ হতো দুটো অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ!
কে দেখতো ছোট্ট দুটি শিশুকে? কে হতো দেবদূত?
কেউ না! সবাই পর হতো সবাই!
অরুপ অর্নিতাকে বুঝানোর ব্যার্থ চেষ্টা করলো কিছুক্ষণ।
তারপর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে অর্নিতাকে পৌছে দিল তার বাড়িতে।
_________________________________________
অর্নিতাকে বাড়িতে পৌছে দেবার পর অর্নিতা বাড়িতে ডুকলো।
জাহিদ আফসারী ড্রয়িং রুমে কফি খাচ্ছিলেন।
মেয়েকে দেখে ডেকে উঠলেন-
জাহিদ আফসারী- আজ তো তেমন কাজ থাকার কথা না, এত দেরী যে?
অর্নিতা- বাবা আমার ভালো লাগছে না,পরে বলবো।
জাহিদ আফসারী বুঝতে পেরেছেন মেয়ে হয়তো ক্লান্ত!
তাই তিনি তার মেয়েকে এ নিয়ে আর বেশি জেরা করলেন না।
কাজ যখন তখনই পরে যায়।
চলবে।
#নীল হতে নীলান্তে
#লেখিকাঃ তামান্না
ষষ্ঠ পর্ব
অর্নিতা- বাবা আমার ভালো লাগছে না,পরে বলবো।
জাহিদ আফসারী বুঝতে পেরেছেন মেয়ে হয়তো ক্লান্ত!
তাই তিনি তার মেয়েকে এ নিয়ে আর বেশি জেরা করলেন না।
কাজ যখন তখনই পরে যায়।
অর্নিতা তার অফিসে ফোন করে জানিয়ে দিলো তার ভালো লাগছে না। শরীর খারাপ এসব বলেই সে বসে পরল বেডে। আসলে ভালো লাগছে বা শরীর খারাপ করছে না তা নয়। মানসিক দিক দিয়ে অর্নিতা ভেঙ্গে পরেছে। অর্নিতার মনে হচ্ছে একটু একা থাকা দরকার।
পর্যাপ্ত বিশ্রামের প্রয়োজন তার!
____________________________________
সেদিনের সেই একদিনের সঙ্গে আরো তিন দিন যোগ করে অফিস থেকে ছুটি চেয়ে নিয়েছে।
অফিস থেকে তাকে ছুটি ও দেওয়া হয়েছে।
অর্নিতা আজ অফিসে সময় মতো এসে তার স্যারের সঙ্গে দেখা করেছে। অরুপ স্যারকে সেদিনের সব ঘটনা খুলে বলেছে। তাই তিনি অত্যন্ত খুশি অর্নিতার কাজ তাকে মুগ্ধ করছে বারবার।
স্যার- মিস অর্নিতা আফসারী আপনার কাজ দেখে আমি বরাবরই মুগ্ধ হই বলাচলে মুগ্ধ হবার মত কাজই আপনি করেন। আপনার এই কাজ সত্যিই প্রশংসনীয়!
আপনি চাইলে উপর মহলেও আমি আপনাকে নিয়ে একটা প্রতিবেদন করাতে পারি বা আপনার প্রমোশন এর ব্যবস্থা করতে পারি।
অর্নিতা- স্যার আমি এখনো সেই অবস্থায় যাই নি।
তাই আমি চাই নিজেকে আরো ভালোভাবে দক্ষ করে তুলতে।
স্যার- বল কি সাহায্য করতে পারি, তোমার দক্ষতা বাড়াতে?
অর্নিতা- আমি উচ্চতর ট্রেনিংয়ের জন্য বাহিরে মানি আমাদের পর্যায়ের অফিসার বা এই বাহিনীর জন্য ভালো হয় এসব দেশে যেতে চাই। যদি উপকার করতে চান আমাকে এটাই করুন।
স্যার- ভেরি গুড ডিসিশন! এটাই তো আমি চাই একজন মেধাবী অফিসারের উচিৎ শুধু দেশের চিন্তা করার নয় বহিরাগত দেশ গুলোতেও তোমার অবস্থান করা প্রয়োজন! সেখানে যেমন সুনাম অর্জন করতে পারবে তেমনই কিছু শিখতেও পারবে।
অর্নিতা- ধন্যবাদ স্যার,
অরুপ- কিছুটা দূরেই দাড়িয়ে ছিল। অর্নিতাকে স্যারের রুম থেকে বেড়োতে দেখে বলল –
-মিস অর্নিতা ভালো আছেন?
অর্নিতা স্যালুট জানিয়ে – জ্বী!
অরুপ- আপনি হঠাৎ করে অসুস্থ হলেন কেমন করে?
অর্নিতা- অসুস্থতা কেমন করে বা কারন কি এগুলোর মধ্যে প্রকাশ পায় না। অসুস্থতা যেকোন সময় দেখা দিতে পারে অরুপ!
অরুপ- জ্বী,
অর্নিতা- আজ ফরহাদ আর জামিলকে তৈরী থাকতে বলবেন। আমি আজ সম্পূর্ণ রুপে প্রস্তুত।
অরুপ – আচ্ছা, ঠিক আছে।
________________________________________
অরুপ সেই জালমুড়ি ওয়ালা সেজেছে আজও, বিরক্ত লাগছে তার এই জাল মুড়ি ওয়ালা সাজতে কি অদ্ভুত!
শেষ পর্যন্ত লুঙ্গি! ফতুয়া পরে জালমুড়ি ওয়ালা!
একবার কারো নজরে পরলে মানইজ্জত তার পুরোপুরি শেষ।
অর্নিতাও আগের রুপে, জামিল অন্য রুপে সেজেছে সে আজ এমনি একজন ফর্মাল পোষাক পরেছে।
বাকিরা আগের সাজেই।
অর্নিতা আজ বসে থাকেনি ঘুরে ঘুরে দেখছে কিভাবে পাওয়া যেতে পারে।
অনেকক্ষণ বসার পর অর্নিতার মনে হলো এখানে বসে না থেকে একটু স্টেশন এর পিছনের দিকে যাওয়া যাক।
যেই ভাবা সেই কাজ।
অর্নিতা খুড়িয়ে খুড়িয়ে গাড়ি পর্যন্ত এসেগেলো।
এসেই সে সবাইকে নিয়ে ভিতরের পাশে একটি বস্তির পাশে খালি জায়গায় গিয়ে দাড়ালো দেখল কিছু ছোট ছোট ছেলে মেয়ের হাতে ফুলানো পলিথিন, তবে ওরা হাতে করে সেই পলিথিন নিয়ে বারবার শ্বাস টানছে।
অর্নিতার মনে পরেগেল এগুলো ড্রাগস!
হিরোইন এবং হিরোইন জাতীয় এই দ্রব্য এভাবেই শুকে শুকে নিতে হয়।
অর্নিতা অরুপকে ইশারা করল।
অরুপ- এই! এই পোলা আমারে একটা দে! দিবি?
ছেলেটি- আমনে কেডা? আমনেরে দিমু না!
অরুপ- যদি দেছ তাইলে এই মুড়ি তোরাও পাবি!
ছেলেটি: চাচা আমি দিতে পারুম না আমার সুখ লাগতেছে। আমার ডা না নিয়া রুবেল ভাইয়ের তে লোন! রুবেল ভাইয়ের কাছে মেলললা আছে। আমি দিতে পারুম না।
অরুপ- কোথায় থাকে তোর রুবেল ভাই?
ছেলেটি- হে ইস্টিশেনের লগেই আইয়ে রাতের বেলা।
অরুপ- আয় তো। তোর রুবেল ভাইয়ের কাছে যাই।
অরুপ আর সেই ছেলেটি মিলে সেই মাদক ব্যাবসাহী রুবেলের কাছে গেলো।
রুবেল স্টেশনের পাশেই একটি পানের দোকান নিয়ে বসেছে।
রুবেল- কিরে রহিম এইডা কেডা?
অরুপ – ভাই আমার একটা দেন, ভালা লাগে না! ঘরে নাই সুখ! বাহিরে নাই সুখ! আমারে একটা দেন ভাই!
বড় দুখে আছি।
রুবেল অরুপের কাছে এসে কানে কানে বলতে লাগল।
রুবেল- কারো কাছে কইয়া দিবেন নাতো?
অরুপ – না ভাই কমু না! এই আমনের মাথা ছুইয়া কসম কাটি!
রুবেল লোকটি- আরে দুরো মিয়া কসম কাটতে হইবো না, নিয়া যান! তয় সাবধান কেউ যেন না জানতে পারে!
অরুপ- আইচ্ছা!
রুবেল – অরুপ কে পলিথিন দিতে চাইলে,
অরুপ- ভাই এইডা না!
রুবেল – কোনডা?
অরুপ- ভাই এসব দিয়া আমার দুঃখ মিটবো না আরো বড় চাই!
রুবেল- বড় গুলা দিয়া কি করবেন? আর আমার কাছে নাই ও। মহাজনের কাছে যাওন লাগবো!!
অরুপ – আমি যামু ভাই!
রুবেল – কি মুশকিল! মহাজনের কাছে যাওন যায় না!
অরুপ রুবেলের পায়ে ধরে বলছে- ভাই আমনে আমার ধর্মের ভাই! আমারে নিয়া যইবেন লগে।
অরুপের জোড়াজুড়িতে রুবেল রাজি হয়েগেল। ঠিক হলো কালই যাবে তারা।
___________________________________
অর্নিতা- খুব ভালো অভিনয় করতে পারেন আপনি!
অরুপ- সেতো পারি, জানেন অভিনয়ের জন্য আমার মামা আমাকে নিতে চেয়েছিল!
অর্নিতা- তাই নাকি?
অরুপ- কনফিডেন্সের সাথে জ্বী! আব্বুর জন্য যেতে পারিনি!
চলবে।